Header Ads Widget

test

প্রণয়ের_অন্তিমক্ষণ


 

প্রণয়ের_অন্তিমক্ষণ

লেখিকা_অনন্যা
পর্ব_১৬
.
🍁
.
আহনাফের গান শেষ হতেই চারদিক করতালিতে ফেটে পড়লো যেন।সবাই আহনাফকে আরেকটা গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ করছে।কিন্তু আহনাফ আজ তাদের কথা রাখলো না।স্টেজ থেকে নেমে গেল সে।হাতে ব্যান্ডেজ করা হয়নি।রক্ত শুকিয়ে টানটান হয়ে গেছে।ব্যথায় টনটন করছে দুই হাত।তবে আজ বুকে ব্যথা বেশি তার।
কুহু দেখলো সবটা।তার কি হলো কে জানে! সবাইকে ঠেলেঠুলে সে বের হলো।পেছন থেকে আয়ান আর রোদেলা তাকে ডাকছে কিন্তু সে শুনলো না।সে আহনাফ যেদিকে গিয়েছে সেদিকে ছুটলো।রাহুল কপাল কুচকালো।যাচ্ছে কোথায় মেয়েটা?তার খুব কৌতুহল হলো।সেও সবার চোখের অগোচরে কুহুর পেছনে গেল।
-'আহনাফ ভাই, কি গানটা গেয়েছিস আজ মাইরি! অসাধারণ ভাই!
আদিতের কথা শেষ হতেই আরিফ বললো
-'মাইয়াগুলা যেভাবে তোরে দেখতেছিল রে মামা!
-'কোনদিন দেখে না ঐ ডায়নিগুলো? তবে যাই বল আহনাফ...আজকে অনেক জোস গেয়েছিস মামা।
নাতাশার কথা শেষ হতেই আহনাফ বললো
-'যাকে ডেডিকেট করে গাইলাম সে বুঝলেই হয়।
আদিতরা একসাথে সুর টেনে বললো--"ওওও!"
আহনাফ ফার্স্টএইড বক্স থেকে মেডিসিন বের করলো।কারো সাহায্য সে নিল না।নিজের কাজ সে নিজেই করতে পছন্দ করে।হঠাৎ তখন...
-'আসব?
সবাই দরজার দিকে তাকালো।এখন এই মুহূর্তে কুহুকে তারা কেউ প্রত্যাশা করেনি বোধহয়।তাদের চাহনিটা তেমন'ই ছিল। আদিত আহনাফের পাশেই ছিল।সে ফিসফিস করে বলে উঠলো
-'তোর ফুলটুশি এসে গেছে মামা।রাগ ভাঙ্গাবে মনে হয়।
আহনাফ কুহুকে একবার দেখেই নজর সরিয়ে নিয়ে আবার হাতে মেডিসিন লাগানোতে মনোযোগ দিয়েছে।কুহু ওদের কারো থেকে জবাব না পেয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলো---"ভেতরে আসব?"
আহনাফ কাটকাট গলায় বললো--"নাহ।" হতভম্ব হলো কুহু।বাকিরা মুখ টিপে হাসছে।নাতাশা বলে উঠলো
-'এহুম এহুম....কিরেহ মামা তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আরে বুঝতে পারছিস না বারবার আসব আসব কেন জিজ্ঞাসা করছে!! ইনডায়রেক্টলি আমাদের যেতে বলতেছে।
আদিত বলে উঠলো
-'এসব পিরিতের ভাষা বুঝি না বইন।একটা গার্লফ্রেন্ডের অভাব বোধ করছি মাইরি।ধুরু! ...একখান গার্লফ্রেন্ড চাই নিজের জন্য...প্যারা খাবো...পিরিতের ভাষা বুঝবো.. ফকির হবো সামান্য...
আদিত গান গাইতে গাইতে বেরিয়ে গেল পাছে টেনে আরিফকেও নিয়ে গেল।নাতাশা যাওয়ার আগে কুহুর কানে কানে বললো
-'বেস্ট অফ লাক...
কুহু বোকা বনে গেল। এদের কথার মাথামণ্ডু বুঝতে পারছে না সে।এমনভাবে বলছে যেন কুহু আহনাফের গার্লফ্রেন্ড! আর ওদের বেরিয়ে যেতেই বা সে কখন বললো? কুহু আহনাফের দিকে তাকালো।আহনাফ আর একবারও তার দিকে তাকায়নি।রাগ করলো? অবশ্য সেটা স্বাভাবিক।কুহু ভেতরে এলো।আহনাফের ক্ষতবিক্ষত হাত দেখে বিস্ময় স্বরে বলে উঠলো
-'একি! আপনার হাতে কি হয়েছে?
আহনাফ বললো না কিছু।সে অভিমান করেছে।কেন কথা বলবে সে?পারলে আজ তার অভিমান ভাঙ্গুক! আহনাফকে কথা বলতে না দেখে কুহু বললো
-'আ'আপনি কি রাগ করেছেন?
আহনাফ সরু চোখে তাকালো কুহুর দিকে।কুহু খানিকটা ভড়কালো।আমতা আমতা করে বললো
-'ইয়ে..আসলে...তখন...
-'বের হও...
কুহু বুঝলো না।তাকে কি বেরিয়ে যেতে বললো? সে বললো
-'জ্বী?
আহনাফ তার তাকালো।এরপর গম্ভীর স্বরে বললো
-'গেট আউট...
কুহু রাগে নাক ফোলালো এবার।রাগ ভাঙ্গাতে এসেছে বলে কি মাথায় উঠে নাচবে নাকি? কত্ত বড় সাহস তাকে বেরিয়ে যেতে বলে! কুহু কল্পনায় আহনাফের টুটি ধরে সটাং সটাং করে দুটো থাপ্পর লাগালো। তার ভাবনার মাঝেই আহনাফ চেঁচিয়ে উঠলো
-'বের হতে বলছি আমি...কানে শুনো না তুমি?
কুহু চমকে উঠলো।নাকের ডগার উপর পাতলা ফ্রেমের চশমাটা চশমাটা ঠিকঠাক করলো।বুকে থুথু দিয়ে বললো
-'এজন্য'ই আপনারে খাটাশ ডাকি।
আহনাফ রাগি চোখে তাকালো।কুহু নাকের ডগা ফুলিয়ে বললো
-'চোখ রাঙাচ্ছেন কাকে, হ্যাঁ?এই আপনাকে ভয় পাই আমি, হ্যাঁ!! ভয় পাই আপনাকে??
কুহু কথাগুলো বলতে আহনাফের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর বুকে ধাক্কা মেরে বলতে লাগলো
-'ভয় পাই আপনাকে আমি?ভয় পাই!! এমন এক...
আহনাফের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো।দাঁড়িয়ে পড়লো সে।উচ্চতায় সে অনেকটা লম্বা।কুহু তার বুক সমান।আহনাফ দাঁড়াতেই কুহু "ওমাগো" বলে দুই পা পিছিয়ে গেল।আহনাফ সরু চোখে তাকিয়ে তার দিকে।কুহু আবার বুকে থুথু দিয়ে বললো
-'আপনাদের কি হরলিক্সের ব্যবসা নাকি?
আহনাফ কিছু বলছে না সে শুধু কুহুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।কুহু বললো
-'ছোটবেলায় এক ছেলে আমার হরলিক্সের ডাব্বা নিয়ে দৌঁড় দিছিল।আপনি ছিলেন বোধহয় ঐ ছেলেটা তাই না?ঐ এক ডাব্বা হরলিক্স না খেতে পারার কারণে আজ আমি লম্বা হতে পারিনি আর আপনি বেশি লম্বা হয়ে গেছেন।দেখেছেন একটা ভুল কি করে সারাজীবনের কান্না হয়!
আহনাফ না চাইতেও ফিক করে হেসে ফেললো।সে বললো
-'কোথা থেকে পাও এসব উদ্ভট কথা? more.....
আহনাফ নিজের জায়গায় বসলো আবার।কুহু দাঁত কেলিয়ে বললো
-'হাসলে কিন্তু রাগ থাকে না।দাদি বলতো আমাকে।
আহনাফের মুখ আবার গম্ভীর হয়ে গেল।ঠোঁটের হাসিটুকু শুষে নিল তার গম্ভীরতা।কুহু 'চ' সূচক শব্দ করলো তা দেখে। ওর পাশে একটু দূরত্ব রেখে বসলো।এরপর বললো
-'আসলে তখন আমি ওভাবে বলতে চাইনি।
-'ওভাবে বলতে চাওনি বাট ওটাই তো বলতে চেয়েছো।
-'আরে না না...
আহনাফ শব্দ করে হাসলো।ব্যঙ্গমিশ্রিত হাসি।কুহু বললো
-'আমি আপনাকে উদ্দেশ্য করেই কিছু বলতে চাইনি।আমি...বাদ দিন।...সরি...
আহনাফ তাকালো কুহুর দিকে।কুহু নিচের ঠোঁট কামড়ে রেখেছে।আহনাফ সেদিকে তাকিয়ে বললো
-'আমার সামনে কখনো ঠোঁট কামড়াবে না।
কুহু ঠিক করে ফেললো সাথে সাথে।আহনাফ দৃষ্টি সরিয়ে নিল।কিয়ৎক্ষণ নিরবতা পালন করলো দুজন।নিরবতা ভেঙে কুহুই বললো
-'উমম..আ'আপনার হাত তো অনেকটা কেটে গেছে।কি হয়েছিল?
আহনাফের ভনিতাহীন জবাব
-'দেয়ালে ঘুষি মেরেছি রাগ না কমা পর্যন্ত।
কুহু আহনাফের বাহুতে মৃদু থাপ্পর মেরে বললো
-'আরে ব্যাটা আপনি দেখি আমার মতো।
আহনাফ এক ভ্রু উঁচু করে একবার কুহুকে দেখছে আরেকবার কুহুর তার বাহুতে রাখা হাতকে দেখছে।কুহু দাঁত কেলানো বন্ধ করে সাথে সাথ হাত সরিয়ে নিল। আহনাফ আবার সামনের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রইলো।কুহু বড্ড বিরক্ত বলো।সে সরি বলার পরেও এত রাগা মানা যাচ্ছে না।এই শেষবার সরি বলবে সে মানলে মানবে তানাহলে...তানাহলেও মানবে।কুহু গলা খাকারি দিয়ে বললো
-'সরি..আপনাকে ভুল করে বলে ফেলেছিলাম সেসব।আশা করি আর রাগ নেই?
আহনাফ এবারেও কথা বললো না কোনো।কুহুর রাগ সপ্তম আসমানে উঠলো এবার।সে উঠে দাঁড়ালো।চেতে বলে উঠলো
-'এই বাঙ্গির পোলা! এতক্ষণ ধরে মানাতে চাইছি মানছিস না কেন?আমার বয়ফ্রেন্ড না জামাই তুই যে এতো রাগ দেখাচ্ছিস!!
তুইতুকারিতে বড্ড বিরক্ত হলো আহনাফ।সে কিছু বলতে নিবে তখন কুহু আফনাফের দিকে ঝুঁকে তাকে কাতুকুতু দিতে দিতে বলতে লাগলো
-' রাগ ভাঙবে না মানে!! রাগের মা কা বাপ! হাস..হাস শা/লা!
আহনাফ হো হো করে হাসতে লাগলো।কুহুর হাত থামানোর চেষ্টা করছে সে।এক পর্যায় ধরাম করে বেঞ্চ থেকে পড়ে গেল।আহনাফ কুহুর এক হাত ধরেছিল তার দরূন তাকে নিয়েই নিচে পড়লো সে।ঘটলো এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।কুহু পড়লো আহনাফের উপর।তার ওষ্ঠ গিয়ে ঠেকলো আহনাফের ওষ্ঠের সাথে।দুজনের চোখ রসগোল্লা।ঠিক সেই মুহূর্তে সেখানে উপস্থিত হলো রাহুল।ওদের এভাবে দেখে তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।
-'ওরা কোথায় গেল বলোতো?
রোদেলা এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললো
-'কি জানি!
আয়ান আর রোদেলা একটা সাইডে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে।স্টেজে এখনো নাচ-গান হচ্ছে।রোদেলার নজর হঠাৎ ক্যান্টিনের দিকে গিয়ে আটকালো।রাফি একটা বাইকে হেলান দিয়ে বিস্কুট খাচ্ছে।ছেলেটা আজ নীল রঙের একটা শার্ট পড়েছে তাও আবার ইন করে।অনেকটা পরিপাটি লাগছে আজ তাকে।
রোদেলা ভেবে পায় না এ এতো বিস্কুট পাগল কেন! সারাদিন বিস্কুট'ই খায় নাকি? বিস্কুটখোর মদনা।নামটা মনে মনে বলে নিজেই হেসে ফেললো রোদেলা।তবে তখনকার জন্য খারাপও লাগছে।এই রাহুল ভাইটা বেশি বেশি বলে।শা/লা একটা যাচ্ছে তাই।রোদেলা ভাবলো রাফিকে একটাবার সরি বলবে রাহুলের তরফ থেকে। রাফিকে সে সহ্য করতে পারে না সেটা অন্য ম্যাটার।রাহুল কেন ওসব বলবে? রোদেলা আয়ানের উদ্দেশ্যে বললো
-'ভাইয়া, আপনি থাকুন। আমি একটু আসছি।চলে আসবো এক্ষুণি...
আয়ানকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই রোদেলা হাওয়া হয়ে গেল।আয়ান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।তাকে একা করে সবকটা চলে গেল।মিস নাতাশার সাথে একটু কথা বলা যাক বরং।কিন্তু সেই বা কোথায়?আয়ান এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো।
এদিকে রোদেলাকে নিজের দিকে আসতে দেখে রাফির ভ্রু কুচকে এলো।রোদেলা তার সামনে এসে থামলো।রোদেলা কিছু বলতে নিলে রাফি হাত উঁচু করে থামিয়ে দিল। বিস্কুটের প্যাকেটটা দূরে সরিয়ে বললো
-'এবার বলুন..
রোদেলা বোকা বনে গেল।সে কি ওর বিস্কুট নিতে এসেছে নাকি? রোদেলা বললো
-'এটা কি হলো?
-'কি?
-'বিস্কুট সরিয়ে নিলেন যে আমাকে দেখে!
-'সেটা তো আপনি ভালো জানবেন।আল্লাহ জানে আমার বিস্কুটের সাথে আপনার কি শত্রুতা! যখন'ই আসেন তখন'ই আমার বিস্কুট আর আস্ত থাকে না।
রোদেলা ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো।ঐসব কথায় না গিয়ে সে বললো
-'তখনকার জন্য ঐ ভদ্রলোকের তরফ থেকে আমি সরি বলছি।কিছু মনে করবেন না।
রাফি কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।এরপর সে বলে উঠলো
-'কি ব্যাপার বলুন তো, মিস চোরনি! হঠাৎ এসব সরি টরি বলছেন যে! ঝেড়ে কাঁশুন তো!
রোদেলা তাকিয়ে রইলো তার দিকে।
-'আচ্ছা ঝামেলা তো! ভালোভাবে কথা বললে আপনার সহ্য হয় না নাকি?মদনা কোথাকারের!
রাফি বলে উঠলো
-'এই আপনি কিন্তু এবার আমাকে অপমান করছেন, মিস চোরনি।
রোদেলা হঠাৎ'ই ক্ষেপে গেল।সে এক আঙুল তুলে খেকিয়ে বলতে লাগলো
-'আপনি চোরনি, আপনার চৌদ্দগোষ্ঠী চোরনি! আবার যদি কোনোদিন বলেছেন তো...দেখবেন কি করি..
রোদেলা রাফির দিকে ঝুঁকে বলছিল কথাগুলো।রাফিও যথাসম্ভব মাথা পেছনে নিয়ে গেছে।তার হাত বাকা হয়ে কখন যে বিস্কুট পড়ে গেল সে বুঝতেও পারলো না তবে রোদেলা ঠিকই তা দেখলো।বোকা বনে গেল মেয়েটা।ঘনঘন আঁখিপল্লব ঝাপটালো সেদিকে তাকিয়ে।এরপর একবার রাফির দিকে তাকালো সে।কি করবে এখন সে? উল্টো দৌঁড় দিবে?যেই ভাবা সেই কাজ।আচমকা মেয়েটা উল্টোদিকে দৌঁড়ানো আরম্ভ করলো।রাফি ভড়কালো।কি হলো হঠাৎ? ওর পালিয়ে যাওয়া দেখতে দেখতেই সে বিস্কুটের প্যাকেটে হাত ঢোকালো।এদিক ওদিক হাত দিয়ে যখন কিছু পেল না তখন সে তাকালো প্যাকেটটার দিকে।
আয়হায়! বিস্কুট কই গেল?পেছনে ঘুরে তাকাতেই দেখে সব নিচে পকাত হয়ে পড়ে রয়েছে।রাফি রোদেলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো----"চোরনিইইইইই!! অ্যা..অ্যা আমার বিস্কুট..!"
রোদেলা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আয়ানের পাশে এসে থামলো।হাঁপাচ্ছে মেয়েটা।আয়ান কপাল কুচকালো।রোদেলা পেছন ঘুরে তাকালো।আয়হায়! রাফি আসছে দেখি! রোদেলা আবার ভোঁ দৌঁড় লাগালো।রাফিও ছুটলো পেছন পেছন।আয়ান বোকার মতন ওদের ছুটতে দেখছে শুধু।
-'বার্ড!
বড্ড আকুলভরা সরে বলে উঠলো রাহুল।সে জানে না তার কেন খারাপ লাগছে।তবে সে কিছুতেই আহনাফের সাথে কুহুকে সহ্য করতে পারছে না।কুহু আহনাফের উপর থেকে উঠে দাঁড়ালো তাৎক্ষণাৎ।আহনাফ এখনও হতভম্ব।কি হলো এটা?কুহু তেঁতে আহনাফকে কিছু বলতে যাবে তখন তার নজর গেল দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা রাহুলের দিকে।কিছু বলতে নিয়েও বললো না।আহনাফ তাকিয়ে কুহুর দিকে।কুহু রাহুলের দিকে তাকিয়েই আহনাফের দিকে হাত বাড়ালো।
-'হোল্ড মাই হ্যান্ড..জান।
আহনাফ ভড়কালো।জান! ঠিক শুনলো সে?সে বললো---"অ্যাঁ!"
কুহু তাকালো তার দিকে।এরপর একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো
-'হাতটা ধরো, সোনা।
আহনাফের মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে।যদি স্বপ্ন'ই হয় তাহলে তার ঘুম যেন আর না ভাঙে।সে এই স্বপ্নেই থাকতে চায়।আহনাফ হা করে থেকেই হাত বাড়ালো।কুহুর হাত ধরে উঠলো সে।কুহু আহনাফের শার্টের কলারটা ঠিক করে দিতে দিতে বললো
-'তুমিও না! কি করলে এটা তখন! এটা ভার্সিটি, সোনা।ভুলে গেলে? যদি কেউ দেখে ফেলতো! আমার বুঝি লজ্জা লাগে না!
কুহু আলতো করে আহনাফকে জড়িয়ে ধরলো।আহনাফের হার্টবিট বেড়ে গেল।শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেল তার।তার তিলোত্তমা তাকে জড়িয়ে ধরলো! আহনাফ বুঝি পাগল হয়ে যাবে।আহনাফ কাঁপা কাঁপা হাত রাখলো কুহুর পিঠে।
রাহুল হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে ফেললো।চলে গেল ওখান থেকে সে।সে ভেবে পাচ্ছে না যে তার এতো রাগ লাগছে কেন।কুহু যার সাথে যা খুশি করুক তাতে তার কি? সে তো কুহুর জন্য দেশে আসেনি।সে তো...তাহলে কেন এমন লাগছে?রাহুল ফুঁসতে ফুঁসতে হাঁটতে লাগলো।
-'একবার ভালোবাসি বলবে?প্লিজ...
কুহু চোখমুখ কুচকে তাকালো আহনাফের দিকে।বাঙ্গির পোলা দেখি ইমোশনাল হয়ে গেছে! কুহু 'চ' সূচক শব্দ করলো নিজের এহেন কাজে।রাহুলকে দেখলেই তার চান্দি গরম হয়ে যায়।কি করে না করে হুঁশ থাকে না।সে ধীরে ধীরে ছাড়তে চাইলো আহনাফকে।তবে আহনাফ ছাড়লো না।সে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।কুহু বলে উঠলো
-'ছাড়েন ভাই...আমি আপনার কোলবালিশ না।
আহনাফ চোখ বুজে ছিল।সেভাবেই মুচকি হেসে বললো
-'আজ বুঝলে তুমি আমাকে! আজ সময় হলো তোমার আমাকে জড়িয়ে ধরার।কতগুলোদিন আমি অপেক্ষায় ছিলাম জানো!
কুহু এবার ঝাটকা মেরে ছাড়িয়ে নিল।
-'আরে ধুরো....দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর আপনি বাঙ্গির ডায়লগ মারতেছেন!
আহনাফ বাচ্চাদের মতো তাকালো কুহুর দিকে।কুহু দেখলো তা।হতাশার শ্বাস ফেললো সে।এরপর বললো
-'আপনাকে কষে দুটো চড় মারতে ইচ্ছা করছে।
আহনাফ ওর দিকে ঝুঁকে নিজের গাল বাড়িয়ে দিল।হতভম্ব কুহু! এ কে বে! গাল বাড়িয়ে দিল!! আহনাফ হঠাৎ বলে উঠলো
-'আমার না তোমাকে কোলে তুলে নাচতে ইচ্ছা করছে।তুমি থাপ্পর মারার পর নাচবো।ঠিক আছে?
আহা! কি নিষ্পাপ আবদার! কুহু মুখ কুচকালো।আহনাফ বলে উঠলো
-'এই! মারলে যদি তোমার হাতে ব্যথা লাগে! আমি মেরে দিব নিজেকে?
কুহু হতভম্ব হয়ে বললো---"অ্যাঁ!!"
-'ওয়েট.. more...
আহনাফ নিজের গালে থাপ্পর মারতে নিলে কুহু আটকে দিল।কপাল চাপড়াতে ইচ্ছা করছে তার।এক কালে সে আল্লাহকে বলেছিল তার জীবনে এমন একজনকে পাঠাতে যে তাকে ছাড়া কিছুই বুঝবে না।আল্লাহ দেখি সিরিয়াসলি নিয়ে নিছে।কুহু বলে উঠলো
-'আপনি পাগল হয়ে গেছেন।
আহনাফ হঠাৎ খুশিমনে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো
-'হ্যাঁ, আমি পাগল হয়ে গেছি আজ।আজ আমার তিলোত্তমা আমাকে...
কুহু আহনাফের মুখ চেপে ধরলো।আহনাফ জোরে জোরে হাসতে লাগলো।কুহু হা করে দেখতে লাগলো তার আনন্দ উল্লাস।কুহু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।কোন কারণে ওসব করেছে সেটা শুধু সেই জানে।সে বললো
-'আপনি এখনো আমার অতীত জানেন না।সো ব্যাঙের মতো লাফানো বন্ধ করুন।
আহনাফ উৎফুল্ল মনেই বলে উঠলো
-'পাস্ট ইজ পাস্ট,বেইবি।ডোন্ট ইউ নো দ্যাট?
কুহু তেঁতে বলে উঠলো
-'একদম বেবি টেবি বলে ডাকবেন না।আর এই পাস্ট কোনো সাধারণ পাস্ট নয় লা এ বর্তমান আর ভবিষ্যত ধ্বংস করার মতো পাস্ট।বুঝছেন?
কুহু ঝাড়ি মেরে বললো।আহনাফের হাসি উবে গেল।কুহু বললো
-'আপনি যেমন পাগলামো শুরু করেছেন আপনাকে এটা জানাতেই হবে।
আহনাফ গম্ভীর হলো আগের মতো।---"বলো।"
-'এখানে নয়, অন্য কোথাও।কোথায় মিট করবো জানিয়ে দিব আমি।আর এটা সিউর থাকুন যে ঐ পাস্ট জানলে আপনি আর আমার দিকে ফিরেও তাকাবেন না।এতোটাই জঘন্য আমার অতীত।
কুহু তাচ্ছিল্যের করে হাসলো। আহনাফ কপাল কুচকালো।কি এমন অতীত রয়েছে তার? ও কি কাউকে ভালোবাসতো? তো? বাসতেই পারে।এতে জঘন্যর কি আছে?আচ্ছা এজন্যই কি তার তিলোত্তমা তার সাথে এতো দূরত্ব সৃষ্টি করে রেখেছে?নাকি অন্যকিছু?
অকুহু আবার বললো
-'আপনার মনে আমার জন্য এখন যেই ভালোবাসাটা আছে সেটা তখন ঘৃণায় পরিণত হবে।
আহনাফ আলতো হেসে বললো
-'আমার ভালোবাসা এতোটা ঠুংকো নয় যে, কোনো অতীত শুনে তা ঘৃণায় পরিণত হবে।আর চাঁদের গায়ে কলঙ্ক আছে জেনেও কিন্তু মানুষ তাকে ভালোবাসে...ঘৃণা করে না।
কুহু হাসলো..যেন বুকের মাঝে অনেকটা কষ্ট নিয়ে হাসলো সে।আহনাফ দেখে গেল তা।
মাঝে কেটে গিয়েছে তিনটা দিন।যে যেরকম ছিল সে সেরকমই আছে।তবে কুহু আর ভার্সিটি যানয়নি।আজও যায়নি।আজ সে আহনাফের সাথে দেখা করতে যাবে।ছেলেটা যা শুরু করেছে থাকে এবার সবটা বলাই লাগবে। হঠাৎ বাহির থেকে একটা বিনের সুর ভেসে এলো।চমকালো কুহু।জানালার কাছে গেল দৌঁড়ে।সাপুড়ে বিন বাজাচ্ছে আর সাপটা কোমর দোলাচ্ছে।সা*পটা দেখে চট করে কুহুর কিছু একটা মনে এলো যেন।সে দৌঁড়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিল।রাহুলের সাথে বিচ্ছেদ হলেও একে অপরকে তারা ব্লক করেনি।কেন করেনি কেউ জানে না।সে ম্যাসেঞ্জারে গিয়ে রাহুলের আইডিতে গিয়ে অনেক বছর পর ম্যাসেজ করলো
"Ei apni ki nachtechen?"
কিছুক্ষণের মাঝেই ম্যাসেজটা সিন্ হলো।কুহু ভেবেছিল সিন্ করবে না।রাহুল রিপ্লাই করলো
"Mane?"
"Na mane amader ekhane ekjon sapure bin bajacche tai jiggasa korlam. Sorry, nache disturb kore fellam."
রাহুল হতভম্ব নয়নে তাকিয়ে রইলো ম্যাসেজটার দিকে।ভাষা হারিয়ে ফেলেছে যেন।
চলবে more....

6

No comments:

720

Powered by Blogger.