Header Ads Widget

test

মি_চাইলে_তুমি_আমার



 মি_চাইলে_তুমি_আমার

কলমে_নুসাইবা_এহসানা_হিয়া
পর্ব_০৪ [ ধ্রুবর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ]
° বিন্দু বিন্দু রক্তের ফোঁটা হাত থেকে পড়ছে মেঝেতে। যদিও এই বিষয়ে ধ্রুব কোনো ভাবনা দেখা যায় না। বরং সে শান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকে, তার হৃদয়ে প্রচুর ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। জীবনের সকল হিসাব আজ তার কাছে এলেমেলো। তিনবছরে ধ্রুব শুধু তার আপন সত্তাকে নয়, বরং সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে। আজ যে শূন্য পথিক, যার গন্তব্য বা পথ সব অজানা। হঠাৎ ভাবনার মাঝে ধ্রুব বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, এরপর এগিয়ে যায় দেয়ালের কাছে।
° দেয়ালে ঝুলন্ত গিটার হাতে নেয়,আবার ফিরে আসে বিছানায়। বিদেশে থাকতে সে গিটার বাজিয়ে প্রায় গান করত, তার গানের প্রতিটা লাইন উদ্দেশ্য করা হতো প্রিয়ন্তীকে। আজ ও তার আলাদা নয়, ধ্রুব গানের সুর ধরে -
___ " কতো দিন ভেবেছি শুধু দেখবো যে তোমায় ___.
___ " ক্লান্তহীন তুমি ছিলে আমার কল্পনায় "____.
____ "- সেই ছবি উঠলো ভেসে চোখের পাতায় "___.
____ " আমি শুধু চেয়েছি তোমায়" ____.
____ " আমি শুধু চেয়েছি তোমায় "__.
° গভীর রাত প্রায় বারোটা চিলেকোঠার রুমে শুয়ে আছে প্রিয়ন্তী। রুমের জানালা দিয়ে আকাশ থেকে চাঁদের আলো আসছে। প্রিয়ন্তীর সাথে ধ্রুবর দেখা হয়ে যাওয়ার ঘটনা এখন তার মনে পড়ছে। এক জীবনে যাকে আমরা চাই, তাকে ভাগ্য কেনো আমাদোর হতে দেয় না। দূরে কোথাও থেকে গানের সুর ভেসে আসছে, প্রথমবার শুনেই বুঝে যায় ধ্রুবর কণ্ঠ এইটা। আজ প্রায় তিনবছর পর ধ্রুবর কণ্ঠ শুনছে প্রিয়ন্তী, তার হৃদয় আর মন জুড়ে অদ্ভুত শান্তি অনুভূত হয়। প্রিয়ন্তী ধ্রুবর সাথে সুর মিলিয়ে বলে -
---- "- আমি শুধু চেয়েছি তোমায় ___. more...
° অন্যদিকে মেহুল তার পড়াশোনা শেষ করে বেলকনির কাছে যায়। তার থেকে একটু দূরে এক যুবক চেয়ারে বসে সিগারেট খাচ্ছে। যাকে মেহুল ভীষণ ভালোবাসে, তবে তার ভালোবাসা একতরফা।
ধ্রুবর ফুফুর বাড়ি তাদের বাড়ি থেকে দেখা যায়। আর
প্রান্তিক শুধু ফুফাতো ভাই নয়, বরং মেহুলের ভালোবাসা। ছোটবেলা থেকে মেহুল যার জন্য নিজের মনে বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছে তার নাম
প্রান্তিক। মেহুল দূরে থাকা পুরুষকে উদ্দেশ্য করে বলে -
___ প্রান্তিক ভাই কবে বুঝবেন আপনি যে আমি ভালোবাসি। যদি এক জীবনে কোনো পুরুষকে মন থেকে ভালোবেসে, তাকে হালাল করে নিজের জীবনে চেয়ে থাকি সেটা আপনি। সমাজের সব নিয়ম ভেঙ্গে আপনি কি পারবেন আপন করে নিতে এই মেহুলকে? সারাজীবন শুধু আমার হয়ে থাকতে?
° মেহুল প্রতিটা কথা শুধু তার আনমনে বলে। প্রান্তিক তার ভালোবাসার কথা কখনো যানতে পারবে না। কিন্তু মেহুল যে তার মনের সমস্ত জায়গা শুধু প্রান্তিকের জন্য রেখেছে। অন্য কোনো পুরুষকে সে তার মনের মালিকানা দিবে না অসম্ভব।
° সকাল পাঁচটা চারদিকে ফজরের নামাজের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। প্রিয়ন্তীর চোখ খুলে যায়, প্রতিদিন সে একই সময় ঘুম থেকে উঠে। ঘুম থেকে প্রিয়ন্তী উঠে চলে যায় ওয়াশরুমে এরপর সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এসে নামাজ পড়ে। এরপর চিলেকোঠার রুম থেকে বের হয়ে যায় রান্না ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্য। চৌধুরী বাড়ির কোনো সদস্য এখন ঘুম থেকে উঠে নাই। প্রিয়ন্তী সকালের নাস্তা বানানোর কাজ করতে থাকে, রান্না করা শেষ করে তাকে আবার ভার্সিটির জন্য রেডি হতে হবে।
° সকাল নয়টার সময় সকল সদস্য সকালের নাস্তা খাওয়ার জন্য নিচে আসে। প্রিয়ন্তী সকল খাবার টেবিলে সাজিয়ে রেখে দিয়েছে সুন্দর করে। এরপর সে আবার চিলেকোঠার রুমে ফিরে যায়।আর ভার্সিটির জন্য রেডি হয়। মেহুল সহ পরিবারের প্রতৈক সদস্য খাবার খেয়ে নেয়। প্রিয়ন্তী রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়, সে আর মেহুল একই ভার্সিটিতে পড়ে। প্রিয়ন্তী বাড়ির বাহিরে এসে দেখে মেহুল গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। তারা একসাথে গাড়ি করে ভার্সিটতে যায় প্রতিদিন, জুথি বেগম এই বিষয়টা একদম পছন্দ করে না। বাড়ির কাজের মেয়ে কোনো মালিকের সাথে একসাথে গাড়িতে করে ভার্সটিতে যাবে। কিন্তু সামির সাহেবের আর্দেশ করেছে যাতে প্রিয়ন্তী আর মেহুল গাড়ি করে একসাথে যায়।
° গাড়ির ড্রাইভার আজ অসুস্থ যার জন্য আসতে পারে নাই। যার জন্য মেহুল আর প্রিয়ন্তী রিকশা করে যাওয়ার কথা ভাবে। অন্যদিকে ধ্রুব আজ এক জায়গায় যাবে তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ রয়েছে। ধ্রুব যখন বাড়ির বাহিরে বের হয় তখন দেখে প্রিয়ন্তী আর মেহুল দাঁড়িয়ে রয়েছে সেখানে। ধ্রুব এগিয়ে যায় এরপর সে মেহুলকে জিজ্ঞেস করে -
____ "- মেহুল কি হয়েছে? এমন করে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? ভার্সিটিতে যাবি না?
ধ্রুবর কণ্ঠ শুনে প্রিয়ন্তী চুপ হয়ে যায়। ধ্রুব একবার আড়চোখে প্রিয়ন্তীকে দেখে, তাদের দুই চোখের মিলন হয়। তবে প্রিয়ন্তী তার চোখ নিচে নামিয়ে ফেলে, মেহুল বলে -
___ "- ভাইয়া দেখো না ড্রাইভার আজ অসুস্থ যার জন্য সে আসে নাই। এখন আমাদের ভার্সিটিতে রিকশা করো যেতো হবে, আজ পরীক্ষা রয়েছে দেরি হয়ে যাবে __.
মেহুলের কথা শুনে ধ্রুব বলে -
"____ তুই বরং আমার গাড়িতে এসে বসে পড় মেহুল। জরুরি কিছু কাজে আমি বাহিরে যাব। তোকে ভার্সিটিতে ড্রপ করে পরে যাব.
ধ্রুবর কথা শুনে মেহুল গাড়িতে উঠে বসে। কিন্তু প্রিয়ন্তী এখনো সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে, ধ্রুব মেহুলকে যেতে বলেছে তাকে তো বলে নাই। ধ্রুবর গাড়ির কাছে গিয়ে বলে উঠে -
___ "- মেহুল গাড়িতে উঠে বসার কথা শুধু তোকে বলি নাই। যার যার ভার্সিটি রয়েছে সকলে বলেছি। যদি পরীক্ষা দেওয়ার কারো ইচ্ছা থাকে। তবে সে যেনো গাড়িতে উঠে বসে। পরো দেরি হয়ে গেলে আমার দোষ নাই "more..
° ধ্রুব কথাটা যে প্রিয়ন্তীকে বলেছে সেটা মেহুল বুঝতে পারে। প্রিয়ন্তী গাড়ির সামনে উঠে বসে। ড্রাইভার গাড়ি চালালে সে এখানেই বসত। গাড়ি চলতে শুরু করে, ধ্রুব আড়চোখে বারবার প্রিয়ন্তীকে দেখে যাচ্ছে। মেহুল পিছনে বসে পরীক্ষার পড়া পড়ছে, প্রিয়ন্তী ও নিজের বই বের করে পড়তে থাকে। ধ্রুব যে তাকে দেখছে সেটা সে বুঝতে পারে, তবুও শান্ত হয়ে সে বই পড়ে যায়। ভার্সিটি যাওয়ার রাস্তা অনেক উঁচু নিচুঁ, রাস্তার কাজ করানো হচ্ছে। যার কারণে গাড়ি বারবার ঝাঁকুনি যাচ্ছে, যার ফলে প্রিয়ন্তীর কোমড়ের ব্যাথা বেড়ে যাচ্ছে। কাল রাতে হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার কারণে যে ব্যাথা পেয়েছে আজ ঝাঁকুনি খাওয়ার ফলে তা বেড়ে গিয়েছে।
প্রিয়ন্তী ব্যাথায় মুখ কুঁচকে কোমড় ধরে বসে আছে, যা ধ্রুব খেয়াল করেছে। গাড়ির গতি কমিয়ে দেয় ধ্রুব। প্রায় দশ মিনিট পর গাড়ি এসে থামে কলেজের গেইটের সামনে। মেহুল যখন গাড়ি থেকে নেমে যাবে, তখন তার চোখ যায় ধ্রুবর হাতে কেটে যাওয়া স্থানে। মেহুল বলে -
___ "- ভাইয়া তোমার হাতো কি হয়েছে? এমন ক্ষত হয়ে গেছে? আর রক্ত জমাট বেঁধে গেছে? ঔষধ লাগা ও নাই?
"__ পরে ঔষধ লাগিয়ে নিব।
___ "- তুমি যে পরে কবে ঔষধ লাগাবে সেটা আমার জানা আছে। আমার ব্যাগে বেন্ডেজ রয়েছে লাগিয়ে দেয় তোমাকে "।
মেহুল ব্যাগ থেকে বেন্ডেজ বের করে, এরপর ধ্রুবর হাতে লাগাতে গিয়ে কি মনে করে থেমে যায়। মেহুল বলে -
___ "- প্রিয়ন্তী তুই বরং ভাইয়াকে ঔষধ লাগিয়ে দে। আমার পরীক্ষার জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে যেতে হবে।
____ "- আমি ___.
___ "- হুম তুই। আর তুই বাড়ির কাজের লোক। মালিকের সেবা করা তোর দায়িত্ব। তাড়াতাড়ি ঔষধ লাগিয়ে বের হয়ে আয় "।
মেহুল গাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। প্রিয়ন্তী হাতে বেন্ডেজ নিয়ে বসে থাকে, ধ্রুবকে কিছু বলছে না। প্রিয়ন্তীকে চুপ করে থাকতে দেখে, ধ্রুব হাত এগিয়ে দেয়। প্রিয়ন্তী খুব যত্ন সহকারে ঔষধ লাগিয়ে দেয়, ধ্রুব আড়ালে হাসে। কিন্তু প্রিয়ন্তীর সামনে গম্ভীর থাকে, ধ্রুব যানে প্রিয়ন্তীর কোমড়ে ব্যাথা করছে। রাতে মনে হয় ঔষধ খায় নাই, আর ওর কাছে হয়তো টাকা ও নেই। প্রিয়ন্তী যখন ধ্রুবর হাতে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে বের হয়ে যাবো, তখন ধ্রুব ওকে থামিয়ে দেয়। পকেট থেকে টাকা বের করে ওর হাতে দেয়। প্রিয়ন্তী বলে -
__ "- আমার টাকার দরকার নাই স্যার ___.
ধ্রুব গম্ভীর কণ্ঠে বলে -
___ "- বাড়ির কাজের লোক যদি মালিকের সেবা যত্ন করে। অবশ্যই তার বিনিময়ে তাকে কিছু টাকা দেওয়া দরকার। ধ্রুব কখনো কারো কাছে ঋণী থাকে না '।
___ "- কিন্তু আমার টাকার দরকার নেই ধ্রুব স্যার ---.
__ "- বাড়ির কাজের লোক হয়ে মালিকের মুখের উপর কথা বলার সাহস কে দেয় তোমায়। চুপচাপ টাকা নাও আর গাড়ি থেকে বের হয়ে যাও "।
প্রিয়ন্তী টাকা নিয়ে গাড়ি বের হয়ে যায়, ধ্রুব দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে।যদি প্রিয় টাকা দিয়ে ঔষধ কিনে খায়, তবে তার কোমড়ের ব্যাথা কমে যাবে। আর না হলে সারারাত আজ কষ্ট পাবে।
চলবে
কেমন হয়েছে গল্পটা? কমেন্ট করে বলুন? আর তোমার নামে লেখা চিঠি গল্প দিয়েছি পড়ুন।
more...

11

No comments:

720

Powered by Blogger.