Header Ads Widget

test

তোমার_প্রাপ্তিতে_আমার_সমাপ্তি


 

তোমার_প্রাপ্তিতে_আমার_সমাপ্তি

লেখনীতে:মাইশা_চৌধুরী
|৪|
মাহিন আমার দিকে এগিয়ে আসছে আমি পিছিয়ে গিয়ে দেওয়ালের সাথে একদম লেগে গিয়েছি।মাহিন আমার একদম সামনে এসে দাড়িয়ে এক হাত উপরে তুলে বলল,,
"তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো মেহের?"
"না।আমি রুমে যাবো। দরজাটা খুলে দিন।"
"একটু থাকবে আমার সাথে?"
মাহিনের এহেন কথায় আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না।আমার এই মুহুর্তে মাহিনকে সত্যিই ভয় করছে।আমি মাহিনকে বললাম,,
"একটু সরুন আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।"
মাহিন সরে দাড়ালো।আমাকে বলল,,
"আসো বেলকনিতে বসি।"
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে ও চলে গেলো বেলকনিতে। আমিও গেলাম।মাহিন আমাকে ইশারায় ওর পাশে বসতে বলল।
আমি বসলাম।মাহিন আমার কোলে মাথা রেখ শুয়ে পড়লো।আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
"মেহের আমি যদি তোমাকে বলি আজ সারারাত তুমি এভাবে বসে থাকবে আর আমার কথা শুনবে তুমি কি রাজি হবে আমার কথায়?"
"আপনি আমার সাথে কথা বলবেন!"
"হুম।"
মাহিন আমাকে এমন কথা বলবে কখনো ভাবিনি।মাহিন তো আমাকে সবসময় ব্যবহারই করে গেছে।মাহিন কি তবে আবারো আমাকে ব্যবহার করছে? আমার ভাবনা গুলো ইদানীং আমাকে ভিষণ পিরা দেয়।
এতো কষ্ট কেনো হয় আমার?কারণে অকারনে আমার কষ্ট হয়।
আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে মাহিন বলল,,
"কি ভাবছো মেহের?"
"নিধির রিপ্লেসমেন্ট ভেবেছেন আমাকে?আমি কারোর যায়গায় থাকতে রাজি নই।"
কথাটা হয়তো মাহিনের পছন্দ হলোনা।উঠে বসে দুহাতে আমার গাল চেপে ধরে বলল,,
"আমি রিপ্লেসমেন্ট আনিনি।আর না আনবো।কাক ময়ূরপুচ্ছ লাগালেই ময়ূর হয়না।তুই চাইলেই নিধি হতে পারবিনা।তাই এইসব অহেতুক কথা বলিসনা।"
"ছাড়ুন আমাকে।আমি ভুল কিছু বলিনি।যে আপনি আমাকে নিজের থেকে দুরুত্ব বজায় রাখতে বলেছিলেন আজ সেই আপনি আমার কাছে আসছেন। এর মানে কি দাড়ায়?"
"চুপ।আমি তোর কাছে কৈফিয়ত দিবো না।একবছরের কন্টাক্টটে আমার সব কথা শুনে চলবি তুই। আমার উপর কোনো কথা বলতে পারবিনা।"
বলেই মাহিন আমাকে ছেড়ে উঠে দাড়ালো।আমার রাগ হলো কিন্তু আমি নিরুপায়। কথা না বাড়িয়ে আমি বেলকনিতে থেকে উঠে এলাম।রুমে এসে দরজা খোলার বৃথা চেষ্টা করতেই মাহিন এসে বলল,,
"কাঁচ গুলো পরিষ্কার করো।"
"দরজাটা খুলে দিন।আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি।"
মাহিন দরজার লক খুলে দিলো। আমি রুমটা পরিষ্কার করে দিয়ে নিজের রুমে এসে বসলাম।বড্ড ক্লান্ত লাগছে।ইচ্ছে করছেনা দরজা লক করতে।তাই দরজা খোলা রেখেই ঘুমিয়ে পড়ি।
মাঝ রাতে পেটের উপর ভারি কিছু টের পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় আমার।তাকিয়ে দেখি মাহিনকে!
"আপনি! "
"হুসস।আমি আমার বেবির সাথে কথা বলতে এসেছি।তুমি ঘুমাও, আমাদের ডিস্টার্ব করোনা।"
মাহিন ঘুমাতে বললেও আমার ঘুম উড়ে গিয়েছে,অদ্ভুত লাগছে।তবে আমি কিছু বলতে পারবোনা।শর্ত অনুযায়ী এই একবছরে মাহিরের প্রতিটা কথা আমাকে মেনে চলতে হবে।
কথাটা ভেবেই বুক চিরে এক দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো।মাহিন বিরবির করে অনেক কথা বলল।যা কিছুটা আমি বুঝে আর কিছুটা বুঝিনি।কথা বলতে বলতে মাহিন ঘুমিয়ে পড়ে।আমি মাহিনকে বালিশে শুইয়ে দেই।এরপর নিচে গিয়ে শুয়ে পড়ি।
সকাল ৯টায় আমার ঘুম ভাঙে মাহিনের ফোনের আওয়াজে।
মাহিনও উঠে পড়ে শব্দে।আমাকে বলে,,
"ফোনটা নিয়ে এসো তো।"
আমি গিয়ে ফোনটা এনে দেই।মাহিন কল রিসিভ করেই নিজের রুমে চলে যায়।আমি বুঝতে পারি নিধি কল করেছে।
আমি বিছানা গুছিয়ে সব কাজ সেরে নেই।দুপুর একটা বাজে আমি মাহিনকে গিয়ে বলি,,
"আমি মার সাথে দেখা করতে যাবো।"
মাহিন আজ হসপিটাল যায়নি।রুমে বসেই কাজ করছিলো।আমার কথাটা শুনে কড়া গলায় বলল,,
"সামনের কয়েকমাসে তুমি মাত্র দুই দিন দেখা করতে যাবে আন্টির সাথে।আমি চাইনা বাহিরের কেউ তোমাকে দেখুক এই অবস্থায়।"
"কিন্তু আমি না গেলে মার খেয়াল কে রাখবে? আর অপারেশন কবে হবে?"
"অপারেশন সেদিন হবে সেদিন আমার বেবি এই দুনিয়াতে আসবে।"
"কিহ! আপনি তো বলেছিলেন সমনের মাসেই অপারেশন করবেন তাহলে এখন কথা ঘোরাচ্ছেন কেনো?? দেখুন মাহিন আমি কিন্তু কথার খেলাফত মানবো না।"
মাহিন বসা থেকে উঠে দাড়ালো।শার্ট চেঞ্জ করতে করতে বলল,,
"আমি জানি আন্টির জন্য কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ।আমি যখন বলছি অপারেশন নয়মাস পরে হবে তখন নয়মাস পরেই হবে।ক্লিয়ার?"
"না।আপনি এমন কেনো করছেন মাহিন? নয় মাসে তো মা অনেক কষ্ট পাবে।প্লিজ মাহিন এমনটা করবেন না।আপনি অপারেশন করুন,মা সুস্থ হয়ে যাক। আমি কথা দিচ্ছি আমি আপনার বেবিকে সুস্থ ভাবে আপনার হাতে তুলে দিব।"
"সে তুমি এমনিতেও আমার বেবির খেয়াল রাখবে।নাহলে তুমি আর তোমার মা দুজনই শেষ।"
"মাহিন!"
"আমি ভালো নই মেহের।এটা শুরুতেই তুমি বুঝেছো।তাই আমার কাছে ভালো কিছু আশা করোনা।যেভাবে আছো সেভাবেই থাকো।আন্টির দিকটা আমি সামলাবো বলেছি যখন তখন নিশ্চিত থাকো।"
কথাগুলো বলেই মাহিন বেরিয়ে গেলো।যেতে যেতে বলে গেলো,,
"আমার ফিরতে রাত হবে।দরজা লক করে দিও।"
আমার কানে সে কথা গেলোনা।আমার এই মুহুর্তে ইচ্ছে করছে মাহিনকে খু ন করতে।আমার অনুভূতি নিয়ে ও খেলছে।আমাকে হসপিটাল যেতেও বারণ করে দিলো।এভবে ঘর বন্দি হয়ে বাঁচা যায়?হাহ!
________________________________________
২ মাস পর,,
সন্ধ্যা নামছে ধরনীর বুকে।সারাদিন একা একা কাটালেও এখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।কারো সাথে কথা বলতে পারলে একটু ভাল্লাগতো।মাহিনের ফিরতে রাত এগারোটা, বারোটা বেজে যায়।আর ও থাকলেও বা কি আমার সাথে তো আর কথা বলেনা প্রয়োজন ছাড়া।
এভাবে কি করে সুস্থ সন্তান জন্ম দিব? নিজে যেখানে একটু কথা বলার জন্য হাহাকার করছি, প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়ার জন্য ছটফট করছি সেখানে এক ছোট্ট প্রাণকে কি করে সুস্থ রাখবো আমি?
কথাগুলো বড্ড ভাবাচ্ছে আমাকে।আমার ভাবনার মাঝেই কলিং বেল বাজলো।
ধীর পায়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি নাইম দাড়ানো।
নাইম ভেতরে এসে দরজা লক করে দিলো।আমি জিজ্ঞেস করলাম,,
"তুমি এখানে কেনো? চলে যাও নাইম, মাহিন দেখলে ঝামেলা করবে।"
"করুক।আমি তোমার জন্য এসেছি মেহের।তুমি আমার সাথে চলো ।"
"কোথায় যাবো?"
"আমার বাসায় চলো।মেহের আমার বাসায় আমি,শীলা,আমাদের পাঁচ বছরের মেয়ে স্নেহা রয়েছে তুমি ওখানে ভালো থাকবে।এভাবে একা একা থাকলে তুমি বাচঁবেনা মেহের।এটা একটা অসুস্থ পরিবেশ।"
"আমার কিছু করার নেই।আমি চুক্তিবদ্ধ।"
"মেহের নিজে যদি না বাঁচো তখন চুক্তি দিয়ে কি করবে? চলো আমার সাথে।"
"তুমি বারাবারি করছো নাইম।মাহিন জানলে ভিষণ রেগে যাবে। তুমি চলে যাও।"
"আচ্ছা একেবারে না গেলে কয়েক ঘন্টার জন্য অনন্ত চলো।স্নেহা তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে।"
স্নেহার কথা শুনে আমার মন নরম হলো।প্রথম যেদিন আমি স্নেহা কে দেখি ও নিজের ছোট ছোট হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো। মেয়েটার মুখ বড্ড মায়া ভরা।আমি ভাবলাম মাহিন তো রাত এগারোটা বারোটার আগে আসবেনা।আমি বরং দেখা করে আসি স্নেহার সাথে।
আমি রাজি হলাম নাইমের সাথে যাওয়ার জন্য।বললাম,,
"আমি নয়টার মধ্যে চলে আসবো।"
নাইম রাজি হলো।আমি ওর সাথে গেলাম। বাসায় পৌঁছাতে স্নেহা এবং ওর মা শীলা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।শীলা মেয়েটা বড্ড মিশুক।মাহিনের বাবা মা দুই ছেলের বিয়ে দিয়ে দুই ছেলের সংসার আালদা করে দিয়েছেন।
নাইম পেশায় ইন্জিনিয়ার।শীলা হাউজওয়াইফ। পাঁচ বছরের স্নেহাকে নিয়ে ছোট্ট এক সুখের সংসার ওদের।
আমার ভিষণ ভালো লাগে ওদের পরিবারটাকে।প্রথম যখন আমি মাহিনের সাথে ওর ফ্ল্যাটে উঠি তখন একবার নাইম ওর পরিবার নিয়ে গিয়েছিলো দাওয়াতে।নিধি সেদিনও সুটে ছিলো।আমি সব রান্না করেছিলাম। নাইমের কাছে সেদিন আমাকে হেল্পিং হ্যান্ড পরিচয় দিয়েছিলো মাহিন।
কথাটা মনে হতেই এক বিষাদ কাজ করে মনে।
আজকের সন্ধ্যাটা স্নেহা এবং শীলার সাথে গল্প করে বেশ ভালো সময় কেটেছে।শীলা আমাকে বলেছে মাঝে মাঝেই আসতে গল্প করার জন্য। শীলাকে সবটাই বলেছে নাইম।
গল্প করতে করতে কখন যেনো দশটা বেজে যায়।আমি নাইমকে বলি আমাকে বাসায় দিয়ে আসতে।
রাত সাড়ে দশটায় নাইম আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।
আমি লিফটের উঠতেই চমকে যাই কেননা আমার মুখোমুখি মাহিন দাড়িয়ে আছে।মাহিন আমাকে দেখে ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করে,,
"কোথায় গিয়েছিলে?"
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা।মাহিন নাইমকে পছন্দ করেনা।এখন ওকে নাইমের কথা বলা মানেই ঝামেলা বাঁধবে।তাই চুপ করে থাকাটাতেই উত্তম মনে করলাম।
এরই মাঝে লিফট আটতলায় পৌঁছে গেলো।
লিফট থেকে আমাকে টেনে নিয়ে বাসায় ঢুকলো মাহিন।হুংকার ছেড়ে জিজ্ঞেস করলো,,
"আমাকে না বলে বাহিরে যাওয়ার সাহস কি করে হয় তোমার? "
আমি নিশ্চুপ। তা দেখে মাহিন আবারো বলল,,
"কার সাথে বাহিরে গিয়েছিলে মেহের?"
"এএকা।"
"মিথ্যা। আমাকে মিথ্যা বলিস তুই। কোথায় গিয়েছিলি বল?"
কথাটা মাহিন আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করল।এবার আমি সত্য কথা বলে দিলাম।এতে মাহিনের রাগ বেড়ে গেলো।চর বসালো আমার গালে।ছিটকে নিচে পড়ে গেলাম আমি।তাতে মাহিনের খেয়াল নেই।ও আমার চুলের মুঠি ধরে বলল,,
"তুই কি ইচ্ছে করে আমার সাথে এমন করছিস? নাকি তুই অবুঝ? আমি না করেছিলাম নাইমের সাথে কথা বলতে কেনো শুনিস না।"
"ছাড়ুন আমাকে।"
"তুই নাইমের বাসায় গিয়ে আমাদের চুক্তি সম্পর্কে কথা বলেছিস,যার ভিডিও করেছে নাইম। এবার এটা যদি ও পুলিশে দেয় অথবা আমার বাবা মাকে দেয় ভাবতে পারছিস কি হবে?"
"কিহ!"
আমি ভিষণ ভাবে অবাক হলাম ভিডিওর কথাটা শুনে।শীলা আপু কথায় কথায় আমার শারীরিক অবস্থা নিয়ে কিছু পরামর্শ দিচ্ছিলো।তখনই কথা উঠলো সারোগেসি নিয়ে। এরপরই শীলা আপু জানালো সে সব জানে তখন আমিও কিছু কথা বলি।এগুলো যে ভিডিও করতে পারে ওরা আমার ধারনাতেও ছিলোনা।
মাহিন আমাকে চুপ থাকতে দেখে আমাকে বলল,,
"এখন আমাকে বল তোকে কি করা উচিত।একে তো চুক্তির বাহিরে গিয়েছিস, আমাকে না বলে বাহিরে গিয়ে অন্যদের হাতে প্রমাণ দিয়ে এসেছিস । এখন আবার নাইম আমাকে কল করে হুমকি দিচ্ছে যদি আমি তোকে ছেড়ে না দেই তাহলে ও ভিডিওটা বাবা মাকে এবং পুলিশের কাছে দিবে।"
"আমি বুঝতে পারিনি মাহিন এমন কিছু হবে।"
আমার কোনো কথাই মাহিন শোনার মতো অবস্থায় নেই।ও আমাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়িয়ে কাউকে কল করলো।আমি কোনোরকম উঠে দাড়িয়ে বললাম,,
"মাহিন শান্ত হোন।আমি বুঝিনি কি করে সবটা হয়ে গেলো।আমি দুঃখিত মাহিন।"
"এই চুপ।এতো বড় একটা ব্লান্ডার করে সরি বলবিনা।"
আমার মনে ভয় হতে লাগলো।মাহিন যদি এখন মায়ের অপারেশন না করে? বা মায়ের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়? কি করবো আমি? একদিনের হসপিটাল বিল আশি হাজার টাকা। কোথায় পাবো আমি এতো টাকা?
আমার মাথা হ্যাঙ্গ করতে লাগলো।তখনই মাহিন এসে আমার সামনে একটা পেপার রাখলো।আমি জিজ্ঞেস করলাম,,
"কিসের পেপার এটা?"
" রেজিস্ট্রি পেপার।সাইন করো।"
হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি।কল্পনারও বাহিরে ঘটা এই ঘটনা কি করে সামলাবো আমি? মাহিন কি পাগল হয়ে গেলো?
"আপনি এসব কি করছেন? নিধি জানে এসব?"
"জানানোর সময় নেই।তুই সাইন কর।যেই ব্লান্ডার করেছিস সেটা সমলানোর জন্য এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।"
"মাহিন।"
"চুপ।"
কলম হাতে চুপচাপ দাড়িয়ে আছি আমি।মাথা কাজ করছেনা।মাহিনের মতো একজনকে কিছুতেই আমি বিয়ে করতে পারবোনা more...
Like
Comment
Share

No comments:

720

Powered by Blogger.