#লাল_শাড়িতে_প্রেয়সী
রিদিতা গেট পেরিয়ে বাইরে বেরোল। বাতাসে শুকনো পাতার সাঁই সাঁই শব্দ। মাথার ভেতর যেন ঢেউ খেলে যাচ্ছে একের পর এক ভাবনার। তার বুক ভরা অভিমান আহাদের উপর, নিজের উপর, এই পরিস্থিতির উপর। মনে মনে ভাবলো, আজ যদি না আসতো তবে এ অপমান, এ অস্বস্তি সহ্য করতে হতো না। তার আঙুলগুলো শক্ত করে ব্যাগের হাতলে চেপে ধরল। দাঁত কিড়মিড় করছে রাগে। চোখে মুখে অগ্নিশিখা খেলে যাচ্ছে, কিন্তু ভেতরে জমে আছে অদ্ভুত শূন্যতা। সে দ্রুত পা চালাতে শুরু করল। রাস্তার লাইটগুলো কেমন যেন নিস্তেজ লাগছিলো। হঠাৎ নজরে পড়ল গেটের ডান পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তামিম। দুই হাত পকেটে, কেমন একটা শান্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে সামনে। রিদি এক মুহূর্ত থমকে গেল। অবাক হয়ে বলল,
“তামিম! তুমি এখনো যাওনি?”
তামিম সোজা হয়ে দাঁড়াল, মুখে হালকা হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে এসে বলল,
“ভাবলাম এতো রাতে একা একা তুমি কিভাবে যাবে। তাই অপেক্ষা করছিলাম।”
“প্রয়োজন ছিল না, আমি একাই যেতে পারতাম। আমি তো এখন আর ছোট না।”
তামিম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“তা ঠিক, তুমি ছোট নও। তবে… অপেক্ষা যখন করেছি, তখন অন্তত পৌঁছে দিয়ে আসি। আমারও তো একটা দায়িত্ব আছে।”
রিদি ভুরু কুঁচকে তাকাল, ঠোঁটে হালকা হাসি মেখে বলল,
“এত দায়িত্ববান কবে হলে তুমি?”
তামিম নিচু স্বরে, প্রায় ফিসফিস করে বলল,
“যেদিন থেকে তোমাকে দেখেছি…”
রিদি কপাল কুঁচকে বলল, “কি বললে? বুঝতে পারলাম না।”
“কিছু না। চল, এগিয়ে দিই।”
“ঠিক আছে, চলো।”
দু’জন পাশাপাশি হাঁটতে লাগল। তামিম কথোপকথনের ভেতরেও রিদির প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি গভীর মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করছিল। রিদি হাত নাড়িয়ে কিছু বলছে, কপালে ভাঁজ ফেলছে, ঠোঁটে হালকা ভঙ্গিতে কামড় বসাচ্ছে।সবকিছু যেন তামিমের চোখে পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু রিদি কিছুই টের পেল না। একটু সামনে যেতেই রাস্তার মোড়ে দাঁড়ানো ফাঁকা একটা রিকশা দেখে তামিম ডাক দিল। রিকশা কাছে আসলে তামিম উঠে বসে রিকশায়, হাত বাড়িয়ে দিল রিদির দিকে। রিদি এক মুহূর্ত দ্বিধায় পড়ল। ঠোঁট কামড়ে ধরল, অতঃপর হাত বাড়িয়ে দিতে গেল তামিমের দিকে। ঠিক তখনই! পেছন থেকে এক ঝটকায় একটা শক্তপোক্ত হাত তার কোমর ঘিরে ফেলল। রিদির বুক ধড়াস করে উঠল। বিস্ময়ে ঘুরে তাকিয়ে দেখল, আহাদ। তার চোখে লালচে জ্বলন্ত দৃষ্টি, মুখে সেই ভয়ংকর স্থিরতা। তামিম হতবাক হয়ে বলে উঠলো,
“আহাদ ভাই…!”
রিদি মরিয়া হয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করল, কিন্তু আহাদের বাঁধন যেন লোহার চেয়েও শক্ত। দু আঙুলে ইশারা করল রিকশাওয়ালাকে। রিকশাওয়ালা আহাদের চোখের দিকে তাকাতেই কেঁপে উঠে দ্রুত রিকশা ঘুরিয়ে চলে গেল।
তামিম একবার রিদির দিকে ঘুরে তাকাল। রিদির চোখে ভয়ের সাথে একরাশ অসহায়তা। সে যেন নীরবে সাহায্য চাইছে। কিন্তু তামিম কিছুই করতে পারল না। আহাদ রাজা, যার দৃষ্টির সামনে দাঁড়ানোর সাহস কারোর নেই। মুহূর্তের ভেতরেই তামিম আর রিকশা হলদে লাইটের আলোয় রাস্তায় মিলিয়ে গেল। রিদি তখন এক ঝটকা মেরে আহাদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। হয়তো আহাদ ইচ্ছে করেই ছেড়ে দিয়েছে, না হলে সে বাঁধন থেকে এত সহজে মুক্তি পাওয়া সম্ভব ছিল না। রিদির চোখে অগ্নিশিখা জ্বলল। কটমট করে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠল,
“আপনার সমস্যা কি? আমার সাথে সব সময় এমন করেন কেনো? আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার?”
আহাদের মুখ কঠিন হয়ে গেল। ধীরে ধীরে রিদির কাছে ঝুঁকে বলল,
“আমার এত বড় সর্বনাশ করার পর আজ জিজ্ঞেস করছো কি ক্ষতি করেছো?”
রিদির বুক কেঁপে উঠল, “কি সর্বনাশ করেছি আমি?”
আহাদ ঠোঁটে ব্যঙ্গ মিশিয়ে হাসে বলল,
“সেটা যদি বলতে বসি, তাহলে সারা রাত এখানেই শেষ হয়ে যাবে। এখন থাক, পরে একদিন সময় করে খাতা কলম নিয়ে বলতে বসবো। গাড়িতে উঠো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিই, না হলে আবার তোমার পরিবার আমাকে সন্দেহের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে।”
রিদি ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, “আমি আপনার সাথে যাব না।”
আহাদ ঠাণ্ডা চোখে তাকাল রিদির দিকে, এরপর কর্কশ কন্ঠে বলল,
“তাহলে কার সাথে যাবে? ওই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা তামিমের সাথে?”
রিদির চোখ বড় হয়ে গেল আহাদের এমন উদ্ভট কথায়। তবুও ঠোঁট চেপে অনড় ভাবে বলল,
“হ্যাঁ, ওর সাথেই যাবো। আর আপনাকে কে বলেছে ও কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগে?”
আহাদ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল, “ওর চেহারা দেখলেই বোঝা যায়।”
রিদি বিরক্ত হলো আহাদের গা ছাড়ানো এমন কথা বার্তায়। এরপর আবার বলল,
“যাই হোক! তবুও আমি আপনার সাথে এক পা-ও যাব না। আপনার উপর আমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই। কে জানে, বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার অজুহাতে আমাকে হয়তো কবরে পাঠিয়ে দেবেন! সন্ধ্যায় তো অকারণেই আমার সাথে যা তা ব্যাবহার করেছেন। আমি যাব না আপনার সাথে।”
আহাদের কণ্ঠ হঠাৎ করেই অন্ধকারের মতো ভারী হয়ে উঠল।
“কারণ ছাড়া আহাদ রাজা কিছুই করে না। আর কবরে পাঠানোর কথা বলছো? যদি তুমি আমাকে সেই পর্যায়ে যেতে বাধ্য করো, তবে আমি অবশ্যই সেটা করব। সিদ্ধান্ত তোমার, মি স জা নু! এখন কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে ওঠো। না হলে বাধ্য হয়ে উল্টাপাল্টা কিছু করবো, তখন আবার বলবে, বজ্জাত বেটা।”
রিদির গলা কাঁপিয়ে বলে উঠল, “আপনি এমনিতেই বজ্জাত।”
আহাদের ঠোঁটে বিপজ্জনক বাঁকা হাসি ফুটল,
“আজকে তুমি একটু বেশিই কথা বলছো না? আহাদ রাজার সামনে এত কথা বলার সাহস কারো হয়নি। কিন্তু তুমি… এই মুহূর্তে সেই সাহস দেখাচ্ছো।”
রিদি হঠাৎ উপলব্ধি করল, সত্যিই তো! সে কখনো এভাবে আহাদের সাথে এতো কথা বলেনি। রাগ তাকে ভুলিয়ে দিয়েছে সে কার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের ঠোঁট কামড়ে নিল, দৃষ্টি নামিয়ে দ্রুত গাড়ির দিকে এগোল। ড্রাইভার গাড়ির দরজা খুলে ধরতেই রিদি কোনোকিছু না ভেবে উঠে বসল। তার বুক দুলছে আতঙ্ক আর রাগে। মনে মনে বলল,
“কোনভাবে বাড়ি পৌঁছাতে পারলেই হলো।”
আহাদ সেদিকে তাকিয়ে ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে নাকটা ঘষল। আবারও ঠোঁটে ফুটল সেই বিপজ্জনক, রহস্যময় বাঁকা হাসি। অতঃপর ধীর ভঙ্গিতে গাড়িতে ভেতরে উঠে বসল। মুহূর্তের ভেতর গাড়ি গর্জে উঠল। রাতের নিস্তব্ধ রাস্তা ধরে এগিয়ে চলল আহাদের কালো গাড়িগুলো। যেন অন্ধকারের বুক চিরে, দুই মানুষের অশান্ত হৃদস্পন্দন বহন করে নিয়ে যাচ্ছে অজানা গন্তব্যের দিকে।
★
মীর হাউজের বিশাল হলঘরে তখন অদ্ভুত এক নীরবতা নেমে এসেছে। দেয়ালের ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে সময় জানাচ্ছে রাত সাড়ে দশটা। বড় ঝাড়বাতির নিচে নিজের নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে আছেন আফরোজা শেখ। মুখে দৃঢ়তা, ভঙ্গিতে কঠোরতা, যেন তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে তাঁকে সরানো দুঃসাধ্য। পাশেই হালিমা বেগম বসে আছেন, তবে তাঁর চোখেমুখে এক ধরনের অস্বস্তি খেলা করছে। আর সামনের দিকে, শিরদাঁড়া সোজা করে বসে আছে আদনান। সাদা শার্টের কলার হালকা খোলা, ভ্রু কুঁচকানো, চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। চারপাশের পরিবেশ যেন আরও ভারী হয়ে উঠছে তাঁর উপস্থিতিতে।
সন্ধার সেই ঘটনার পর থেকে আহিয়া যেন গায়েব। আদনানের রাগী চোখে ধরা পড়ার ভয়ে সে নিজের রুম থেকে বের হওয়ার সাহসই করেনি। অথচ আদনান কয়েকবারই চোখ বুলিয়ে খুঁজেছে আহিয়াকে। তাঁর ভেতরে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন, কারণ আজ আহিয়া যা করেছে সেটা কোনোমতেই ক্ষমার যোগ্য নয়। আদনানের ধ্যান ভঙ্গ করে ঠিক তখনই আফরোজা শেখ মুখ খুললেন। তাঁর কণ্ঠ শান্ত, কিন্তু তার ভেতরে লুকানো আছে একরাশ দৃঢ়তা,
“আমি তোমাকে কেন ডেকেছি, এতক্ষণে বুঝতে পেরেছ হয়তো?”
আদনান চোখে বিরক্তি নিয়ে সোজা উত্তর দিল,
“না, বুঝতে পারিনি।”
এই গা ছাড়া ভঙ্গি আফরোজা শেখকে খানিকটা বিরক্ত করল। ভ্রু টেনে তুললেন সামান্য, তারপরও নির্লিপ্ত গলায় বললেন,
“তোমার জন্য একটা মেয়ে দেখেছি। মেয়েটা খুবই ভালো, ভদ্র, সুশীল। হালিমা মেয়েটাকে ভালো করে চেনে। তাছাড়া আমি ও যতবার দেখেছি, মনে হয়েছে মেয়েটা তোমার সঙ্গে দারুণ মানাবে।”
আদনান একটু নড়েচড়ে বসল। মুখে কঠিন ছাঁয়া ফুটে উঠল। ধীরে ধীরে চোখ ঘুরিয়ে ফেলল হালিমা বেগমের দিকে, দৃষ্টিতে যেন হিমশীতল তীক্ষ্ণতা। হালিমা বেগম সাহস সঞ্চয় করে বললেন,
“আদনান তো চিনেই রিদিতাকে।”
আদনানের চোখ মুহূর্তেই বিস্ময়ে বড় হয়ে উঠল।
“রিদিতা?”
হালিমা হালকা হেসে ব্যাখ্যা দিলেন,
“আরেহ, মনে নেই? ওইদিন সন্ধায় তোমার সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়েছিল যে মেয়েটা, সে-ই রিদিতা। আহিয়ার বান্ধবী।”
আদনানের ভেতরে হঠাৎ কেমন অস্থিরতা তৈরি হলো। বুকের ভেতর ক্রোধ ধকধক করে জেগে উঠল। অথচ বাইরে থেকে সে কিছুই প্রকাশ করল না, বরং ঠোঁট শক্ত করে বসে রইল। আফরোজা শেখ এবার খানিকটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। কণ্ঠে যেন বিজয়ের সুর ভেসে উঠল।
“তাহলে তো কথাই নেই। তুমি মেয়েটাকে দেখেছও, আলাদা করে আবার দেখার দরকার হবে না। আমি কালই ওর বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলব। হালিমা, নাম্বারটা নিয়েছো তো! আমাকে দাও।”
হালিমা বেগম মাথা নেড়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় হঠাৎই আদনান সোফা থেকে ঝড়ের বেগে উঠে দাঁড়াল। মেঝেতে তাঁর জুতার শব্দ হলো। গলা কাঠ হয়ে গিয়েছে, কণ্ঠে অগ্নি জ্বলে উঠেছে,
“আমার এতে সম্মতি নেই!”
আফরোজা শেখও কম নন। সেও কঠিন দৃষ্টিতে তাকালেন, গলা ঠাণ্ডা কিন্তু কষাঘাতের মতো শোনাল,
“আমি তোমার মতামত জানতে চাইনি, আদনান। আমি আমার সিদ্ধান্ত জানিয়েছি।”
আদনানের দু’চোখ জ্বলে উঠল। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ হয়ে উঠল, দাঁতে দাঁত চেপে ধীরে ধীরে বলল,
“আমি ও আমার সিদ্ধান্ত আমি জানিয়ে দিয়েছি ছোট আম্মা! বাকিটা আপনি বুঝে নিন।”
এ কথা বলেই হল ঘর থেকে চলে গেল সে। তার পদক্ষেপ ভারী, গটগট শব্দে হলঘরের নীরবতা কেঁপে উঠল। উপরের সিঁড়ি বেয়ে মিলিয়ে গেল তার অবয়ব। ঘরে তখন নিস্তব্ধতা ফিরে এল। হালিমা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে উদ্বিগ্ন স্বরে বললেন,
“আপা, আদনান তো রাজি হলো না। মনে হয় রিদিতাকে পছন্দ হয়নি ওর।”
আফরোজা শেখ ঠোঁটে হালকা হাসি টেনে আনলেন। চোখে সেই পুরোনো দৃঢ়তা,
“সব ঠিক হয়ে যাবে, হালিমা। এখন রাজি না হোক, দুইদিন পর দেখবে নিজেই এসে হ্যাঁ বলবে। তুমি দুশ্চিন্তা কোরো না। আমাকে রিদিতার বাবার নাম্বারটা দাও।”
হালিমা বেগম কিছুটা দ্বিধায় ভুগলেও অবশেষে ফোন নম্বর এগিয়ে দিলেন। অতঃপর তিনিও ধীরে ধীরে হল ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। এবার আফরোজা শেখ ফোন হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে রইলেন। তাঁর চোখে জ্বলজ্বল করছে একরাশ পরিকল্পনা আর দৃঢ় সংকল্প এই বিয়ে যে তিনি করিয়ে ছাড়বেন, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তাঁর চোখের ভাষায়।
★
সেদিনের পর থেকে রিদিতা যেন নিজের ভেতরে গুটিয়ে গেছে। টানা দুইদিন বাসার ভেতরে বন্দি ছিল সে। ভার্সিটিতেও যায়নি। আনিকা আর আহিয়াও রিদির সাথে একাত্ম হয়ে ভার্সিটিতে যায়নি। যেন রিদিকে রেখে ভার্সিটি যাওয়া তাদের অপরাধ হবে। তবে আজকের দিনটা ছিলো ভিন্ন। আজকে ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন আছে। রঙিন সাজে, গানে-নাচে, উচ্ছ্বাসে মুখর হবে সবার দিন। রিদি প্রথমে অংশ নিতে রাজি হয়নি। তার মন তখনও ভারী। সে তো এধরনের জমজমাট অনুষ্ঠানের মানুষই নয়। কিন্তু আনিকা আর আহিয়ার লাগাতার জোরাজুরিতে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেল। ভোরের ঘুম ভাঙল আনিকার ফোনে। চোখ মেলেই বিরক্ত ভঙ্গিতে ফোন ধরল রিদি।ওদিকে আনিকা আর আহিয়ার উচ্ছাস ভরা একটাই জেদ
আজকে শাড়ি পরতেই হবে, সবাই শাড়ি পরবে তো তারাও শাড়ি পরে যাবে। রিদির মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। কারন সে তো শাড়ি পরতে পারে না। সেদিন আহিয়া আর আনিকা মিলে বহু কষ্টে পরিয়েছিল। তার উপর আবার শাড়ি পরে হাঁটতেও সমস্যা হয় রিদির। কিন্তু কে শোনে কার কথা! আনিকা একবার যদি বলে দেয়, মানে আর না করার সুযোগ নেই।
ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল রিদিতা। ভেজা চুলগুলো মেলে দিয়ে শুকোচ্ছে। কিন্তু মাথার ভেতরে একটা ভয় শাড়ি কীভাবে সামলাবে সে? হঠাৎ করেই তার উদ্ধারকর্তা ঈশানীকে ডাকতে শুরু করল। এরপর বোনের পিছু কতক্ষণ ঘুরঘুর করল, যেনো তাকে শাড়ি পরিয়ে দেয়। হাতের কাজ শেষ করে ঈশানী ব্যস্ত হাতে আলমারি থেকে বের করে আনল একখানা লাল জামদানি শাড়ি। সূর্যের রশ্মি শাড়ির উপর পড়তেই, শাড়ির ঝকঝকে লাল রঙে যেন সারা ঘর আলোকিত হয়ে উঠল। সে শাড়িটা রিদির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“এটা নে ধর। ব্লাউজ-পেটিকোট পরে শাড়ি পেঁচা, আমি আসতেছি।”
রিদি শাড়ি নিয়ে লাফাতে লাফাতে নিজের রুমে চলে গেল। কিন্তু কিছুই বুঝল না কীভাবে কোথা থেকে কী করতে হবে। শেষে একরাশ ধৈর্য হারিয়ে একেবারে নিজের শরীরের চারপাশে শাড়িটা ঘুরে ঘুরে জড়াল। এখন আর হাত-পা নাড়াতে পারছে না, যেন শাড়ি তাকে বেঁধে ফেলেছে। হাঁসফাঁস করতে করতে বিরক্ত কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল,
“বুবু! আমি নিশ্বাস নিতে পারতেছি না!”
ঈশানী ছুটে এসে দেখল, শাড়িটাকে রিদি সত্যিই যেন দড়ির মতো শরীরে পেঁচিয়ে ফেলেছে। সেই দৃশ্য দেখে ঈশানী হো হো করে হেসে উঠল। তার হাসির শব্দে রিদি আরও গাল ফুলিয়ে বসে রইল বিছানায়।
“তুই কী করলি এটা? আমি তোকে শাড়ি পেঁচাতে বলেছি, মানে এভাবে কাপড়ের রোল করতে বলিনি!”
রিদি হতভম্ব হয়ে বলল, “তাহলে কীভাবে পরব?”
“উঠ! দাঁড়া, আমি ঠিক করে দিচ্ছি।”
বহু কষ্টে উঠে দাঁড়াল রিদি। ঈশানী এবার ধীরে ধীরে শাড়িটা ঠিক করে পরাতে শুরু করল। আঁচল একদিকে নিয়ে কুচিগুলো হাতে তুলে নিল। কিন্তু সমস্যার শুরু হলো তখনই। যতবার ঈশানী কুচি গুঁজতে যাচ্ছে, ততবারই রিদির শরীরে হালকা শিরশির অনুভূতি হচ্ছে। সে হেসে কুঁকড়ে যাচ্ছে।
“আরে সুড়সুড়ি লাগছে! ছাড়ো আমার সুুড়সুড়ি লাগে!”
রিদির এমন কান্ডে ঈশানীর মুখে হাসি ফুটে উঠলো, তবু ঠোঁটে চেপে রাখলো হাসি। কয়েকবার চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হলো, বিরক্ত হয়ে বলল,
“নিজেরটা নিজে করে নে,ধর। এমন নড়াচড়া করলে শাড়ি পরানো যায়?”
এ বলে কুচিগুলো রিদির হাতে ধরিয়ে দিল। রিদি এবার ঠোঁট কামড়ে ধৈর্য ধরল। ধীরে ধীরে আলতো করে কুচিগুলো ঠিক করে গুঁজল কোমরে। অতঃপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিবিম্ব দেখল। এক পলকের জন্য থমকে গেল সে। লাল শাড়িতে যেন আলোর ছটা ছড়িয়ে পড়েছে তার গায়ে। শাড়ির সাথে মিশে গেছে তার উজ্জ্বল গায়ের রঙ, ভেসে উঠেছে অদ্ভুত এক পরিণত সৌন্দর্য। তবে মাথায় আঁচল না থাকায় হালকা অস্বস্তি হলো। সে দ্রুত একটা হিজাব তুলে নিয়ে মাথায় জড়িয়ে নিল। হিজাবের সাথে শাড়ির লাল রঙ অদ্ভুতভাবে মানিয়ে গেল। রিদি আরেকবার আয়নায় তাকাল। তার চোখে যেন অচেনা এক ঝিলিক। কিছুটা লজ্জা, কিছুটা অস্বস্তি, তবুও ভেতরে ভেতরে এক অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস। আজকের দিনটা হয়তো অন্যরকম কিছু লিখে রাখবে তার জীবনে।
★
এদিকে মীর হাউজে সকালের পরিবেশটা তখনো শান্ত, তবে ভেতরে ভেতরে এক অদ্ভুত টানটান উত্তেজনা ছড়িয়ে আছে। আহিয়া ও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, সে নিজেকে ঠিকঠাক সাজাতে ব্যস্ত। সে আজকের জন্য বিশেষভাবে শেয়ওলা রঙের একটা শাড়ি বেছে নিয়েছে। শেয়ওলা রঙের শাড়িতে তাকে অসম্ভব মোহনীয় লাগছে। তার লম্বা চুল পিঠ বেয়ে নেমে এসেছে খোলা ঝর্নার মতো। ছোট ছোট ধাপে শাড়ি সামলে নেমে আসছে সিঁড়ি বেয়ে, মুখে চাপা হাসি। শাড়ি একটু ঠিক করে নিতেই হঠাৎ গলায় উচ্চস্বরে ডাকে ওঠে সে,
“চাচি আম্মা! চাচি আম্মা! একবার এদিকে আসো না! আমার পিছনের পিনটা একটু লাগিয়ে দাও তো!”
পাশের ঘর থেকে হালিমা বেগম সাড়া দেন,
“আসছি, দাঁড়া!”
ডাইনিং টেবিলে তখন বসে ছিল আদনান। হাতে পানির গ্লাস নিয়ে অন্যমনস্কভাবে বসেছিল, কিন্তু আহিয়াকে সিঁড়ি বেয়ে নামতে দেখে যেন হঠাৎ থমকে গেল। বিস্ময়ে তার চোখের দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল আহিয়ার দিকে। সেই মুহূর্তে গ্লাস ঠোঁটে তুলতেই পানি গলায় ঢুকে গিয়ে বিষম খেলো। হঠাৎ কাঁশতে শুরু করলো। আহিয়া প্রথমে খেয়াল করেনি যে আদনান ওখানে বসে আছে। কিন্তু যখন তার চোখে চোখ পড়লো, তখন লজ্জায় বুক ধকধক করতে লাগলো। ঠোঁট শুকিয়ে এলো, আর মুখে অস্বস্তির ছাঁপ স্পষ্ট হয়ে উঠলো। দ্রুত দৃষ্টি নামিয়ে নিয়ে সে সরাসরি হালিমা বেগমের ঘরে চলে গেল। ভেতরে ঢুকেই সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। হালিমা বেগম এসে শাড়ির পিন ঠিক করে দিতে দিতে খেয়াল করলেন, আহিয়া বারবার উঁকি দিচ্ছে বাইরে। সে যেন নিশ্চিত হতে চাইছে আদনান এখনো বসে আছে কিনা। যখন দেখলো ডাইনিং টেবিল খালি, তার মুখে স্বস্তির ছাঁপ ফুটে উঠলো। তখনই ঘরে প্রবেশ করলেন আফরোজা শেখ। তিনি চশমাটা নামিয়ে মেয়ে’কে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলেন। ঠোঁটে হালকা হাসি ফুটে উঠলো।
“মাশাআল্লাহ! আমার মেয়েটা তো সত্যিই বড় হয়ে গেছে, হালিমা।”
হালিমা বেগমও হেসে উঠে বললেন,
“হ্যাঁ আপা, এখন তো শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।”
আহিয়ার চোখ দুটো মুহূর্তেই ভিজে এলো অভিমানে। ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
“চাচি আম্মা..!”
আফরোজা শেখ হাসিমুখেই যোগ করলেন,
“ঠিকই তো বলেছে তোমার চাচি আম্মা। সব মেয়েকেই একদিন না একদিন শশুড় বাড়িতে যেতে হবে।”
আহিয়া এবার রাগে গাল ফুলিয়ে বলে উঠলো,
“আমি যাব না! আমি এই বাড়িতেই থাকবো সারাজীবন।”
দুজনেই হেসে ফেললেন তার কথায়। কিন্তু আহিয়া তাতে আরো বেশি বিরক্ত হয়ে গেল। শাড়ি সামলাতে সামলাতে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। হাঁটতে হাঁটতে গজগজ করতে লাগলো,
“সবাই শুধু বিয়ে, বিয়ে… আর কিছু নেই না কি!”
বাইরে এসে গাড়ির দিকে পা বাড়াতেই তার বুকটা যেন কেঁপে উঠলো। সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল আদনান, দুই হাত পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছে। তার চোখে সেই পরিচিত শীতল দৃষ্টি। আহিয়া মুহূর্তেই থমকে দাঁড়ালো। মনে মনে ভাবলো,
নিশ্চয়ই আজকে সেদিনের জন্য বকবে আমাকে…।
সেদিনের ঘটনার পর থেকে তো সে যথেষ্ট এড়িয়ে গেছে আদনানকে। কিন্তু আজ আবার সরাসরি সামনে এসে পড়েছে। ঘুরে চলে যেতে যাবে, এরই মধ্যে গম্ভীর স্বরে ভেসে এলো আদনানের ডাক,
“আহি..!”
শরীর জমে গেল আহিয়ার। ধীরে ধীরে ঘুরে তাকাতেই দেখলো আদনান গাড়ির দরজা খুলে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে হলো, আদনান তাকে ভার্সিটি পৌঁছে দেবে। সে দ্বিধাগ্রস্ত পায়ে এগিয়ে আসে। একবারও চোখ তুলে তাকালো না। দ্রুত গাড়িতে উঠে বসল। পুরো পথ নিস্তব্ধতায় কেটে গেল। আহিয়ার বুক ধড়ফড় করছে, অথচ কিছু বলতে পারছে না। তার তো এমনি তেই সাহস নেই আদনানের সামনে কথা বলার, তার উপর আদনানও একটা শব্দ উচ্চারণ করলো না। এতে সে আরো বেশি গুটিয়ে গেল নিজের ভেতরে। কখন যে গাড়ি ভার্সিটির গেটে এসে থেমেছে, তা সে টেরই পায়নি। আদনান নিজে দরজা খুলে ধরলো। আহিয়া দ্রুত নেমে পড়লো, যেন বন্দি পাখি হঠাৎ মুক্তি পেল। হালকা মাথা নেড়ে বললো,
“আমি আসছি।”
দ্রুত হেঁটে যেতে যাবে, হঠাৎ পিছন থেকে আবার ভেসে এলো ডাক,
“আহি..!”
পদক্ষেপ থেমে গেল তার। এবার ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালো।
আদনান তার দিকে এগিয়ে এসে পকেট থেকে কিছু বের করলো। আহিয়া ভালো করে তাকাতেই দেখলো হাতে ধরা শুভ্র বেলি ফুলের ছোট্ট গাজরা। আদনান পিছন থেকে আলতো করে আহিয়ার চুলে গুঁজে দিতে চাইল। আহিয়া হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বুক ধড়ফড় করছে, কিন্তু এক বিন্দুও নড়তে পারছে না। গাজরা গুঁজে দিয়ে আদনান নিচু স্বরে কানে ফিসফিস করে বললো,
“তোকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে আজকে। শুধু এটার কমতি ছিলো।”
আহিয়ার কণ্ঠ কেঁপে উঠলো, “এটা… কোথায় পেলেন আপনি?”
আদনান মৃদু হেসে বললো,
“গাড়ি যখন জ্যামে দাঁড়িয়ে ছিলো। জানালা দিয়ে একজন বিক্রি করছিলো। তোর কথা মনে পড়লো তাই নিলাম। ভালো লাগেনি তোর? তাহলে খুলে দিই…”
আহিয়া দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বললো,
“না… পছন্দ হয়েছে, ধন্যবাদ। এটা দেয়ার জন্য।”
তার লজ্জা, অস্বস্তি আর অজানা এক কাঁপন একসাথে মিশে গেল মনে। আদনান এক মুহূর্ত স্থির চোখে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ তার দৃষ্টি কঠিন হয়ে এলো। গম্ভীর স্বরে বললো,
“সেদিন যেটা করেছিস সেটা আমি ভুলে যাইনি। প্রথম ভুল করেছিস, আর যেন না হয়। নইলে আমি নিজেকে সংযত রাখতে পারবো না আহি! মনে থাকবে?”
আহিয়ার ঠোঁট শুকিয়ে এলো। কণ্ঠ বের হলো না, শুধু মাথা নিচু করে হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে দিল। অর্থাৎ তার মনে থাকবে। আদনান চোখ সরাল না, কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“ঠিক আছে। এখন যা।”
আহিয়া বড় বড় পা ফেলে দ্রুত গেটের ভেতরে চলে গেল। বুক এখনো কাঁপছে, তবে সেটা শুধু ভয়ে নয় এক অদ্ভুত অজানা আশঙ্কায়, যা সে নিজেই বুঝতে পারলো না।
আদনান কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই। অতঃপর ধীরে গাড়িতে উঠে গাড়ি ঘুরিয়ে নিল নিজের কর্মস্থলের দিকে। আহিয়াকে আসতে দেখে আনিকা, নীলা, মিতু একসাথে এগিয়ে গেলো। তাদের চোখে তখনও হালকা উচ্ছ্বাস, কারণ আজ কলেজে প্রায় সবাই শাড়ি পরে সজ্জিত হয়ে এসেছে। আহিয়াকে কিছুটা নার্ভাস মনে হওয়ায় নীলা হালকা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে, তোর কি হয়েছে? এত অস্থির দেখাচ্ছে কেনো?”
আহিয়া মাথা নিচু করে, একটু দ্বিধার ভঙ্গিতে বললো,
“আরে, কিছু না।”
তারপর চারপাশে একবার তাকিয়ে নিচু স্বরে যোগ করলো,
“রিদি আসে নাই এখনো।”
এই কথা শুনে আনিকা খিলখিল করে হেসে বলে উঠে,
“রিদি রানি আজকে শাড়ি পরছে। এত তাড়াতাড়ি আসবে কিভাবে বল তো! কত বুঝিয়ে-সুজিয়ে রাজি করাতে হয়েছে শাড়ি পরতে জানিস?”
নীলা নিজের শাড়ির আঁচল টেনে ঠিক করতে করতে আহিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কিরে তুই ফুল পাইলি কই?”
আহিয়া হালকা লাজুকভাবে উত্তর দিলো,
“আসার পথে আদনান ভাই নিয়ে দিয়েছে।”
এই কথা শুনে আনিকা আর নীলা দু’জনেই চমকে উঠলো।
আনিকা হেসে বলে উঠলো,
“বাব্বাহ! তোর ভাইয়েরা আবার ফুলের মর্ম বোঝে নাকি? ইন্টারেস্টিং!”
আহিয়া একটু রাগী ভঙ্গিতে বললো,
“এভাবে বলিস কেনো? আমার ভাইয়েরা রাগি হতে পারে, কিন্তু খারাপ না।”
ওর কথা শুনে তিন বান্ধবী একসাথে হেসে উঠলো। ঠিক তখনই দূরে দেখা গেলো রিদিকে। লাল শাড়ির কুচি দু’হাতে সামলে, পা টেনে টেনে অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাঁটছে সে। তাকে দেখে মেয়েরা হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেয়ে গেলো।
রিদি রেগে কিছু বলতে যেতেই ওরা আবার হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেলো। আনিকা দৌড়ে গিয়ে তার শাড়ি ঠিক করে দিলো। রিদি শাড়ি সামলাতে সামলাতে হাঁপিয়ে গেছে। এবার আহিয়া এগিয়ে এসে বললো,
“দোস্ত, তুই হিজাব পরেছিস কেনো? শাড়ির সাথে হিজাব পরলে কেমন জানি লাগে।”
নীলা আর মিতু সায় দিলো আহিয়ার সাথে। রিদি গাল ফুলিয়ে উত্তর দিলো,
“আর আমার হিজাব না পরলে কেমন জানি লাগে। অস্বস্তি হয় কেমন।”
আহিয়া মুচকি হেসে তার কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“হিজাব খুলে দেখ, তোকে কত সুন্দর লাগছে জানিস? শাড়ির সাথে একেবারে অপূর্ব। শুধু এই হিজাবের জন্য খাপছাড়া লাগছে।”
আনিকা সায় দিয়ে যোগ করলো,
“একদম ঠিক বলছে আহিয়া। বিশেষ করে যখন লাল শাড়ি পরিস, তখন মারাত্মক লাগিস।”
আহিয়া আর আনিকা দু’জনে মিলে রিদির হিজাবটা আস্তে আস্তে খুলে দিলো। মুহূর্তেই কোমর ছোঁয়া চুল গুলো রেশমের মতো ঝরে পড়লো পিঠ জুড়ে। শাড়ির আঁচলটা গুছিয়ে দিয়ে আহিয়া মুগ্ধ হয়ে বললো,
“এখন একদম পারফেক্ট। যদি তোর ক্রাশ এখন তোকে দেখতো, নিশ্চিত হার্ট অ্যাটাক করে মাটিতে লুটিয়ে পড়তো।”
আনিকা চোখ টিপে রিদিকে খোঁচা দিলো,
“শুধু হার্ট অ্যাটাক না, হার্ট ব্লক হতো।”
রিদি রেগে গজগজ করতে লাগলো,
“চুপ কর তোরা! একদম বাজে কথা বলবি না।”
“আচ্ছা, হয়েছে। এবার চল, ক্লাসে যাই। এরপর আবার অডিটোরিয়ামে যেতে হবে।”
নীলার কথায় তারা সবাই এগিয়ে গেলো। রিদি এবার হঠাৎ নীলা আর আনিকার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোদেরও কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে।”
নীলা গাঢ় পেয়াজ রঙের শাড়িতে আর আনিকা সাদা-লাল পাড়ের শাড়িতে সত্যিই নজরকাড়া লাগছিলো। আনিকা একটু মন খারাপের ভঙ্গিতে বললো,
“সুন্দর লাগলেও বা কি! এই সৌন্দর্য দেখার জন্য তো একজন মানুষ নাই।”
তার কথায় সবাই মিলে হো হো করে হেসে উঠলো। কারণ ঘুরে ফিরে এসে আনিকা সেই তার একই জায়গায় থামল। এরপর নিজেদেরকে সামলে একসাথে তারা এগিয়ে গলো সামনের দিকে, কিন্তু ক্লাসের কাছাকাছি আসতেই তারা হঠাৎ থমকে গেলো। কি হচ্ছে বুঝতে পারলো না।
No comments: