Header Ads Widget

test

আমরন_চেয়েছি_তোমায় ০৩



 আমরন_চেয়েছি_তোমায় - 3

লেখায়_সুরাইয়া_নওশিন
০৩
প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে রাত নয়টা। সাফি ড্রাইভ করছে পাশে বসে আছে পাশে বসে আছে আয়াদ। পেছনে সিটে রায়হান খান, রবিউল খান, নূরজাহান বেগম আর শাহানা বেগম। মাঝের সিটে বসেছে শায়লা বেগম, আয়রা, সারা আর সানি। সারা আর সানিকে অনেক পরিকল্পনা অনুযায়ী সাফি আর আয়াদ পাশাপাশি বসাতে পেরেছে। সাইডে বসার কারনে সানি চুপচাপ বসে বাইরে দিকে তাকিয়ে আছে। সারা তার দুই হাত বার বার কচলাচ্ছে। দুজনে পাশাপাশি বসে রয়েছে অথচ দুজনের মাঝে বিশাল দুরত্ব। এক শক্ত প্রাচীর দেয়াল যেন দুজনের মাঝে। সানির সাথে কথা বলার যেমন তীব্র ইচ্ছে করছে ঠিক তেমনি বহু বছরের অভিমান, জড়তা, সংকোচ এক সাথে বাঁধা দিচ্ছে। সানির উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে সারার। সবার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে কিন্তু তার সাথে নয়। পরক্ষনেই ভাবে কথা বলার দরজা স্বয়ং সেই বন্ধ করে দিয়েছে। হুট করে সাফি জোরে ব্রেক করে গাড়ি। পরিকল্পনা করে এমন কাজ করা। সারা অন্য মনস্ক থাকায় নিজেকে সামলাতে পারে নি হুমড়ি খেয়ে সামনে দিকে ঝুঁকে পরে। সারার ধারণা তার মাথা সিটের সাথে সংঘর্ষ হয়ে মাথার আকৃতি বিকৃতি হয়ে গিয়েছে, নয়তো বিশাল কোনো গোল আলুর রুপ ধারন করেছে। কিন্তু তার ধারণা ভুল, তার কপাল স্পর্শ করে সিটের উপর রাখা একটা বলিষ্ঠ হাতের উপর। সারা মাথা তুলে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকায় সানির দিকে। সানি চুপচাপ সামনের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মানুষটার কর্মকাণ্ড বরাবরই বিস্মিত করছে তাকে।
রায়হান খান গম্ভীর কন্ঠে বলে,,
" সাফি এ কেমন তোমার গাড়ি চালানোর ধরন। তুমি তো এই অসচেতন হয়ে গাড়ি চালাও না।"
" সরি বাবা। আসলে হুট করে সামনে কুকুর এসে পরে ছিলো।"
" সাবধানে গাড়ি চালাও। "
" জ্বি বাবা।"
আয়াদ আর সাফি মিটিমিটি হাসছে। আয়াদের আবারও উড়নচণ্ডী স্বভাবের জন্য এক ঘাত বেশি বুঝে গলা ছেড়ে গান ধরলো,,
" আমারই মনে জীবনে শুধু তোরই অধিকার
যাবো না ভুলে কখনো জানি প্রেমের অঙ্গীকার
উত্তর খুঁজে পেলো প্রশ্নেরা
সত্তির ছোঁয়া পেলো স্বপ্নেরা
দূরে দূরে তবু কেনো সাথিয়া
মন তোকে দিলাম
এই মন তোকে দিলাম,,,,,"
আশেপাশে গুরুজনেরা রয়েছে আয়াদের সেই দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার মন মতো গলা ছেড়ে গাইছে। আয়াদ বড়দের ছোট খাটো কথা গাঁয়ে মাখে না সে। চুপচাপ সব কথা শুনে পরিবর্তে আবারও কোনো না কোনো অঘটন ঘটিয়ে আবারও আসামীর মতো বড়দের কাঠগড়ায় দাঁড়ায়। এ যেন তার নিত্যদিনের স্বভাব। বড়দের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে আয়াদের এমন কর্মকাণ্ড দেখতে দেখতে।
সানি পেছন থেকে জোরে করেই আয়াদের মাথায় থাপ্পড় মারে। আয়াদ ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠে। নিজের হাতে মাথা নাড়তে নাড়তে বলে,,
" উফ ভাইয়া, মারলে কেন?"
রায়হান খান গম্ভীর কন্ঠে বলেন,,
" আরও একটা দাও সানি। দিন দিন ছেলেটা নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে।"
সানি আর সাফি ঠোঁট চেপে হাঁসছে। সারাও হাল্কা রাগী স্বরে বলে,,
" ইদানীং তুই খুব বেশি গান বলছিস আয়াদ।"
সানি এক পলক সারার দিকে তাকিয়ে আবারও সামনে তাকায়। আয়াদ বিরবির করে বলে,,
" হ্যাঁ এদের সেট করতে আমাকে নির্লজ্জ আর কত কি খেতাব পেতে হবে।"
রবিউল খান রাগ হয় খুবই কম। আর যদি হয় সেই দিন বাড়িতে বিশাল রকম ঝড় বয়ে যায়। শান্ত মানুষের রাগ ভয়ানক বিষয়টি তেমনি। রবিউল খান স্বাভাবিক ভাবে বললেন,,
" ছেলেটাকে আমি আর শুধরাতে পারলাম না। বুদ্ধি কবে হবে উপর ওয়ালা ভালো জানেন।"
তবে সবার বিপক্ষে গিয়ে আয়াদের সঙ্গ দেয় শাহানা বেগম।
" আয়াদ ঠিকি আছে। বুঝ মান ছেলে আমার।"
আধারের মাঝে একটু খানি আলোর সন্ধান পেয়ে খুশিতে আধখানা হয়ে গেলো আয়াদ। শাহানা বেগমকে এই মুহুর্তে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে আয়াদের। আয়াদ খুশিতে আধখানা হয়ে বলে,,
" ধন্যবাদ বড় মা। আমি জানি, কেউ না বুঝলেও আপনি আমাকে বুঝবেন।"
" হ্যাঁ বাবা। এই বাড়িতে একটাই বুঝ মান ছেলে। এই বয়সে এসব মজা ঠাট্টা করবে না তো কোন বয়সে করবে। এদিকে দেখো আমার ছেলে ২৮ বছর হয়ে গেছে এখনও বিয়ের নাম শুনতে চায় না।"
শুরু হয়ে গেলো শাহানা বেগম এর দৈনন্দিন জ্ঞ্যান। সুযোগ পেলেই শুরু হয়ে যায় তার বক্তব্য। সাফির জন্য হাজারটা মেয়ে দেখানো হয় আর সাফি পালিয়ে বেড়ায় এই বিয়ে নামক শব্দটা থেকে।
এবার সাফি ড্রাইভ করতে করতে এক হাতে আয়াদের মাথায় গাট্টা মারে। আয়াদ আবারও হাত দিয়ে মাথা নাড়তে নাড়তে বলে,,
" তুমিও কেন মারছো?"
সাফি মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে বলে,,
" তোর এক লাইন বেশি বুঝার স্বভাবের জন্য এখন ঘন্টা খানেক আমার মার ভাষন শুনতে হবে এই জন্য।"
শাহানা বেগম রাগী কন্ঠে বলে উঠেন,,
" একদম মারবি না আমার ছেলেকে। সত্য বললে তোর গাঁয়ে লাগে তাই না। আমার কথা ভাষন মনে হয় তোর কাছে।"
আয়াদ অসহায় কন্ঠে বলে,,
" দেখেছেন বড় মা, আমি ছোট বলে কিভাবে মারে। কেমন অন্যায় অত্যাচার করে।"
" চিন্তা করিস না বাবা তোর পাশে তোর বড় মা আছে। সাফি আর সানি এদের দুজনের আগে তোর বিয়ে দিবো আমি। তোরা থাক এমন আইবুড়ো হয়ে।"
আয়াদ যেন আরও খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো। হাল্কা নড়ে চড়ে নিয়ে একটু ভাব নিয়ে বলে,,
" তাহলে বড় মা কবে থেকে মেয়ে খুঁজছেন।"
আয়াদের এমন কথায় উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠে সবাই। রায়হান খান উচ্চ স্বরে না হাঁসলেও মুখে হাঁসি লেগে আছে তার। আয়াদের কর্মকান্ডে বাড়ির লোক হাঁসতে বাধ্য হয় বরাবরই। সানি আর সাফির মুখে নিশব্দ স্মিত হাঁসি। সানি নিশব্দে হাঁসতে হাঁসতে বলে,,
" তুই বাদরামো শুধরে আর ভালো হবি না আয়াদ।" more....
গল্প আড্ডার মাঝে খান বাড়িতে এসে পরেছে খান বাড়ির সদস্যরা। সবাই যে যার ঘরে পা বাড়ায়।
~~~~~~+++~~~~~~~
আজ ভার্সিটিতে যায় নি আরহি আর সারা দুজনেই। বিকেলে সারা আরহিকে খান বাড়িতে আসতে বলায় এক প্রকার বাধ্য হয়ে আসতে হয়েছে খান বাড়িতে।
সব সময় খান বাড়িতে আসতে ভালো লাগে না তার।
কিন্তু সারার জেদে না চাইতেও আসতে হয় মাঝে মাঝে তার। আজও তার ব্যাতিক্রম নয়। আরহি সারার বিছানা আরাম করে শুয়ে আছে। আর সারা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে মন মরা হয়ে নিজের লম্বা চুল ঠিক করতে ব্যস্ত। আরহি বিরক্ত ভরা মুখ নিয়ে বলে,,
" তুই এমন মন মরা হয়ে বসে আছিস বিরক্ত লাগছে আমার। কি হয়েছে বল তো দেখি আমায়?"
সারা মন মরা হয়ে জবাব দেয়,
" কিছু না।"
" সত্যি করে বল কি হয়েছে?"
আরহিকে সানি বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না সারা নিশ্চিত আরহি মজা নিবে। কিন্তু আরহিকে না বলেও ভালোও লাগছে না। দুজনের অভ্যাস একে অপরের কাছে সব কিছু শেয়ার করা। সারাকে চুপ থাকতে দেখে আরহি আবারও বলে,,
" কি হয়েছে বল? চুপ কেন?"
সারা একটু দ্বিধা নিয়ে বলে,,,
" মজা নিবি না তো?"
আরহি বুঝতে পারলো সানির বিষয়ে কিছু বলতে চাইছে সারা। আরহি মৃদু হেঁসে বলে,,
" না মজা নিবো না বল?"
সারা এক এক করে প্রোগ্রামের সব কথা খুলে বলতে লাগে আরহি। প্রোগ্রামের কথা বলা শেষ করে সারা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,,
" সানি ভাই তার বাবাকে খুব মিস করে কষ্ট পায় জানিস। আমার খুব খারাপ লেগেছে জানিস। আর সানি ভাই বরাবরই মানুষটা খুব অদ্ভুত। কথা বলে না অথচ সব সময় ঠিক প্রটেক্ট করে। "
" কথা কিভাবে বলবে কথা বলার রাস্তা তো তুই বন্ধ করে দিয়েছিস। একটা কথা বলবো জানু?"
" হ্যাঁ বল।"
" একি বাড়িতে থাকা, দুজনের না চাইতেও দেখা হবে প্রতিদিন। এভাবে কথা না বলে থাকলে দুজনেরি মধ্যে সংকোচ কাজ করবে,আর একে অপরের কথা মাথায় গেঁথে থাকবে। আর তুই যদি সানি ভাইয়ের সাথে কথা বলিস এখন যেমন সানি ভাইয়ের কথা মাথায় ঘুরপাক খেয়ে মন মরা হয়ে বসে আছিস তখন আর থাকবে না।মন খোলাসা হয়ে সানি ভাইকে প্রশ্ন করতে পারবি। আমি বলছি তুই সানি ভাইয়ের সাথে কথা বল।"
সারা একটু কিছুক্ষন ভেবে বলে,,
" দেখি।"
আরহি এবার একটু মজা নিলো। ঠাট্টা স্বরে বলে,,
" দেখি কেন রে? ভয় পাচ্ছিস নাকি। যদি আবার প্রেমেটেমে পরে যাস।
সারা তাচ্ছিল্যের সুরে হাল্কা উচ্চ স্বরে বলে,,
" প্রেমে আমি তাও আবার সানি মেহরাজ শিকদার এর উপর। ছোট ছিলাম তাই ভুল হয়েছে। এখন অসম্ভব,, আর শোন ভুল মানুষের প্রেমে পরার থেকে সব মানুষের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া ভালো বুঝলি।"
তাদের আগের কথোপকথন না শুনলেও শেষের কথা গুলো সারার ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে ঠিকি শুনে ফেলে সানি আর সাফি। সানি কোনো রকম হোঁচট খেতে খেতে উঠে দাঁড়ায়। সাফির দিকে চোখ মুখ কুচকে বিরক্তি স্বরে বলে,,
" কি ভাই এই শিক্ষা দিচ্ছো তোমার ছাত্রীদের।"
সাফি ঠোঁট চেপে হেঁসে বলে,,
" আমি ব্যর্থ তুই সঠিক শিক্ষা দে।"
সানি ভ্রু কুচকে সাফির দিকে তাকায়। সাফি মৃদু হেঁসে বলে,,
"দাঁড়া আমি দেখছি।"
সাফি হুট করে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে বিম ভ্রান্ত কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। তার খেয়াল ছিলো না আরহি এই ঘরে আছে। আরহি তৎক্ষনাৎ বিছানা থেকে এক লাফে উঠে। সাফি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,,
" সরি সরি।"
সারা বিষয়টা বেশ মজা হিসেবে নিলো। আরহি সারার দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,,
" তোর এতো বড় ভাইয়ের মাথায় কমনসেন্স নেই নাকি। রুমে ঢুকার আগে নক করতে হয় জানে না।"
" নিজের বোনের রুমে ঢুকবে নক কীসের। ভাইয়া আমার ঘরে নক ছাড়াই আসে। ভাই কি জানে নাকি তুই আছিস। "
সাফিকে এই ভাবে বেরিয়ে আসতে দেখে সানি জিজ্ঞাসুক কন্ঠে বলে,,
" কী হলো ভাই। এই ভাবে বেরিয়ে এলে কেন?"
সাফি বেশ বিরক্ত নিয়ে বলে,,
" আরহি ছিলো রুমে।"
সানি ঠোঁট চেপে হেঁসে বলে,,
" নক করে যাবে না তুমি।"
সাফি অবাক হয়ে বলে more.....
" আমার ছোট বোন নক করে ঢুকতে হবে মানে।"
সানি একটু লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বলে,,
" বোনের ঘরে নক না কড়ে প্রবেশ করার অভ্যাস ছেড়ে দাও বুঝলে। দু দিন পর বিয়ে হলে এই অভ্যাস থেকে গেলে তো সমস্যা তাই না। "
সাফি সানির দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। সানি মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে একটা ভদ্র ছেলের মতো।
" আমি তোদের দুজনের বড় ভাই ভুলে যাস না। সবাই আয়াদকে বদমাশ ভাবে এদিকে সবার আড়ালে যে একটা ভদ্র, নিষ্পাপ বদমাশ ছেলে ঘুরে বেড়ায়।
সানি ভ্রু কুচকে বলে,,
" তুমি এভাবে আমাকে বলতে পারো না ভাই।"
সাফি মৃদু হাঁসে। এর মাঝে সারা আরহির বিরক্ত ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট গলা ছেড়ে ডাকে,,
" ভাইয়া চলে গেলে কেন? কি বলতে এসেছিলে বলে যাও। ভেতরে এসো। "
সারা এরপর আস্তে আস্তে বলে,,
" ভেতরে পরিবেশ স্বাভাবিক এখন।"
আরহি সারার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠে,,
" আর আসবো না আমি তোর বাসায়।"
" সে দেখা যাবে।"
সাফি ঘরে প্রবেশ করতে করতে সানিকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,,
" তুই বাইরে কেন দাঁড়িয়ে আছিস। ভেতরে আয়। "
" না তুমি কথা বলো আমি ঘরে যাচ্ছি। "
সাফি সানির হাত ধরে টেনে সারার ঘরে আনে। দীর্ঘ ছয় বছর পর সারার ঘরে প্রবেশ করে সানি। অস্থির লাগছে সব কিছু তার। সারাও বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সানির দিকে। সাফি জোর করে সানিকে সারার ঘরে পড়ার টেবিলের সামনে থাকা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে পাশে থাকা আর একটা চেয়ারে নিজেও বসে পরলো। সানি বেশ ইতস্তত নিয়ে বসে রয়েছে। আরহি এবার দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে সালাম দিলো,,
" আসসালামু আলাইকুম স্যার।"
" ওয়ালাইকুম আসসালাম।
সাফি সারার দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,
" তোদের মধ্যে কি এসব কথা চলছে। কে কয় জনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে শুনি।"
সারা আর আরহি একে অপরের দিকে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে। ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে কয়েকবার। এদের ভীতু মুখ দেখে নিজের হাঁসি আটকিয়ে সাফি আবারও গম্ভীর কন্ঠে বলে,,
" কী হলো চুপ কেন?"
সারা ভীত কন্ঠে বলে,,
" আসলে তেমন কিছু নয় ভাই। ওই আরহি,,
আরহি সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয়,,
" আমি কিছু করি নি। তুই আমার নাম কেন নিচ্ছিস এখানে।"
সাফি বুঝতে পারছে এই দুজনের মাঝে ঝগড়া বেঁধে যাবে এখন। সাফি তৎক্ষনাৎ বলে উঠে,,
" দুজনে চুপ। একটা হবে না।"
সাফির হাল্কা হুংকারে কেঁপে উঠে দুজন। সানি রুমে প্রবেশ করেই তার ফোন বের করেছে। সে ফোন দেখছে আর মিটিমিটি আসছে। সাফি আবারও শাসনের কন্ঠে বলে,,
" দুজনের কেউ ভার্সিটিতে যাস নি। ঘরে বসে এখন অহেতুক কথা চলছে। দু দিন আগে ক্লাস টেস্ট দিয়েছিস সেটার রেজাল্ট জানিস। নিচ থেকে দেখা শুরু করলে তোদের দুজনের নাম আগে পাওয়া যাবে। অহেতুক গল্প না করে দুজনে মিলে গ্রুপ স্টাডি করলে হয় না। এখন ভালো ছেলেও না মেয়ের সিজিপিএ দেখে বিয়ে করে সার্টিফিকেট দেখে বিয়ে করে না।"
সারা আর আরহির দুজনের ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। আরহি পারছে না শুধু কাঁদতে। সারা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,,
" ভাইয়া ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখে ছিলাম আমি।"
" ওই সব ফালতু স্ট্যাটাস তুই তো দেখবি। আমি যে অনলাইন তোদের ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট গুলোর ভিডিও দেই মাঝে মাঝে লাইভে আসি সেই গুলো কখনও দেখবি না। দেখলে পাপ হবে ভালো রেজাল্ট যদি হয়। এরপর দু'জনের নাম্বার যদি আমি কম দেখেছি ক্যাম্পাসের সামনে চা বিক্রি করে হ্যান্ডসাম চাচ্চু তোদের দুজনকেই তার সাথে আমি বিয়ে দিবো। এক সাথে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখবি দুজন মিলে। আর আমি যেন আজ থেকে তোদের দুজনকেই আমি যখন লাইভে তোদের ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট নিয়ে লেকচার দিবো তোদের যেন দেখি। "
সানির সামনে এসব অপমান সারার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। সারা এবার অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" ঠিক আছে। কিন্তু ভাইয়া কারও কথা এভাবে আড়ি পেতে শুনতে হয় না।"
সারার এই কথা আরহির বেশ ভালো লেগেছে। বান্ধবীকে বুকে জড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করছে তার।
" ফাটা বাঁশের মতো চেঁচিয়ে কথা বললে আড়ি পাতার কোনো প্রয়োজন নেই। "
সারা বেশ ক্ষিপ্ত হলো তার বড় ভাই সাফির উপর।
বড় ভাই বলে সব সময় শাসন করবে, অপমান করবে এটা অন্যায়। সারার অভিমান আরও গাঢ় হলো। ভারি কন্ঠে বলে,,
" তুমি আমাকে এই ভাবে সব সময় বকতে পারো না হু।"
" তোকে কি আর কিছু বলা যায় বোন। আদরে মাথায় তুলে রেখেছে সবাই। থাক আমি গেলাম। আর যা বললাম তা যেন দুজনের মাথায় থাকে।"
সাফি এবার আরহির দিকে তাকায়। বিছানা ঘেষে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। সাফি আরহির দিকে তাকিয়ে বলে,,
" আরহি"
আরহি খানিকটা কেঁপে উঠে অপ্রস্তুত হয়ে বলে,,
" জ্বি স্যার।"
" মনে থাকবে তো কথা।"
আরহি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে,,
" জ্বি স্যার থাকবে।"
"গুড। আমি আসি তাহলে।"
সাফি উঠে দাঁড়ানোর আগেই সানি উঠে দাঁড়ায়। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো এই ঘরে তার। সাফি যেতেই সারার দুষ্ট মস্তিষ্কে একটা প্রশ্ন জেগে উঠে৷ সারা মিটিমিটি হেঁসে ন্যাকামি সুরে বলে,,,
" ভাইয়া।"
সাফি পেছনে ঘুরে তাকায়। ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,,
" জ্বি বলুন বইনা"
" বলছিলাম আমাদের ভাবির কত সিজিপিএ থাকতে হবে।"
সঙ্গে সঙ্গে চোখ মুখ কুচকে আসে সাফির। সানি আবারও মৃদু স্বরে হেঁসে উঠে সাফির দিকে তাকিয়ে। আরহি এবার মিটিমিটি হাঁসছে। তবে তার উচ্চ স্বরে হাঁসতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সাফির ভয়ে পারছে না আরহি। অনেক কষ্টে আটকিয়ে রেখেছে হাঁসি তার।
সারা অবাক হয়ে আবারও সানির দিকে তাকায়। এই মানুষটার হাঁসি সত্যি সুন্দর। মনে মনে সারা বিরক্ত হলো এই ভাবে সব সময় মন খুলে হাঁসলে কি হয়। কেমন একটা গোমড়া মুখ ভাব নিয়ে থাকে। যদিও সানির স্মিত হাঁসিটাও নজর কাড়ে তার তবে সানির হাঁসির শব্দটা তার হৃদয়ে অন্যরকম ভালো লাগা সৃষ্টি করে। সাফি রাগী কন্ঠে বলে,,
" বাম হাত দিয়ে ঠাঁটিয়ে চড় দিলে বাদরামি দূর হয়ে যাবে।"
সানি হাঁসি মুখে বলে,,
" বকছো কেন শুধু শুধু। তোমার বোন খারাপ তো কোনো প্রশ্ন করে নি।"
সারা আর আরহি অবিশ্বাস্য চোখে তাকায় সানির দিকে। সানি সারার পক্ষে কথা বলছে। সারার অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে যায় এবার। সাফি সানির দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,,
" তোর কাছে তো ভালো লাগবেই। সুযোগ আমার কি আসবে না।"
" রাগ করতে হয় না বড় ভাই। চলো ঘরে চলো। ঠান্ডা পানি খাওয়াই তোমাকে।"
সানি আর সাফি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই আরহি শব্দ করে হেঁসে উঠে। সারা ঠাই দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। আরহি হাঁসতে হাঁসতে সারার কাঁধে হাত রাখে।
" জানু তুমি আজ আমার মন জিতে নিয়েছো। দিয়েছো প্যাঁচা মুখো স্যারকে জব্দ করে। "
সারার এবার ঘোর কাটে। আরহির দিকে তাকিয়ে বলে,,
" হিঁ হিঁ করে হেঁসো না। ভাই কি বলে গেলো শুনলি না। সামনে আর একটা ক্লাস টেস্ট কম মার্ক পেলে না ঝুলে দিবে চাচ্চুকে। তখন দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে সতীন হবো।"
আরহির চোখে ভেসে উঠে চা বিক্রেতার ছবি। আরহি তৎক্ষনাৎ চোখ মুখ কুচকে বলে,,
" উহু না অসম্ভব।"
সারা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,,
" কম মার্ক পেলে এটাই সম্ভব। এখন দ্রুত চল দেখি ভাইয়ের পেইজটা। আমি তো ভাইয়ের পেইজের নোটিফিকেশন অফ করে রেখেছি। এতো মোটিভেশনাল জ্ঞ্যান বিরক্ত কর।"
শেষের কথা গুলো খুব বিরক্ত নিয়ে বলে সারা। আরহি শুকনো ঢোক গিলে বলে,,
" আমি তো তোর ভাইকে ব্লক করে রেখেছি।"
সারা অবাক হয়ে বলে,,
" কিহ। তুই আমার ভাইকে ব্লক লিস্টে রেখেছিস। আমার ভাইয়ের ফলোয়ার লিস্ট দেখেছিস তুই।"
" সে তুই দেখ। আমার দেখে কাজ নেই। তোর ভাইকে ভীষণ ভয় লাগে আমার। কেমন মনে হয় এই এখনি একটা বসিয়ে দিলো থাপ্পড়। "
থাপ্পড় এর কথা শুনতে সারা আরহির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়।
" এই শব্দ নেক্সট টাইম আমার সামনে নিবি না।"
" ওহ সরি। তোর ফ্রেন্ড লিস্টে না তাই আমারও এড ফ্রেন্ড এ এসেছিলো তোর ভাইয়ের আইডি। ওই দিনই আমি ব্লক করে দিয়েছি। যাতে আমার আইডি তোর ভাইয়ের সামনে না যায়। যদি আমার ফেসবুকের পোস্ট গুলো দেখে নেয়। তখন,,"
সারা ব্যঙ্গ করে বলে,,,
" উহু আমার ভাইয়ের তো কাজ নেই তোর আইডি দেখতে যাবে।"
" সে আমি জানি। তবুও আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না ব্যস।"
" তাহলে এখন ব্লক খোল। খুলে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠা।"
" ফ্রেন্ড লিস্টের থাকার কি প্রয়োজন। ওনার পেইজ ফলো করবো তাই হবে।"
" কেন কেন? দে তোর ফোন, একে তো আমার ভাইকে ব্লক লিস্টে রেখেছিস তুই।"
সারা জোর করে আরহির থেকে ফোন নিয়ে সাফি মেহতাব খান নামক ফেসবুক আইডি ব্লক থেকে ছাড়িয়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠাতে পাঠাতে বলে,,
" তোর না ফেসবুকে একটা ভালো ফ্রেন্ড ছিলো কথা হয় কি?"
" হয় মাঝে মাঝে। "
~~~~~~******~~~~~~******~~~~~~~
রাত ১০ টা ছাদে রেলিং ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সানি। বিশাল বড় আকাশে একটা মাত্র চাঁদ। চাঁদের একাকিত্ব যেন তার একাকিত্ব ভীষণ ভাবে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। তার কানে ভাসছে সারার বলা একটা শব্দ "ভুল মানুষ"। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সানি। দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে সানি মনে মনে বলে,,
"তোমাকে সঠিক প্রমাণ করতে গিয়ে, তোমার চোখে ভুল আমি। সব কথার যুক্তি খুঁজতে গিয়ে, হৃদয়ের সুর হারিয়ে ফেলেছি আমি ।বিলম্বিত অশ্রুর টানে, পৌঁছে গেছি সেখানেই।যেখানে সত্য আর ভুলের মাঝে,
আছো তুমি, আর আমি একা।"
সারা করিডর রাখা ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে সিড়ি উপরে উঠতে নিয়ে চোখ যায় ছাঁদের দরজার দিকে। এই রাতে ছাদের দরজা খোলা দেখে বেশ অবাক হলো সারা। কখনও এই রাতে ছাদের দরজা খোলা দেখে নি সারা। এতো রাতে ছাদে একা যেতে ভয় লাগছে ভীষণ। কিন্তু কেউ যদি ভুল করে ছাদের দরজা খুলে আসে বিষয়টি মোটেও নিরাপদ নয়। ভয়ে ভয়ে পা টিপে টিপে ছাঁদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বুকে ফুঁ দেয় সারা। একটু মাথা বের করে উঁকি দিতে চোখে পরে ছাদের লাইটে আলোয় স্পষ্ট দেখা সানির মুখ। সারা বেশ অবাক হলো এই মুহুর্তে ছাদে দেখে। কপাল কুচকে আসে সারার। সারা মনে মনে ভাবলো,,
" থাকুক আমার কি।"
সারা ভেবে চলে আসতেই পায়ের গতি ধীর করলো। মনে হলো আরহির কথা। সারা দ্বিধা দন্দে পরে যায় ভীষণ, কথা বলবে কি বলবে না। এক দিকে আরহি ঠিক বলেছে সানির সাথে একবার কথা বললে হয়তো সানি নামক মানুষটির কথা তার মস্তিষ্কে খুব বেশি জ্বালাতন করতে পারবে না। আর সানির সাথে কথা বলার তীব্র ইচ্ছে কাল প্রোগ্রাম এর পর থেকে ভীষণ ভাবে জ্বালাতন করছে। মনে তীব্র ইচ্ছে জাগ্রত হচ্ছে সানির সাথে একটু বলার। সকল মান অভিমান এর এই শক্ত প্রাচীর দেয়াল ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার। রাখতে চাইছে না এই দেয়াল। দম বন্ধ হয়ে আসছে সারার। সারা এবার দাঁড়ালো, এরপর ধীর পায়ে এগিয়ে এলো ছাদের দরজা দিকে। হাত,পা অসম্ভব ভাবে কাঁপছে তার। হৃদয়ের কম্পন যেন অস্বাভাবিক। সারা একবার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দুই হাতে জামা শক্ত করে মুঠো করে ধরে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে,,
" সানি ভাই।"
পুরো শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠে সানির। দীর্ঘ ছয় বছর পর এই কন্ঠে ডাকটা শুনতে পেলো সে। নিজের কান যেন অবিশ্বাস্য। অবাক হয়ে পেছনে ঘুরে তাকায় সানি।
সারা সাহস করে ডাকলেও এই বার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, পুরো শারীরের শক্তি হারিয়ে ফেলছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে সে।
সানি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সূবর্ণা নয়নের রাণী রমণীর দিকে। তার মানে সে ভুল শুনে নি। দীর্ঘ ছয় বছর পর তার সূবর্ণা রাণী রাগ,অভিমান ভুলে তাকে আজ ডেকেছে। বিষয়টি স্বপ্নের মতো লাগছে তার কাজে। সানি বিস্মিত হয়ে জবাব দেয়,,,
" হুম। "
চোখ জোরা খুললো সারা, জামার মুঠো করা হাত ছেড়ে দিলো।সারার পুরো শরীর কাঁপছে তেমনি অভিমান হচ্ছে। আগ বাড়িয়ে কথা বলেছে দেখে ভাব নিচ্ছে তার সাথে।
এতো বছর পর কথা বললো জবাবে শুধু হুম। সারা নিজের অভিমানকে আজ প্রশ্রয় দিলো না। নিজের দুই হাত অনবরত কচলাতে কচলাতে বলে,,
" কংগ্রাচুলেশন"
দুজনের বুকে ঝড়ের তীব্র আক্রমণ। আবার দুজনের হৃদস্পন্দন ক্রমান্বয়ে অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে চলছে। রাতের নিস্তব্ধতা যেন সব কিছু আরও অস্বাভাবিক করে তুলেছে। সানির মস্তিষ্কের স্নায়ু গুলো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। সে আবারও বিস্মিত হয়ে জবাব দেয়,,
" হুম। "
সারার ভীষণ রাগ হচ্ছে। সারা মনে মনে নিজেকে শান্ত করে।
" সারা কুল। কিচ্ছু হয় নি। এনার ডিকশনারিতে হুম আর থাপ্পড় ছাড়া কিছু নেই। কুল বেবি,,,"
সারা আবারও দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,,
" ধন্যবাদ "
এবার খানিকটা ভ্রু কুচকে আসে সানির। অভিন্দন দেওয়ার কারন বুঝেতে পেরেছে। কিন্তু ধন্যবাদ এর কারন বুঝতে পারলো না। জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
" কেন?"
সারা মনে মনে বিরবির করে বলে,,
" যাক বাবা আর একটা শব্দ খুঁজে পেলাম। "
সারা এবার মুখে হাঁসি এনে বলে,,
" ওই তো গিফটের জন্য।"
সানি এবার স্মিত হাঁসে।
" ওহ আচ্ছা।"
সারা আর নিজের রাগ ধরে রাখতে পারলো না। পুরো বাড়ির লোকের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে অথচ তার সামনে কথা ফুরিয়ে যায়। এমন অস্বাভাবিক আচরণ কেন? আগ বাড়িয়ে কথা বলেছে দেখে ভাব নিবে। সারা অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" ভাব দেখাচ্ছেন আমার সাথে। "
সারা আগে সানিকে তুমি করে বলতো তবে আপনি সম্মোধন এটাও মন্দ লাগছে না সানির কাছে। আসলে দীর্ঘ বছরের দূরত্ব বেশ জড়তা চলে এসেছে সারার মাঝে। আগের মতো ছোটো তো নেই সে। আর ছোট থাকতে এমন এক কান্ড বাধিয়ে ফেলেছিলো সে। ভাবতেই যেন লজ্জার চাদর মুড়িয়ে নিচ্ছে তাকে। আবার সেই মানুষটার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে এসেছে। সানির মুখে সেই স্মিত হাঁসি।
" ভাব দেখালাম কোথায়।"
সারা অনুরূপ অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" সবার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছেন। আমার সাথে হুম, ওহ আচ্ছা এসব কি। আমি আগ বাড়িয়ে কথা বলছি তাই ভাব দেখাচ্ছেন।"
সানি রেলিং হেলান দিয়ে দুই হাত বক্ষে ভাজ করে নিয়ে বলেন,,
" পুরো বাড়ির লোক আমি বাড়িতে আসাতে খুশি হয়েছে। আমাকে দেখতে গিয়েছে, আমার সাথে কথা বলেছে, খোঁজ নিয়েছে আপনি কি এসেছিলেন ম্যাম। বরং ঘরের দরজা লাগিয়ে বসে ছিলেন। তাহলে অবশ্যই আমি এই বাড়িতে ফিরে আসাতে আপনি খুশি নন।তাহলে স্বাভাবিক ভাবে কিভাবে কথা বলি বলুন।
সে দরজা তো আপনি নিজ হাতে বন্ধ করে দিয়েছেন ম্যাম।"
সারা এবার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। এ প্রশ্নের জবাব নেই তার কাছে। সানি এগিয়ে গেলো সারার দিকে। দুজনের উচ্চতার তফাৎ বেশি থাকায় সানি সারার সামনে একটু ঝুঁকে দাঁড়ায়। আবারও সানির পারফিউম এর তীব্র সুবাস অনুভব করলো সারা। হুট করে সানির এই ভাবে সামনে এসে দাঁড়াতে একটু ভয়ে পিছিয়ে গেলো সারা। আবারও থাপ্পড় খাওয়ার আগে দৌঁড়ে পালাবে সে। সানি ধীর কন্ঠে বলে,,
" ছোটরা ভুল করলে সেই ভুল শুধরানোর কি অধিকার নেই বড়দের।"
সারা চোখ পিটপিট করে সানির দিকে তাকায়। ডান গালে হাত রেখে অসহায় কন্ঠে বলে,,
" তাই বলে এই ভাবে অতটুকু বাচ্চার গালে থাপ্পড় দিবেন আপনি।"
সানি এবার মৃদু স্বরে হেঁসে উঠে সারার এমন কথায়।
সারা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হাঁসির দিকে। সানি হাঁসি মুখে বলে,,
" যে প্রোপজ করতে পারে সে অতটুকু বাচ্চা কিভাবে হয়।" more...
সারার দিকে ভ্রু নাচিয়ে কথা টুকু বলে সানি। সারা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেলো। তখন ছোটো ছিলো না বুঝে করে ফেলেছে এখন তো বড় হয়েছে। এই মুহুর্তে সানির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ লজ্জা পাচ্ছে সারা। কি ভয়ংকর অসস্তি কর পরিস্থিতি। সারা সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখ নামিয়ে নেয়। সানি ঠোঁট চেপে হাঁসে। সানি আর পুরনো প্রসঙ্গ টেনে মেয়েটাকে আর লজ্জায় ফেলতে চাইলো না। তাই প্রসঙ্গ পাল্টেত বলে,,
" এতো রাতে ছাদে আসা কেন শুনি?"
সারা মাথা নিচু করে বলে,,
" ঠান্ডা পানি আনতে গিয়েছিলাম। তারপর দেখি ছাদের দরজা খোলা তাই এসেছি।"
" ছাদের দরজা খুলা দেখলে হুটহাট ছাদে আসবেন না রাতে। জ্বিন ভূতের কথা বলা তো যায় না।"
আশেপাশে তাকিয়ে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে সারা। এতোক্ষণে সাহস করে আসলেও এই মুহুর্তে সানির কথা শুনে বেশ ভয় পেলো সারা। সারার ভীতু মুখ দেখে ঠোঁট চেপে নিশব্দে হাঁসে সানি। সানি আবারও নরম কন্ঠে বলে,,
" এই রাতে ঠান্ডা পানি কেন? এই রকম এতো ফ্রিজের পানি খেতে হয় না। ঠান্ডা লেগে গলা বসে যাবে। নরমাল পানি খাবেন। আর ঠান্ডা পানি খাবেন না এই ভাবে।"
সারা বাধ্য মেয়ের মতো হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়,,
" ঠিক আছে। "
কিন্তু সারা মনে মনে বলে,,
" কথা না বলা শুরু করতেই হুকুম করা শুরু।"
সানি সারার দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,
" একটা কথা বলবো।"
সারা সানির দিকে তাকালো। সানির দৃষ্টি স্থির। সারা মাথা নাড়িয়ে বলে,,
" জ্বি বলুন।"
" আজ হুট করে কথা বললেন। আর কোনো রাগ অভিমান নেই।"
সানির এমন প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে পরে যায় সারা। কি জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছে না। তার সাথে কথা বলার তীব্র আকাঙ্খা থেকে সে আজ কথা বলেছে। সারা অপ্রস্তুত হয়ে বলে,,
" কেন কথা বলা যাবে না।"
" না তেমনটা নয়। চারদিন হলো এই বাড়িতে এসেছি আপনি কথা বলেন নি তাই জিজ্ঞাসা করলাম। হুট করে রাগ অভিমান কিভাবে হারিয়ে গেলো। আচ্ছা যাই হোক, এই বার যান গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন।"
" আপনি যাবেন না।"
" একটু পর যাচ্ছি। আপনি যান তাহলে।"
" আপনাকে ভূতে ধরবে না।"
সানি মুচকি হেঁসে বলে,,
" নাহ। ওদের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। "
ভ্রু কুচকে আসে সারার। সারার বুঝতে বাকি রইলো না সানি মজা নিচ্ছে সারার সঙ্গে। সারা অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" ঠিক আছে গল্প করুন আপনার বন্ধুদের সাথে। "
সারা কথাটি বলে পা বাড়াতে নিলে সানি হাস্যজ্বল মুখে বলে উঠে,,
" ম্যাম ফোনের ওয়ালপেপার টা পাল্টাবেন। আর ডান গালের ছবি দিয়ে রাখতে হবে না।"
সারা যেমন অবাক হলো তার থেকে বেশি লজ্জা পেলো এই মানুষ তার ফোনের ওয়ালপেপার কিভাবে দেখতে পেলো। তার পাগলামো নিয়ে কি জানো ভাবছে লোকটা। সারা আর কথার জবাব দিলো না। দৌঁড়ে চলে আসে সেখান থেকে। সানি সারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাঁসে। সারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,,
"তোমার চাহনিতে আমি যেন একটি সৃষ্টি-প্রেরণা খুঁজে পাই, যেখানে কল্পনা ও বাস্তবতার সীমানা মিলিত হয়।
তোমার অস্তিত্ব যেন আমার হৃদয়ের একটি অপূর্ব সুর, যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় সীমাহীন মহাসমুদ্রের গহীনে।"
চলবে more....

1
সাফি ঘরে প্রবেশ করতে করতে সানিকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,,
" তুই বাইরে কেন দাঁড়িয়ে আছিস। ভেতরে আয়। "
" না তুমি কথা বলো আমি ঘরে যাচ্ছি। "
সাফি সানির হাত ধরে টেনে সারার ঘরে আনে। দীর্ঘ ছয় বছর পর সারার ঘরে প্রবেশ করে সানি। অস্থির লাগছে সব কিছু তার। সারাও বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সানির দিকে। সাফি জোর করে সানিকে সারার ঘরে পড়ার টেবিলের সামনে থাকা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে পাশে থাকা আর একটা চেয়ারে নিজেও বসে পরলো। সানি বেশ ইতস্তত নিয়ে বসে রয়েছে। আরহি এবার দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে সালাম দিলো,,
" আসসালামু আলাইকুম স্যার।"
" ওয়ালাইকুম আসসালাম।
সাফি সারার দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,
" তোদের মধ্যে কি এসব কথা চলছে। কে কয় জনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে শুনি।"
সারা আর আরহি একে অপরের দিকে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে। ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে কয়েকবার। এদের ভীতু মুখ দেখে নিজের হাঁসি আটকিয়ে সাফি আবারও গম্ভীর কন্ঠে বলে,,
" কী হলো চুপ কেন?"
সারা ভীত কন্ঠে বলে,,
" আসলে তেমন কিছু নয় ভাই। ওই আরহি,,
আরহি সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয়,,
" আমি কিছু করি নি। তুই আমার নাম কেন নিচ্ছিস এখানে।"
সাফি বুঝতে পারছে এই দুজনের মাঝে ঝগড়া বেঁধে যাবে এখন। সাফি তৎক্ষনাৎ বলে উঠে,,
" দুজনে চুপ। একটা হবে না।"
সাফির হাল্কা হুংকারে কেঁপে উঠে দুজন। সানি রুমে প্রবেশ করেই তার ফোন বের করেছে। সে ফোন দেখছে আর মিটিমিটি আসছে। সাফি আবারও শাসনের কন্ঠে বলে,,
" দুজনের কেউ ভার্সিটিতে যাস নি। ঘরে বসে এখন অহেতুক কথা চলছে। দু দিন আগে ক্লাস টেস্ট দিয়েছিস সেটার রেজাল্ট জানিস। নিচ থেকে দেখা শুরু করলে তোদের দুজনের নাম আগে পাওয়া যাবে। অহেতুক গল্প না করে দুজনে মিলে গ্রুপ স্টাডি করলে হয় না। এখন ভালো ছেলেও না মেয়ের সিজিপিএ দেখে বিয়ে করে সার্টিফিকেট দেখে বিয়ে করে না।"
সারা আর আরহির দুজনের ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। আরহি পারছে না শুধু কাঁদতে। সারা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,,
" ভাইয়া ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখে ছিলাম আমি।"
" ওই সব ফালতু স্ট্যাটাস তুই তো দেখবি। আমি যে অনলাইন তোদের ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট গুলোর ভিডিও দেই মাঝে মাঝে লাইভে আসি সেই গুলো কখনও দেখবি না। দেখলে পাপ হবে ভালো রেজাল্ট যদি হয়। এরপর দু'জনের নাম্বার যদি আমি কম দেখেছি ক্যাম্পাসের সামনে চা বিক্রি করে হ্যান্ডসাম চাচ্চু তোদের দুজনকেই তার সাথে আমি বিয়ে দিবো। এক সাথে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখবি দুজন মিলে। আর আমি যেন আজ থেকে তোদের দুজনকেই আমি যখন লাইভে তোদের ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট নিয়ে লেকচার দিবো তোদের যেন দেখি। "
সানির সামনে এসব অপমান সারার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। সারা এবার অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" ঠিক আছে। কিন্তু ভাইয়া কারও কথা এভাবে আড়ি পেতে শুনতে হয় না।"
সারার এই কথা আরহির বেশ ভালো লেগেছে। বান্ধবীকে বুকে জড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করছে তার।
" ফাটা বাঁশের মতো চেঁচিয়ে কথা বললে আড়ি পাতার কোনো প্রয়োজন নেই। "
সারা বেশ ক্ষিপ্ত হলো তার বড় ভাই সাফির উপর।
বড় ভাই বলে সব সময় শাসন করবে, অপমান করবে এটা অন্যায়। সারার অভিমান আরও গাঢ় হলো। ভারি কন্ঠে বলে,,
" তুমি আমাকে এই ভাবে সব সময় বকতে পারো না হু।"
" তোকে কি আর কিছু বলা যায় বোন। আদরে মাথায় তুলে রেখেছে সবাই। থাক আমি গেলাম। আর যা বললাম তা যেন দুজনের মাথায় থাকে।"
সাফি এবার আরহির দিকে তাকায়। বিছানা ঘেষে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। সাফি আরহির দিকে তাকিয়ে বলে,,
" আরহি" more.....
আরহি খানিকটা কেঁপে উঠে অপ্রস্তুত হয়ে বলে,,
" জ্বি স্যার।"
" মনে থাকবে তো কথা।"
আরহি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে,,
" জ্বি স্যার থাকবে।"
"গুড। আমি আসি তাহলে।"
সাফি উঠে দাঁড়ানোর আগেই সানি উঠে দাঁড়ায়। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো এই ঘরে তার। সাফি যেতেই সারার দুষ্ট মস্তিষ্কে একটা প্রশ্ন জেগে উঠে৷ সারা মিটিমিটি হেঁসে ন্যাকামি সুরে বলে,,,
" ভাইয়া।"
সাফি পেছনে ঘুরে তাকায়। ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,,
" জ্বি বলুন বইনা"
" বলছিলাম আমাদের ভাবির কত সিজিপিএ থাকতে হবে।"
সঙ্গে সঙ্গে চোখ মুখ কুচকে আসে সাফির। সানি আবারও মৃদু স্বরে হেঁসে উঠে সাফির দিকে তাকিয়ে। আরহি এবার মিটিমিটি হাঁসছে। তবে তার উচ্চ স্বরে হাঁসতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সাফির ভয়ে পারছে না আরহি। অনেক কষ্টে আটকিয়ে রেখেছে হাঁসি তার।
সারা অবাক হয়ে আবারও সানির দিকে তাকায়। এই মানুষটার হাঁসি সত্যি সুন্দর। মনে মনে সারা বিরক্ত হলো এই ভাবে সব সময় মন খুলে হাঁসলে কি হয়। কেমন একটা গোমড়া মুখ ভাব নিয়ে থাকে। যদিও সানির স্মিত হাঁসিটাও নজর কাড়ে তার তবে সানির হাঁসির শব্দটা তার হৃদয়ে অন্যরকম ভালো লাগা সৃষ্টি করে। সাফি রাগী কন্ঠে বলে,,
" বাম হাত দিয়ে ঠাঁটিয়ে চড় দিলে বাদরামি দূর হয়ে যাবে।"
সানি হাঁসি মুখে বলে,,
" বকছো কেন শুধু শুধু। তোমার বোন খারাপ তো কোনো প্রশ্ন করে নি।"
সারা আর আরহি অবিশ্বাস্য চোখে তাকায় সানির দিকে। সানি সারার পক্ষে কথা বলছে। সারার অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে যায় এবার। সাফি সানির দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,,
" তোর কাছে তো ভালো লাগবেই। সুযোগ আমার কি আসবে না।"
" রাগ করতে হয় না বড় ভাই। চলো ঘরে চলো। ঠান্ডা পানি খাওয়াই তোমাকে।"
সানি আর সাফি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই আরহি শব্দ করে হেঁসে উঠে। সারা ঠাই দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। আরহি হাঁসতে হাঁসতে সারার কাঁধে হাত রাখে।
" জানু তুমি আজ আমার মন জিতে নিয়েছো। দিয়েছো প্যাঁচা মুখো স্যারকে জব্দ করে। "
সারার এবার ঘোর কাটে। আরহির দিকে তাকিয়ে বলে,,
" হিঁ হিঁ করে হেঁসো না। ভাই কি বলে গেলো শুনলি না। সামনে আর একটা ক্লাস টেস্ট কম মার্ক পেলে না ঝুলে দিবে চাচ্চুকে। তখন দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে সতীন হবো।"
আরহির চোখে ভেসে উঠে চা বিক্রেতার ছবি। আরহি তৎক্ষনাৎ চোখ মুখ কুচকে বলে,,
" উহু না অসম্ভব।"
সারা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,,
" কম মার্ক পেলে এটাই সম্ভব। এখন দ্রুত চল দেখি ভাইয়ের পেইজটা। আমি তো ভাইয়ের পেইজের নোটিফিকেশন অফ করে রেখেছি। এতো মোটিভেশনাল জ্ঞ্যান বিরক্ত কর।"
শেষের কথা গুলো খুব বিরক্ত নিয়ে বলে সারা। আরহি শুকনো ঢোক গিলে বলে,,
" আমি তো তোর ভাইকে ব্লক করে রেখেছি।"
সারা অবাক হয়ে বলে,,
" কিহ। তুই আমার ভাইকে ব্লক লিস্টে রেখেছিস। আমার ভাইয়ের ফলোয়ার লিস্ট দেখেছিস তুই।"
" সে তুই দেখ। আমার দেখে কাজ নেই। তোর ভাইকে ভীষণ ভয় লাগে আমার। কেমন মনে হয় এই এখনি একটা বসিয়ে দিলো থাপ্পড়। "
থাপ্পড় এর কথা শুনতে সারা আরহির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়।
" এই শব্দ নেক্সট টাইম আমার সামনে নিবি না।"
" ওহ সরি। তোর ফ্রেন্ড লিস্টে না তাই আমারও এড ফ্রেন্ড এ এসেছিলো তোর ভাইয়ের আইডি। ওই দিনই আমি ব্লক করে দিয়েছি। যাতে আমার আইডি তোর ভাইয়ের সামনে না যায়। যদি আমার ফেসবুকের পোস্ট গুলো দেখে নেয়। তখন,,"
সারা ব্যঙ্গ করে বলে,,,
" উহু আমার ভাইয়ের তো কাজ নেই তোর আইডি দেখতে যাবে।"
" সে আমি জানি। তবুও আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না ব্যস।"
" তাহলে এখন ব্লক খোল। খুলে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠা।"
" ফ্রেন্ড লিস্টের থাকার কি প্রয়োজন। ওনার পেইজ ফলো করবো তাই হবে।"
" কেন কেন? দে তোর ফোন, একে তো আমার ভাইকে ব্লক লিস্টে রেখেছিস তুই।"
সারা জোর করে আরহির থেকে ফোন নিয়ে সাফি মেহতাব খান নামক ফেসবুক আইডি ব্লক থেকে ছাড়িয়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠাতে পাঠাতে বলে,,
" তোর না ফেসবুকে একটা ভালো ফ্রেন্ড ছিলো কথা হয় কি?"
" হয় মাঝে মাঝে। "
~~~~~~******~~~~~~******~~~~~~~
রাত ১০ টা ছাদে রেলিং ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সানি। বিশাল বড় আকাশে একটা মাত্র চাঁদ। চাঁদের একাকিত্ব যেন তার একাকিত্ব ভীষণ ভাবে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। তার কানে ভাসছে সারার বলা একটা শব্দ "ভুল মানুষ"। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সানি। দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে সানি মনে মনে বলে,,
"তোমাকে সঠিক প্রমাণ করতে গিয়ে, তোমার চোখে ভুল আমি। সব কথার যুক্তি খুঁজতে গিয়ে, হৃদয়ের সুর হারিয়ে ফেলেছি আমি ।বিলম্বিত অশ্রুর টানে, পৌঁছে গেছি সেখানেই।যেখানে সত্য আর ভুলের মাঝে,
আছো তুমি, আর আমি একা।"
সারা করিডর রাখা ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে সিড়ি উপরে উঠতে নিয়ে চোখ যায় ছাঁদের দরজার দিকে। এই রাতে ছাদের দরজা খোলা দেখে বেশ অবাক হলো সারা। কখনও এই রাতে ছাদের দরজা খোলা দেখে নি সারা। এতো রাতে ছাদে একা যেতে ভয় লাগছে ভীষণ। কিন্তু কেউ যদি ভুল করে ছাদের দরজা খুলে আসে বিষয়টি মোটেও নিরাপদ নয়। ভয়ে ভয়ে পা টিপে টিপে ছাঁদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বুকে ফুঁ দেয় সারা। একটু মাথা বের করে উঁকি দিতে চোখে পরে ছাদের লাইটে আলোয় স্পষ্ট দেখা সানির মুখ। সারা বেশ অবাক হলো এই মুহুর্তে ছাদে দেখে। কপাল কুচকে আসে সারার। সারা মনে মনে ভাবলো,,
" থাকুক আমার কি।"
সারা ভেবে চলে আসতেই পায়ের গতি ধীর করলো। মনে হলো আরহির কথা। সারা দ্বিধা দন্দে পরে যায় ভীষণ, কথা বলবে কি বলবে না। এক দিকে আরহি ঠিক বলেছে সানির সাথে একবার কথা বললে হয়তো সানি নামক মানুষটির কথা তার মস্তিষ্কে খুব বেশি জ্বালাতন করতে পারবে না। আর সানির সাথে কথা বলার তীব্র ইচ্ছে কাল প্রোগ্রাম এর পর থেকে ভীষণ ভাবে জ্বালাতন করছে। মনে তীব্র ইচ্ছে জাগ্রত হচ্ছে সানির সাথে একটু বলার। সকল মান অভিমান এর এই শক্ত প্রাচীর দেয়াল ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার। রাখতে চাইছে না এই দেয়াল। দম বন্ধ হয়ে আসছে সারার। সারা এবার দাঁড়ালো, এরপর ধীর পায়ে এগিয়ে এলো ছাদের দরজা দিকে। হাত,পা অসম্ভব ভাবে কাঁপছে তার। হৃদয়ের কম্পন যেন অস্বাভাবিক। সারা একবার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দুই হাতে জামা শক্ত করে মুঠো করে ধরে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে,,
" সানি ভাই।"
পুরো শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠে সানির। দীর্ঘ ছয় বছর পর এই কন্ঠে ডাকটা শুনতে পেলো সে। নিজের কান যেন অবিশ্বাস্য। অবাক হয়ে পেছনে ঘুরে তাকায় সানি।
সারা সাহস করে ডাকলেও এই বার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, পুরো শারীরের শক্তি হারিয়ে ফেলছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে সে।
সানি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সূবর্ণা নয়নের রাণী রমণীর দিকে। তার মানে সে ভুল শুনে নি। দীর্ঘ ছয় বছর পর তার সূবর্ণা রাণী রাগ,অভিমান ভুলে তাকে আজ ডেকেছে। বিষয়টি স্বপ্নের মতো লাগছে তার কাজে। সানি বিস্মিত হয়ে জবাব দেয়,,,
" হুম। "
চোখ জোরা খুললো সারা, জামার মুঠো করা হাত ছেড়ে দিলো।সারার পুরো শরীর কাঁপছে তেমনি অভিমান হচ্ছে। আগ বাড়িয়ে কথা বলেছে দেখে ভাব নিচ্ছে তার সাথে।
এতো বছর পর কথা বললো জবাবে শুধু হুম। সারা নিজের অভিমানকে আজ প্রশ্রয় দিলো না। নিজের দুই হাত অনবরত কচলাতে কচলাতে বলে,,
" কংগ্রাচুলেশন"
দুজনের বুকে ঝড়ের তীব্র আক্রমণ। আবার দুজনের হৃদস্পন্দন ক্রমান্বয়ে অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে চলছে। রাতের নিস্তব্ধতা যেন সব কিছু আরও অস্বাভাবিক করে তুলেছে। সানির মস্তিষ্কের স্নায়ু গুলো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। সে আবারও বিস্মিত হয়ে জবাব দেয়,,
" হুম। "
সারার ভীষণ রাগ হচ্ছে। সারা মনে মনে নিজেকে শান্ত করে।
" সারা কুল। কিচ্ছু হয় নি। এনার ডিকশনারিতে হুম আর থাপ্পড় ছাড়া কিছু নেই। কুল বেবি,,,"
সারা আবারও দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,,
" ধন্যবাদ "
এবার খানিকটা ভ্রু কুচকে আসে সানির। অভিন্দন দেওয়ার কারন বুঝেতে পেরেছে। কিন্তু ধন্যবাদ এর কারন বুঝতে পারলো না। জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
" কেন?"
সারা মনে মনে বিরবির করে বলে,,
" যাক বাবা আর একটা শব্দ খুঁজে পেলাম। "
সারা এবার মুখে হাঁসি এনে বলে,,
" ওই তো গিফটের জন্য।"
সানি এবার স্মিত হাঁসে।
" ওহ আচ্ছা।"
সারা আর নিজের রাগ ধরে রাখতে পারলো না। পুরো বাড়ির লোকের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে অথচ তার সামনে কথা ফুরিয়ে যায়। এমন অস্বাভাবিক আচরণ কেন? আগ বাড়িয়ে কথা বলেছে দেখে ভাব নিবে। সারা অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" ভাব দেখাচ্ছেন আমার সাথে। "
সারা আগে সানিকে তুমি করে বলতো তবে আপনি সম্মোধন এটাও মন্দ লাগছে না সানির কাছে। আসলে দীর্ঘ বছরের দূরত্ব বেশ জড়তা চলে এসেছে সারার মাঝে। আগের মতো ছোটো তো নেই সে। আর ছোট থাকতে এমন এক কান্ড বাধিয়ে ফেলেছিলো সে। ভাবতেই যেন লজ্জার চাদর মুড়িয়ে নিচ্ছে তাকে। আবার সেই মানুষটার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে এসেছে। সানির মুখে সেই স্মিত হাঁসি।
" ভাব দেখালাম কোথায়।"
সারা অনুরূপ অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" সবার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছেন। আমার সাথে হুম, ওহ আচ্ছা এসব কি। আমি আগ বাড়িয়ে কথা বলছি তাই ভাব দেখাচ্ছেন।"
সানি রেলিং হেলান দিয়ে দুই হাত বক্ষে ভাজ করে নিয়ে বলেন,,
" পুরো বাড়ির লোক আমি বাড়িতে আসাতে খুশি হয়েছে। আমাকে দেখতে গিয়েছে, আমার সাথে কথা বলেছে, খোঁজ নিয়েছে আপনি কি এসেছিলেন ম্যাম। বরং ঘরের দরজা লাগিয়ে বসে ছিলেন। তাহলে অবশ্যই আমি এই বাড়িতে ফিরে আসাতে আপনি খুশি নন।তাহলে স্বাভাবিক ভাবে কিভাবে কথা বলি বলুন।
সে দরজা তো আপনি নিজ হাতে বন্ধ করে দিয়েছেন ম্যাম।"
সারা এবার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। এ প্রশ্নের জবাব নেই তার কাছে। সানি এগিয়ে গেলো সারার দিকে। দুজনের উচ্চতার তফাৎ বেশি থাকায় সানি সারার সামনে একটু ঝুঁকে দাঁড়ায়। আবারও সানির পারফিউম এর তীব্র সুবাস অনুভব করলো সারা। হুট করে সানির এই ভাবে সামনে এসে দাঁড়াতে একটু ভয়ে পিছিয়ে গেলো সারা। আবারও থাপ্পড় খাওয়ার আগে দৌঁড়ে পালাবে সে। সানি ধীর কন্ঠে বলে,,
" ছোটরা ভুল করলে সেই ভুল শুধরানোর কি অধিকার নেই বড়দের।"
সারা চোখ পিটপিট করে সানির দিকে তাকায়। ডান গালে হাত রেখে অসহায় কন্ঠে বলে,,
" তাই বলে এই ভাবে অতটুকু বাচ্চার গালে থাপ্পড় দিবেন আপনি।"
সানি এবার মৃদু স্বরে হেঁসে উঠে সারার এমন কথায়।
সারা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হাঁসির দিকে। সানি হাঁসি মুখে বলে,,
" যে প্রোপজ করতে পারে সে অতটুকু বাচ্চা কিভাবে হয়।" more...
সারার দিকে ভ্রু নাচিয়ে কথা টুকু বলে সানি। সারা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেলো। তখন ছোটো ছিলো না বুঝে করে ফেলেছে এখন তো বড় হয়েছে। এই মুহুর্তে সানির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ লজ্জা পাচ্ছে সারা। কি ভয়ংকর অসস্তি কর পরিস্থিতি। সারা সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখ নামিয়ে নেয়। সানি ঠোঁট চেপে হাঁসে। সানি আর পুরনো প্রসঙ্গ টেনে মেয়েটাকে আর লজ্জায় ফেলতে চাইলো না। তাই প্রসঙ্গ পাল্টেত বলে,,
" এতো রাতে ছাদে আসা কেন শুনি?"
সারা মাথা নিচু করে বলে,,
" ঠান্ডা পানি আনতে গিয়েছিলাম। তারপর দেখি ছাদের দরজা খোলা তাই এসেছি।"
" ছাদের দরজা খুলা দেখলে হুটহাট ছাদে আসবেন না রাতে। জ্বিন ভূতের কথা বলা তো যায় না।"
আশেপাশে তাকিয়ে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে সারা। এতোক্ষণে সাহস করে আসলেও এই মুহুর্তে সানির কথা শুনে বেশ ভয় পেলো সারা। সারার ভীতু মুখ দেখে ঠোঁট চেপে নিশব্দে হাঁসে সানি। সানি আবারও নরম কন্ঠে বলে,,
" এই রাতে ঠান্ডা পানি কেন? এই রকম এতো ফ্রিজের পানি খেতে হয় না। ঠান্ডা লেগে গলা বসে যাবে। নরমাল পানি খাবেন। আর ঠান্ডা পানি খাবেন না এই ভাবে।"
সারা বাধ্য মেয়ের মতো হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়,,
" ঠিক আছে। "
কিন্তু সারা মনে মনে বলে,,
" কথা না বলা শুরু করতেই হুকুম করা শুরু।"
সানি সারার দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,
" একটা কথা বলবো।"
সারা সানির দিকে তাকালো। সানির দৃষ্টি স্থির। সারা মাথা নাড়িয়ে বলে,,
" জ্বি বলুন।"
" আজ হুট করে কথা বললেন। আর কোনো রাগ অভিমান নেই।"
সানির এমন প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে পরে যায় সারা। কি জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছে না। তার সাথে কথা বলার তীব্র আকাঙ্খা থেকে সে আজ কথা বলেছে। সারা অপ্রস্তুত হয়ে বলে,,
" কেন কথা বলা যাবে না।"
" না তেমনটা নয়। চারদিন হলো এই বাড়িতে এসেছি আপনি কথা বলেন নি তাই জিজ্ঞাসা করলাম। হুট করে রাগ অভিমান কিভাবে হারিয়ে গেলো। আচ্ছা যাই হোক, এই বার যান গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন।"
" আপনি যাবেন না।"
" একটু পর যাচ্ছি। আপনি যান তাহলে।"
" আপনাকে ভূতে ধরবে না।"
সানি মুচকি হেঁসে বলে,,
" নাহ। ওদের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। "
ভ্রু কুচকে আসে সারার। সারার বুঝতে বাকি রইলো না সানি মজা নিচ্ছে সারার সঙ্গে। সারা অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" ঠিক আছে গল্প করুন আপনার বন্ধুদের সাথে। "
সারা কথাটি বলে পা বাড়াতে নিলে সানি হাস্যজ্বল মুখে বলে উঠে,,
" ম্যাম ফোনের ওয়ালপেপার টা পাল্টাবেন। আর ডান গালের ছবি দিয়ে রাখতে হবে না।"
সারা যেমন অবাক হলো তার থেকে বেশি লজ্জা পেলো এই মানুষ তার ফোনের ওয়ালপেপার কিভাবে দেখতে পেলো। তার পাগলামো নিয়ে কি জানো ভাবছে লোকটা। সারা আর কথার জবাব দিলো না। দৌঁড়ে চলে আসে সেখান থেকে। সানি সারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাঁসে। সারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,,
"তোমার চাহনিতে আমি যেন একটি সৃষ্টি-প্রেরণা খুঁজে পাই, যেখানে কল্পনা ও বাস্তবতার সীমানা মিলিত হয়।
তোমার অস্তিত্ব যেন আমার হৃদয়ের একটি অপূর্ব সুর, যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় সীমাহীন মহাসমুদ্রের গহীনে।"
চলবে more....

1
সাফি ঘরে প্রবেশ করতে করতে সানিকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,,
" তুই বাইরে কেন দাঁড়িয়ে আছিস। ভেতরে আয়। "
" না তুমি কথা বলো আমি ঘরে যাচ্ছি। "
সাফি সানির হাত ধরে টেনে সারার ঘরে আনে। দীর্ঘ ছয় বছর পর সারার ঘরে প্রবেশ করে সানি। অস্থির লাগছে সব কিছু তার। সারাও বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সানির দিকে। সাফি জোর করে সানিকে সারার ঘরে পড়ার টেবিলের সামনে থাকা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে পাশে থাকা আর একটা চেয়ারে নিজেও বসে পরলো। সানি বেশ ইতস্তত নিয়ে বসে রয়েছে। আরহি এবার দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে সালাম দিলো,,
" আসসালামু আলাইকুম স্যার।"
" ওয়ালাইকুম আসসালাম।
সাফি সারার দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,
" তোদের মধ্যে কি এসব কথা চলছে। কে কয় জনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে শুনি।"
সারা আর আরহি একে অপরের দিকে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে। ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে কয়েকবার। এদের ভীতু মুখ দেখে নিজের হাঁসি আটকিয়ে সাফি আবারও গম্ভীর কন্ঠে বলে,,
" কী হলো চুপ কেন?"
সারা ভীত কন্ঠে বলে,,
" আসলে তেমন কিছু নয় ভাই। ওই আরহি,,
আরহি সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয়,,
" আমি কিছু করি নি। তুই আমার নাম কেন নিচ্ছিস এখানে।"
সাফি বুঝতে পারছে এই দুজনের মাঝে ঝগড়া বেঁধে যাবে এখন। সাফি তৎক্ষনাৎ বলে উঠে,,
" দুজনে চুপ। একটা হবে না।"
সাফির হাল্কা হুংকারে কেঁপে উঠে দুজন। সানি রুমে প্রবেশ করেই তার ফোন বের করেছে। সে ফোন দেখছে আর মিটিমিটি আসছে। সাফি আবারও শাসনের কন্ঠে বলে,,
" দুজনের কেউ ভার্সিটিতে যাস নি। ঘরে বসে এখন অহেতুক কথা চলছে। দু দিন আগে ক্লাস টেস্ট দিয়েছিস সেটার রেজাল্ট জানিস। নিচ থেকে দেখা শুরু করলে তোদের দুজনের নাম আগে পাওয়া যাবে। অহেতুক গল্প না করে দুজনে মিলে গ্রুপ স্টাডি করলে হয় না। এখন ভালো ছেলেও না মেয়ের সিজিপিএ দেখে বিয়ে করে সার্টিফিকেট দেখে বিয়ে করে না।"
সারা আর আরহির দুজনের ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। আরহি পারছে না শুধু কাঁদতে। সারা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,,
" ভাইয়া ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখে ছিলাম আমি।"
" ওই সব ফালতু স্ট্যাটাস তুই তো দেখবি। আমি যে অনলাইন তোদের ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট গুলোর ভিডিও দেই মাঝে মাঝে লাইভে আসি সেই গুলো কখনও দেখবি না। দেখলে পাপ হবে ভালো রেজাল্ট যদি হয়। এরপর দু'জনের নাম্বার যদি আমি কম দেখেছি ক্যাম্পাসের সামনে চা বিক্রি করে হ্যান্ডসাম চাচ্চু তোদের দুজনকেই তার সাথে আমি বিয়ে দিবো। এক সাথে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখবি দুজন মিলে। আর আমি যেন আজ থেকে তোদের দুজনকেই আমি যখন লাইভে তোদের ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট নিয়ে লেকচার দিবো তোদের যেন দেখি। "
সানির সামনে এসব অপমান সারার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। সারা এবার অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" ঠিক আছে। কিন্তু ভাইয়া কারও কথা এভাবে আড়ি পেতে শুনতে হয় না।"
সারার এই কথা আরহির বেশ ভালো লেগেছে। বান্ধবীকে বুকে জড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করছে তার।
" ফাটা বাঁশের মতো চেঁচিয়ে কথা বললে আড়ি পাতার কোনো প্রয়োজন নেই। "
সারা বেশ ক্ষিপ্ত হলো তার বড় ভাই সাফির উপর।
বড় ভাই বলে সব সময় শাসন করবে, অপমান করবে এটা অন্যায়। সারার অভিমান আরও গাঢ় হলো। ভারি কন্ঠে বলে,,
" তুমি আমাকে এই ভাবে সব সময় বকতে পারো না হু।"
" তোকে কি আর কিছু বলা যায় বোন। আদরে মাথায় তুলে রেখেছে সবাই। থাক আমি গেলাম। আর যা বললাম তা যেন দুজনের মাথায় থাকে।"
সাফি এবার আরহির দিকে তাকায়। বিছানা ঘেষে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। সাফি আরহির দিকে তাকিয়ে বলে,,
" আরহি"
আরহি খানিকটা কেঁপে উঠে অপ্রস্তুত হয়ে বলে,,
" জ্বি স্যার।"
" মনে থাকবে তো কথা।"
আরহি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে,,
" জ্বি স্যার থাকবে।"
"গুড। আমি আসি তাহলে।"
সাফি উঠে দাঁড়ানোর আগেই সানি উঠে দাঁড়ায়। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো এই ঘরে তার। সাফি যেতেই সারার দুষ্ট মস্তিষ্কে একটা প্রশ্ন জেগে উঠে৷ সারা মিটিমিটি হেঁসে ন্যাকামি সুরে বলে,,,
" ভাইয়া।"
সাফি পেছনে ঘুরে তাকায়। ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,,
" জ্বি বলুন বইনা"
" বলছিলাম আমাদের ভাবির কত সিজিপিএ থাকতে হবে।"
সঙ্গে সঙ্গে চোখ মুখ কুচকে আসে সাফির। সানি আবারও মৃদু স্বরে হেঁসে উঠে সাফির দিকে তাকিয়ে। আরহি এবার মিটিমিটি হাঁসছে। তবে তার উচ্চ স্বরে হাঁসতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সাফির ভয়ে পারছে না আরহি। অনেক কষ্টে আটকিয়ে রেখেছে হাঁসি তার।
সারা অবাক হয়ে আবারও সানির দিকে তাকায়। এই মানুষটার হাঁসি সত্যি সুন্দর। মনে মনে সারা বিরক্ত হলো এই ভাবে সব সময় মন খুলে হাঁসলে কি হয়। কেমন একটা গোমড়া মুখ ভাব নিয়ে থাকে। যদিও সানির স্মিত হাঁসিটাও নজর কাড়ে তার তবে সানির হাঁসির শব্দটা তার হৃদয়ে অন্যরকম ভালো লাগা সৃষ্টি করে। সাফি রাগী কন্ঠে বলে,,
" বাম হাত দিয়ে ঠাঁটিয়ে চড় দিলে বাদরামি দূর হয়ে যাবে।"
সানি হাঁসি মুখে বলে,,
" বকছো কেন শুধু শুধু। তোমার বোন খারাপ তো কোনো প্রশ্ন করে নি।"
সারা আর আরহি অবিশ্বাস্য চোখে তাকায় সানির দিকে। সানি সারার পক্ষে কথা বলছে। সারার অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে যায় এবার। সাফি সানির দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,,
" তোর কাছে তো ভালো লাগবেই। সুযোগ আমার কি আসবে না।"
" রাগ করতে হয় না বড় ভাই। চলো ঘরে চলো। ঠান্ডা পানি খাওয়াই তোমাকে।"
সানি আর সাফি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই আরহি শব্দ করে হেঁসে উঠে। সারা ঠাই দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। আরহি হাঁসতে হাঁসতে সারার কাঁধে হাত রাখে।
" জানু তুমি আজ আমার মন জিতে নিয়েছো। দিয়েছো প্যাঁচা মুখো স্যারকে জব্দ করে। "
সারার এবার ঘোর কাটে। আরহির দিকে তাকিয়ে বলে,,
" হিঁ হিঁ করে হেঁসো না। ভাই কি বলে গেলো শুনলি না। সামনে আর একটা ক্লাস টেস্ট কম মার্ক পেলে না ঝুলে দিবে চাচ্চুকে। তখন দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে সতীন হবো।"
আরহির চোখে ভেসে উঠে চা বিক্রেতার ছবি। আরহি তৎক্ষনাৎ চোখ মুখ কুচকে বলে,,
" উহু না অসম্ভব।"
সারা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,,
" কম মার্ক পেলে এটাই সম্ভব। এখন দ্রুত চল দেখি ভাইয়ের পেইজটা। আমি তো ভাইয়ের পেইজের নোটিফিকেশন অফ করে রেখেছি। এতো মোটিভেশনাল জ্ঞ্যান বিরক্ত কর।"
শেষের কথা গুলো খুব বিরক্ত নিয়ে বলে সারা। আরহি শুকনো ঢোক গিলে বলে,,
" আমি তো তোর ভাইকে ব্লক করে রেখেছি।"
সারা অবাক হয়ে বলে,,
" কিহ। তুই আমার ভাইকে ব্লক লিস্টে রেখেছিস। আমার ভাইয়ের ফলোয়ার লিস্ট দেখেছিস তুই।"
" সে তুই দেখ। আমার দেখে কাজ নেই। তোর ভাইকে ভীষণ ভয় লাগে আমার। কেমন মনে হয় এই এখনি একটা বসিয়ে দিলো থাপ্পড়। "
থাপ্পড় এর কথা শুনতে সারা আরহির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়।
" এই শব্দ নেক্সট টাইম আমার সামনে নিবি না।"
" ওহ সরি। তোর ফ্রেন্ড লিস্টে না তাই আমারও এড ফ্রেন্ড এ এসেছিলো তোর ভাইয়ের আইডি। ওই দিনই আমি ব্লক করে দিয়েছি। যাতে আমার আইডি তোর ভাইয়ের সামনে না যায়। যদি আমার ফেসবুকের পোস্ট গুলো দেখে নেয়। তখন,,"
সারা ব্যঙ্গ করে বলে,,,
" উহু আমার ভাইয়ের তো কাজ নেই তোর আইডি দেখতে যাবে।"
" সে আমি জানি। তবুও আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না ব্যস।"
" তাহলে এখন ব্লক খোল। খুলে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠা।"
" ফ্রেন্ড লিস্টের থাকার কি প্রয়োজন। ওনার পেইজ ফলো করবো তাই হবে।"
" কেন কেন? দে তোর ফোন, একে তো আমার ভাইকে ব্লক লিস্টে রেখেছিস তুই।"
সারা জোর করে আরহির থেকে ফোন নিয়ে সাফি মেহতাব খান নামক ফেসবুক আইডি ব্লক থেকে ছাড়িয়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠাতে পাঠাতে বলে,,
" তোর না ফেসবুকে একটা ভালো ফ্রেন্ড ছিলো কথা হয় কি?"
" হয় মাঝে মাঝে। "
~~~~~~******~~~~~~******~~~~~~~
রাত ১০ টা ছাদে রেলিং ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সানি। বিশাল বড় আকাশে একটা মাত্র চাঁদ। চাঁদের একাকিত্ব যেন তার একাকিত্ব ভীষণ ভাবে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। তার কানে ভাসছে সারার বলা একটা শব্দ "ভুল মানুষ"। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সানি। দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে সানি মনে মনে বলে,,
"তোমাকে সঠিক প্রমাণ করতে গিয়ে, তোমার চোখে ভুল আমি। সব কথার যুক্তি খুঁজতে গিয়ে, হৃদয়ের সুর হারিয়ে ফেলেছি আমি ।বিলম্বিত অশ্রুর টানে, পৌঁছে গেছি সেখানেই।যেখানে সত্য আর ভুলের মাঝে,
আছো তুমি, আর আমি একা।"
সারা করিডর রাখা ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে সিড়ি উপরে উঠতে নিয়ে চোখ যায় ছাঁদের দরজার দিকে। এই রাতে ছাদের দরজা খোলা দেখে বেশ অবাক হলো সারা। কখনও এই রাতে ছাদের দরজা খোলা দেখে নি সারা। এতো রাতে ছাদে একা যেতে ভয় লাগছে ভীষণ। কিন্তু কেউ যদি ভুল করে ছাদের দরজা খুলে আসে বিষয়টি মোটেও নিরাপদ নয়। ভয়ে ভয়ে পা টিপে টিপে ছাঁদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বুকে ফুঁ দেয় সারা। একটু মাথা বের করে উঁকি দিতে চোখে পরে ছাদের লাইটে আলোয় স্পষ্ট দেখা সানির মুখ। সারা বেশ অবাক হলো এই মুহুর্তে ছাদে দেখে। কপাল কুচকে আসে সারার। সারা মনে মনে ভাবলো,,
" থাকুক আমার কি।"
সারা ভেবে চলে আসতেই পায়ের গতি ধীর করলো। মনে হলো আরহির কথা। সারা দ্বিধা দন্দে পরে যায় ভীষণ, কথা বলবে কি বলবে না। এক দিকে আরহি ঠিক বলেছে সানির সাথে একবার কথা বললে হয়তো সানি নামক মানুষটির কথা তার মস্তিষ্কে খুব বেশি জ্বালাতন করতে পারবে না। আর সানির সাথে কথা বলার তীব্র ইচ্ছে কাল প্রোগ্রাম এর পর থেকে ভীষণ ভাবে জ্বালাতন করছে। মনে তীব্র ইচ্ছে জাগ্রত হচ্ছে সানির সাথে একটু বলার। সকল মান অভিমান এর এই শক্ত প্রাচীর দেয়াল ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার। রাখতে চাইছে না এই দেয়াল। দম বন্ধ হয়ে আসছে সারার। সারা এবার দাঁড়ালো, এরপর ধীর পায়ে এগিয়ে এলো ছাদের দরজা দিকে। হাত,পা অসম্ভব ভাবে কাঁপছে তার। হৃদয়ের কম্পন যেন অস্বাভাবিক। সারা একবার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দুই হাতে জামা শক্ত করে মুঠো করে ধরে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে,,
" সানি ভাই।"
পুরো শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠে সানির। দীর্ঘ ছয় বছর পর এই কন্ঠে ডাকটা শুনতে পেলো সে। নিজের কান যেন অবিশ্বাস্য। অবাক হয়ে পেছনে ঘুরে তাকায় সানি।
সারা সাহস করে ডাকলেও এই বার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, পুরো শারীরের শক্তি হারিয়ে ফেলছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে সে।
সানি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সূবর্ণা নয়নের রাণী রমণীর দিকে। তার মানে সে ভুল শুনে নি। দীর্ঘ ছয় বছর পর তার সূবর্ণা রাণী রাগ,অভিমান ভুলে তাকে আজ ডেকেছে। বিষয়টি স্বপ্নের মতো লাগছে তার কাজে। সানি বিস্মিত হয়ে জবাব দেয়,,,
" হুম। "
চোখ জোরা খুললো সারা, জামার মুঠো করা হাত ছেড়ে দিলো।সারার পুরো শরীর কাঁপছে তেমনি অভিমান হচ্ছে। আগ বাড়িয়ে কথা বলেছে দেখে ভাব নিচ্ছে তার সাথে।
এতো বছর পর কথা বললো জবাবে শুধু হুম। সারা নিজের অভিমানকে আজ প্রশ্রয় দিলো না। নিজের দুই হাত অনবরত কচলাতে কচলাতে বলে,,
" কংগ্রাচুলেশন"
দুজনের বুকে ঝড়ের তীব্র আক্রমণ। আবার দুজনের হৃদস্পন্দন ক্রমান্বয়ে অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে চলছে। রাতের নিস্তব্ধতা যেন সব কিছু আরও অস্বাভাবিক করে তুলেছে। সানির মস্তিষ্কের স্নায়ু গুলো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। সে আবারও বিস্মিত হয়ে জবাব দেয়,,
" হুম। "
সারার ভীষণ রাগ হচ্ছে। সারা মনে মনে নিজেকে শান্ত করে।
" সারা কুল। কিচ্ছু হয় নি। এনার ডিকশনারিতে হুম আর থাপ্পড় ছাড়া কিছু নেই। কুল বেবি,,,"
সারা আবারও দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,,
" ধন্যবাদ "
এবার খানিকটা ভ্রু কুচকে আসে সানির। অভিন্দন দেওয়ার কারন বুঝেতে পেরেছে। কিন্তু ধন্যবাদ এর কারন বুঝতে পারলো না। জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
" কেন?"
সারা মনে মনে বিরবির করে বলে,,
" যাক বাবা আর একটা শব্দ খুঁজে পেলাম। "
সারা এবার মুখে হাঁসি এনে বলে,,
" ওই তো গিফটের জন্য।"
সানি এবার স্মিত হাঁসে।
" ওহ আচ্ছা।"
সারা আর নিজের রাগ ধরে রাখতে পারলো না। পুরো বাড়ির লোকের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে অথচ তার সামনে কথা ফুরিয়ে যায়। এমন অস্বাভাবিক আচরণ কেন? আগ বাড়িয়ে কথা বলেছে দেখে ভাব নিবে। সারা অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" ভাব দেখাচ্ছেন আমার সাথে। "
সারা আগে সানিকে তুমি করে বলতো তবে আপনি সম্মোধন এটাও মন্দ লাগছে না সানির কাছে। আসলে দীর্ঘ বছরের দূরত্ব বেশ জড়তা চলে এসেছে সারার মাঝে। আগের মতো ছোটো তো নেই সে। আর ছোট থাকতে এমন এক কান্ড বাধিয়ে ফেলেছিলো সে। ভাবতেই যেন লজ্জার চাদর মুড়িয়ে নিচ্ছে তাকে। আবার সেই মানুষটার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে এসেছে। সানির মুখে সেই স্মিত হাঁসি।
" ভাব দেখালাম কোথায়।"
সারা অনুরূপ অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" সবার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছেন। আমার সাথে হুম, ওহ আচ্ছা এসব কি। আমি আগ বাড়িয়ে কথা বলছি তাই ভাব দেখাচ্ছেন।"
সানি রেলিং হেলান দিয়ে দুই হাত বক্ষে ভাজ করে নিয়ে বলেন,,
" পুরো বাড়ির লোক আমি বাড়িতে আসাতে খুশি হয়েছে। আমাকে দেখতে গিয়েছে, আমার সাথে কথা বলেছে, খোঁজ নিয়েছে আপনি কি এসেছিলেন ম্যাম। বরং ঘরের দরজা লাগিয়ে বসে ছিলেন। তাহলে অবশ্যই আমি এই বাড়িতে ফিরে আসাতে আপনি খুশি নন।তাহলে স্বাভাবিক ভাবে কিভাবে কথা বলি বলুন।
সে দরজা তো আপনি নিজ হাতে বন্ধ করে দিয়েছেন ম্যাম।"
সারা এবার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। এ প্রশ্নের জবাব নেই তার কাছে। সানি এগিয়ে গেলো সারার দিকে। দুজনের উচ্চতার তফাৎ বেশি থাকায় সানি সারার সামনে একটু ঝুঁকে দাঁড়ায়। আবারও সানির পারফিউম এর তীব্র সুবাস অনুভব করলো সারা। হুট করে সানির এই ভাবে সামনে এসে দাঁড়াতে একটু ভয়ে পিছিয়ে গেলো সারা। আবারও থাপ্পড় খাওয়ার আগে দৌঁড়ে পালাবে সে। সানি ধীর কন্ঠে বলে,,
" ছোটরা ভুল করলে সেই ভুল শুধরানোর কি অধিকার নেই বড়দের।"
সারা চোখ পিটপিট করে সানির দিকে তাকায়। ডান গালে হাত রেখে অসহায় কন্ঠে বলে,,
" তাই বলে এই ভাবে অতটুকু বাচ্চার গালে থাপ্পড় দিবেন আপনি।"
সানি এবার মৃদু স্বরে হেঁসে উঠে সারার এমন কথায়।
সারা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হাঁসির দিকে। সানি হাঁসি মুখে বলে,,
" যে প্রোপজ করতে পারে সে অতটুকু বাচ্চা কিভাবে হয়।" more...
সারার দিকে ভ্রু নাচিয়ে কথা টুকু বলে সানি। সারা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেলো। তখন ছোটো ছিলো না বুঝে করে ফেলেছে এখন তো বড় হয়েছে। এই মুহুর্তে সানির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ লজ্জা পাচ্ছে সারা। কি ভয়ংকর অসস্তি কর পরিস্থিতি। সারা সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখ নামিয়ে নেয়। সানি ঠোঁট চেপে হাঁসে। সানি আর পুরনো প্রসঙ্গ টেনে মেয়েটাকে আর লজ্জায় ফেলতে চাইলো না। তাই প্রসঙ্গ পাল্টেত বলে,, more....
" এতো রাতে ছাদে আসা কেন শুনি?"
সারা মাথা নিচু করে বলে,,
" ঠান্ডা পানি আনতে গিয়েছিলাম। তারপর দেখি ছাদের দরজা খোলা তাই এসেছি।"
" ছাদের দরজা খুলা দেখলে হুটহাট ছাদে আসবেন না রাতে। জ্বিন ভূতের কথা বলা তো যায় না।"
আশেপাশে তাকিয়ে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে সারা। এতোক্ষণে সাহস করে আসলেও এই মুহুর্তে সানির কথা শুনে বেশ ভয় পেলো সারা। সারার ভীতু মুখ দেখে ঠোঁট চেপে নিশব্দে হাঁসে সানি। সানি আবারও নরম কন্ঠে বলে,,
" এই রাতে ঠান্ডা পানি কেন? এই রকম এতো ফ্রিজের পানি খেতে হয় না। ঠান্ডা লেগে গলা বসে যাবে। নরমাল পানি খাবেন। আর ঠান্ডা পানি খাবেন না এই ভাবে।"
সারা বাধ্য মেয়ের মতো হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়,,
" ঠিক আছে। "
কিন্তু সারা মনে মনে বলে,,
" কথা না বলা শুরু করতেই হুকুম করা শুরু।"
সানি সারার দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,
" একটা কথা বলবো।"
সারা সানির দিকে তাকালো। সানির দৃষ্টি স্থির। সারা মাথা নাড়িয়ে বলে,,
" জ্বি বলুন।"
" আজ হুট করে কথা বললেন। আর কোনো রাগ অভিমান নেই।"
সানির এমন প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে পরে যায় সারা। কি জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছে না। তার সাথে কথা বলার তীব্র আকাঙ্খা থেকে সে আজ কথা বলেছে। সারা অপ্রস্তুত হয়ে বলে,,
" কেন কথা বলা যাবে না।"
" না তেমনটা নয়। চারদিন হলো এই বাড়িতে এসেছি আপনি কথা বলেন নি তাই জিজ্ঞাসা করলাম। হুট করে রাগ অভিমান কিভাবে হারিয়ে গেলো। আচ্ছা যাই হোক, এই বার যান গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন।"
" আপনি যাবেন না।"
" একটু পর যাচ্ছি। আপনি যান তাহলে।"
" আপনাকে ভূতে ধরবে না।"
সানি মুচকি হেঁসে বলে,,
" নাহ। ওদের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। "
ভ্রু কুচকে আসে সারার। সারার বুঝতে বাকি রইলো না সানি মজা নিচ্ছে সারার সঙ্গে। সারা অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" ঠিক আছে গল্প করুন আপনার বন্ধুদের সাথে। "
সারা কথাটি বলে পা বাড়াতে নিলে সানি হাস্যজ্বল মুখে বলে উঠে,,
" ম্যাম ফোনের ওয়ালপেপার টা পাল্টাবেন। আর ডান গালের ছবি দিয়ে রাখতে হবে না।"
সারা যেমন অবাক হলো তার থেকে বেশি লজ্জা পেলো এই মানুষ তার ফোনের ওয়ালপেপার কিভাবে দেখতে পেলো। তার পাগলামো নিয়ে কি জানো ভাবছে লোকটা। সারা আর কথার জবাব দিলো না। দৌঁড়ে চলে আসে সেখান থেকে। সানি সারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাঁসে। সারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,,
"তোমার চাহনিতে আমি যেন একটি সৃষ্টি-প্রেরণা খুঁজে পাই, যেখানে কল্পনা ও বাস্তবতার সীমানা মিলিত হয়।
তোমার অস্তিত্ব যেন আমার হৃদয়ের একটি অপূর্ব সুর, যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় সীমাহীন মহাসমুদ্রের গহীনে।"
চলবে more....

1
সাফি ঘরে প্রবেশ করতে করতে সানিকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,,
" তুই বাইরে কেন দাঁড়িয়ে আছিস। ভেতরে আয়। "
" না তুমি কথা বলো আমি ঘরে যাচ্ছি। "
সাফি সানির হাত ধরে টেনে সারার ঘরে আনে। দীর্ঘ ছয় বছর পর সারার ঘরে প্রবেশ করে সানি। অস্থির লাগছে সব কিছু তার। সারাও বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সানির দিকে। সাফি জোর করে সানিকে সারার ঘরে পড়ার টেবিলের সামনে থাকা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে পাশে থাকা আর একটা চেয়ারে নিজেও বসে পরলো। সানি বেশ ইতস্তত নিয়ে বসে রয়েছে। আরহি এবার দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে সালাম দিলো,,
" আসসালামু আলাইকুম স্যার।"
" ওয়ালাইকুম আসসালাম।
সাফি সারার দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,
" তোদের মধ্যে কি এসব কথা চলছে। কে কয় জনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে শুনি।"
সারা আর আরহি একে অপরের দিকে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে। ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে কয়েকবার। এদের ভীতু মুখ দেখে নিজের হাঁসি আটকিয়ে সাফি আবারও গম্ভীর কন্ঠে বলে,,
" কী হলো চুপ কেন?"
সারা ভীত কন্ঠে বলে,,
" আসলে তেমন কিছু নয় ভাই। ওই আরহি,,
আরহি সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয়,,
" আমি কিছু করি নি। তুই আমার নাম কেন নিচ্ছিস এখানে।"
সাফি বুঝতে পারছে এই দুজনের মাঝে ঝগড়া বেঁধে যাবে এখন। সাফি তৎক্ষনাৎ বলে উঠে,,
" দুজনে চুপ। একটা হবে না।"
সাফির হাল্কা হুংকারে কেঁপে উঠে দুজন। সানি রুমে প্রবেশ করেই তার ফোন বের করেছে। সে ফোন দেখছে আর মিটিমিটি আসছে। সাফি আবারও শাসনের কন্ঠে বলে,,
" দুজনের কেউ ভার্সিটিতে যাস নি। ঘরে বসে এখন অহেতুক কথা চলছে। দু দিন আগে ক্লাস টেস্ট দিয়েছিস সেটার রেজাল্ট জানিস। নিচ থেকে দেখা শুরু করলে তোদের দুজনের নাম আগে পাওয়া যাবে। অহেতুক গল্প না করে দুজনে মিলে গ্রুপ স্টাডি করলে হয় না। এখন ভালো ছেলেও না মেয়ের সিজিপিএ দেখে বিয়ে করে সার্টিফিকেট দেখে বিয়ে করে না।"
সারা আর আরহির দুজনের ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। আরহি পারছে না শুধু কাঁদতে। সারা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,,
" ভাইয়া ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখে ছিলাম আমি।"
" ওই সব ফালতু স্ট্যাটাস তুই তো দেখবি। আমি যে অনলাইন তোদের ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট গুলোর ভিডিও দেই মাঝে মাঝে লাইভে আসি সেই গুলো কখনও দেখবি না। দেখলে পাপ হবে ভালো রেজাল্ট যদি হয়। এরপর দু'জনের নাম্বার যদি আমি কম দেখেছি ক্যাম্পাসের সামনে চা বিক্রি করে হ্যান্ডসাম চাচ্চু তোদের দুজনকেই তার সাথে আমি বিয়ে দিবো। এক সাথে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখবি দুজন মিলে। আর আমি যেন আজ থেকে তোদের দুজনকেই আমি যখন লাইভে তোদের ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট নিয়ে লেকচার দিবো তোদের যেন দেখি। "
সানির সামনে এসব অপমান সারার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। সারা এবার অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" ঠিক আছে। কিন্তু ভাইয়া কারও কথা এভাবে আড়ি পেতে শুনতে হয় না।"
সারার এই কথা আরহির বেশ ভালো লেগেছে। বান্ধবীকে বুকে জড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করছে তার।
" ফাটা বাঁশের মতো চেঁচিয়ে কথা বললে আড়ি পাতার কোনো প্রয়োজন নেই। "
সারা বেশ ক্ষিপ্ত হলো তার বড় ভাই সাফির উপর।
বড় ভাই বলে সব সময় শাসন করবে, অপমান করবে এটা অন্যায়। সারার অভিমান আরও গাঢ় হলো। ভারি কন্ঠে বলে,,
" তুমি আমাকে এই ভাবে সব সময় বকতে পারো না হু।"
" তোকে কি আর কিছু বলা যায় বোন। আদরে মাথায় তুলে রেখেছে সবাই। থাক আমি গেলাম। আর যা বললাম তা যেন দুজনের মাথায় থাকে।"
সাফি এবার আরহির দিকে তাকায়। বিছানা ঘেষে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। সাফি আরহির দিকে তাকিয়ে বলে,,
" আরহি"
আরহি খানিকটা কেঁপে উঠে অপ্রস্তুত হয়ে বলে,,
" জ্বি স্যার।"
" মনে থাকবে তো কথা।"
আরহি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে,,
" জ্বি স্যার থাকবে।"
"গুড। আমি আসি তাহলে।"
সাফি উঠে দাঁড়ানোর আগেই সানি উঠে দাঁড়ায়। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো এই ঘরে তার। সাফি যেতেই সারার দুষ্ট মস্তিষ্কে একটা প্রশ্ন জেগে উঠে৷ সারা মিটিমিটি হেঁসে ন্যাকামি সুরে বলে,,,
" ভাইয়া।"
সাফি পেছনে ঘুরে তাকায়। ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,,
" জ্বি বলুন বইনা"
" বলছিলাম আমাদের ভাবির কত সিজিপিএ থাকতে হবে।"
সঙ্গে সঙ্গে চোখ মুখ কুচকে আসে সাফির। সানি আবারও মৃদু স্বরে হেঁসে উঠে সাফির দিকে তাকিয়ে। আরহি এবার মিটিমিটি হাঁসছে। তবে তার উচ্চ স্বরে হাঁসতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সাফির ভয়ে পারছে না আরহি। অনেক কষ্টে আটকিয়ে রেখেছে হাঁসি তার।
সারা অবাক হয়ে আবারও সানির দিকে তাকায়। এই মানুষটার হাঁসি সত্যি সুন্দর। মনে মনে সারা বিরক্ত হলো এই ভাবে সব সময় মন খুলে হাঁসলে কি হয়। কেমন একটা গোমড়া মুখ ভাব নিয়ে থাকে। যদিও সানির স্মিত হাঁসিটাও নজর কাড়ে তার তবে সানির হাঁসির শব্দটা তার হৃদয়ে অন্যরকম ভালো লাগা সৃষ্টি করে। সাফি রাগী কন্ঠে বলে,,
" বাম হাত দিয়ে ঠাঁটিয়ে চড় দিলে বাদরামি দূর হয়ে যাবে।"
সানি হাঁসি মুখে বলে,,
" বকছো কেন শুধু শুধু। তোমার বোন খারাপ তো কোনো প্রশ্ন করে নি।"
সারা আর আরহি অবিশ্বাস্য চোখে তাকায় সানির দিকে। সানি সারার পক্ষে কথা বলছে। সারার অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে যায় এবার। সাফি সানির দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,,
" তোর কাছে তো ভালো লাগবেই। সুযোগ আমার কি আসবে না।"
" রাগ করতে হয় না বড় ভাই। চলো ঘরে চলো। ঠান্ডা পানি খাওয়াই তোমাকে।"
সানি আর সাফি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই আরহি শব্দ করে হেঁসে উঠে। সারা ঠাই দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। আরহি হাঁসতে হাঁসতে সারার কাঁধে হাত রাখে।
" জানু তুমি আজ আমার মন জিতে নিয়েছো। দিয়েছো প্যাঁচা মুখো স্যারকে জব্দ করে। "
সারার এবার ঘোর কাটে। আরহির দিকে তাকিয়ে বলে,,
" হিঁ হিঁ করে হেঁসো না। ভাই কি বলে গেলো শুনলি না। সামনে আর একটা ক্লাস টেস্ট কম মার্ক পেলে না ঝুলে দিবে চাচ্চুকে। তখন দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে সতীন হবো।"
আরহির চোখে ভেসে উঠে চা বিক্রেতার ছবি। আরহি তৎক্ষনাৎ চোখ মুখ কুচকে বলে,,
" উহু না অসম্ভব।"
সারা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,,
" কম মার্ক পেলে এটাই সম্ভব। এখন দ্রুত চল দেখি ভাইয়ের পেইজটা। আমি তো ভাইয়ের পেইজের নোটিফিকেশন অফ করে রেখেছি। এতো মোটিভেশনাল জ্ঞ্যান বিরক্ত কর।"
শেষের কথা গুলো খুব বিরক্ত নিয়ে বলে সারা। আরহি শুকনো ঢোক গিলে বলে,,
" আমি তো তোর ভাইকে ব্লক করে রেখেছি।"
সারা অবাক হয়ে বলে,,
" কিহ। তুই আমার ভাইকে ব্লক লিস্টে রেখেছিস। আমার ভাইয়ের ফলোয়ার লিস্ট দেখেছিস তুই।"
" সে তুই দেখ। আমার দেখে কাজ নেই। তোর ভাইকে ভীষণ ভয় লাগে আমার। কেমন মনে হয় এই এখনি একটা বসিয়ে দিলো থাপ্পড়। "
থাপ্পড় এর কথা শুনতে সারা আরহির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়।
" এই শব্দ নেক্সট টাইম আমার সামনে নিবি না।"
" ওহ সরি। তোর ফ্রেন্ড লিস্টে না তাই আমারও এড ফ্রেন্ড এ এসেছিলো তোর ভাইয়ের আইডি। ওই দিনই আমি ব্লক করে দিয়েছি। যাতে আমার আইডি তোর ভাইয়ের সামনে না যায়। যদি আমার ফেসবুকের পোস্ট গুলো দেখে নেয়। তখন,,"
সারা ব্যঙ্গ করে বলে,,,
" উহু আমার ভাইয়ের তো কাজ নেই তোর আইডি দেখতে যাবে।"
" সে আমি জানি। তবুও আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না ব্যস।"
" তাহলে এখন ব্লক খোল। খুলে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠা।"
" ফ্রেন্ড লিস্টের থাকার কি প্রয়োজন। ওনার পেইজ ফলো করবো তাই হবে।"
" কেন কেন? দে তোর ফোন, একে তো আমার ভাইকে ব্লক লিস্টে রেখেছিস তুই।"
সারা জোর করে আরহির থেকে ফোন নিয়ে সাফি মেহতাব খান নামক ফেসবুক আইডি ব্লক থেকে ছাড়িয়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠাতে পাঠাতে বলে,,
" তোর না ফেসবুকে একটা ভালো ফ্রেন্ড ছিলো কথা হয় কি?"
" হয় মাঝে মাঝে। "
~~~~~~******~~~~~~******~~~~~~~
রাত ১০ টা ছাদে রেলিং ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সানি। বিশাল বড় আকাশে একটা মাত্র চাঁদ। চাঁদের একাকিত্ব যেন তার একাকিত্ব ভীষণ ভাবে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। তার কানে ভাসছে সারার বলা একটা শব্দ "ভুল মানুষ"। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সানি। দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে সানি মনে মনে বলে,,
"তোমাকে সঠিক প্রমাণ করতে গিয়ে, তোমার চোখে ভুল আমি। সব কথার যুক্তি খুঁজতে গিয়ে, হৃদয়ের সুর হারিয়ে ফেলেছি আমি ।বিলম্বিত অশ্রুর টানে, পৌঁছে গেছি সেখানেই।যেখানে সত্য আর ভুলের মাঝে,
আছো তুমি, আর আমি একা।"
সারা করিডর রাখা ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে সিড়ি উপরে উঠতে নিয়ে চোখ যায় ছাঁদের দরজার দিকে। এই রাতে ছাদের দরজা খোলা দেখে বেশ অবাক হলো সারা। কখনও এই রাতে ছাদের দরজা খোলা দেখে নি সারা। এতো রাতে ছাদে একা যেতে ভয় লাগছে ভীষণ। কিন্তু কেউ যদি ভুল করে ছাদের দরজা খুলে আসে বিষয়টি মোটেও নিরাপদ নয়। ভয়ে ভয়ে পা টিপে টিপে ছাঁদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বুকে ফুঁ দেয় সারা। একটু মাথা বের করে উঁকি দিতে চোখে পরে ছাদের লাইটে আলোয় স্পষ্ট দেখা সানির মুখ। সারা বেশ অবাক হলো এই মুহুর্তে ছাদে দেখে। কপাল কুচকে আসে সারার। সারা মনে মনে ভাবলো,,
" থাকুক আমার কি।"
সারা ভেবে চলে আসতেই পায়ের গতি ধীর করলো। মনে হলো আরহির কথা। সারা দ্বিধা দন্দে পরে যায় ভীষণ, কথা বলবে কি বলবে না। এক দিকে আরহি ঠিক বলেছে সানির সাথে একবার কথা বললে হয়তো সানি নামক মানুষটির কথা তার মস্তিষ্কে খুব বেশি জ্বালাতন করতে পারবে না। আর সানির সাথে কথা বলার তীব্র ইচ্ছে কাল প্রোগ্রাম এর পর থেকে ভীষণ ভাবে জ্বালাতন করছে। মনে তীব্র ইচ্ছে জাগ্রত হচ্ছে সানির সাথে একটু বলার। সকল মান অভিমান এর এই শক্ত প্রাচীর দেয়াল ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার। রাখতে চাইছে না এই দেয়াল। দম বন্ধ হয়ে আসছে সারার। সারা এবার দাঁড়ালো, এরপর ধীর পায়ে এগিয়ে এলো ছাদের দরজা দিকে। হাত,পা অসম্ভব ভাবে কাঁপছে তার। হৃদয়ের কম্পন যেন অস্বাভাবিক। সারা একবার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দুই হাতে জামা শক্ত করে মুঠো করে ধরে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে,,
" সানি ভাই।"
পুরো শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠে সানির। দীর্ঘ ছয় বছর পর এই কন্ঠে ডাকটা শুনতে পেলো সে। নিজের কান যেন অবিশ্বাস্য। অবাক হয়ে পেছনে ঘুরে তাকায় সানি।
সারা সাহস করে ডাকলেও এই বার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, পুরো শারীরের শক্তি হারিয়ে ফেলছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে সে।
সানি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সূবর্ণা নয়নের রাণী রমণীর দিকে। তার মানে সে ভুল শুনে নি। দীর্ঘ ছয় বছর পর তার সূবর্ণা রাণী রাগ,অভিমান ভুলে তাকে আজ ডেকেছে। বিষয়টি স্বপ্নের মতো লাগছে তার কাজে। সানি বিস্মিত হয়ে জবাব দেয়,,,
" হুম। "
চোখ জোরা খুললো সারা, জামার মুঠো করা হাত ছেড়ে দিলো।সারার পুরো শরীর কাঁপছে তেমনি অভিমান হচ্ছে। আগ বাড়িয়ে কথা বলেছে দেখে ভাব নিচ্ছে তার সাথে।
এতো বছর পর কথা বললো জবাবে শুধু হুম। সারা নিজের অভিমানকে আজ প্রশ্রয় দিলো না। নিজের দুই হাত অনবরত কচলাতে কচলাতে বলে,,
" কংগ্রাচুলেশন"
দুজনের বুকে ঝড়ের তীব্র আক্রমণ। আবার দুজনের হৃদস্পন্দন ক্রমান্বয়ে অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে চলছে। রাতের নিস্তব্ধতা যেন সব কিছু আরও অস্বাভাবিক করে তুলেছে। সানির মস্তিষ্কের স্নায়ু গুলো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। সে আবারও বিস্মিত হয়ে জবাব দেয়,,
" হুম। "
সারার ভীষণ রাগ হচ্ছে। সারা মনে মনে নিজেকে শান্ত করে।
" সারা কুল। কিচ্ছু হয় নি। এনার ডিকশনারিতে হুম আর থাপ্পড় ছাড়া কিছু নেই। কুল বেবি,,,"
সারা আবারও দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,,
" ধন্যবাদ "
এবার খানিকটা ভ্রু কুচকে আসে সানির। অভিন্দন দেওয়ার কারন বুঝেতে পেরেছে। কিন্তু ধন্যবাদ এর কারন বুঝতে পারলো না। জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
" কেন?"
সারা মনে মনে বিরবির করে বলে,,
" যাক বাবা আর একটা শব্দ খুঁজে পেলাম। "
সারা এবার মুখে হাঁসি এনে বলে,,
" ওই তো গিফটের জন্য।"
সানি এবার স্মিত হাঁসে।
" ওহ আচ্ছা।"
সারা আর নিজের রাগ ধরে রাখতে পারলো না। পুরো বাড়ির লোকের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে অথচ তার সামনে কথা ফুরিয়ে যায়। এমন অস্বাভাবিক আচরণ কেন? আগ বাড়িয়ে কথা বলেছে দেখে ভাব নিবে। সারা অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" ভাব দেখাচ্ছেন আমার সাথে। "
সারা আগে সানিকে তুমি করে বলতো তবে আপনি সম্মোধন এটাও মন্দ লাগছে না সানির কাছে। আসলে দীর্ঘ বছরের দূরত্ব বেশ জড়তা চলে এসেছে সারার মাঝে। আগের মতো ছোটো তো নেই সে। আর ছোট থাকতে এমন এক কান্ড বাধিয়ে ফেলেছিলো সে। ভাবতেই যেন লজ্জার চাদর মুড়িয়ে নিচ্ছে তাকে। আবার সেই মানুষটার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে এসেছে। সানির মুখে সেই স্মিত হাঁসি।
" ভাব দেখালাম কোথায়।"
সারা অনুরূপ অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" সবার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছেন। আমার সাথে হুম, ওহ আচ্ছা এসব কি। আমি আগ বাড়িয়ে কথা বলছি তাই ভাব দেখাচ্ছেন।"
সানি রেলিং হেলান দিয়ে দুই হাত বক্ষে ভাজ করে নিয়ে বলেন,,
" পুরো বাড়ির লোক আমি বাড়িতে আসাতে খুশি হয়েছে। আমাকে দেখতে গিয়েছে, আমার সাথে কথা বলেছে, খোঁজ নিয়েছে আপনি কি এসেছিলেন ম্যাম। বরং ঘরের দরজা লাগিয়ে বসে ছিলেন। তাহলে অবশ্যই আমি এই বাড়িতে ফিরে আসাতে আপনি খুশি নন।তাহলে স্বাভাবিক ভাবে কিভাবে কথা বলি বলুন।
সে দরজা তো আপনি নিজ হাতে বন্ধ করে দিয়েছেন ম্যাম।"
সারা এবার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। এ প্রশ্নের জবাব নেই তার কাছে। সানি এগিয়ে গেলো সারার দিকে। দুজনের উচ্চতার তফাৎ বেশি থাকায় সানি সারার সামনে একটু ঝুঁকে দাঁড়ায়। আবারও সানির পারফিউম এর তীব্র সুবাস অনুভব করলো সারা। হুট করে সানির এই ভাবে সামনে এসে দাঁড়াতে একটু ভয়ে পিছিয়ে গেলো সারা। আবারও থাপ্পড় খাওয়ার আগে দৌঁড়ে পালাবে সে। সানি ধীর কন্ঠে বলে,,
" ছোটরা ভুল করলে সেই ভুল শুধরানোর কি অধিকার নেই বড়দের।"
সারা চোখ পিটপিট করে সানির দিকে তাকায়। ডান গালে হাত রেখে অসহায় কন্ঠে বলে,,
" তাই বলে এই ভাবে অতটুকু বাচ্চার গালে থাপ্পড় দিবেন আপনি।"
সানি এবার মৃদু স্বরে হেঁসে উঠে সারার এমন কথায়।
সারা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হাঁসির দিকে। সানি হাঁসি মুখে বলে,,
" যে প্রোপজ করতে পারে সে অতটুকু বাচ্চা কিভাবে হয়।" more...
সারার দিকে ভ্রু নাচিয়ে কথা টুকু বলে সানি। সারা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেলো। তখন ছোটো ছিলো না বুঝে করে ফেলেছে এখন তো বড় হয়েছে। এই মুহুর্তে সানির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ লজ্জা পাচ্ছে সারা। কি ভয়ংকর অসস্তি কর পরিস্থিতি। সারা সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখ নামিয়ে নেয়। সানি ঠোঁট চেপে হাঁসে। সানি আর পুরনো প্রসঙ্গ টেনে মেয়েটাকে আর লজ্জায় ফেলতে চাইলো না। তাই প্রসঙ্গ পাল্টেত বলে,,
" এতো রাতে ছাদে আসা কেন শুনি?"
সারা মাথা নিচু করে বলে,,
" ঠান্ডা পানি আনতে গিয়েছিলাম। তারপর দেখি ছাদের দরজা খোলা তাই এসেছি।"
" ছাদের দরজা খুলা দেখলে হুটহাট ছাদে আসবেন না রাতে। জ্বিন ভূতের কথা বলা তো যায় না।"
আশেপাশে তাকিয়ে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে সারা। এতোক্ষণে সাহস করে আসলেও এই মুহুর্তে সানির কথা শুনে বেশ ভয় পেলো সারা। সারার ভীতু মুখ দেখে ঠোঁট চেপে নিশব্দে হাঁসে সানি। সানি আবারও নরম কন্ঠে বলে,,
" এই রাতে ঠান্ডা পানি কেন? এই রকম এতো ফ্রিজের পানি খেতে হয় না। ঠান্ডা লেগে গলা বসে যাবে। নরমাল পানি খাবেন। আর ঠান্ডা পানি খাবেন না এই ভাবে।"
সারা বাধ্য মেয়ের মতো হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়,,
" ঠিক আছে। "
কিন্তু সারা মনে মনে বলে,,
" কথা না বলা শুরু করতেই হুকুম করা শুরু।"
সানি সারার দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,
" একটা কথা বলবো।"
সারা সানির দিকে তাকালো। সানির দৃষ্টি স্থির। সারা মাথা নাড়িয়ে বলে,,
" জ্বি বলুন।"
" আজ হুট করে কথা বললেন। আর কোনো রাগ অভিমান নেই।"
সানির এমন প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে পরে যায় সারা। কি জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছে না। তার সাথে কথা বলার তীব্র আকাঙ্খা থেকে সে আজ কথা বলেছে। সারা অপ্রস্তুত হয়ে বলে,,
" কেন কথা বলা যাবে না।"
" না তেমনটা নয়। চারদিন হলো এই বাড়িতে এসেছি আপনি কথা বলেন নি তাই জিজ্ঞাসা করলাম। হুট করে রাগ অভিমান কিভাবে হারিয়ে গেলো। আচ্ছা যাই হোক, এই বার যান গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন।"
" আপনি যাবেন না।"
" একটু পর যাচ্ছি। আপনি যান তাহলে।"
" আপনাকে ভূতে ধরবে না।"
সানি মুচকি হেঁসে বলে,,
" নাহ। ওদের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। "
ভ্রু কুচকে আসে সারার। সারার বুঝতে বাকি রইলো না সানি মজা নিচ্ছে সারার সঙ্গে। সারা অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" ঠিক আছে গল্প করুন আপনার বন্ধুদের সাথে। "
সারা কথাটি বলে পা বাড়াতে নিলে সানি হাস্যজ্বল মুখে বলে উঠে,,
" ম্যাম ফোনের ওয়ালপেপার টা পাল্টাবেন। আর ডান গালের ছবি দিয়ে রাখতে হবে না।"
সারা যেমন অবাক হলো তার থেকে বেশি লজ্জা পেলো এই মানুষ তার ফোনের ওয়ালপেপার কিভাবে দেখতে পেলো। তার পাগলামো নিয়ে কি জানো ভাবছে লোকটা। সারা আর কথার জবাব দিলো না। দৌঁড়ে চলে আসে সেখান থেকে। সানি সারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাঁসে। সারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,,
"তোমার চাহনিতে আমি যেন একটি সৃষ্টি-প্রেরণা খুঁজে পাই, যেখানে কল্পনা ও বাস্তবতার সীমানা মিলিত হয়।
তোমার অস্তিত্ব যেন আমার হৃদয়ের একটি অপূর্ব সুর, যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় সীমাহীন মহাসমুদ্রের গহীনে।"
চলবে more....

1
সাফি ঘরে প্রবেশ করতে করতে সানিকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,,
" তুই বাইরে কেন দাঁড়িয়ে আছিস। ভেতরে আয়। "
" না তুমি কথা বলো আমি ঘরে যাচ্ছি। "
সাফি সানির হাত ধরে টেনে সারার ঘরে আনে। দীর্ঘ ছয় বছর পর সারার ঘরে প্রবেশ করে সানি। অস্থির লাগছে সব কিছু তার। সারাও বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সানির দিকে। সাফি জোর করে সানিকে সারার ঘরে পড়ার টেবিলের সামনে থাকা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে পাশে থাকা আর একটা চেয়ারে নিজেও বসে পরলো। সানি বেশ ইতস্তত নিয়ে বসে রয়েছে। আরহি এবার দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে সালাম দিলো,,
" আসসালামু আলাইকুম স্যার।"
" ওয়ালাইকুম আসসালাম।
সাফি সারার দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,
" তোদের মধ্যে কি এসব কথা চলছে। কে কয় জনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে শুনি।"
সারা আর আরহি একে অপরের দিকে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে। ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে কয়েকবার। এদের ভীতু মুখ দেখে নিজের হাঁসি আটকিয়ে সাফি আবারও গম্ভীর কন্ঠে বলে,,
" কী হলো চুপ কেন?"
সারা ভীত কন্ঠে বলে,,
" আসলে তেমন কিছু নয় ভাই। ওই আরহি,,
আরহি সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয়,,
" আমি কিছু করি নি। তুই আমার নাম কেন নিচ্ছিস এখানে।"
সাফি বুঝতে পারছে এই দুজনের মাঝে ঝগড়া বেঁধে যাবে এখন। সাফি তৎক্ষনাৎ বলে উঠে,,
" দুজনে চুপ। একটা হবে না।"
সাফির হাল্কা হুংকারে কেঁপে উঠে দুজন। সানি রুমে প্রবেশ করেই তার ফোন বের করেছে। সে ফোন দেখছে আর মিটিমিটি আসছে। সাফি আবারও শাসনের কন্ঠে বলে,,
" দুজনের কেউ ভার্সিটিতে যাস নি। ঘরে বসে এখন অহেতুক কথা চলছে। দু দিন আগে ক্লাস টেস্ট দিয়েছিস সেটার রেজাল্ট জানিস। নিচ থেকে দেখা শুরু করলে তোদের দুজনের নাম আগে পাওয়া যাবে। অহেতুক গল্প না করে দুজনে মিলে গ্রুপ স্টাডি করলে হয় না। এখন ভালো ছেলেও না মেয়ের সিজিপিএ দেখে বিয়ে করে সার্টিফিকেট দেখে বিয়ে করে না।"
সারা আর আরহির দুজনের ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। আরহি পারছে না শুধু কাঁদতে। সারা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,,
" ভাইয়া ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখে ছিলাম আমি।"
" ওই সব ফালতু স্ট্যাটাস তুই তো দেখবি। আমি যে অনলাইন তোদের ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট গুলোর ভিডিও দেই মাঝে মাঝে লাইভে আসি সেই গুলো কখনও দেখবি না। দেখলে পাপ হবে ভালো রেজাল্ট যদি হয়। এরপর দু'জনের নাম্বার যদি আমি কম দেখেছি ক্যাম্পাসের সামনে চা বিক্রি করে হ্যান্ডসাম চাচ্চু তোদের দুজনকেই তার সাথে আমি বিয়ে দিবো। এক সাথে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখবি দুজন মিলে। আর আমি যেন আজ থেকে তোদের দুজনকেই আমি যখন লাইভে তোদের ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট নিয়ে লেকচার দিবো তোদের যেন দেখি। "
সানির সামনে এসব অপমান সারার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। সারা এবার অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" ঠিক আছে। কিন্তু ভাইয়া কারও কথা এভাবে আড়ি পেতে শুনতে হয় না।"
সারার এই কথা আরহির বেশ ভালো লেগেছে। বান্ধবীকে বুকে জড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করছে তার।
" ফাটা বাঁশের মতো চেঁচিয়ে কথা বললে আড়ি পাতার কোনো প্রয়োজন নেই। "
সারা বেশ ক্ষিপ্ত হলো তার বড় ভাই সাফির উপর।
বড় ভাই বলে সব সময় শাসন করবে, অপমান করবে এটা অন্যায়। সারার অভিমান আরও গাঢ় হলো। ভারি কন্ঠে বলে,,
" তুমি আমাকে এই ভাবে সব সময় বকতে পারো না হু।"
" তোকে কি আর কিছু বলা যায় বোন। আদরে মাথায় তুলে রেখেছে সবাই। থাক আমি গেলাম। আর যা বললাম তা যেন দুজনের মাথায় থাকে।"
সাফি এবার আরহির দিকে তাকায়। বিছানা ঘেষে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। সাফি আরহির দিকে তাকিয়ে বলে,,
" আরহি"
আরহি খানিকটা কেঁপে উঠে অপ্রস্তুত হয়ে বলে,,
" জ্বি স্যার।"
" মনে থাকবে তো কথা।"
আরহি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে,,
" জ্বি স্যার থাকবে।"
"গুড। আমি আসি তাহলে।"
সাফি উঠে দাঁড়ানোর আগেই সানি উঠে দাঁড়ায়। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো এই ঘরে তার। সাফি যেতেই সারার দুষ্ট মস্তিষ্কে একটা প্রশ্ন জেগে উঠে৷ সারা মিটিমিটি হেঁসে ন্যাকামি সুরে বলে,,,
" ভাইয়া।"
সাফি পেছনে ঘুরে তাকায়। ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,,
" জ্বি বলুন বইনা"
" বলছিলাম আমাদের ভাবির কত সিজিপিএ থাকতে হবে।"
সঙ্গে সঙ্গে চোখ মুখ কুচকে আসে সাফির। সানি আবারও মৃদু স্বরে হেঁসে উঠে সাফির দিকে তাকিয়ে। আরহি এবার মিটিমিটি হাঁসছে। তবে তার উচ্চ স্বরে হাঁসতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সাফির ভয়ে পারছে না আরহি। অনেক কষ্টে আটকিয়ে রেখেছে হাঁসি তার।
সারা অবাক হয়ে আবারও সানির দিকে তাকায়। এই মানুষটার হাঁসি সত্যি সুন্দর। মনে মনে সারা বিরক্ত হলো এই ভাবে সব সময় মন খুলে হাঁসলে কি হয়। কেমন একটা গোমড়া মুখ ভাব নিয়ে থাকে। যদিও সানির স্মিত হাঁসিটাও নজর কাড়ে তার তবে সানির হাঁসির শব্দটা তার হৃদয়ে অন্যরকম ভালো লাগা সৃষ্টি করে। সাফি রাগী কন্ঠে বলে,,
" বাম হাত দিয়ে ঠাঁটিয়ে চড় দিলে বাদরামি দূর হয়ে যাবে।"
সানি হাঁসি মুখে বলে,,
" বকছো কেন শুধু শুধু। তোমার বোন খারাপ তো কোনো প্রশ্ন করে নি।"
সারা আর আরহি অবিশ্বাস্য চোখে তাকায় সানির দিকে। সানি সারার পক্ষে কথা বলছে। সারার অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে যায় এবার। সাফি সানির দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,,
" তোর কাছে তো ভালো লাগবেই। সুযোগ আমার কি আসবে না।"
" রাগ করতে হয় না বড় ভাই। চলো ঘরে চলো। ঠান্ডা পানি খাওয়াই তোমাকে।"
সানি আর সাফি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই আরহি শব্দ করে হেঁসে উঠে। সারা ঠাই দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। আরহি হাঁসতে হাঁসতে সারার কাঁধে হাত রাখে।
" জানু তুমি আজ আমার মন জিতে নিয়েছো। দিয়েছো প্যাঁচা মুখো স্যারকে জব্দ করে। "
সারার এবার ঘোর কাটে। আরহির দিকে তাকিয়ে বলে,,
" হিঁ হিঁ করে হেঁসো না। ভাই কি বলে গেলো শুনলি না। সামনে আর একটা ক্লাস টেস্ট কম মার্ক পেলে না ঝুলে দিবে চাচ্চুকে। তখন দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে সতীন হবো।"
আরহির চোখে ভেসে উঠে চা বিক্রেতার ছবি। আরহি তৎক্ষনাৎ চোখ মুখ কুচকে বলে,,
" উহু না অসম্ভব।"
সারা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,,
" কম মার্ক পেলে এটাই সম্ভব। এখন দ্রুত চল দেখি ভাইয়ের পেইজটা। আমি তো ভাইয়ের পেইজের নোটিফিকেশন অফ করে রেখেছি। এতো মোটিভেশনাল জ্ঞ্যান বিরক্ত কর।"
শেষের কথা গুলো খুব বিরক্ত নিয়ে বলে সারা। আরহি শুকনো ঢোক গিলে বলে,,
" আমি তো তোর ভাইকে ব্লক করে রেখেছি।"
সারা অবাক হয়ে বলে,,
" কিহ। তুই আমার ভাইকে ব্লক লিস্টে রেখেছিস। আমার ভাইয়ের ফলোয়ার লিস্ট দেখেছিস তুই।"
" সে তুই দেখ। আমার দেখে কাজ নেই। তোর ভাইকে ভীষণ ভয় লাগে আমার। কেমন মনে হয় এই এখনি একটা বসিয়ে দিলো থাপ্পড়। "
থাপ্পড় এর কথা শুনতে সারা আরহির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়।
" এই শব্দ নেক্সট টাইম আমার সামনে নিবি না।"
" ওহ সরি। তোর ফ্রেন্ড লিস্টে না তাই আমারও এড ফ্রেন্ড এ এসেছিলো তোর ভাইয়ের আইডি। ওই দিনই আমি ব্লক করে দিয়েছি। যাতে আমার আইডি তোর ভাইয়ের সামনে না যায়। যদি আমার ফেসবুকের পোস্ট গুলো দেখে নেয়। তখন,,"
সারা ব্যঙ্গ করে বলে,,,
" উহু আমার ভাইয়ের তো কাজ নেই তোর আইডি দেখতে যাবে।"
" সে আমি জানি। তবুও আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না ব্যস।"
" তাহলে এখন ব্লক খোল। খুলে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠা।"
" ফ্রেন্ড লিস্টের থাকার কি প্রয়োজন। ওনার পেইজ ফলো করবো তাই হবে।"
" কেন কেন? দে তোর ফোন, একে তো আমার ভাইকে ব্লক লিস্টে রেখেছিস তুই।"
সারা জোর করে আরহির থেকে ফোন নিয়ে সাফি মেহতাব খান নামক ফেসবুক আইডি ব্লক থেকে ছাড়িয়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠাতে পাঠাতে বলে,,
" তোর না ফেসবুকে একটা ভালো ফ্রেন্ড ছিলো কথা হয় কি?"
" হয় মাঝে মাঝে। "
~~~~~~******~~~~~~******~~~~~~~
রাত ১০ টা ছাদে রেলিং ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সানি। বিশাল বড় আকাশে একটা মাত্র চাঁদ। চাঁদের একাকিত্ব যেন তার একাকিত্ব ভীষণ ভাবে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। তার কানে ভাসছে সারার বলা একটা শব্দ "ভুল মানুষ"। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সানি। দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে সানি মনে মনে বলে,,
"তোমাকে সঠিক প্রমাণ করতে গিয়ে, তোমার চোখে ভুল আমি। সব কথার যুক্তি খুঁজতে গিয়ে, হৃদয়ের সুর হারিয়ে ফেলেছি আমি ।বিলম্বিত অশ্রুর টানে, পৌঁছে গেছি সেখানেই।যেখানে সত্য আর ভুলের মাঝে,
আছো তুমি, আর আমি একা।"
সারা করিডর রাখা ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে সিড়ি উপরে উঠতে নিয়ে চোখ যায় ছাঁদের দরজার দিকে। এই রাতে ছাদের দরজা খোলা দেখে বেশ অবাক হলো সারা। কখনও এই রাতে ছাদের দরজা খোলা দেখে নি সারা। এতো রাতে ছাদে একা যেতে ভয় লাগছে ভীষণ। কিন্তু কেউ যদি ভুল করে ছাদের দরজা খুলে আসে বিষয়টি মোটেও নিরাপদ নয়। ভয়ে ভয়ে পা টিপে টিপে ছাঁদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বুকে ফুঁ দেয় সারা। একটু মাথা বের করে উঁকি দিতে চোখে পরে ছাদের লাইটে আলোয় স্পষ্ট দেখা সানির মুখ। সারা বেশ অবাক হলো এই মুহুর্তে ছাদে দেখে। কপাল কুচকে আসে সারার। সারা মনে মনে ভাবলো,,
" থাকুক আমার কি।"
সারা ভেবে চলে আসতেই পায়ের গতি ধীর করলো। মনে হলো আরহির কথা। সারা দ্বিধা দন্দে পরে যায় ভীষণ, কথা বলবে কি বলবে না। এক দিকে আরহি ঠিক বলেছে সানির সাথে একবার কথা বললে হয়তো সানি নামক মানুষটির কথা তার মস্তিষ্কে খুব বেশি জ্বালাতন করতে পারবে না। আর সানির সাথে কথা বলার তীব্র ইচ্ছে কাল প্রোগ্রাম এর পর থেকে ভীষণ ভাবে জ্বালাতন করছে। মনে তীব্র ইচ্ছে জাগ্রত হচ্ছে সানির সাথে একটু বলার। সকল মান অভিমান এর এই শক্ত প্রাচীর দেয়াল ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার। রাখতে চাইছে না এই দেয়াল। দম বন্ধ হয়ে আসছে সারার। সারা এবার দাঁড়ালো, এরপর ধীর পায়ে এগিয়ে এলো ছাদের দরজা দিকে। হাত,পা অসম্ভব ভাবে কাঁপছে তার। হৃদয়ের কম্পন যেন অস্বাভাবিক। সারা একবার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দুই হাতে জামা শক্ত করে মুঠো করে ধরে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে,,
" সানি ভাই।"
পুরো শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠে সানির। দীর্ঘ ছয় বছর পর এই কন্ঠে ডাকটা শুনতে পেলো সে। নিজের কান যেন অবিশ্বাস্য। অবাক হয়ে পেছনে ঘুরে তাকায় সানি।
সারা সাহস করে ডাকলেও এই বার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, পুরো শারীরের শক্তি হারিয়ে ফেলছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে সে।
সানি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সূবর্ণা নয়নের রাণী রমণীর দিকে। তার মানে সে ভুল শুনে নি। দীর্ঘ ছয় বছর পর তার সূবর্ণা রাণী রাগ,অভিমান ভুলে তাকে আজ ডেকেছে। বিষয়টি স্বপ্নের মতো লাগছে তার কাজে। সানি বিস্মিত হয়ে জবাব দেয়,,,
" হুম। "
চোখ জোরা খুললো সারা, জামার মুঠো করা হাত ছেড়ে দিলো।সারার পুরো শরীর কাঁপছে তেমনি অভিমান হচ্ছে। আগ বাড়িয়ে কথা বলেছে দেখে ভাব নিচ্ছে তার সাথে।
এতো বছর পর কথা বললো জবাবে শুধু হুম। সারা নিজের অভিমানকে আজ প্রশ্রয় দিলো না। নিজের দুই হাত অনবরত কচলাতে কচলাতে বলে,,
" কংগ্রাচুলেশন"
দুজনের বুকে ঝড়ের তীব্র আক্রমণ। আবার দুজনের হৃদস্পন্দন ক্রমান্বয়ে অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে চলছে। রাতের নিস্তব্ধতা যেন সব কিছু আরও অস্বাভাবিক করে তুলেছে। সানির মস্তিষ্কের স্নায়ু গুলো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। সে আবারও বিস্মিত হয়ে জবাব দেয়,,
" হুম। "
সারার ভীষণ রাগ হচ্ছে। সারা মনে মনে নিজেকে শান্ত করে।
" সারা কুল। কিচ্ছু হয় নি। এনার ডিকশনারিতে হুম আর থাপ্পড় ছাড়া কিছু নেই। কুল বেবি,,,"
সারা আবারও দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,,
" ধন্যবাদ "
এবার খানিকটা ভ্রু কুচকে আসে সানির। অভিন্দন দেওয়ার কারন বুঝেতে পেরেছে। কিন্তু ধন্যবাদ এর কারন বুঝতে পারলো না। জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
" কেন?"
সারা মনে মনে বিরবির করে বলে,,
" যাক বাবা আর একটা শব্দ খুঁজে পেলাম। "
সারা এবার মুখে হাঁসি এনে বলে,,
" ওই তো গিফটের জন্য।"
সানি এবার স্মিত হাঁসে।
" ওহ আচ্ছা।"
সারা আর নিজের রাগ ধরে রাখতে পারলো না। পুরো বাড়ির লোকের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে অথচ তার সামনে কথা ফুরিয়ে যায়। এমন অস্বাভাবিক আচরণ কেন? আগ বাড়িয়ে কথা বলেছে দেখে ভাব নিবে। সারা অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" ভাব দেখাচ্ছেন আমার সাথে। "
সারা আগে সানিকে তুমি করে বলতো তবে আপনি সম্মোধন এটাও মন্দ লাগছে না সানির কাছে। আসলে দীর্ঘ বছরের দূরত্ব বেশ জড়তা চলে এসেছে সারার মাঝে। আগের মতো ছোটো তো নেই সে। আর ছোট থাকতে এমন এক কান্ড বাধিয়ে ফেলেছিলো সে। ভাবতেই যেন লজ্জার চাদর মুড়িয়ে নিচ্ছে তাকে। আবার সেই মানুষটার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে এসেছে। সানির মুখে সেই স্মিত হাঁসি।
" ভাব দেখালাম কোথায়।"
সারা অনুরূপ অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" সবার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছেন। আমার সাথে হুম, ওহ আচ্ছা এসব কি। আমি আগ বাড়িয়ে কথা বলছি তাই ভাব দেখাচ্ছেন।"
সানি রেলিং হেলান দিয়ে দুই হাত বক্ষে ভাজ করে নিয়ে বলেন,,
" পুরো বাড়ির লোক আমি বাড়িতে আসাতে খুশি হয়েছে। আমাকে দেখতে গিয়েছে, আমার সাথে কথা বলেছে, খোঁজ নিয়েছে আপনি কি এসেছিলেন ম্যাম। বরং ঘরের দরজা লাগিয়ে বসে ছিলেন। তাহলে অবশ্যই আমি এই বাড়িতে ফিরে আসাতে আপনি খুশি নন।তাহলে স্বাভাবিক ভাবে কিভাবে কথা বলি বলুন।
সে দরজা তো আপনি নিজ হাতে বন্ধ করে দিয়েছেন ম্যাম।"
সারা এবার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। এ প্রশ্নের জবাব নেই তার কাছে। সানি এগিয়ে গেলো সারার দিকে। দুজনের উচ্চতার তফাৎ বেশি থাকায় সানি সারার সামনে একটু ঝুঁকে দাঁড়ায়। আবারও সানির পারফিউম এর তীব্র সুবাস অনুভব করলো সারা। হুট করে সানির এই ভাবে সামনে এসে দাঁড়াতে একটু ভয়ে পিছিয়ে গেলো সারা। আবারও থাপ্পড় খাওয়ার আগে দৌঁড়ে পালাবে সে। সানি ধীর কন্ঠে বলে,,
" ছোটরা ভুল করলে সেই ভুল শুধরানোর কি অধিকার নেই বড়দের।"
সারা চোখ পিটপিট করে সানির দিকে তাকায়। ডান গালে হাত রেখে অসহায় কন্ঠে বলে,,
" তাই বলে এই ভাবে অতটুকু বাচ্চার গালে থাপ্পড় দিবেন আপনি।"
সানি এবার মৃদু স্বরে হেঁসে উঠে সারার এমন কথায়।
সারা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হাঁসির দিকে। সানি হাঁসি মুখে বলে,,
" যে প্রোপজ করতে পারে সে অতটুকু বাচ্চা কিভাবে হয়।" more...
সারার দিকে ভ্রু নাচিয়ে কথা টুকু বলে সানি। সারা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেলো। তখন ছোটো ছিলো না বুঝে করে ফেলেছে এখন তো বড় হয়েছে। এই মুহুর্তে সানির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ লজ্জা পাচ্ছে সারা। কি ভয়ংকর অসস্তি কর পরিস্থিতি। সারা সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখ নামিয়ে নেয়। সানি ঠোঁট চেপে হাঁসে। সানি আর পুরনো প্রসঙ্গ টেনে মেয়েটাকে আর লজ্জায় ফেলতে চাইলো না। তাই প্রসঙ্গ পাল্টেত বলে,,
" এতো রাতে ছাদে আসা কেন শুনি?"
সারা মাথা নিচু করে বলে,,
" ঠান্ডা পানি আনতে গিয়েছিলাম। তারপর দেখি ছাদের দরজা খোলা তাই এসেছি।"
" ছাদের দরজা খুলা দেখলে হুটহাট ছাদে আসবেন না রাতে। জ্বিন ভূতের কথা বলা তো যায় না।"
আশেপাশে তাকিয়ে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে সারা। এতোক্ষণে সাহস করে আসলেও এই মুহুর্তে সানির কথা শুনে বেশ ভয় পেলো সারা। সারার ভীতু মুখ দেখে ঠোঁট চেপে নিশব্দে হাঁসে সানি। সানি আবারও নরম কন্ঠে বলে,,
" এই রাতে ঠান্ডা পানি কেন? এই রকম এতো ফ্রিজের পানি খেতে হয় না। ঠান্ডা লেগে গলা বসে যাবে। নরমাল পানি খাবেন। আর ঠান্ডা পানি খাবেন না এই ভাবে।"
সারা বাধ্য মেয়ের মতো হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়,,
" ঠিক আছে। "
কিন্তু সারা মনে মনে বলে,,
" কথা না বলা শুরু করতেই হুকুম করা শুরু।"
সানি সারার দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,
" একটা কথা বলবো।"
সারা সানির দিকে তাকালো। সানির দৃষ্টি স্থির। সারা মাথা নাড়িয়ে বলে,,
" জ্বি বলুন।"
" আজ হুট করে কথা বললেন। আর কোনো রাগ অভিমান নেই।"
সানির এমন প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে পরে যায় সারা। কি জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছে না। তার সাথে কথা বলার তীব্র আকাঙ্খা থেকে সে আজ কথা বলেছে। সারা অপ্রস্তুত হয়ে বলে,,
" কেন কথা বলা যাবে না।"
" না তেমনটা নয়। চারদিন হলো এই বাড়িতে এসেছি আপনি কথা বলেন নি তাই জিজ্ঞাসা করলাম। হুট করে রাগ অভিমান কিভাবে হারিয়ে গেলো। আচ্ছা যাই হোক, এই বার যান গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন।"
" আপনি যাবেন না।"
" একটু পর যাচ্ছি। আপনি যান তাহলে।"
" আপনাকে ভূতে ধরবে না।"
সানি মুচকি হেঁসে বলে,,
" নাহ। ওদের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। "
ভ্রু কুচকে আসে সারার। সারার বুঝতে বাকি রইলো না সানি মজা নিচ্ছে সারার সঙ্গে। সারা অভিমানী কন্ঠে বলে,,
" ঠিক আছে গল্প করুন আপনার বন্ধুদের সাথে। "
সারা কথাটি বলে পা বাড়াতে নিলে সানি হাস্যজ্বল মুখে বলে উঠে,,
" ম্যাম ফোনের ওয়ালপেপার টা পাল্টাবেন। আর ডান গালের ছবি দিয়ে রাখতে হবে না।"
সারা যেমন অবাক হলো তার থেকে বেশি লজ্জা পেলো এই মানুষ তার ফোনের ওয়ালপেপার কিভাবে দেখতে পেলো। তার পাগলামো নিয়ে কি জানো ভাবছে লোকটা। সারা আর কথার জবাব দিলো না। দৌঁড়ে চলে আসে সেখান থেকে। সানি সারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাঁসে। সারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,,
"তোমার চাহনিতে আমি যেন একটি সৃষ্টি-প্রেরণা খুঁজে পাই, যেখানে কল্পনা ও বাস্তবতার সীমানা মিলিত হয়।
তোমার অস্তিত্ব যেন আমার হৃদয়ের একটি অপূর্ব সুর, যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় সীমাহীন মহাসমুদ্রের গহীনে।"
চলবে more....

1

No comments:

720

Powered by Blogger.