ভাঙা_পাঁজরে_বসন্ত
নির্ভান মায়ের আর কোনো কথা শোনে না। ভিরান কে জোর করে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে।
ভিরান দুই হাতে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে,
"পাপা আমি যাব না কিন্ডারগার্ডেনে। তুরা কে এনে দাও ওকে সাথে নিয়ে যাব।"
নির্ভান ছেলে কে বোঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে বলে,
"পাপা তুমি কেনো বুঝতে পারছো না, তুরা আমাদের কেউ হয় না।"
"আমি তুরা কে তোমার ওয়াইফ বানাব। তখন তুরা আমাদের হয়ে যাবে।"
"আমি তুরা কে আমার ওয়াইফ বানাতে চাই না। ছোট মানুষ হয়ে এত বড় বড় জেদ কেনো করছ? তুমি নিজেও বুঝতে পারছো না কিসব বলছ।"
ভিরান গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কান্না করতে থাকে। হাত পা ছোড়াছুড়ি করে।
নওশাদ চৌধুরী, মেরি চৌধুরী, ড্রাইভার আর গার্ড তাঁকিয়ে তাঁকিয়ে দেখছে বাপ ছেলে কে। বাপ যেমন জেদী ছেলে তার চেয়েও বেশি জেদী।
কাদতে কাদতে ভিরানের অবস্থা খারাপ, এখন হা করে শ্বাস নিচ্ছে আর কাদঁছে। বেশি কাদলে ভিরানের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
নির্ভান ছেলে কে বুকে চেপে ধরে বাড়ির ভেতর ফিরে আসে। সোজা চলে আসে বেড রুমে। ছেলে কে বেডে বসিয়ে পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু ভিরান খায় না। ধাক্কা দিয়ে বাবার হাত থেকে গ্লাস নিচে ফেলে দেয়। পড়ার সাথে সাথেই গ্লাস টা খন্ড খন্ড হয়ে গেছে।
ভিরান কাদতে কাদতে বলে,
"তু তুরা কে না এনে দিলে আমি কিছুই খাব না। তোমার সাথে কথাও বলবো না। পড়তেও যাব না, কিচ্ছু করবো না আমি।"
নির্ভান ছেলে কে ধরতে নিলে ভিরান পিছিয়ে যায়। বালিশে উপুর হয়ে শুয়ে তুরার নাম ধরে কাদতে থাকে।
নির্ভান ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টে। ছেলের জেদ আর ডিমান্ড দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই ছেলে কেনো বুঝতে পারছে না তুরা ওর পাপার ওয়াইফ হতে পারবে না। চাইলেই সব কিছু হয় না।
ডোরের বাইরে নওশাদ চৌধুরী আর মেরি চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন।
অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর নির্ভান বলে,
"তোমার মা চাই তাই তো?"
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় ভিরান। নির্ভান আবার বলে,
"তোমার মা লাগবে?"
উঠে বসে ভিরান। উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বলে,
"তুরা কে আম্মু বানাব।"
নির্ভান বেডে বসে ছেলে কে টেনে এনে কোলের উপর বসায়। টিস্যু পেপার দিয়ে চোখের পানি, নাকের পানি মুছে দেয়। বুকের সাথে মিশিয়ে রেখে বলে,
"ঠিক আছে, তোমাকে আম্মু এনে দিব কিন্তু তুরা কে না।"
ভিরান জেদ ধরে বলে,
"না, আমার তুরা কেই চাই। আমি তুরা কে ছাড়া অন্য কাউকে চাই না।"
"তুমি বুঝতে পারছো না কেনো পাপা? তুরা ছোট একটা মেয়ে, ওর বিয়ে করার সময় হয়নি। ওকে ওর বাবা মা এখন বিয়ে দেবে না। আমরা তুরার চেয়েও বেশি সুন্দরী, ভালো একদম তোমার মন মতন মেয়ে খুঁজে বের করব।"
"না, আমার তুরা কেই চাই।"
"এটা সম্ভব না ভিরান।" more....
