রৌদ্দুরে_চোরাবালি
গ্রামে পৌঁছে গেছি।ক্লান্ত পথিক আমরা সবাই। আসলে আমি মোটেও ক্লান্ত নই। আমি তো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এসেছি।সবাই যার যার রুমে রেস্ট করতে চলে গেল।
পরের দিন। সকালে পাখির কিচিরমিচির শব্দ ঘুম ভাঙলো।আকাশ মেঘে গুড়ুম গুড়ুম ডাকছে। বৃষ্টি পড়বে। ইশ্ কত দিন পর গ্রামে ফিরে এসে খুশিতে মন খারাপ দূর হয়ে গেল। আমার রুমের বারান্দার সাইট টা খুব সুন্দর। প্রকৃতি দেখা যায়। মনে মনে একটা ছন্দ মিলিয়ে নিলাম -
~~~আকাশে চলছে মেঘের খেলা...
.... কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে ফুলের মালা~~~~
.... প্রাকৃতিতে চলছে রঙের মেলা...
.... বর্ষার আমেজ... সবুজে সবুজে সমাহার...
... মনে প্রকৃতি বিলাসের উন্মাদনার উদার..Noor
তাড়াতাড়ি নাস্তা খাচ্ছি।সময় কম হয় নাই বটে। দাদি যেকোন সময় উঠে যেতে পারে।তার আসার আগেই আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে হবে। এই প্রকৃতি তে মন খুলে ঘুরতে না পারলে আজ আমি ঠিক থাকতে পারবো না।দাদি এসে গেলে এই মেঘের দিনে আমাকে বের হতে ই দিবে না।
যেই ভাবা সেই কাজ, দ্রুত বের হয়ে গেলাম। তবে রমেলা খালার চোখে পড়ে গেলাম।রমেলা হচ্ছে আমাদের বাসায় কাজ করে। খুব ভালো মনের মানুষ। খালার দিকে কাঁদো কাঁদো ফেইসে তাকালাম, খালা মুচকি হেসে ইশারায় যেতে বলল। খালা আমার অভ্যাস সম্পর্কে ভালো ই জানে।(writer -NE El)
বাড়ির বাইরে বের হয়ে গেইটের কাছে যেতেই পিছন থেকে আমার যমের ডাক। সেখানে ই দাঁড়িয়ে গেলাম। মন চাচ্ছে এই গেইটের সামনে হাত পা ছড়িয়ে বসে কাঁদতাম।
রৌদ্দুর- হুরী , আমাকে ও সাথে নিয়ে চল।
মন টা খুশিতে বাকুম বাকুম করছে। পিছনে না তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে, বললাম -তাড়াতাড়ি চলুন না লৌদ্দুল ভাইয়া, না হয় দাদি দেখে ফেলবে।
রৌদ্দুর ও মুচকি হেসে হুরের পিছু পিছু হাঁটছে। হাঁটছি, হঠাৎ আমার পাশে এসে আমার হাত ধরে রৌদ্দুর ভাইয়া। কিছু টা বেখেয়ালি ছিলাম, একটু হকচকিয়ে উঠলাম। রৌদ্দুর ভাইয়ের দিকে তাকালাম, ওমা একি
, এমন ভাব নিয়ে হাঁটছে,যেন এটা সবচেয়ে বিরক্তিকর,আর আমি তাকে বাধ্য করছি আমার সাথে হাঁটতে।

আমি হাত টা ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু না,পারছি না। তাই চুপচাপ হাতে হাত রেখে ই হাঁটছি। ইচ্ছে ছিল আজ রৌদ্দুর ভাইয়া কে নিয়ে আমার প্রিয় একটা জায়গায় নিয়ে যাব । কিন্তু এর মধ্যেই আকাশ বৃষ্টি কে মাটির বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হুকুম ফরমায়েশ করে দিল। ঝুম ঝুম বৃষ্টি পড়া শুরু করল। আমি আর রৌদ্দুর ভাইয়া হাঁটতে হাঁটতে যে মাঠ পেরিয়েছি, খেয়াল ছিল না। এদিকে লোকালয় নেই। বড় বড় গাছ ও নেই। অনেক দূর দূর পর্যন্ত বড় বড় গাছ। তবে সামনে কিছুটা দূরে বড় একটা কড়ই গাছ আছে।রৌদ্দুর ভাইয়া আমাকে টেনে ওখানে নিয়ে গেল। (Writer -NE El)
আমি যে বৃষ্টি অপছন্দ করি মোটেও নয়।বৃষ্টি আমার বহুত প্রিয়। আমার তো ভিজতে ভালো ই লাগছে।রৌদ্দুর ভাইয়া আর আমি ভিজে গেছি বললেই চলে। রৌদ্দুর ভাইয়ের হাত ছেড়ে আমি বৃষ্টি তে ঘুরে ঘুরে ভিজছি।
রৌদ্দুর ভাইয়া মুচকি হেসে দেখছে। বেপার টা অদ্ভুত লাগছে, এক বার ও বলছে না, এই হুর পরী বৃষ্টি তে ভিজলে জ্বর আসবে বা অন্য কিছু।সে আর বেশি মুচকি হাসছে।খাটাশ বেটার মনে চলছে টা কি?
আমি কোমরে দু হাত গুজে দিয়ে তার দিকে এগিয়ে গেলাম । দুজনের মধ্যে একহাতের দূরত্ব। বললাম - আপনি হাসছেন কেন লৌদ্দুল ভাইয়া? আপনার এই মুচকি হাসি আমার মোটেও সুবিধার লাগছে না। আমি আর কখনো আপনাকে নিয়ে আসবো না, আমার সাথে লৌদ্দুল ভাইয়া।
রৌদ্দুর ভাইয়া উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। বড় কড়ই গাছের দিকে তাকালাম। আকাশে মেঘের কারনে আশেপাশে কালো হয়ে গেছে।কড়ই গাছ টা কেই এখন আমার কাছে ভয়ংকর লাগছে।আমি দাদির কাছ থেকে ভূত প্রেত এর গল্প কত শুনেছি। একটা ঢুক গিলে বললাম- লৌদ্দুল ভাইয়া আপনি এমনে হাসছেন কেন? আপনাকে আবার এই কড়ই গাছের ভূতে ধরে নাই তো। more......
এটা বলেই এক পা পেছোতেই রৌদ্দুর ভাইয়া হাত ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। আমি ভয়ে জমে গেছি। আজ প্রমান পাইছি, আমি ভিতু। লোকলজ্জার ভয়ে না বল্লেও সত্যি ই আমি ভিতুর ডিম।
রৌদ্দুর ভাইয়া আমার দিকে ঝুঁকতেই আমি ভয়ে দুচোখ বন্ধ করে ফেললাম। কানের কাছে ফিসফিস করে রৌদ্দুর ভাইয়া বলল-আচ্ছা হুর পরী, তুই কি কখনো বড় হবি না? আমি কি আমার ভার তোর কাছে জমা রাখতে পারবো না? আর কতো দিন নিজেকে সামলাতে পারব জানি না।এই হুর পরী তুই বোকা কেন? আমার সামনেই বাচ্চামো অভিনয় করিস?
দুচোখ খুলে ফেললাম। একটু বেঁকে রৌদ্দুর ভাইয়ের চোখে চোখ রেখে বললাম - আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি, আমি কয়দিন পর ভার্সিটিতে পড়ব। তুমি এখানো আমাকে বাচ্চা বলছো? তুমি পচা লৌদ্দু...(হঠাৎ আকাশ দিল এক হাক, মানে বজ্রপাত)
বজ্রপাতে আমি ভয় পাই, তার উপর আগেই মনে ভুতের ভয়, দুটো একসাথে মিশিয়ে আমি ভয়ে রৌদ্দুর ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরলাম।
আমি ভুলে ই গেছি, আমরা দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ে। এই তো সময়, আমরা নিজেদের মধ্যে হুঁশ হারিয়ে যেকোন কিছু করে ফেলতে পারি। মিনিট দুয়েক পর রৌদ্দুর ভাইয়া আমাকে ছেড়ে আমার মুখে তার দুহাত দিয়ে আলতো চেপে ধরল।
আমি কিছুটা চমকে উঠলাম, তার দিকে তাকালাম। মূহুর্তে ই শরীরের রন্ধে রন্ধে মাদকতার আভাস ছুঁয়ে গেল। স্থির জমে গেছি। আমার মন কি চাচ্ছে বুঝতে পারছি না। তবে অনুভূতির এক অন্য অধ্যায়ে আমরা দুজনে ই পৌঁছে গেছি। হঠাৎ রৌদ্দুর ভাইয়া তার দুটি ঠোঁট আমার ঠোঁটের সাথে মিশিয়ে দিল।
মিনিট দুয়েক আমি থমকে ছিলাম। যখন বুঝতে পারলাম মস্তিষ্ক রৌদ্দুর ভাইয়া থেকে দূরে সরতে আদেশ দিল। আমি শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলাম। রৌদ্দুর ভাইয়া দু এক কদম পিছনে চলে গেল। আমার দিকে করুন চোখে তাকালো। জানি না, তার স্পর্শ খারাপ লাগে নাই, আবার ভালো ও লাগে নাই। রৌদ্দুর ভাইয়া কে আমি ভালোবাসি, একসময় তার স্পর্শ পেতে আমি অনেক পাগলামি করেছি, এগুলো চেয়েছি তবে আজ মানতে কেন পারছি না। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালাম, কিন্তু কিছু বলতে পারলাম না, দৌড় দিলাম বাড়ির দিকে।
রৌদ্দুর তার ভুল বুঝতে পেরেছে। হুর বৃষ্টি তে ভিজছিলো, তাতে তার নেশা উঠে গেছে। নিজেকে সামলাতে পারে নাই।কোন প্রেমিক ই নিজের প্রিয়তম কে এমন বেহাল আর নেশাময় অবস্থায় দেখলে ঠিক থাকে।রৌদ্দুরের অবস্থা ও ঠিক সেরকম।হুর বৃষ্টিতে ভিজতে ছিলো, কিন্তু ওর খেয়াল ছিল না, শরীরের কাপড়ের দিকে। ভিজে হুরের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ভাঁজ স্পস্ট বোঝা যাচ্ছিল। রৌদ্দুর ফিসফিস করে বলল - সরি হুর পরী, সরি।তোকে এভাবে হারাম ভাবে স্পর্শ করার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু...
হুরের কথা মনে পড়তেই হুরের পিছু পিছু ছুটলো more......
No comments: