Header Ads Widget

test

জোৎস্না_বিলাসী


 

জোৎস্না_বিলাসী

নাহিদা_আক্তার
পর্ব : ১০
দেখতে দেখতেই ছোট খাটো একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেলো। গাড়ি গাছের সাথে বারি খাওয়ার দরুন বিকট এক শব্দ তুলে সেথায়। আশেপাশে থাকা সকলে এগিয়ে এলো ঘটনাস্থলে। ঘিরে দাঁড়ালো গাড়ির চারপাশ।
ঘটানাটা এতোই দ্রুত ঘটেছে যে আমি আর আপা দু'জনই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম। সকলে সেদিকে গেলেও গেলাম না আমরা দু'বোন। ঠাই ধরিয়ে রইলাম। এতো ভীড়ের মধ্যে তো আবার ভালো মন্দ সুযোগ সন্ধানী লোকের অভাব নেই! তাই সেদিকে না যাওয়াই উত্তম।
নিজ জায়গায় স্থির থেকেই ভীড়ের মধ্যে চোখ গলিয়ে লোকটাকে দেখার চেষ্টা চালালাম। কিন্তু এতো ভীড়ের মধ্যে ভালো করে সেখানের অবস্থা বোঝা যাচ্ছে না।
কষ্ট হলো লোকটার জন্য। আহারে বেচারা! এই প্রথম আমাদের গ্রামে একটা গাড়ি ঢুকলো তাও কিনা এভাবে দূর্ঘটনার শিকার হতে হলো। বেচারার ভাগ্যটাই খারাপ। নাহলে কি আর আমাদের গ্রামের রাস্তার মতো এতো শুনশান রাস্তায় কেউ এক্সিডেন্ট করে?আচ্ছা লোকটা কি বেশি আঘাত পেয়েছে? এখনো গাড়ি থেকে বের হচ্ছে না কেনো? নিজের মনে সৃষ্ট হওয়া কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম। অপেক্ষায় রইলাম লোকটির গাড়ি হতে বেরিয়ে আসার।
কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হতেই গাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো লম্বা করে একজন শ্যাম বর্ণের যুবক। বড় রকমের কোনো দুর্ঘটনা না ঘটায় শরীরের তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতি না হলেও কপালে সামান্য পরিমাণ কেটে গেছে। সেখান থেকেই হালকা করে রক্তের লালা আভা দেখা যাচ্ছে।
গ্রামের লোকজন এগিয়ে এসে লোকটাকে ধরা ধরি করে গাড়ি থেকে বের হতে সাহায্য করলো। কিন্তু কেনো জানি লোকটার মুখের ভঙ্গিমা দেখে মনে হচ্ছিলো এতো গুলো মানুষের ছোঁয়া ছুঁয়ি তার পছন্দ হচ্ছেনা।
গ্রামের লোকেরা এক একজন এক এক ভাবে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে। কিন্তু সে কারো কাছ থেকে কোনো প্রকার সাহায্য না নিয়েই নিজের পকেট হাতরে একটা রুমাল বের করে নিজের ক্ষত স্থানে চেপে ধরলো। লোকটার এতো অবহেলা স্বত্ত্বেও সবাই তাকেই সাহায্য করতে চাইছে! কিন্তু কেনো? বোধগম্য হলো না‌ বিষয়টা। যে গ্রামের লোকগুলো নিজের খেয়ে অন্যের বদনাম করে বেড়ায়। এমনকি কারো বিপদ দেখলে সাহায্য করা তো দূরের কথা না পারে তাকে আরো বিপদে ফেলতে আজ তারাই নাকি এই লোকটাকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করছে!!
অবাক লাগলো বেশ। ভাবতে লাগলাম গ্রামের লোকেদের মধ্যে হঠাৎ এ পরিবর্তনের কারণ কি হতে পারে।
নিজ ভাবনার মাঝেই কানে এলো আমাদের পাশে দাড়িয়ে থাকা দু'জন মুরব্বির কথোপকথন। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম তাদের দিকে।
_"আরে এইডা চেয়ারম্যানের ছোড পোয়াডা না? যেইডা বিদাশে পড়তে গেছিলো।"
তার কথার পাছেই আরেক মুরব্বি সহমত জানিয়ে বলে উঠলেন।
_"হয় ওইডাই। দেখেছেন বিদাশ থেইক্কা গাড়ি লইয়া আইছে। মেলা বড়লোক হইছে হুনসি?"
_"আপনেও না মিঞা ওর চৌদ্দ গুষ্টি আগের থেইক্কাই বড়লোক। খালি এহন আরো একটু ধন সম্পদ বাড়ছে এই আরকি।"
_"তা যা কইছেন। আল্লাহ্ যারে দেয় তারে পোটলি ভইরা দেয়। আর যারে দেয় না তারে এক আঙ্গুল'ও দেয় না"
ব্যস শুরু হয়ে গেলো এদের অহেতুক গল্প। কার কতটুকু আছে কি আছে? কার নেই কেনো নেই? এইসব নিয়ে আলোচনা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই এদের।
আল্লাহ্ তায়ালা যাকে যা দিয়েছে তা নিয়ে শোকর আদায় না করে নিজের কাছে কি কি নেই তার জন্য অভিযোগ করবে।
সেদিকে আর কান না দিয়ে আপার দিকে তাকিয়ে কৌতুহল নিয়ে শুধালাম।
_"আপা উনি নাকি আমাদের চেয়ারম্যানের ছোট ছেলে?"
_"জানি না আমি। চল এখান থেকে। এখানে আমাদের কোনো কাজ নেই।"
আপার বলা উচ্চারিত প্রতিটি বাক্য কেমন যেনো শোনালো। মনে হচ্ছে যেনো খুব অস্বস্তি অনুভব করে কথাটা বলল। কিন্তু সেদিকে তেমন একটা পাত্তা না দিয়ে। আপার কথা পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে আবারো লোকটার দিকে চাইলাম।
দেখলাম লোকটা এখনো মাথায় রুমাল চেপে ধরে আছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এতো গুলো মানুষের ভীড় বেদ করে একদৃষ্টিতে আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে লোকটা।
কপাল কুঁচকে এলো। লোকটার দৃষ্টি কেমন যেনো লাগলো।
বুঝলাম না এতো গুলো মানুষের মধ্যে আমাদের দিকেই কেনো এভাবে তাকিয়ে আছে! লোকটার দিকে চেয়ে রইলাম বোঝার চেষ্টা করলাম লোকটার দৃষ্টি। ভালো করে লক্ষ্য করে যা বুঝলাম! লোকটা আমাদের দিকে নয় শুধু আপার দিকে চেয়ে আছে more...
ঘাড় ঘুরিয়ে ফের আপার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম আপা কেমন যেনো অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করছে। বারবার আমাকে এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য বলছে।
কিন্তু আমি তো আমিই। এক চুল'ও নাড়লাম না।
একসময় অধৈর্য হয়ে পরলো আপা। আমার হাত ধরে এক প্রকার টেনে নিয়ে যেতে লাগলো সেখান থেকে। বাধ্য হয়ে হাটা ধরলাম আপার সাথে। যেতে যেতে আরো একবার পিছন ফিরে লোকটাকে দেখে নিলাম।যে এখনো আপার দিকেই তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টিতে বিরাজ করছে মুগ্ধতা এবং ঠোঁটে রয়েছে এক রহস্যময় মুচকি হাসি।
সে ঘটনার পরে জানতে পারি সেই বয়স্ক মুরুব্বিদের কথাই ঠিক ছিলো লোকটা আসলেই চ্যায়ম্যানের ছোট ছেলে ছিলেন। নাম জিলানি হোসেন। এতোদিন পড়ালেখার তাগিতে বিদেশে ছিলেন। তাই তাকে দেখে চিনতে পারেনি।
বিদেশ থেকে ডিগ্রী অর্জন করে দেশে ফিরেছে। শুনেছি ঢাকায় নাকি নিজ ব্যবসা শুরু করবেন। এতো বছর পর যেহেতু দেশে এসেছেন তাই বাবা মার সাথে কিছু দিন থেকে তারপর নাকি ঢাকায় ফিরবে।
কিন্তু তা আর হলো না। ফিরলেন না তিনি। ফিরবেই বা কেনো? ফিরলে কি আর আমাদের জীবনকে জাহান্নাম বানাতে পারত?
সেই ঘটনার দু'দিন পরই আপুর জন্য চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে। তাদের ছোট ছেলে জিলানি ভাইয়ের জন্য আপুকে নিতে চান তারা।
কিন্তু আব্বা তার মেয়েকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবেন না। যার দরুন প্রতিবারের মতো এবারো প্রস্তাবে না করে দেন।
ফিরিয়ে দিলেন বড় বাড়ির প্রস্তাব। আর সেটাই হয়তো প্রথম ধাপ ছিলো আপার জীবনটা নষ্ট হওয়ার।
যেদিন বাবা তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় সেদিন'ই সন্ধ্যায়ই আমাদের বাড়ি হাজির হলেন জিলানি ভাই!
আব্বা তখন বসার ঘরে খাটের উপর বসে আমাকে পড়াচ্ছেন। বেশ কিছুদিন ধরেই ঠান্ডা লেগেছে আব্বার। বর্তমান আবহাওয়াটা খুব একটা ভালো না প্রায় মানুষই অসুস্থ হয়ে পরছে।
আব্বার ঠান্ডা জ্বর বাঁধলেই আপা নিয়ম করে সন্ধ্যায় মশাল দিয়ে বেশ কড়া করে এক কাপ গরম চা বানিয়ে দিবে। আর তাতেই যেনো আব্বা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন।
আজ'ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বর্তমানে রান্না ঘরে আব্বার জন্য চা বানাতে ব্যস্ত আপা।
সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। ঠিক তখনই কোথা থেকে যেনো আগমন ঘটে জিলানি ভাইয়ের। কাউকে কিছু না বলেই হুট করেই ভিতরে ঢুকে গেলেন। গ্রামের বাড়িতে হুটহাট করে কোনো ছেলে মানুষ প্রবেশ করা কোনো ডাকাতির থেকে কম নয়।
গ্রামের বেশিরভাগ নারীই ধার্মিক। তাদের মনে সর্বদাই বিরাজ করে আল্লাহ তাহালার ভয়। আর নিজের সৃষ্টি কর্তার প্রতি ভয় এবং অনুগত্বার প্রমাণ ছিলো তাদের এই পর্দা। কোনো নারী নিজের পর্দা ভঙ্গ করে নিজের স্বামী ব্যতিত যেমন অন্য পুরুষের সামনে যেতো না ঠিক তেমনি গ্রামের পুরুষরাও তাদের এই পর্দাকে কখনো অসম্মান করেনি।
বাড়ির ভিতরে হয়তো কোনো পর্দা শীল নারী আছে তা ভেবেই কখনোই তারা হুটহাট কারো বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতো না।
কিন্তু জিলানি ভাই? তিনি তো বিলাত ফেরত লোক। হয়তো গ্রামের এই নিয়ম সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। আর নয়তো তিনি জেনে বুঝেই এরকম ভাবে ভর সন্ধ্যায় আমাদের বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়েছেন।
জিলানি ভাই ভিতরে প্রবেশ করা মাত্রই সর্বপ্রথম আব্বাকে কিছু বলতে না দিয়েই তার পা ছুঁয়ে সালাম করলেন। হকচকিয়ে গেলেন আব্বা। চেনা নেই জানা নেই হঠাৎ করেই এক অপরিচিত ছেলে এই ভর সন্ধ্যায় হুট করে তার অনুমতি ছাড়া ঘরে ঢুকে তাকে সালাম করছে! কে এই ছেলে?
আব্বা শিক্ষক মানুষ। তার সামনে কোনো প্রকার নিয়ম ভঙ্গ করা তার বরাবরই অপছন্দনীয়। আর সেখানে এই লোক অনুমতি না নিয়েই বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল!!
আব্বাকে সালাম করা শেষ হতেই ঘাড় ঘুরিয়ে আশেপাশে কিছু খুঁজতে লাগলো জিলানি ভাই। তারপর পেয়ে যাওয়ার মতো করে এগিয়ে গিয়ে একটা বেতের চেয়ার টেনে আব্বার বরাবর বসলেন ।
আব্বা হয়তো চিনতে পারেননি জিলানি ভাইকে। তাই নিজের মনের কৌতুহল সহিত গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন।
_"কে তুমি?আর এভাবে হুট করে অনুমতি ছাড়া বাড়ির ভিতরে ঢোকা কোন ধরনের অসভ্যতামি?"
আব্বার কথার পাছে জিলানি ভাই ভূবন ভুলানো একটা হাসি দিয়ে বললেন।
_"আরেরর! শশুর আব্বা। এটা আপনার স্কুল না বাসা আর আমি কোনো অসভ্য না আপনার মেয়ের হবু জামাই। এখানেও কি শিক্ষকগীরী করলে চলে বলুন।"
আব্বার আর বুজতে বাকি রইলো না লোকটা কে হতে পারে। আমাকে নিজের বই খাতা গুছিয়ে ভিতরে যেতে বললেন। আমিও আব্বার বাধ্য মেয়ের মতো উঠে এলাম সেখান থেকে।
যেতে নিলেই আব্বা কি মনে করে যেনো আবারো পিছু ডাকলেন।
_"শুনো, তোমার আপাকে বলবে এখানে যাতে না আসে। আমি এখন আর চা খাবো না।"
আব্বার কথায় ঘাড়টা হালকা এলিয়ে চলে এলাম ভিতরে। এই লোক হঠাৎ এইখান কি করছে? বেশ আগ্রহ জাগলো জানার জন্য। তাই আর কোনো কিছু না ভেবে হাতে বই খাতা নিয়েই আড়ি পাতলাম তাদের কথা শোনার উদ্দেশ্যে।
_" এখানে কেনো এসেছ?"
বাবার গম্ভীর কন্ঠের পাছে আবারো হাসলেন জিলানি ভাই। তারপর হঠাৎ করেই পরিবর্তিত হয়ে নিজের হাসি হাসি মুখটা গম্ভীর করে ফেললেন।
_"আপনি ভালো করেই জানেন আমি এখানে কেনো এসেছি!"
_"ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে ঝেড়ে কাঁশ'ও।"
জিলানি ভাই'ও এবার আব্বার কথা শুনে কোনো প্রকার বনিতা না করে বলতে লাগলেন।
_"আমার আপনার একটা জিনিস বেশ পছন্দ হয়েছে.."
জিলানি ভাইয়ের কথা শেষ করার আগেই আব্বা বিরোধিতা করে বলে উঠলেন।
_"ওটা কোনো জিনিস নয় আমার মেয়ে"
_"সবই যেহেতু জানেন তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছেন কেনো? স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশ্ন করার স্বভাব স্বাভাবিক জীবনেও প্রভাব ফেলেছে দেখছি।"
এতক্ষণে যা বুঝলাম লোকটা অত্যন্ত অভদ্র। বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা জানে না। আব্বার সাথে এরকম অসভ্যদের মতো কথা বলায় রাগ লাগলো বেশ। ইচ্ছে করলো বই খাতার সাথে চেপে রাখা স্কেলটা দিয়ে মাথায় একটা বারি দেই।
_"এভাবে আড়ি পেতে কি শুনছিস?"
চোর ধরা পড়ার পর যেভাবে লিফিয়ে উঠে ঠিক সেভাবেই লাফিয়ে উঠলাম। সাথে সাথে পিছন ফিরতেই দেখি আপা হাতে চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখা মাত্রই নিজেকে খানিক ধাতস্থ করলাম। তার মধ্যেই আবারো আপা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন।
_"কি হলো বই খাতা হাতে নিয়ে এভাবে দাড়িয়ে আড়ি পেতে কি শুনছিস?"
_"আপা ওই...."
_"কে ওখানে?"
এইরে! আব্বা বুঝি শুনে ফেলল। এখন কি হবে? আব্বা যদি কোনো ভাবে জানতে পারে যে আমি আড়ি পেতে তাদের কথা শুনছিলাম তাহলে নির্ঘাত কান ধরে এক পায়ে দাঁড় করিয়ে রাখা থেকে কেউ আটকাতে পারবে না।
কিন্তু না আমার আর কিছুই বলতে হয়নি তার আগেই আপা মুখ খুলল।
_"আব্বা আমি। তোমার জন্য চা নিয়ে এসেছিলাম।"
_"আমি এখন চা খাবো না নিয়ে যাও তুমি।"
আব্বার আদেশ অনুযায়ী আপাও চায়ের কাপ হাতে ফেরত যেতে নিলেই ভিতর থেকে আরো একটা রাশ ভাড়ী কন্ঠ ভেসে এলো।
_"কিন্তু আমি খাবো। নিয়ে এসো।"
জিলানি ভাইয়ের কথাটা শোনা মাত্রই লক্ষ্য করলাম আপা কেমন যেনো কেঁপে উঠলো।
ভিতর থেকে আবারো জিলানি ভাইয়ের কন্ঠ ভেসে এলো। আব্বার উদ্দেশ্য কিছু বলছেন।
_" স্যার, আপনি হলেন এ গ্রামের একজন নাম করা শিক্ষক। আপনার বাসায় বেড়াতে এসেছি একটু চা পানির'ও প্রস্তাব দিবেন না?"
রাগ লাগলো বেশ। এই লোকটা আসার পর থেকেই আব্বাকে অপমান করে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে গরম চায়ের কাপ নিয়ে লোকটার মাথায় ঢেলে দেই।
আমার বিষয়টা রাগ লাগলেও আপার বুঝি সম্মানে লাগেছে। সে কিছুতেই কারো সামনে তার আব্বাকে ছোট হতে দিবে না।
তাই আব্বার আদেশের অপেক্ষা না করেই। মাথায় ভালো করে ঘোমটা টানলো দৃষ্টি মেঝেতে নিবদ্ধ করে এগিয়ে গেলো সেথায়। আমিও ছুটলাম আপার পিছু পিছু দরজার সামনে গিয়ে পর্দাটা হালকা সরিয়ে সাহায্য করলাম তাকে ভিতরে প্রবেশ করতে।
আপা নত দৃষ্টি নিয়ে কাপা হাতে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলেন জিলানি ভাইয়ের দিকে।
কিন্তু জিলানি ভাই! নিজের লাজ লজ্জা ভুলে গিয়ে চায়ের কাপ হাতে না নিয়ে তাকিয়ে রইলেন আপার মুখ পানে। সামনে যে আমার আব্বা উপস্থিত আছে সেদিকে তার যেনো কোনো খেয়ালই নেই।
আব্বার চোখ মুখ আগের থেকে শক্ত হয়ে আছে। আপার প্রতি একটু রাগ জন্মালো। তার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সে জিলানি ভাইয়ের সামনে কেনো এলো? কিন্তু আসল দোষ তো আপার না আমার। আমিই তো আব্বার বলা একটি কথাও আপাকে জানাই নি।
সেই কতক্ষন ধরে চায়ের কাপ হাতে ধরে আছে আপা কিন্তু জিলানি ভাই তা নেওয়ার কোনো নামই নিচ্ছে না। আব্বা এবার কিছুটা রাগান্বিত স্বরে বলে উঠলেন।
_"রেশমি, জিলানি মনে হয় চা খাবে না তুমি চায়ের কাপ নিয়ে ভিতরে যাও।"
আপুকে মনযোগ দিয়ে দেখায় ব্যাঘাত ঘটলো বুঝি। চোখ মুখ কুঁচকে বিরক্তিতে 'চ' শব্দ উচ্চারণ করলেন জিলানি ভাই। তারপর আব্বাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন।
_"অথিতি আপ্যায়নে অধৈর্য হলে কি চলে বলুন? আরো অথিতি যদি হয় আপনাদের কাছের মানুষ তাহলে তো তার বেলায় একদমি অবহেলা করা চলে না স্যার। আপনি হলেন শিক্ষক মানুষ আপনি যদি এরকম করেন তাহলে গ্রামের বাকি লোকেরা কি করবে?"
কথাটা শেষ করেই আবারো আপার নুইয়ে রাখা মুখের দিকে তাকালো। হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটা নিয়ে নিলো।
আপা জিলানি ভাইয়ের হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়েই তাৎক্ষণাৎ ওই রুম হতে প্রস্থান করতে উদ্যত হলো। আপা চলে যাচ্ছে কিন্তু তখনো জিলানি ভাইয়ের দৃষ্টি আপার থেকে নড়লো না। ততক্ষণ তাকিয়ে রইল যতক্ষন না আপার অবয়ব তার দৃষ্টি হতে পুরো পুরি আড়াল হচ্ছিল।
আপা চলে যেতেই জিলানি ভাই চরম আবেশে চায়ের কাপে চুমুক দিলো। তারপর মুগ্ধতার সহিত আব্বাকে বলল।
_"মাশাআল্লাহ, যেমন আপনার মেয়ে ঠিক তেমনি তার বানানো এই চা।"
_"শুনেছিলাম বিদেশে শিক্ষিত হতে গিয়েছিলে কিন্তু এখন তো দেখছি অসভ্য হয়ে ফিরেছ।"
আব্বার অপমান কৃত কথা গায়ে মাখলেন না জিলানি ভাই। উল্টো জেদি কন্ঠে বললেন।
_"বিদেশ থেকে সভ্য মানুষ হয়েই ফিরেছিলাম কিন্তু আপনারা অসভ্য হতে বাধ্য করছেন।"
থামলেন একটু তারপর হাতের কাপটা এক সাইডে রেখে কন্ঠে অত্যন্ত গম্ভীর্যতা নিয়ে বললেন।
_"অনেক হয়েছে এবার মূল কথায় আসা যাক। আপনার সাথে এখানে কোনো তর্ক বিতর্কে জড়াতে আসেনি আমি। আপনার বড় মেয়ে রেশমিকে বিয়ে করতে চাই। আপনাকে সসম্মানে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু আপনি তাতে রাজি হননি। তাই এখন আর আপনার থেকে কোনো প্রকার অনুমতি চাইছি না। আগামী মাসের ১২ তারিখ রেশমি আর আমার বিয়ের আয়োজন করা হবে। এখন মেয়েকে নিজ ইচ্ছায় আমার হাতে তুলে দিবেন নাকি অনিচ্ছায় তুলে দিবেন সেটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার।" more...
{গল্পটি আপনাদের কাছে কেমন লাগছে? দয়া করে সকলে মতামত দিবেন। এবং রেসপন্স করবেন।


2

No comments:

720

Powered by Blogger.