Header Ads Widget

test

গল্প মিসকল পর্বঃ১


গল্প মিসকল
পর্বঃ১
বাসর ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই বউ অজ্ঞান । মা সমানে নতুন বউয়ের মাথায় পানি ঢালছেন। সারা বাড়ি জুড়ে বিরাজ করছে নিস্তব্ধতা।
শুধু ব্যতিক্রম আমার বড় ভাই শুভ।সে চিৎকার করে করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছে। আর তার একমাত্র কারণ হল শুভ ভাইয়ার সদ্য বিবাহিত বউ বাসর ঘরে ঢুকে জ্ঞান হারিয়েছেন।
শুভ ভাইয়ের অবস্থা ভীষণ খারাপ। তার বাসর রাতের বারোটা বেজে গেছে। তার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে এখন কেঁদে ফেলবে। কিন্তু বাবা সামনে দাঁড়িয়ে আছে বলে কাঁদতে পারছে না। মা বলতো শুভ ভাইয়া বউ পাগল হবে। মার কথাই দেখি এখন সত্যি হতে চলেছে।
আমার বাবা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জনাব মোঃ আশরাফ চৌধুরী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার বড় ছেলেকে পর্যবেক্ষণ করছে। বাবা খুব রাগি এবং গম্ভীর টাইপের মানুষ। হুটহাট রেগে ওঠেন হুটহাট তার মাথা গরম হয়ে যায়।
কিন্তু আজ তার মাথা ভীষণ ঠান্ডা। কারণ তিনি নিজের পছন্দ করার বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে তার বড় ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। বাবার মতে এখনকার ছেলে মেয়েরা ভালো না। এখনকার ছেলেমেয়েরা নিজেদের পছন্দমতো বিয়ে করে তাদের কাছে বাবা-মার ইচ্ছের কোন দাম নেই। সেখানে তিনি নিজের পছন্দমত ছেলের বউ পেয়েছেন এটা তার জন্য গর্বের বিষয়। কিন্তু তিনি তো আর জানেন না তার বড় ছেলে তার বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে প্রায় তিন বছর হল খিচুড়ি পাকাচ্ছে। জানলে হয়তো বাবা কিছুতেই ভাইয়ার বিয়ে তার বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে দিত না। কারণ বাবা এসব প্রেম-ভালোবাসা মোটেও পছন্দ করেনা। তিনি প্রেম-ভালোবাসার ঘোর বিরোধী।
শুভ ভাইয়ের কান্না কান্না ভাব দেখে বাবা তাকে এক ধমক দিয়ে বলল। এমন ভাব করছো যেন তোমার বউ মারা গেছে। বৌমার কিছু হয়নি ভয় পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। এজন্য মেয়েদের মত কাঁদতে হবে?
ভাইয়া বাবার ধর্মক খেয়ে তোতলাতে তোতলাতে বলল কিকিকি কিন্তু বাবা...
বাবা আবার ধমক দিয়ে বলল ওই বাঁদরটাকে পেয়েছো?
- না "বাবা" ওই শয়তানটা বাসা থেকে পালিয়েছে। ভাইয়া দাঁতের উপর দাঁত চেপে বললো ওই হারামি টাকে পাইলে যে আমি কি করবো।
- বাবা আবার একটা ধমক দিয়ে বলল শুভ ভদ্র ভাষায় কথা বলো। এটা কি রকম ভাষা। ভুলে যেও না ও তোমার ছোট ভাই।
এর মধ্যে ৩-৪ জনকে ভাইয়ার রুমের দরজার সামনে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। বাবা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল কিরে তোদের লিডার কই? ওরা দেখলাম নিজেদের মধ্যে চাওয়া-চাওয়ি করছে। ওদের চুপ থাকতে দেখে বাবা গলা খাকিয়ে জোর গলায় বললেন ওই বাঁদরটাকে যেখানেই দেখবি কান ধরে আমার সামনে নিয়ে আসবি।
বাঁদর মানে বাবা আমার কথা বলছে। আসলে হয়েছে টা কি।
শুভ ভাইয়ের বউ মানে আমার নতুন ভাবির জ্ঞান হারানোর পিছনে সবচেয়ে বড় হাত আমার।
তো কি করেছি শুনুন। বিয়ে বাড়িতে একটু দুষ্টামি না করলে কি বিয়ে বাড়ি জমে বলেন ?তাই বিয়ে বাড়ি জমানোর জন্য আমি আমার সৈন্য বাহিনীকে বলেছিলাম একটা কোলা ব্যাঙ ধরে নিয়ে আসতে। ওরাও কোথা থেকে যেন একটা বড় দেখে কোলা ব্যাঙ ধরে নিয়ে আসছে। তো সেই ব্যাঙটাকে একটা বক্সের মধ্যে রেখে বক্স টা সুন্দর করে সাজিয়ে। বাসর ঘরে টি টেবিলের উপর রেখে দিয়েছি। এত সুন্দর করে সাজিয়েছি যে কেউ দেখে বুঝতেই পারবে না ভিতরে কি আছে।
ভাবি যখন বাসর ঘরে ঢুকেছে তার আগে বারবার করে বলে দিয়েছি। ভাবি বাসর ঘরে ঢুকেই তুমি সবার আগে তোমার জন্য রাখা গিফট টা খুলবে। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি । এত স্পেশাল গিফট এর আগে তোমাকে কেউ দেয়নি।
ভাবি ও মুচকি হেসে বলেছিল ঠিক আছে দেবরজি আমি তোমারে গিফটটা সবার প্রথমে দেখব কেমন।
- আমি মনে মনে বললাম গিফট টা একবার খুলে দেখ এরপর এমন সারপ্রাইজ হবে যে। আমার দেওয়া গিফটের কথা আজীবন মনে রাখবে।
কিন্তু সমস্যা হল ভাবীর ছোট বোন টা কে নিয়ে। সে বারবার কেন জানি আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছিল। আমি ওর দিকে তাকাতেই ভেংচি কেটে সে অন্য দিকে তাকালো। একবার বাগে পেলে একেও মজার দেখাবো। গেট ধরার সময় আমাকে মরিচের শরবত খাওয়াই ছিল ফাজিল মেয়েটা। আমিতো এর প্রতিশোধ নিবোই নিবো। অভ্রনীল চৌধুরীর সঙ্গে ফাজলামি ? আমি অত সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না হুম।
ভাবি কে দেখলাম বাসর ঘরে ঢুকেই গিফটটা হাতে নিল।
আমরা তো সবাই অপেক্ষা করছি ভাবি কখন বক্সটা খুলবে। আর ব্যাঙটা কখন তার কেরামতি দেখাবে।
ভাবি বক্স হাতে নিয়ে প্রথমে বোঝার চেষ্টা করল ভিতরে কি আছে। যখন বুঝতে পারলো না তখন গিফট বক্স টা খুলতে শুরু করলো। র্যাপিং পেপার ছিড়ে বক্স টা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙটা ভাবির গায় লাফ দিল। ভাবি "ওমাগো" বলে একটা চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ল।
আমারে আর পায় কে আমি ওখান থেকে কেটে পড়লাম। আমি শুনেছি মেয়েরা ভীতু হয় তাই বলে এত ভীতু যে একটা ব্যাঙ দেখেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে?
এ ঘটনার পর বাবা হুকুম দিয়েছেন আমাকে দেখতে পেলেই যেন কান ধরে তার সামনে হাজির করানো হয়। এদিকে আমি তার সামনেই গিফট বক্স গুলোর আড়ালে লুকিয়ে সবকিছু দেখছি। আর বাড়ির লোকজন সবাই আমাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আর আমি এখানে বসে বসে মজা নিচ্ছি। কিন্তু সমস্যা হল এখানে প্রচুর মশা। জাহিন কে বললাম অ্যারোসল আনতে কিন্তু ওই মটকু অ্যারোসল আনতে গিয়ে বাবার হাতে ধরা খেয়েছে। আর এখন আমি এখানে মশার কামড় খাচ্ছি।
এই মুহূর্তে এখানে থেকে বেরোনো যাবে না। কারণ বাবার সামনে পড়লেই বাবা এই বিয়ে বাড়িতে ভরা মজলিসে সবার সামনে আমাকে কান ধরে দাঁড় করাবে। এত বড় ছেলে হয়ে সবার সামনে কান ধরলে। আমার ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে। তারমধ্যে বাড়িতে অনেক সুন্দরীর রমণীদের আগমন ঘটছে। তাদের সামনে কান ধরা মানে ইজ্জতের ফালা ফালা। তারচেয়ে এখানে বসে মশার কামড় খাওয়াই ভালো।
হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল। ভাগ্যিস মোবাইল ভাইব্রেট করে রেখেছিলাম। তা না হলে আজ আমার কপালে শনি ছিল। মোবাইল পকেট থেকে বের করার আগেই কল কেটে গেল। আবার কল এলো আমি ধরবো সেই মুহূর্তে আবার কেটে গেল। "মিস কল" কোন ফকিন্নি যে মিসকল দিচ্ছে আল্লাহই ভাল জানে।
হঠাৎ মনে পড়ল ভাবিদের বাসায় দুই তিনটা সুন্দরী কে নাম্বার দিয়েছিলাম ওদের মধ্যে কেউ হতে পারে? কিন্তু দেখে তো ওদের ভাল ফ্যামিলির মেয়ে মনে হল তাহলে এমন ফকিন্নির মতো মিসকল দিচ্ছে কেন?
- হয়তো মোবাইলে ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেছে রাতের বেলা এখন বাসা থেকে বের হতে পারছে না। হুম এটাই হবে বলে আমি নিজেই কল ব্যাক করলাম।
- ফোনের ওপাশ থেকে একটা মিষ্টি মেয়েলি কন্ঠে বলল জানু কই তুমি?
- আমি ফিসফিস করে বললাম আমি তো বাসায় কিন্তু আপনি কে?
- মেয়েটা আবার বলল আমাকে চিনতে পারছ না আমি বৃষ্টি ( আমার ভাবি) আপুর ফুফাতো বোন স্বর্ণা।
- সরি আমি এখনো চিনতে পারছি না
- আরে তোমার সঙ্গে স্টেজে বসে গল্প করলাম না। এরপর তুমি যে আমাকে নাম্বার দিলে ভুলে গেছো এত তাড়াতাড়ি?
- আরে পাগল নাকি তোমার মতো সুন্দরী মেয়েকে কি এতো সহজে ভোলা যায়, তো কি খবর সুন্দরী? সত্যি বলতে আমি তখনো তাকে চিনতে পারিনি। স্টেজে বসে তো অনেক সুন্দরী দের সঙ্গেই কথা বললাম। এটা যে কোনটা
- মেয়েটা একটু লজ্জা পেয়ে বলল ভালো না। তোমার জন্য সেই কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি ছাদে। অথচ তোমার আসার নাম নেই।
- আমি অবাক হয়ে বললাম আমার জন্য অপেক্ষা করছ?
- হুম তুমি না অপেক্ষা করতে বলেছিলে। একটু তাড়াতাড়ি আসো না ছাদে । আর কতক্ষণ অপেক্ষা করব?
- আমি এখন ডেঞ্জারাস এলাকায় আছি বুঝলে। এখান থেকে বেরোনো আমার পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু তোমার মত একটা সুন্দরী মেয়ের জন্য আমি সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারি তবে আমার একটা শর্ত আছে।
- শর্ত! কি শর্ত শুনি?
- আমাকে একটা কিস করতে হবে
- মেয়েটা একটু লজ্জা পেয়ে বলল যাহ দুষ্টু ... ।
- ওসব বললে হবেনা শর্তে রাজি থাকলে বল তাহলে যাচ্ছি আমি।
- তুমি প্রচুর দুষ্টু আছো। তাড়াতাড়ি আসো জানু কিস দিবো সাথে আরো অনেক কিছু দেবো।
- মেরা দিল মে লাড্ডু ফুটা । এই মেয়েটা তো দেখি আমার লাইনের আমারে আর পায় কে। তুমি ওয়েট করো 5 মিনিট আমি 10 মিনিটের মধ্যে আসতেছি।
- এটা কেমন কথা! আচ্ছা তুমি এখন কোথায় আছো বলো তো?
- ভাইয়ার রুমের সামনে গিফট বক্স গুলো আছে না ওর পিছনে লুকিয়ে আছি। আমার বলতে দেরি কিন্তু ফোন কাটতে দেরি হলো না।
হায় হায় ভাবির ফাজিল বোনটা দেখি আমার দিকে আসতেছে। ও কিভাবে জানল আমি এখানে? এই যা এবার তাহলে ধরা খাইছি
ফাজিল মেয়েটা আমার সামনে থেকে গিফট বক্স সরিয়ে বলল আঙ্কেল এই যে আপনার ফাজিল ছেলে দেখুন এখানে লুকিয়ে আছে।
চৌধুরী সাহেব ছুটে চলে এলেন আমার কাছে। আমিতো মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়তেছি। এখন নির্ঘাত আমাকে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার চোখ দুটো আগ্নেয়গিরির মত টকবক করছে । পারলে সে এখনি আমাকে তার চোখের আগুনে পুড়িয়ে মারবেন।
বাবা আমার এক কান ধরে তার রুমে নিয়ে আসলেন। আসার সময় দেখলাম মেয়েগুলো খুব লাফালাফি করতেছে। বিশেষ করে ভাবির ওই ফাজিল বোনটা। আমিও চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম তোকে একবার পাই এরপর তোর অবস্থা খারাপ করে ছাড়ব। মেয়েটা মুখ ভেংচি কেটে কাঁচকলা দেখিয়ে আবার ভাবি যে রুমে এসে রুমে গেল।
- বাবা আমাকে রুমে ঢুকেই ঠাস করে দরজা লাগালেন। এরপর দরজার পাশে থাকা চোর পিটানো লাঠি হাতে নিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালেন। আমার কান দিয়ে তখন ধুমা বের হচ্ছে । বাবা কি চোর কে পিটানোর লাঠি দিয়ে আমাকে পিটাবে? হায় আল্লাহ এখানে তো বাম নেই যে বাবার হাত থেকে আমাকে বাঁচাবে। আল্লাহ তুমি আমাকে রক্ষা করো আমি আর জীবনে মেয়েদের দিকে তাকাবো না। থুক্কু তাকাবো কিন্তু আগের চেয়ে কম প্লিজ আল্লাহ রক্ষা করো আমি মনে মনে বললাম।
- বাবা ঠাস করে একটা বাড়ি মারলে। আমি চোখ বন্ধ করে "ও মাগো" বলে চিৎকার করে উঠলাম। কিন্তু একি আমি ব্যথা পেলাম না কেন?
চোখ খুলতেই দেখলাম বাবা বেডের উপর বসে হাসতেছেন। আমাকে চোখ খুলতে দেখে তার পাশে বসতে বলে । জোরে হাসতে হাসতে বললেন আরে ভয় পাইছিস নাকি?
- আমি কাঁপতে কাঁপতে বাবার পাশে বসতে বাবা আমাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল, আরে দেবর হয়েও তুই যদি ভাবির সাথে একটু আধটু মশকরা না করিস তাহলে কে করবে হ্যাঁ?
তোর জ্যাঠার বিয়েতে আমি কি করেছিলাম জানিস।
আমি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকাতেই বাবা বললেন একটা সাপ ধরে পলিথিন এর মধ্য করে বালিশের নিচে রেখে দিয়েছিলাম বলেই হো হো করে হেসে উঠলো
আমিতো চোখ বড় বড় করে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম। more...
গল্প মিসকল
পর্বঃ১
বিশেষ দ্রষ্টব্য ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। ভালো লাগলে পরবর্তী পর্ব দিব তা না হলে আর দিব না।
আপনারা অনেকেই অভিযোগ করেন যে প্রতিটা গল্পের প্রথম পর্ব পড়েন কিন্তু পরে পর্বগুলো আর পড়তে পারেন না মানে খুঁজে পান না।
আসলে এই সমস্যাগুলো হওয়ার কারণ হলো আপনারা সম্ভবত পেজটিকে ফলো করে রাখেননি।
যদি গল্পগুলো ভালো লাগে তাহলে পরবর্তী পর্বগুলো পাওয়ার জন্য পেজটিকে ফলো করে রাখতে হবে।
তাই পেইজে নতুন না থাকলে পরবর্তী পর্ব পাওয়ার জন্য পেজটিকে ফলো করে রাখুন।
আর যদি এমন হয় যে পেজ ফলো করা আছে তবুও পরবর্তী পর্বগুলো পাচ্ছেন না তাহলে দয়া করে পেইজের পোস্টে লাইক এবং কমেন্ট করবেন আশা করি তাহলে প্রতিটি পর্ব পোস্ট করার সাথে সাথে আপনাদের সামনে চলে যাবে।
ধন্যবাদ

No comments:

720

Powered by Blogger.