"কেনো সম্ভব না? তুমি বললে তুরা চলে আসবে। আমি গত কাল রাতে তুরার বুকে ঘুমিয়েছিলাম। তুরার বুকে ঘুমোতে অনেক ভালো লাগে। তুরা ওর নরম হাত দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিল। অনেক আদর করেছিল, অনেক চু*মু খেয়েছিল।"
"তোমার দাদুও তো তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুম পাড়ায়, আদর করে, চুমু খায়। তোমার মনিও তো বাড়িতে আসলে তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুম পাড়ায়, আদর করে, চু*মু খায়।"
"মনি আর দাদুর মতন তুরার আদর না। তুরা অন্য রকম।"
"তুমি আলাদা ভাবছো তাই আলাদা মনে হচ্ছে। জেদ ছাড়ো আর তুরা কে ভুলে যাও।"
"তুমি তুরা কে আনবে না?"
"না।"
"কেন?"
"তুরা ছোট একটা মেয়ে, ওর বয়স কম। ওর বাবা মা কখনোই ওকে আমাদের কাছে দেবে না। আমিও চাই না তুরা কে।"
"আমি চাই তুরা কে। আমি তুরার কাছে যাব।"
____________
তুরা সকালের নাস্তা সেরে নিজের রুমে ফিরে আসে। ভিরানের জন্য মনটা ছটফট করছে এখনো। কেউ যেন বুকের ভেতর শূন্যতা তৈরি করে দিয়েছে। কেনো যেন কোনো কিছুই ভালো লাগছে না, অস্থির অস্থির লাগছে যা আগে কোনো দিন লাগেনি।
বেডে বসে মন টিকছে না, উঠে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও চোখ চলে যায় গত রাতে যেখানে নির্ভান দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে। ওখানে এখন সিলভার কালার একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। নির্ভানের গাড়ি টা ব্ল্যাক কালার ছিল। কেন যেন বুকের ভেতর ধুকপুক করে ওঠে হঠাৎ। গত রাতে নির্ভান যখন নিচ থেকে ওর দিকে তাকিয়েছিল তখনও এমন হয়েছিল।
ভিরানের জন্য মনটা ভার হয়ে আসে। নির্ভান আর ভিরানের কথা ভাবতে ভাবতে দূর আকাশের দিকে তাকায়। ভিরানের বলা কিছু কথা এখনো কানে বাজছে, "তুরা আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না।"
আকাশ মেঘলা হয়ে আছে। অল্প কিছু সময়ের মধ্যে বৃষ্টি হবে বোধহয়। আজ কাল একটু পর পরই হুট হাট বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি হলে তুরার মন খারাপ হয়ে যায়, বৃষ্টি ভালো লাগে না তুরার। বৃষ্টি হলে সব কিছুই কেমন বিষন্ন লাগে। তুরার মনে হয় প্রকৃতির মন খারাপ, তাই তুরারও মন খারাপ হয়। তুরার পছন্দ ঝলমলে রোদ আর শীতল বাতাস।
আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই দেখতে পায় বৃষ্টির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে ধরণীর বুকে।
ভিরানের জন্য চোখের কোণ ভিজে ওঠে তুরারও। অদ্ভুত, ভিরানের জন্য এমন লাগছে কেন? বুকের ভেতর যেন কেমন করছে। আচ্ছা ভিরান খেয়েছে সকালে? ঘুম থেকে উঠে তুরা কে দেখতে না পেয়ে কি কেঁদেছে? ভিরানের দাদা তো বলেছিল ওর জন্য কাদতে কাদতে ভিরান অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিল। ভিরান এখন কি করছে? বুকের ভেতর অদ্ভুত এক টান অনুভব করছে ভিরানের জন্য। মনে হচ্ছে ভিরান ওর আপন কেউ, কিন্তু সত্যি তো এটাই ভিরান ওর কেউ হয় না। মাত্র তিন দিনের পরিচয়।
শেষমেশ, বিষন্ন হয়ে রুমে ফিরে আসে। চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ করতেই ভিরানের মুখটা ভেসে ওঠে।
_________________
সারা দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ভিরান সকালের পর একটা দানাও মুখে দেয়নি আর। একটু পর পর কাঁদে আর বলে "হয় তুরা কে এনে দাও নয়তো তুরার কাছে নিয়ে যাও।" তুরা কে ছাড়া কিছুই খাবে না।
হাজার বলে কোয়েও কেউ খাওয়াতে পারেনি। নির্ভানের সাথে একটা কথাও বলছে না। ভিরানের সাথে সাথে বাড়ির সবাই না খেয়ে আছে। নির্ভান আজকে অফিসেও যায়নি। আজকে নওশাদ চৌধুরী অফিসে গেছেন।
না খেয়ে কান্না করতে করতে ভিরানের অবস্থা নাজুক। বাচ্চা ছেলেটার চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে সাথে নির্ভানেরও। নির্ভান ছেলে কে ধরতে গেলেই ভিরান চিৎকার করে বলছে, তুরা কে না এনে দিলে ওর সাথে কথা বলতে যেন না আসে আর ওকে ছুঁতেও যেন না আসে।
নির্ভান সারা দিন ভেবে চিন্তেও বের করতে পারছে না ভিরান তুরার জন্য এমন পা'গলা'মি কেনো করছে? বাইরের একটা মেয়ের জন্য হঠাৎ করে এত পা'গল কেনো হলো? পছন্দ হলেও, মা বানাতে চাইলেও বাইরের মেয়ের জন্য কেউ এত পা'গ'লামি করে? যাদের সাথে মিলে মিশে এত বড় হলো তাদের কাউকেই চাইছে না। তিন দিনের পরিচয়ের একটা মেয়ের জন্য ম'রিয়া হয়ে উঠেছে। আপন জন দেরও কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। মনে হচ্ছে তুরার প্রতি এমন আকর্ষণ হওয়ার জন্য কেউ জাদু করেছে।
ভিরানের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ওর নিজের মা কেই ওর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিজের মাকে কাছে পাওয়ার জন্য এমন পা'গ'লামি করছে।
ভিরানের পরনে এখনো কিন্ডারগার্ডেনের পোশাক। না খেয়ে কান্নাকাটি করে চোখ মুখ কেমন হয়ে গেছে।
এই টুকুন একটা ছেলের জেদ দেখে বাড়ির সবাই শকড। কেউ কিছুতেই কিছু বোঝাতে পারছে না এই ছেলে কে।
নওশাদ চৌধুরী অফিস থেকে ফিরে নাতির সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। ভিরান ওনাকেও কথা বলার সুযোগ দেয়নি, ওর কথা আগে তুরা কে কাছে চায় পরে সকলের কথা শুনবে।
ভিরানের নানা-নানী ভিডিও কলে ভিরানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছেন ভিরান তাদের সাথেও কোনো কথা বলেনি উল্টো ফোন ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। ভিরানের নানা-নানী কেউ চাইলেও এখন ভিরানের কাছে আসতে পারছেন না। ওনারা ফুল ফ্যামিলি দেশের বাইরে সেটেল্ড, বর্তমানে দেশের বাইরেই আছেন।
নির্ভান সবাই কে রুম থেকে বের করে দেয়। নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করে বেডের উপর বসে আবার। নরম স্বরে ছেলের নাম ধরে ডাকে।
"ভিরান।"
ভিরান তাকায় না। নির্ভান আবার ডাকে, ভিরান তবুও তাকায় না।
"পাপা আমার দিকে তাকাও।"
তাকায় ভিরান।
"তুমি না বুঝদার ছেলে, সারা দিন ধরে এমন অবুঝের মতো কেনো করছ?"
"তুমি অবুঝের মতো কেনো করছো পাপা? তুরা কে এনে দাও না প্লিজ, প্রমিজ করছি আর কোনো দিন কাউকে চাইবো না।"
"তুমি তুরা কে কেনো চাইছো সেটা বলো।"
"ওকে তোমার কুইন বানাব, আমার আম্মু বানাব।"
"ওকেই কেনো বানাতে হবে? দুনিয়ায় তো আরো অনেক মেয়ে আছে।"
"আমার ওকেই পছন্দ।"
"আমার তো ওকে পছন্দ না পাপা।"
"কেনো পছন্দ না?"
"এত কিছু তুমি বুঝবে না, বড় হও তখন বুঝতে পারবে।"
"বড় হয়েছি আমি। আমি তুরার কাছে যাব নয়তো না খেয়ে থাকতে থাকতে ম'রে যাব।"
ছেলের কথা শুনে নির্ভানের বুকের ভেতর ছ্যাঁত করে ওঠে। পাঁজর ভেঙে চুরে আসে। ছেলের কান্না উপেক্ষা করে জোর করে কোলে তুলে বুকে চেপে ধরে বলে,
"এমন কথা আর জীবনেও বলবে না তুমি। আমি বেঁচেই আছি তোমার জন্য নাহলে তো সেদিনই মরে গিয়েছিলাম যেদিন তোমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।"
_____________
কলিং বেল বেজে ওঠে। তুরা টিভির দিক থেকে চোখ সরিয়ে ডোরের দিকে তাকায়। মুক্তা শিকদার কিচেন থেকে তুরা কে ডেকে ডোর খুলে দিতে বলেন।
হাতের রিমোট রেখে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
বিরক্তি ভঙ্গিতে ডোরের দিকে এগিয়ে যায়, কিসুন্দর টিভি দেখছিল।
ডোর খুলে দেখে সামনে দাঁড়িয়ে আছে নওশাদ চৌধুরী ওনার কোলে ভিরান, পাশে দাঁড়িয়ে আছে একজন অর্ধ বয়স্ক নারী। তুরা বুঝতে পারে ইনি হয়তো ভিরানের দাদি। ভিরানের চেহারা দেখে তুরার বুকের ভেতর ছ্যাঁত করে ওঠে।
তুরা কে দেখেই ভিরানের মলিন ফ্যাকাশে চেহারায় হাসি ফুটে ওঠে। তুরার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
"তুরা আমি চলে এসেছি।"
ভিরানের গলার স্বর শুনে চমকে ওঠে তুরা। ফ্যাসফ্যাসে গলার স্বর। অতিরিক্ত চিৎকার চেঁচামেচি করলে বা অতিরিক্ত সর্দি কাশি হলে গলার স্বর এমন হয়ে যায়।
ভিরান আবার ডেকে উঠতেই তুরা কোলে তুলে নেয় ভিরান কে। পথ ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলে,
"আপনারা ভেতরে আসুন।"
ভেতরে প্রবেশ করে দুজন। মেরি চৌধুরী তুরা কেই দেখে চলেছেন। মেয়ে টা আসলেই পুঁতুলের মতো দেখতে। ভিরানের ভাষ্য মতে ফেয়ারী টেল মুভির কুইন।
দুজন সোফায় বসে। তুরা ওর বাবা মা কে ডাকে।
মুক্তা শিকদার কিচেন থেকে বেরিয়ে আসেন। তুহিন শিকদার বেড রুম থেকে বেরিয়ে আসেন। নওশাদ চৌধুরী আর মেরি চৌধুরী কে দেখে তুহিন শিকদার আর মুক্তা শিকদার একে অপরের মুখের দিকে তাকান। ভিরান কে দেখে ওনারও চমকে ওঠেন। এমন অবস্থা কেনো এই ছেলের?
নওশাদ চৌধুরী তুরার বাবা মা কে সোফায় বসতে বলেন। তুরা কে পাঠিয়ে দেন তুরার বেড রুমে।
তুরা বেলকনিতে এসে দাঁড়ায় ভিরান কে কোলে নিয়ে। রাস্তায় চোখ পড়তেই দেখে আজকেও গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে নির্ভান। বাবা কে দেখতে পেয়ে ভিরান বলে,
"তুরা ঐতো পাপা দাঁড়িয়ে আছে। পাপা।"
ছেলের ডাক নির্ভানের কান অব্দি পৌঁছায় না। গলার স্বর বসে যাওয়ার কারণে অত দূরে পৌঁছায়নি ভিরানের ডাক। তুরা ভিরানের গালে হাত রেখে আদুরে গলায় বলে,
"তোমার কি হয়েছে ভিরান? চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন? গলায় কি হয়েছে তোমার?"
"তোমার কাছে আসার জন্য কেঁদেছিলাম।"
এমন কথা শুনে শকড তুরা। ওর কাছে আসার জন্য কেঁদেকেটে নিজের এই অবস্থা করেছে? ভিরান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বলে,
"কেনো কেঁদেছ? কি অবস্থা করেছো নিজের দেখেছ? গলা ব্যাথা করছে?"
"না তুরা। তোমার কাছে এসে ভালো লাগছে। আজকে কিন্তু আমি তোমাকে নিয়ে যাব। তোমাকে ছাড়া আজকে একটুও যাব না আমি।"
তুরা রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখে নির্ভান ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। দ্রুত সরে আসে তুরা।
নির্ভান বেলকনির দিক থেকে চোখ সরায় না। তুরা আর ভিরান দুজন কেই দেখেছে স্পষ্ট।
বুকের ভেতর ভীষণ রকমের যন্ত্রণা হচ্ছে নির্ভানের।
ছেলে কে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তুরা কে বিয়ে করতেই হবে কিন্তু তুরা কে নিজের লাইফে জড়াতে চায় না নির্ভান। একে তো নির্ভান বিয়ে করেছিল, একটা চার বছরের ছেলেও আছে, বয়স একত্রিশ বছর। তুরার সাথে ওকে কোনো ভাবেই মানায় না। নির্ভান তো এমনিতেই আর কোনো দিন বিয়ে করতে চায় না। এখন ছেলের জন্য যদিও বিয়ে করে সেখানে তুরা মানান সই নয়। তুরার জায়গায় কোনো ডিভোর্সী, বিধবা বা ছাব্বিশ, সাতাশ বছরের নারী হলে তবুও মানা যেত। তুরা ছোট একটা মেয়ে, বয়স মাত্র আঠারো, ওর সাথে মানায় না আর তুরার বাবা মাও কোনো ভাবে রাজি হবে না।
পকেট থেকে ফোন বের করে গ্যালারি তে প্রবেশ করে। সুহানার একটা পিক বের করে তাঁকিয়ে থাকে চুপ চাপ। একটু পর আস্তে আস্তে বলে,
"সুহানা, ছেলে টা কি শুরু করেছে বলো তো! আমি তোমার জায়গা অন্য কাউকে কিভাবে দিব বলো।"
নওশাদ চৌধুরী তুরার বাবা মা কে সব কিছু খুলে বলেছেন। ওনারা তুরা কে ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে চান এটাও বলেছেন। যদিও সব কিছু বলার সময় খুবই ইতস্তত বোধ করছিলেন নওশাদ চৌধুরী।
সব শুনে মুক্তা শিকদার আর তুহিন শিকদার একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কি বলবেন বা বলা উচিত কিছুই যেন বুঝতে সক্ষম হচ্ছেন না তারা এই মুহূর্তে।
মেরি চৌধুরী বলেন,
"আমরা নিরুপায় হয়ে আপনাদের কাছে এসেছি। ভিরান কে দেখেছেন তো, এভাবে চলতে থাকলে ওকে বাঁচানো যাবে না। সকালে খাওয়ার পর সারা দিন আর একটা দানা খায়নি, কয়েক বার শুধু পানি খেয়েছিল। তুরার জন্য কেঁদেকেটে নিজের বেহাল দশা করে ফেলেছে। সারা দিন পা'গ'লামি করেছে।"
মুক্তা শিকদার বলেন,
"আমাদের মেয়ে কাগজে-কলমে এডাল্ট হলেও, আমাদের চোখে এখনো একেবারে ছোট্ট। খাওয়া-ঘুম ছাড়া জীবনের কিছুই বোঝে না, কোনো কাজও পারে না। আমরা ওকে এখনই বিয়ের দায়িত্বে ফেলতে চাই না। মেয়েটা এখনো আমার আঁচলের ছায়াতেই থাকে। তার উপর, ওর ভাইয়া যদি ওর বিয়ের কথা শোনে তাহলে ফোনের মধ্যেই তুলকালাম কান্ড বাঁধাবে।"
চলবে more...
ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক কমেন্ট করবেন। পরবর্তী পার্ট আগে আগে পড়তেপেজ টি লাইক ফ*লো দিয়ে রাখবেন
No comments: