প্রেমে_প্রেমে_ভালোবেসেছি
রিদ্মিক ভাই আয়রাকে নিয়ে প্রথমে শাড়ির দোকানে এসেছে। আয়রার এক হাত এখনো তার হাতের মুঠোয় বন্দি। আয়রা চুপচাপ শাড়ি দেখছে। কোনটা যে নিবে! সবই তো ভাল্লাগছে।
~ পছন্দ হচ্ছে না?
আয়রা তাকায় রিদ্মিক ভাইয়ের দিকে।হতাশ কন্ঠে বলে,
~ আমার তো সবই ভালো লাগতেছে ।কোনটা নিবো বুঝতেছি না।
~ তাহলে সব গুলো নিয়ে নি?
আয়রা চোখ বড় বড় করে তাকায় রিদ্মিক ভাইয়ের দিকে।এই লোক বলে কি!এতো গুলো শাড়ি নিয়ে সে কি করবে!আর তার থেকেও বড় কথা এতো শাড়ি কিনতে যে টাকা লাগবে তা তো তাকে বেচলেও পাওয়া যাবে না ।
~ মাথা খারাপ?এতো গুলো দিয়ে কি করবো?আর বাবা এতো টাকা কোথায় পাবে?
রিদ্মিক হাসে। আয়রার কপালে পরে থাকা চুল গুলো আলতো হাতে কানের পাশে নিয়ে গুঁজে দিয়ে বলে,
~ আমি গিফট করবো।টাকা দিতে হবে না।
আয়রা ড্যাব ড্যাব করে রিদ্মিক ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
~ এতো কি দেখো কিউটি?প্রেমে পরে যাবে।
রিদ্মিক চোখ টিপে বলে। আয়রা থতমত খেয়ে আশেপাশে তাকায়।আড়চোখে দোকানিদের ও দেখে নেয় । ভাগ্যিস তারা অন্য কাস্টমার নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। আয়রা নিজেকে সামলে বলে,
~ এতো গুলো লাগবে না। এখান থেকে একটা নিয়ে দিন।
রিদ্মিক ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে । মেয়েটা তার সাথে চালাকি করছে।ঘুরিয়ে পেচিয়ে তাকেই শাড়ি পছন্দ করে দিতে বলছে। অথচ সরাসরি এমন ভাব করছে যেনো সে রিদ্মিক এর সাথে অনেক বিরক্ত।তবে এসব ছলচাতুরি কি আর রিদ্মিক এর সাথে করা যায়!
রিদ্মিক বেছে বেছে একটা কালো শাড়ি হাতে নেয়। কালোর মাঝে ডিজাইন আছে আবার।তবে তাও কালো রঙ দিয়েই করা।আর পাড়ে আকাশী,লাল,আর সোনালী রঙ মিলিয়ে ডিজাইন করা। আয়রার ও বেশ পছন্দ হয় শাড়িটা।রিদ্মিক এর হাত থেকে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে থাকে।এরপর হাসি মুখে বলে,
~ এটা আসলেই অন্য গুলোর থেকে অনেক সুন্দর।এটাই নি রিক ভাই?
রিদ্মিক শুধু হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।শাড়িটা নিয়ে বিল দিতে যাওয়ার সময় রিদ্মিকের চোখে আরেকটা সাদা জামদানি শাড়ি পরে । একবার চঞ্চল আয়রার দিকে তাকিয়ে সেই শাড়িটা ও প্যাক করে দিতে বলে। আয়রা ভাবতে থাকে এটা আবার কার জন্য নিলো!
চুড়ির দোকানে গিয়ে কালো ডিজাইনের দুই ডজন চুড়ি কিনে দেয় রিদ্মিক,সাথে সাদা ডিজাইন করা চুড়িও নেয় দুই ডজন। আয়রা মন খারাপ করে আড়চোখে দেখে শুধু। নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ড এর জন্য নিচ্ছে রিদ্মিক ভাই? আবার দেখো,ঝুমকা ও নিচ্ছে। মুহূর্তেই আয়রার চোখের কোণে পানি জমে।একরাশ অভিমান এসে হানা দেয় মনে। রিদ্মিক ভাই না বললো,সে ভালো হয়ে যাবে?এই তার ভালো হবার নমুনা? খুব সন্তর্পনে চোখের পানি মুছে নেয়। তবে রিদ্মিক এর চোখ এড়ানো কি এতো সহজ? মানুষের চোখ শুধু সামনে থাকে,আর রিদ্মিক ভাইয়ের চোখ শুধু আয়রাতেই থাকে ।সেই হিসেবে সামনে, পিছে, ডানে ,বামে .. যেদিকে আয়রা সেদিকেই রিদ্মিক ভাইয়ের চোখ।
শপিং মল থেকে বেরিয়ে আয়রা জেদ ধরে সে কিছুতেই রিদ্মিক ভাইয়ের সাথে বাইকে যাবে না।রিদ্মিক ভাই ও আর জোর করে না।একটা রিকশা ডেকে তাতে আয়রাকে তুলে দিয়ে হাতের শপিং ব্যাগটা আয়রার হাতে দিয়ে দেয়।
~ গিফট, ফর ইউ পাখি...
আয়রা অবাক হয়ে যায় । তার জন্য গিফট?তাও রিদ্মিক ভাই দিচ্ছে?
~ কি বলছেন?আমার তো একটা শাড়িই দরকার ছিলো।
রিদ্মিক জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আশেপাশে চোখ ঘুরায়। আয়রার দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে,
~ আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো না। কিন্তু...কিন্তু তোমায় ছাড়া আমার চলবে না।তুমি না চাইলেও আমি তোমার সাথে থাকবো।আর..এটা..
রিদ্মিক ভাইয়ের কন্ঠ কেমন কেঁপে ওঠে। আয়রার দিকে তাকাতে পারে না।তাই দৃষ্টি অন্যদিকে রেখে আবারো বলে ওঠে,
~ এই শাড়িটা দেখার পর অনেক ভালো লেগেছে।তোমার জন্য। এজন্য... এজন্যই নিয়েছি।তোমার জন্য,,,আমার তরফ থেকে।যদি ..যদি ভালো না লাগে,তাহলে ফেলে দিও...
রিদ্মিক ভাই উল্টো ঘুরে হন হনিয়ে হেঁটে যায়। আয়রা হতভম্ব নয়নে দেখে তা। বুকের বাম দিকটায় কেমন চিন চিনে ব্যথা হচ্ছে না? কিসের জন্য? রিদ্মিক ভাইয়ের ওই কাপা কন্ঠ শুনে? হাতে থাকা প্যাকেট এর দিকে তাকায় আয়রা ।শাড়িটা সত্যিই অনেক সুন্দর।চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি প্যাকেটের উপরে পরে। ঠোঁট কামড়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
~ আমি আপনাকে পছন্দ করি না এমন না রিক ভাই..আপনি অন্য মেয়ের সান্নিধ্য গিয়েছেন বারেবার।এটাই তো আমাকে ভেঙে দেয় রিক ভাই।আর... তাছাড়া ও...আমি তাকে কষ্ট দিতে পারবো না। আপনি যেটা চাচ্ছেন সেটা হলে সে শেষ হয়ে যাবে ।
ফুঁপিয়ে ওঠে আয়রা। রিকশা ততক্ষণে চলতে শুরু করেছে।আকাশে হুট করেই মেঘের আগমন ঘটেছে। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে । প্রকৃতিও যেনো আয়রাকে সায় দিচ্ছে।
আয়রার বেড রুমের সাথে লাগোয়া একটা বারান্দা আছে।নিচতলা হওয়ায় বারান্দা থেকে চাইলেই অনায়াসে পাশের বাগান সাইডে যাওয়া যায়।আবার চোধুরী বাড়ির মধ্যেও এদিক দিয়ে যেতে পারবে অনায়াসে।এদিকটা মূলত ফাঁকাই থাকে।চৌধুরী বাড়ি,আর স্টাফ হাউসের মাঝের দূরত্ব আরকি। এদিকের করা বাগানটাও আয়রার।তবে, কাকতালীয় হলেও... রিদ্মিক ভাইয়ের রুমটাও এদিকটা দোতলায় । রিদ্মিক ভাইয়ের রুমের বেলকুনিতে দাঁড়ালে আয়রার রুম সহ বেলকুনির একসাইড দেখা যায়।একেবারে কিনারার রুমটাই আয়রার। বারান্দাটা আবার রুমের দুপাশের দেয়ালের সাথেই লাগোয়া।সেই হিসেবে বেশ বড় বারান্দা।একটা চেয়ার টেবিল রাখা আছে।সাথে একটা বুকশেলফ।এছাড়া কিছু ফুলের টব আছে।বর্তমানে সময়টা গভীর রাত। বারান্দায় পাতা চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে আয়রা ।বুকের উপর একটা উপন্যাসের বই আলতো ভাবে রাখা।বোঝাই যাচ্ছে বই পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে পড়েছে।বারান্দার টিমটিমে লাইট টা জ্বলছে। দু পা সামনের টেবিলের উপর তুলেই বসেছিলো। পরনে শুধু একটা প্লাজু,আর ঢিলাঢালা একটা টি শার্ট।একটা ছায়া এসে বারান্দার রেলিং টপকে আয়রার কাছে এসে দাঁড়ায়। আয়রার হাত থেকে বইটা সাবধানে নিয়ে আয়রাকে পাজকোলা করে তুলে নেয় আলতোভাবে। আয়রা একটু নড়ে ওঠে,পুনরায় আবার ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়।
আয়রাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে তার মাথার কাছে ফ্লোরে বোসে পরে রিদ্মিক। গালে হাত ঠেকিয়ে একনজরে আয়রাকে দেখতে থাকে সে।
~ তুমি জানো না তুমি কতটা মায়াবিনী।তোমার মাঝের এতো মায়া আমি কোথায় রাখি পাখি?তোমার মাঝে এতো মায়া কেন পাখি?
রিদ্মিক থামে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারো ফিসফিস করে বলে,
~ আমি তোমাকে ভালোবাসিনা জান। ভালোবাসলে হারিয়ে ফেলতে হয়।তাই আমি তোমায় ভালোবাসি না ।তুমি আমার আবেগ,আমার আসক্তি,আমার মায়া,আমার জান,আমার নিশ্বাস।সব তুমি ...আমার প্রাণ তুমি ।প্রিয় প্রাণ আমার।
আবারো নিরবতা।
রিদ্মিক এর চোখে পানি জমে।মায়াময় দৃষ্টি নিয়ে আয়রাকে দেখে সে।চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরার আগেই মুছে নেয় সে।
~ আমাকে ছেড়ে যেও না।একটুখানি ভালোবেসে থেকে যেও।বেশি ভালোবাসতে হবে না।আমায় একটু ভালো..বাসলেই হবে।আমায় কেউ ভালোবাসেনি পাখি । তুমি একটু বাসো,তাহলেই হবে।শুধু একটুই হুম?
এভাবেই আরো কিছুক্ষণ থেকে রিদ্মিক ভাই রুম থেকে চলে যায়।ঘুমন্ত আয়রার সাথে কত কি না বলে গেলো।অথচ, আয়রার বুঝলো না।ঘুমন্ত মানুষ কথা শুনলে তো বুঝবে! যদি শুনতো ,তাহলে হয়তো আয়রা রিদ্মিক ভাইকে একটু হলেও ভালোবাসতো।তার আক্ষেপ পূরণ করে দিতে পারতো।
চলবে more....
ছোটো দিলাম।কারণ জানেন,আমার কাল পরীক্ষা। রেসপন্স করেন না কেন?কত মানুষ গল্প পড়েন।অথচ পাঁচ ভাগের এক ভাগ মানুষ রেসপন্স করেন।বাকিরা কি ঘুমান?
aAll reactions:
No comments: