তোমার_প্রাপ্তিতে_আমার_সমাপ্তি
কলম হাতে চুপচাপ দাড়িয়ে আছি আমি।মাথা কাজ করছেনা।মাহিনের মতো একজনকে কিছুতেই আমি বিয়ে করতে পারবোনা।
আমাকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মাহিন আমার হাত ধরে চেপে ধরলো।হিসহিসিয়ে বলল,,
"নাটক করিস না।সময় নেই আমার হাতে তারাতারি সাইন কর।"
"আমি পারবোনা মাহিন।"
"এটা শুধু একটা আই ওয়াশ। তুই সাইন করবি কি না?"
"না।"
মাহিন এবার আমাকে চর মারার জন্য হাত উঠাতেই বেল বেজে উঠলো। মাহিন আমার দিকে আগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে দরজা খুলতে গেলো। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে মাহিনের সাথে নিধি ভেতরে এলো।
আমাকে দেখে নিধি বিরক্ত হলো।মাহিনকে জিজ্ঞেস করলো,,
"ও আবার এখানে কেনো?"
ভাবলেশহীন ভাবে মাহিন বলল,,
"ও এখানেই থাকবে।"
নিধি চটে গেলো। আমাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে বলল,,
"তুমি আসলেই প্রেগন্যান্ট?"
নিধির প্রশ্ন টা আমার পছন্দ হলো না।আমি বললাম,,
"এটা কেমন প্রশ্ন আপু?"
নিধি উত্তর করলো না।হঠাৎ করেই নিধির মুখের আদল পাল্টে গেলো।হনহন করে রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলো।
মাহিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আমার দিকে তাকলো।মাহিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমিও রুমে চলে এলাম।এযাত্রায় বেঁচে গেছি।নিধি আপু বাঁচিয়ে দিয়েছে।
______________________________________
রাত বারোটা,,
নিধি আপুর চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙে যায়।নিজের রুমে বসেই আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম মাহিনের সাথে নিধি আপু ঝামেলা করছে।
মাহিনের কোনো আওয়াজ না পেলেও এবার এক বিরাট ধমক দিয়ে উঠলো মাহিন।বাজখাই কন্ঠে বলল,,
"আমি বুঝতে পারছিনা তুমি এমন বিহেভিয়ার কেনো করছো? আমি তোমার অনুমতি নিয়েই সবটা করেছি, তাহলে?"
এ কথা শুনে নিধি মাহিনের শার্টের কলার ধরে বলে উঠলো,,
"আমি তোমাকে বলেছিলাম আমি মা হতে চাইনা তখন তুমি জানালে তুমি বাবা হতে ভিষণ ভাবে ইচ্ছুক।আমি মজা করে বলেছিলাম তাহলে অন্যকারোর থেকে বাচ্চা ধার করে আনো।তুমি বলেছিলে চলো সারোগেসি করি।আমি কাজে ব্যস্ত থাকায় তেমন মাথা ঘামায়নি। কিন্তু মাহিন ওই মেয়েটার শরীরে মাতৃত্বের চিহ্ন স্পষ্ট।"
"এটা তো স্বাভাবিক নিধি।"
"এটা স্বাভাবিক কি করে? ওর শরীরে আমাদের সন্তান। আমি তো অক্ষম নই মাহিন।আমি মানতে পারছিনা এটা।"
মাহিন উত্তর করলো না নিধির কথার।শার্টের কলার ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় বসলো।নিধি বলল,,
"ওকে বের করে দাও মাহিন।আমি মা হবো।প্লিজ মাহিন।"
মাহিন নিধির দিকে তাকলো।হেসে বলল,,
"এই কথাটা কয়েকমাস আগে বললে আজ আমাদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি আসতো না।আমি মেহেরকে বের করে দিতে পারবোনা।ওর মাঝে আমার অস্তিত্ব রয়েছে।"
"মাহিন!"
মাহিন নিধির সাথে আর কথা বাড়ালোনা।কম্বল মুরি দিয়ে শুয়ে পড়লো।নিধি দুহাতে চুল টেনে ধরলো নিজের।
একটা মেয়ে আর যাইহোক স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারেনা।সেখানে অন্য একটা মেয়ে তাদের বাচ্চা ক্যারি করবে! নাহ নিতে পারছেনা নিধি।
রাত দুইটা,,
নিধির পাশ থেকে মাহিন উঠে এলো আমার রুমে।আমার ঘুম খুবই পাতলা একটা মশা গেলেও ঘুম ভেঙে যায় আমার।মাহিন এসে আমার টেম্পারেচার চেক করলো।এরপর আমার পাশে বসে রইলো।
গত কয়েক মাসে মাহিন আমার পাশে এভাবেই রাতে বসে থাকে।ভোর হলেই চলে যায় নিজ রুমে।আজও হয়তো তাই করবে।
মাহিন কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে আমার শরীরে কম্বল ঠিক করে দিয়ে চলে গেলো। আমি এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে উঠে বসলাম। ঘুম আসছেনা আমার।মাথায় অনেক রকম চিন্তা ঘুরছে।
আজকে নিধির ব্যবহার আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। সত্যি বলতে নিধির রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু আমি এখানে নিরুপায়।
আমার হঠাৎ করেই দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।
আমি উঠে রুমের বাহিরে এলাম।মাহিনের রুমেই আমার ইনহেলারটা রয়েছে।
আমি চাইনা এখন ওদের ডাকতে।কিন্তু শ্বাস কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে।বাধ্য হয়ে মাহিনের রুমের দরজায় নক করলাম।
কয়েকবার নক করতেই মাহিন ছুটে এলো।
আমার অবস্থা দেখে মাহিন অস্থির হয়ে উঠলো।আমাকে কোলে তুলে বিছানায় শোয়ালো।ইনহেলাটটা এনে দিলো।
আমি শুধু মাহিনকে দেখছিলাম।
কিছুক্ষণ সময় পর ধীরে ধীরে আমার অবস্থা স্বাভাবিক হলো।নিধি আমাকে বলল,,
"তুমি কি ম্যানার্স জানোনা? এতো রাতে কিভাবে একটা কাপলের রুমে নক করো?"
"সরি।"
আমার সরি বলাটা মাহিনের পছন্দ হলোনা।ও নিধিকে বলল,,
"ওর দায়িত্ব এখন আমাদের নিধি।তুমি ওর সাথে এমন ব্যবহার কেনো করছো?"
নিধি আপু রাগ করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।নিজেকে অপরাধী লাগছে।পরিস্থিতি এতোটা হাতের বাহিরে চলে যাবে ভাবিনি।আমাকে চুপ করে ভাবতে দেখে মাহিন বলল,,
"ঘুমানোর চেষ্টা করো। কালকে সকালে ডক্টরের কাছে যাবো।"
বলেই মাহিনও চলে গেলো।
_____________________________________
পরেরদিন,,
ডক্টরের কাছে যেতে হবে অথচ আমার ইচ্ছে ই করছেনা যাওয়ার।সকালে একবার মাহিনকে বলেছিলাম আসার সময় যেনো একবার মার সাথে দেখা করতে দেয়।কিন্তু মাহিন রজি হয়নি।
আমি রেডি হয়ে চুপচাপ আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছি।কালকে নিধি আপু বলার পর বেশ কয়েকবার আয়নায় নিজেকে দেখেছি আমি।পেটটা একটু বড় হয়েছে। তবে খুব নিখুঁত চোখে পর্যবেক্ষণ না করলে বোঝা যাবেনা।ঢিলেঢালা জামা পড়ায় এখন একদমই বোঝা যাচ্ছে না।
আমি আজ প্রথমবার আট্রা করাবো।জানিনা কেনো খুব ভয় করছে। ডক্টর হিনা একটা সেমিনারে বাহিরে গিয়েছেন।
তাই আজ আমরা ডক্টর নীলার কাছে যাবো।
মাহিন গাড়িতে অপেক্ষা করছে।আমি গিয়ে গাড়ি উঠতেই মাহিন গাড়ি স্টার্ট দিলো।
নিধি আপুকে সকাল থেকে দেখিনি।হয়তো বাহিরে গিয়েছে।মাহিনকে জিজ্ঞেস করার সাহস হয়নি।
বেশ অনেকক্ষণ জ্যামে বসে থাকার পর আমরা পৌঁছালাম হসপিটালে।
ড.নীলা আমাকে দেখে মলিন হাসলো।মাহিনের সাথে টুকটাক কথা বলে আমাকে নিয়ে গেলো আল্ট্রা রুমে।
মাহিন অপেক্ষা করছে কখন ডক্টর ওকে ডাকবে।
বেশ কিছুটা সময় পার হওয়ার পর নার্স মাহিনকে গিয়ে বলল,,
"আপনাকে ডক্টর ভেতরে ডাকছে।"
মাহিন ঝড়ের গতিতে ভেতরে এলো।আমার চোখে তখন পানি।মাহিন আমার দিকে তাকিয়ে ডক্টরকে জিজ্ঞেস করলো,,
"কোনো সমস্যা ডক্টর? "
"জ্বি।"
মাহিনের পা থমকে গেলো।ভীত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,,
"কি হয়েছে ডক্টর? বেবি ঠিক আছেবতো?"
"বেবির হার্টবিট আসেনি।"
মাহিন একদম থমকে গেলো।কাপা কাপা স্বরে জিজ্ঞেস করলো,,
"আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে ডক্টর। ভালো করে দেখুন।"
"আমি ভালো করে চেক করেই বলছি মাহিন বেবির হার্টবিট আসেনি।আমি কিছু মেডিসিন দিচ্ছি আর কিছুদিন দেখার জন্য বলবো।যদি এরপরও হার্টবিট না আসে তাহলে আমাদের স্টেপ নিতে হবে।"
ডক্টরের কথায় আমার মাথা ঘুরতে শুরু করলো।মাহিনও থম মেরে বসে আছে।পকেটে ওর ফোনটা বাজছে। মাহিনের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।ডক্টর নীলা আমাদের রেখে একটু বাহিরে গেলেন।মাহিন আমার পাশে এসে বসলো।আমি বললাম,,
"এখন কি হবে? এতোদিনের সব কষ্ট কি তবে বৃথা?"
উত্তর দিলো না মাহিন।ড. নীলা এসে বলল,
"মাহিন আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। "
মাহিন ডক্টর নীলার সাথে গেলো।আমি এখনো বুঝতে পারছিনা এখন কি করবো আমি? যদি হার্টবিট না আসে তাহলে তো সব শেষ হয়ে যাবে আমার।
এতো কষ্টের কোনো মানেই যে থাকবেনা।আমার আত্মত্যাগ বৃথা হয়ে যাবে।
আর ভাবতে পারছিনা।পেটেও চিনচিন ব্যথা হচ্ছে। অতিরিক্ত প্রেসার নেওয়ার ফলে নাক দিলে ব্লাড ও আসছে।
নিজেকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করছি। তখনই মাহিন কথা শেষ করে এলো।আমি মাহিনের পিছু পিছু এলাম।
গাড়ির সামনে এসে দাড়াতেই মাহিন আমার গাল চেপে ধরে বলল,,
"তুই ইচ্ছে করে কিছু করেছিস তাই না? তুই আমার সাথে শত্রুতা করছিস? যদি বেবির হার্টবিট না আসে তাহলে তোর হার্টবিট ও চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে মনে রাখিস।"
বলেই মাহিন গাড়ি উঠে যায়।
পুরো রাস্তা মাহিন কোনো কথা বলেনি আমার সাথে।জানিনা ডক্টরের সাথে কি কথা হয়েছে মাহিনের।
ভেবেছিলাম ফেরার পথে যেকোনো ভাবে মাহিনকে মানাবো মার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার আর হলো না।
বাসায় পৌছাতে দুপুর হয়ে গেলো।মাহিন আমাকে নামিয়ে দিয়েই চলে গেলো।
আমি ফ্ল্যাটের সামনে এসে বেল দিতেই নিধি আপু দরজার খুলল।আমি ভেতরে আসতেই নিধি আমাকে জিজ্ঞেস করলো,,
"মাহিন কোথায়?"
"হয়তো চেম্বার গিয়েছে।"
"চেকআপ করিয়েছো?"
"হ্যা।"
"কিন্তু আমি তো শুনেছি তুমি যে ডক্টরকে দেখাও মানে ডক্টর হিনা আহমেদ এখন বিডিতে নেই।তাহলে?"
"হ্যা অন্য ডক্টর দেখেয়েছি।"
" ওহ।একটা কথা জিজ্ঞেস করি মেহের?"
"বলো।"
"মাহিন তোমাকে টাচ করেছে কখনো ? তুমি নিশ্চিয়ই বুঝতে পারছো আমি কি বোঝাতে চাইছি?"
আমি অবাক হই নিধির প্রশ্নে।মাথা নাড়িয়ে না করি।নিধি আর কিছু বলেনা।
__________________________________
রুমে গিয়ে বসতেই নিধি আমার জন্য জুস নিয়ে আসে।
"মেহের এটা তোমার জন্য।"
"ধন্যবাদ আপু।"
জুস খেয়ে আমি কিছুক্ষণ রেস্ট নিতেই আমার প্রচন্ড পেট ব্যথা শুরু হয়।
মনে হচ্ছে পেটের সবকিছু ফেটে বেরিয়ে আসছে।
প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। এমন কেনো হলো হঠাৎ করে?
চলবে? more...
No comments: