Header Ads Widget

test

প্রেমে_প্রেমে_ভালোবেসেছি


 

প্রেমে_প্রেমে_ভালোবেসেছি

পর্ব_10
লেখিকা_তাইয়্যিবা
কদিন আয়রা খুব ব্যস্ত সময় পার করেছে।ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা ছিলো যে।আজ শেষ পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর শুভ এসে দাঁড়ায় আয়রার সামনে।সেদিনের পর আয়রা আর শুভর সাথে কথা বলেনি কোনো।শুভ অনেক বার কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু আয়রা তাকে সুযোগ দেয়নি।তার আর রিদ্মিক এর সর্ম্পকের কথা কেউ জানে না এখনো।শুধু সর্মা আর আকাশ ই জানে।তিন শুভ সেদিন রিদ্মিক এর ব্যবহারে অনেক কিছুই বুঝে নিয়েছে।আর তানিয়া? সে তো মন ভাঙার কষ্টে পুরো নির্জীব হয়ে গিয়েছে।
~ তোর সাথে কিছু কথা আছে আয়রা।
শুভর মলিন কন্ঠ। আয়রা চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে ।তার কিছুটা দূরে তানিয়া আর সর্মাও দাঁড়িয়ে।শুভকে এভাবে দেখে তানিয়া আরো তড়পাচ্ছে।প্রিয় মানুষটা যতই আমাদের ভালো না বাসুক,আমরা কিছুতেই তাদের কষ্ট দেখতে পারি না।শুভ আয়রার নিরবতা বোঝে,পিছনে দাঁড়ানো তানিয়া, সর্মার দিকে তাকায়,
~ তিনজনের সাথেই আমার কথা আছে। প্লিজ,একবার সুযোগ দে আমায়। প্রত্যেকটা মানুষই তো একটা শেষ সুযোগ পায়।
শুভর কন্ঠ অসহায়। আয়রা ঘুরে তানিয়া আর সর্মার দিকে তাকায়।তারা দুজনই চোখের ইশারায় একটা সুযোগ দেয়ার কথা বললে আয়রা ও মেনে নেয়।চারজন গিয়ে শহিদ মিনারের ওখানে দাঁড়ায়।শুভ একবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়।এরপর বলতে শুরু করে,
~ মেয়েদের সাথে আমার চলাফেরা খুবই কম। এর আগে কখনো আমি কোনো মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করিনি।প্রথম যেদিন এখানে ক্লাস করতে এসেছিলাম, আয়রাকে দেখে ভালো লেগে গিয়েছিলো।এরপর যখন তোরা আমার সাথে কথা বললি, আমিও তোদের সাথে মিশলাম। আয়রাকেই আমার প্রথম ভালো লাগায় আমি ,,,,তানিয়ার দিকটা খেয়ালই করিনি।
শুভ থামে।শুকনো ঢোক গিয়ে তানিয়ার দিকে এক পলক তাকায়।মেয়েটা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।হয়তো কান্না লুকাচ্ছে!
~ ধীরে ধীরে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয় আমাদের।আমি দিন রাত শুধু আয়রাকে নিয়েই ভাবতাম। সেজন্য আয়রার প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আয়রাও সেটা বুঝতে পেরে আমাকে ইগনোর করা শুরু করে। এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছিলাম না। সেজন্য সেদিন আয়রাকে মনের কথা বলে দিই।কিন্তু আয়রা যখন রিজেক্ট করে আমায়,আমি জানি না আমার কি হয়েছিলো। উপায় না পেয়ে আয়রাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম।এরপর তো..সবটাই জানিস তোরা..
আয়রা সহ বাকিরা সবটা শুনে ।শুভর অনুভূতিটাও হয়তো কিছুটা বুঝতে পারে।শুভ এবার হাঁটু মুড়ে বসে পরে,more...
~ আম সরি রে আয়রা। প্লিজ আমায় মাফ করে দে।তবুও তোরা এভাবে আমার সাথে বন্ধুত্ব শেষ করে দিস না।এখানে আসার পর তোরাই আমার কাছের বন্ধু।সব সময় তোদের সাথে মেশায় অন্যরা সেটা নিয়ে মজা উড়াতো ।আমি সেসব পাত্তা দি নাই।এখনো দিচ্ছি না।কিন্তু তোদের খুব মিস করছি ।আমি মানুষ,আমার তো ভুল হতেই পারে।তাই বলে এভাবে শাস্তি দিস না তোরা।
শুভর চোখ বেয়ে পানি পরে। আয়রা দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে। সর্মা দুহাতে তানিয়াকে ধরে দাঁড়িয়ে। বন্ধুত্ব,আসলে বন্ধুত্ব কখনো শেষ হওয়ার মতো সম্পর্ক নয়।শুধু দুরত্ব বাড়ে।
~ সেদিনের পর তানিয়াকে নিয়ে অনেক ভেবেছি।নিজের ভুলটা মূলত তানিয়াকে নিয়ে ভাবতে গিয়েই পেয়েছি।আর,আমি ক্লিয়ারলি এটাও বুঝতে পেরেছি, আয়রা শুধু মাত্র আমার ভালো লাগা।
শুভ এবার উঠে গিয়ে তানিয়ার সামনে দাঁড়ায়।মেয়েটা তখন ফুঁপিয়ে কাদঁছে।
~ আমি তানিয়ার কাছে শেষ সুযোগ চাচ্ছি।তানিয়া...
তানিয়া মুখ তুলে তাকায়,
~ আমায় শেষ সুযোগ দিবে? সত্যিই বলছি,তুমি আমার শুধু ভালোলাগা না।আমি তোমাকে আমার বউ করবো।বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছি আমার তোমাকে লাগবে।যে কোনো মূল্যে।আমার মা বাবা তোমার পরিবারের সাথে কথা বলে রাখবে।তুমি কি আমাকে শেষ সুযোগটা দিবে?তোমাকে ভালোবাসার?
তানিয়া থ হয়ে দাড়িয়ে থাকে। অতঃপর আশ পাশ বিবেচনা না করেই শুভকে জড়িয়ে ধরে।শুভ নিজের উত্তর পেয়ে যায়।
আসলে আমরা যাদের চাই তারা আবার আমাদের চায় না।অথচ যারা আমাদের চায় ,তাদের আবার আমরা অবহেলা করি।আমাদের উচিত যারা আমাদের ভালোবাসে তাদের ভালোবাসা।আর যারা আমাদের চায় না,তাদের প্রতি ভালোবাসাটা আনাই উচিত না।তবে,কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব উক্তি খেটে গেলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা ভুল মানুষকে ভালোবেসে কষ্ট পাই।দেখা যায়,যে আমাকে চায় না তার জন্যই আমি তড়পাই।ভালোবাসার নিয়ম এতো অদ্ভুত না!
ক্লান্ত পায়ে যখন আয়রা বাড়ির গেট দিয়ে প্রবেশ করে স্টাফ হাউসের দিকে যাচ্ছিলো,ঠিক সেই মুহূর্তে কেউ একজন ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে।
~ অবশেষে তুমি আসলে? আই মিস ইউ আয়রা।
মেয়েটি কে সেটা বুঝতে পেরে আয়রার বক্ষস্তল ছলকে ওঠে।আগের সময় হলে সেও হাসি মুখে মেয়েটিকে বলতে পারতো,"মিস ইউ টু"তবে এবার আর বলতে পারছে না।
~ কি হলো?কথা বলছো না কেনো?তুমি আমাকে দেখে খুশি হওনি??
আয়রা তাকায় মেয়েটির দিকে। বাদামী চুলগুলো কোমর সমান হয়েছে,পরনে একটা শর্ট টপস,আর জিন্স।হাসি মুখেই তাকিয়ে আছে তার দিকে।মেয়েটার একটা পরিচয় আছে। অর্না রিযান।রিদ্মিক এর একমাত্র ফুপির একমাত্র মেয়ে। আয়রা যখন এখানে এসেছিলো, অর্না তখন বাংলাদেশেই ছিলো।এছাড়া তারা পরিবার সহ কানাডায় থাকে। অর্নার সাথে আয়রার বেশ ভালো বন্ধুত্ব।দুজনের বয়স একই।
~ এই আয়রা???
আয়রা হুস ফেরে।নিজেকে সামলে হেসে দিয়ে বলে,
~ আমিও তোমাকে মিস করেছি অর্না।কখন আসলে?
~ আজ সকালে।
~ ওহ আচ্ছা।আমি তো কলেজে ছিলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে কথা বলি?
~ যাবে যাবে।শুনো না,তার আগে আমায় একটা খবর দাও..
~ কি খবর?
অর্না লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলে,
~ রিদ ভাই বাড়িতেই থাকে এখন।তো,আমি জানতে চাচ্ছি যে,,, রিদ ভাই কি অন্য সব বাজে কাজ ছেড়ে দিয়েছে?মানে ওই যে মেয়েদের সাথে মেলামেশা..?
আয়রার হাসফাস লাগছে।এই মেয়েটাকে সে কি বলবে?সে কি ভুল করলো রিদ্মিক ভাইয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে?পরক্ষনেই আকাশের কথা মনে পরলো।মাঝে মাঝে স্যাক্রিফাইস না করে বরং ছিনিয়ে নিতে হয়। রিদ্মিক ভাই তাকে ছাড়া পাগল হয়ে যাবে,আর সেও তো রিদ্মিক ভাইকে ভালোবাসে।তাই সে কিছুতেই রিদ্মিক ভাইকে ছেড়ে যাবে না।এতে যতটা স্বার্থপর হওয়া লাগে আয়রা তা হবে।এসব ভাবনা বাদ রেখে আয়রা অর্নার দিকে তাকায়,
~ এসব নিয়ে পরে আলোচনা করি অর্না?আসলে আমি বড্ড ক্লান্ত।
অর্না মন খারাপ করে কিছুটা।
~ ঠিক আছে।
আয়রা আর দাঁড়ায় না।হনহনিয়ে ঘরে চলে যায়।রিদ্মিক ভাইয়ের সাথে অর্নার বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে হবে।অর্না আসলে রিদ্মিক ভাইকে পছন্দ করে।যখন আয়রা চৌধুরি বাড়িতে এসেছিলো তখন অর্নারা এখানে বেড়াতে এসেছিলো।এমনি একদিন রিদ্মিক বাড়িতে ছিলো,উদাম গায়ে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটছিলো। আয়রা ততদিনে
রিদ্মিক কে মন দিয়ে দিয়েছিলো।সেবার রিদ্মিককে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে আয়রা সহ অর্নাও দেখেছিলো ।কি জানি কিভাবে অর্না সেদিন রিদ্মিক এর উপর ক্রাশ খেয়েছিলো।হয়তো রিদ্মিক ভাইয়ের এমন লুক দেখে মেয়েটা ক্রাশ খেয়ে বসেছে।এরপর থেকে পাগলামি শুরু।তার মতে সে রিদ্মিক ভাইকে ভালোবাসে। এবং
রিদ্মিক চৌধুরীর বউ একমাত্র সেই হবে।এটা যে মেয়েটার জেদ, আয়রা বেশ বুঝছিলো।তবুও তার মনে হয়,জেদের পাশাপাশি অর্না
রিদ্মিক কে ভালোও বাসে।কি জানি! সে তো চেয়েছিল স্যাক্রিফাইস করতে।কিন্তু এখন আর উপায় নেই।রিদ্মিক ভাইকে ছাড়া সে নিজেও পাগল হয়ে যাবে।এখন আর কোনো স্যাক্রিফাইস নেই।
আয়রা রিদ্মিক এর ঘরে আসল দেখে রিদ্মিক অর্নার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে।মূলত তারা টিভি দেখছে।আর অর্না এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বার বার রিদ্মিক এর গায়ের উপর পরছে।রিদ্মিক অবশ্য এই বিষয়টা খেয়াল করছে না তেমন।কারণ অর্নাকে সে নিজের ছোটো বোনই ভাবে।এমনকি বোন ভেবেই যত্ন নেয় সে অর্নার।
যদিও আয়রার জেলাসি হচ্ছে,তবুও সে কিছু বলতে পারবে না এখানে।রিদ্মিক এর সাথে তার আলাদাই কথা বলতে হবে।কিন্তু এভাবে অর্ণাকে রিদ্মিক এর পাশেও সহ্য হচ্ছে না।যতই বোন হোক সে! উল্টো ঘুরে হাটা দিলে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নেয় আয়রা। তখনি একটা পুরুষালি শক্ত হাত আয়রার কোমড় ঝাপটে ধরে পরে যাওয়া থেকে আটকায়।শব্দ পেয়ে রিদ্মিক আর অর্নাও ঘুরে এদিকে তাকায়।এভাবে আয়রাকে একটা ছেলে ধরে আছে দেখে রিদ্মিক এর রাগ উঠে যায়।কপালের রগ গুলো ফুলে ওঠে। অন্যদিকে অর্না বলে ওঠে,
~ ওয়াও, হাউ রোমান্টিক!ভাইয়ের সাথে আয়রাকে একেবারে সেই লাগছে তো!
আয়রা তখনো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে।অর্নার কথা কানে আসতেই লোকটির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রিদ্মিকের দিকে তাকায়।রিদ্মিক রাগে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলে আয়রা কষ্ট পায় । অভিমান এসে হানা দেয় মনে।এখন তার দিকে তাকাতেও রিদ্মিক ভাইয়ের বাঁধছে না?সে যে এতক্ষণ অর্নার সাথে পাশাপাশি ছিলো! ততক্ষণে লোকটি বলে,
~ সাবধানে চলো আয়রা।এভাবে চললে পরে তো হাড়গোড় ভাঙবে।
আয়রা অবাক হয়।লোকটি তার নাম জানলো কি করে? আয়রা অবাক চোখে তাকালে লোকটি নিজের পরিচয় দেয়।
~ আমি অর্ন।অর্নার বড় ভাই।তোমার বিষয় অর্নার কাছে অনেক শুনেছি।ইউ আর সো বিউটিফুল।
রিদ্মিক এতটুকুই শুনে।এরপর হন হন করে বেরিয়ে যায় রুম থেকে আয়রার নিজের ও রাগ ওঠে রিদ্মিকের উপর। কোনোমতে অর্ণ অর্নার সাথে কথা শেষ করে নিজেও চলে যায়।সে কিছুতেই আজ
রিদ্মিক ভাইয়ের কাছে আগে যাবে না।এই লোক জেনে শুনে দোষ দিবে কেন! ভালোবাসে দেখে কি মাথায় উঠে নাচবে?সবই বুঝে সে,এখন আর তাকে ভালো লাগে না ।
কিশোরী মনের অভিমান কি আর সহজ কথা!অভিমানী নারী বরাবর অবুঝের মতো থাকে। বাচ্চামো একটা ভাব এসে যায় তখন।তবে সবার ক্ষেত্রে তো আর বাচ্চামো ভাব দেখানো হয় না,শুধু মাত্র প্রিয় মানুষের কাছেই মেয়েরা বাচ্চামো করে। যত আহ্লাদ আছে সব প্রিয় মানুষটার কাছেই প্রকাশ করা যায়। আয়রার মনেও এখন অভিমানের পাহাড় জমেছে।থাকুক রিদ্মিক রেগে।যা ইচ্ছে করুক। সে আর কথাই বলবে না এই লোকের সাথে।
চলবে?
রেসপন্স কইরেন।
ঠান্ডা জিনিসটা ছেচড়া মানুষের মতো।আসলে লাইগাই থাকে।যাওয়ার আর নাম নেয় না। আর আমার সেই ঠান্ডা লাগছে।গলা ব্যাথা হয়ে গেছে,ঠিকভাবে শ্বাস ও করা যায় না।কি জ্বালা।একটু জ্বর ও আছে ।এরপর কাল গল্প দি নাই দেখে আজ কষ্ট করে লিখলাম।শরীরের উন্নতি হলে কাল আবার পরের পর্ব দিবো।সবাই একটু মন্তব্য করে যাবেন More...

4

No comments:

720

Powered by Blogger.