Header Ads Widget

test

#লাল_শাড়িতে_প্রেয়সী (পর্ব) 1


#লাল_শাড়িতে_প্রেয়সী

লাল শাড়ি পরে আয়নার সামনে দাঁড়ালো রিদিতা। রুমের হালকা আলোয় তার হাতভর্তি কাঁচের চুড়ি এক অপার্থিব ঝিলিক ছড়িয়ে পড়ছিলো চারপাশে। শাড়ির আঁচলটা খানিকটা তুলে গুঁজে নিয়েছে কোমরে, তাতেই তার ফর্সা উদর উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে আয়নায়। আয়নার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে হঠাৎ যেন নিজেকেই চিনতে পারলো না সে। আজ যেন একটু বেশি সুন্দর লাগছে নিজেকে।
হাতের ফোনটা তোলে মুখের অর্ধেকটা চুলে লুকিয়ে, ফোন দিয়ে মুখটা ঠেকে নিয়ে সেলফি তোলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। অতঃপর নিজের জায়গা থেকে ঘুরে পেছনে থাকা বান্ধবীদের দিকে তাকায়, মুখে এক চিলতে সংশয়, তবু চোখে রহস্য। এক মুহূর্ত দ্বিধার পর ছবিটা ফরোয়ার্ড করে দেয় অচেনা একটি নাম্বারে। বার্তার সাথে জুড়ে দেয় কিছু শব্দ,
“জানু..! I miss you.. 😘
সাত সাগর আর তেরো নদী... পার হয়ে আপনি আসতেন যদি…” ❤️
এই দুটি লাইন লেখামাত্রই ধপ করে ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে দেয় বিছানার এক পাশে। হাত কাঁপছে, কপাল ঘেমে উঠেছে। ঠোঁটদুটো তীরবেগে কাঁপছে। কোনোভাবে নিজেকে সামলে হাঁটু জড়িয়ে ধপ করে কাউচে বসে পড়ে রিদিতা।
রিদিতা রায়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স বিভাগে সদ্য ভর্তি হওয়া এক ছাত্রী। সামনে ইনকোর্স পরীক্ষা, তাই বন্ধুদের নিয়ে গ্রুপ স্টাডির পরিকল্পনা হয়েছিলো বান্ধবী আহিয়ার বাসায়। কিন্তু পড়াশোনা যতটা না হলো, তার চেয়েও বেশি হলো হাসি-ঠাট্টা আর খেলাধুলা।
এমন সময় তাদের খেলা "ডেয়ার অ্যান্ড ট্রুথ"-এ ঘুরে ঘুরে রিদির টার্ন আসে। তার জন্য বেছে নেওয়া হয় এক চ্যালেঞ্জ, নিজের ক্রাশকে শাড়ি পরে সেলফি পাঠানো, সঙ্গে একটি প্রেমময় বার্তা। সকলের চাপে পড়ে, লজ্জা লুকিয়ে শেষমেশ রিদি কাজটা করেই ফেলে। more...
বান্ধবীরা তো হেসে গড়াগড়ি খায়, আহিয়া বালিশে মুখ গুঁজে হাসছে, নীলা ভিডিও করতে ব্যস্ত। কিন্তু রিদিতার মন ভারী হয়ে আসে। কারণ, তারা জানে না সে বার্তাটা কাকে পাঠিয়েছে। তার ক্রাশ কোনো সাধারণ কেউ নয়। সে একজন প্রভাবশালী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ছেলে, ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি। গুন্জন উঠেছে খুব শিগ্রই সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ দখলে আসবে। রাজনীতি রিদির কখনোই পছন্দ ছিল না, কিন্তু আহাদ রাজা মীরকে প্রথম দিন ক্যাম্পাসে দেখেই যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল সে। তাঁর রিজার্ভ আচরণ, চোখে তীব্র আত্মবিশ্বাস আর চলার ভঙ্গিমা সব মিলিয়ে আহাদের মধ্যে ছিল এক ধরনের নিঃশব্দ অথচ প্রবল আকর্ষণ। শব্দ নয়, দৃষ্টি দিয়েই সে কথা বলে আর সেই দৃষ্টির ভেতরেই রিদি ডুবে গিয়েছিল নিঃশব্দে।
বন্ধুরা জানে না এই বিষয়টা, জানে না রিদির ভালো লাগার মানুষটা ঠিক কতটা প্রভাবশালী। তাই তারা হেসে উড়িয়ে দেয় সবকিছু। কিন্তু রিদিতা জানে এই খেলার পরিণাম একটা খেলাচ্ছলে শেষ নাও হতে পারে।
চট্টগ্রাম, শহরের প্রাণকেন্দ্রে এক রাজনৈতিক কার্যালয়।
বড় কনফারেন্স টেবিল ঘিরে বসে আছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। আলোচনার বিষয় গুরুতর সাম্প্রতিক ক্যাম্পাস আন্দোলন, জেলা কমিটি পুনর্গঠন, প্রেস আসা এই তরুণ নেতা এখন কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বে। তার চোখে-কানে এখনো শহরের রাজপথ, জনগনের নিরাপত্তা আর সাংগঠনিক শৃঙ্খলার কঠিন ছাঁয়া।
তবে হঠাৎ,,
টুং!
একটি মৃদু শব্দে কেঁপে ওঠে তার মোবাইল।
আলোচনায় ডুবে থাকা আহাদ রাজার ভ্রু সামান্য কুঁচকে যায়। বিরক্তি লুকিয়ে রেখে সে ফোনটা উপেক্ষা করতে চায়। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে,
টুং! টুং!
আরও দুটি বার্তা আসে। এবার আর সহ্য হয় না। সে ফোনটা হাতে নেয়।
স্ক্রিনে ভেসে ওঠে একটি অচেনা নাম্বার থেকে আসা ছবি।
লাল শাড়ি পরা এক প্রেয়সী, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। শাড়ির আঁচলে আলতো করে বাঁধা কোমর, উন্মুক্ত উদর, আর শুধু চোখ দু'টো দেখা যাচ্ছে। কোমল চোখে এক রহস্যময়তা। ছবির সাথে লেখা সেই লাইনদুটি,
“জানু...! I miss you... 😘
সাত সাগর আর তেরো নদী..পার হয়ে আপনি আসতেন যদি…”
আহাদের চোখ মুহূর্তে স্থির হয়ে যায়। ছবির পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ড তার চেনা মনে হয়, একদম নিজের রুম!
নিজের বেড, নিজের ড্রেসিং টেবিল, এমনকি সেই জানালার পাশের পর্দাটাও। গলায় আটকে আসে কিছু। হেঁচকি উঠে যায়। গলা খুশখুশ করে কয়েকবা কাঁশি দেয়। সামনে রাখা পানির গ্লাসটা তুলে এক ঢোঁক খায়। পাশে বসা তার অ্যাসিস্ট্যান্ট শাহীন একটু ঝুঁকের ভারে ফোনে নজড় রাখে এক পলক তাকাতেই আহাদ রাজা ফোনটা ঘুরিয়ে দেয়। শাহীন উঠে বলে,
“ভাই, আপনি ঠিক আছেন তো?” more...
আহাদ ধীরে মাথা নাড়ে। একরাশ ভাবনায় ঢেকে যায় চোখ।সে কি ঠিক দেখছে? এটা কি তারই রুম! তার রুমে প্রেয়সীর আগমন ঘটলো কোথা থেকে। সে কিছু একটা ভেবে পকেট থেকে একটি কার্ড বের করে ফোন নাম্বারটি লিখে শাহীনের দিকে বাড়িয়ে দেয়। কণ্ঠে ঠাণ্ডা অথচ তীক্ষ্ণ নির্দেশ,
“এই নাম্বারটার সব ডিটেলস বের কর। কার নাম, কোথায় থাকে, এখন কোথায় আছে, সব কিছু চাই। এভরিথিং, ইমিডিয়েটলি। অ্যাজ ফাস্ট অ্যাজ পসিবল। কুইক,,
শাহীন দ্রুত মাথা নেড়ে বেরিয়ে যায়। আহাদ রাজা আবার আলোচনায় ফিরলেও মন আর সম্পূর্ণভাবে সেখানে নেই। যেন কোথাও একটা ঘূর্ণিপাকে আটকে গেছে তার সত্তা। কেমন এক গা ছমছমে অনুভূতি তাকে ছেয়ে ধরে।
এই মেয়েটা কে?
সে কি তার রুমে দাঁড়িয়েই ছবি তুলেছে?
আর... কেনই বা এমন মেসেজ পাঠালো?
রিদিতা সবে ফোন ছুঁড়ে দিয়েছিলো বিছানায়। মুখে কোনো শব্দ নেই, কিন্তু শরীরটা যেন কাঁপছে ভিতরে ভিতরে। অদ্ভুত এক ভয়, লজ্জা আর উত্তেজনা একসাথে কাজ করছে। আর তার এই অবস্থা দেখে বান্ধবীরা তো হেসেই শেষ। সেই ঘর যেন একরকম কলরবে ভরে উঠেছে।
“রিদি... তোকে আমি বিশ্বাস করতে পারছি না,”
নীলা বালিশে মুখ গুঁজে গড়াগুড়ি খায়,
“তুই আসলেই ছবি পাঠিয়ে দিলি?! তাও পেট উন্মুক্ত করে।”
আনিকা তো হাসতে হাসতে খাট থেকে গড়িয়ে পড়ে বলে,
“ক্রাশ তো আজ ক্র্যাশ করবে তোকে দেখে! রক্তে স্নান হবে তার হৃদয় !”
রিদিতার মুখে তেমন কিছু না বলে, ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। চোখে হালকা রাগ, গালে লজ্জার লালচে ছাঁয়া, আর কণ্ঠে তীব্র অনুতাপের মিশ্রণ। শাড়ির আঁচল খুলতে খুলতে বলে,
“তোদের পাল্লায় পড়ে জানি না কোনদিন আমার গর্দান যাবে! আমি আর এক মুহূর্তও এখানে থাকবো না।”
শাড়ির আঁচলটা ছুঁড়ে দেয় চেয়ারের পিঠে। সে নিজের ব্যাগ গুছাতে শুরু করে। আহিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আরে! আজকেই তো প্রথম এলি আমার বাসায়, এখনই চলে যাবি? খাবারটা অত্যন্ত খেয়ে যা।”
নীলা তাড়াহুড়ো করে বলে,
“আরে আমরা তো এখনও ইনকোর্সের হাফ নোটও শেষ করি নাই! প্লিজ আর একটু থাক না রিদি…”
কিন্তু রিদিতা ব্যাগের চেইন টেনে গম্ভীর গলায় বলে,
“তোদের যা খুশি কর, আমি গেলাম। দেরি হলে আবার বুবু শুরু করে দেবে হরতাল।”
আনিকাও ব্যাগ হাতে নিয়ে উঠে এসে বলে,
“আমিও যাবো। সন্ধ্যা হয়ে গেলে আব্বু বাসায় ঢুকতে দেবে না। একদম প্যারা।”
তাদের গুছগাছ শুরু হয়। হালকা অস্বস্তির ছাঁয়া ছড়িয়ে পড়ে ঘরে।
একই সময়ে: চট্টগ্রামে, রাজনৈতিক অফিস।
ঘড়ির কাঁটা আধঘণ্টা ঘুরেছে। কনফারেন্স রুমের দরজা ধীরে খুলে গেল। ভেতরে ঢোকে শাহীন। চোখেমুখে তীব্র তাগিদ আর কিছু উত্তেজনার ছাঁপ। সে আহাদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
“ভাই, সব ডিটেইলস আমার হাতে।”
আহাদ একটু গম্ভীর হয়ে বলে,
“তাহলে দাঁড়িয়ে আমার চেহারে দেখছিস কেনো? ফাস্ট বল।”
শাহীন হাতে থাকা কাগজগুলো একে একে খুলে বলতে শুরু করে,
“এই নাম্বারটা যার নামে রেজিস্টার্ড, তার নাম ঈশানী রায়ান। জন্ম ১৯৯৬, ভোলা জেলার বরিশাল অঞ্চলে। তবে এই মূহুর্তে লোকেশন দেখাচ্ছে…”
সে হঠাৎ থেমে যায়। কপালে ভাঁজ পড়ে। একপ্রকার চিৎকার করে বলে,
“ওহহহহ!”
আহাদ চোখ সরু করে বলে,
“তবে কী? কী ওহহহ করছিস? অবস্থান কোথায়?”
শাহীন একটু মাথা নিচু করে ধীরে বলে,
“মীর হাউজ, ভাই… আপনার বাসা।”
সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। এক চিলতে বিস্ময়ের সাথে গলার সুর বদলে যায়,
“মানে আমি ভুল দেখিনি। ওই রুমটা তাহলে আমারই ছিলো! ছবিটা তোলা হয়েছে আমার বেডরুমে!?”
শাহীন একটু দ্বিধা নিয়ে বলে,
“ভাই... আপনি কি মেয়েটাকে চিনেন? না মানে... উনি তো আপনার ঘরেই...”
“চিনলে কি আর তোকে দিয়ে ডিটেলস বের করাতাম? রাবিশ!”
“সরি ভাই,” বলে পিছু হটে শাহীন।
আহাদ রাজা গভীরভাবে কিছু একটা ভাবে, দু আঙ্গুল দিয়ে কপাল ঘষে অতঃপর ধীরে বলে,
“শাহীন, আমাদের এখনই ঢাকায় ফিরে যেতে হবে। সব ব্যাবস্থা কর যত দ্রুত সম্ভব, কুইক।”
“ওকে ভাই,” মাথা নেড়ে দ্রুত বেরিয়ে যায় শাহীন।
আহিয়াদের বিশাল বাড়ির লোহার গেটটা পেরিয়ে এল রিদিতা। গেটটা এমনিতেই ভারী, রীতিমতো শব্দ করে বন্ধ হলো পেছনে। তবে তার কানে যেন কিছুই পৌঁছাচ্ছে না।
কান নয়, এখন কাজ করছে কেবল হৃদয় আর সেটা যেন তার বুক ভেঙে বাইরে চলে আসবে এই মনে হচ্ছে। ধুকধুক... ধুকধুক... তীব্র, অনিয়ন্ত্রিত, আতঙ্কিত স্পন্দনে কাঁপছে বুকটা।
রাস্তার কিনারায় দাঁড়িয়ে, চারপাশে যেন কিছুই দেখছে না সে। ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে কাঁপা কাঁপা আঙুলে টেনে বের করে ফোনটা। স্ক্রিনে চোখ পড়ে সঙ্গে সঙ্গেই গলার কাছে কিছু একটা দলা পাকিয়ে ওঠে। সেই নাম্বার....
সেদিন কলেজের অফিস রুমে গিয়েছিলো ছুটি চাইতে, আর তখনই টেবিলের উপর একটা কার্ড পায় আহাদ রাজা মীর, সে আবেগের বসে নাম্বারটা কালেক্ট করেছিলো। তবে ভাবেনি সেই নাম্বারে কখনো ম্যাসেজ করবে।
কৌতূহল চাপতে না পেরে হোয়াটস অ্যাপ খুলে দেখে।
ম্যাসেজটি সেখানে সিন করেছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। তবু একধরনের ভয় জমে ওঠে মনে, যদি সে পড়ে থাকে?
যদি দেখে ফেলে? তহলে তো তার রক্ষা নাই, নিশ্চয়ই এর জন্য তার শাস্তি ও হতে পারে। সে একটা ঢোক গলাধঃকরণ করে।
রিদিতা বুঝতে পারে, অপর প্রান্তের লোকটি তার মতোই হয়তো Last Seen অফ করে রেখেছে। তাই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না। সে গভীর শ্বাস নেয়। এক মুহূর্ত আর দেরি না করে সেই ম্যাসেজটা ডিলিট ফর এভরিওয়ান করে দেয়। এক সেকেন্ড অপেক্ষা করে আবারো। এবার পুরো নাম্বারটাই কন্ট্যাক্ট থেকেই মুছে দেয়। ফোনটা বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে। চোখ বন্ধ করে ফেলে, যেন বুকের উপর চাপ দিয়ে একটু প্রশান্তি নিতে পারে। একটা দীর্ঘ, নীরব নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে।
ধীরে ধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকায় পেছনে। যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল আহিয়াদের বিশাল বাড়ি। বাড়িটা যেন কোনও সাধারন বাড়ি নয়। চারপাশ উঁচু দেয়ালে ঘেরা। উপর দিয়ে প্যাঁচানো কাঁটাতার, যেন নিরাপত্তার মোড়কে লুকিয়ে রাখা গোপন কোন ইতিহাস। তিন তলা অফ হোয়াইট দালান, সামনের দিকে কালো রঙের র‌্যাম্প ঘেরা একটা বিসাল গ্যারেজ, যেখানে চার পাঁচটা সাদা কালো গাড়ি সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে। সামনে সুইমিংপুল আর ছাদের ধারে জাতীয় পতাকা, বাগানে সাজানো বিদেশি গাছগাছালির সারি যেন একটু ঝুঁকে অভিজাতত্বের আভা বিলিয়ে দিচ্ছে।
সবচেয়ে চোখে পড়ে গেটের পাশের সাদা পাথরের ফলকটি,
যেখানে চকচকে রুপালি অক্ষরে খোদাই করা,
"Mir House"
শ্বেত পাথরের উপর রোদ পড়ে এখনো ঝলমল করছে নামটা।
রিদিতার একমূহুর্তের জন্য মনে হয় যেন কোনো মন্ত্রীর বাড়ি।
যেখানে ঢুকতে গেলে লাগে পরিচয়, প্রমাণ, কিংবা অনুমতি।
তার হঠাৎ গলা শুকিয়ে আসে। এদিকে আনিকা তার থেকে কয়েক কদম দূরে এগিয়ে গিয়েছে, হঠাৎ ঘুরে তাকিয়ে বলে,
“কিরে? দাঁড়িয়ে পরলি কেনো?”
রিদিতা চমকে তাকায়, একটু হেসে মাথা নাড়ে।
“কিছু না।”
“আমি কিন্তু চললাম। দেরি হয়ে গেলে আব্বু বাসায় ঢুকতেই দেবে না। তুই কিন্তুু সাবধানে যাস।”
এই বলে আনিকা রিকশার উঠে পরে। রিদিতা হাত তুলে নীরব বিদায় জানায়। পরে সে পাশের রাস্তার দিকে এগিয়ে যায়, বুকের ভেতর চাপা কাঁপন নিয়েই।
একটা হলুদ রঙের রিকশা দেখতে পেয়ে সে ডাকে,
“মিরপুর এগারো।”
রিকশাওয়ালা মাথা নাড়িয়ে রিকশা থামায়। রিদিতা উঠে বসে পড়ে। হাতভর্তি কাঁচের চুড়ি সামান্য বেজে ওঠে, সোনার পাতার মত ঝঙ্কার তুলে। তাড়াহুড়োয় চুড়ি খুলে রেখে আসতে ভুলে গেছে। সূর্যটা তখন হেলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। আকাশের রঙ মেখেছে কমলা আর লালচে ছাঁয়ায়। ঠিক যেন তার আজকের পরা শাড়ির মতোই রঙিন, তবে ভিতরে ভিতরে গভীর।
অন্যদিকে আহাদ রাজা একা বসে থাকে কিছুক্ষণ। ফোনটা আবার হাতে নেয়। সেই আগন্তুক নাম্বারে ঢুকে দেখে, more...
“This message was deleted.”
কিন্তু ছবিটা তো সেভ হয়ে গেছে অটো হোয়াটসঅ্যাপে সেটাই আবার ভেসে উঠে ফোনের স্ক্রিনে। লাল শাড়ি, উন্মুক্ত উদর, রহস্যময় চোখ, আয়নার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে এক প্রেয়সী। আহাদ রাজা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ছবিটার দিকে। অতঃপর ঠোঁট কামড়ে ধরে এক তীক্ষ্ণ অথচ ব্যঙ্গাত্মক হাসি দিয়ে থেমে থেমে বলে,
“আই শুয়্যার... জা....নু!”
তার চোখে আগুন আর ঠোঁটে খেলার ছাঁয়া।
“আপনাকে যদি সামনাসামনি পাই, কি হবে আমি নিজেও জানি না। আমার উনএিশ বছরের জীবনে এমন ঘটনা প্রথম ঘটলো। তাও আবার সেই কারিগর আপনি নিজে?”
তার চোখের দৃষ্টিতে কেমন যেন অদ্ভুত এক ছাঁয়া খেলে যায়।
“রেডি থাকেন, মিস জা...নু! সেই... অনাকাঙ্ক্ষিত দিনগুলোর জন্য।”
চেয়ারটা ঠেলে সরিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। তার চলার ভঙ্গিতে দৃঢ়তা, চোখে একধরনের প্রতিজ্ঞা। রুমের দরজা খোলে গম্ভীর মুখে, দ্রুত পায়ে আহাদ বেরিয়ে যায় কনফারেন্স রুম থেকে।
এদিকে রিকশা চলতে শুরু করে, কিন্তু রিদিতার মনের ভিতর এখনও তোলপাড়, সে মনেমনে দোয়া দুরুদ পরতে থাকে যেনো তার পাঠানো ছবি আর ম্যাসেজ না দেখে। তবুও প্রশ্ন থেকে যায়,
সেই ছবি কি সে দেখেছে?
যদি দেখে থাকে... তাহলে? তাহলে কি তেমন কিছু হবে? তার কি এত সময় আছে নাকি? অযাথা এই সবের পিছনে সময় নষ্ট করবে না নিশ্চয়ই!
এই অজানা আশঙ্কার ভিতর দিয়েই চলতে থাকে রিদিতা রাইয়ানের জীবনের সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত অধ্যায়ের দিকে more...

No comments:

720

Powered by Blogger.