বিছানায় শুয়ে আমাকে যদি সুখ দিতে পারিস তবেই তোকে বিয়ে করবো আমি। ”
হবু বরের মুখে এমন বেলাহাজ কথা শুনে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয় পূর্ণতা। লজ্জায় তার কান গরম হয়ে যাচ্ছে। মাটির থেকে চোখ ফিরিয়ে যে তাকাবে সেই সাহসটাও নেই। এমন চরিত্রের মানুষ তার জীবনসাথী হবে তা ভেবেই গা গুলিয়ে যাচ্ছে। পূর্নতার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে তন্ময় নামক কাপুরষটি আবারো কাছে আসতে থাকে। পূর্নতা বুজতে পারছে সামনে কি হবে, ভেবেই তার ভারী কান্না পাচ্ছে। দোতলার এদিকটায় কেউ নেই। চেচালেও কারো কানে আসবে না।
তন্ময় তার লালসা ভরা নজরে পূর্ণতার সারাদেহে এক চিরুনী অভিজান চালায়। সে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে-
— “ আরে মেয়ে ভয় পাচ্ছো কেনো? আমি বিসিএস দিয়েছি,বুঝোই তো বাজারে ডিমান্ড কেমন?নেহাত তোমার মামী আমার মাকে রাজি করিয়েছেন, তাই আজকে আসলাম। এখন একটু চেখে দেখতে হবে না? ”
পূর্ণতা কান চেপে ধরলো। চোখ বেয়ে নোনাজন গড়িয়ে পড়ছে। কাপা কাপা কন্ঠে বলে উঠে—
— “ দে....দেখুন আ..আমার কাছে আসবেন না খবরদার আমি কিন কিন্তু চিৎকার করবো। ”
লোকটি যেনো অনেক মজা পেলো। হো হো করে হেসে দিলো। শুনলেই গা পিত্তি জ্বলে উঠে। আস্তে আস্তে লোকটি এগোচ্ছে,আর পূর্ণতা পিছিয়ে যাচ্ছে। একটা সময় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তার। দিক বেদিক না পেয়ে জোড়ে জোড়ে চেচিয়ে উঠে ---
— “ মামী, মামী...মিথি আপু..সানা.. কে কোথায় আছো.....?” কারো কানেই যে আওয়াজ পৌছাবে না সেটা সে জানে। নিচে গায়ে হলুদের অনুসঠানের আয়োজন চলছে। সাউন্ড বক্সের শব্দ হাই করে দেয়া। এখন কি হবে? নিজের ইজ্জত এই লম্পট এর কাছে কিছুতেই বিলিয়ে দিবে না সে।
আবারো চেয়ায় সে more...
— “ আহা সোনা এমন কেনো করছো, ল্যাটস এঞ্জয়। আজ না হয় কালতো বিয়ে হবেই তাইনা। ”
বিয়ে!!! বেচে থাকলে তো পূর্ণতা বিয়ে করবে। আজ যদি কিছু হয় নিজে নিজের জান নিয়ে নিবে। সারাজীবন একজনকে চেয়েছে সে, কিন্তু পরিস্থিতি তাকে এমন এক কাঠগোড়ায় এনে দাঁড় করিয়েছ যে,নিজের ইচ্ছা আর মায়ের সম্মানের জন্য তাকে এই বিয়েতে রাজি হতে হয়েছে। পূর্ণতা আবারো আমতা-আমতা করে বলে-
— “ আমি তেমন মেয়ে নয় যেমন আপনি ভাবছেন,দয়া করে আমায় যেতে দিন প্লিজ। ” পূর্ণতায় কাঁপছে আর সকলকে ডাকছে।
কে শুনে কার কথা, লোকটি আরো অগ্রসর হতে থাকে। লালসা দিয়ে পূর্ণতার সারা দেহ সে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। এমন নরম কোমল মাংস আছে চেটেপুটে খাবে.. চোখে মুখে ঘৃণিত এক হাসি ফুটে উঠেছে --
— “ চেচাও সোনামণি চেচাও কে আসে দেখি তোমাকে বাঁচাতে। ”৷ বলেই পূর্ণতার আচলের টান দেয় সে। আর তখনি বাহির থেকে দরজাতে কেউ সজের আঘাত করে ভেঙে ফেলে দরজা। আদিত্য ভাইয়া!! হ্যাঁ উনি এসেছেন!! পূর্ণতা এক ছুটে আদিত্যের বুকে এসে জায়গা নাই। ভয়ে মেয়েটা পুরোপুরি কাঁপছে। পূর্ণতাকে এ লোকের সাথে এক ঘরে এমন অবস্থায় দেখে, আদিত্যের রাগ সর্বোচ্চ সীমায় চলে যায়। কোন কিছুর পরোয়া না করে পাশে থাকা ফ্লাওয়ার-ভাস দিয়ে লোকটির মাথায় সজোড়ে একটি আঘাত করে। লোকটি সেখানেই মাথা ধরে বসে পড়ে। এরপর পূর্ণতাকে নিজের বুক থেকে ঠেলে দিয়ে নিচে যাওয়ার জন্য ইশারা করে। more...
আদিত্য শার্টের হাতা গুছিয়ে, হাত ঘড়িটা খুলে। সজনে ঘুসি মেরে বসে লোকটার মুখে, একটা দুইটা তিনটা চারটা মারতেই থাকে মারতেই থাকে মারতেই থাকে! থাকে কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। ততক্ষণে সকলে উপরে চলে এসেছে। আদিত্যর মা অহনা বেগম ছেলেকে এমন রুপে দেখে ভয় পেয়ে গেছেন। শুধু তিনি নন সকলেরই একই অবস্থা। এবারের কমবেশি সকলে আদিত্যকে প্রচন্ড ভয় পায়। একরখা জেদি টাইপের ছেলে সে। পাশ থেকে সকলে বলছে লোকটিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।
যতক্ষণ আদিত্যের হাতে শক্তি ছিল ততক্ষণ সে মেরেই চলেছে। দিশেহারা হয়ে আদিত্যের বাবা আজমল চৌধুরী ছেলেকে থামান। দু তিনজন মিলেও আদিত্যকে ধরে রাখা যাচ্ছে না।আজমল চৌধুরী চেঁচিয়ে বললেন -
— “ হচ্ছেটা কি আদিত্য কি শুরু করেছো তুমি? তুমি কি জানো ছেলেটাকে? ”
দাঁতে দাঁত বিষে উত্তর দেয় আদিত্য — “ ইয়েস আই নো ভেরি ওয়েল ড্যাড, হি ইজ এ্যা বাস্টার্ড। ”
লোকটি মাটিতে বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। তার মা সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। নিজের ছেলেকে স্পর্শ করছেন না। ভয় যেন জমে গিয়েছেন। আদিত্য মুখে পানি ঝাপটা দিয়ে চিৎকার করে বলে -
— “ এই বাস্টার্ডের বাচ্চাকে যত দ্রুত সম্ভব চৌধুরী বাড়ির ৫০ হাত দূরে চলে আয়! যদি একে চোখের সামনে দেখতে পাই আল্লাহর কসম একেবারে কেটে কুকুরকে খাওয়াবো। more...
হল রুমে থমথম মুখে সকলে বসে আছে সকলে । অতিথিরা অনেকে আসা শুরু করেছেন। কারো মুখেএ “রা” অব্দি নেই। আজ চৌধুরী বাড়ির বড় মেয়ে মিথিলার গায়ে হলুদ। সেই সুবাদেই এইখানে আসা তাদের। পূর্ণতার মা মহুয়া বেগম এসেছেন ভাইপোর গায়ে হলুদে। কয়েকদিন আগেই পূর্ণতা এই বাসায় এসেছে বেড়াতে। তন্ময় (সেই অসভ্য) এর মা তাকে দেখে,অনেক পছন্দ হয়। তাই অহনা বেগম অর্থাৎ আদিত্যর মায়ের সাথে কথা বলেন পূর্ণতাকে ঘরের বউ করে দিবেন বলে। কথা মতো আজ তাদের পাকা আলাপ হয়। পূর্ণতার মা অহনা বেগম রাজি হয়ে যান বিনা বাক্যে.....
রাজি হওয়ারই তো কথা। বাপ মরা মেয়ে পূর্ণতা। অনেক ঝড় গিয়েছে তার উপরে। মা-মেয়ে অনেক ধকল সহ্য করেছেন। সকলের কথায় তাই আর এই বিয়েতে না করতে পারেননি। আদিত্য এখনো রক্তাক্ত হাত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বাবা মা ফুপু সহ সকলের সামনে। তন্ময়ের মা কিছু বল্ললেল-
— “ দেখুন আপা আমার ছেলের এমন কান্ড আমি লজ্জিত। এমন কুলাংার পুত্র পেটে ধরেছি ভেবেই আমার ঘেন্না হচ্ছে। আমি আমি আমার ছেলের হয়ে মাফ চাইছি। ছেলে আনার জোয়ান, বিয়ে পাকা হওয়ায় হয়তো নিজেকে আর কি...।”
মহিলা আর কিছু বলেল না। তিনি নিজেই তো জানতেন না এমন হবে। আদিত্য এবার নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না। মেয়েদের অসম্মান সে করে না। কিন্তু নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না।
— “ আপনি এখন কি বলতে চাইছেন? আপনার জানোয়ার পুত্রের সাথে পূর্ণতার বিয়ে দিবো আমরা? ”
মহিলাটি যেনো ঘাবড়ে গেলো। পূর্ণতা এখনো কাপছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো সে জানেনা। আজমল সাহেব কী করবেন বুজতে পারছেন না। ছেলেও তার সাথে নাড়াজ। আদিত্য এখন বাবার দিকে চায়। আজমল সাহেবে মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে। বিয়ে দিলেও ভাগ্নির ভবিষ্যতে দাগ পড়বে আর না পড়লেও। আর ওইদিকে আদিত্য দাঁড়িয়ে! কোথায় যাবেন উনি more...
— “ বাবা আদিত্য, তুই তো জানিস আমাদেত কি অবস্থা? ” মহুয়া বেগমের সরল কথায় আদিত্য নিজেকে সামলে নেয়।
— “দেখো ফুপি,আমি কিছু জানিনা.. এই বিয়ে আমি হতে দিবো না! আমি তো আগেই বলেছি। ”
ভূল বলেনি আদিত্য। বিয়ের কথা শুনে চিটাগং থেকে রওনা দেয় সে! ফোনে আগেই জানিয়ে দেয়,এই বিয়ে সে হতে দিবে না। তাই আজ আদিত্যর অনুপস্থিতিতে বিয়ের কথা পাকা হয়। আজমল সাহেব কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিত্য হাত উচিয়ে জানিয়ে দেয়
— “ পূর্ণতা আমার বাচ্চার মা! আশা করি বাবা তুমি তোমার বংশের বাহককে অন্য কোথায় বিয়ে দেবে না! ”
পূর্ণতা এক শোক থেকে বের হতে না হতেই আরেক শোকে জর্জরিত হয়ে গেলো। এই অপবাদ সে কি করে মেনে নিবে?? অন্দরমহলে বসে থাকা সকলের মাথায় যেনাও বাজ ভেংগে পড়লো। চৌধুরী বাড়ির ছেলে এমন এক কান্ড ঘটাবে লোকে জানলে মুখে থু মাড়বে!
— “ এই পূর্ণ চল! ”
আদিত্যর কথায় পূর্ণতা ঘাবড়ে যায়। উত্তর দেয় -
— “ ক..কোথায়? ”
আদিত্য বাকা হাসে.. পূর্ণতাকে পাজা কোলে তুলে নিজের রুমের দিকে হাটা দেয়।
আর কানে কানে বলে- “ বাসর সাড়তে জান”
কানে কানে বললেও কথাটা সকলের জন্য উচ্চস্বরেই বলেছে। সকলের সামনে আফজাল সাহেবের কান কাটা গেলো। এমন ছেলে যে তার সেটা তিনি ভাবতেই পারেনা। মহুয়া আর অহনা বেগম পেছন থেকে দৌড়ে গেলেন। কি বলেছে সে? এখন একা ঘরে নিয়ে যাচ্ছে কেন পূর্ণতাকে?
পূর্ণতা ছাড়াপাওয়ার জন্য যারপরনাই চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে পুরুষের শক্তির সাথে তার এই নরম শরীর পেরে উঠছে না। মোচড়া মোচড়ির এক পর্যায়ে আদিত্য দিলো এক ধমক!
— “ চুপ কর! কোল থেকে ফেলে দিবো এক্কেবারে! ”
পূর্ণতা চুপসে গেলো। ছোট থেকেই জমের মতন ভয় পায় আদিত্যকে। আদিত্য রুমে ঢুকেই ডানপাশে বেডে কাত করে ফেলে দেয় পূর্ণতাকে। মা-ফুপি দরজার বাহিরে আছেন। কড়া নাড়িয়ে যাচ্ছেন। অহনা বেগম আর মহুয়া বেগম ভেতরে ভেতরে ভয়ে মরে যাচ্ছেন।
— “ আদিত্য ভাই,আপনি নিচে কি বলেছেন এইসব?”
আদিত্য এবার বিরক্ত হলো। যার জন্য করে চুরি সেই বলে চোর। আদিত্য হয়েছে এই অবস্থা। বিয়ে ভাঙার জন্য সকলের সামনে এত বড় অপবাদ আমরা নিজের উপরে তাও এই মেয়ে এসব কথা বলেই যাচ্ছে। পূর্ণতা আবার জিজ্ঞেস করে
— “ কথা বলছেন না কেন ভাই? ”
আদিত্য এবার তেড়ে যায় ওর মুখের সামনে। দুজনের মাঝের দূরত্ব নেই বললেই চলে। আদিত্যের গরম নিঃশ্বাস আজকে করছে পূর্ণতার মুখমণ্ডল জুড়ে। সারা শরীরে নিষিদ্ধ শিহরন নাচানাচি করছে। আদিত্য আর একটু কাছে গেল। ঠোঁট ছুয়ে শুয়ে ভাব ঠিক এই অবস্থাতেই বলল -
— “ কেন শুনিস নি? বাচ্চার মা বানাবো more...
No comments: