শেষ ট্রেন
অধ্যায় – ১৬ : না বলা কথা
অফিস থেকে ফেরার পথে অনন্যা আর আয়ন প্রায়ই একসাথে হাঁটত।
কথার মাঝেই কখনো চুপ হয়ে যেত তারা।
আয়ন ভেতরে ভেতরে অনুভব করত, বলতে চায়—
“তুমি ছাড়া এই শহরটা অসম্পূর্ণ।”
কিন্তু সাহস পেত না।
অনন্যাও মাঝে মাঝে আয়নের দিকে তাকিয়ে থাকতে চাইত একটু বেশি সময় ধরে।
তবুও কিছু একটা তাকে আটকাত।
অধ্যায় – ১৭ : ছোট্ট অভিমান
একদিন অফিসে একটা প্রজেক্ট নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হলো।
আয়ন রাগ করে বলল,
“সবকিছু আমার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছো কেন?”
অনন্যা কিছু না বলে চুপ করে চলে গেল।
পুরো দিন তারা আর কথা বলল না।
সন্ধ্যায় আয়ন মেসেজ দিল—
“আমি বুঝতে পারিনি, তোমার মন খারাপ করার মতো কিছু বলেছি। সত্যিই দুঃখিত।”
অনন্যা উত্তর দিল—
“কিছু মনে করিনি। কিন্তু তুমি বুঝতে পারো না, তোমার একটা কথায় আমি কেমন ভেঙে পড়ি।”
আয়ন ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইল।
এমন উত্তর শুধু বন্ধুত্বের হয় না—এটা আরও গভীর কিছু।
অধ্যায় – ১৮ : প্রথম স্বীকারোক্তি
কয়েকদিন পর তারা আবার হাতিরঝিলে বসে।
আয়ন সাহস সঞ্চয় করে বলল,
“তুমি মনে আছে? সেই রাতে ট্রেন ছাড়ার আগে বলেছিলে—‘চাকরিটা তোমার হবেই।’
আজ আমি বলতে চাই—তুমি না থাকলে এই জীবনটাই অসম্পূর্ণ।
আমি তোমাকে শুধু বন্ধু ভেবে থামতে পারছি না।”
অনন্যা চুপ করে শুনছিল।
তারপর ধীরে ধীরে বলল,
“আমি ভেবেছিলাম তুমি কোনোদিন বলবে না। অথচ আমিও অনেক আগেই হার মেনেছি…”
দুজনের চোখ ভিজে উঠল।
সেই মুহূর্তে তারা জানল—
“শেষ ট্রেন” তাদের জীবনে শুধু দেখা হওয়ার নয়,
বরং ভালোবাসার নতুন যাত্রার প্রতীক।
অধ্যায় – ১৯ : একসাথে ভবিষ্যতের স্বপ্ন
প্রেম স্বীকারের পর দুজনের মধ্যে আর কোনো দূরত্ব রইল না।
ছুটি বা ফাঁকা সময় হলো একে অপরের জন্য।
একদিন আয়ন বলল—
“চলো, আগামী ছুটিতে ট্রেনে চড়ে শহর ঘুরি। শুধু আমাদের জন্য, আমরা যেখানে চাই সেখানে।
আমার মনে হয়, আমাদের জীবন যেন সেই ট্রেনের মতো একটানা যাত্রা।”
অনন্যা মুচকি হেসে বলল,
“হ্যাঁ, আর এবার আমরা একসাথে সব বাধা অতিক্রম করব।”
অধ্যায় – ২০ : পরিবার ও আশেপাশের স্বীকৃতি
একপর্যায়ে তারা পরিবারকে সম্পর্কের কথা জানাল।
প্রথমে কিছুটা অবাক হলেও, পরিবারের ভালোবাসা আর সমর্থন দুজনকে আরও দৃঢ় করে তুলল।
বন্ধুরা, সহকর্মীরা সবাই তাদের যাত্রায় আনন্দ পেতে শুরু করল।
আয়ন ভাবল—
“যে ট্রেন আমাদের প্রথম দেখার জন্য অপেক্ষা করছিল, এখন সেই ট্রেন আমাদের স্বপ্নের পথে চালিত করছে।”
অধ্যায় – ২১ : শেষ ট্রেন, নতুন সূচনা
শেষে তারা আবার কমলাপুর স্টেশনে দাঁড়াল।
নজরে নজর পড়ে ট্রেনের সিটি বাজায়।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল, তারপর ধীরে ধীরে ট্রেনে ওঠল।
আয়ন অনন্যার হাত ধরে বলল—
“আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। এবার আর কোনো স্টেশনেই বিদায় নেই।”
অনন্যা হেসে উত্তর দিল,
“সঠিক বলেছো। শেষ ট্রেন শুধু আমাদের জীবনের শেষ ছিল না,
বরং নতুন সূচনার প্রতীক।”
ট্রেন ধীরে ধীরে চলে গেল।
দুজনের চোখে একসাথে স্বপ্ন, হাত ধরাধরি, আর জীবনের নতুন পথচলা।
এভাবেই শেষ ট্রেন হয়ে গেল তাদের ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও জীবনের নতুন যাত্রার প্রতীক।
No comments: