রোম্যাঞ্চ_বাই_মিস্টেক_সিজন_২ [ রাগ না অভিমান]/
ঝুমুর কান্না করতে করতে রাস্তা দিয়ে পা*গলের মতো ছুটতে থাকে।ছুটতে ছুটতে সে রাস্তার মাঝে এসে যায় কিন্তু তার খেয়াল নেই।পেছন থেকে একজন সাইকেল চালিয়ে আসছিল বার বার বেল বাজানোর পরেও ঝুমুরের কানে সেই বেলের আওয়াজ যায়নি।তার চোখের সামনে শুধু একটু আগেই ঘটে যাওয়া দৃশ্যগুলো ভাসতেছিল।হঠাৎ একজন পথচারী দ্রুত ঝুমুরের হাত ধরে টেনে সরায়।আচমকা এই ঘটনায় ঝুমুর চমকে যায়।
পথচারী : এই যে মেয়ে এই বয়সে মরার সখ উঠছে নাকি?
ঝুমুর: না মানে আমি..
পথচারী : মাঝ রাস্তা দিয়ে কেউ হাটে? আজ কাল ছেলেমেয়েদের মন যে কোনদিক থাকে এখুনি একটা বড় বিপদ হতে পারতো।
ঝুমুর: আমি এরপর থেকে খেয়াল রাখব।
লোকটি একটু বকাবকি করে ঝুমুরকে স্কুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে আসে।
ওইদিকে
রাফি: ইয়ো ব্রো!! তুই সব দিক থেকেই পারফেক্ট তোকে ত নোবেল দেওয়া উচিত এত সুন্দর অভিনয়।
আহিল: অভিনয় টা তোর করার কথা,,নে যেভাবে দেখিয়ে দিলাম ঠিক সেইভাবেই যেন এক্সপ্রেশনটা থাকে।
পৃথা: আহিল ভাইয়া আমার লুক ঠিক আছে?
আহিল: একদম পারফেক্ট।
চলো চলো আবার সুট শুরু করো।আর আপনারা প্লিজ একটু সাইডে যান এখানে একটা সুট হচ্ছে।
রাফি: তুই যেমন ভালো ডিরেকশন দিতেছিছ আমাদের তেমনি ভালো অভিনয় তোর আহিল।
আহিল: দেখ এই সিরিজ টা আমাদের কাছে একটা বড় সুযোগ। এই সিরিজ যদি হিট করতে পারি তাহলে তোদের অভিনয় জগৎ আর আমার ডিরেক্টর হওয়ার স্বপ্ন দুই পূরণ হতে পারে সো সবাই মন দিয়ে কাজ কর।ভুল যেন না হয়।
সবাই সম্মতি জানায়।
আসলে আহিল আর তার গ্রুপের মেম্বাররা মিলে একটা সিরিজ সুট করছে যেটা তার পাবলিকটি পোস্ট করবে এর মাধ্যমে তাদের সোসাল মিডিয়ায় পরিচিতি বাড়বে আর তাদের প্রোফেসর জানিয়েছেন যে এই সিরিজ হিট হলে তাদের অডিশন দেওয়ার একটা সুযোগ করে দিবেন।তাই সবাই নিজেদের ক্যারিয়ারের সার্থে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
স্কুলে আজ একদম ভালো সময় কাটেনা ঝুমুরের।অনেক কষ্টে কান্না আটকে রেখেছে সে।ছুটি হতেই ঝুমুর সোজা বাসায় আসে।বাসায় আসে কারো সাথে কথা না বলেই সে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।বিছানায় সুয়ে বালিশে মাথা দিয়ে ঝুমুর তার সব যন্ত্রণা ঢেলে দিচ্ছে, যেন এই বালিশ ছাড়া তার কষ্টগুলো ভাগ করার কেউ নেই।ঝুমুরের কেন এত কষ্ট হচ্ছে কেন এত রাগ হচ্ছে? একেই কি তবে বলে ভালোবাসার মানুষকে হারানোর যন্ত্রণা? এই যন্ত্রণা এতটাই মারাত্মক যে ১৬ বছর বয়সী ঝুমুরের পক্ষে তা ভেদ করে উঠা সম্ভব হচ্ছেনা।এতদিন সে জোতির কথা ভেবে নিজের মনের সুপ্ত বাসনা গুলো মাটি চিরে বের করেনি কিন্তু যখন থেকে সে জানতে পারে জোতি আহিলকে নয় অন্য কাউকে ভালোবাসে তখন থেকেই ঝুমুর তার ভেতরে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত বাসনা গুলো একটু একটু মাটি থেকে খুব যত্নসহকারে বড় করে তুলছিল কিন্তু এই এক কালবৈশাখী ঝড় এসে যেন সব এলোমেলো করে দিল ঝুমুরের।সে নিজেকে কিভাবে সামলামে ভেবে পাচ্ছেনা।অনেকক্ষন একা থাকার পর তার মা এসে দরজা ধাক্কায়, কিন্তু কান্না করতে করতে তার গলা বসে গেছে।তাই কোনমতে নিজেকে সামলে দরজা না খুলেই জবাব দেয়।
ঝুমুর: আ,,আম্মু!! আমার না অনেক ক্লান্ত লাগছে অনেক ঘুম পাচ্ছে আমি এখন একটু ঘুমাব।
রেহেনা: সে কি রে খাবিনা? এই ঝুমুর দরজা খোল শরীর খারাপ করল নাকি দেখি!
ঝুমুর: না আম্মু কিছু হয়নি অনেক ঘুম আসছে আমি ঘুমালাম।
রেহেনা আর কিছু না বলেই চলে যায় কিন্তু বেশ চিন্তায় পরে যায় ঝুমুরের জন্য।
ঝুমুর কান্না করতে করতে এক পর্যায়ে সত্যি ঘুমিয়ে যায়।সন্ধ্যার আগে আগে ঘুম ভাঙ্গে তার।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ৬:৩০ বাজে।ফোনের ডাটা অন করতেই ফেসবুক থেকে নোটিফিকেশন আসা শুরু করে।ঝুমুর নিজের চোখ একটু হাত দিয়ে ডলে ফেসবুকে ঢুকে।
ফেসবুকে ঢুকতেই রিকুয়েষ্ট অপশনে গিয়ে দেখে সবার প্রথমে মীরের ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট। ঝুমুর ভাবে আহিল তাকে কোন ছেলে মানুষের ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্স সেপ্ট করতে বারণ করেছে কিন্তু মীর ত ফ্যামিলির মানুষ তাই সে রিকুয়েষ্ট এক্স সেপ্ট করে নেয়।আর আহিলের উপর রাগ করে ছিল বলে আর এত কিছু ভাবেনা ঝুমুর।কেন ভাবতেই বা যাবে ঝুমুর আহিলের কথা আহিল কে হয় তার? তার এখন অন্য গার্লফ্রেন্ড আছে।
রিকুয়েষ্ট এক্স সেপ্ট করার ১ মিনিটের মাথায় মীর ঝুমুরকে ইনবক্সে নক দেয়।
মীর: তুমি ঝুমুর ত তাইনা?
ঝুমুর: হুম। more...
মীর: ভাবির সাথে এড হওয়ার পর তোমার আইডিটা সাজেশনে এসেছিল বাট ভাবছিলাম এটা তুমি কিনা তাই এত কিছু না ভেবেই রিকুয়েষ্ট দিলান।
ঝুমুর: ওহ আচ্ছা! কেমন আছেন আপনি?
মীর: এই তো আলহামদুলিল্লাহ। তোমার পায়ের এখন কি অবস্থা?
ঝুমুর: পা এখন অনেকটাই ভালো।
মীর: একটা কথা বলব ঝুমুর?
ঝুমুর : জ্বি বলেন।
মীর: কেন জানিনা তোমাকে আমার বার বার মনে পরছে, এর পরের বার তোমার বোনের বাসায় এলে আমাকে জানিও আমি একবার তোমার সাথে দেখা করতে চাই তোমাকে কিছু বলার আছে আমার খুব প্রয়োজনীয়।
ঝুমুর রিপ্লাই দিতে যাবে তার আগেই তার দরজায় ধুমধাম ধাক্কা।
আহিল: ঝুমুর!! এই ঝুমুর কি হয়েছে তোর? দরজা দিয়ে আসিস কেন এতক্ষন দেখ চাচি চিন্তা করছে দরজা খুলবি নাকি ভাঙব।
ঝুমুর উঠে দরজা খুলতেই আহিল রে রে করে তেড়ে আসে ঝুমুরের দিকে।
আহিল: কি হয়েছে শরীর খারাপ দেখি জ্বর এলো নাকি।
আহিল ঝুমুরের কপালে হাত দিতে যাবে ওমনি ঝুমুর মাথা সরিয়ে নিয়ে বলে,,
ঝুমুর: আমার কিছু হয়নি আহিল ভাই!আমি ঠিক আছি।
আহিল: চাচি বলল স্কুল থেকে এসেই নাকি সোজা দরজা দিয়েছিছ কিছু নাকি খাস ও নি।স্কুলে কেউ কিছু বলেছে?
ঝুমুর: না।
তখন বার বার ঝুমুরের ফোনে মেসেজ রিকুয়েষ্ট আসতে থাকে।
আহিল: এত কিসের নোটিফিকেশন আসছে দেখি।
ঝুমুর বিছানার উপর থেকে ফোনটা খপ করে নিয়ে বলে,,
ঝুমুর: কিছুনা এমনি।
আহিল: ফোন দে।
ঝুমুর: না।
আহিল: তোকে কি শর্ত দিয়েছিলাম ভুলে গেছিছ? ফোন দে আমি দেখব।
আহিল জোর করে কেড়ে নেয়।ফোন অন করে সোজা মেসেঞ্জারে যেতেই আহিল দেখে মীরের মেসেজ।আহিল ইনবক্সে গিয়ে মীরের মেসেজ গুলো পরে।ঝুমুর মাথা নিচু করে নিজের নোখ খুটরাচ্ছে।
আহিল: এসব কি?
ঝুমুর: কি সব?
আহিল: মীর কি বলতে চায় তোকে? আর তুই মীরের সাথে কেন কথা বলছিছ তোকে না বারণ করেছি কোন ছেলের সাথে কথা না বলতে এতটা অবাধ্য হয়ে গেছিছ? কথা শোনার প্রয়োজন মনে করিস নাহহহহহ!!
শেষের কথাটা আহিল অনেক ধমকের সুরে বলে,,ঝুমুর চমকে উঠে।
ঝুমুর: তুমি ত বলেছিলে ফ্যামিলি মেম্বারদের এড করতে পারি তাই ত...
আহিল: মীর তোর কাছে ফ্যামিলি মেম্বার? আচ্ছা এত আপন হয়ে গেছে তোর।
আহিল বেশ উচু গলায় কথা বলছে।
ঝুমুর: আমি যার সাথে কথা বলি তাতে তোমার কি?
আহিল এবার নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারেনা।ঝুমুরের দুই বাহু চেপে ধরে বলে,
আহিল: আমি কে দেখাব তোকে?
ঝুমুর: আহিল ভাই কি করছেন ছাড়ুন আমার লাগছে আহ!
আহিল: তুই জানিস না আমার কথা কেউ না শুনলে আমার কেমন রাগ হয়? তারপরও এই সাহস পাস কোথায় থেকে কে দেয় তোকে এত সাহস বল?
ঝুমুর: আ,,,আহিল ভাইয়া!
আহিল: চোপপ..
ধমকে উঠে আহিল।
আহিল: তুই বললি না আমি কে? দেখাচ্ছি এবার তোকে আমি কে।
বলেই আহিল ঝুমুরকে আলমারির সাথে চেপে ধরে।ঝুমুরের ডান হাত মোচড়ে ধরে দাত কিড়মিড়িয়ে বলে,,
আহিল: নাউ ডু ইউ নো হু আই আম।
বলেই আহিল ঝুমুরের ঠোঁট বরাবর নিশানা তাক করে।আহিল যখন ঝুমুরের নাক বরাবর ঠিক তখনি রেহেনা ঝুমুর ঝুমুর করে ডেকে ঘরের দিকে আস্তে থাকে।ঝুমুর তার মায়ের গলা শুনে ধাক্কা দিয়ে আহিলকে সরিয়ে দেয়।আহিল গিয়ে বিছানার উপর ছিটকে পরে।
রেহেনা: কিরে এত চিল্লাচিল্লি করছিছ কেন দুই ভাই বোনে কি হয়েছে?
ঝুমুর: কিছু হয়নি ত আম্মু! আসলে....
আহিল: আসলে চাচি তোমার মেয়েনা বেশি পেকে গেছে ওকে বলো এত বার না বারতে আর শোন এই ফোন আমি নিয়ে যাচ্ছি যদি ইচ্ছে হয় তাহলে ফেরত পাবি নাইলে নয়।
বলেই আহিল ফোনটা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
রেহেনা: ঝুমুর কি করেছিছ তুই?
ঝুমুর: কিছু না আম্মু আমি আসলে অনেকক্ষন ধরে ফোন চালাচ্ছিলাম তাই আহিল ভাই রেগে গেছে।
রেহেনা: এই জন্য তোদের হাতে এখন ফোন দিতে চাইনা।বেশ হয়েছে আহিল নিয়ে গেছে।এই নে ধর খাবার এনেছি খেয়ে নে কিছুই ত খাসনি।
ঝুমুর ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার খেয়ে নেয় কিন্তু তার মাথায় এখন একটাই চিন্তা ঘুরছে মীর তাকে কি বলতে চেয়েছিল আর মীরের সাথে কথা বলতে দেখলে আহিল কেন এত রেগে যায়।
ঝুমুর: নিজে ত ঠিকি ভার্সিটিতে গিয়ে মেয়েদের প্রোপোজ করে বেড়ায় তখন আমি কিছু বলি? বলিনা ত কারণ আমার সেই অধিকার নেই তাহলে আহিল ভাই এত অধিকার পায় কিভাবে হ্যাঁ??
বলতে বলতেই আরও রেগে যায় ঝুমুর।খাওয়া শেষ করে একটু ছাদে যায় ঝুমুর।তখন সূর্য একদম ডুবে গেছে চাঁদ বেরিয়ে এসেছে। হালকা হালকা বাতাস বইছে।ঝুমুর নিজের চুলগুলো বাতাসের তালে খেলা করানোর জন্য ছেড়ে দেয়।প্রাকৃতিক বাতাস প্রাণ করে অনুভব করছিল ঝুমুর ঠিক তখনি পেছন থেকে কেউ বলে উঠে,,,
আহিল: চাচি এসেছিল বলে ভাবিস না তুই বেচে গেছিছ।
আহিলের গলা শুনেও পেছনে তাকায় না ঝুমুর তার ভারি গোসা হয়েছে সে কিছুতেই আহিলের সাথে কথা বলবে না।
আহিল: কথা কানে যাচ্ছেনা?কানে কি কালা হয়ে গেলি?
ঝুমুর:... …..
আহিল চোখ বন্ধ করে হাত মুট করে একটা দীর্ঘ শ্বাস নেয়।আহিল এবার গিয়ে ঝুমুরের সামনে দাঁড়ায়।
ঝুমুর উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে দেয়,এতে আহিল বেশ অবাক হয়।
আহিল: কি হয়েছে তোর? আমি বকলে ত তুই এত রাগ করিস না।
ঝুমুর আহিলের কথা পাত্তা না দিয়ে চলে যাচ্ছিল।আহিল পেছন থেকে হাত ধরে বলে,,,
আহিল: আমার কথার উত্তর না দিয়ে এক পা ছাদ থেকে বের করে দেখ তোর পা ভেঙ্গে দিব।
ঝুমুর: কেন? আমি কি তোমার কেনা সম্পত্তি নাকি যে যখন যা ইচ্ছে তাই করবে?
আহিল: ঝুমুররর!
ঝুমুর: চিল্লাবেনা।
আহিল একটু থামে।ছাদের পশ্চিম দিকে একটা দোলনা রয়েছে। আহিল ঝুমুরের হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে ঝুমুরকে ওই দোলনায় বসায়।আহিল ঝুমুরের পায়ের কাছে এসে বসে।
আহিল: আচ্ছা আর চিল্লাবনা এবার বল কি হয়েছে?
ঝুমুর: কিছুনা।
আহিল: কিছুতো হয়েইছে।আচ্ছা আজ কি তুই আমার ভার্সিটিতে গেছিলি?
ঝুমুর: ( একি আহিল ভাই কি আমাকে দেখে ফেলেছে নাকি)
আহিল: কিরে বল গেছিলি?
ঝুমুর: ক,,,কই নাতো।
আহিল: যাসনি? কিন্তু আমার মনে হলো তোকে যেন দেখলাম।
ঝুমুর: কি আজব আমি কেন যাব?
আহিল ঝুমুরের হাত ধরে বলে,,
আহিল: দেখ ঝুমুর আমাকে নিয়ে তোর মনে যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে সরাসরি সেইটা আমাকে বলবি আমি ক্লিয়ার করে দিব।এমন কিছু কি তোর মনে চলছে।
ঝুমুর আহিলের চোখের দিকে তাকায় কিন্তু আহিলের চোখের ভাষা তার বোধগম্য হচ্ছেনা। হঠাৎ তার মনে পরে যায় আহিল অন্য একজনকে ভালোবাসে আজ তাকে প্রোপোজ করেছে কথাটা মনে হতেই সে উঠে চলে যাচ্ছিল আহিল ঝুমুরকে টেনে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়
আহিল: ঝুমুর প্লিজ এমন করিস না।আমার সাথে কথা বলনা।আমার উপর রাগ করেছিছ?
ঝুমুর: আহিল ভাই!! ছাড় আমাকে কেউ দেখে নিবে।
আহিল: এখন কেউ ছাদে আসেনা।
ঝুমুর: তুমি তাও আমাকে ছাড়।
আহিল আরও শক্ত করে ঝুমুরকে জড়িয়ে ধরে।আহিলের বুকে মাথা রাখাতে ঝুমুরের মনে জমে থাকে কষ্ট গুলো যেন ঝুমুরের বুক ঠেলে বেরিয়ে আসে ঝুমুরের চোখে।ঝুমুরের চোখের পানিতে আহিলের শার্ট ভিজে যায়।
আহিল: এই ঝুমুর তুই কাদছিছ কেন দেখি দেখি।
আহিল ঝুমুরের চোখের পানি মুছে দেয় আর জানতে চায় যে সে কেন কাদছে।
ঝুমুর:( কিভাবে বলব তোমাকে আহিল ভাই যে আমি কেন কাদছি? শুনলে কি তুমি বুঝবে আমার অনুভূতি? )
আহিল: কিরে কি এত ভাবছিছ বলনা আমাকে!
ঝুমুর : আ,,,আহিল ভাই।
আহিল: হুম বল।( বলনা ঝুমুর বল একবার বল যে তুই আমাকে ভালোবাসিস। তোর কাছ থেকে এই কথা শোনার জন্য আমার কান গত ১০ বছর ধরে অপেক্ষা করছে)
ঝুমুর: তো,,,তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে?
আহিল: না।
ঝুমুর : মিথ্যা কথা।
আহিল: কি আজব মিথ্যা বলতে যাব কেন তোকে? আমার আমার গার্লফ্রেন্ড এর খোজ নিয়ে তোর কি কাজ।
ঝুমুর : তাহলে আছে তাইনা?
আহিল: আরে বাবা নেই।
ঝুমুর: আমি নিজে দেখেছি আছে।
আহিল ভ্রু কুচকে বলে,,
কি? আমার গার্লফ্রেন্ড আছে আর আমিই জানিনা ত কে সে শুনি?
ঝুমুর: কেন পৃথা আপু।
আহিল: প,,,পৃথা? তুই আজ তাহলে সত্যি ভার্সিটিতে গেছিলি আমি ভুল দেখিনি ওটা তুই ছিলি।
ঝুমুর: আজ তুমি ওই মেয়েটাকে প্রোপোজ করোনি?
আহিল ঝুমুরের মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলে,,
আহিল: তোর মতো পাগল আমি জীবনে দেখেনি
বলেই আহিল হো হো করে হেসে উঠে।আহিলের হাসি যেন ঝুমুরের কাছে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো লাগছিল।
ঝুমুর : তুমি হাসতে থাকো আমি গেলাম।
আহিল: আরে ভাই শোন শোন আসল কাহিনি ত শুনে যা।
বলেই আহিল পকেট থেকে ফোনটা বের করে ঝুমুরকে আজকের শুটিং এর ভিডিও দেখায়।
আহিল: এবার বুঝলি গাধী?আমি ওদের জাস্ট দেখিয়ে দিচ্ছিলাম কিভাবে অভিনয় করতে হবে। ওটা শুধুই অভিনয় ছিল পাগলি!
ঝুমুরের এবার লজ্জার মাথা নিচু হয়ে যায়।নিজেই নিজের ঠোঁট কামড়াতে থাকে।ঝুমুরের এই হাল দেখে আহিলের ভীষণ হাসি পায় কিন্তু সে হাসি চেপে রেখে গম্ভীর গলায় বলে,,,
আহিল: আমার গার্লফ্রেন্ড থাক বা নাই থাক,আমি যাকে খুশি প্রোপোজ করি তাতে তোর কি ঝুমুর?
আহিলের প্রশ্ন শুনে ঝুমুরের বুক ধুক করে উঠে। কি বলবে এখন আহিলকে? মূহুর্তেই তার মাথায় উত্তর এসে যায়।
ঝুমুর: আপনি যেমন আমাকে অন্য ছেলে এক কথায় মীরের সাথে কথা বলতে দেখলে রাগ করেন ঠিক তেমনি আমারও রাগ হয় তাই আগে বলুন মীরের সাথে কথা বললে আপনি কেন এত রেগে যান?
আহিল: ( আচ্ছা এই মেয়ে এখন আমার প্যাচ আমাকেই মারছে আচ্ছা বেশ দেখাচ্ছি মজা)
ঝুমুর: বলো
আহিল: তুই আমার ছোট বোন, তোর উপর খেয়াল রাখা বড় ভাই হিসেবে আমার দায়িত্ব কিনা।
ঝুমুর:( ওহ আহিল ভাই তাহলে আমাকে শুধু বোনের চোখেই দেখে?)
আহিল: যাইহোক! আমি মীরকে ব্লক করে দিয়েছি আর খবরদার যদি আমি দেখেছি কোন ছেলের সাথে কথা বলছিছ তাহলে কিন্তু...
ঝুমুর: উম বুঝেছি।আমি এখন আসি আম্মু না দেখতে পেলে বকবে।
বলেই ঝুমুর দৌড়ে ছাদ থেকে চলে যায়।ঝুমুর চলে গেলে আহিল খিলখিল করে হাসে।
আহিল: হা হা! তোর চোখে আমাকে হারানোর যে ভয় আজ আমি দেখেছি তাতে..
বলেই আহিল মুচকি হাসে।
ঝুমুরের মনে এখন খুব ফূর্তি। সে জেনে গেছে তার আহিল ভাই অন্য কাউকে ভালোবাসে না। আনন্দে তার নাচতে ইচ্ছে করছে।হাত পা ছড়িয়ে গুন গুন করে গাইতে গাইতে সে উড়ে বেড়াচ্ছে। ঘরে এসে ঝুমুর নিজের গোপন খাজানা গুলো বের করে।যেখানে শুধু আহিলের কথা লেখা।ঝুমুর ডায়েরিটা বের করে আহিলকে নিয়ে তার লেখা পাগলামি গুলো পড়তে থাকে আর নিজের মনেই ফিক ফিক করে হাসতে থাকে।দেখে যেন মনে হবে ঝুমুর পাগল হয়ে গেছে।ডায়েরি পড়তে পড়তে ঝুমুর বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
ডায়েরিটা বুকে জড়িয়ে ওভাবেই ঘুমিয়ে যায় ঝুমুর।
সকালে,,
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে স্কুল ড্রেস পরে নিচে যাওয়ার জন্য দরজা খুলতেই ঝুমুর ধাক্কা খায় কারো সাথে।
ঝুমুর: উউ!!
আহিল: আরে আস্তে কানা নাকি?
ঝুমুর: তুমি সকাল সকাল আমার ঘরের সামনে কি করো।
আহিল: নে ধর।
আহিল ফোনটা এগিয়ে দেয় ঝুমুরের দিকে।
ঝুমুর : তোমার ফোন তুমি নাও আমার লাগত না।
আহিল: উফ ধর তো। আর লাস্ট টাইম সাবধান করছি মীরের সাথে কোন রকম কোন কথা নয়।ওরে আমাকে একটুও ভালো লাগেনা।
ঝুমুর: কেন আমার ত বেশ লাগে কত সুন্দর ব্যবহার আর....
বাকি কথা ঝুমুরের গলা থেকে বের হওয়ার আগেই আহিলের চেহারা দেখে গলা থেকে কথা সোজা পেটে চলে যায় ঝুমুরের।আস্তে করে পাশ কাটিয়ে নিচে চলে আসে ঝুমুর।
খেতে খেতে তার হঠাৎ মনে পরে সে তার ডায়েরি টা বিছানার উপরি রেখেছে ড্রায়ারে রাখেনি।কথাটা মনে পরতেই খাবার তার গলায় আটকে যায়।
মনোয়ারা: আরে বোন আস্তে খা এত তারা কিসে?
ঝুমুর: আ,,আম্মু আমি না একটা বই ঘরেই রেখে চলে এসেছি আমি এক্ষুনি আসছি
বলেই ঝুমুর এক ছুট লাগায় ঘরের দিকে।
রেহেনা: আরে আগে খেতে ত যা, উফ এই মেয়েটা না।
ঝুমুর ফুল স্পিডে দৌড়ে ঘরে এসে দেখে আহিল তার ঘরে,, আহিলের হাতে ঝুমুরের ডায়েরি। এই দৃশ্য দেখে ঝুমুরের আত্না খাচা ছাড়া হয়ে যায়।
ঝুমুর ভয়ে ভয়ে আহিলকে ডাকে,,
ঝুমুর: আহিল ভাই!
আহিল: এসব কি ঝুমুর? তুই তলে তলে এসব লিখিস আগে বলিস ত।
( আহিল কি তবে জেনে গেল তার প্রতি ঝুমুরের গোপন অনূভুতির কথা more....
No comments: