Header Ads Widget

test

প্রেমে_প্রেমে_ভালোবেসেছি


প্রেমে_প্রেমে_ভালোবেসেছি
পর্ব_০৭
লেখিকা_তাইয়্যিবা
পিকনিকের দিন সকাল থেকে সবাই একসাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেছে।বেশ আনন্দের সাথে সকলে একসাথে মিলে নিজেরাই রান্না করেছে। এরপরে দুপুরে খাবার সার্ভ করার সময়ও সকলে একসাথে ছিলো। বিকেলের দিকে কনসার্ট হবে। আয়রা রা আগে জানতো না কনসার্ট এর বিষয়।আজ এসেই জানলো। এমনিতেও বিকেলে শাড়ি পরার কথা। ভালোই হলো, কনসার্ট হলে কনসার্টেই শাড়ি পরে আসা হবে।শুনেছে কয়েকজন গায়ক ও আসবে।এছাড়া ভার্সিটির ভাইয়া,আপু যারা আছে তারাও নাচ গান করবে। খাওয়ার পাট চুকিয়ে সবাই এখন বিকেলের জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিবে। আয়রা তাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রিকশা নেয় আজ ।তার সাথে তানিয়া আর সর্মাও আছে । মূলত রিদ্মিকদের বাড়িটা এখান থেকে কাছেই।হেঁটে যেতে বিশ মিনিটের মতো লাগে।তানিয়া আর সর্রমা বাসা দূরে পরে ।তাই আয়রাদের ওখানেই সবাই তৈরি হবে।
ভার্সিটির মাঠের একদিকে সুন্দর করে স্টেজ সাজানো হয়েছে।সামনের দর্শকদের জন্য বেশ বড় জায়গা আছে। মাঝে বেশ দিয়ে আলাদা সাইড করে দিয়েছে।যাতে একপাশে মেয়েরা,আর অন্যপাশে ছেলেরা দাঁড়াতে পারে।কিছু কিছু চেয়ার এনে রাখা হয়েছে।রিদ্মিক স্টেজের ওখানে দাঁড়িয়ে কয়েকজন ছেলের সাথে কিছু নিয়ে আলোচনা করছে ।তার সাথে আকাশ ও আছে।আজ রিদ্মিক কালো পাঞ্জাবি ,সাথে সাদা পাজামা পরেছে।হাতে কালো একটা ঘড়ি আছে।পাঞ্জাবির বুকের দুটো বোতাম খুলে রেখেছে,সাথে কালো সানগ্লাস টা সেখানে ঝুলিয়ে রাখা।চুলগুলো ঘাড় ছুই ছুই,বেশ স্টাইল করে রেখেছে।মনে হচ্ছে এলোমেলো!দেখতে সুন্দর লাগছে।আকাশও নীল একটা পাঞ্জাবি পরেছে।এদের দুজনকেই মারাত্মক হ্যান্ডসাম লাগছে। ইতিমধ্যে অনেকেই এসে পরেছে।কিছু কিছু মেয়ে তো রিদ্মিক এর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।কয়েকজন তো বুকে হাত দিয়ে জানান দিচ্ছে,তারা রিদ্মিক এর প্রেমে পরেছে।কথা শেষ করে রিদ্মিক হাত ঘড়িতে চোখ বুলায়।এরপর গেটের দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিতে গিয়েও থেমে যায়। থম মেরে তাকিয়ে থাকে গেটের দিকে ।চোখে মুখে একরাশ মুগ্ধতা। আয়রা আসছে, সেদিনের কিনে দেয় কালো শাড়িটা পরেছে।দুহাত ভর্তি চুড়ি,কানে ঝুমকা, হাঁটু ছুই ছুই চুলগুলো ছেড়ে দেয়া।মাঝখানে সিতি করে দুপাশ ফুলিয়ে আবার কানের এদিকটায় ক্লিপ মেরে আটকে নিয়েছে ।যাতে চুল সামনে না চলে আসে।তবে ছোটো ছোট কয়েকটা চুল কপালের উপর লেপ্টে আছে। শাড়ির আচল কাঁধে ভাঁজ করে উঠিয়ে রাখা। ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক দেয়া,চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়েছে।এছাড়া আর কোনো প্রসাধনির দেখা মিলছে না।এতটুকু সাজেই তো রিদ্মিক এর হার্ট বিট করা বন্ধ করে দিয়েছে। তাহলে রিদ্মিক যে অনুভব করছে তার বুকের ভিতর কিছু একটা ধরফর করছে,অসীম বেগে যে কিছু একটা ছুটছে!সেটা কি তাহলে ফুসফুস?হার্ট তো বিট করছে না। আয়রার এই রূপে শেষ মেশ তার আবার ফুসফুস এটাক না হয়ে যায়!
(ফুসফুস এটাক ফান করে বলা হয়েছে।আমি জানি ফুসফুস এটাক হয় না।😒)
আকাশের ধাক্কায় রিদ্মিক এর হুস আসে।
~ থমকে গেলি যে?তো কাকে দেখে তুমি এভাবে বরফ হইলা গো বন্ধু?
আকাশ মিটিমিটি হেসে বলে । রিদ্মিক জবাব দেয় না । আয়রা ততক্ষণে তানিয়া আর সর্মার সাথে এদিকটায় এসে দাঁড়িয়েছে।সেও দেখেছে রিদ্মিক ভাই কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো।বেশ লজ্জাও লাগছে,তাই আর ভুলেও রিদ্মিক ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছে না সে।এমনিতেও রিদ্মিক ভাইকে এই প্রথম পাঞ্জাবিতে দেখলো।এতো সুন্দর লাগছে!
রিদ্মিক ঘুরে ফিরে বার বার আয়রাকে দেখছে।এদিক ওদিক হাঁটছে,আর আয়রাকে দেখছে। আকাশ ও তার সাথে সাথে হাঁটছে,আর আজেবাজে বকে রিদ্মিকের মজা নিচ্ছে।
~হাটছিস ভালো কথা।কিন্তু চোখ ওদিক নিচ্ছিস কেন?হু হা?
~ শাড়ির আঁচলটা ছেড়ে দিলে বোধহয় আরও সুন্দর লাগবে।
~কার শাড়ির আচল?আমরা তো শাড়ি পরিনি!
রিদ্মিক কটমট করে আকাশের দিকে তাকালে আকাশ জোরে হেসে দেয়।রিদ্মিক হাত দিয়ে গাল ডলে..
~ সর্মাকে রাদিফ নাকি পছন্দ করে।আজ হয়তো প্রোপোজ ও করবে।
ব্যস,আকাশের হাসি থেমে যায়। হরবর করে রিদ্মিক এর সামনে আসে..
~ সর্মাকে পছন্দ করে মানে? সর্মাকে পছন্দ কেন করে?
~ আজব,পছন্দ করতে পারে না?
আকাশ থতমত খায়।
~ তুই বুঝিস না কিছু?
আকাশ মিনমিনে স্বরে বলে।রিদ্মিক অবাক কন্ঠে বলে,
~ কি বুঝবো আমি?এই,বাই এনি চান্স তুই গে নাতো?আমাকে পছন্দ করিস?এটা বুঝতে বলছিস?
আকাশ হতভম্ব হয়ে তাকায়।এবার রিদ্মিক পেট চেপে ধরে হাসতে শুরু করে।আকাশ বুঝে রিদ্মিক মজা করছিলো ।
~ তুই জানিস না? সর্মাকে আমি ভালবাসি। এজন্যই এর কথা বললি?কিন্তু আমি তো তোকে বলিনি!
~ তোর মনের খবর না জানলে আমি তোর কিসের বন্ধু হলাম?
এই এক কথায় আকাশ ইমোশনাল হয়ে যায়।
~ তুই যা, আয়রাকে গিয়ে বল শাড়ির আচল ছেড়ে দিতে।আর তোরা যখন কথা বলবি,আমি কিছু ক্যানডিড পিক নিয়ে নিবো তোদের।ভালো হবে না?
রিদ্মিক হাসে আকাশের কথা শুনে ।আকাশকে ঝাপটে ধরে বলে,
~ ভীষণ ভালো হবে।
এরপর এগিয়ে যায় আয়রাদের দিকে ।
আয়রা একাই দাঁড়িয়ে আছে। সর্মা আর তানিয়া পাশের ওদিকে ছবি তুলতে গিয়েছে। আয়রাকে রেখে গিয়েছে জায়গা রেখে দেয়ার জন্য।নিজের মোবাইল নিয়ে এতক্ষণে তোলা ছবিগুলো দেখছিলো আয়রা। এর মাঝেই রিদ্মিক এসে পাশে দাঁড়ায়।
~ উহুম, উহুম...
আয়রা তাকায়।রিদ্মিককে দেখে একটু নার্ভাস লাগছে কেনো জানি।
রিদ্মিক এর দিকে তাকাতে হলে তো আবার ঘাড় বেকিয়ে তাকান লাগে।কি জ্বালা!
~ কিছু বলবেন রিক ভাই?
আয়রা নিচের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে। আর রিদ্মিক কাপা কাপা বুক নিয়ে আয়রার দিকেই তাকিয়ে।
~ অনেক সুন্দর লাগছে।লাইক, মাই ....জানপাখি...
আয়রার অন্তঃস্থলে কিছু একটা হয়।হুট করেই মনে একরাশ ভালোলাগা হাজির হয় । খানিকটা লজ্জাও লাগছে।
~থ্যাংক..ইউ
~ শাড়ির আঁচলটা ছেড়ে রাখলে আরো সুন্দর লাগবে।
রিদ্মিক মাথা নাড়িয়ে বলে ।পরক্ষনেই আবার বলে,
~ এভাবে দেখে তো হার্টবিট বন্ধ হয়ে গিয়েছে।শাড়ির আচল ছেড়ে রাখলে হার্ট এটাক হয়ে যাবে।আর...আমি চাই,আমার যাতে হার্ট এটাক হয়...পাখি....
লজ্জায় আয়রা ঠোঁট কামড়ে ধরে।
~ আবারো উশকে দিচ্ছ কিউটি?এভাবে.... ঠোঁট কামড়ে... হুম?হুম?
লজ্জায় আয়রা আর দাঁড়াতে চায় না।ছুটে পালাতে গেলে রিদ্মিক শাড়ির আচল টেনে ধরে । আয়রা থেমে যায় ।ভীতু চোখে রিদ্মিক এর দিকে তাকায়,রিদ্মিক হেসে আচল ছেড়ে দিলে সে ছুটে পালায়।ইশ!এই রিদ্মিক ভাইটা এতো ফ্লার্ট করে না!!!!
রিদ্মিক এসে আকাশের পাশে দাঁড়িয়ে হেসে ভ্রু উচায়।আকাশ নিজের ফোনটা এগিয়ে দিলে রিদ্মিক ছবি গুলো দেখে।একটাতে সে পাশে দাঁড়িয়ে আয়রার দিকে তাকিয়ে,তার ডাকে আয়রাও তার দিকে তাকায় যে,সেই সময়ের তোলা ।যেনো দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। এরপরের কয়েকটায় আয়রা মাথা নিচু করে লজ্জা পাচ্ছিল,আর রিদ্মিক তার দিকে তাকিয়ে হাসছিলো ।আর শেষের টায় রিদ্মিক মুচকি হেসে আয়রার শাড়ির আচল ধরা,আর আয়রা, কাজল কালো চোখ নিয়ে ভীতু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে।এটাই রিদ্মিক এর কাছে সবথেকে ভালো লেগেছে।নিজের ফোনে ছবিগুলো নিয়ে আচল টেনে ধরা ছবিটা হোম স্ক্রিনে ওয়ালপেপার দেয়।এরপর আবার নিজের কাজে লেগে পরে ।
কনসার্ট শেষ হতে হতে রাত নয়টা।এর আগে আয়রা কখনও এতো রাত অব্দি বাইরে থাকেনি ।তাও ঢাকা শহরে।ঢাকায় অবশ্য রাত ৩ টাও রাত নয় এমন মনে হয় ।সরমা আর তানিয়ার বাড়ি একদিকে হওয়ায় তারা একসাথে একটা রিকশা নিয়ে চলে যায়। আয়রার সাথে দাঁড়াতে চেয়েছিলো।কিন্তু সালাম সাহেব আসবে বলে আয়রা তাদের পাঠিয়ে দেয় ।নয়তো ওদের ও দেরি হয়ে যাবে। ওরা রিকশা নিয়ে যেতেই রিদ্মিক বাইক নিয়ে এসে দাঁড়ায়। আয়রা ভরকে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয় ।তখন রিদ্মিক ভাইয়ের বলার পর পরই শাড়ির অচল ছেড়ে দিয়েছিলো।কি জানি কেনো!ভালো লেগেছিলো তাই হয়তো! more.....
~আংকেল কে নিয়ে বাবা জরুরি কাজে উত্তরার দিকে গিয়েছে।তোমাকে আমায় নিয়ে যেতে বলেছে।
এটুকু বলে থামে সে। আয়রা অবাক হলেও কিছু বলে না।রিদ্মিক ভাই এব্যাপারে মিথ্যা বলবে না।রিদ্মিক দ্বিধা নিয়ে আবারো বলে,
~ বাইকে উঠো....যদি তোমার প্রবলেম না থাকে।আর যদি আমার সাথে যেতে তোমার আনইজি লাগে তো নির্দিধায়ই বলো।তোমাকে রিকশায় তুলে দিয়ে আমি রিকশার পিছন পিছন যাবো।
এরপর আর রিদ্মিক ভুলেও আয়রার দিকে তাকায় না।সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে যে ভালো মানুষের মতো এতটুকু বলছে এই অনেক।তার দ্বারা ভালো মানুষের মতো আচরণ করা খুবই কষ্টকর।নিজের ফর্মে থাকলে অন্তত আয়রাকে এই সেই ভয় দেখিয়ে বাইকেই নিত।কিন্তু ওই যে, বলেছিলো সে ভালো হয়ে যাবে!তাই ভালো হওয়ার চেষ্টায় আছে। আয়রা কিছুক্ষণ ড্যাব ড্যাব করে
রিদ্মিক এর দিকে তাকিয়ে থাকে।এরপর কিছুক্ষন ভেবে চুপচাপ গিয়ে বাইকে ওঠে। ডান হাত রিদ্মিক এর কাঁধে রেখে বাম হাত দিয়েও বাইক ধরে বসে। আয়রা বসতেই রিদ্মিক ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে।এই যে আয়রা আজ তার কথা ভেবে শাড়ির অচল ছেড়ে রাখলো,আবার এখন বাইকে উঠলো তার সাথে প্রথম বার,আবার তার কাধেও রাখলো!এই এতেই তো রিদ্মিক এর অন্তর ঠান্ডা হয়ে গেলো ।মনে হচ্ছে তার মত সুখী ব্যক্তি আর কেউ নেই । সত্যিই কেমন খুশি লাগছে,হাসিটা মন থেকে হাসতে পারছে।আর লোক দেখানো হাসি হাসতে হয়নি এখন।রিদ্মিক খুব ধীরে ধীরেই বাইক চালায়।সে জানে, আয়রার বাইকে ভীতি আছে।গ্রামে তো ভ্যান, অটো এসবই বেশি যাতায়াতে ব্যাবহার করা হয়।বাইক ও আছে।তবে বেশি একটা চলাচল করা হয়নি আয়রার। এজন্যই পরে যাওয়ার একটা ভয় আছে।রিদ্মিক যেহেতু ভালো মানুষ হতে চাচ্ছে তাই বাইক ধীরেই চালাচ্ছে।শয়তানি বুদ্ধিটা আপাতত মাটিচাপা দিয়ে দিলো। আয়রাকে নিয়ে বাড়িতে পৌছে দেয়। নিজেও আর। না বের হয়ে ঘরে যায়।একটু পরই তো আয়রা বারান্দায় উপন্যাস নিয়ে বসবে।রিদ্মিক তখন নিজের রুমের সব লাইট বন্ধ করে অন্ধকারে বসে তার পাখি কে দেখবে।
ইদানিং আয়রা খেয়াল করে শুভ কেমন তার দিকে তাকিয়ে থাকে তো তাকিয়েই থাকে । রিদ্মিক ভাই যেমন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে?শুভ ও ইদানিং অমন করে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু তার তা ভালো লাগছে না।কেমন অসহ্য লাগছে।তাহলে রিদ্মিক ভাইয়ের কথায় খেটে গেলো।শুভর মনে আয়রাকে নিয়ে অন্য অনুভূতি আছে।মেয়েরা আসলে ছেলেদের দৃষ্টিতেই বুঝতে পারে কে তাকে কেমন ভাবে দেখে । এদিকে তানিয়াও শুভকে একেবারে মন দিয়ে দিয়েছে।শুভ বলতে পাগল সে।আর আয়রার ও ভালো লাগছে না শুভর এমন তাকানো। রিদ্মিক ভাই জানতে পারলে সাড়ে সর্বনাশ হবে একেবারে ।এমনিতেই সে শুভকে আয়রার সাথে সহ্য করতে পারে না।শুধু ভালো মানুষ হতে চায় বলে এখনো শুভকে কিছু বলেনি।এখন যদি জানতে পারে তার ধারণাই ঠিক হয়েছে তাইলে তো হইলোই!আগুনে একটু ঘি ঢালা হবে আরকি।তাই সব মিলিয়ে আয়রা শুভকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। যেটা শুভর ও চোখে পরেছে।তাই সে সুযোগ খুঁজছে আয়রার সাথে এ বিষয়ে কথা বলার।সে বুঝতে পেরেছে, আয়রা তার মনের কথা বুঝে গিয়েছে এজন্যই হয়তো তাকে এড়িয়ে চলছে। টিফিন পিরিয়ডে সেই সুযোগটাও সে পেয়ে যায় । আয়রা তখন তানিয়া আর সর্মার সাথে চারতলার সেই রুমে এসে বসেছে ।মূলত এর পরের ক্লাস গুলো তারা করবে না।তাই এখানে বসেই আড্ডা দিবে।এমন সময় শুভ তার দুজন বন্ধুর সাথে আসে।তানিয়া আর সরমাকে মাথা চুলকে বলে ,
~ আয়রার সাথে সিক্রেট একটা কথা আছে।তোরা বাইরে দাড়াবি? তোদের ও নাহয় জানাবো?
তানিয়া ভাবে শুভ ও পছন্দ করে।আর আয়রার সাথে হয়তো প্ল্যান করবে তাকে প্রোপোজ করা নিয়ে।তাই লজ্জা পেয়ে সর্মাকে নিয়ে রুমের বাইরে যায়। আয়রাকে কিছু বলার সুযোগ অব্দি দেয়নি।
~ আরেহ, দাড়া....
তবে ততক্ষণে দুজন রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছে।
~ তোর সাথে কথা আছে আয়রা।
শুভ সিরিয়াস হয়ে বলে। আয়রা ইতস্তত হয়ে দাড়িয়ে থাকে। সে ধারণা করতে পারছে শুভ কি বলবে,
~ আমি পেচিয়ে কথা বলতে পারি না।তাই সোজাসুজি বলছি ।আমি তোকে ভালোবাসি আয়রা।
আয়রা চোখ খিচে বন্ধ করে নেয় । নিজেকে ধাতস্থ করে শুভর দিকে তাকায়,
~ তুই আমার জীবনের প্রথম ছেলে বন্ধু শুভ।তোকে আমি ভাই হিসেবে দেখি।তাই কোনোভাবেই তোর প্রতি অন্য ফিলিংস আনা সম্ভব নয়। আশা করছি তুই এসবের জন্য বন্ধুত্বে দূরত্ব করবি না।
শুভ অসহায় চোখে তাকায় । আয়রা চলে যেতে নিলে শুভ এক অভাবনীয় কাজ করে। আয়রার হাত টেনে এনে তাকে জড়িয়ে ধরে।
~ এমন করিস না ,আমি তোকে অনেক ভালোবাসি।বাঁচতে পারবো না।
আয়রা হতভম্ব হয়ে যায়।এভাবে জড়িয়ে ধরায় রাগ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।শুভকে ধাক্কা মারে সরিয়ে কিছু বলা আগেই কেউ লাথি বসায় শুভর পেটে।শুভ ছিটকে পরে দূরে। আয়রা হতবাক হয়ে তাকায় রিদ্মিক এর দিকে।রিদ্মিক ভাই এখানে! রিদ্মিক গিয়ে শুভকে আবার মারতে শুরু করবে দেখে আকাশ দ্রুত রিদ্মিককে ঝাপটে ধরে। এমনিতেই শুভ ছিটকে পরে মাথায় আঘাত পেয়েছে।আকাশ কোনোমতেই ক্ষেপা রিদ্মিককে থামাতে পারছে না।রিদ্মিক রাগে ফুঁসছে শুধু,মাঝে মাঝে চিল্লিয়ে দু একটা কথা বলছে।বাকি কথা যেনো কোথায় আটকে গিয়েছে।রিদ্মিককে এভাবে দেখে আয়রা এগিয়ে যায়।
~ আর মারতে হবে না ।আর মারতে হবে না।আপনি ভুল বুঝছেন।আমার কথা শুনুন,শান্ত হোন।রিক ভাই,রিক ভাই,শান্ত হোন।
রিদ্মিক আকাশকে এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নেয়। আয়রার দুহাত ধরে দেয়াল চেপে ধরে।রক্তলাল চোখে পানি জমেছে, রাগান্বিত, অসহায় মিশ্রিত কন্ঠে বলে,
~ আমাকে মেরে ফেলো,মেরে ফেলো।নয়তো ওকে আমি শেষ করবো।তুমি,তুমি এটা কী করলে পাখি?তোমায় আমি...তোমায় আমি বারন করছি ওর সাথে মিশতে। তাও,তুমি...মিশলা। ও তোমায় জড়িয়ে ধরলো। আমায়..আমায়...এভাবে..এভাবে শাস্তি দিলা পাখি?আমি রিদ্মিক,তোমায় আজ অব্দি এভাবে ছুইনি।তুমি কষ্ট পাবে তাই।কিন্তু..কিন্তু আজ ও ..ও কি করলো?
ও পাখি, জান আমার,তুমি জানো না আমি কষ্ট পাই?এই এখানে, দেখো,,,বুকের এই যে বা পাশে পুড়ছে।উফ,কষ্ট হচ্ছে,কষ্ট হচ্ছে।তুমি..তুমি এভাবে শাস্তি দিচ্ছ!এভাবে!এভাবে!
রিদ্মিক চুল টেনে ধরে।হাসফাস করছে কেমন।পাগল পাগল লাগছে কেমন।তার ,তার প্রিয় প্রাণকে অন্য কেউ কেনো এভাবে জড়িয়ে ধরলো।উফফ...
পরতে পরতে নিজেকে সামলে নিয়ে রিদ্মিক দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়।আকাশ ও তার পিছনে যায়। আয়রা অনুভূতি শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।রিদ্মিক ভাই কি বললো! সে তাকে এভাবে শাস্তি দিচ্ছে!আসলেই কি শাস্তি দিচ্ছে?
তানিয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে শুভর দিকে তাকিয়ে।শুভ মাথা চেপে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে আয়রার দিকে।সর্মা সব রেখে নিশ্চুপ। ভাগ্যিস এখনো কেউ টের পায়নি এসব ।নাহলে আয়রার বদনাম হয়ে যেতো যে।
সবার নীরবতার মাঝে তানিয়া ভাঙা কন্ঠে বলে,
~আমি তোমায় ভালোবাসি শুভ।সেই শুরু থেকেই।তুমি আমার ভালোবাসাটা একটুও দেখলা না।উল্টো আয়রাকে ভালোবাসলা!
শুভ শুধু অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে।রিদ্মিক ভাইয়ের ব্যাপার নিয়ে যা বুঝার সে বুঝে গিয়েছে। আয়রা চোখের পানি মুছে নেয়।রুম থেকে বেরিয়ে ক্লাস থেকে ব্যাগ নিয়ে নেয়।সরমা ও তানিয়াকে নিয়ে আয়রার সাথে ব্যাগ নিয়ে নেয়।তানিয়া রোবটের মতো সরমার হাঁটছে। নিচে এসে গেটের কাছে যেতেই দেখে ভার্সিটির অনেক ছেলেরা হন্তদন্ত হয়ে ছুটছে।একজন এসে অন্যদের চিল্লিয়ে বলছে,
~ মোড়ের ওখানে রিদ ভাইয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছে। বাজে ভাবে আঘাত পেয়েছে । হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছে সবাই,গেলে চলো তোমরা।
এরপর ছেলেটা ছুটে চলে যায়। আয়রা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে ।রিক ভাইয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছে?খুব খারাপ অবস্থা?এতটুকু ভাবতেই শরীরের শক্তি কমে যায়। টলে গিয়ে পিছনে পা ফেলে, সর্মা দ্রুত এসে তাকে আগলে ধরে। আয়রা কোনমতে নিজের শ্বাস করার গতি নিয়ন্ত্রণ করে বলে,
~ রিক ভাইয়ের কাছে যাবো ।আমি যাবো..নিয়ে চল প্লীজ...
চলবে?
এক এক পর্বে এক এক রকম রেসপন্স more....

10

No comments:

720

Powered by Blogger.