Header Ads Widget

test

সুদর্শন_ভ্রমর পর্বঃ০১

 


সুদর্শন_ভ্রমর পর্বঃ০১

'আপনার সাথে আমার খালামণির বিয়ের কথা চলছে।আর আপনি এসেছেন আমাকে প্রেম নিবেদন করতে!আপনার থেকে এটা আশা করি নি।ছিঃ'
ক্ষিপ্ত ও রাগান্বিত স্বরে কথাগুলো বলে শীতল ছাঁদ থেকে নেমে যেতে উদ্যত হলেই সামনে থাকা পুরুষটি তার বলিষ্ঠ হাতে ওকে নিজের সাথে পুরোপুরি মিশিয়ে একটু ঝুঁকে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল,'তোমার খালার সাথে আমার বিয়ের কথা চললেও বিয়ে হয় নি।আর তোমার খালাকে আমি ভালোবাসি না।আমি তোমাকে ভালোবাসি।'
'আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না।'শীতল মুখের ওপর কথাটা বলল।পুরুষটি আর একটা কথাও বলল না।তড়িৎ গতিতে শীতলের ওষ্ঠ দখল করে ফেললো।শীতল দু-হাত দিয়ে ছাড়াতে চেয়েও পারলো না।পুরুষটি নিজের মর্জিমতো শীতলকে ছেড়ে দিয়ে চোখে চোখ রেখে ঠান্ডা কন্ঠে বলল,'আমাকে ভালোবাসা ছাড়া তোমার সামনে আমি আর দ্বিতীয় কোনো অপশন রাখবো না,কামিনীফুল।'
শীতল ফুঁসে উঠে বলল,'আপনার আসল রুপ আমি সবার সামনে নিয়ে আসব।খালামণি,নানাভাই,মামা,মামী সবাইকে বলব আপনি কেমন।'
সাফওয়ান হেসে ফেললো শীতলের কথায়।চট করে পরপর দু'তিনটা চুমু খেয়ে বলল,'যাও বলে দাও।এখন তো তাও এই বাড়িতে থাকতে পারছো,খেতে পারছে।তখন এটাও পাবে না।তুমি কি মনে করো তোমার কথা সবাই বিশ্বাস করবে গাধা মেয়ে?সবাই ভাববে আমি না উল্টো তুমি আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছো।'
শীতল ভাবলো আসলেই সাফওয়ানের কথাগুলোই সত্যি।ওর মন খারাপ হয়ে গেলো কিন্তু নিজের মন খারাপটা সামলে নিয়ে গলায় ঝাঁঝ নিয়ে বলল,'ছাড়ুন আমাকে।'
'ছাড়ব না।কি করবে?'
'আমি কিন্তু..'
'চিৎকার করবে?করো।'
শীতল ভীষণ অসহায়বোধ করলো।সাফওয়ান একহাতে ওর চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বলল,'ছাড়তে পারি একশর্তে।'
'কি শর্ত?'
'আজ রাতে সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আমার ঘরে আসবে।'
শীতল চোখ বড়বড় করে বলল,'অসম্ভব।'
'সম্ভব।তুমি যদি না আসো তো আমি আসব।তখন সবাই জানবে।কোনটা ভালো হবে বলো?'
নিজেকে বাঁচানোর জন্য শীতল মিথ্যা আশা দিয়ে বলল,'আচ্ছা,আসব।'
সাফওয়ান এবার ওকে ছেড়ে দিয়ে বলল,'ঠিকাছে,যাও।রাতে দেখা হবে।'
শীতল সাফওয়ানের ঘর থেকে বের হতেই ছোটো খালা টুম্পা শীতলের হাত ধরে ফেললো।তারপর টেনে নিজের রুমে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে সপাটে চড় দিয়ে ক্ষিপ্ত স্বরে বলল,'তুই সাফওয়ানের রুমে গিয়েছিলি কেনো?'
শীতল ডান হাত গালে দিয়ে কান্নার স্বরে বলল,'খালামণি উনি কফি চেয়েছিলেন সেটাই দিতে গিয়েছিলাম।'
'কফি দিতে এতক্ষণ লাগে?আমাকে শেখাচ্ছিস?তোর মা'ও ছিলো ন'টি।তুইও তেমন হয়েছিস।খবরদার সাফওয়ানের দিকে চোখ দিবি না।'
'খালামণি তুমি আমাকে ভূল বুঝো না।আমার এরকম কোনো উদ্দেশ্য নেই।'শীতল কৈফিয়ত দেওয়ার স্বরে বলল।
'এখন থেকে সাফওয়ান তোকে ডাকলেই তুই আমাকে বলবি।'
টুম্পা মাথা নেড়ে বলল,'আচ্ছা,খালামণি।'
'এখন যা।'
শীতল টুম্পার ঘর থেকে চলে এলো রান্নাঘরে।সকালের নাস্তা শেষ হয়েছে সবার।এখন দুপুরের খাবারের যোগাড়যন্ত্র করতে হবে।শীতল নিজেকে সামলে নিয়ে কাজে লেগে পড়লো।
শীতলের বড় মামী নিপা বেগম দুপুরের একটু আগে এসে জিজ্ঞেস করলেন,'কি,রে শীতল রান্না হয়েছে?'
'জ্বি,মামী।'
'ছোটো মামী এসেছিলো রান্নাঘরে?'
শীতল মাথা নেড়ে মিথ্যা বলল,'জ্বি,মামী এসেছিলো।ভাতও রান্না করেছে।'
নিপা বেগম চোখা চোখে চেয়ে চলে গেলেন সেখান থেকে।শীতল যদি এখন বলতো ছোটো মামী আসে নি রান্নাঘরে তাহলেই বাধতো দুই মামী মিলে তুলকালাম।খামোখা অশান্তি এড়াতে শীতলকে এরকম কিছু মিথ্যা বলতে হয়।
দুপুরের খাবারের টেবিলে আশরাফ মোল্লা সাফওয়ানের দিকে চেয়ে বলল,'তোমার বাবার সাথে কথা হয়েছে।তারা এই সপ্তাহেই চলে আসবেন।তারা এলেই বিয়ের পাকা কথা হয়ে যাবে।তোমার কোনো আপত্তি আছে?'
সাফওয়ান একবার শীতলের দিকে চেয়ে সুবোধ বালকের মত মাথা নেড়ে বলল,'না,আঙ্কেল।'
'বাহ,বেশ ভালো।এখানে থাকতে সমস্যা হচ্ছে না তো?'
'জ্বি,না আঙ্কেল।'
'এটা তোমরাই বাড়ি।কিছু লাগলে একটুও দ্বিধা করবে না।শীতলকে বলবে।'
সাফওয়ান শীতলের দিকে চেয়ে একটু মুচকি হেসে বলল,'জ্বি,অবশ্যই আঙ্কেল।'
শীতলের রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে।কি ধরনের অসভ্য লোক।সকালে প্রেম নিবেদন করলো আর দুপুরে নানাজানের কথায় হ্যাঁ মেলাচ্ছে।
সবকাজ শেষে বিকেলে শীতল নিপা বেগমের রুমে গেলো।তিনি তখন সিরিয়াল দেখছিলেন।শীতলকে দেখে তীক্ষ্ণ স্বরে জানতে চাইলেন,'কি রে?এখানে কি?'
'মামী সিমিদের বাড়ি যাব একটু।নোটস আনতে হবে।সামনের মাস থেকে পরীক্ষা।'
'আচ্ছা,যা।মাগরিবের আগে চলে আসবি।'
'আচ্ছা,মামী।'
শীতল নিপা বেগমের থেকে পারমিশন নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
শীতলের ভালো বান্ধবীদের মধ্যে সিমি অন্যতম।ঘরের কাজের জন্য শীতল কলেজের ক্লাস করতে পারে না।শুধু পরীক্ষাগুলো দেয় আর সপ্তাহে দু'দিন গিয়ে সিমির থেকে নোটস নিয়ে আসে।আজও নোটস নিয়ে ফিরছিলো শীতল।তখনই রাস্তায় বিপুর সাথে দেখা হয়ে যায়।বিপু ওর দু ক্লাস সিনিয়র।অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে।ওকে পছন্দ করে কিন্তু এখনও বলতে পারে নি।শীতল বোঝে ব্যাপারটা কিন্তু বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকে।বিপু হাসিমুখে এগিয়ে এসে শীতলকে বলল,'সিমিদের বাসায় গিয়েছিলে নাকি?'
'জ্বি,ভাইয়া।'
শীতলের মুখ থেকে ভাইয়া ডাকটা মোটেও পছন্দ নয় বিপুর কিন্তু কিছু বলাও যায় না।বিপু মুখের হাসিটার ধরে রেখেই বলল,'সময় থাকলে চলো একটু বসি!'
'না,না।বাসায় যেতে হবে মাগরিবের আগে।মামী বলে দিয়েছেন।'
'পাঁচ মিনিট বসো একটু চা,বাদাম খাও।'
'না,ভাইয়া।আরেকদিন।'
এটা বলেই শীতল চলে গেলো সেখান থেকে।বিপু আশাহত দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো শীতলের যাবার পানে।এদিকে রাস্তার পাশের একটা কালো রঙের গাড়ির ভেতর থেকে বিপুর দিকে হিংস্র দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সাফওয়ান।
রাতের খাবার শেষে হাতের কাজ গুছিয়ে শীতল নিজের রুমে যেতেই ফোনে একটা টেক্সট এলো।সাফওয়ান টেক্সট করেছে,'আধঘন্টার মধ্যে আসবে রুমে নয়তো কি করব মনে আছে নিশ্চয়ই?'
শীতলের মেজাজ খারাপ হলো।এই লোকটার কিছুদিন পর খালামণির সাথে বিয়ে তবুও পিছু ছাড়ছে না।লম্পট,অসভ্য কোথাকার।এখন আবার না গেলেই পাগলামি করবে।পরে ফেঁসে যাবে ও।সবদিক থেকেই জ্বালা।
শীতল আধঘন্টা বসে অপেক্ষা করলো সবাই ঘুমানোর।সবাই ঘুমিয়ে পড়তেই নিজের ঘরের লাইট অফ করে দরজাটা বাইরে থেকে আঁটকে পা টিপেটিপে সাফওয়ানের ঘরের দিকে চলল।ওর ঘরের সামনে আসতেই ভেতর থেকে সাফওয়ানের একহাত তড়িৎ গতিতে শীতলকে টেনে নিয়ে দরজা আটকে দিলো।
শীতল বিরক্তির স্বরে বলল,'কি সমস্যা আপনার?ডেকেছেন কেনো?'
'আমার পিঠ ব্যাথা করছে।পিঠ'টা টিপে দাও।'
'পারব না।খালামণিকে বলুন।'
'দুপুরেই তোমার নানাজান বলেছে কিছু লাগলে যেন তোমাকে বলি।'
'এটা আমি পারব না।'
'ঠিকাছে কাল তোমার নানাকে বিচার দেব।'
শীতল চোখ,মুখ শক্ত করে বলল,'ঠিকাছে দিচ্ছি।'
সাফওয়ান নিজের শার্ট খুলতে শুরু করলো।শীতল আঁতকে উঠে বলল,'শার্ট কেনো খুলছেন?'
'পিঠ টিপে দিবে না!'
'তো সেটা শার্টের ওপর দিয়েও তো দেওয়া যায়।'
'ফিল আসবে না।'
শীতল দাঁত মুখ খিচে সাফওয়ানের পিঠ টিপে দিতে লাগলো।পেটানো,তামাটে বর্ণের শরীর ভীষণ আকর্ষণীয় লাগছিলো।
কিছুক্ষণ টেপার পর সাফওয়ান বলল,'হয়েছে আর লাগবে না।'
শীতল খুশি হয়ে গেলো।ও ভাবলো এখন ও যেতে পারবে কিন্তু নাহ!সাফওয়ান মির্জা কি অত সহজে ছাড়ার পাত্র! more...

No comments:

720

Powered by Blogger.