প্রণয়ের_অন্তিমক্ষণ
রাত গভীর হয়েছে।আশেপাশের চেঁচামেচি থেমে এখন শুনশান চারদিক।ফ্যানের ভোঁ ভোঁ শব্দ আর মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে শুধু।বাহিরে এখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে।কুহু জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে।একমনে বাহিরে তাকিয়ে সে।চঞ্চল কুহু হঠাৎ'ই কেমন আজ গম্ভীর হয়ে গেছে যেন।
-'আমার সাথে চলো, শানায়া।এখানে থাকাটা সেইফ নয় তোমার জন্য।
-'কুহু....কুহু শেখ।
সাখাওয়াত আলম হাসলেন।এরপর বললেন
-'সেটা তো বাকি সবার কাছে।আমার কাছে তুমি....
কুহু তাকে মাঝপথে আটকে বললো
-'আপনি এই মাঝরাতে এখানে কেন এসেছেন? আপনি কি সবাইকে জানাতে চাইছেন কথাটা?আমার শর্তের কথা কি ভুলে গিয়েছেন?
কুহু ঘুরে বললো কথাটা।সাখাওয়াত আলম বললেন
-'আমার মেয়ের উপর হামলা হয়েছে আর আমি চুপ করে বসে থাকবো সকালের অপেক্ষায়!
কুহু কপাল কুচকালো।
-'আমার উপর নজর রাখতে মানা করেছিলাম আপনাকে।
-'শাট আপ, শানায়া।বিপদ আমাদের চারপাশে ঘুরছে।তুমি আমার মেয়ে এটা জানলে....
-'আমি নই আপনার মেয়ে
কুহু চেঁচিয়ে বললো কথাটা।সাখাওয়াত আলম আহত চোখে তাকালেন মেয়ের দিকে।কুহুর উপর তিনি সর্বদা নজর রাখার জন্য লোক লাগিয়ে রেখেছিলেন।সে-ই তাকে জানিয়েছে যে কুহুদের বাড়ি থেকে গুলির শব্দ এসেছে।সাখাওয়াত আলম কিছুক্ষণ থম মেরে বসেছিলেন কথাটা শোনার পর।কীভাবে যে এখানে এসেছেন এটা সেই জানে শুধু।
-'আমার উপর কোনো হামলা হয়নি।আমি বেলুন ফাটিয়েছিলাম সেটার শব্দ হয়েছিল।
সাখাওয়াত আলম ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলেন।
-'অজ্ঞান হলে কি করে?
-'এই কদিন কম ধকল তো যায়নি তাই হয়তো...তবে আপনার এখানে আসা মোটেও উচিত হয়নি।
দরজায় তখন কড়া নাড়ার শব্দ হলো।কথায় মাঝে ভাটা পড়লো তাদের।কুহু চ' সূচক শব্দ করলো।
-'আপনার মোটেও এখানে আসা উচিত হয়নি।
__________________________
-'ভাই, তখন গুলির শব্দ এলো,,,না মানে আপনি কি আবার ভাবিকে,,,,,
আহনাফ বলে উঠলো
-'আরেহ ভাই আমাকে গুলি মারছিলো তোর ভাবি।ভাগ্যিস নিশানা খারাপ....তানাহলে পটল, আলু, ঝিঙ্গা সব'ই আজকে তুলতাম।
-'সাথে ভাবির প্রিয় বাঙ্গি।
কথাটা বলেই রাফি দাঁত কেলালো।আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো
-'খোদা জানে জ্ঞান ফিরছে নাকি।আমি তো শুধু একটু নাটক করছিলাম....
-'আর বাকিটা ইতিহাস,,,,হাহা হাহা
রাফির হাসি শুনে আহনাফ সরু চোখে তাকালো তার দিকে রাফি চুপ হয়ে গেল। আহনাফ বলে উঠলো
-'একটা কল করবো কি?
-'আপনি ভাবিকে ফেলে রেখে চলে আসলেন কেন?
-'গুলির শব্দে সব দৌঁড়ে আসছিল।ওখানে থাকলে দেখা যেত উল্টোপাল্টা কথা বলতো,,,,
রাফি বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়ালো।আহনাফ বিছানায় আরাম করে বসে বললো
-'কি একটা কপাল! দুনিয়ায় এতো ছেলে থাকতে রাহুলের সাথেই ও.....
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আহনাফ।রাফি বললো
-'মাইয়া মানুষ কেন জানি খারাপের উপর বেশি আকৃষ্ট হয়।ভালো কিছু এদের হজম হয়না।
আহনাফ বললো
-'আমি কি ভালো মানুষ নাকি?
-'আপনাকে কি কম মেয়ে পছন্দ করে নাকি?
আহনাফের প্রশ্নের সাথে সাথে রাফি জবাব দেয়।আহনাফে মুখটা ছোট্ট হয়ে গেল।বড্ড আহত স্বরে বললো
-'যাকে আমি চাইলাম সে তো আমারে চাইলো না।
-'তাহলে কাকে চাইলো?
রাফি কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।আহনাফ বিছানায় হেলান দিয়ে মাথাটা এলিয়ে দিল।
-'ওর চোখে আমি আজও আমার জন্য ভালোবাসা দেখিনি।রাহুলের সাথে যখন ঐদিন
ভার্সিটিতে দেখা হয়েছিল তখন দেখেছিলাম আমি ওর ঐ সিক্ত চোখ।কাজল কালো আঁখিজোড়ায় পানি দেখেছিলাম আমি।মানে এতোকিছুর পরেও ওর রাহুলের জন্য ফিলিংস কমেনি।
রাফি আহনাফের পাশে বসে হেসে বললো
-'প্রথম প্রেম চাইলেও মানুষ ভুলতে পারে না।কেউই পারে না।কেউ যদি বলে সে ভুলে গেছে তাহলে বুঝে নিবেন বিপরীত পক্ষের দেওয়া আঘাত ছিল অত্যন্ত জঘন্য রকমের যা তাকে এটা বলতে বাধ্য করিয়েছে।তবে সে যে সত্যিই ভুলে গেছে এমন না।
আহনাফ অদ্ভুদ নয়নে তাকিয়ে ওর দিকে।রাফিকে দেখে মনে হচ্ছে সে অন্য কোনো জগতে চলে গেছে।আহনাফ বলে উঠলো
-'প্রথম প্রেমের খেতায় আগুন।এইসব প্রথম ট্রথম বলতে কিছু হয় না।শেষ পর্যন্ত যে থাকে সেই আসল বুঝেছিস?আর এই আহনাফ শাহরিয়ার'ই আছে এই কুহুর শেখের ভাগ্যে।অন্য আর কেউ না,,,,
রাফি এক ভ্রু উঁচু করে বললো
-'যদি অন্যকেউ থাকে? তাহলে কি করবেন?
আহনাফ কেমন করে হাসলো।এরপর বললো
-'থাকবে না...এই আহনাফ শাহরিয়ার বেঁচে থাকতে তা হবে না।আর যদি কোনোদিন এমন হয়ও তাহলে ওকে মেরে নিজে মরবো।তাও অন্য কারো হতে দিব না।
রাফি বলে উঠলো
-'ভাবি বুঝলো না যে আপনার মতো ছেলে হারালে কাঁদতে হবে আড়ালে।ঐ রাহুল হুল ফুটিয়ে দেওয়ার পরেও ভাবির তারেই ভাল্লাগে।হতাশ! খুবই হতাশ!
আহনাফ বললো
-'এই শালাই বা দেশে আসলো কেন বুঝতেছি না।এমনি এমনি তো আর আসেনি।
-'শালা দেশে আসলেই কাউকে না কাউকে হুল ফুটিয়ে চলে যায়।বাঁশ না দিলে যেন পেটের ভাত হজম হয় না।
-'নজর রাখ,,,,
রাফি মাথা নাড়লো।
-'আজকে আর বাসায় যাস না।এখানেই থাক।
আহনাফের এই কথার অপেক্ষাতেই যেন সে ছিল।আহনাফের বলতে দেরি তাকে ঠেলে রাফি শুয়ে পড়তে দেরি হয়নি।আহনাফ হাসলো।কতদিন দুই ভাইয়ের একসাথে থাকা হয়নি।ছেলেটা বড্ড বাচ্চামো করে এখনো।তাই তো,,,আহনাফ আর ওসব ভবনায় গেল না।সেও শুয়ে পড়লো।
_________________________
-'গরিবের বাড়ি স্যার....এইটুকু আপ্যায়ন'ই করতে পারলাম,,,
আয়ান হালকা হেসে কথাগুলো বললো।আনোয়ারা বেগম এসে ট্রে'টা শব্দ করে টেবিলে রাখলেন।সাখাওয়াত আলম ট্রে'র দিকে তাকালেন।চা,আর আস্ত এক আঁখ রাখা।আয়ান হতাশ চোখে মায়ের দিকে তাকালো তা দেখে।আনোয়ারা বেগম তা দেখেও দেখলেন না।তিনি দাঁতে দাঁও পিষে আস্তে করে বললেন
-' আসছে মাঝরাতে ,,, দরজা যে খুলেছি এটাই তো কতো আবার নাস্তাও আশা করে,,,আঁখটা যে মাথায় মারিনি এরজন্য পা ধরে সালাম করা উচিত,,,
আস্তে করে কথাগুলো বললেও সাখাওয়াত আলমের কানে তা গেল।ওনি হেসে বললেন
-'এসবের কি দরকার ছিল! আমি আসলে এদিক দিয়েই একটা কাজ সেরে যাচ্ছিলাম।হারুন বললো এখানে আপনাদের বাড়ি।ভাবলাম দেখা করে যাই।এই আরকি...
আনোয়ারা বেগম জোরপূর্বক হাসলো।হারুন রহমান বললেন
-'ইয়ে মানে,,,আঁখটাকে কি চা'তে চুবিয়ে খাবো মানে আপনাদের এখানের নিয়ম এটা?বললে খেতে সুবিধা হতো আরকি।
কুহু বহু কষ্টে নিজের হাসি আটকালো।সাখাওয়াত আলম খানিকটা রাগি স্বরে বললেন
-'হারুন,,,,
হারুন রহমান মুখটা পাংশুটে করে ফেললেন।একজপ এমপি বাসায় এসেছে আর সম্মান কি দিচ্ছে দেখো! আস্ত এক আঁখ আর চা দিয়েছে।আহা!
আনোয়ারা বেগম বেশ বুঝলেন তাকে খোঁচা মারতে কথাটা বলা হয়েছে।উনি একটু হেসে বললেন
-'চাপাতি আছে আনবো? না মানে আঁখটাকে কাটতে আপনাকে নয়...
হারুন রহমান বড় বড় চোখ করে তাকালেন আনোয়ারা বেগমের দিকে।শ্লা! কি দজ্জাল মহিলা! আয়ান বলে উঠলো
-'আহা মা! থামো তুমি।উম,,,,স্যার আপনারা কিছু মনে করবেন না।
-'আরে নাহ নাহ,,,, তা আপনারা আছেন কেমন? এতো বড় একটা দূর্ঘটনা গেল,,,
আনোয়ারা বেগম বললেন
-'ভীষণ ভালো আছি আমরা।এই যে মাঝরাতে অতিথি এসেছে,,,কি যে খুশি লাগতেছে না আমার মানে ঐ যে কি যেন একটা গান আছে না,,,আরেহ চিকুন চ্যামলা কি না কি যেন,,,,ওই গানটাতে নাচতে মন চাইছে।
-'দয়াল জ্বাল আবার কি?
আয়ানের প্রশ্ন শুনে হারুন আলম বললেন
-'ডিজে দয়াল
কুহু আর হাসি আটকিয়ে রাখতে পারলো না।হো হো করে হেসে ফেললো।দজ্জালকে দয়ার জ্বাল বলেছে এটা সে ভালোই বুঝেছে।কিন্তু ডিজে দয়াল! হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। সাখাওয়াত আলম সেদিকে তাকিয়ে রইলেন।এই প্রথম মেয়েকে এভাবে হাসতে দেখলেন ভদ্রলোক।এমনি হাসলেও তার সামনে কখনো হাসে না এই মেয়ে।মায়ের মতো হয়েছে একদম।হাসলেন সাখাওয়াত আলম।হারুন রহমান বললেন
-'আমাদেরও এই মাঝরাতে এখানে এসে আপনার মতো একজন দয়ার জাল মহিলার থেকে আপ্যায়ন পেয়ে নিজেদের এতোটা ধন্য মনে হচ্ছে যে কি আর বলবো! আমার তো ঐ যে ঐ গানটা,,,হৈ তুরাত তুরাত তু তুরাত তুরাত তু তারারা গাটটাতে নাচতে মন চাচ্ছে।আসেন আপা একসাথে নাচি,,,
হারুন আলম একটু নাচের ভঙ্গিমা করলেন।সাখাওয়াত আলম একটু চোখ রাঙাতেই থেমে গেলেন।কুহু আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো।আয়ান কুহুর দিকে তাকিয়ে হাসছে।এই মেয়েটা হাসলে তার মুখেও হাসি চলে আসে আপনাআপনি।আয়ান মনে মনে আওড়ালো
"সুহাসিনী,,,আমার সুহাসিনী।"
হাসলো আয়ান।এদিকে আনোয়ারা বেগম ক্ষীপ্ত চোখে তাকালেন হারুন রহমানের দিকে।ওনাকে কিছু বলতে না পেরে কুহুকে হাসতে দেখে বললেন
-'ওই! তুই হাসছিস কেন?ঈদ লেগে গেছে?কালকে,,,
-'হাসুক না! সমস্যা তো নেই।এই হাসি লক্ষ টাকা দিয়েও বোধহয় কেনা যাবে না।হাসছে,,হাসুক।
আনোয়ারা বেগম কেমন করে যেন তাকালেন ওনার দিকে।কুহু হাসি বন্ধ করে ফেলেছে ততক্ষণে।নিজেকে একটু সিরিয়াস করলো।সাখাওয়াত আলম বুঝলেন যে মেয়ে তার গোমড়ামুখো নয় বরং তাকে দেখলে অভিনয় করে।মনে মনে হাসলেন ভদ্রলোক।মায়ের ফটোকপি হয়েছে একদম।
সাখাওয়াত আলম আর সেসব ভাবনায় গিয়ে নিজেকে আবেগি করলেন না।কিছু বলতে নিবে তখন তার চোখ গিয়ে আটকালো কুহুর বিছানার পাশের দেয়ালে।দেয়ালটা ছিদ্র হয়ে গেছে।সাখাওয়াত আলম হান্ড্রেড পার্সেন্ট নিশ্চিত এটা গুলির কারণে হয়েছে।তারমানে সত্যিই গুলি করা হয়েছিল!! মেয়েটা মিথ্যা বললো কেন তাহলে? কিছু কি লুকাতে চাইছে ও?নাহ্ এবার থেকে দিনের বেলাও মেয়ের উপর তার নজর রাখতে হবে।শুধু রাতের পাহরা দিয়ে চলবে না।সাখাওয়াত আলম আরকিছু বললেন না।উঠে দাঁড়ালেন ভদ্রলোক।এরপর বললেন
-'আপনারা একটু সাবধানে থাকবেন।মানে বিপদের কথা তো বলা যায় না আরকি তাই।উম,,আমাকে একগ্লাস পানি দিবেন একটু?
আনোয়ারা বেগম বিরবির করতে করতে চলে গেলেন।হারুন রহমান ভেঙালেন ভদ্রমহিলাকে।ভাগ্যিস দেখেননি তিনি! সাখাওয়াত আলম আয়ানের উদ্দেশ্যে বললেন
-'আমার ড্রাইভার বাহিরে আছে নাকি একটু দেখবে?
-'জ্বী, অবশ্যই।
আয়ান চলে গেল সাথে সাথে।সাখাওয়াত আলম কুহুর দিকে তাকিয়ে বললেন
-'বাসায় চলো আমার সাথে।রাজনীতি ছেড়ে দিব সময় দাও।
-'পাঁচ বছর ধরে সেইম কথা বলছেন।আপনার যদি এতোই ইচ্ছা থাকতো মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার তাহলে অনেক আগেই পদত্যাগ করে ফেলতেন।
হারুন রহমান বললেন
-'ছোটমুখে একটা বড় কথা বললাম ছোট মা,,,স্যার রাজনীতি,,,
-'স্যারের হয়ে তেল মারবেন না আমাকে আমি আগেও বলছি।রাত হয়েছে অনেক।
আনোয়ারা বেগম পানির গ্লাস নিয়ে হাজির হলেন তখন।হারুন রহমান বললেন
-'এতো তাড়াতাড়ি পানির গ্লাস নিয় চলে এলেন! আপনার ঐ চিকুন চ্যামলা গানে একটু নেচে আসতেন।
আনোয়ারা বেগম খেকিয়ে কিছু বলতে নিলে সাখাওয়াত আলম থামিয় দিলেন।
-'হারুনন,,,
হারুন রহমান কিছু বললেন না আর।স্যারের জন্য এই মহিলা বেঁচে গেল আজ।সাখাওয়াত আলম উঠে দাঁড়ালেন।
-'আজ আসি তাহলে,,
-'সকালে নাস্তাটা করেই যাইতেন।
-'চায়ের মধ্যে আঁখ চুবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস নেই।পরে কোনোদিন,,,কি বলেন স্যার?
-'হারুননন
হারুন রহমান আবার চুপসে গেলেন।
-'আপনারা সাবধানে থাকবেন।
মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
-'ভালো থেকো।আমার বাড়ির দরজা সবসময় খোলা থাকবে,,,
কুহু কিছু বললো না।আনোয়ারা বেগম বললেন
-' সে কি! বাড়ির দরজা খুলে রাখবেন কীসের জন্য?
-'চায়ের সাথে আঁখ চুবিয়ে খেতে।দাওয়াত রইলো আপনিও যাবেন।
-'আহা হারুন! থামো তুমি।চলো রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে।
কথাটা বলেই বেরিয়ে গেলেন সাখাওয়াত আলম।হারুন রহমান গেলেন তবে যাওয়ার আগে আঁখটা নিয়ে গেলেন সাথে করে।আনোয়ারা বেগম তেঁতে কিছু বলতে গিয়েও বললেন না।তবে মনে মনে গালিগালাজ করলেন।কুহু এক জায়গাতেই বসে রইলো।আহনাফ তারমানে ঠিক আছে? নাটক করছিলো তারমানে?কুহু কি ভয়টাই না পেয়েছিল! বিড়িখোর পোলা একটা!খায়'ই তো গোবর,,ঠিক'ই আছে।
কুহু বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিল।কিছু কিছু জিনিস ভাবছে সে।রোদেলার পুরো পরিবার সাখাওয়াত আলমকে অপছন্দ করে কোনো এক কারণে।তার মানে আহনাফও অপছন্দ করে।কিন্তু কেন? আচ্ছা আহনাফ যখন জানবে যে সাখাওয়াত আলম তার বাবা তখন কি হবে?কিন্তু সাখাওয়াত আলম তো কখনো ওদের সম্পর্কে কিছু বলে না।সে তো জানে রোদেলা তার বেস্ট ফ্রেন্ড।তাহলে? কাহিনীটা আসলে কি? আহনাফকে জিজ্ঞাসা করবে?তাই করবে বরং।কুহু ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমে তলিয়ে গেল বুঝতেও পারলো না।
ঘড়ির কাঁটা দশের ঘরে।অনেক রাত করে ঘুমানোয় আহনাফ আর রাফি এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।হঠাৎ ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠলো।বেজে বেজে কেটে গেল অথচ তাদের হুশ নেই।আবার শব্দ করে বেজে উঠলো আহনাফের ফোন।রাফি ফোনটা হাতড়ে আহনাফের কানের সামনে এনে রেখে অন্যদিকে ফিরে ঘুমালো আবার।আহনাফ 'চ' সূচক শব্দ করলো ফোনের বিভৎস শব্দে।কোনোমতে ফোনটা রিসিভ করলো সে।তার হ্যালো বলার আগেই ভেসে এলো আরিফের অস্পষ্ট আওয়াজ
-'দোস্ত,, নিধি,,,,আমার নিধি,,,,
আরিফ কথা বলতে পারছে না জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে।আহনাফের ঘুম হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।সে সাথে সাথে উঠে বসলো।
-'আরিফ! হ্যালো,,,আরিফ! কি হয়েছে নিধির?তুই কোথায়? ঠিক আছিস তো? হ্যালো!
অপর পাশ থেকে শুধু আরিফের কিছু অস্পষ্ট শব্দ ভেসে এলো
-'নিধিকে,,বাঁচা,,গুলি,,আ'আমকে,,
আর কিছু শোনা গেল না more...
কথাটা বলেই রাফি দাঁত কেলালো।আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো
-'খোদা জানে জ্ঞান ফিরছে নাকি।আমি তো শুধু একটু নাটক করছিলাম....
-'আর বাকিটা ইতিহাস,,,,হাহা হাহা
রাফির হাসি শুনে আহনাফ সরু চোখে তাকালো তার দিকে রাফি চুপ হয়ে গেল। আহনাফ বলে উঠলো
-'একটা কল করবো কি?
-'আপনি ভাবিকে ফেলে রেখে চলে আসলেন কেন?
-'গুলির শব্দে সব দৌঁড়ে আসছিল।ওখানে থাকলে দেখা যেত উল্টোপাল্টা কথা বলতো,,,,
রাফি বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়ালো।আহনাফ বিছানায় আরাম করে বসে বললো
-'কি একটা কপাল! দুনিয়ায় এতো ছেলে থাকতে রাহুলের সাথেই ও.....
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আহনাফ।রাফি বললো
-'মাইয়া মানুষ কেন জানি খারাপের উপর বেশি আকৃষ্ট হয়।ভালো কিছু এদের হজম হয়না।
আহনাফ বললো
-'আমি কি ভালো মানুষ নাকি?
-'আপনাকে কি কম মেয়ে পছন্দ করে নাকি?
আহনাফের প্রশ্নের সাথে সাথে রাফি জবাব দেয়।আহনাফে মুখটা ছোট্ট হয়ে গেল।বড্ড আহত স্বরে বললো
-'যাকে আমি চাইলাম সে তো আমারে চাইলো না।
-'তাহলে কাকে চাইলো?
রাফি কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।আহনাফ বিছানায় হেলান দিয়ে মাথাটা এলিয়ে দিল।
-'ওর চোখে আমি আজও আমার জন্য ভালোবাসা দেখিনি।রাহুলের সাথে যখন ঐদিন
ভার্সিটিতে দেখা হয়েছিল তখন দেখেছিলাম আমি ওর ঐ সিক্ত চোখ।কাজল কালো আঁখিজোড়ায় পানি দেখেছিলাম আমি।মানে এতোকিছুর পরেও ওর রাহুলের জন্য ফিলিংস কমেনি।
রাফি আহনাফের পাশে বসে হেসে বললো
-'প্রথম প্রেম চাইলেও মানুষ ভুলতে পারে না।কেউই পারে না।কেউ যদি বলে সে ভুলে গেছে তাহলে বুঝে নিবেন বিপরীত পক্ষের দেওয়া আঘাত ছিল অত্যন্ত জঘন্য রকমের যা তাকে এটা বলতে বাধ্য করিয়েছে।তবে সে যে সত্যিই ভুলে গেছে এমন না।
আহনাফ অদ্ভুদ নয়নে তাকিয়ে ওর দিকে।রাফিকে দেখে মনে হচ্ছে সে অন্য কোনো জগতে চলে গেছে।আহনাফ বলে উঠলো
-'প্রথম প্রেমের খেতায় আগুন।এইসব প্রথম ট্রথম বলতে কিছু হয় না।শেষ পর্যন্ত যে থাকে সেই আসল বুঝেছিস?আর এই আহনাফ শাহরিয়ার'ই আছে এই কুহুর শেখের ভাগ্যে।অন্য আর কেউ না,,,,
রাফি এক ভ্রু উঁচু করে বললো
-'যদি অন্যকেউ থাকে? তাহলে কি করবেন?
আহনাফ কেমন করে হাসলো।এরপর বললো
-'থাকবে না...এই আহনাফ শাহরিয়ার বেঁচে থাকতে তা হবে না।আর যদি কোনোদিন এমন হয়ও তাহলে ওকে মেরে নিজে মরবো।তাও অন্য কারো হতে দিব না।
রাফি বলে উঠলো
-'ভাবি বুঝলো না যে আপনার মতো ছেলে হারালে কাঁদতে হবে আড়ালে।ঐ রাহুল হুল ফুটিয়ে দেওয়ার পরেও ভাবির তারেই ভাল্লাগে।হতাশ! খুবই হতাশ!
আহনাফ বললো
-'এই শালাই বা দেশে আসলো কেন বুঝতেছি না।এমনি এমনি তো আর আসেনি।
-'শালা দেশে আসলেই কাউকে না কাউকে হুল ফুটিয়ে চলে যায়।বাঁশ না দিলে যেন পেটের ভাত হজম হয় না।
-'নজর রাখ,,,,
রাফি মাথা নাড়লো।
-'আজকে আর বাসায় যাস না।এখানেই থাক।
আহনাফের এই কথার অপেক্ষাতেই যেন সে ছিল।আহনাফের বলতে দেরি তাকে ঠেলে রাফি শুয়ে পড়তে দেরি হয়নি।আহনাফ হাসলো।কতদিন দুই ভাইয়ের একসাথে থাকা হয়নি।ছেলেটা বড্ড বাচ্চামো করে এখনো।তাই তো,,,আহনাফ আর ওসব ভবনায় গেল না।সেও শুয়ে পড়লো।
_________________________
-'গরিবের বাড়ি স্যার....এইটুকু আপ্যায়ন'ই করতে পারলাম,,,
আয়ান হালকা হেসে কথাগুলো বললো।আনোয়ারা বেগম এসে ট্রে'টা শব্দ করে টেবিলে রাখলেন।সাখাওয়াত আলম ট্রে'র দিকে তাকালেন।চা,আর আস্ত এক আঁখ রাখা।আয়ান হতাশ চোখে মায়ের দিকে তাকালো তা দেখে।আনোয়ারা বেগম তা দেখেও দেখলেন না।তিনি দাঁতে দাঁও পিষে আস্তে করে বললেন
-' আসছে মাঝরাতে ,,, দরজা যে খুলেছি এটাই তো কতো আবার নাস্তাও আশা করে,,,আঁখটা যে মাথায় মারিনি এরজন্য পা ধরে সালাম করা উচিত,,,
আস্তে করে কথাগুলো বললেও সাখাওয়াত আলমের কানে তা গেল।ওনি হেসে বললেন
-'এসবের কি দরকার ছিল! আমি আসলে এদিক দিয়েই একটা কাজ সেরে যাচ্ছিলাম।হারুন বললো এখানে আপনাদের বাড়ি।ভাবলাম দেখা করে যাই।এই আরকি...
আনোয়ারা বেগম জোরপূর্বক হাসলো।হারুন রহমান বললেন
-'ইয়ে মানে,,,আঁখটাকে কি চা'তে চুবিয়ে খাবো মানে আপনাদের এখানের নিয়ম এটা?বললে খেতে সুবিধা হতো আরকি।
কুহু বহু কষ্টে নিজের হাসি আটকালো।সাখাওয়াত আলম খানিকটা রাগি স্বরে বললেন
-'হারুন,,,,
হারুন রহমান মুখটা পাংশুটে করে ফেললেন।একজপ এমপি বাসায় এসেছে আর সম্মান কি দিচ্ছে দেখো! আস্ত এক আঁখ আর চা দিয়েছে।আহা!
আনোয়ারা বেগম বেশ বুঝলেন তাকে খোঁচা মারতে কথাটা বলা হয়েছে।উনি একটু হেসে বললেন
-'চাপাতি আছে আনবো? না মানে আঁখটাকে কাটতে আপনাকে নয়...
হারুন রহমান বড় বড় চোখ করে তাকালেন আনোয়ারা বেগমের দিকে।শ্লা! কি দজ্জাল মহিলা! আয়ান বলে উঠলো
-'আহা মা! থামো তুমি।উম,,,,স্যার আপনারা কিছু মনে করবেন না।
-'আরে নাহ নাহ,,,, তা আপনারা আছেন কেমন? এতো বড় একটা দূর্ঘটনা গেল,,,
আনোয়ারা বেগম বললেন
-'ভীষণ ভালো আছি আমরা।এই যে মাঝরাতে অতিথি এসেছে,,,কি যে খুশি লাগতেছে না আমার মানে ঐ যে কি যেন একটা গান আছে না,,,আরেহ চিকুন চ্যামলা কি না কি যেন,,,,ওই গানটাতে নাচতে মন চাইছে।
-'দয়াল জ্বাল আবার কি?
আয়ানের প্রশ্ন শুনে হারুন আলম বললেন
-'ডিজে দয়াল
কুহু আর হাসি আটকিয়ে রাখতে পারলো না।হো হো করে হেসে ফেললো।দজ্জালকে দয়ার জ্বাল বলেছে এটা সে ভালোই বুঝেছে।কিন্তু ডিজে দয়াল! হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। সাখাওয়াত আলম সেদিকে তাকিয়ে রইলেন।এই প্রথম মেয়েকে এভাবে হাসতে দেখলেন ভদ্রলোক।এমনি হাসলেও তার সামনে কখনো হাসে না এই মেয়ে।মায়ের মতো হয়েছে একদম।হাসলেন সাখাওয়াত আলম।হারুন রহমান বললেন
-'আমাদেরও এই মাঝরাতে এখানে এসে আপনার মতো একজন দয়ার জাল মহিলার থেকে আপ্যায়ন পেয়ে নিজেদের এতোটা ধন্য মনে হচ্ছে যে কি আর বলবো! আমার তো ঐ যে ঐ গানটা,,,হৈ তুরাত তুরাত তু তুরাত তুরাত তু তারারা গাটটাতে নাচতে মন চাচ্ছে।আসেন আপা একসাথে নাচি,,,
হারুন আলম একটু নাচের ভঙ্গিমা করলেন।সাখাওয়াত আলম একটু চোখ রাঙাতেই থেমে গেলেন।কুহু আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো।আয়ান কুহুর দিকে তাকিয়ে হাসছে।এই মেয়েটা হাসলে তার মুখেও হাসি চলে আসে আপনাআপনি।আয়ান মনে মনে আওড়ালো
"সুহাসিনী,,,আমার সুহাসিনী।"
হাসলো আয়ান।এদিকে আনোয়ারা বেগম ক্ষীপ্ত চোখে তাকালেন হারুন রহমানের দিকে।ওনাকে কিছু বলতে না পেরে কুহুকে হাসতে দেখে বললেন
-'ওই! তুই হাসছিস কেন?ঈদ লেগে গেছে?কালকে,,,
-'হাসুক না! সমস্যা তো নেই।এই হাসি লক্ষ টাকা দিয়েও বোধহয় কেনা যাবে না।হাসছে,,হাসুক।
আনোয়ারা বেগম কেমন করে যেন তাকালেন ওনার দিকে।কুহু হাসি বন্ধ করে ফেলেছে ততক্ষণে।নিজেকে একটু সিরিয়াস করলো।সাখাওয়াত আলম বুঝলেন যে মেয়ে তার গোমড়ামুখো নয় বরং তাকে দেখলে অভিনয় করে।মনে মনে হাসলেন ভদ্রলোক।মায়ের ফটোকপি হয়েছে একদম।
সাখাওয়াত আলম আর সেসব ভাবনায় গিয়ে নিজেকে আবেগি করলেন না।কিছু বলতে নিবে তখন তার চোখ গিয়ে আটকালো কুহুর বিছানার পাশের দেয়ালে।দেয়ালটা ছিদ্র হয়ে গেছে।সাখাওয়াত আলম হান্ড্রেড পার্সেন্ট নিশ্চিত এটা গুলির কারণে হয়েছে।তারমানে সত্যিই গুলি করা হয়েছিল!! মেয়েটা মিথ্যা বললো কেন তাহলে? কিছু কি লুকাতে চাইছে ও?নাহ্ এবার থেকে দিনের বেলাও মেয়ের উপর তার নজর রাখতে হবে।শুধু রাতের পাহরা দিয়ে চলবে না।সাখাওয়াত আলম আরকিছু বললেন না।উঠে দাঁড়ালেন ভদ্রলোক।এরপর বললেন
-'আপনারা একটু সাবধানে থাকবেন।মানে বিপদের কথা তো বলা যায় না আরকি তাই।উম,,আমাকে একগ্লাস পানি দিবেন একটু?
আনোয়ারা বেগম বিরবির করতে করতে চলে গেলেন।হারুন রহমান ভেঙালেন ভদ্রমহিলাকে।ভাগ্যিস দেখেননি তিনি! সাখাওয়াত আলম আয়ানের উদ্দেশ্যে বললেন
-'আমার ড্রাইভার বাহিরে আছে নাকি একটু দেখবে?
-'জ্বী, অবশ্যই।
আয়ান চলে গেল সাথে সাথে।সাখাওয়াত আলম কুহুর দিকে তাকিয়ে বললেন
-'বাসায় চলো আমার সাথে।রাজনীতি ছেড়ে দিব সময় দাও।
-'পাঁচ বছর ধরে সেইম কথা বলছেন।আপনার যদি এতোই ইচ্ছা থাকতো মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার তাহলে অনেক আগেই পদত্যাগ করে ফেলতেন।
হারুন রহমান বললেন
-'ছোটমুখে একটা বড় কথা বললাম ছোট মা,,,স্যার রাজনীতি,,,
-'স্যারের হয়ে তেল মারবেন না আমাকে আমি আগেও বলছি।রাত হয়েছে অনেক।
আনোয়ারা বেগম পানির গ্লাস নিয়ে হাজির হলেন তখন।হারুন রহমান বললেন
-'এতো তাড়াতাড়ি পানির গ্লাস নিয় চলে এলেন! আপনার ঐ চিকুন চ্যামলা গানে একটু নেচে আসতেন।
আনোয়ারা বেগম খেকিয়ে কিছু বলতে নিলে সাখাওয়াত আলম থামিয় দিলেন।
-'হারুনন,,,
হারুন রহমান কিছু বললেন না আর।স্যারের জন্য এই মহিলা বেঁচে গেল আজ।সাখাওয়াত আলম উঠে দাঁড়ালেন।
-'আজ আসি তাহলে,,
-'সকালে নাস্তাটা করেই যাইতেন।
-'চায়ের মধ্যে আঁখ চুবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস নেই।পরে কোনোদিন,,,কি বলেন স্যার?
-'হারুননন
হারুন রহমান আবার চুপসে গেলেন।
-'আপনারা সাবধানে থাকবেন।
মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
-'ভালো থেকো।আমার বাড়ির দরজা সবসময় খোলা থাকবে,,,
কুহু কিছু বললো না।আনোয়ারা বেগম বললেন
-' সে কি! বাড়ির দরজা খুলে রাখবেন কীসের জন্য?
-'চায়ের সাথে আঁখ চুবিয়ে খেতে।দাওয়াত রইলো আপনিও যাবেন।
-'আহা হারুন! থামো তুমি।চলো রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে।
কথাটা বলেই বেরিয়ে গেলেন সাখাওয়াত আলম।হারুন রহমান গেলেন তবে যাওয়ার আগে আঁখটা নিয়ে গেলেন সাথে করে।আনোয়ারা বেগম তেঁতে কিছু বলতে গিয়েও বললেন না।তবে মনে মনে গালিগালাজ করলেন।কুহু এক জায়গাতেই বসে রইলো।আহনাফ তারমানে ঠিক আছে? নাটক করছিলো তারমানে?কুহু কি ভয়টাই না পেয়েছিল! বিড়িখোর পোলা একটা!খায়'ই তো গোবর,,ঠিক'ই আছে।
কুহু বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিল।কিছু কিছু জিনিস ভাবছে সে।রোদেলার পুরো পরিবার সাখাওয়াত আলমকে অপছন্দ করে কোনো এক কারণে।তার মানে আহনাফও অপছন্দ করে।কিন্তু কেন? আচ্ছা আহনাফ যখন জানবে যে সাখাওয়াত আলম তার বাবা তখন কি হবে?কিন্তু সাখাওয়াত আলম তো কখনো ওদের সম্পর্কে কিছু বলে না।সে তো জানে রোদেলা তার বেস্ট ফ্রেন্ড।তাহলে? কাহিনীটা আসলে কি? আহনাফকে জিজ্ঞাসা করবে?তাই করবে বরং।কুহু ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমে তলিয়ে গেল বুঝতেও পারলো না।
ঘড়ির কাঁটা দশের ঘরে।অনেক রাত করে ঘুমানোয় আহনাফ আর রাফি এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।হঠাৎ ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠলো।বেজে বেজে কেটে গেল অথচ তাদের হুশ নেই।আবার শব্দ করে বেজে উঠলো আহনাফের ফোন।রাফি ফোনটা হাতড়ে আহনাফের কানের সামনে এনে রেখে অন্যদিকে ফিরে ঘুমালো আবার।আহনাফ 'চ' সূচক শব্দ করলো ফোনের বিভৎস শব্দে।কোনোমতে ফোনটা রিসিভ করলো সে।তার হ্যালো বলার আগেই ভেসে এলো আরিফের অস্পষ্ট আওয়াজ
-'দোস্ত,, নিধি,,,,আমার নিধি,,,,
আরিফ কথা বলতে পারছে না জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে।আহনাফের ঘুম হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।সে সাথে সাথে উঠে বসলো।
-'আরিফ! হ্যালো,,,আরিফ! কি হয়েছে নিধির?তুই কোথায়? ঠিক আছিস তো? হ্যালো!
অপর পাশ থেকে শুধু আরিফের কিছু অস্পষ্ট শব্দ ভেসে এলো
-'নিধিকে,,বাঁচা,,গুলি,,আ'আমকে,,
আর কিছু শোনা গেল না more...
No comments: