Header Ads Widget

test

আমার_অভিমানে_শুধু_তুই


 

আমার_অভিমানে_শুধু_তুই

লামিয়া_ইসলাম_শাম্মী
( অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
পার্ট ১১
আরজার ঘরে বসে
আছেন তার দাদী ও রুবিনা চৌধুরী। ট্রেতে করে খাবার এনে আরজার সামনে বসে আছে রুবিনা।
— “আরজা, চুপচাপ খেয়ে নে,” রুবিনা বললেন কঠিন কণ্ঠে।
আরজা ভরা পেট নিয়ে মুখটা ছোট করে বলল,
— “প্লিজ মেজো চাচি… আর পারছি না… পেট পুরোপুরি ভরে গেছে।”
রুবিনা কড়া গলায় বললেন,
— “সবটুকু খেতে হবে। বড় আপা যদি জানে, তোকে খাইয়েও দিতে পারলাম না — তাহলে আমার তো খবর আছে!”
আরজা অসহায় দৃষ্টিতে তার দাদীর দিকে তাকালো। কিন্তু দাদীও নির্বিকার।
— “আমার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। খেতে তোকে হবেই,” বলেই দাদী ঠোঁট চেপে হাসি চেপে রাখলেন।
আরজা মুখ গোমড়া করে আবার খেতে শুরু করল। ঠিক তখনই ঘরে ঢুকলো সায়মা আর আরিয়ানা।
সায়মা পাশে বসে আরজার কাঁধে হাত রেখে মায়াভরা কণ্ঠে বলল,
— “তাড়াতাড়ি সুস্থ হ হতে হবে তো, না হলে আমার বিয়ের প্ল্যানিং কে করবে? তোর তো আমার বিয়ে নিয়ে হাজারটা প্ল্যান!”
পেছন থেকে আরিয়ান কৌতুকের সুরে বলে উঠলো,
— “ইসস! বিয়ের এখনো খবর নেই, আবার এসেছে প্ল্যান করতে! একটু আমার বোনকে দেখতে দাও তো, সরো!”
বলেই সে এসে আরজার পাশে বসলো।
— “কি রে আরজা রানী, এমন মুখ করে বসে আছিস কেন?”
আরজা ঠোঁট বাঁকিয়ে চোখ বড় করে বলল,
— “দেখো না ভাইয়া, পেট ভরে গেছে কিন্তু দাদী আর মেজো চাচি জোর করেই খাওয়াচ্ছে।”
আরিয়ান কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনই রুবিনা চৌধুরী গর্জে উঠলেন,
— “এই! একদম বোনের হয়ে পক্ষ নিয়ে কথা বলবি না! ওকে খেতে বল। ডাক্তার তোকে কি বলেছে মনে আছে না? দুর্বল শরীরে কিছুতেই চলবে না!”
আরিয়ান এবার আরজার দিকে ফিরে নরম গলায় বলল,
— “আরজা বাবু, তুই না খেলে কি করে তাড়াতাড়ি সুস্থ হবি? খা তো, তোর জন্য একটা জিনিস এনেছি।”
আরজার মুখ চকচকে হয়ে গেলো,
— “কি এনেছো ভাইয়া?!”
আরিয়ান স্মিত হেসে বলল,
— “আছে… আগে খাবার শেষ কর, তারপর দিবো।”
আরজা চোখ বড় করে বলল,
— “ভাইয়া! প্লিজ! বলো না!”
— “না, আগে খা!”
আরজা খুশিতে ঝটপট বাকি খাবার শেষ করল। শেষ করে বলল,
— “এবার দাও! কি এনেছো?”
আরিয়ান পকেট থেকে একটা চকোলেট বের করে বলল,
— “এই নে। শুধু তোকে দিয়েছি।”
আরজা আনন্দে হাত থেকে চকলেট নিয়ে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরল,
— “Thank you ভাইয়া! তুমি আসলেই দুনিয়ার সেরা ভাইয়া!”
পাশ থেকে তখনই আরিয়ানা চিৎকার করলো,
— “এই! আমাদেরটা কোথায়?”
আরিয়ান মুখ বাঁকিয়ে বলল,
— “তোমরা বড় তো! বড়দের উচিত ছোটদের দান করা, আর তুমি আমার থেকে চাইছো? ছিঃ আপু!”
আরিয়ানা ভেজা গলায় বলে উঠলো,
— “এই দাদী শুনছো? তোমার নাতির কথা! বড় হলে কি আর ছোট ভাইয়ের থেকে কিছু চাইতেও পারবো না?”
হঠাৎ পিছন থেকে দরজায় ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জিয়ান গম্ভীর গলায় বলল,
— “এই আরিয়ানা, কি হয়েছে রে আবার?”
আরিয়ানা নাটুকে ভঙ্গিতে চোখে পানি এনে বলল,
— “দেখো না ভাইয়া! আরিয়ান শুধু আরজাকে চকোলেট দিলো। আমি চাইলাম বললো, ‘তুমি বড়, তোমার দরকার নেই।’”
আরিয়ান হেসে বলল,
— “এই আপু, তুমি সবসময় আমার বাবুর সাথে হিংসে করো। এখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি— সায়মা আপুর বিয়ের পর তোমাকে আমি এই বাসা থেকে বিদায় করে দেবো!”
আরিয়ানা রেগে উঠে বলল,
— “তবে রে দাঁড়া! আজ তুই শেষ! তোকে আমি বিদায় করে দিচ্ছি আজই! তোকে মেরে সোজা তোমার মামাবাড়ি পাঠাবো!”
বলেই সে আরিয়ানকে তাড়া করলো।
ঘরজুড়ে হাসির রোল পড়ে গেলো। দাদী, রুবিনা, সায়মা— সবাই হেসে কুঁচকে গেছে।
আরজা হাসছে অনেকদিন পর এমন প্রাণখোলা হাসি।
রুবিনা চৌধুরী আর দাদী হাসতে হাসতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। ঘরে তখনও হালকা হাসাহাসি চলছে, হঠাৎ—
— “তোদের জন্য কি একটু ঘুমিয়ে শান্তি পাবো না, হ্যাঁ? এই চেঁচামেচি আবার কেন শুরু হইলো!”
সব হাসি মুহূর্তেই থেমে গেলো। সবাই তাকিয়ে দেখলো দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে জায়ান। মুখে তীব্র বিরক্তি, চোখে রাগ ঝরে পড়ছে।
তার চোখ এবার আরজার দিকে।
— “এই মেয়েটার জন্য কাল সারারাত ঘুমাতে পারিনি। এখন একটু চোখ লেগেছিল, তোদের জ্বালায় সেটাও ভেঙে গেল! দ্বিতীয় বার কারোর গলার শব্দ শুনলে তাঁকে শাস্তি দিবো... মনে রাখিস।”
এই বলেই কোনো উত্তর না শুনে, সোজা হেঁটে চলে গেলো সে।
তার যাওয়া মাত্রই সবাই হঠাৎ ফিক করে হেসে উঠলো।
সায়েম হেসে বলল,
— “তোরা আস্তে কথা বল! ভাইয়ার শরীরও তো ভালো নেই। ওকে ঘুমাতে দে, আর আরজাও একটু রেস্ট নে।”
সবাই আস্তে আস্তে ঘর ছেড়ে চলে গেলো।
---
সন্ধ্যা নেমেছে চারদিকে।
চৌধুরী বাড়িতে
বসার ঘরে ভাইবোনদের গল্পের আসর বসেছে। রেহানা চৌধুরী নিজে হাতে পাকোড়া ভেজে এনে দিয়েছেন। মিষ্টি গন্ধে চারদিক ভরে গেছে।
আরিয়ান পাকোড়ার প্লেট নিজের সামনে টেনে নিল।
আরিয়ানা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
— “এই! তোকে কি একা একা সব দিয়েছে নাকি?”
আরিয়ান খুশি হয়ে মুখে একটা পাকোড়া পুরে বলল,
— “আমি আরজাকে দিচ্ছি তো! তৈলাক্ত খাবার খেয়ে তুমি দিন দিন মুটকি হচ্ছো আপু। একটুও ডায়েট করো না!”
আরিয়ানার মুখ থমথমে।
সায়েম মজা করে বলে উঠলো,
— “আরে একদম ঠিক বলেছিস আরিয়ান। যুক্তি আছে কথায়!”
আরিয়ানা মুখ ফুলিয়ে বলল,
— “ভাইয়া! আমি একটু নাদুসনুদুস হলেই এইভাবে কথা বলবা?”
হঠাৎই পেছন থেকে জিয়ানের গম্ভীর গলা,
— “হ্যাঁ, ঠিক বলেছে। তোরা সবসময় ওর সাথে এমন ব্যবহার করিস কেন? ভদ্রভাবে কথা বল।”
আরিয়ানা ঝট করে উঠে বলে,
— “জিয়ান ভাইয়াই শুধু আমাকে ভালোবাসে, আর কেউ না!”
আরিয়ান দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
— “আচ্ছা ভাইয়া, তাহলে ভদ্র ভাষায় বলি?”
জিয়ান কপাল কুঁচকে বলল,
— “হ্যাঁ, ঠিকই তো, বল।”
আরিয়ান নাটুকে ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
— “মাননীয় আলুর বস্তা আপু, আপনি দয়া করে তৈলাক্ত খাবার খাবেন না, এতে আপনি আরও বস্তা হয়ে যাবেন!”
বলেই জোরে হেসে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে সবাই ফেটে পড়ল হাসিতে।
কিন্তু হঠাৎ—
জায়ান পিছন থেকে এসে আরিয়ানের কান মুচড়ে বলল,
— “সরি বল। ও তোর বড় বোন। এইসব বলিস হ্যাঁ!”
আরিয়ান ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠলো,
— “আহ ভাইয়া! ছাড়ো, ব্যথা পাচ্ছি!”
— “আগে সরি বল!”
— “সরি সরি! আর বলবো না!” more...
জায়ান তখন কানের লতি ছেড়ে দিল। আরিয়ানা চুপচাপ, মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
আরিয়ান একটু চুপ করে থেকে পাকোড়ার প্লেট নিয়ে তার সামনে ধরে বলল,
— “তুমি মুটু হলেও, তুমি আমার প্রিয় আপু। প্লিজ রাগ করে থেকো না। তুমি রাগ করলে আমার মন খারাপ হয়ে যায়। আর কখনো বলবো না তোমাকে মটু।”
আরিয়ানা চোখে জল নিয়ে হেসে উঠে ভাইকে জড়িয়ে ধরলো।
ঘরজুড়ে ভালোবাসার আবেশ।
ভাই-বোনদের এই খুনসুটি, মজা, আদরে চৌধুরী বাড়ির সন্ধ্যাটা এক অদ্ভুত শান্তি আর উষ্ণতায় মোড়ানো
রাতের খাবারের টেবিলে চৌধুরী পরিবারের সবাই একসাথে বসেছে। হাসি, গল্প আর চামচের আওয়াজে টেবিলের চারপাশ মুখরিত।
হঠাৎ সায়েদুল চৌধুরী বললেন,
— “বড় ভাই, কাল শুক্রবার। সবার ছুটির দিন। নাজমুল ওরা আমাদের বাড়িতে নেমন্তন্ন করেছে। আর আমি ভাবছি, কালই সায়মার বিয়ের তারিখটা ঠিক করে ফেলি।”
জামিল চৌধুরী হেসে বললেন,
— “সে তো খুব ভালো খবর। তাহলে সবাই প্রস্তুত থাকো কাল। আমরা সকলে যাবো।”
তারপর তার চোখ পড়ল আরজার দিকে,
— “আম্মু, এখন কেমন আছো তুমি?”
আরজা ভদ্র গলায় বলল,
— “ভালো আছি, বড় চাচা।”
জামিল চৌধুরী হেসে বললেন,
— “ঠিকঠাক খাবার খাবে, দুর্বল হলে চলবে না, ঠিক আছে আম্মু?”
আরজা মাথা নিচু করে হালকা হাসিতে সাড়া দিল।
ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো। শাহনাজ চৌধুরী উঠে দরজা খুলতেই সামনে নাফিস।
— “কি ব্যাপার নাফিস? এত দেরি হলো কেন?”
— “ছোট মামি, একটা নতুন কেসে গিয়েছিলাম, সব কিছু গুছিয়ে আসতে একটু দেরি হয়ে গেল।”
— “আচ্ছা ঠিক আছে, তুই ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি খাবার দিচ্ছি।”
নাফিস ফ্রেশ হয়ে এসে সোজা আরজার পাশে বসলো। জায়ানের চোখ কুঁচকে উঠলো। এক ঝলক তাকিয়ে থেকে সে আবার নিজের প্লেটে মন দিলো।
জামিল চৌধুরী প্রশ্ন করলেন,
— “কি ব্যাপার নাফিস, তোকে একটু থমথমে লাগছে। কোনো সমস্যা?”
নাফিস মলিন হাসিতে বলল,
— “বড় মামা, আমাকে চট্টগ্রামে ট্রান্সফার করেছে। কাল সকালে রওনা দিতে হবে।”
বলে সে চুপচাপ আরজার দিকে তাকালো।
আরজা থমকে গেল। চামচ হাতে থেমে গেল, গলা দিয়ে খাবার নামছে না। তার বুকের ভেতর হঠাৎ কিছু একটা ভেঙে পড়লো।
জায়ান চুপচাপ মাথা তুলে তাকালো। চোখে যেন অদ্ভুত কঠোরতা।
জামিল চৌধুরী মাথা নেড়ে বললেন,
— “বেশ, মনোযোগ দিয়ে কাজ করিস। আমরা তোকে নিয়ে গর্ব করি।”
নাফিস মাথা নিচু করে সাড়া দিল।
খাবার শেষে সবাই যে যার মতো চলে গেল। শুধু দুজনের রাতটা থেমে রইলো এক জায়গায়।
---
রাত গভীর। ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে আরজা।
চোখের জল থেমে নেই। বুকের ব্যথা ভাষাহীন।
এই মানুষটিই তাকে বুঝতো, আগলে রাখতো, পাশে থাকতো। আজ সেই মানুষটিই তাকে ফেলে আবার চলে যাচ্ছে।
— “এই কেশবতী, তুই এত রাতে ছাদে কি করছিস?” — পেছন থেকে পরিচিত কণ্ঠ।
আরজা ভয়ে কেঁপে উঠলো। ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলো নাফিস। চোখে গভীর ক্লান্তি, মুখে আলতো মমতা।
আরজা হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
— “আপনি আবার আমাকে ফেলে চলে যাবেন, তাই না? আপনি ছাড়া কে আছে বলুন, আমাকে বুঝবে?”
নাফিস এগিয়ে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
— “আমি আছি তো সবসময়, তোর পাশেই আছি। কাঁদিস না কেশবতী…”
একটু চুপ থেকে বলল,
— “আরজা…”
আরজা চোখ তুলে তাকালো।
— “একটা কথা বলবো, শুনবি?”
আরজা মাথা নাড়ল।
— “আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবি… যেমন এতদিন করেছিস… ঠিক তেমনি করে?”
আরজা চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,
— “কেমন অপেক্ষা নাফিস ভাই…?”
নাফিস হালকা হাসলো,
— “কিছু না, ঘরে যা… এখনই ঘুমা, না হলে অসুস্থ হয়ে যাবি।”
নাফিস জোর করে আরজাকে সিঁড়ির দিকে পাঠালো।
আর নিজে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো অনেকক্ষণ। আকাশের তারাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
— “আর কত অপেক্ষা করতে হবে জানি না… কিন্তু তোকেই চাই, আরজা…”
ঠিক তখনই পেছন থেকে হিম শীতল গলা,
— “স্বপ্ন দেখতে ক্ষতি নেই, তা দেখতেই পারিস।”
নাফিস চমকে পেছনে তাকালো।
— “তুই?!”
জায়ান দাঁড়িয়ে আছে, চোখে আগুন।
— “কেন, অন্য কাউকে আশা করেছিলি বুঝি?”
নাফিস জবাব দিল,
— “স্বপ্ন আমি যেটা আরজাকে নিয়ে দেখেছি, সেটা আমি পূরণ করব। তোর সামনে দিয়েই আরজাকে আমি নিয়ে যাবো।”
জায়ান হেসে বলল,
— “নে নিয়ে যা, যদি পারিস। তবে মনে রাখিস… সময় হলে তোর ভালো মানুষির মুখোশ আমি নিজ হাতে খুলে ফেলবো।”
নাফিস কেঁপে উঠলো। কণ্ঠটা গলা থেকে বের হলো না ঠিকঠাক।
— “কি বলতে চাস তুই…?”
জায়ান ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে বলল,
— “যেটা ভাবছিস… সেটাই। ভয় পাস না, এখনো সময় আছে...”
এই বলে সে হেঁটে চলে গেল।
আর নাফিস দাঁড়িয়ে রইলো... ছাদের বাতাসে, নিঃশব্দ আশঙ্কায় more...
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টি দেখবেন। প্রথমবার গল্প লিখতেছি। ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। কেউ গল্প পড়লে প্লিজ লাইক কমেন্ট করবেন। এতে আমি গল্প লেখার আগ্রহ পাবো। আর হ্যাঁ আজকে পার্ট কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন)
All reactio
5

No comments:

720

Powered by Blogger.