গল্প: রোম্যাঞ্চ_বাই_মিস্টেক [শেষ পর্ব ]
হানিমুনের দ্বিতীয় দিন,,,
প্যারিসের অলিতে গলিতে আহিল ঝুমুর ঘুরেঘুরে বেড়াচ্ছে। হাতে হাত ঝুমুরের মাথা আহিলে কাধে দিয়ে নিশ্চিন্তে রয়েছে দুটিতে।এমন একটা বিশ্বাসযোগ্য হাতি ত চেয়েছিল ঝুমুর।ভাগ্য তাকে এমন একজন সাথী দিবে সে কল্পনাও করেনি।আহিলের এখন পৃথিবী বলতে শুধুই ঝুমুর আর তাদের অনাগত সন্তান।প্যারিসের এই টুরটা ঝুমুরের কাছে নতুন তাই সবকিছু অবাক হয়েই দেখছে ঝুমুর আর একটু পর পর আহিলকে নানান প্রশ্ন করে ব্যাস্ত করে তুলছে। আহিল হাসি মুখে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছে।এমন সময় ঝুমুর দেখতে পায় কিছুটা দূরে একটা ভীড় জমেছে।ঝুমুর আর নিজের কৌতুহল আটকাতে পারেনা আহিলকে টেনে নিয়ে যায় সেইদিকে।গিয়ে দেখে একজন দোকানদার অনেকগুলো সুন্দর উপহার নিয়ে তার দোকান সাজিয়েছে আর বলছে,,,এই দোকানের উপহারগুলো পেতে হলে কাপলদের একসাথে গেম খেলতে হবে।যে কাপল জিতবে সে পেয়ে যাবে আর্কষণীয় উপহার।ইতিমধ্যে অনেক কাপল এতে অংশগ্রহণ করেন কেউ কেউ জিতেন আর বেশিরভাগই হেরে যায়।ঝুমুর বিষয়টাই অনেক আগ্রহ প্রকাশ করলে আহিল তাকে নিয়ে যায় দোকানে।
দোকানদার: ইয়েস স্যার!! ডু ইউ ওয়ান্ট দ্যাট?
আহিল: ইয়েস আই ডু।
দোকানদার তাদের খেলা বুঝিয়ে দেয়।হাসবেন্ড দের বউয়ের কথা মতো সামনে রাখা বিভিন্ন বোল থেকে চিটকুট তুলতে হবে চিটে যা থাকবে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।চিটে যদি লিখা থাকে পরের ধাপ তবেই পরের ধাপে যেতে পারবে না হলে বাদ পরে যাবে।আহিল কথা মতো চিট তুলতে যায় কিন্তু তাকে ঝুমুরের ইচ্ছেমতো তুলতে হবে এইখানে মেইন ঝুমুরের লাক।আহিল অনেকক্ষন ধরে চিট গুলো ঝাপায় ঝুমুর ইশারা দিয়ে একটা তুলতে বলে।আহিল সেটা তুলে আর দেখে লেখা আছে নেক্সট স্টেপ।আহিল পরের ধাপে দিয়ে দেখে অনেকগুলো চপস্টিক রাখা সেখান থেকে ঝুমুরের কথা মতো একটা তুলে নেয়।সেইখানে দেওয়া ছিল ব্লাস দা বালুন।এবার বেলুন ফাটানোর পালা।এই বেলুনের ভেতর রয়েছে গিফট এর নাম। যে বেলুন ফাটাবে সেখানে যা থাকবে তাই নিতে হবে।এইবারো ঝুমুরের কথা মতো বেলুন ফাটাতে হবে।ঝুমুর অনেকক্ষণ সময় নিয়ে ভালো ভাবে বেলুন গুলো পর্যবেক্ষণ করে, করে একটা হলুদ রঙের বেলুন আহিলকে ফাটাতে বলে আহিল বন্দুক তাক করে সেটি ফাটায়। দোকানদার চিটটা খুলে দেখে দোকানের সব থেকে দামি যেই জিনিস একটা রূপোর তৈরি জাহাজ সেটি আহিলরা জিতে।জাহাজটা ভালোই বড় আর অসম্ভব সুন্দর দেখতে।সবাই হাত তালি দিয়ে ঝুমুর আর আহিলকে অভিনন্দন জানায় কারণ এতদিনে এই উপহার কেউ জিততে পারেনি। উপহার জিতে ঝুমুর বেশ খুশি।এত ঘুরাঘুরি করতে করতে ঝুমুর বেশ ক্লাস আর খুদাত্ত।আহিল ঝুমুরকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে যায়।সেইখানে গিয়ে কিছু খাবার অডার করতেই স্টাফ এসে খাবার দিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর একজন স্টাফ এসে আহিল আর ঝুমুরকে একটা পেপার আর পেন দিয়ে যায়,আর বলে।
স্টাফ : স্যার!! উই আর এরেঞ্জ সামথিং ইন্টারেস্টিং ক্যান ইউ প্লিজ জয়েন?
