[ অতিরিক্ত রোমান্টিক এলার্ট। যারা অতিরিক্ত রোমান্টিক গল্প পছন্দ করেন শুধু তারাই পড়বেন
]

স্যুট শেষ করে প্রায় ঘন্টা দেড় হবে রিয়া তার অফিসে এসেছে। সে নিজের কেবিনে বসে নেক্সট স্যুটের ভ্যানুগুলো চেক করছিলো এমন সময় দড়াম করে দরজা খুলে প্রবেশ করলো কাইফ।
কাইফ'কে দেখে মুখে হাসি ফুটলো রিয়া'র। সে জানতো কাইফ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবে নাহ। রিয়া হাসিমুখে উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু তার সেই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় নাহ।
কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই কাইফ তার গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে রিয়া'র দুই গালে পরপর চারটা থাপ্পড় মারে। রিয়া ছিটকে পরে তার চেয়ারের উপর। রাগে কাঁপতে কাঁপতে কাইফ তার চুলের মুঠি ধরে আবারো দাঁড় করায়।
রিয়া'র ফর্সা গালে কাইফের হাতের পাঁচ আঙ্গুলের দাগ স্পষ্ট। তার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে কিন্তু কাইফ সেদিকে বিন্দু পরিমানে পাত্তা না দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলে,
' How dare you ? তোর সাহস কি করে হয় এমন নোংরা ছবি আমাকে পাঠানোর হুম ' ?
রিয়া জলভরা চোখে তাকিয়ে আছে কাইফের দিকে। রাগে কাইফের চোখগুলো লাল বর্ন ধারণ করেছে। এই মুহূর্তে তাকে দেখতে একদম হিংস্র লাগছে। রিয়া ঢোক গিলে তাকে স্পর্শ করতে চায় কিন্তু কাইফ ধাক্কা মেরে রিয়া'কে সরিয়ে দিয়ে বলে,
' Don't cross your limit Riya '
একটু থেমে বার কয়েক নিশ্বাস ফেলে কাইফ আবার বলে,
' এসবের মানে কি হ্যা... ? প্রথমেই হুট করে আমার জন্য নিজ হাতে কফি বানিয়ে নিয়ে যাওয়া, তারপর রাত বিরাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমাকে স্টোক করা, আর এখন এসব নোংরা ছবি পাঠানো... এসবের আসল কারনটা কি হ্যা... ?কিছু বলছিনা দেখে কি সাহস বেড়ে যাচ্ছে দিনদিন.. '?
' কেনো তুই জানিস না কি চাই আমি ?কেনো আমি এমন করছি '?
অভিমানী কন্ঠে বলে উঠলো রিয়া। কাইফ ভ্রু গুটিয়ে নেয়,
' নাহ জানিনা.... আমার কি আসলেই জানার কথা '?
রিয়া ফুঁপিয়ে উঠলো। সে কাইফের কাছে এসে ভাড়ি গলায় বললো,
' তোকে অন্যকারো সাথে দেখলে আমার সহ্য হয়না সেটা তুই জানিস নাহ ? বুঝিস নাহ ?আমার ভেতরটা পুড়ে কাইফ। তোর জন্য আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি! কি করছি না করছি আমি নিজেই জানিনা। তুই.... তুই কিভাবে অন্য নারী কে নিজের বুকে জায়গা দিলি কাইফ ? কিভাবে তাকে স্পর্শ করলি '?
কাইফ এক দৃষ্টিতে রিয়া'র কান্নাভেজা মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বাঁকা হেসে বললো,
' যেভাবে তুই করেছিলি '!
রিয়া স্তব্ধ হয়ে যায়। তার মুখে কোনো কথা নেই৷ নিজের হাত শক্ত মুষ্টিবদ্ধ করে মাথা নিচু করে ফেলে।
কাইফ হাসে৷ সে রিয়া'র থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে চোখে চোখ রেখে বলে,
' যেভাবে তুই পেরেছিস। সেভাবেই আমি পারছি।
তুই যেমন তোর ক্যারিয়ারের কথা ভেবে আমাকে ধোঁয়াশায় রেখে ডিরেক্টর, প্রডিউসারের সাথে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত অবাধ মেলামেশা করেছিস। তোর তখন যেমন আমার কথা মনে পড়তো না৷ আমার'ও ঠিক তোর কথা মনে পড়েনা এখন৷ কিন্তু আমাদের মাঝে বিশাল এক পার্থক্য আছে সেটা কিহ জানিস '?
রিয়া কিছু বলছেনা। ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে শুধু। কাইফ ফের বলে,
' তুই যাদের সাথে মেলামেশা করেছিস তারা তোর জন্য পরপুরুষ ছিলো কিন্তু আমি যাকে বুকে টেনে নিয়েছি, স্পর্শ করেছি সে আমার বিয়ে করা হালাল বউ.... তাকে দেওয়া আমার প্রতিটা স্পর্শ পবিত্র কিন্তু তোর মাঝে কি আদ্য কোনো পবিত্রতা আছে ? আর তাছাড়া তখন তুই আমার সাথে কমিটেড ছিলি কিন্তু আমি এখন তোর সাথে কমিটেড নই! এটাই আমাদের মাঝে পার্থক্য '
কাইফের তাচ্ছিল্যের ভার সইতে পারলো নাহ রিয়া। সে মাটিতে বসে কাইফের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
' আমাকে ক্ষমা করে দে কাইফ৷ আমার ভূল হয়েছে। তুই তো বলেছিলি আমার সকল ভূল ক্ষমা করে দিবি তাহলে কেনো আমাকে একটা সুযোগ না দিয়ে অন্য কাউকে নিজের জীবনে জড়িয়ে নিলি '?
' ভূল আর পাপের মধ্যে বিরাট পার্থক্য আছে রিয়া। আমি তো কখনো তোর ক্যারিয়ারে'র পথে কোনো ধরনের বাঁধা হয়ে দাঁড়াইনি। তুই মডেলিং করতে চেয়েছিস। আমার পছন্দ ছিলো না তবুও তোকে করতে দিয়েছি, কারণ তুই চাইতি। বলেছিস আমাদের সম্পর্কের কথা হাইড রাখতে, আমি তাতেও কোনো প্রশ্ন তুলিনি৷ আউটডোরে যেতে চেয়েছিস, যেতে দিয়েছি। ফ্রীডম চেয়েছিস, দিয়েছি। যেভাবে তুই চেয়েছিস সেভাবেই তোকে করতে দিয়েছি আমি কিন্তু বিনিময়ে শুধু একটু Loyalty চেয়েছিলাম।
আর তুই সেটাই দিতে পারিসনি আমাকে ৷ হাহ'!
রিয়া'র থেকে ঝাড়া মেরে নিজের পা ছাড়িয়ে নিয়ে কাইফ এবার শক্ত কন্ঠে বললো,
' পাগলামি বন্ধ কর রিয়া। আর কখনো তুই আমার ফ্ল্যাটে যাবি না। কফি তো দুর এক গ্লাস পানি'র ছুতায় ও যেনো আমি তোকে আমার ফ্ল্যাট বা তার আশেপাশে না দেখি৷
যদি আর কখনো তোকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমাকে স্টোক করতে দেখি তাহলে ট্রাস্ট মি রিয়া তোকে আমি এমন দৃশ্যের মুখোমুখি করবো যা তোর কল্পনাতীত।
আর আজ যা করেছিস তা পাগলামি না নষ্টামি৷ তুই নষ্ট তা জানতাম কিন্তু তাই বলে এতোটা ?হাহ! নেক্সট টাইম এমন কিছু করার দুঃসাহস দেখালে তোর কলিজা টেনে ছিঁড়ে ছোট ছোট পিস করে কুকুর বেড়াল কে খাওয়াবো আমি! বি কেয়ারফুল রিয়া... '
রিয়া মাটিতে বসে কাদঁছে কিন্তু তাকে একচুল পরিমাণ ও সিমপ্যাথি দেখালো নাহ কাইফ। নিজের কথা শেষ করেই মাথার চুল টেনে ঠিক করে নিলো। দরজা খুলে বেরোতে নিবে সে তার আগেই রিয়া কান্নাভেজা কন্ঠে বলে উঠলো,
' আমি তোকে ভালোবাসি কাইফ। সব ছেড়ে দিবো তোর জন্য এবারের মতো মাফ করে দে '
কাইফের মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি। সে পেছন ফিরে বলল,
' Ops! Sorry Sweetheart... But Time is over ... '
' ওই মেয়েটা কে ছেড়ে দে... তারপর আমাকে '
' হুশশশ '!
ঠোঁটের কাছে আঙ্গুল নিয়ে চুপ থাকার ইশারা করে কাইফ....
অতঃপর চোখ দিয়ে শাসিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
' No more Word '!
আর এক মুহূর্ত সেখানে না দাঁড়িয়ে বড় বড় কদম ফেলে অফিস ছেড়ে বেরিয়ে গেলো কাইফ।
কাইফ বেরিয়ে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়লো রিয়া। নিজের মাথার চুল টেনে ধরলো সে। কাঁপতে থাকা ঠোঁট জোড়া নাড়িয়ে বিরবির করে বললো,
' তোকে আমার হতেই হবে কাইফ! আমি তোকে নিজের করেই ছাড়বো '
___________________
গাড়িতে বসে ড্রাইভার কে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে কাইফ। শার্টের দু'টো বাটন অপেন করে সিটে গা এলিয়ে দেয় সে। চোখ বন্ধ করতেই ভেসে উঠলো কিছু তিক্ত অতীত।
.
রিয়া আর কাইফ সমবয়সী কাজিন। চাচাতো ভাই-বোন তারা। ছোট থেকেই তারা একসাথে একই বাসায় বড় হয়েছে। লেখাপড়া, খেলাধুলা, পথচলা সবই একসাথে। তাই তাদের বন্ডিংটা ও ছিলো চোখে পড়ার মতো।
কাইফ ছোট বেলায় প্রচুর চঞ্চল স্বভাবের ছিলো সেই সাথে ছিলো ভিষণ রাগী। কিন্তু হঠাৎ তার বাবা-মা তাকে একা করে চলে যাওয়ায় সে অনেকটা ভেঙে পরে। সময়ের সাথেসাথে হারিয়ে যায় চঞ্চলতা কিন্তু রাগ কমেনি, উল্টো দিনদিন বেড়েই গেছে।
কাইফের রাগী স্বভাব আর গাম্ভীর্যতা'র কারনে তার অন্যান্য কাজিনরা তার কাছে আসতেই ভয় পেতো শুধু রিয়া ব্যাতীত। কারণ রিয়া'র সামনে কাইফ কখনো গম্ভীর বা রাগী আচরণ করতো না৷ সে ছিলো কাইফের ছোট বেলার বন্ধু তাই সবার সামনে কাইফ যেমনই থাকুক রিয়া'র সামনে সে ছিলো একদম ভিন্ন।
একা জীবনে রিয়া'ই ছিলো তখন কাইফের একমাত্র সঙ্গী। যার সাথে সে মনের কষ্ট, না বলা কথা সব শেয়ার করতো। রিয়াও কাইফ'কে অনেক সাপোর্ট করতো তখন। সর্ব বিষয়ে তাকে সঙ্গ দিতো রিয়া।
এইভাবেই দিন যায় আর তারা বড় হতে থাকে। কাইফ রিয়া'কে সবসময় চোখে হারাতো। তার সব দায়িত্ব একটু একটু করে কাইফ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলো। সে সবসময় রিয়া কে প্রট্যাক্ট করতো, খারাপ থেকে দুরে রাখতো, আগলে রাখতো নিজের সাথে। এবং আসতে আসতে রিয়া ও কাইফের উপর নির্ভশীল হয়ে পড়ে।
দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। অনেকটা সময় পর তারা দু'জনই বুঝতে পারে যে তারা একে অপরকে ভালোবাসে ফেলেছে। নিজের অনুভূতি বুঝতে পেরে কাইফ সরাসরি রিয়া কে প্রোপজ করে বসে৷ রিয়া ফিরিয়ে দেয়না সেদিন কাইফ কে। সে'ও তার অনুভূতি গুলো প্রকাশ করে একে-অপরের সাথে কমিটেড হয়ে যায়। এবং খুব সুন্দর ভাবেই চলতে থাকে তাদের প্রেম-ভালোবাসা ময় দিনগুলো।
কাইফ-রিয়া তখন একে অপরের জন্য পাগল ছিলো। সারাদিন তারা জোড়া কবুতরের মতো একসাথে চিপকে থাকতো। ফ্যামিলিতে তাদের মেলামেশা নিয়ে কোনো সমস্যা ছিলো নাহ। তাই দিন নেই রাত নেই কাইফ রিয়া সর্বদা এক সাথেই খুনসুটি'তে মেতে থাকতো।
কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর কাইফ নিজে থেকেই আলাদা ফ্ল্যাটে চলে যায় কারন সে তার ভালোবাসা কে সবসময় পবিত্র রাখতে চাইতো এবং সে চাইতো হালাল ভাবে রিয়াকে পেতে আর এভাবে একটা প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ একসাথে থাকলে যেকোনো সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে তাই সে নিজ থেকেই সেই পথ বন্ধ করে দেয়।
এইচএসসি দেওয়ার পর কাইফ আর রিয়া'র ভার্সিটি আলাদা হয়ে যায়। কাইফ তখন পুরোদমে ফ্যামিলি বিজনেসের হাল ধরতে ব্যস্ত। চাচা'র সাথে রোজ অফিস যেতে হতো তার তাই সে একটা পাবলিক ভার্সিটি'তে ভর্তি হয় আর রিয়া তার পছন্দমতো দুরের এক প্রাইভেট ভার্সিটি'তে ভর্তি হয়। অফিস যাতায়াতের জন্য কাইফ রিয়া'কে তেমন একটা প্রটেক্ট করতে পারতো না। তখন রিয়া একা-একাই যাওয়া-আসার অভ্যাস করে নেয়। ধীরে ধীরে নতুন নতুন বন্ধু-বান্ধব জুটিয়ে রিয়া পুরাই আত্মনির্ভরশীল হয়ে যায়। কয়দিন পর-পর বন্ধুদের সাথে এদিকে সেদিক যাওয়ার জন্য বায়না করে, ফ্রীডম চায়। কাইফ ও তাকে কোনোরকম বাঁধা দিতো নাহ কারন রিয়ার ওপর তার বিশ্বাস ছিলো অনেক। তাই রিয়া যেভাবে চেয়েছে কাইফ তাকে সেভাবেই চলতে দিয়েছে।
তখনো তাদের সম্পর্ক ছিলো মিষ্টি মধু'র। রিয়া রোজ সকালে নিজ হাতে কাইফের জন্য কফি করে নিয়ে আসতো। একদিন হেরফের হলেই কাইফের সেকি অভিমান। আবার প্রতি উইকেন্ডে রিয়া আর রায়ান কে বাহিরে খাওয়াতে নিয়ে যেতে হতো কাইফের। তখন কাইফের পকেট খালি করে দিতো তারা দু'ভাই-বোন মিলে। পুরো এক সপ্তাহের পকেটমানি রিয়া একদিনে শেষ করে ফেলতো। কাইফের নাজেহাল অবস্থায় রিয়া খিলখিলিয়ে হাসতো। আর সেই হাসি কাইফ মুগ্ধনয়নে দেখতো।
এরই মাঝে রিয়া তার ভার্সিটি থেকে ছোট একটা টিভিসি করার অফার পায়। সেদিন বাসায় এসে রিয়া তো খুশিতে বাচ্চাদের মতো লাফাতে শুরু করে। তার আনন্দে চাচা-চাচিও বেশ খুশি হয় কিন্তু কাইফের এসব পছন্দ ছিলো না কোনো কালেই তবুও রিয়াকে সে প্রচন্ড ভালোবাসতো বিধায় তাকে কষ্ট দিতে চায়নি। সে ভাবে হয়তো সখের বসেই রিয়া টিভিসি টা করতে চাচ্ছে তাহলে একটা করেই সখ মিটে যাক। তাই কাইফ কিছু বলেনা৷ রিয়া'র খুশিতেই খুশি হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু রিয়া যেহেতু অনেক সুন্দর তাই একটা টিভিসি করেই তার কাছে অনেকগুলো কাজের অফার আসতে থাকে। আর রিয়া এতে বেশ উৎসাহ পায়। ধিরে ধিরে রিয়া'র মাঝে পরিবর্তন আসতে থাকে। মডেলিং কে সে নিজের প্রফেশন বানিয়ে ফেলতে চায়।
যেহেতু তাদের রিলেশনে কখনো ডমিনেটিং ব্যাপার-স্যাপার ছিলো নাহ৷ দু'জন দু'জনকে ফুল ফ্রীডম দিয়ে রেখেছিলো তাই কাইফ চেয়েও কিছু বলতে পারেনি৷ আর নাহ রিয়া তার অনুমতি চেয়েছে কখনো।
সে নিজের ইচ্ছায় একের পর এক কাজ করে গেছে। তখন বেশির ভাগ সময়'ই রিয়া পড়াশোনা আর মডেলিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। কাইফ কে সময়ই দিতে পারতো নাহ। কাইফ মুখে কিছু বলতো না কিন্তু সে মনেমনে ঠিকই কষ্ট পেতো। তবুও আবার নিজেকে সামলে নিয়ে রিয়াকে ভালোবাসতো, তাকে সাপোর্ট করতো। নিজে থেকে রিয়া কে সময় দিতো। এবং তার ইচ্ছেমত সব করার ফুল ফ্রীডম দিতো কারন সে ভালোবেসে বন্ধী রাখায় বিশ্বাসী ছিলো নাহ।
কিন্তু একদিন স্যুটের জন্য রিয়া'কে আউটডোরে যেতে হবে শুনে সেদিন প্রথমবারের মতো কাইফ রিয়ার সাথে প্রচুর রাগারাগি করে। সে কিছুতেই রিয়া কে এতোদুর একা যেতে দিতে চায়না৷ কিন্তু রিয়াও নাছোড় বান্দা সে তাল বাহানা করে ঠিকই কাইফ কে মানিয়ে নেয়। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর রিয়া'ই কাইফের সবচেয়ে আপনজন ছিলো তাই রিয়া'র চোখের পানি, তার মলিন মুখ দেখে বরাবরই দুর্বল হয়ে পরতো কাইফ। আর রিয়া'ও সেই সুযোগ'ই কাজে লাগাতো সব সময়। সে কাইফ কে মানিয়ে নিয়ে ৩ দিনের জন্য আউটডোর স্যুটে চলে যায়। তারপর ফিরে আশে নিজের মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে।
.
.
স্যুট থেকে ফেরার পর রিয়া'র মাঝে বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করে কাইফ। সে ঠিকমতো কাইফ কে সময় দিতো না, কথা বলতো না, দেখা করতো না। সব সময়ই একপ্রকার ব্যস্ততা দেখাতো। দেখা সাক্ষাৎ করার ও কোনো আগ্রহ দেখা যেতো না তার মাঝে। উইকেন্ডে কাইফ বাহিরে নিয়ে যেতে চাইলেও রিয়া'র সময় হতো নাহ। অথচ পরে দেখা যেতো সে তার কো স্টারদের সাথে ঠিকই হ্যাঙ্গআউট করে এসেছে। তাকে কল দিলে সব সময় কাইফ ফোন ব্যস্ত পেতো। বাহিরে গেলেই নানান ছেলেদের সাথে দেখা যেতো তাকে। কাইফ রেগেমেগে জিজ্ঞেস করলেই সে বলতো তারা ডিরেক্টর, প্রডিউসার কাজের ব্যাপারে যোগাযোগ করতে হয় তাদের সাথে।
.
.
রিয়া'কে নিয়ে এক প্রকার হতাশায় ভুগে কাইফ। সে তখন উপলব্ধি করতে পারে যে ছাড় দিতে দিতে রিয়া তার নাগালের বাইরে চলে গেছে। আর অতিরিক্ত ছাড় দিয়ে সে যে কতো বড় ভূল করেছে। তার উচিত ছিলো সময় থাকতেই লাগাম টেনে ধরা।
বুকভরা দীর্ঘস্বাস নিয়েই দিনগুলো পার করতে থাকে কাইফ অতঃপর অনেক ভেবেচিন্তে রিয়া'র সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয় সে।
কাইফের অনেক জোড়াজুড়ি তে রিয়া রাজি হয়ে প্রায় অনেকদিন পর তারা ডিনার ডেটে যায় এবং সেখানেই কাইফ বিয়ের জন্য প্রপোজ করে রিয়াকে। কিন্তু রিয়া তখন ক্যারিয়ারে'র ট্রানিং পয়েন্টে ছিলো সে কিছুতেই তখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলো না। কাইফ অনেক বলার পরও সে রাজি হয়না। এতে কাইফ খুব কষ্ট পায়৷ রিয়া তাকে বোঝায়৷ সময় চায়৷ এবং রিকুয়েষ্ট করে ফ্যামিলির থেকেও যেনো আপাতত তাদের সম্পর্কটা গোপন রাখা হয়। সময় হলে রিয়া নিজেই সবাইকে জানাবে তাদের সম্পর্কের কথা।
সেদিন রিয়া কাইফ'কে ফিরিয়ে দেওয়ায় সে ভিষন কষ্ট ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। তার জীবনের প্রথম ভালোবাসা 'রিয়া' তাকে সে একটু একটু করে হারিয়ে ফেলছে বুঝতে পেরেই ডুকরে কেঁদে উঠে কাইফ। তার একাকীত্ব জীবনের একমাত্র সঙ্গী ছিলো রিয়া যে তাকে আবারো একা করে চলে যাওয়ার পায়তারা করছে। কাইফ কাঁদে প্রচুর কাঁদে। নিজের বাবা-মা কে স্মরণ করে কাঁদে। একাকিত্ব জীবন ভয়ংকর। এই জীবন কেউই চায়না৷ কাইফ ও চায়না। সে তো বাঁচতে চায়! রিয়া কে নিয়ে বাঁচতে চায়। রিয়া'কে দিয়ে তার সকল একাকিত্ব গুচিয়ে ফেলতে চায় সে।
কিন্তু বলেনা সম্পর্কে তিক্ততা চলে আসলে সেই সম্পর্ক আর টিকে থাকে নাহ। তেমনটা তাদের বেলায় ও হয়েছে। রিয়া তো তাদের রিলেশন নিয়ে সব সময়ই উদাসীন ছিলো কিন্তু সেদিনের পর থেকে কাইফ নিজেও হাল ছেড়ে দেয়। রিয়া'র সাথে নিজ থেকে আর যোগাযোগ করেনা। রিয়া নিজেও কাইফের নির্লিপ্ততা কে পাত্তা দেয়না৷ দুরত্ব বাড়তে বাড়তে এতোটাই বেড়ে যায় যে এক এপার্মেন্টে থাকা স্বত্তেও তাদের ঠিকঠাক দেখা হতো না৷ অথচ কাইফ তখনো রিয়া'র মায়া কাটিয়ে উঠতে পারেনি৷ সে প্রকাশ না করলেও মনেমনে ঠিকই চাইতো রিয়া সব ছেড়ে-ছুড়ে তার কাছে ফিরে আসুক। সে তার সব ভূল মাফ করে তাকে নিজের করে নিবে। কিন্তু রিয়া.... সেতো কাইফ কে এক প্রকার 'রেস্ট্রিকেট' মুডেই ফেলে রেখেছিলো তার লাইফে। আর কাইফ.... দেখা না হলেও প্রতিনিয়ত রিয়া'র খোঁজ খবর সে রাখতো। রিয়া কখন কোথায় যায়, কি করে তা সবই কাইফের কানে আসতো।
.
রিয়া তখন তার মডেলিং ক্যারিয়ার নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত সময় পার করছিলো। মাসে দু'তিন বার আউটডোরে যেতে হতো। কিন্তু এসবের মাঝে কাইফ কে যেনো সে ভূলেই বসেছিলো। মাঝেমাঝে দু-একদিন টেক্সট দিতো এই-যা৷ কাইফ তখন নিজের কষ্ট ভূলতে সর্বদা কাজের মাঝে ডুবে থাকতো। তখন একটু একটু করে রিয়ার নাম তার মন থেকে মুছে যাচ্ছিলো।
কিন্তু! রিয়া'কে কাইফ আজীবনের জন্য নিজের মন থেকে মুছে ফেলে সেদিন... যেদিন তার কাছে রিয়া'র সাথে অন্য ছেলেদের কিছু আপত্তিকর ছবি আসে৷
রিয়া'র সকল ইনফরমেশন পাওয়ার জন্য কাইফ আগে থেকেই কিছু পরিচিত দের বলে রেখেছিলো যেনো রিয়া'র সব খবরা-খবর তারা কাইফ কে দেয়। তারা রিয়া'র সেক্টরেই কাজ করতো। কিন্তু রিয়া এই বিষয়ে অবগত ছিলো নাহ৷ কাইফ'কে তারা প্রথমেই সতর্ক করে যে রিয়ার সাথে ডিরেক্টরের গোপন সম্পর্ক আছে কারণ তারা প্রায়ই আউটডোরে গেলে একান্ত সময় পার করতো। কখনো কখনো একরুমে কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে দিতো। কিন্তু কাইফ শোনা কথায় বিশ্বাস করতে চায়না সে চায় প্রমাণ। এমনই একদিন রিয়া তার ডিরেক্টরের সাথে বেশ খোলামেলা পোষাকে সময় কাটাচ্ছিলো আর ডিরেক্টর ও কথায় কথায় রিয়া'র গায়ে স্পর্শ করছিলো যার দরুন রিয়াও খিলখিল করে হাসছিলো সেই মুহূর্তের কিছু ছবি আর ভিডিও ক্লিপস'ই কাইফের লোকগুলা তার কাছে পাঠায়৷
সেদিন সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়ে কাইফ। রিয়া এতোটা পাল্টে যাবে সে কখনো ভাবতে পারেনি৷ রিয়া তো তার সাথে কমিটেড ছিলো তাহলে কিভাবে এমন নোংরা কাজ করলো। যাকে সে কখনো হাজার সুযোগ থাকা স্বত্তেও বাজে ভাবে স্পর্শ করেনি, যাকে পবিত্র রাখতে সে একাকীত্ব জীবন বেছে নিয়েছিলো সে কিভাবে নিজেকে অন্য পুরুষের কাছে বিলিয়ে দিলো। তাকে নাকি এখন অন্য পুরুষেরা এত সহজে ছুঁয়ে দিচ্ছে। এতোটাই সস্তা বানিয়ে ফেলছে সে নিজেকে যে হাসতে হাসতে শরীর বিলিয়ে দিলো।
সারারাত কাইফ দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি৷ বারবার ছবিগুলো দেখেছে আর চিৎকার করে কেঁদেছে। বন্ধ ফ্ল্যাটে সেদিনই ছিলো কাইফের শেষ কান্না। তারপর আর কখনো কাইফ কাঁদেনি। আর না কখনো রিয়া'র নামটা মুখে নিয়েছে। সে সম্পূর্ণভাবে রিয়া কে মুক্ত করে দিয়েছিলো সেদিন।
বিয়ের বয়স তো কবেই হয়েছিলো কাইফের কিন্তু সেই বিষয়ে কাইফ'কে সব সময়ই উদাসীন দেখা যেতো তাই চাচা-চাচি তাকে বিয়ের জন্য অনেক জোড় দিতো কিন্তু সে বারবারই তাদের ফিরিয়ে দিতো এই বলে যে সে কখনো বিয়েসাদী করবে নাহ। তাই হতাশ হয়ে তারা কাইফ কে বিয়ের কথা বলাই বন্ধ করে দেয়।
কিন্তু একদিন কাইফের চাচা অসুস্থ হয়ে পড়ায় সে কাইফের কাছে অনুরোধ করে বলে,
' তুই আমার ভাইয়ের আমানত কাইফ। তোকে আমি নিজের ছেলের মতো ভালোবাসি। আমার কিছু হওয়ার আগে নিজের ছন্নছাড়া জীবনটা গুছিয়ে নে। একা একা আর কতোদিন থাকবি ? একটা বিয়ে করে নে বাপ। যেনো মৃত্যুর আগে তোর সুখ দেখে যেতে পারি '
সেদিন চাচা'র কথায় জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেলে কাইফ। সে নিজেকে বুঝায় কাউকে ভালোবেসে ব্যর্থ হওয়ায় সারা জীবন নিজেকে একা রেখে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে হয়না৷ তার বয়স হচ্ছে, সে মুখে স্বীকার করুক আর না করুক সত্য এটাই যে তার এখন একটা সঙ্গী প্রয়োজন৷ যে তাকে বুঝবে, তার খেয়াল রাখবে, যাকে ভালোবেসে কখনো ব্যর্থ হবেনা সে। এমন একটা মানুষ তো অবশ্যই তার দরকার৷ তাই কাইফ 'মুভঅন' করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে তার চাচি কে মেয়ে দেখতে বলে। কিন্তু মেয়ে দেখার প্রতি নিজে কোনো আগ্রহ দেখায় নাহ। কারণ তার ধারণা তার চয়েজ একদমই বাজে তাই সে সম্পূর্ণটা চাচির ওপর ছেড়ে দিয়ে জানায়, সে বিয়ে করবে তাদের পছন্দের মেয়ে কে এবং সেই মেয়েকে দেখবে সে বিয়ের পরে একবারে বাসর ঘরে।
.
সব সময় রিলেশন নিয়ে উদাসীন থাকা রিয়ার টনক নড়ে কাইফের বিয়ের তোরজোর দেখে। সে কেবল স্যুট থেকে ফিরেছে। দু'দিন পর আবার তার শো আছে ঢাকার বাহিরে আর এটা তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সফলতা হবে যদি সে ঠিকঠাক ভাবে সব করতে পারে। কিন্তু বাসায় এসেই শুনে দু'দিন পর কাইফের বিয়ে। সেটারই প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই আর মেয়ে নাকি পছন্দ করেছে তারই মা-বাবা৷
রিয়া রেগেমেগে ছুটে যায় কাইফের ফ্ল্যাটে। একের পর এক অভিযোগ,অপবাদ দিতে থাকে সে কাইফ কে। কাইফ শুধু নির্লিপ্ত চাহনিতে দেখতে থাকে রিয়া'র কার্যকলাপ।
অতঃপর বিনাবাক্য ব্যয় করে ড্রয়ার থেকে রিয়া'র অন্য ছেলেদের সাথে আপত্তিকর ছবিগুলো এনে তার চোখের সামনে ধরলে চুপ হয়ে যায় রিয়া। ছবিগুলো হাতে নিয়ে সে ভয়ে ভয়ে কাইফের দিকে তাকায়।
অথচ কাইফ শান্ত৷ সে একটা প্রশ্নও করেনা রিয়া কে। কিন্তু রিয়া নিজেই তার সাফাই গাইতে বলে কাইফ যা ভাবছে তা ভূল। এগুলা স্যুটের সীন। তাদের মাঝে এমন কিছুই নেই। এই লাইনে টুকটাক এমন সীন করতেই হয় কিন্তু এগুলো রিয়েল নাহ। আরো অনেক কথা....
কাইফ অবশ্য ততদিনে রিয়া কে চিনে নিয়েছিলো। সে ভারি কন্ঠে রিয়ার উদ্দেশ্যে বলে,
' তাহলে চাইনা আমি এমন প্রফেশন। ছেড়ে দে সব। চলে আয় আমার কাছে। আমি এখুনি চাচা-চাচি কে গিয়ে বলবো তোকে ভালোবাসি আমি আর এই মুহূর্তে তোকে বিয়ে করবো '
আকস্মিক দু'কদম পিছিয়ে যায় রিয়া। দু'দিন পর তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় শো। আর আজ কাইফ তাকে সব ছেড়ে দিতে বলছে যার অর্থ তার এতোদিনের সব কষ্ট, পরিশ্রম বৃথা! এক নিমিষেই শেষ! নাহ এটা কিছুতেই হতে পারে নাহ। রিয়া অনেক কষ্ট করেছে এই পর্যন্ত আসার জন্য এখন সে পিছু হাঁটতে পারবেনা। সে কাইফ কে আবারো তার মতো করে সব বোঝাতে চায় কিন্তু কাইফ কিছুই শুনতে নারাজ। কাইফ তাকে দু'দিনের সময় দিয়ে বলে,
' হয়তো এই প্রফেশন ছেড়ে তুই আমার কাছে চলে আয়। নয়তো আমাকে ছেড়ে দে '
রিয়া তখন বুদ্ধি খাটিয়ে বলে,
' ঠিক আছে তুই বিয়েটা ভেঙে দে। আমি দু'দিন পর শেষবারের মতো শো'টা করে সব ছেড়ে দেবো '
কাইফ রিয়া'র চালাকিতে মনেমনে হাসে। সে একরোখা তেজি কন্ঠে বলে,
' তুই যেই মুহূর্তে সব ছাড়বি সেই মুহূর্তেই আমি বিয়ে ক্যান্সেল করে তোকে নিজের করে নেবো। তোর ভাবার সময় মাত্র দু'দিন '
রিয়া কাইফের এমন শক্ত ব্যবহারে স্তব্ধ হয়ে যায়। সে দু'দিন ভরে চিন্তা করে কাকে রেখে কাকে বেছে নিবে। একমন বলে ক্যারিয়ার অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এতো দুর এসে সে পেছন ফিরে যেতে পারেনা আবার আরেক মন বলে কাইফ তাকে অনেক ভালোবাসে। তাকে হারালে আর কখনো সে ফিরে পাবেনা। কিন্তু কাইফ তো তাকে ভালোবাসে তাহলে কেনো সে অন্য কাউকে বিয়ে করবে নিশ্চয়ই রাগের মাথায় সব করছে। সে অন্য কাউকে বিয়ে করতেই পারেনা৷
.
.
বিয়ের দিন সকালে রিয়া তার ভাই রায়ানের হাতে কাইফের জন্য একটা চিঠি দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পরে৷ রায়ান দৌড়াতে দৌড়াতে কাইফের কাছে গিয়ে চিঠিটা দেয়। চিঠিটা নিয়ে কাইফ তাচ্ছিল্য হেসে না পড়েই টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয় ডাস্টবিনে।
সে জানতো রিয়া তাকে নয়, ক্যারিয়ার কেই বেছে নিবে। তাইতো এমন শর্ত দিয়েছিলো সে।
.
.
এরপর নূরা'র সাথে পারিবারিক ভাবেই কাইফের বিয়ে হয়। নূরা'র সম্পর্কে কাইফের কিছুই জানা ছিলো না কারণ সম্পূর্ণ দায়িত্ব কাইফ তার চাচি কে দিয়ে রেখেছিলো। কাইফ শুধু চেয়েছিলো একটা মানুষ! ভালো মনের মানুষ... যাকে নিয়ে সে 'মুভঅন' করবে। যেখানে বাহ্যিক রুপ ম্যাটার করে নাহ তার কাছে।
কিন্তু ভাগ্যগুনে সে পেয়ে গেছে অল্প বয়সী, সুন্দরী নূরা কে। যাকে প্রথম দেখাতেই চোখ-মুখে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যায়।
কাইফ তার তিক্ত-অতীত পুরোপুরি ভাবে জীবন থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিলো এক দুঃস্বপ্ন মনে করে। তাই সে বিয়ের প্রথম রাতেই নূরাকে নিজের করে নেয়। কিন্তু তার মধ্যে তখন কোনো সফটনেস ছিলো না কারণ আঘাত পেয়ে কাইফ ততদিনে নিজেকে শক্ত মানবে রুপান্তর করে ফেলেছিলো। ন্রমতা হারিয়ে গেয়েছিলো অভিমানের আড়ালে। তাই নূরা'কে তার রুক্ষতার স্বীকার হতে হয়। তার ওপর সে ছিলো আটাশ বছরের ভার্জিন ছেলে তাই নিজেকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি সে।
.
পরেরদিন সকালে রিয়ার আগমনে কাইফ বুঝতে পারে রিয়া হয়তো বিশ্বাস করতে পারছিলো নাহ, সে তাকে রেখে অন্য কাউকে নিজের করে নিয়েছে। তাই কফি দেওয়ার বাহানায় সে নিজ চোখে দেখতে এসেছে এবং ভেতরে ভেতরে জ্বলছে। মানুষ কতোটা নির্লজ্জ্য হলে কারো বাসর ঘরে ঢুকতে পারে কথাটা ভাবতেই রাগে চোয়াল শক্ত করে নেয় কাইফ। এরপর রিয়া কে বিছানায় নিয়ে কাপড়ের উপর দিয়েই পেটে স্লাইড করে বোঝাতে চায় তাকে সে বৈধ্য করে ঘরে তুলতে চেয়েছিলো একসময় অথচ এখন সে শুধুই রক্ষীতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে। তার স্পর্শে ছিলো তাচ্ছিল্য! ব্যাপরটা রিয়া নিজেও বুঝতে পারে যে কাইফ তাকে অপমান করতে চাইছে তাইতো সে রেগেমেগে অনেক কিছু বলতে নেয় কিন্তু তার আগেই নূরা সেখানে চলে আসে।
রিয়া'কে স্পর্শ করে কাইফের নিজেরই কেমন ঘিনঘিন করছিলো শরীর তাই সে নূরা'কে আবারো কাছে টেনে নেয়। তাকে স্পর্শ করে সকল তিক্ততা ভূলে যেতে চায়৷ নূরা খেয়াল করলে হয়তো সেদিন দেখতে পেতো যে রিয়া'র আনা কফিটা কাইফ খাইনি৷
নূরা যখন দ্বিতীয়বার মেলামেশার পর ফ্রেস হতে গিয়েছিলো তখনই সব কফি কাইফ বারান্দার টবে ঢেলে দেয়। এমন কি পরেরদিন ও যখন নূরা কফি নিয়ে আসে তখন কাইফ নূরা'র বানানো কফি মনে করেই সে চুমুক দিয়ে নূরার দিকে তাকায়। সে বুঝতে পারে কফিটা নূরা নয় বরং রিয়া বানিয়েছে তাই সেদিন ও সে নূরা'কে কথার মাঝে প্যাচিয়ে মগটা নূরা'র হাতে ধরিয়ে দেয় সে। লজ্জায় আরোষ্ট থাকা নূরা তখন খেয়ালই করেনি তার বর যে কফিটা খায়নি৷
___________________
হঠাৎ গাড়িটা থেমে যেতেই কাইফ অতীত থেকে বেরিয়ে আসে। দু'হাতের সাহায্যে মুখ মুছে কয়েকবার লম্বা লম্বা স্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয় সে।
কাইফ আপনমনে বিড়বিড় করে,
' রিয়া কে আমি নিজের জীবন থেকে অনেক আগেই মুছে ফেলেছিলাম। কিন্তু কখনো কঠোরতা দেখাই'নি তার সাথে। তাকে তার মতো থাকতে দিয়েছি। হয়তো এই কারণেই রিয়া এখন অতি মাত্রায় দুঃসাহস দেখাচ্ছে।
বিয়ের পর দিন সকালে ওমন অসভ্যের ন্যায় কাজ করায় আমার তখন-ই তার গাল লাল করে দেওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু আমি রাগের মাথায়... উফফ! আমি'ই হয়তো তাকে সুযোগ দিয়েছি যার দরুন সে আজ এতবড় নোংরামি করার সাহস পেয়েছে। কিন্তু এখন আর নাহ!
যদি রিয়া নেক্সটে কোনো বারাবাড়ি করতে আসে অথবা আমার ম্যারিড লাইফে কোনো প্রবলেম ক্রিয়েট করতে চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে চাচাতো বোন বলে ছেড়ে দিবেনা। তার সমস্ত কর্ম ফল তাকে এক সাথে ভোগ করাবো আমি কাইফ এহসান '....
বিরবির করতে করতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে রুক্ষ পায়ে হেঁটে সোজা নিজের ফ্ল্যাটে চলে যায় কাইফ। বেল প্রেস করে দেয়ালে হাতে রেখে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে সে৷
নূরা দুপুরের জন্য রান্না করছিলো। কলিং বেলের শব্দে চুলার তাপ কমিয়ে মাথায় ওড়না দিয়ে দরজা খুলতে যায়।
দরজা খুলেই কাইফে'র ক্লান্ত মুখটা দেখে অবাক হয়ে যায় নূরা। কাইফ এক পলক নূরা কে দেখে তাকে পাশ কাটিয়ে রুমে যেতে যেতে গম্ভীর কণ্ঠে আদেশ করে,
' রুমে এসো '
নূরা চিন্তিত বদনে ফ্ল্যাটের দরজা লাগায়। কালকে অফিস থেকে বিকেলেই চলে এসেছিলো কাইফ আর আজ তো লাঞ্চের সময় ও হয়নি৷ উনার কি তাহলে আজ ও মাথা ব্যথা। চিন্তা করতে করতে নূরা তাদের রুমে গিয়ে দাঁড়ায়।
ততক্ষণে কাইফ গায়ের শার্ট খুলে নিজের উম্মুক্ত শরীর নিয়ে বেডের মাঝ বরাবর ফ্যানের নিচে বসেছে। রিমোর্ট দিয়ে এসির ট্যাম্পার ঠিক করছে সে।
দিনের আঁলো তে কাইফ কে এমন খালি গায়ে দেখে লজ্জা লাগছে নূরা'র। কিন্তু কাইফ অসুস্থ কিনা সেই শঙ্কায় নিজের লজ্জা মাটি চাপা দিয়ে সে ছোট ছোট কদম ফেলে কাইফের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
কাইফ শীতল চোখে তাকালো নূরা'র দিকে।
কাঁচা-হলুদ রঙের ফ্রন্ট জিপারের টু'পিস পড়েছে নূরা৷ মাথায় শিফনের ওড়না৷ হাতে স্বর্নের চুড়ি, গলায় পাতলা চেইন, নাকে ছোট্ট নাকফুল। মুখে চিকচিক করছে বিন্দু বিন্দু ঘাম সাথে কপালে চিন্তার ভাঝ। কাইফ মোহাবিষ্ট চাহনিতে দেখতে লাগলো তার ছোট্টমোট্ট বউকে৷
কাইফের সেই চাহনি'তে কি ছিলো জানা নেই নূরা'র কিন্তু তার সর্বাঙ্গো কেঁপে উঠলো সাথেসাথে। নূরা নিজের অভ্যন্তরিন কাঁপাকাঁপি সামলিয়ে ঢোক গিলে কিছু বলতে নিবে তার আগেই ভারিক্কি কন্ঠে কাইফ বলে উঠলো,
' Come here and hold me tight '
চলবে....
আমি অতীত'টা অন্যভাবে সাজাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সবাই এতো অধৈর্য্য হয়ে পড়েছিলো যে আমার এভাবেই তাদের অতীত তুলে ধরতে হলো। জানিনা কেমন হয়েছে। অনেক তারাহুরো করে লিখেছি। সবাই ভূলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন৷ যদি কারো মনে কোনো প্রশ্ন থাকে, এই পর্ব পড়েও ক্লিয়ার না হয় তাহলে অবশ্যই কমেন্টে বলেন৷ হ্যাপি রিডিং More...
No comments: