চট্টগ্রাম থেকে মাত্র চল্লিশ মিনিটের ভেতরে প্রাইভেট বিমানে করে ঢাকায় নেমে আসে আহাদ রাজা। বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফিরতে আরও পনেরো- বিশ মিনিট লাগে।
সময় তখন সন্ধ্যা সাতটা পঁইতাল্লিশ। বাড়ির বিশাল গেট দিয়ে একসাথে ঢোকে তিনটি কালো গাড়ি। সামনের গাড়িতে দু’জন এসিসট্যান্ট নাহিদ আর শাওন, সাথে নিরাপত্তারক্ষী।
মাঝের গাড়িতে আহাদ রাজা নিজে, সাথে তার বিশ্বস্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট শাহীন। পিছনের গাড়িতে তার ব্যক্তিগত গার্ডদের দল, কড়া পাহারায়। গাড়ির কাঁচ ভেদ করে ঘরের আলো ঝলমল করে চোখে আসে। গাড়ি থামতেই ভেতরে হঠাৎ নিস্তব্ধতা নেমে আসে, যেন বাড়ির প্রতিটি ইটপাথর জানে বাড়ির ছেলে ফিরে এসেছে। আহাদ নামতেই বুকের ভেতরে কেমন অজানা অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে। ভেতরে গটগট শব্দ তুলে হাঁটতে শুরু করে।
ড্রইংরুমে ঢুকতেই চোখে পড়ে চারপাশের দৃশ্য। কোণার চেয়ারে চোখে চশমা, ফোনে মনযোগ দিয়ে বসে আছেন তার মা আফরোজা শেখ। গম্ভীর মুখ, তবু চোখেমুখে একটা অদৃশ্য মায়া। আরেক কোণে তার ছোট চাচি মেয়েকে পড়াচ্ছেন নয় বছরের আদিবা। আহাদ তাকে ‘চাচি আম্মু’ বলেই ডাকে। আদিবা খাতায় লিখছে, আর তার মিষ্টি গলার জবাব শুনে বোঝা যায় পড়ার চাপ তাকে খুব একটা স্পর্শ করে না।
এদিকে মেঝেতে আধশোয়া হয়ে কানে হেডফোন গুঁজে গেম খেলছে তার চাচাত ভাই আদিল মীর। বয়স বাইশ পেরিয়ে তেইশ ছুঁইছুঁই, অথচ তার বাঁদরামি এখনো যায়নি।
কোণার আরেক পাশে তার বিদেশি পোষা কুকুরগুলোর সাথে খেলা করছিলো ছোট চাচা আসফাক মীর। কালো কুকুরটার নাম সিরিয়াস, বাদামি কুকুরটার নাম কোকো। আহাদ না থাকলে চাচাই ওদের যত্ন নেন। তার সাথে আহাদের একটা আলাদা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। চারপাশে কর্মচারীরা নীরবে কাজ করে যাচ্ছে।
আহাদ এবার দ্রুত সিঁড়ির দিকে এগোতেই চাচা ডাক দেন,
“আহাদ! এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি? কোনো ঝামেলা হলো নাকি? অস্হির দেখাচ্ছে তোকে।”
আহাদ মাথা নেড়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“না চাচু। কাজ শেষ, তাই চলে এলাম।”
তারপর তার মায়ের দিকে এগিয়ে যায়, আহাদ মাথা সোজা করে সালাম দেয়,
“আসসালামু আলাইকুম আম্মা।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। এত তাড়াহুড়ো করছো কেনো? কী হয়েছে?”
আহাদ জোর করে মুখ শক্ত রাখে।
“কিছু না আম্মা।”
আর কিছু না বলে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় উপরে, সোজা নিজের রুমে। রুমে ঢুকতেই বুকের ভেতরে আবারও কেমন এক অচেনা অনুভূতি ভর করে। একবার চোখ বুলায় চারপাশে। সবকিছু যেন স্বাভাবিক...
তার দৃষ্টি আচমকা আটকে যায় চেয়ারের উপর ফেলে রাখা লাল শাড়িতে। মুহূর্তেই বুক ধক করে ওঠে। এটাই তো সেই শাড়ি... যেটা পড়ে এক প্রেয়সী তার কাছে ছবি পাঠিয়েছিলো। শাড়িটা হাতে তুলে নিয়ে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে,
“শাড়ি এখানে পড়ে আছে... তাহলে প্রেয়সী গেল কোথায়?”
কণ্ঠ হঠাৎ ভারি হয়ে ওঠে। সে উচ্চস্বরে চিৎকার করে ডাকে,
“আহিয়া! আহি...”more...
দৌড়ে আসে তার ছোট বোন, বিস্মিত চোখে তাকায়,
“ভাইয়া, কী হয়েছে? এভাবে চেঁচাচ্ছ কেনো?”
আহাদ দাঁত কিড়মিড় করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,
“আমার রুমে কে এসেছিলো?”
আহিয়ার দৃষ্টি এক মুহূর্তেই শাড়ির দিকে আটকে যায়। মনে মনে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। ঠোঁট কামড়ে ভাবে,
“হায় আল্লাহ! রিদি... তুই এটা কী করলি! শাড়িটা ভাইয়ার রুমে রেখেই চলে গেলি। আমাকে তো ফাঁসিয়ে দিলি।”
আহাদ আবার গর্জে ওঠে,
“কী হলো? কথা বলছিস না কেনো? আমার রুমে আসার সাহস হলো কি করে?”
আহিয়া তড়িঘড়ি করে বলে,
“সরি ভাইয়া! আসলে… আমরা ফ্রেন্ডরা মিলে গ্রুপ স্টাডি করছিলাম। তোমার রুমটা বড়, তাই এখানেই…”
আহাদ ভ্রু কুঁচকে শাড়ির দিকে তাকায়।
“গ্রুপ স্টাডি? শাড়ি পরে?”
আহিয়া তোতলাতে তোতলাতে,
“না… মানে… পড়া শেষে একটু মজা করে শাড়ি পরিয়েছিলাম আমার এক ফ্রেন্ডকে।”
“এখন কোথায় সেই ফ্রেন্ড?”
“ওরা তো সবাই বাসায় চলে গেছে।”
“বাসা কোথায়? এড্রেস দে, কুইক।”
আহিয়ার চোখে ভয়।
“কেনো? এখন ওদেরকেও কি তোমার রুমে আসার শাস্তি দেবে?”
আহাদের কণ্ঠ বরফের মতো ঠাণ্ডা,
“যদি তুই একা একা সব শাস্তি নিতে পারিস, তাহলে কষ্ট করে ওদের খুঁজবো কেনো।”
“না না দিচ্ছি..”
আহিয়া কেঁপে ওঠে। হাত কাঁপতে কাঁপতে একটা কাগজে ঠিকানা লিখে দেয়। তারপর শাড়িটা হাতে তুলে নিতে গেলে আহাদ হুংকার দেয়,
“তোকে শাড়ি নিতে বলেছি? যেখানে ছিলো, সেখানেই রাখ”
আহিয়া থমকে দাঁড়ায়।
“কেনো?”
“থাপ্পড়ায়া তোর চেহারার নকশা পাল্টায় দিবো। যা বলছি তাই কর।”
আহিয়া শাড়িটা আবার আগের জায়গায় রেখে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। আহাদ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর ধীরে শাড়িটা তুলে মুখের কাছে আনে। নতুন কাপড়ের গন্ধের সাথে মিশে আছে অদ্ভুত এক মেয়েলি সুবাস। যেন কোথাও থেকে এসে তার স্নায়ুতে আগুন ধরিয়ে দিলো।
এক মুহূর্ত নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থেকে শাড়িটা ছুঁড়ে মারে বিছানায়। অতঃপর যেভাবে গটগট করে ঢুকেছিলো,
সেভাবেই গটগট করে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। আহাদ রাজাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে শাহীন, নাদিম আর শাওন দৌড়ে আসে।
নাদিম আগে এগিয়ে এসে বললো,
“ভাই, কি হলো? কোনো সমস্যা কি? আপনাকে সিরিয়াস লাগছে।”
আহাদ রেগে হেসে বলে,
“আমি সিরিয়াস, তাই সিরিয়াস লাগছে!”
শাওনের দিকে তাকিয়ে বললো,
“গাড়ি রেডি কর, এখনই এক জায়গায় যেতে হবে, কুইক।”
নাদিম আর শাওন মাথা নেড়ে দ্রুত ব্যবস্থা করতে এগিয়ে যায়। শাহীন একটু দ্বিধায় থাকে, তারপর জিজ্ঞেস করল,
“ভাই, মেয়েটাকে কি পেয়েছেন?”
আহাদের চোখে আগুন,
“পেলে কি আর এখন খুঁজতে বের হতাম, রাবিশ!”
শাহীন কণ্ঠে একটু শীতলতা ধরে রেখে মাথা নেড়ে বোঝালো। “সরি ভাই।”
এরপর তিনটি গাড়ি একসাথে রাতের শহরে ছুটতে শুরু করে। নীলাকে আহাদ আগে থেকেই চেনে, নীলা তার বাবার বন্ধুর মেয়ে, ছোট বেলা থেকেই আহিয়ার সাথে পড়ে। তাই তার খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু বাকি দু’জনের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সে যে মেয়েটাকে খুঁজছে সে মিরপুর এগারোতে থাকে। রাস্তার ওপর গাড়িগুলোর জরুরি এলার্ম বাজে, লাইট ঝলমল করে। গাড়িগুলো রাতের শহরের আলো কেটে ছুটে চলে, যেন কোনও গোপন উদ্দেশ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।
মিরপুর এগারোতে পৌঁছে, তিনটি গাড়ি থামে এগারো তলা ভবনের সামনে, আহাদের অচেনা প্রেয়সী এই ভবনের ষষ্ঠ তলায় থাকে। তখন সময় প্রায় সোয়া নয়টা। লিফট ধরে তারা ছয় তলায় ওঠে। কয়েকবার কল বেল চাপানো হয় শাওনের দ্বারা, তবু দড়জা খোলা হলো না।
একসময় ভিতর থেকে বের হয় মেয়েলি কণ্ঠ,
“কারা আপনারা? এখানে কি চান?”
নাহিদ ধৈর্য ধরে বলে,
“দড়জাটা খুলুন, তারপর বলছি।”
মেয়েটি এবারও সন্দেহের চোখে বলে,
“দেখুন, আমি আপনাদের চিনিনা। বাসায় তেমন কেউ নেই। আপনারা কাকে চান?”
আহাদের ধৈর্য এখন টানাপোড়েনের শেষ সীমায়। একটু বিরক্ত হয়ে দেয়ালের কাছে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। চোখে কালো চশমা, অবচেতনভাবে ফোন হাতে তুলে আবারও সেই ছবিটা দেখলো। শাওন এবার পরিচয় দিলো। ঠিক তখনই দড়জাটা টিক করে খুলে গেলো। দরজা খুলতেই দেখা যায়, বেগুনি সাদা থ্রি-পিস পরে এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। শাহীন এগিয়ে গিয়ে বলে,
“আমরা ঈশানী রায়ানকে খুঁজছি।”
মেয়েটি ভয় পেয়ে মাথা নাড়ে, “জ্বি… আমি ঈশানী রায়ান।”
আহাদ ফট করে চোখের কালো চশমা খুলে তাকাল। একবার ভালো করে মেয়েটাকে পরখ করল। চোখে চোখে মিলিয়ে দেখে। পরে শাহীনকে মাথা নেড়ে বোঝাল,
“না, এটা সে মেয়ে না।”
শাহীন বুঝে গেল আহাদের ইঙ্গিত। সে আবার ঈশানীর দিকে ফিরে বলল, “দেখুন মিস ঈশানী…”
ঈশানী কিছুটা ভয়ে উওরে বলল,
“মিস না, মিসেস। আমি বিবাহিত। আমার একটা মেয়ে আছে, আট বছরের।”
আহাদ চোখ বড় করে তাকায়।
“হোয়াট?”more...
শাহীন পরিস্থিতি সামলাতে এগিয়ে বলে,
“দেখুন, ঈশানী, আপনি আজকে সারাদিন কোথায় কোথায় গেছেন তার ডিটেলস চাই।”
ঈশানী একটু ভয় পেয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে,
“আসলে আমি তেমন কোথাও যাইনি। শুধু মেয়েকে স্কুলে দিতে গেছি আর আনতে গেছি। আসার পথে হাসপাতাল গিয়েছিলাম, আমার ননদ অসুস্থ, তাই তাকে দেখেতে গিয়েছিলাম। তারপর বাসায় ফিরেছি।”
শাহীন বললো,
“কিন্তু আপনার ফোনের তথ্য তো অন্য কথা বলছে।”
ঈশানী থেমে ভেবে বলে,
“ওহ… আসলে আজকে আমি ফোনটা আমার ছোট বোনকে দিয়েছি। ওর ফোনটা নষ্ট হয়ে গেছে, সার্ভিসিংয়ে দিয়েছে। ওর ভার্সিটি আছে, তাই আজকের জন্য ওকে দিয়েছিলাম।”
আহাদ এগিয়ে এসে দাঁত চেপে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বললো,
“হোয়্যার ইজ ইউর সিস্টার?”
“আসলে ও সন্ধ্যার পর হাসপাতালে গেছে। আমার ননদকে দেখতে।”
“হুইজ হসপিটাল?”
“ইবনে সিনা। কেন? কী হয়েছে? কি করেছে রিদি...!”
আহাদ এক মুহূর্ত থমকে হেসে ফিসফিস করে,
“রি…দি…”
শাহীন পরিস্থিতি সামলাতে বলে,
“নাথিং। জাস্ট একটা মিস্টেক হয়েছে। আমরা আসি।”
কোনো প্রশ্ন না করেই তারা দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। ঈশানী একটু অবাক হয় তাদের এমন আচরনে।
★
পরপর তিনটি কালো গাড়ি এসে একসাথে ব্রেক কষলো ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে। হেডলাইটের আলো যেন পুরো গেটটাকে অচেনা করে তুললো। গাড়ি থেকে প্রথমে নেমে এল আহাদ রাজা। পা মাটিতে রাখতেই তার চোখ চারদিকে ঘুরলো। এতো এতো মানুষের ভিড়…
ডাক্তারের সাদা কোট, রোগীর স্বজনের অস্থির দৌড়ঝাঁপ, স্ট্রেচারে ছুটে চলা নার্স। এ বিশাল ভিড়ে সে কিভাবে খুঁজে বের করবে তার অচেনা প্রেয়সীকে?
কপালের দু’পাশে আঙুল চেপে ধরে মাথা ঝাঁকালো আহাদ।
তারপর সোজা গার্ডদের দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে দিলো।
এক নিমিষে তার লোকগুলো পুরো হাসপাতালের ভেতরে ছড়িয়ে পড়লো। প্রত্যেকটা রিসেপশনে গিয়ে প্রশ্ন একটাই,
“রিদি নামে কোনো রোগী বা ভিজিটর আছেন?”
কিন্তু উত্তর মেলেনি। সবাই মাথা নেড়ে না বলেছে। কিছুক্ষণ পর বুঝলো, এভাবে খুঁজলে পাওয়া অসম্ভব। হতাশ হয়ে গাড়ির বোনেটে হেলান দিলো আহাদ রাজা। তার মাথা ভারী হয়ে আসছে। চোখ বন্ধ করে গুন গুন করে,
“বন্ধু ব্রবতি দে না আমি.. খুঁজি তোমারে...
তুমি কোথায় আছো কোথায়.. দেইখা যাও আমারে...”
ঠিক তখনই, তার পাশ ঘেঁষে এসে ম্যানুয়াল হুইলচেয়ারে করে দাঁড়ালো এক অন্ধ ভিক্ষুক। হাতে মাইক, ভিক্ষার সুরেলা সুরে গাইছে,
“আল্লাহর নামে একটু দান করেন…
আমি অন্ধ মানুষ.. অসহায় মানুষ... ঠিক মত খাইতে পাই না, দয়া করে দান করেন...”
ভিক্ষুকের কণ্ঠ যেন এক ঝলক বিদ্যুতের মতো আঘাত করলো আহাদের মাথায়। একটা বুদ্ধি খেলে গেলো তার মাথায়।
“শাহীন!”
আদেশের মতো ডাকলো সে।
সাথে সাথে তার লোকগুলো ছুটে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনশো পঁয়এিশটা মাইক নিয়ে হাজির হলো, হাসপাতালের প্রতিটি কোণে মাইক বসানো হলো। তারপর এক ঝড়ের মতো ভেসে এলো আহাদের কণ্ঠ,
“হ্যালো… মিস জা...নু, ওরফে রিদি। আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, অতি দ্রুত হাসপাতালের মূল গেটের কাছে চলে আসুন। কুইক!” more...
পুরো হাসপাতাল থমকে গেলো। নার্স, ডাক্তার, রোগী, সবাই হাঁ হয়ে শুনছে। মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে গেলো এক মুহূর্তে।
কৌতূহলী চোখে অনেকে জড়ো হলো মূল গেটের সামনে।
আবারও গর্জে উঠলো সেই কণ্ঠ,
“রিদি! আই নো, আপনি আমাকে শুনতে পাচ্ছেন। দুই মিনিটের মধ্যে আপনি যদি না আসেন, তাহলে পুরো হাসপাতাল উড়িয়ে দেবো। তাই যত দ্রুত পারেন আসুন, কুইক!”
চারদিকে গুঞ্জন উঠলো। মানুষের ভিড় জমলো আহাদের চারপাশে। অনেকেই ফিসফিস করতে লাগলো,
“কে এই রিদি?”
“আসলে কী হচ্ছে?”
এরই মধ্যে তিনজন মেয়ে এগিয়ে এলো সামনে। প্রত্যেকে জানালো, “আমার নাম রিদি।”
আহাদ একে একে তিনজনের দিকে তাকালো। তাদের চোখে চোখ রাখলো, পরখ করলো গভীরভাবে। কিন্তু না!
এদের কারো ভেতর নেই সেই অচেনা পরিচিতির ঝলক।
শাহীন এগিয়ে এসে বললো,
“ভাই, পুরো হাসপাতালে এই তিনজন ছাড়া আর কেউ নেই রিদি নামে।”
আহাদের চোখে আগুন জ্বলে উঠলো।
“ওই ঈশানী মেয়েটা বলেছিলো তার বোন এসেছে এখানে!
তাহলে এরই মধ্যে হাওয়া হয়ে গেলো?”
নাহিদ নিচু গলায় বললো,
“ভাই, আমার মনে হয় আমরা আসার আগেই উনি চলে গেছেন।”
শাহীনও সায় দিলো, “আমারও তাই মনে হয়।”
আহাদ গর্জে উঠলো, “শাহীন, আমাকে জোকার মনে হয়?”
শাহীন প্রথমে ভয় পেয়ে বলে ফেললো,
“হ্যাঁ ভাই…”
তারপর জ্বিভ কামড়ে সাথে সাথে সংশোধন করলো,
“না ভাই!”
আহাদ চোখ রাঙিয়ে বললো, “আমার সাথে ফান করতেছিস?”
“না ভাই।”
“আমি ফান করতেছি?”
“না ভাই।”
“শাহীন!”
আহাদ হুংকার ছাড়লো,
“থাপ্পড়ায়া তোর চেহারার নকশা পাল্টায় দিবো, এখনই আমার সামনে থেকে দূর হয়ে যা। কুইক!”
শাহীন মাথা নিচু করে চলে যেতে উদ্যত হলো। কিন্তু আহাদ আবার গর্জে উঠলো,
“আমি বলেছি বলেই চলে যাবি?”
শাহীন অসহায় হয়ে দাড়িয়ে পরলো, কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। আহাদ আবার রেগে বলে,
“এই যা তো যা..! আমার সহ্য হচ্ছে না তোদের একটারেও, একটাও কাজের না, সবকটা ইউজলেস!”
তার লোকগুলো নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কেউ এক পা ও নড়লো না। শেষমেশ আহাদের ধৈর্য শেষ হলো। সে প্রচণ্ড রাগে গাড়িতে উঠে বসল। ইঞ্জিন গর্জন তুলে তাদের ফেলে রেখে একাই বেরিয়ে গেলো হাসপাতালের সামনে থেকে।
তার লোকেরা নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে শুধু একে অপরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কারো কণ্ঠে কোনো শব্দ নেই। শুধু প্রশ্নটা ভেসে বেড়াতে থাকলো সবার মনে,
“রিদি কোথায় গেলো more...
No comments: