"সুহাসিনী" নামটা দেওয়ার পেছনে অদ্ভুদ কাহিনী আছে।কুহু যখন প্রথম আমাদের বাড়িতে আসলো তখন মেয়েটার চেহারায় ছিল একরাশ বিষণ্ণতা।থাকার'ই কথা...ওর দাদি ওর সবটা জুড়ে ছিল।সেই দাদীই চলে গেল ওকে ছেড়ে।মেয়েটা যেন একদম নিঃস্ব হয়ে যায়।ওর সাথে আমার এর আগে দেখা হয়নি বললেই চলে।এ বাড়িতে আসার পরেও খুব একটা কথা যে হতো এমনও না।ও নিজেও রুম থেকে বের হতো না।মা ওর খাবার ওর রুমে নিয়ে গিয়েই খাইয়ে দিয়ে আসতেন।ও অনেকটাই ভেঙে পড়েছিল। একদিন আমার গা কাঁপিয়ে জ্বর এলো।ঐদিন বাহিরে চলছিল ঝড়ের তাণ্ডব।মা অনেকটা চিন্তিত হয়ে পড়লেন।বাবা তো দেশে থাকেন না তাই চিন্তাটা বেশিই ছিল।কুহু ঐদিন রুম থেকে বেরিয়ে আমার রুমের বাহিরে উঁকি দিয়ে ঘটনা বুঝার চেষ্টা করছিল।মা ওকে দেখে বললেন
-'ওমা! কুহু! ভেতরে আয় মা।বজ্রপাতের আওয়াজে ভয় পাচ্ছিস?
কুহু উপর নিচ মাথা নাড়ালো।ভেতরে এলো সে।আয়ান চোখ বুজে ছিল।কপালে জলপট্টি দেওয়া।হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়।চারদিক অন্ধকারে তলিয়ে যায় সাথে সাথে।আনোয়ারা বেগম বললেন
-'এই কারেন্টটাও আর যাওয়ার সময় পেল না! তোরা থাক আমি মোম নিয়ে আসছি।
কুহু বিছানায় বসলো আয়ানের পাশে।চারদিক নিস্তব্ধ।হঠাৎ আয়ানের গোঙানোর শব্দে কুহু একটু নড়েচড়ে বসলো।আয়ানের দিকে তাকাতেই দেখলো আয়ান গায়ের কাঁথাটা সরাতে চাইছে।হয়তো জ্বর ছাড়ছে।কুহু দরজার দিকে তাকালো।মামি এখনো আসছে না কেন?আয়ানের গোঙানি বেড়ে গেল।বিরবির করে গায়ের কাঁথাটা সরাতে বললো।কুহু বুঝলো। ভাবলো কাঁথাটা সরিয়ে দিবে।যেই ভাবা সেই কাজ।সে টান মেরে আয়ানের গায়ে কাঁথাটা সরিয়ে ফেললো।তখন'ই বিদ্যুৎ চলে এলো।আয়ানের দিকে নজর যেতেই কুহুর চক্ষু চড়কগাছ।আয়ানের পড়ণে শুধু কালো রঙের একটা শর্ট।কুহু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো সেইদিকে।আয়ান তখন একটু একটু করে তাকালো।ঝাপসা ঝাপসা দেখছে সব।হঠাৎ কুহুকে দেখতেই ভড়কালো ছেলেটা।ওর তাকানো অনুসারে তাকাতেই আরো ভড়কালো।কুহু তখনও খুব মনোযোগসহকারে তাকিয়ে যেন খুব আশ্চর্যজনক জিনিস দেখে ফেলেছে সে।আয়ান জোরে চেঁচিয়ে উঠলো।চমকে উঠলো কুহু more.....
-'সেদিন প্রথমবার আমি কুহুকে হাসতে দেখলাম।সে কি হাসি ওর! ওকে হাসলে এতোটা সুন্দর যে কল্পনার বাহিরে..মানে আমি ও যতক্ষণ হেসেছিল শুধু ওর দিকে হা করে তাকিয়েই ছিলাম।ঐদিন'ই আমি ওর হাসির শব্দ শুনে ওর প্রেমে স্লিপ কেটে পড়লাম।আর নাম দিলাম "সুহাসিনী"।সবচেয়ে সুন্দর হাসির অধিকারিনী।
হাসলো আয়ান।কি মধুর ছিল সেই মুহূর্তটা! তার প্রথম প্রেমে পড়ার মুহূর্ত। নাতাশা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।আয়ানের জন্য আজ বড্ড বেশি খারাপ লাগছে তার।কুহু যে তার কোনোদিন হবে না।অন্তত আহনাফ বেঁচে থাকতে তা কোনোদিন হতে দিবে না।ছেলেটার সামনে ভয়ংকর খারাপ দিন আসতে চলেছে।পাঁচ.. পাঁচটা বছর ধরে যাকে ভালোবেসে এসেছে তাকে যখন সে পাবে না তখন যার ঠিক হবে ভাবলেই নাতাশার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠছে।
আয়ান আর নাতাশা একটা রেস্টুরেন্টে বসে রয়েছে।আজকাল মাঝেমাঝে সময় বের করে দেখা করে তারা।আজেকেও তেমন'ই দেখা করতে এসেছিল দুজন।তখন'ই হঠাৎ নাতাশা কুহুকে "সুহাসিনী" নামে ডাকার কারণ জানতে চায়।আয়ান প্রথমে এই লজ্জাজনক কাহিনীর কথা বলতে না চাইলেও পরে আবার ভাবলো বন্ধুই তো..বলাই যায়!
আয়ান তাকালো নাতাশার দিকে।কপাল কুচকে এলো তার।এই ঘটনা শোনার পর তো মেয়েটার হাসিতে ফেটে পড়ার কথা।কিন্তু সে না হেসে এতো কি ভাবছে! আয়ান ডাকলো তাকে
-'নাতাশা! মিস নাতাশা!
-'হু?
নাতাশা ভাবনার জগৎ ছেড়ে বেরিয়ে এলো।আয়ান বললো
-'কি ব্যাপার বলুন তো! আপনি ঠিক আছেন তো? না মানে এরকম একটা ঘটনা শুনেও আপনি হাসলেন না যে?
নাতাশা হালকা হাসলো।এরপর বললো
-'যদি আবার আমার হাসির প্রেমে পড়ে যান তাই আর হাসলাম না।
এই কথা শুনে আয়ান হো হো করে হাসতে লাগলো।এরপর বললো
-'আরে কি যে বলেন না!
নাতাশা দেখলো তার হাসি।কতটা স্বপ্ন তার ঐ দুই চোখে! স্বপ্নভঙ্গের জ্বালা কি করে সহ্য করবে ছেলেটা! কাহিনীটা অন্যরকম হলেও বোধহয় পারতো।তার সাথে প্রেমটা হলে খুব একটা মন্দ হতো না!
-'ওহ হ্যালো! আবার কোথায় হারিয়ে গেলেন বলুন তো!
নাতাশা হেসে দুইদিকে মাথা নাড়ালো।আয়ান কফিতে চুমুক দিয়ে বললো
-'আজকে তো আপনাদের ভার্সিটিতে নবীনবরণ অনুষ্ঠান তাই না?
নাতাশা হঠাৎ মনে পড়ার মতো করে বললো
-'আরেহ হ্যাঁ! ভুলেই তো গিয়েছিলাম।এতো দেরিতে করলো না এবারের অনুষ্ঠানটা কি বলবো! মিস্টার আয়ান...আপনাকে কিন্তু যেতে হবে।
পরপর'ই ঘড়ি দেখে বললো
-'এখন দশটা বাজে..অনুষ্ঠান শুরু হতে হতে বারোটা।আপনাকে আমি সাথে নিয়ে যাবো।নো এক্সকিউজ!
আয়ানকে এমনাতেও বারণ করতো না।কুহু আজ শাড়ি পড়বে।সে তো অবশ্যই যেত।হালকা হেসে বললো
-'বেশ..যাবো আমি।
নাতাশা খুশি হলো শুনে।
_____________________________
-'রোদ, আমি এসব শাড়ি-টারি সামলাতে পারি না, তুই যো জানিস!
-'নো এক্সকিউজ, বেইব।অনেক কষ্ট করে শাড়ি দুইটা ম্যানেজ করেছি।তুই আর আমি সেইম সেইম।
রোদেলা শাড়িতে কুচি দিচ্ছে আর কথাগুলো বলছে।ভিডিও কলে কথা বলছে তারা।কুহু বলে উঠলো
-'তোকে কে শাড়ি কিনতে বলেছিল, হ্যাঁ? শাড়িটা দেখেও অনেকটা দামি বলে মনে হচ্ছে।পড়বো না আমি এসব বাঙ্গির শাড়ি।
রোদেলা 'চ' সূচক শব্দ করলো।কিছুতেই শাড়ির কুচিগুলো ঠিকভাবে ফেলতে পারছে না।সে বলে উঠলো
-'দেখ ভাই! সবাই শাড়ি পড়বে।তুই আর আমি কেন বাদ যাবো তাহলে? আমি জানি না কিচ্ছু...তুই শাড়ি পড়ছিস এটাই শেষ কথা।নাউ বাই...
রোদেলা কল কেটে দিল।কুহু কিছু বলার সময়টাও পেল না।কোলে থাকা মেরুন রঙের শাড়িটার দিকে তাকালো সে।এরপর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। কিন্তু সে তো শাড়ি পড়তেই জানে না।....মামিকে বলবে কি একবার? নাহ্ থাক।শাড়ি তো পড়াবেই না উল্টো ঝাঁটা দিয়ে দৌঁড়ানো দিবে।কুহু ভাবতে লাগলো যে কি করবে।পরক্ষণেই ইউটিউবের মতো সাংঘাতিক জিনিসের কথা মাথায় এলো তার।ব্যাস! হয়ে গেল না সমাধান! হাসলো কুহু।
আঁধা ঘণ্টা পর,
-'ফাইনাললি, আই'ম রেডি।
কুহু আয়ানার দিকে তাকিয়ে এদিক সেদিক দেখতে লাগলো।ঠিক তখন ঠকঠক শব্দ হলো দরজায়।কুহু শাড়িটা উঁচু করে ধরে কোনোমতে দরজা খুললো। আনোয়ারা বেগমের কুহুর দিকে চোখ যেতেই কপাল কুচকালেন।এরপরেই হো হো করে হেসে ফেললেন।কুহু চমকালো খানিকটা। আনোয়ারা বেগম বললেন
-'এটা কি পড়েছিস? মনে হচ্ছে যেন কাপড় পেঁচিয়ে রেখেছিস।কুচির কি হাল আর আঁচল এতো বড় কেন? হাহা হাহা....
কুহুর মুখটা চুপসে গেল।আনোয়ারা বেগম ভেতরে এসে বললেন
-'এদিকে আয় মুখপুরি। কিছুই তো পারিস না।
কুহু যেতেই আনোয়ারা বেগম শাড়ি খুলে আবার সুন্দর করে পড়িয়ে দিতে লাগলো।কুহু পুরোটা সময় আনোয়ারা বেগমের দিকে তাকিয়েছিল।মা মানে কুহু বোঝে না।আনোয়ারা বেগম যেভাবে যত্ন করে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে কুহু এতেই কেমন যেন মা মা অনুভব করছে।শাড়ি পড়ানো শেষ হতেই আনোয়ারা বেগম বললেন
-'শাড়ি পড়েছিস ভালো কথা, সামলাতে পারবি তো?দেখিস আবার খুলে টুলে যেন না যায়!
কুহু মাথা নাড়ালো।আনোয়ারা বেগম চলে যেতে নিয়েও কি মনে করে আবার ফিরে এলেন।কুহুর চোখের কাজল থেকে একটু নিয়ে ওর কানের পাশটায় দিয়ে দিল।কুহু হতবাক হলো এহেন কাণ্ডে।আনোয়ারা বেগম বললেন
-'তাড়াতাড়ি যেন ফিরে আসা হয়।
কথাটা বলে চলে গেলেন তিনি।কুহু হালকা হাসলো।বাহিরে বাহিরে যত যাই বলুক না কেন মানুষটা ভেতরে ভেতরে তাকে অনেকটা ভালোবাসে।ঐদিন যদি সে ঐ ভুলটা না করতো তাহলে হয়তো আ...
কুহুর ভাবনার মাঝেই রোদেলার কল এলো।সে ভাবনা-চিন্তা বাদ দিয়ে দ্রুত কদমে বেরোলো।রোদেলা আজ তাকে নিয়ে যাবে বলে জেদ ধরেছে।শাড়ি পড়ে সেও বাস দিয়ে যেতে পারবে না।আয়ানও নেই তাই সে আর মানা করেনি।
কুহু বাড়ি থেকে বেরিয়ে কয়েক কদম হাঁটতেই দেখলো যে একটা কালো রঙের গাড়ি দাঁড়িয়ে।কুহু হেসে এগিয়ে গেল।দরজাটা খুলে বসতে যাবে তখন'ই হকচকালো। আহনাফ! কয়েক পলক ফেললো সে তার দিকে তাকিয়ে।আহনাফ ড্রাইভিং সিটে বসে।হঠাৎ'ই আবার কুহুর ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠলো।রোদেলা কল করছে।আহনাফ এখনো কুহুর দিকে তাকায়নি।সে এখনো সামনের দিকে তাকিয়ে।কুহু কলটা রিসিভ করলো
-'কিরেহ বাঙ্গির শা/লি! কই তুই?
রোদেলা বলে উঠলো
-'আর বলিস না ইয়ার! আমার এক খাটাশ চাচাতো ভাই আজ দেশে এসছে মানে ওনারা পুরো ফ্যামিলি আরকি।বেরোতে যাবো ঠিক ওমন সময় আম্মু বললো যে তারা নাকি কাছাকাছি এসে পড়েছে।দেখা করেই যেন যাই।তুই একটু মানে..
কুহু বলে উঠলো---"তুই বলতে কি চাইছিস?"
-'কেন আহনাফ ভাই পৌঁছায়নি?
কুহু আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো---"হুম।"
-'দোস্ত তুই একটু মানে ওনার সাথেই চলে যা না!তুই তো আমার বেবি তাই তোর সাথে ওনাকে ছাড়তে আমার কোনো প্রব্লেম নেই।
কুহু কিছু বলতে নিলে রোদেলা বলে উঠলো
-'আহনাফ ভাইয়ের সাথে আমার কথা হয়েছে।দেখেছিস ওনি কত ভালো! আমার এক কথায় রাজি হয়ে গেছে জানিস!
কুহু মনে মনে বললো
-'সে তো কিসের জন্য রাজি হয়েছে আমি বেশ ভালোই বুঝতে পারছি।এমনিতেই পিছু ছাড়ে না তারউপর আজ আবার সুযোগ হেঁটে হেঁটে এসেছে তার কাছে।
রোদেলা আবার বললো---"দোস্ত তুই প্লিজ..."
-'উষ্টা মেরে তোর ঐ চাচাতো ভাইয়ের গাড়ির ছাদে পাঠিয়ে দিব তোকে।কল রাখ শা/লি বাঙ্গি!
কুহু ঝাড়ি মেরে কল কেটে দিল।সে হেঁটে যাবে তাও এর সাথে যাবে না।গাড়ির দরজাটা ধরাম করে লাগিয়ে হাঁটা ধরলো সে।হঠাৎ শব্দে আহনাফের হুশ আসে।সে পাশ ফিরে তাকালো।কুহু এখানে এলো কখন? 'চ' সূচক শব্দ করলো আহনাফ।এই মেয়ে আজ শাড়ি পড়েছে কেন?একটু আগে হুশ হারিয়ে হা করে সামনে তার দিকে তাকিয়েছিল।এখন যদি এ পাশে বসে আহনাফ যে উল্টোপাল্টা কিছু করে ফেলবে তার'ই বা কি নিশ্চয়তা! কিন্তু একে একা একা ছেড়ে দেওয়াটাও তো ঠিক হবে না। আহনাফ একটা শুকনো ঢোক গিললো। more......
____________________________
সিকদার কুঞ্জে পরপর দুটো গাড়ি এসে পৌঁছালো।গাড়ির হর্ণের শব্দে জেরিন বেগম হাসি মুখে বলে উঠলেন
-'ওরা চলে এসেছে....
রোদেলার বিরক্ত লাগছে।সে তো এ বাড়িতেই থাকছে পালিয়ে তো যাচ্ছে না তাহলে পরে দেখা করলেই তো হতো..তা না! সেও গেল মায়ের পেছন পেছন।শাড়ি সামলানো সত্যিই অনেক কঠিন কাজ।রোদেলা মায়ের পাশে দাঁড়ালো।প্রথম গাড়ির দরজাটা খুলে গেল।নেমে এলো এক মধ্যবয়স্ক লোক।মুখে অমায়িক হাসি।অপর পাশের দরজাটা খুলে নেমে এলো শাড়ি পরিহিতা এক মহিলা।চোখে পানি চিকচিক করছে।জেরিন বেগম দৌঁড়ে গেলেন।
-'কেমন আছো আপা?
আনিসা বেগম কথা বলতে পারলেন না।জেরিন বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।রোদেলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে শুধু।অখিল শাহরিয়ার আর সাজ্জাদ শাহরিয়ার হাসলেন।রোদেলার নজর গেল পেছনের গাড়িটার দিকে।ওটাতে আবার কে? তখন'ই গাড়ি দরজাটা খুলে গেল।নেমে এলো এক যুবক।রোদেলার না চাইতেও হা করে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।চোখদুটো একদম আহনাফ ভাইয়ের চোখ দুটোর মতন।চেহারার গড়ণ যেন একদম পারফেক্ট।লম্বায়ও তো সেই উঁচু! মনে হচ্ছে যেন রূপকথার জগতের রাজকুমার!
রোদেলাকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে যুবকটা কেমন করে যেন হাসলো।এক চোখ মারলো সে। রোদেলা ভড়কে গেল।সে কি ঠিক দেখলো? নজর সরিয়ে নিল সে।হাহ্! যত সুন্দর'ই হোক না কেন আহনাফ ভাইকে ছাড়াতে পারেনি।ছেলেটা চাবির রিং হাতে ঘোরাতে ঘোরাতে সামনে এসে উপস্থিত হলো।সাজ্জাদ শাহরিয়ার বললেন
-'ছেলেকে দেখবে না?শুধু আপাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেই হবে!
রোদেলা বুঝলো যে এটাই সেই রাহুল।আসলেই কিন্তু সেই হ্যান্ডসাম।পরপর'ই রোদেলা নিজের মাথায় গাট্টা মারলো।জেরিন বেগম চোখের পানি মুছে রাহুলের দিকে তাকালেন।রাহুল মুচকি হেসে সালাম দিল।জেরিন বেগম সালামের জবাব দিয়ে বললেন
-'মাশাআল্লাহ! আমাদের রাহুল তো অনেকটা সুদর্শন হয়েছে দেখতে।একদম আমাদের আহনাফের মতন।
রাহুল প্রথমে হাসলেও পরে সেই হাসি মলিন হয়ে গেল।আহনাফের মতন! আহনাফকে মাঝে টানতেই হবে এদের!তবে সেই বিরক্ত সে প্রকাশ করলো না।মুখে বললো
-'কেমন আছো, ছোট মা?
জেরিন বেগম বললন
-'এতোদিন ভালো ছিলাম না,,,এই যে তুই এলি এখন ভালো লাগছে।
রাহুল হেসে আলতো হাতে জেরিন বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললো---"অঅঅ ছোটমা..!"
সবার মুখেই হাসি।রোদেলা শুধু ঘড়ি দেখছে।অখিল শাহরিয়ার ডাক দিলেন তাকে।রোদেলা হাসে মুখে এগিয়ে গেলো
-'ভাইজান, আমাদের মেয়ে রোদেলা..
রোদেলা সাজ্জাদ শাহরিয়ারের পা ছুঁয়ে সালাম করতে নিলে বাঁধা দিলেন তিনি।
-'আরে ..বেঁচে থাকো মা...অনেক ভালো থাকো...কত বড় হয়ে গেছে তাই না!
আনিসা বেগম বললেন
-'ইশ! মেয়েটা কি মিষ্টি হয়েছে দেখতে! ইচ্ছা তো করছে ছেলের বউ বানিয়ে ফেলতে...
সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।ফোড়ন কেটে রাহুল বললো
-'আই হ্যাভ নো প্রব্লেম..
সবাই আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো এটা শুনে।রোদেলা চমকে তাকালো তার দিকে।ভয়েসটা পরিচিত লাগছে কেন বে?রাহুলের দিকে তাকিয়েই ভাবছিল সে কথাটা।রাহুল হঠাৎ সানগ্লাসটা একটু নিচু করে আবার চোখ মারলো তাকে।রোদেলা হালকা হেসে বললো
-'ভাইয়ার মনে হয় চোখে সমস্যা...
সবাই তাকালো তাদের দিকে।রাহুল বললো
-'সামনে এতো সুন্দর একটা পরী দাঁড়িয়ে থাকলে কি আর চোখ ঠিক থাকার কথা?
সবাই অদ্ভুদ নয়নে তাকালো তার দিকে।রাহুল তা দেখে বললো
-'চিল! আই'ম জাস্ট জোকিং...
সবাই হাসলো।রাহুল বললো
-'শাড়ি পড়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
রোদেলা কিছু বলার আগেই জেরিন বেগম বললেন
-'ওদের ভার্সিটিতে আজ নবীনবরণ অনুষ্ঠান।
রাহুল বড্ড উচ্ছ্বাস নিয়ে বললো---"ওয়াও!"
রোদেলা হালকা হাসলো।অখিল শাহরিয়ার বললেন
-'আহা! বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি সবাই! ভেতরে আসো তো...
সবাই ভেতরে যেতে নিলে রাহুল বললো
-'তোমরা ভেতরে যাও আমি লিটল্ প্রিন্সেসের সাথে অনুষ্ঠান জয়েন করবো।ডু ইউ হ্যাভ অ্যানি প্রব্লেম?
রোদেলা মুখ কুচকালো।এ আবার কেমন নাম? লিটল্ প্রিন্সেস! মনের বিরক্ত মনেই চাপা দিল।মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো
-'আপনি মাত্র এলেন বিশ্রাম নি...
-'আই'ম নট টায়ার্ড ইয়েট।আই ওয়ানা জয়েন।
অখিল শাহরিয়ার বললেন
-'যেতে চাচ্ছে যখন যাক।আহনাফের সাথেও দেখা হয়ে যাবে।ভালোই হবে।যাও বাবা ঘুরে এসো...
রোদেলার বড্ড বিরক্ত লাগলো।তবুও সে মুখে কিছু বললো না।হাসি মুখে গাড়িতে গিয়ে বসলো।রাহুল দুইদিকে ঘাড় বাঁকালো।ঠোঁটের কোণে তার অদ্ভুদ এক হাসি।
______________________
ভার্সিটির গেইট দিয়ে পরপর দুটো গাড়ি ঢুকলো।একটাতে আহনাফ,কুহু আরেকটাতে রাহুল,রোদেলা।গাড়ি দুটো একসাথে থামলো।গাড়ির দরজা খুলে একসাথে বেরোলো সব।রোদেলা কুহুকে দেখতেই চেঁচিয়ে উঠলো।
-'বেবিইইইই..!!
রাহুল ভ্রু কুচকালো।রোদেলা হাত নাড়িয়ে ডাকছে কুহুকে।আহনাফ তাকালো তাদের দিকে।রেনানও আস্তে করে একটা গালি দিল সাথে আহনাফও একটা গালি দিল। কুহু হেসে এগিয়ে আসতে নিবে তখন তার পাশে দাঁড়ানো যুবকটার দিকে তার চোখ গেল।মুখের হাসি উবে গেল মেয়েটার।তার পুরো পৃথিবী যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। এটা সে কাকে দেখছে! ভেতরে ঝড় শুরু হয়ে গেল তার।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।এতগুলো বছর পর আবার সেই ব্যক্তিকে দেখে যেন সে স্তব্ধ বনে গেছে।অজান্তেই কাজল কালো চোখে পানি চলে এসেছে। অথচ ব্যক্তিটি তাকে একবার দেখেই নজর সরিয়ে নিয়েছে।তখন গালি দিলেও দুজন এখন কুশল বিনিময় করছে।কুহুর অবাক হয়ে গেল।এটা তার কল্পনা নয় এটা সত্য।ও ফিরে এসেছে। হতভম্ব হয়ে বিরবির করে আওড়ালো একটা নাম---"রেনান!!"
চলবে more.......
No comments: