প্রণয়ের_অন্তিমক্ষণ
আকাশ ঘুটঘুটে কালো হয়ে রয়েছে।সূয্যিমামা আজ মেঘের আড়ালে মুখ লুকিয়ে।এই বুঝি বৃষ্টি নামলো! রোদেলা সেদিকেই একমনে তাকিয়ে।বেলকনিতে হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে বসে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে সে। জীবনের হিসেব কষছে সে।ঐদিনও এমন মেঘলা আবহাওয়া ছিল।ঐদিনের পর এক সপ্তাহ সে জ্বরে ভুগেছিল।একটাবার আহনাফ ভাই তাকে দেখতে আসেনি।এতোটা অপছন্দ করে তাকে! কি কমতি ছিল তার মাঝে?তাকে ভালোবাসলে কি খুব ক্ষতি হতো?আহনাফ ভাই অন্য একজনকে ভালোবাসে।আহনাফ ভাইয়ের হৃদয়ের কোথাও সে নেই।এই কথাটাই যথেষ্ট ছিল তাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে। এই কথাটা জানার আগে আল্লাহ তাকে নিজের কাছে কেন নিয়ে গেলেন না? কোন পা*পের শা*স্তি দিল আল্লাহ তাকে?বেঁচে থেকে আহনাফ ভাইকে অন্য একজনের পাশে সে কি করে দেখবে? আর কুহু! ও কি করে পারলো এমনটা করতে? আহনাফ ভাইকে কেড়ে নিল ও! সে তো সবটা জানতো।ওর একটাবার ওর রোদের কথা মনে পড়লো না! আহনাফ ভাইকে না পাওয়ার য*ন্ত্রণা নিয়ে ও কি করে বাঁচবে?
তখন'ই আকাশ ভেদ করে এক বিদ্যুৎের ঝলক দেখা গেল।সাথে সাথে বিকট একটা শব্দ হলো।রোদেলা চমকে উঠলো।মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো বাহিরে।বৃষ্টির বিন্দুগুলো এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে তাকে।রোদেলা হঠাৎ কি একটা ভেবে উঠে দাঁড়ালো।ছুট লাগালো ছাদের দিকে।ছাদের সিড়ির কাছে যেতে হলে রাহুলের রুম অতিক্রম করে যেতে হয়।রোদেলাকে ছুটতে দেখে রাহুলের কপাল কুচকে গেল।হাতে থাকা কফির মগটা রেখে ওর পেছনে ছুটলো।ওর মনের অবস্থা সম্পর্কে সে অবগত।মেয়েটা যদি ভুলভাল কিছু করে ফেলে!
রাহুল ছাদে এসে থমকালো।রোদেলা দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে মাথাটা আকাশের দিকে করে রেখেছে।পরণের জামাটা শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে।ধনুকের ন্যায় বাঁকানো কোমড়টা বড্ড আকর্ষিত করলো রাহুলকে।বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোটাগুলো রোদেলার ত্বক বেয়ে বেয়ে পড়ছে।মেয়েটা বোধহয় কাঁদছে।ঠোঁট কাঁ*পছে তার।রাহুলের মনে হচ্ছে যেন কোনো এক অপ্সরী দাঁড়িয়ে তার সামনে।শুকনো একটা ঢোক গিললো সে।এক পা এক পা করে এগিয়ে গেল সামনে।রোদেলা চোখ বন্ধ করে রেখেছে।চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি একত্রে মিশে যাচ্ছে।মনে মনে হাজার অভিযোগ করছে তার অহনাফ ভাইয়ের বিরুদ্ধে।কুহু নাহয় নির্বোধ কিন্তু সে...সে কি করে করলো এটা? আহনাফ ভাই তো এতটা বোকা নন।রোদেলার তার প্রতি অনুভূতিটা সে একেবারেই কি বুঝতে পারেনি?নাকি বুঝেও না বোঝার অভিনয় করেছে?
রোদেলা হঠাৎ কোমড়ে কারো স্পর্শ পেয়ে থমকালো।হেচকা টানে তার বুকে গিয়ে পড়লো মেয়েটা।চোখ খুললো সাথে সাথে।যুবকটাকে দেখার জন্য মাথাটা উঁচু করলো সে।রাহুল সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওর পানে।রোদেলা কপাল কুচকালো।রাহুলকে ওর দিকে ঝুঁকতে দেখে ও ভড়কালো।ও বলে উঠলো
-'কি করছেন কি ভাইয়া?
রাহুলের ঠোঁট বেঁকে গেল।ও বললো
-'ভাইয়া না ছাইয়া হবে শব্দটা।
রোদেলা এমনিতেই দুঃখে ছিল এখন রাহুলের এসব আচরণ ওর রাগ বাড়াচ্ছে।কি ক্ষ*তি হতো যদি আহনাফ ভাই বলতো এভাবে কথাটা?রাহুল কি একটা ঘোরে চলে গিয়েছে যেন।সে রোদেলার দিকে মাথাটা এগোতে থাকে।রোদেলা তা খেয়াল করতেই ওর গালে চ*ড় বসিয়ে দিল।রাহুল ওর কোমড় থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয়।গালে হাত দিয়ে কপাল কুচকে তাকিয়ে থাকে তার দিকে।রোদেলা বলে উঠলো
-'এজন্য'ই আহনাফ ভাই আপনাকে দেখতে পারে না।চরিত্রহীন কোথাকার!
রাহুলকে ধাক্কা মে*রে চলে গেল সে।রাহুলের মেজাজ বিগড়ালো।দুই দিকে ঘাড় বাঁকালো সে।
"চরিত্রহীন যেহেতু বললে সেহেতু একটা নমুনাও তোমাকে দেখাতে হবে।এই থা*প্পরের জবাব হাজারগুণে ফিরিয়ে দিব...আই সয়ার।" more....
______________________________
"এই মেঘলা, রাস্তায় চ্যাকলা
রুমে থাকে না তো মন
কখন যাবো, ছাদে যাবো,
ওগো ভিজবো একটুক্ষণ"
কুহু গান গাইছে আর প্লেট ধুচ্ছে।কাজ শেষ হলে সে ছাদে যেতে নেয় তখন আয়ান বাঁধা হিসেবে দাঁড়ায়।
-'কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
আয়ানের কঠোর স্বর শুনে মোটেও ঘাবড়ালো না কুহু।সে বলে উঠলো
-'চাঁদে যাচ্ছি।ঐ যে দেখেন আমার রকেট..
আয়ান ফিক করে হেসে ফেললো।এরপর বললো
-'একদম বৃষ্টিতে ভিজবি না।ঠাণ্ডা লেগে যাবে।চুপচাপ রুমে যা।
কুহু মুখ ভেংচি কেটে তার কথা অমান্য করে ছাদে যেতে লাগলো।আয়ান তা দেখে বলে উঠলো
-'মাকে ডাকছি আমি তাহলে।বকা না খেলে বুঝবি না..
কুহু 'চ' সূচক শব্দ করে নেমে এলো।বড্ড বিরক্ত সে।আয়ান বিশ্ব জয়ের হাসি দিল।কুহু বলে উঠলো
-'আপনি আমার সুখ সহ্য করতে পারেন না কেন বলুন তো? আপনার কোন বাঙ্গি ক্ষেতে আমি মই দিয়েছি?
আয়ানের হাসিটা উবে গেল।কুহু কথাটা মজা করে বলেছে সে জানে।কিন্তু..কেন যেন তার মনে হচ্ছে সে সত্যিই কুহুর সুখ কেড়ে নিয়েছে।সে কি ভুল করলো তবে? নিজের স্বার্থের কথা ভেবে এতো বড় একটা.....
-'ঐ মিয়া?
কুহুর ডাকে হুশ এলো তার।আয়ান হালকা হেসে বললো
-'তুই বাঙ্গির উপর ক্ষেপলি কেন রে? ফল তো আরো আছে।
কুহু তেঁতে বললো
-'এই বাঙ্গিকে ফল বানালো কে?ওরে ফলের স্বীকৃতি কে দিল? আমি দুই চোখে দেখতে পারি না একে।
-'দুই চোখ না চার চোখ...
কথাটা বলেই আয়ান হো হো করে হাসতে লাগলো।কুহু বলে উঠলো
-'আপনি না বললে জানতাম'ই না।খুব উপকার করলেন বলে।এখন আপনাকে এই উপলক্ষে ঝাটার বাড়ি দিব নাকি জুতোর বাড়ি দিব বলুন তো?কোনটা নিবেন?
আয়ানের হাসি গায়েব হয়ে গেল।কুহু এবার ওকে ব্যঙ্গ করে ওর মতো হাসতে হাসতে চলে গেল।কুহু যেতেই আয়ান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।খুব শীঘ্রই এই মেয়েকে নিজের করে নিবে সে।তানাহলে মনের মাঝে যে অপরাধবোধটা জাগছে সেটাকে সে চাপা দিতে পারবে না।
"Janen ki hoyeche?"
কুহু হোয়াটস্অ্যাপে আহনাফকে স্যান্ড করে দিল এটা লিখে।দুই মিনিট পরে রিপ্লাই এলো।
"Mone to hocche sanghatik kichu hoyeche!"
কুহু লিখলো
"Ayan vaiya amk bristite vijte deyni."
আয়ানের নামটা দেখেই আহনাফের রাগ উঠে গেল।সিগারেট মুখে দিয়ে ধোয়ার কুণ্ডলি ছাড়লো।অপরহাতে ফোন তার।বিছানায় হেলান দিয়ে রিপ্লাই করলো
"Or kaner niche duita dite parle na? Beyadop chele ekta! Amr mote o hocche asol khatas."
সমস্ত ক্ষোভ প্রকাশ করলো সে।গালি দিল না কারণ তার তিলোত্তমা নতুন নতুন তার প্রেমে পড়ছে এখন উল্টোপাল্টা কাজ সে মোটেও করবে না।কুহু তখন'ই রিপ্লাই করলো
"Apnara asole ek e gowaler hamba."
আহনাফ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো ম্যাসেজটার দিকে।তাকে অপমান করলো কেন এই মেয়ে?আহনাফ সেসব প্রসঙ্গে না গিয়ে বললো
"Ki korcho ekhn?"
"Nachtechi. Apni?"
আহনাফ খুব'ই সৎ মানুষ কিনা তাই সে রিপ্লাই করলো
"Cigarette khacchi."
কুহু কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ম্যাসেজটার দিকে।সিগারেট খাচ্ছে আবার এটা তাকে গর্ব করে বলছে! কুহু কি রিপ্লাই করবে বুঝতে পারলো না তাই সে সুন্দর করে তাকে ব্লক করে দিল।এখন শান্তি লাগছে।নাচতে নাচতে বেলকনাতে চলে গেল।ওখান থেকেই যতটুকু ভেজা যায় ভিজে গোসলে চলে যাবে সে।
এদিকে আহনাফ হতভম্ব।তাকে ব্লক মেরে দিল! কিন্তু কেন?আহনাফ বুঝতে পারলো না কারণটা।কপালে তার ডোজনখানেক ভাঁজ পড়েছে।আবার রাগও লাগছে।কোনোকিছু না বলে সোজা ব্লক! মানা যায় এসব? একদম'ই না।আহনাফ সিগারেটটা জানালা দিয়ে বাহিরে ছুঁড়ে ফেললো।মনোযোগ দিয়ে আগের ম্যাসেজগুলো পড়তে লাগলো।তার ভুলটা কোথায় হয়েছে সেটাই খুঁজছে সে।কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছে না সে।সে রাফিকে কল লাগালো। ছেলেটা এসব ব্যাপারে অনেকটা বুঝে।
-'স্যার, আপনার শ*ত্রুর আরেকজন শ*ত্রুও আছে।সে আপনার সাথে হাত মিলাতে চাইছে।
সাখাওয়াত আলম কিছু কাগজপত্র দেখছিলেন।হারুন রহমানের কথা শুনে তার দিকে তাকালেন তিনি।
-'আমি কাউকে বিশ্বাস করি না, হারুন।জানোই তো?
-'স্যার উনি আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে।বাইরে অপেক্ষা করছে।
সাখাওয়াত আলম 'চ' সূচক শব্দ করলেন।
-'আসতে বলো...
হারুন রহমান পারমিশন পেয়ে ভদ্রলোককে ভেতরে আসতে বললেন।হারুন রহমান তাকালেন তার দিকে।লোকটার মুখে হাসি লেপ্টে রয়েছে।হারুন রহমান ইশারায় তাকে বসতে বললেন।লোকটা বসলো।হারুন রহমান প্রশ্ন করলেন
-'আপনাকে ঠিক চিনলাম না।
লোকটা হেসে বললো
-'শত্রুর শত্রু বন্ধু হয় জানেন'ই।
-'সে তো বুঝলাম।কিন্তু আপনার সাথে তার কিসের শত্রুতা?
লোকটার হাসি উধাও হলো এবার।ক্রোধে চোয়াল শক্ত হলো।
-'অনেক বড় ক্ষতি করেছে আমার।অনেক বড়...
-'কি ক্ষতি?
-'সেটা পরে বলা যাবে।আগে এটা বলুন হাত কি মেলাবেন?
সাখাওয়াত আলম এক ভ্রু উঁচু করে বললেন
-'আপনাকে বিশ্বাস করার করবো কীভাবে?আমার'ই তো শত্রুর অভাব নেই।
লোকটা হাসলো।
-'হাসালেন স্যার...একা একা আর কত চেষ্টা করবেন?দল ভারী না হলে জিততে পারবেন না এই খেলায়।আমিও ওর ক্ষতি চাই।ওর জন্য আমার ত্রিশ কোটি টাকা লস হয়েছে।ওকে ধ্বংস না করলে আমার শান্তি হবে না। এখন বিশ্বাস করা না করা আপনার ব্যাপার।হাত মেলালে আপনারও লাভ আমারো লাভ।
সাখাওয়াত আলম ভাবলেন কিছুক্ষণ।এরপর হঠাৎ কি মনে করে হেসে ফেললেন।লোকটা বুঝলো এই হাসির অর্থ।হাত মেলালেন দুজন।হারুন রহমান শুধু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন পাশ থেকে।লোকটা বলে ওঠলো
-'এখন আমাদের ওর দুর্বলতা খুঁজে বের করতে হবে।তাহলেই ওকে হারানো সম্ভব।
সাখাওয়া আলম ক্রুর হেসে বললেন
-'ওর গার্লফ্রেন্ড হয়েছে না...
দুজনের মুখে অদ্ভুদ এক হাসি।
-'তাহলে ওকেই টার্গেট করতে হবে আমাদের।মেয়েটা কে?
-'তা এখনো জানি না।শুধু শুনেছি যে ওর পছন্দ আছে একজন।খবর লাগাতে হবে।
-'ওকে...তাহলে এই কথাই রইলো...
লোকটা উঠে দাঁড়ালো।সাখাওয়াত আলমও দাঁড়ালো।তিনি বললেন
-'আপনার নামটাই তো জানা হলো না!
লোকটা হাসলেন।হেসে বললেন
-'নওশাদ...নওশাদ আহমেদ।
চলে গেলেন তিনি।সাখাওয়াত আলম কপাল কুচকালেন।চেয়ারে বসে পড়লেন।হারুন রহমানের উদ্দেশ্যে বললেন
-'এর সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জোগাড় করো।শুরু থেকে শেষ সবটা।
হারুন রহমান মাথা নাড়ালেন।সাখাওয়াত আলম গভীরভাবে ভাবতে লাগলেন কিছু একটা।
রাত হয়ে এসেছে তবুও বৃষ্টির তাণ্ডব থামেনি।বরং বেড়ে গিয়েছে আরো।কুহু সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।বিছানায় মাথাটা এলিয়ে দিল সে।হঠাৎ করেই তার কোনোকিছু ভাল্লাগছে না।তার ভেতরের সত্তাটা হঠাৎ বলে উঠলো---"আহনাফকে ব্লক করার পর থেকেই এমন লাগছে তোর।আনব্লক কর দেখবি ভাল্লাগবে।" কুহু ফোনটা হাতে নিল একবার।পরক্ষণেই নিজের মাথায় গাট্টা মেরে বললো
-'তুই আবার বোকামো করতে যাচ্ছিস কুহু! ছিঃ! একজনকে ভালোবেসে তোর শিক্ষা হয়নি যে আজ আবার...নাহ্ নাহ্.."
কুহু নিজেকে শাসাতে লাগলো।নিজের সাথে নিজেই কথা বলছে সে।এই কথা ঐকথা বলে নিজেকে বোঝাচ্ছে।হঠাৎ তখন দরজায় ঠকঠক শব্দ করলো কেউ।কুহু কপাল কুচকালো।কেন যেন মনে হলো শব্দটি বেলকনি থেকে এসেছে।কুহু দাঁড়িয়ে পড়লো।শব্দটা আবার হলো।কুহু তার রুমে থাকা মোটা লাঠিটা উঠিয়ে নিল।এরপর আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগোলো।আল্লাহর নাম নিয়ে দরজাটা খুলে লাঠিটা উঁচু করে চেঁচাতে নিবে তখন তার হাত ধরে ফেললো যুবকটা।কুহু নিজেও হা হয়ে গেছে।আহনাফ! আহনাফকে এখানে আশা করেনি সে।এলো কেমন করে?তার ভাবনার মাঝেই আহনাফ বললো
-'তোমার মতো ডাকাতের সাথে প্রেম কে করেছিল জানতে ইচ্ছা করছে খুব।
কুহু ঝাটকা মেরে লাঠিটা সরিয়ে এক প্রকার চেঁচিয়ে উঠলো
-'আপনি এখানে কি করে এলেধ?
আহনাফ দাঁতে দাঁত পিষে বললো
-'আস্তে বলো...সবাইকে জানাবে নাকি এখন?
কুহু চুপসে গেল।আহনাফ ভিজে জুবুথুবু অবস্থা।ভেতরে এলো সে।চারদিকে নজর বোলালো একবার।কুহু চাপা স্বরে বলে উঠলো
-'এই ভেতরে কই যান? বের হন..বের হন বলছি!
আহনাফ তার কথা তো শুনলোই না উল্টো বিছানায় গিয়ে বসলো।কুহু বলে উঠলো
-'এই বিছানা ভিজে যাবে তো...
আহনাফ উঠলো না।বরং দুই পায়ের জুতো খুলে পা উঠিয়ে আরাম করে বসলো আরো।কুহু বলে উঠলো
-'এই...কি করছেন আপনি? কেন এসেছেন এখানে? আর কি করে এলেন?
আহনাফ বললো
-'তোমার এক্সের নাম কি গো..বউ?
কুহু ছ্যাৎ করে উঠলো।খেকিয়ে বললো
-'বউ? কেউ বউ? কার বউ? এই বের হন তো আপনি...
আহনাফ বললো
-'নাম বলো আগে।
স্বরটা এবার একটু কঠোর হলো তার।কুহু চাইছে না নামটা বলতে।ভাইয়ে ভাইয়ে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায় না সে। সে বললো
-'আপনি কি করবেন জেনে? আপনি বের হবেন না অন্য পদ্ধতি এপ্লাই করবো?
আহনাফ এগিয়ে এলো তার দিকে।কুহু নড়লো না তার জায়গা থেকে।বরং মোটা লাঠিটা কাঁধে উঠালো নিজের।আহনাফ হাসলো তা দেখে।সে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো।একদম কাছাকাছি এসে থামলো।কুহু ভয় পেল না মোটেও।নিজের বাড়িতে আবার কিসের ভয়! আহনাফ ওর মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো
-'আহনাফ শাহরিয়ারের সাথে পারবে তুমি? তোমার হাতের এই লাঠি আমার বডি দেখলেই ভেঙে যাবে।
কুহু নিজের মাথা সরিয়ে নিয়ে বললো
-'আপনার ঘৃণা হচ্ছে না আমার উপর?এতোকিছু বললাম তাও আপনি...
-'রেনান শাহরিয়ার রাহুল...
কুহু থেমে গেল আহনাফের মুখে পরিচিত সেই নামটা শুনে।ভেতরটা কেমন যেন করে উঠলো তার।চমকে তাকালো আহনাফের দিকে।আহনাফ কুহুর চুলের নিচের অংশ নিয়ে নাড়াচাড়া করছে।কুহু বললো
-'আপনি কি করে...
আহনাফ তাকালো তার দিকে।ঠোঁট বেঁকে গেল তার।
-'আহনাফ শাহরিয়ারের বাম হাতের খেলা এসব।তুমি যে আহনাফ শাহরিয়ারকে চেনো তার বাহিরেও এর একটা পরিচয় আছে যা তোমার অজানা।বুঝলে?
আহনাফ ওর দিকে খানিকটা ঝুঁকে বললো কথাটা।কুহু মাথাটা পেছনে সরিয়ে নিল।আহনাফকে আরো ঝুঁকতে দেখে সে ধাক্কা মারলো।আহনাফ দু পা পেছালো।হঠাৎ করে কিছু পড়ার শব্দ হলো যেন।কুহু তাকালো নিচে।চক্ষু চড়কগাছ তার।আহনাফের গুজে রাখা রিভালবারটা পড়ে গেছে।আহনাফ 'চ' সূচক শব্দ করলো।বাঁকাও হাসলো।ভয় পেয়েছে তার তিলোত্তমা।কিন্তু কুহু রিভালবারটার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে উঠলো
-'আপনি এখনো চোর-পুলিশ খেলেন? আরে ব্যাটা আপনি দেখি এখনো বাচ্চা রয়ে গেছেন।
কথাটা বলেই কুহু রিভালবারটা তুললো।বড্ড ভারি।কুহু বললো
-'এই দিলাম মেরে..
কুহু আহনাফের দিকে তাক করে বললো কথাটা।আহনাফ হেসে বললো
-'রিয়েল এটা...
কুহু বিশ্বাস করলো না।
-'তাই?
-'হ্যাঁ...
-'আসেন আপনাকে মেরে দেই তাহলে...
-'আমি মজা করছি না তিলোত্তমা।এটা সত্যিকারের বন্দুক।
-'আচ্ছা?
-'হ্যাঁ
-'ঢিচক্যাউ...
কুহু কথাটা বলে মজার ছলে ট্রিগার চালালো।হঠাৎ'ই একটা শব্দ হলো তখন।কুহু চমকে রিভালবারটা ফেলে দিল।আহনাফকে ঢলে পড়তে থেকে পিলে চমকে উঠলো তার।হাত-পা কাঁ*পতে লাগলো রীতিমত।এটা সত্যিকারের বন্দুক'ই ছিল!!!! কুহু "ও বাঙ্গি' বলে চেঁচিয়ে আহনাফের কাছে এগিয়ে গেল।আহনাফের চোখ বন্ধ দেখে আত্মা কেঁপে উঠলো।সে খুন করে ফেললো!!! কুহু ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়লো আহনাফের পাশে।
চলবে more...
No comments: