Header Ads Widget

test

আমি_চাইলে_তুমি_আমার



আমি_চাইলে_তুমি_আমার
লেখনীতে_নুসাইবা_এহসানা_হিয়া
পর্ব_০২ [ প্রিয়ন্তীর উপর অ*ত্যাচার ]
বাড়ির চিলেকোঠার রুমে প্রবেশ করে প্রিয়ন্তী। শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেয়, এরপর দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। কাজল কালো চোখে তার অশ্রু বিন্দু কণা জমা হয়েছে, অতীতের সৃতি তার মন মস্তিষ্ক জুড়ে রয়েছে। আজ তিনবছর পর তার ধ্রুব ভাই ফিরে এসেছে, যাকে এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষা করেছে। যার বিরহ তার জীবন বিষাদময় হয়ে গেছে, সারারাত যার অপেক্ষায় মগ্ন থেকে সে নিজের চোখের নিচে কালো দাগ করে ফেলেছে। আজ তার সেই ধ্রুব ভাই, তার স্বামী ফিরে এসেছে। কিন্তু নিয়তির কি নিরর্মম পরিহাস, যার জন্য সে শত বছর অপেক্ষা করছে আজ তার থেকেই শত হাত দূরে।
ভালোবাসার মানুষের থেকে দূরে থাকার কষ্ট সয্য করা যায়, কিন্তু তার চোখে ঘৃণা দেখা যায় না। ঘৃণা শব্দটা উচ্চারণ করতে গিয়ে প্রিয়ন্তির পূর্বের ঘটনার কথা মনে পড়ে। এরপর সে শান্ত হয়ো যায়, তার হাত দিয়ে চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু কণা সযত্নে মুছে নেয়। অতীতে যা হয়েছে এর আসল সত্যি সে ধ্রুবকে জানতে দিবে না, এর জন্য যদি ধ্রুব তাকে ঘৃণা করে তবে করবে। কিন্তু প্রিয়ন্তী নিজের লক্ষ্য থেকে সরে দাঁড়াবে না, তার মনে থাকা অনুভূতি তার অন্তরের অন্তস্তলে গচ্ছিত থাকবে। যাকে সে কখনো প্রকাশ করবে না, অসম্ভব।
অন্যদিকে ধ্রুব তার পরিবারের সকল সদস্যর সাথে কথা বলে তার মা জুথি বেগম, তার বোন মেহুল [ সৃষ্টির নাম মেহুল রাখা হয়েছে ] সহ দাদা, দাদু, চাচা, চাচি সকলের সাথে কথা বলে। ধ্রুব সকলের সাথে হেঁসে কথা বললে ও তার মন এখনো পড়ে রয়েছে প্রিয়ন্তির কাছে। প্রিয়ন্তীর শরীরে নোংরা কাপড়, ওর মুখে থাকা থা*প্পড়ের দাগ, হাতে পায়ে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে পুড়া চিহ্ন যা দেখে ধ্রুব বুকটা মোচঁড় দিয়ে উঠে। তার প্রিয় কি ভালো নেই? বাড়ির সকলে কি তার বউকে অত্যাচার করে দুর্বব্যবহার করে ওর সাথে। ধ্রুব বলে -
"- ওকে আম্মু আমি রুমে যায় এখন। ফ্লাইটে এতো সময় ধরে ট্রাভেল করার কারণে এখন আমার শরীর বড্ড টার্য়াড। ফ্রেশ হব "।
ধ্রুবর কথা শুনো জুথি বেগম বলে -
"- হুম অবশ্যই ধ্রুব যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। আজ দুপুরে সব তোমার পছন্দের খাবার রান্না করা হবে। যাও রুমে যাও "।
ধ্রুব সকলের থেকে বিদায় নিয়ে নিজের রুমে চলো যায়। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময়, প্রিয়ন্তীর কথা মনে পড়ে। তবে সেটা সে নিজের মনে রাখে, এরপর নিজের ব্যাগ পএ নিয়ে রুমো চলো যায়। প্রায় তিনবছর পর তার বাড়িতে ফিরে এসেছে সে, তার রুমে অবস্থান করছে। রুমটা ভীষণ পরিপাটি করে সাজানো, কোথায় ধূলো বালি নেই। কোনো মানুষ যেনো যত্ন সহকারে রুমটা নিয়মিত পরিস্কার করেছে। তিনবছর আগে আর পরের মধ্যে কোনো, তবে শুধু রুমে থাকা মানুষটার মন পাথর হয়ে গেছে।
ধ্রুব ব্যাগ পএ রেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে চলে যায়। চিলেকোঠার রুমের দরজা বন্ধ করে প্রিয়ন্তী এখনো বসে রয়েছে, যদি বাহিরে গেলে ধ্রুবর সাথে তার দেখা হয় মূলত ধ্রুবর চোখের অগোচরে থাকার প্রয়াস করে সে। কিন্তু প্রিয়ন্তীর চেষ্টা সফল হয় না, তার দরজায় নক করে জুথি বেগম। প্রিয়ন্তী দরজায় নক করার শব্দ শুনে সেখানে যায়, এরপর দরজা খুলে দেখে বাহিরে জুথি বেগম দাঁড়িয়ে রয়েছে। জুথি বেগমের মুখে রাগ, আর হিসংস্রতা রয়েছে যা দেখে প্রিয়ন্তী ভয় পেয়ে যায় আর বলে -
"- বড় ম্যাডাম আপনি এখানে? কোনো দরকার ম্যাডাম?
প্রিয়ন্তী কথাটা ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে, জুথি বেগমের এক হাত
প্রিয়ন্তীর মাথার চুলের মধ্যে রাখে এরপর সেখানে শক্ত করে ধরে। প্রিয়ন্তী ব্যাথা পায় না, কারণ এই ব্যাথা তার সয্য হয়ে গেছে। জুথি বেগম চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে রাগী স্বরে বলে -
"- এই ছোট লোকের মেয়ে, তোকে কি এখানে ঘরে বসে থাকার জন্য রেখেছি? বাড়িতে এতো কাজ রেখে ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে ছিলি কেনো? কাজতো একটা ও ঠিক মতো করতে পারবি না, কিন্তু খেতে তো ঠিকিই পারবি। খাবার কি তোর বাপ কিনে দেয়, সে তো মরে গিয়ে বেঁচে গেছে। কিন্তু মরার আগে তোর মতো এমন অপয়া অলক্ষী, আর রাক্ষসকে আমাদের কপালে জুটিয়ে দিয়েছে "।
জুথি বেগমের প্রতিটা কথায় এখন প্রিয়ন্তীর সয্য হয়ে গেছে, তবে তার বাবা মায়ের নামে বাজে কথা শুনা সে পছন্দ করে না। কিন্তু জুথি বেগম সবসময় তার খাওয়া আর বাবাকে নিয়ে খোটা দেয় ইচ্ছা করেই, যাতে প্রিয়ন্তীর কষ্ট হয়। প্রিয়ন্তী নিচুঁ স্বরে বলে more....
"- বড় ম্যাডাম বলেন কি করব? ঘরের কি কি কাজ বাকি রয়েছে?
জুথি বেগম চুলে আরেকটু জোরে চেপে ধরে এরপর বলে -
"- আজ তিনবছর পর আমার ছেলে বাড়ি ফিরে এসেছে। দুপুরে ওর পছন্দের সব খাবার রান্না করবি তুই, যদি রান্না খারাপ হয় তবে আজ তোর সারাদিনের খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিব। আর তোর বড় স্যার আর আমার কিছু ময়লা জামা কাপড় রয়েছে যা পরিষ্কার করা দরকার। রান্না করে সব কাপড় ধুয়ে রাখবি।
জুথি বেগম এখনো চুলের মুঠি ধরে রেখেছে, প্রিয়ন্তী সেই অবস্থায় মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক জবাব দেয়। জুথি বেগম ওর চুলে জোরে টেনে ধরে, এরপর ছেড়ে দেয়। প্রিয়ন্তী সব চুপচাপ সয্য করে নেয়, কোনো প্রতিবাদ করে না। জুথি বেগম চিলেকোঠা থেকে বের হয়ে যাবে, এমন সময় আবার পিছনে ফিরে বলে -
'- শোন ধ্রুবর থেকে দূরে থাকবি। ঘরের কাজ শেষ করে আবার এখানেই চলে আসবি। ধ্রুবর সামনে বারবার যাবি না, তোকে আর ধ্রুবকে যেনো আমি একসাথে কাছাকাছি কখনো না দেখি। তোর আবার চরিত্রের কোনো বিশ্বাস নেই, বড়লোক ছেলে দেখলে তাদের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি শুরু করে দেস। চরিএহীন নারী তুই "।
জুথি বেগম কথাটা বলেই রুম থেকে বের হয়ে যায়। প্রিয়ন্তীর মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠে, যদিও সেটা তার নিজের উপর। প্রিয়ন্তী তার চুল বেঁধে নেয়, এরপর মাথায় কাপড় দিয়ে চিলেকোঠা থেকে বের হয়ে যায়। বাড়ির রান্না ঘরে যায় সে, ধ্রুব কি কি খাবার পছন্দ করে তা সে যানে। চৌধুরী বাড়িতে অনেক কাজ লোক রয়েছে, তবে সেটা শুধু শো অফ বাড়ির সকল কাজ প্রিয়ন্তী করে।
তিনবছর আগে ধ্রুব যাওয়ার আগে প্রিয়ন্তীর সাথে এমন খারাপ ব্যবহার হতো না, কিন্তু হঠাৎ করে যখন সেই ঘটনা বা ভিডিও সকলে দেখে তখন থেকেই প্রিয়ন্তীর উপর অত্যাচার বেড়ে যায়। জুথি বেগম শুরু থেকেই প্রিয়ন্তীকে সয্য করতে পারে না, তবে ধ্রুব যখন বাসায় থাকত তখন সে সবসময় প্রিয়ন্তীকে আগলে রেখেছে। ধ্রুবর প্রচুর রাগ, যা দেখে জুথি বেগম ভয় পান। কিন্তু ধ্রুব বিদেশে চলে যাওয়ার পর বাড়ির প্রতিটা মানুষ প্রিয়ন্তীর কাজের মেয়ের মতো ব্যবহার করা শুরু করে।
[ দুপুর ২: ০০ ]
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার জন্য ধ্রুব নিচে আসে, বাড়ির প্রতৈক সদস্য তাদের রুম থেকে বের হয়ে আসে। প্রিয়ন্তী রান্না করা শেষ করে, সকল খাবার টেবিলে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখে। যদিও সেটা ধ্রুবর দেখার আগেই, এরপর জুথি বেগমের কথা অনুসারে সে ময়লা জামা কাপড় ধুয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে যায়। ধ্রুব ড্রয়িং রুমে এসে সম্পূর্ণ জায়গায় একবার চোখ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে নেয়। মূলত সে প্রিয়ন্তীকে খুঁজে যাচ্ছে, কিন্তু সে আশেপাশে কোথাও প্রিয়ন্তীকে খুঁজে পায় না। ধ্রুব খাবার টেবিলে বসে যায়, জুৃথি বেগম সহ সকলে একসাথে বসে।
ধ্রুবর খাবার প্লেটে জুৃথি বেগম ভাত দেয়, প্রতিটা খাবার আজ ধ্রুবর পছন্দ। খাবারের ঘ্রাণে ধ্রুব বুঝে যায় রান্নাটা
প্রিয়ন্তী করেছে, কারণ প্রিয়ন্তীর রান্নার হাত সবসময় অনেক ভালো। ধ্রুব খাওয়া দাওয়া শুরু করে, খাবারের এক দানা মুখে নিয়ে ধ্রুব চোখ বন্ধ করে নেয়। আজ তিনবছর পর সে এমন খাবার খেয়েছে, বিদেশে থাকার সময় প্রিয়ন্তীর হাতের রান্না অনেক মিস করেছে। জুথি বেগমের সাথে প্রিয়ন্তীর যতই শএুতা থাক না কেনো, সে অবধি প্রিয়ন্তীর রান্নার প্রশংসা করে। ধ্রুবর মজা করে খাবার খেতে থাকে, তবে মুখের রিয়েকশন সে সিরিয়াস ভাবে দেয়। জুথি বেগম খাবার কেমন হয়েছে, তা জানার জন্য ধ্রুবকে জিজ্ঞেস করে -
"- ধ্রুব রান্না করা খাবার কেমন হয়েছে? সব তোমার পছন্দের রান্না করেছে কাজের লোকে.
ধ্রুবর কানে কাজের লোক শব্দটা যায় শুধু, সে মুখে জোরে করে হাসি রেখে বলে -
"- হুম গুড "।
ধ্রুব আর কথা না বলে খাবার খেয়ে নেয়, খাওয়ার মাঝে ধ্রুবর চোখ আশেপাশে যায় কিন্তু এইবার ও সে ব্যর্থ হয়। ইচ্ছা করে যে প্রিয়ন্তী ধ্রুবর সামনে আসছে না, সেটা ধ্রুব বেশ ভালো বুঝতে পারে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সকলে তার রুমে চলে যায়, ধ্রুব ও তার রুমে চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে সকল জামা কাপড় ধুয়ে বের হয় আসে
প্রিয়ন্তী, এরপর তা ছাদে গিয়ে শুকাতে দেয়। নিজের রুমে ফিরে আসে গোসল করে, দুপুরের সকলের বেঁচে যাওয়া এঁটো খাবার খেয়ে নেয়।
প্রায় দশ মিনিটের দূরে রয়েছে ধ্রুবর ফুফুর বাড়ি। ধ্রুবর পরিবার অনেক বড়লোক কিন্তু তার ফুফু গরিব। কারণ তার ফুফা ছোটবেলায় মারা যান, সামির সাহেব বোনকে সাহায্য করতে চেয়েছেন। কিন্তু তার বোন সেটা গ্রহণ করেন নাই, ধ্রুবর ফুফুর দুই সন্তান এক ছেলে নাম প্রান্তিক, আর আরেক মেয়ে নাম পুষ্প। বিকাল চারটার সময় প্রান্তিক চৌধুরী বাড়িতে এসেছে, ধ্রুবর সাথে দেখা করতে।
প্রান্তিক ধ্রুবর রুমে চলে যায়, ধ্রুব তখন বিছানায় বসে কম্পিউটারে কাজ করছে। প্রান্তিকে দেখে ধ্রুব বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় আর বলে -
'- আরে প্রান্তিক তুই? ভিতরে আয় "।
"- হুম সেটা অবশ্যই আসব। কিন্তু এমন হঠাৎ করে চলে আসলি যে বিদেশের সব পড়া শেষ?
"- হুম শেষ। এখন দেশে বিজনেস বা চাকরি করব '।
তারা দুইজনে বেশ অনেক সময় একসাথে আড্ডা দেয়। অনেক দিন পর ধ্রুব দেশে এসেছে, যার জন্য বাহিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করে তারা। একসাথে শহরের অনেক জায়গায় ঘূরবে, তবে সেটা গাড়ি করে নয় বরং প্রান্তিকের বাইকে করে। ধ্রুব ওয়াশরুমে যায় রেডি হতে, প্রান্তিক রুমে বসে থাকে।
তখন ধ্রুবর রুমে আসে মেহুল তার হাতে পায়েসের বাটি। প্রান্তিক মেহুলকে দেখে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় এরপর , মেহুল পায়েসের বাটি প্রান্তিকের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে -
'- প্রান্তিক ভাই দুপুরে পায়েস রান্না করা হয়ে ছিলো আপনার জন্য রেখে দিয়েছি। খেয়ে নেন "।
প্রান্তিক মেহুলের হাত থেকে হাসি মুখে পায়েসের বাটি নেয়, এরপর খাওয়া শুরু করে দেয়। মেহুল মুগ্ধ দৃষ্টিতে প্রান্তিকের খাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে, সামনে থাকা লোকটাকে সে কতটা ভালোবাসে সেটা শুধু সেই যানে। কিন্তু প্রান্তিক মেহুলকে দেখে না সে মজা করে পায়েস খেতে থাকে, এরপর মেহুল রুম থেকে চলে যায়। ধ্রুব বের হয়ে আসে, প্রান্তিকের সাথে বাটি দেখে জিজ্ঞেস করে -
"- কি রে তোর হাতে কি?
'- তোর বউয়ের হাতে রান্না করা পায়েস খাচ্ছি। যায় বলিস না কেনো তোর বউ কিন্তু দারুণ রান্না করে। প্রিয়ন্তীর রান্নার হাত জোস "।
ধ্রুব বউ কথাটা শুনে থেমে যায়, তার নিজের মনেই বউ শব্দটা দুই তিনবার আওড়ায়। প্রিয়ন্তী আর ধ্রুবর বিয়ের বিষয়ে শুধু প্রান্তিকে যানে, কারণ সে বিয়ের সাক্ষ্য দিয়েছে। ধ্রুব বলে -
'- বউ না বেঈমান বল। যে নারী নিজের স্বামী থাকতে অন্য পুরুষের সাথে টাকার জন্য রাত কাটায় তাকে বউ বলা যায় না। আর বেঈমানের চরিত্র ছাড়া সব সুন্দর লাগে "।
প্রান্তিক মজা করা বন্ধ করে গম্ভীর স্বরে বলে -
'- প্রিয়ন্তীকে তুই ভালোবাসিস ধ্রুব "।
"- না ঘৃ*ণা করি "।
চলবে more....

6

No comments:

720

Powered by Blogger.