ঝুমুর: ইয়েস ইয়েস।
স্টাফ : ম্যাম ক্যান ইউ প্লিজ রাইট হিয়ার দা কোশ্চেনস আন্সার?
ঝুমুর: শিওর।
ঝুমুর স্টাফের কথা মতো পেপারে থাকা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিল। স্টাফ সেটা নিয়ে আহিলকে সেইম প্রশ্ন গুলো করতে লাগল।প্রশ্ন গুলো এমন ছিল যে ঝুমুর কি খেতে ভালো বাসে,কি কালার ঝুমুরের পছন্দ ইত্যাদি। আহিল মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তর দিলে স্টাফ আহিল আর ঝুমুরকে স্টেজে নিয়ে যায়।ওদের সাথে আরও কিছু কাপল যায়।স্টাফ সবার উদ্দেশ্য বলে লেটস প্লে এ গেইম।সেখানে উপস্থিত সব ছেলের চোখ বেধে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের এক এক করে প্রশ্ন করা হচ্ছে তাদের পাটর্নাররা কি কালার ড্রেস সাথে কি ধরনের জুয়েলারি পরেছে।অনেকে ড্রেসের কালার ঠিকঠাক বলতে পারলেও কি কি জুয়েলারি পরা আছে তা বলতে পারেনি শুধু আহিল আর একজন ছেলে তা বলতে পেরেছে।তাই বাকিসবাইকে বিদায় দিয়ে আহিল ঝুমুর আর আরেকজন কাপল স্টেজে থেকে যায়।স্টাফ দুইকাপলের উদ্দেশ্যে বলে যে,তাদের দুই জুটিকে একটা করে ডিস রান্না করতে হবে এবং সেই ডিস এখানে উপস্থিত বাকি গেস্টরা টেস্ট করে দেখবে কিন্তু কেউ জানবেনা কোনটা কে বানিয়েছে সব থেকে বেশি ভোট যেটায় পরবে সেই কাপল ই আজকের উইনার।কথামতো দুই জুটি কাজে লেগে যায় কিন্তু কথা হচ্ছে আহিল আর ঝুমুর বানাবে কি। ওইদিকে আরেক কাপল কাজে লেগে পরেছে।
ঝুমুর: আহিল আমাদের এমন কিছু বানাতে হবে যা ওদের কাছে একদম নতুন লাগবে।
আহিল: কিন্তু বানাবে কি সেইটা কি ভাবলে?
ঝুমুর: ইয়েস! কি আবার বানাবো আমাদের বাংলাদেশের বিখ্যাত ফুচকা।যেটা খেলে সবাই একদম বাহ বাহ করবে।
ঝুমুর স্টাফ দের কাছে উপকরণ গুলো চায় স্টাফ রা সব এনে দেয়।এবার শুরু হয় টাইমার। দুজন কাপলের কাছেই রয়েছে ৩০ মিনিট সময়। ঝুমুর আটা মেখে ফুচকার ডো বানায়।এইদিকে আহিল ফুচকার ভেতরের পুর বানানোর জন্য আলু আর চানা সিদ্ধ করে নেয়। ওইদিকে আরেক কাপল বানাচ্ছে পটেটো রাইস উইথ গারলিক।দুই কাপলি অনেক সুন্দর ভাবে তাদের কাজ করে যাচ্ছে আর বাকি ৫ মিনিট।ঝুমুর ৫ মিনিটে ঝটপট প্লেটিং টা করে দেয়।এবার পালা টেস্টিং এর।স্টাফরা তাদের বানানো খাবার সব গেস্ট দের দেয়। সবাই একে একে খেয়ে ভোট দিতে থাকে।ওরা সবাই বিদেশি মানুষ তাই ফুচকা জিনিসটা দেখে অনেক আগ্রহ নিয়ে সেইটা খায় আর তাদের এতটাই ভালো লাগে যে ভোট না করে যাবে কই।আসলেই আমাদের বাঙালির আর কিছু থাক আর নাই থাক খাবারের ব্যাপারে আমরা খুব পটু। আমাদের দেশের মতো মশলাদার চটপটা খাবার যেকোন মানুষকেই অভিভূত করবে।অবশেষে বলা যায় প্রায় সব ভোট ই আহিল আর ঝুমুরের ফরে পরেছে।
আহিল: তোমার বুদ্ধি আর তোমার লাক আসেই দারুন।আমি খুবি ভাগ্যবান যে তোমার মতো একটা বউ পেয়েছি।
রেস্টুরেন্টের তরফ থেকে আহিল আর ঝুমুরকে পুরষ্কৃত করা হয় আর অনেক ধন্যবাদ জানানো হয় তাদের সাথে জয়েন করার জন্য। আজ সারাদিন টা ঝুমুরের অনেক মজা আর নতুন কিছু অভিজ্ঞতায় কেটেছে।
ওইদিকে.....
প্রেমা: নিলয়! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা দিন আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য।
নিলয় আর প্রেমা এসেছে বোটানিক্যাল গার্ডেনে।প্রেমার অনেক শখ ফুল আর গাছের প্রতি তাই তারা এইখানে এসেছে।
নিলয়: তুমি নিজেই ত আমার জন্য একটা উপহার।তোমাকে যদি জীবনে না পেতাম তাহলে ত আমাকে পুরো জীবন একাই কাটিয়ে দিতে হতো।ভাগ্যবতী তুমি নও প্রেমা ভাগ্যবান হলাম আমি।
প্রেমা: আপনি এমন কেন নিলয়? আমাকে এত ভালোবাসবেন না আমার ভয় হয়।
নিলয়: কিসের ভয়?
প্রেমা: হারিয়ে ফেলার ভয়।
নিলয়: ধুরু!! আমি এখনি তোমার পিছু ছাড়ছিনা। এখনি চলে গেলে তোমার সাথে প্রেম করা বাকি তোমার কত স্বপ্ন কত ইচ্ছে পূরণ করা বাকি আর...
প্রেমা: আর?
নিলয়: আর আমাদের বেবি!!একে মানুষ করতে হবেনা?
প্রেমা নিলয়ের কথায় একটু হাসে কিন্তু কিছু বলেনা।
নিলয়: চলো এবার অনেকটা রাত হয়ে যাচ্ছে হোটেলে ফিরি।কাল আবার সকালে ফ্লাইট আর ছুটি নেওয়া যায়না।
নিলয়রা এসে দেখে আহিল ঝুমুর আগেই ফিরেছে।ঝুমুর প্রেমাকে দেখার সাথে সাথে অনেক আগ্রহ নিয়ে প্রেমাকে সব বলে আজ তারা কি কি করেছে।ঝুমুর প্রেমাকে জিতে ফেরা সব কিছু দেখায় আর গল্প শোনাতে থাকে।রাতে ডিনার শেষে হোটেলের সব অতিথিরা যায় বাগানে।আজকে নাকি বছরের প্রথম স্নোফল হবে।ওইদিকে আইফেল টাওয়ার সেজে উঠেছে বিভিন্ন রঙের আলোয়।সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে সেইদিকে।রাত তখন ১২:২। ধীরে ধীরে পরিবেশ বেশ শীতল হতে থাকে।আহিল ঝুমুরকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে ভয় ঝুমুরের ঠান্ডা লেগে যাবে।নিলয় প্রেমাকে আসতে মানা করছে এই ঠান্ডাতে বাইরে কিন্তু কে কার কথা শুনে প্রেমা ত বরফ পরা দেখবেই রোজ রোজ কি আর সুযোগ পাবে এইটার।রাতের ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করলেই সাথে সাথে পরতে থাকে গুরিগুরি বরফ কয়েক মিনিটেই সেই বরফ অনেক তীব্র হতে শুরু করে।
ঝুমুর: ওয়াও কি সুন্দর মাশাল্লাহ!!
আহিল: সাবধানে ঠান্ডা যেন না লাগে তোমার।
প্রেমা: নিলয় আমার একটা ছবি তুলে দিন প্লিজ।
নিলয়: ওকে পোজ দাও।
সবাই তখন তাদের প্রিয় মানুষ,পরিবার নিয়ে স্নোফল দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরে।আহিল নিলয় ঝুমুর প্রেমা তাদের এই সুন্দর মূহুর্তগুলো ক্যামেরায় বন্ধি করে রাখে।বরফ পরার বেগ অনেক বেরে গেলে আর বাইরে থাকা সম্ভব হয়না তাই সবাইকে ভেরতে হল রুমে সবার জন্য অনুরোধ করা হয়।সেইখানে কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালানো রয়েছে হিটার রয়েছে।বেশ রোমাঞ্চকর পরিবেশ,অতিথিদের মনোরঞ্জন করার জন্য একটা বয় ব্যান্ড হাতে গিটার ও নানান বাদ্যযন্ত্র নিয়ে গান গাচ্ছে।ঝুমুর প্রেমা বেশ উপভোগ করছে ব্যাপারটা।কেউ কেউ গানের তালে তালে নেচে উঠছে। হল রুমে মিষ্টি মুখ করার জন্য বিভিন্ন রকমের সুইট আইটেম রাখা ছিল ঝুমুর এক এক করে সব কিছু ট্রাই করছিল।
আহিল: উহু আর খেওনা এত মিষ্টি।
বলতেই ঝুমুর এমন একটা লুকে আহিলের দিকে তাকায় আহিল বেচারার ভয়েই গলা শুকিয়ে যায় আর কিছু বলার সাহস এ পায়না।সারারাত ধরে বরফ পরায় রাস্তাঘাটে বেশ বরফ জমে গেছে।তাই আহিলদের ফ্লাইট ২ ঘন্টা লেইট। ওরা এয়ারপোর্টে বসে আছে ২ ঘন্টা পর ফ্লাইট এলে তারা নিদিষ্ট কাজ সেরে ফ্লাইটে উঠে পরে। এই ২ দিন ছিল ঝুমুর আর প্রেমার জীবনের অসাধারণ কিছু মূহুর্ত আর স্মৃতিতে ভরপুর।বাকিটা রাস্তা স্মৃতিমুখর আর গল্পগুজবেই কেটে গেল তাদের।লম্বা একটা জার্নির পর তারা দেশে আসে।এইভাবে সব সুন্দর মূহুর্ত হাসিমজা আর ভালোবাসায় ভরে উঠতে থাকে আহিল আর ঝুমুরের সংসার।মানুষ বলে দিনের সাথে সাথে প্রেম ভালোবাসা কমে যায় কিন্তু নিলয় প্রেমার ব্যাপারটা উল্টো। যত দিন যাচ্ছে নিলয় আর প্রেমার ভালোবাসা তত গভীর হচ্ছে।নিলয় যেন প্রেমাকে ছাড়া আর থাকতেই পারেনা।প্রেমা আর ঝুমুর দুইজনেরই ৫ মাসে পরেছে, কিছুদিন আগে পরে।আহিল আর ঝুমুরকে অফিসে যেতে দেয়না প্রেমাও কোন ভারি কাজ করতে পারেনা।আহিল নিলয় সারাদিন অফিসে থাকে তাদের বাসায় সময় কাটতে চায়না।মাঝে মাঝে দুইজন গল্প করে দেখা করে। একদিন রাতে.......
ঝুমুর: উফ আমার কিন্তু ভালো লাগছেনা।পেট এত বড় হয়ে গেল কেন আমি কত মোটা হয়ে গেছি ধুরু।
আহিল ঝুমুরের এসব বোকা বোকা কথায় বেজায় হাসতেছে কিন্তু মনে মনে, একবার যদি ঝুমুর টের পায় আহিল তার কথায় হাসতেছে তাহলে আজি আহিলের শেষ দিন।হুট করে ঝুমুর আবদার করে বসে তার নাকি আস্ত আস্ত বরফ খেতে ইচ্ছে করছে।ঝুমুরের এমন আবদার শুনে আহিল কিছুটা ভ্রু কুচকায় কিন্তু কিছু বলেনা ফ্রিজ থেকে বরফ এনে দেয়।ঝুমুর বসে বসে সেইগুলা করমর করে চাবাতে থাকে।যত দিন যাচ্ছে ঝুমুর আর প্রেমাকে সামলাতে আহিল আর নিলয়কে আরও হিমশিম খেতে হচ্ছে তবু তাদের মধ্যে মেইল ইগোর যে ব্যাপারটা সেইটা কাজ করেনা।ঝুমুর এখন নিজে নিজে কাজ করতে পারেনা খুব একটা তাই আহিল তার জন্য একজন হেল্পকার রেখে দেয়।কোন মতে আরও ৪ মাস অতিবাহিত হলে ৯ মাস ৫ দিনের মাথায় হুট করেই ঝুমুরের অনেক পেটে ব্যাথা উঠে।আহিল তখন অফিসে ছিল ঝুমুরের হেল্পার এমন অবস্থা দেখে আহিলের কাছে ফোন করে।আহিল যেন মূহুর্তেই ঝড়ের বেগে বাসায় আসে,সাথে সাথে ঝুমুরকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড় দেয়।ডাক্তার বলে বেবির পজিশন হুট করে চেঞ্জ হয়েছে তাই এখনি অপারেশন করা লাগবে।আহিল যাবতীয় সব কাজ সেরে ঝুমুরকে সাহস দিয়ে বাইরে যায়।আহিল ভয়ে নিলয়কে ফোন দেয় সাথে ঝুমুরের বাবা মাকেও তারা রওনা হয়ে যায় সাথে সাথেই।একটু পর নিলয় আসে আহিলকে সাহস দিতে। দুইজনের কাছেই ব্যাপারটা নতুন,আহিল বেশ নার্ভাস ছিল সাথে ভয়ে ছিল ঝুমুর আর বেবিকে নিয়ে। মিনিট ৪০ পর অপারেশন থিয়েটারের আলো নিভে যায়, আহিল হুরমুরিয়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। নার্স হাতে একটা বেবি নিয়ে হাসি মুখে বাইরে আসে,বেবিকে আহিলের হাতে দিয়ে বলে মেয়ে হয়েছে অভিনন্দন। আহিল মেয়ের মুখ দেখার আগেই নার্সকে ঝুমুর কেমন আছে জিজ্ঞেস করে।
নার্স: ভালো আছে ওনাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে উনি এখন ঘুমাবেন, ঘুম ভাঙলে আপনি দেখা করতে পারেন।
আহিল নিলয় বেবিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে।মাশাল্লাহ একদম ফুটফুটে গোলগাল বাচ্চা।
নিলয়: ব্রো বেবির নাম কি ঠিক করলে।
আহিল: আমরা নাম আগেই ভেবে রেখেছি কয়েকটা দেখি ঝুমুর কি ঠিক করে।
নিলয়: তোমার ত বাচ্চা হয়েই গেল।আমাদের টা যে কবে হবে ডাক্তার আর কদিন পর ডেট দিল নরমাল ডেলিভারির।
আহিল: চিন্তা করোনা ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হবে।
কয়েক ঘন্টা পর ঝুমুরের হুস ফিরলে সে তাকিয়ে দেখে আহিল আর তার মা বাবা তাকিয়ে আছে তার দিকে।চোখ মেলেই বাবা মাকে দেখতে পেয়ে অনেক খুশি হয় ঝুমুর।বেবিকে নার্স ঝুমুরের কোলে দেয়।ঝুমুর বেবির কপালে একটা চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে নেয়।এই দৃশ্য দেখে ঝুমুরের বাবার চোখ দিয়ে পানি চলে আসে।আজ তার ছোট্ট মেয়েটা মা হয়েছে এর চেয়ে আনন্দের আর কি আছে তাদের কাছে।হাসপাতালে দিন তিনেক থেকে ঠিক যেইদিন ঝুমুর ডিসচার্জ হবে সেইদিনি প্রেমাকে ভর্তি হতে হয়।প্রেমার লেভার পেইন উঠে তার নরমাল ডেলিভারি হয়।আহিল ছিল নিলয়ের পাশে সাথে নিলয়ের গোটা পরিবার।নিলা ত খুব উৎসাহিত ছিল সে ফুফু হবে দেখে।ডেলিভারি শেষে নার্স এসে খবর দেয় তাদের ছেলে সন্তান হয়েছে, কিন্তু প্রেমা অনেক দূর্বল এখনো জ্ঞান ফেরেনি।নিলয় বেশ খুশি ছিল কিন্তু প্রেমার জন্য তার খুশি দেখা যাচ্ছিল না।বাবা হওয়ার থেকেও স্বামী হওয়ার দায় তার অনেক বেশি।টানা ৫ ঘন্টা পর প্রেমা চোখ মেলে তাকায়,তখন যেন নিলয়ের জানে আসে।দুজনেরি সন্তান পৃথিবীতে খুব ভালোভাবে আসে।৭ দিন পর আহিল তার মেয়ের আকিকা দেয় তাদের মেয়ের নাম রাখে, আরাত্রিকা চৌধুরী "ডাক নাম আরু। ঠিক তার ৩ দিন পর প্রেমা আর ঝুমুরের ছেলের আকিকা দেওয়া হয় তাদের ছেলের নাম রাখে, প্রণয় আহমেদ।
সন্তানদের নিয়ে দুই বাবা বেশ ব্যস্ত হয়ে পরে।আহিল যেন তার মেয়েকে মাথায় তুলে রাখে।
ঝুমুর: আমাদের মেয়ে কিন্তু বেশ সুন্দরী হবে তাইনা?
আহিল: হ্যাঁ একদম আমার বউয়ের মতো।
ঝুমুর: এখন এ কত ছোট, কিন্তু দেখতে দেখতেই বড় হয়ে যাবে।
আহিল: চিন্তা করোনা বড় হতে লাগলে আমি আরেকটা তোমার পেটে ঢুকিয়ে দিন বন্দুক তাক করাই আছে তুমি পারমিশন দিলেই....
ঝুমুর: একটা বাচ্চার বাপ হয়েছেন এখনো কি এসব না বললেই না।
আহিল: ধুরু সবে ত একটা বাচ্চার বাপ হয়েছি আমার ত ইচ্ছে আছে হালি খানেক বাচ্চার বাপ হবো।
ঝুমুর চোখ পাকিয়ে আহিলের দিকে তাকায় আহিল মিটিমিটি হাসে।ওইদিকে,,
প্রণয়কে নিয়ে নিলয়ের পরিবার বেশ আনন্দিত।প্রেমাকেও তারা বউমা হিসেবে যথেষ্ট ভালোবাসে।নিলাতো সারাক্ষণ তার ভাস্তাকে মাথায় তুলে রাখে।ফুফু হওয়ার কর্তব্য দারুনভাবে পালন করে সে।দেখতে দেখতে বড় হতে থাকে প্রণয় আর আরাত্রিকা।আহিলের শূন্য পৃথিবী এক নিমিষেই ভরে উঠে আর মেয়ে আর ঝুমুরকে দিয়ে।অনেক বাধা অনেক ভুলবুঝা বুঝির মধ্যে দিয়ে তাদের সম্পর্ক এই পরিণতি পেয়েছে আহিল বুক দিয়ে তাদের আগলে রাখার চেষ্টা করে।এইভাবেই ভালোবাসা,মায়া আর যত্ন দিয়ে কাটতে থাকে আহিল আর ঝুমুরের সুখী সংসার।কোন কিছুতেই খামতি রাখেনা আহিল আর ঝুমুর তাদের মেয়েকে বড় করায়।আহিল এখন পারফেক্ট বাবা।আর হাসবেন্ড ত সে বড়াবড়ি পারফেক্ট। অপারেশনের পর থেকে ঝুমুরকে কোন কষ্ট পেতে দেয়নি আহিল একজন স্বামী আর একজন বাবা হিসেবে চিরকাল সে নিজ দায়িত্বে অনড়।
সমাপ্ত more.....
[Disclaimer : গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক এখানে কোন কাহিনি সত্য নয়,ঘটনা সাজানোর জন্য শুধু ব্যবহার করা হয়েছে বিষয়গুলো। বিবাহ বহির্ভূত কোন সম্পর্ক আমাদের কাম্য নয় ধন্যবাদ
]

No comments: