অধ্যায় – বন্ধুদের ভূমিকা
কলেজ জীবনে রূপা আর অরিন্দমের প্রেমের কথা ধীরে ধীরে অনেকের কাছেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। যদিও তারা কখনো প্রকাশ্যে কিছু বলেনি, তবে তাদের একসাথে থাকা, পড়াশোনায় একে অপরকে সাহায্য করা—সবকিছুই বন্ধুদের চোখ এড়ায়নি।
রূপার খুব কাছের বান্ধবী নীলা একদিন মজা করে বলল—
— “শুধু নোট দিলেই তো হবে না, অরিন্দম, একদিন হয়তো ফুলও দিতে হবে।”
রূপা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল, আর অরিন্দম শুধু হেসে উঠল।
কিন্তু যখন রূপার পরিবার তার বিয়ে ঠিক করে দিল, তখন বন্ধুরাই প্রথম পাশে দাঁড়াল। নীলা ও রূপার অন্য বান্ধবীরা তাকে সাহস দিল।
— “তুই ভয় পাস না। আমরা তোর সঙ্গে আছি। তুই যদি নিজের স্বপ্নের জন্য লড়িস, আমরা তোর পাশে দাঁড়াব।”
অন্যদিকে অরিন্দমের বন্ধুদের ভূমিকা ছিল আরও গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকায় পড়তে গিয়ে টিউশনি আর ক্লাস সামলাতে সে প্রায়ই ভেঙে পড়ত। কিন্তু রুমমেট মিজান সবসময় তাকে সাহস দিত।
— “দোস্ত, তুই কষ্ট কর, একদিন তুই-ই জিতবি। রূপা তোর জন্যই অপেক্ষা করছে।”
বন্ধুদের এই কথাগুলো অরিন্দমের বুকের ভেতর আগুনের মতো জ্বলতে থাকত। সে জানত, শুধু নিজের জন্য নয়, রূপার জন্যও তাকে সফল হতেই হবে।
কলেজের বন্ধুরা মাঝেমধ্যেই রূপাকে খবর দিত—অরিন্দম কেমন আছে, কত কষ্ট করছে। এতে রূপার ভরসা আরও বাড়ত।
একদিন নীলা রূপাকে বলেছিল—
— “ভালোবাসা মানে শুধু দু’জন মানুষ নয়, এর চারপাশে যারা থাকে তাদেরও পরীক্ষা হয়। আমরা সবাই চাই তুই আর অরিন্দম একসাথে থাক।”
রূপা তখন চোখ ভিজিয়ে বলেছিল—
— “তোমরা আছ বলে আমি এতটা সাহস পাই।”
অধ্যায় – অরিন্দমের ঢাকার সংগ্রামের দিনগুলো
ঢাকায় আসার পর অরিন্দমের জীবন যেন একদম পাল্টে গেল। ছোট্ট শহরের নিরিবিলি পরিবেশ ছেড়ে সে এসে পড়ল এক ব্যস্ত নগরীতে—যেখানে চারপাশে শুধু কোলাহল, যানজট আর দৌড়ঝাঁপ।
প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে জায়গা পেলেও সেখানকার ভিড় আর নিয়মকানুন তাকে কষ্ট দিত। ক্লাসের পাশাপাশি টিউশনি না করলে খরচ চালানো সম্ভব ছিল না। তাই সে প্রতিদিন ভোরে উঠে টিউশনি করত, দুপুরে ক্লাস, বিকেলে আবার টিউশনি, রাতে ফিরে এসে লাইব্রেরিতে বসে পড়াশোনা।
অরিন্দমের রুমমেট মিজান প্রায়ই তাকে বলত—
— “দোস্ত, তুই কি মেশিন নাকি? এত কাজ করে মানুষ টিকে থাকে?”
অরিন্দম হেসে বলত—
— “স্বপ্ন যদি বড় হয়, কষ্টটাও বড় হতে হয়।”
তবে মাঝে মাঝে ক্লান্তিতে ভেঙে পড়ত সে। রাতে ডায়েরিতে লিখত—
ark
"আজ সারাদিন পরিশ্রমে শরীর ভেঙে যাচ্ছে। তবুও চোখ বন্ধ করলেই রূপার মুখটা ভেসে ওঠে। মনে হয়, সে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তাই থামতে পারি না।"
প্রতিটি মাসের শেষে সামান্য টাকা জমিয়ে সে রূপাকে চিঠি পাঠাত। সেই চিঠিতে শুধু ভালোবাসা নয়, ছিল স্বপ্ন আর সাহসের গল্প।
একদিন টিউশনি থেকে ফিরতে ফিরতে অরিন্দম হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে গেল। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল—
— “এই বৃষ্টি যদি রূপার শহরেও পড়ে, তবে নিশ্চয়ই সেও এখন আমাকে মনে করছে।”
ঢাকার সেই কঠিন দিনগুলো অরিন্দমকে আরও দৃঢ় করে তুলেছিল। সংগ্রামের প্রতিটি ক্ষণ তার ভালোবাসাকে শুধু আরও গভীর করেছিল।
✨ এই অধ্যায়ে দেখানো হলো অরিন্দমের সংগ্রাম আর ত্যাগ, যা তার ভালোবাসাকে আরও শক্তিশালী করেছে।
অধ্যায় – বিয়ের পরের জীবন: স্বপ্নের সংসার
চার বছরের লম্বা অপেক্ষা, অসংখ্য কষ্ট আর সংগ্রামের পর অবশেষে রূপা আর অরিন্দমের সম্পর্ক আনুষ্ঠানিক রূপ পেল। পরিবারের আপত্তি, সমাজের নানা কথাবার্তা—সবকিছুর মাঝেই তাদের ভালোবাসা জয়ী হলো।
বিয়ের দিনটা ছিল একেবারে সাদামাটা। অনেক আয়োজন হয়নি, কিন্তু দু’জনের চোখে যে আনন্দ ছিল, তা কোনো উৎসবের রঙের চেয়ে উজ্জ্বল। সবার আশীর্বাদের মাঝে তারা একে অপরের হাতে হাত রাখল।
বিয়ের পর তারা শহরের বাইরে ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া নিল। বাসাটা বড় ছিল না, কিন্তু জানালার বাইরে ছিল শিউলি গাছ, আর ভেতরে ছিল অসংখ্য বইয়ের আলমারি। রূপা বলল—
— “দেখছ? আমাদের স্বপ্ন ধীরে ধীরে সত্যি হচ্ছে।”
অরিন্দম হাসতে হাসতে উত্তর দিল—
— “এখন শুধু বাগানটা বাকি।”
রূপা চাকরিতে যোগ দিল শিক্ষক হিসেবে। প্রতিদিন ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে ফিরে এসে সংসার সামলাত। অরিন্দমও নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলছিল। ব্যস্ততা থাকলেও তারা প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় একসাথে কাটাত—কখনো বারান্দায় বসে চা খেত, কখনো পুরোনো দিনের কথা মনে করত।
এক রাতে বারান্দায় বসে রূপা হঠাৎ বলল—
— “তুমি কি মনে করো, আমাদের এত কষ্ট করা ঠিক ছিল?”
অরিন্দম তার হাত ধরে বলল—
— “যদি সহজে পেয়ে যেতাম, তবে হয়তো এতটা মূল্য দিতাম না। ভালোবাসা তখনই পূর্ণতা পায়, যখন সেটা সংগ্রামের আগুন পেরিয়ে আসে।”
রূপার চোখ ভিজে উঠল।
সে মাথা অরিন্দমের কাঁধে রেখে ফিসফিস করে বলল—
— “শেষ বিকেলের আলোয় তুমি আমার জীবনের আলো হয়েই থাকবে।”
দূরে সূর্য অস্ত যাচ্ছিল, আকাশে লাল আভা ছড়িয়ে পড়ছিল—যেমনটা ছিল তাদের প্রথম প্রেমের দিনে।
উপসংহার
ভালোবাসা কখনো শুধু আবেগ নয়; এটা সাহস, অপেক্ষা আর বিশ্বাসের সমন্বয়।
রূপা আর অরিন্দমের গল্প প্রমাণ করল—
যদি দু’জন মানুষ সত্যিই একে অপরকে ভালোবাসে, তবে কোনো দূরত্ব, কোনো বাধা, কোনো ঝড় তাদের আলাদা করতে পারে না।
🌸 এভাবেই পুরো গল্পটা সম্পূর্ণ উপন্যাসের মতো সাজানো হলো—পরিচয় থেকে শুরু করে সংগ্রাম, সিদ্ধান্ত, বন্ধুদের ভূমিকা আর অবশেষে স্বপ্নের সংসার। more...
No comments: