Header Ads Widget

test

আমি_চাইলে_তুমি_আমার



 আমি_চাইলে_তুমি_আমার

লেখনীতে_নুসাইবা_এহসানা_হিয়া
পঅব_০৩ [ ধ্রুব যখন প্রিয়ন্তীকে অ*পমান করে ]
রাত প্রায় দশটা প্রিয়ন্তী এখন চিলেকোঠার রুমে বসে আছে, কাল তার ভার্সিটির ইংরেজি পরীক্ষা রয়েছে। যার জন্য তাকে পড়াশোনা করতে হবে, তবে কাল থেকে তার রুমের লাইটা বড্ড জ্বালাতন করছে তাকে। প্রায় মিনিট পর পর জ্বলে আর নিভে, এমন করে পড়াশোনা করা যায় না। আজ সারাদিন ঘরের কাজ করার ফলে, বাহিরে যাওয়া সময় পায় নাই। যার কারণে দোকান থেকে লাইট কিনে নিয়ে আসতে পারে নাই।
অন্যদিকে ধ্রুব আর প্রান্তিক অনেক সময় ধরে ঘুরাঘুরি করে। শহরের প্রায় প্রতিটা জায়গায় তারা যায়, তবে এখন ধ্রুব বড্ড টার্য়াড। সারাদিন বিশ্রাম করার সময় পায় নাই, যার জন্য ধ্রুব প্রান্তিকে বিদায় দিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। ধ্রুব তার রুমে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে যায়, এমন সময় খেয়াল করে নিচে চিলেকোঠার রুম থেকে লাইটের আলো আসছে। রাত দশটার সময় চিলেকোঠার রুমে কে যাবে, এতো রাতে সেখানে কি খুঁজতে যাবে।
তিনবছর আগে যখন ধ্রুব দেশে থাকত, তখন প্রিয়ন্তী তাদের গেস্ট রুমে থাকত। আর চিলেকোঠার রুমটা অনেক নোংরা, বাড়ির সকল আর্বজনা, পরিত্যক্ত জিনিস পএ রাখার জায়গা। ধ্রুব এগিয়ে যায় সেই রুমের দিকে, অন্যদিকে প্রিয়ন্তী লাইটা ঠিক করার উদ্দেশ্য চেয়ারের উপর উঠে। এরপর বাল্বে হাত দিয়ে একটু নাড়া দেয়, হঠাৎ করে ধ্রুব তার রুমের দরজা খোলে ভিতরে ঢুকে। চেয়ারের উপর একজন মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ধ্রুব মনে করে চোর, কারণ সে প্রিয়ন্তীকে এখানে আশা করে নাই। ধ্রুব চেয়ারের কাছে এগিয়ে যায় এরপর বলে -
"- এই মেয়ে কে তুমি? এতো রাতে চিলেকোঠার রুমে কি করছ?
হঠাৎ গম্ভীর ভারী আওয়াজ শুনে প্রিয়ন্তী যখন পিছনে ফিরে তাকায়, তখন দেখে তার সামনে ধ্রুব দাঁড়িয়ে রয়েছে। ধ্রুব প্রিয়ন্তীকে দেখে শান্ত হয়ে যায়, তার চোখ জুড়া আটকে যায় প্রিয়ন্তীর দিকে। যখন প্রথমবার বাড়িতে এসে প্রিয়ন্তীকে এসে দেখেছে, তখন তার শরীরে ছেঁড়া কাপড় ছিলো, আর তখন মেঝে পরিস্কার করার কারণে তার গায়ে ময়লা ধূলায় ছিলো। তবে এখন প্রিয়ন্তীকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে, তার কাজল কালো দুটি চোখে এক অদ্ভুত মায়া রয়েছে। কানের কাছে জুড়ে থাকা চুলগুলো বাতাসে উড়ে যাচ্ছে, লাইটের আলো এসে পড়ছে তার সমস্ত মুখমণ্ডলে যা তাকে অধিক আর্কষণীয় করছে।
প্রথম দেখায় ধ্রুব আবার প্রিয়ন্তীর প্রেমে পড়ে যায়। তাদের দুইজনের তাকিয়ে থাকার মধ্যে যে প্রিয়ন্তীর পা চেয়ার থেকে সরে গেছে সেটা প্রিয়ন্তী খেয়াল করে নাই। প্রিয়ন্তী যখন চেয়ার থেকে পড়ে যাবে, তখনই ধ্রুব তাকে ধরে ফেলে। একদম তার কোলে নিয়ে আসে, প্রিয়ন্তী ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় এক হাত দিয়ে ধ্রুবর শার্টের কর্লার চেপে ধরে। ধ্রুব এক দৃষ্টিতে প্রিয়ন্তীর নিভু নিভু চোখের পাপড়ি দিকে তাকিয়ে থাকে, তার বুকে অশান্ত ঝড় বয়ে যায়। প্রায় তিনবছর বিদেশে থাকতে ছটফট করেছে, একটি বার তার প্রিয়তমা বউকে দেখার জন্য।
ধ্রুব যখন প্রিয়ন্তীকে তার মনের কথা বলতে যাবে। তার আগেই তার চোখের সামনে কিছু ঘটনা ভেসে উঠে, সে সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেয় প্রিয়ন্তীকে। হঠাৎ করে ধ্রুব এমন করার ফলে প্রিয়ন্তী ধ্রুবর শার্ট ছেড়ে দেয়, আর ও নিচে পড়ে যায়। প্রিয়ন্তী ব্যাথায় আত্মনাথ করে বলে -
"- আহ্ কমোড়টা ভেঙে গেলো রে। আহ্ " more..
প্রিয়ন্তীর ব্যাথার আত্মনাথ শুনে ধ্রুব নিচের দিকে তাকায়। নিচ থেকে হঠাৎ পড়ে যাওয়ার কারণে প্রিয়ন্তীর কোমড়ে ব্যাথা পেয়েছে, যেটা ধ্রুব বুঝতে পারে। কিন্তু প্রিয়ন্তী যখন তার দিকে তাকিয়ে দেখবে, তার আগেই সে আবার তার চোখ অন্য দিকে সরিয়ে ফেলে। যেনো প্রিয়ন্তীর ব্যাথায় তার কিছু যায় আসে না, প্রিয়ন্তী রাগ করে ধ্রুবকে কিছু বলতে যাবে এর আগেই সে থেমে যায়। ধ্রুব আর তার সম্পর্কের সমীকরণ সমাধান করে, ধ্রুবর প্রতি তার অভিযোগ করা মানায় না। বাড়ির কাজের লোক সে, তার কি আর মালিকের মুখের উপর কথা বলার অধিকার রয়েছে। আর ধ্রুব যদি তাকে ব্যাথা দিতে পারে, তবে সে কেনো তা সয্য করতে পারবো না।
কোমড় ধরে প্রিয়ন্তী নিচ থেকে উপরে উঠে যায়, এরপর শান্ত হয়ে ধ্রুবর দিকে তাকায়। ধ্রুব ও প্রিয়ন্তীর দিকে একবার তাকিয়ে দেখে, এই মেয়েকে দেখলে তার নিজেকে এলেমেলো লাগে। শত অভিমান, রাগ, ঘৃণা দূরে সরিয়ে ভালোবাসতে ইচ্ছা করে। কিন্তু ধ্রুব এতো দুর্বল হবে না, প্রিয়ন্তী বলে -
"- ধ্রুব স্যার আপনি এখানে? কোনো দরকার আপনার? রাতের খাবার কি গরম করে দিতে হবে? বা অন্য কোনো প্রয়োজন?
প্রিয়ন্তীর কথা শুনে ধ্রুব নিজের মনেই বলে উঠে "- তোর কাছে কি শুধু প্রয়োজনে আমি আসি প্রিয়ন্তী। তুই আমার সাথে এতো অপরিচিত হয়ে কথা বলিস না। এই তিনটা বছর আমাকে জ্বালিয়ে এখন নাটক করিস আমার আসবে। ধ্রুব তার মনের কথা মুখে প্রকাশ করে না, মুখে গম্ভীর ভাব রেখে বলে -
"- না কোনো প্রয়োজন নেই। আসলে চিলেকোঠার রুমে লাইট জ্বলে ছিলো কেনো, সেটা জানার জন্য এসেছি "।
প্রিয়ন্তী স্বাভাবিক স্বরে বলে -
"- বাড়ির কাজের লোক চিলেকোঠার রুমে থাকবে এইটাই কি স্বাভাবিক না ধ্রুব স্যার? আর মালিক হয়ে কাজের মেয়ের রুমে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক নয় স্যার। আপনি চলে যান, বড় ম্যাডাম দেখলে বকা দিবে আমাকে "।
ধ্রুব প্রিয়ন্তীর দিকে একবার তাকিয়ে দেখে, প্রিয়ন্তীর এমন অপরিচিত রূপ তাকে কষ্ট দিচ্ছে। ধ্রুব বলে -
"- চিন্তা করবেন না প্রিয়ন্তী। ধ্রুবর বিষয়ে তার মা খুব ভালো করে যানে, ধ্রুবর রুচি এতো নিচঁ না যে বাড়ির কাজের মেয়ের উপর নজর রাখবে। আর চরিত্রহীন নারী প্রতি ধ্রুবর ভালোবাসা না, বরং ঘৃণা জন্মায় "।
কথাটা বলার সময় ধ্রুব প্রিয়ন্তীর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে, প্রিয়ন্তী কি করে কথাটা সয্য করে নেয় সেই যানে। ধ্রুব চিলেকোঠার রুম থেকে বের হয়ে যায়, প্রিয়ন্তী দরজা বন্ধ করে দেয়। প্রিয়ন্তীর চোখ বেয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে, ধ্রুবর চোখে তখন প্রিয়ন্তীর প্রতি যে ঘৃণা ছিলো সেটা সয্য করার ক্ষমতা প্রিয়ন্তীর নেই। অন্যদিকো ধ্রুব রুমে চলে যায়, তার কষ্ট হচ্ছে বুকের বাম পাশে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
যেই ধ্রুব তার চোখে এক ফোঁটা জ্বল সয্য করতে পারত না, আজ সেই তার কান্নার কারণ। যে প্রিয়ন্তীর সামান্য জ্বর হলে তার ধ্রুব ভাই সারারাত তার রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকত। তার মাথায় জলপটি দিয়ে দিত, আজ সে নিজ হাতে তাকে ব্যাথা দিচ্ছে। সব হয়েছে প্রিয়ন্তীর জন্য, ধ্রুবর বিশ্বাস, ভালোবাসা নষ্ট করেছে প্রিয়ন্তী। আজ প্রিয়ন্তী ভুলের কারণে ধ্রুব তাকে ঘৃণা করে।
ধ্রুব রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে, প্রিয়ন্তীর তখন ব্যাথায় আত্মনাথ করা কণ্ঠ কার কানে বাজে। ধ্রুবর রাগ হয় নিজের প্রতি, সে কি করে তার প্রিয়কে কষ্ট দিতে পারল। ধ্রুব বিছানা থেকে উঠে বসে, এরপর সে দেয়ালে কয়েকটা ঘুষি মারে। প্রায় পনেরো বার সে দেয়ালে তার তার দিয়ে আঘাত করে, যার ফলে তার হাত দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। ধ্রুব বলে -
"- প্রিয় তোকে আমি কতো ভালোবাসি সেটা তুই যানস, তবুও কেনো আমার সাথে এমন করলি। মায়ের কথা শুনে তোকে আমি ভুল বুঝিনায় প্রিয়, না আমার কষ্ট হয়েছে। কিন্তু সেইদিন তোর ওই নিরবতা আমার বুকটা জ্বালিয়ে ছাড়খার করে দিয়েছে, প্রতিটা রাতে তোর কথা ভেবে আমি নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছি।
"- তুই শুধু একবার বল প্রিয় যে ওই পুরুষের সাথে তুই সেই রাতে ছিলি না, শুধু একবার বল তোর ধ্রুব ভাইকে। আমি নিজের চোখকে অবিশ্বাস করতে রাজি আছি, সমাজের সকলের বিরুদ্ধে গিয়ে তোকো ভালোবাসব। একবার শুধু বল তুই আমার, তোকে রাণী করে রাখব আমি। এই বাড়ির কাজের লোক না, বরং ধ্রুব চৌধুরীর বউয়ের মর্যাদা দিব তোকে। শুধু একবার বল প্রিয় তুই আমার, তোকে শুধু ধ্রুব ছুয়েঁ দেখার অধিকার রয়েছে। আমি তোকে অনেক ভালোবাসি প্রিয়, তোকে ছাড়া বাঁচব না more...

11

No comments:

720

Powered by Blogger.