আমার স্ত্রী আমার কাছের বন্ধুর সাথে প'র'কীয়ায় লি*প্ত। তাদের মেলামেশার প্রমান আমার কাছে আছে। আমার চোখের সামনেই তারা ঘুরে বেড়ায়,হাসাহাসি, গল্প'গু'জব করে। সবটাই করে বন্ধু হিসেবে।কিন্তু আমি জানি তাদের মাঝে গোপনে কিসব চলছে!!আমি আমার স্ত্রীকে ঘৃ*ণা করি।এতটাই ঘৃ*ণা করি যে তার জন্য অনেক কঠিন একটা শাস্তি আমি ভেবে রেখেছি।আমার সাথে বিশ্বাস ঘা'তকতার শাস্তি।
এই পর্যন্ত লিখে হাসান থামলো।পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। রিদিকা আসছে। সে দ্রুত তার জার্নালটা বন্ধ করে ফেললো ।রিদিকা কফি নিয়ে এসেছে। টেবিলের উপর কফি রেখে মিষ্টি করে হাসলো।বিনিময়ে হাসানও প্রেমময় হাসি দিলো।রিদিকা চলে যেতে চাইলে হাত আকড়ে ধরলো।
রিদিকা হাসি ধরে রেখে ইশারা করে জানতে চাইলো "কি হয়েছে?" হাসান কফির কাপটা টেবিল থেকে তুলে রিদিকার দিকে বাড়িয়ে বললো-
"একটা চু*মুক দাও।"
"কেন?হঠাৎ? "
হাসান দুষ্টুমি করে বলল-
"কফিটা দেখে মনে হচ্ছে এতে মিষ্টি হয় নি। তুমি একটা চুমুক দিয়ে মিষ্টি করে দাও।"
রিদিকা বিস্ময় নিয়ে হাসলো।বললো-
"তুমি তো আমার খাওয়া কিছু খেতে চাও না।আজ হঠাৎ?"
হাসান উত্তরে কিছু বললো না শুধু স্মিত হেসে কাপটা রিদিকার দিকে দিলো।রিদিকা কাপটা নিয়ে চু*মুক দিলো।হাসান শুকুনের নজরে তাকিয়ে রইলো। রিদিকা কফিতে চুমুক দিয়ে কাপ নামিয়ে রাখতেই হাসান তার দৃষ্টি বদলে ফেললো।রিদিকা চলে যেতে চাইলে আবারো সে তার হাত আকড়ে ধরলো।রিদিকা বললো-
"আবার কি?"
"একটু থাকো, কথা বলি।দুজনের তো কথাই হয় না।"
"হবে কি করে!তুমি তো সারাদিন লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকো।আমি কথা বলতে চাইলেও বল না।এত আনরোমান্টিক তুমি!!"
রিদিকার কথা হাসানের কানে যাচ্ছে না,সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রিদিকার দিকে তাকিয়ে আছে। ভালো করে দেখছে কোনো পরিবর্তন হয় কিনা। রিদিকা বললো-
"চুলায় সবজি বসিয়েছি, যাই আমি।"
হাসান অস্থির হয়ে রিদিকার হাত ধরে বলল-
"আর কিছুক্ষন।"
হাসান এত জোরে রিদিকার হাত চেপে ধরলো যে রিদিকা মৃদু চিৎকার করে উঠলো-
"আহ!হাসান,ব্যথা দিচ্ছ তুমি আমাকে।কি হয়েছে তোমার।"
হাসানের টনক নড়লো।সে রিদিকার হাত ছেড়ে দিলো।মুখে ফিরিয়ে আনলো মেকি হাসি।বললো-
"সরি।"
রিদিকা বিরক্ত হয়ে চলে গেলো।হাসান থম মেরে কফিটার দিকে তাকিয়ে রইলো।রিদিকা তো কফিটা খেয়েছে তাহলে নিশ্চয়ই কফিটায় কিছু মেশানো নেই।নাকি আছে?রিদিকা আড়ালে গিয়ে এন্টিডোট যদি নিয়ে নেয়!! হাসান দিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে।রিদিকা রান্নাঘর থেকে চিৎকার করে বলল-
"কফিটা খাচ্ছ তো? ঠান্ডা হলে আর গরম করে দিব না।"
হাসান কফির কাপটা হাতে নিলো।এর আগে তার পারসোনাল ডক্টরকে কল দেয়ার ব্যবস্থা করে রাখলো। কোনো গড়বড় দেখলেই কল করবে।আস্তে আস্তে কফিটায় চুমুক দিলো।অত্যন্ত ভাল স্বাদের কফি!!রিদিকার হাত রান্নায় ভালো।সে যা-ই বানায় তা-ই অমৃত লাগে।কফি খাওয়ার পর হাসান চোখ বড় বড় করে জিম মেরে বসে রইলো। তার শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হতে লাগলো টেনশনে। কিন্তু আসলে খারাপ কিছুই হলো না।কফিটা একদম ঠিকঠাক।
হাসান নিশ্চিন্ত হয়ে শ্বাস ছাড়লো।জার্নালটা আবার ওপেন করে লিখতে থাকলো-
"আমি আমার স্ত্রীকে যে-ই শাস্তিটা দিব তা অত্যন্ত অমানবিক। সে অথবা এই পৃথিবীর কেউ কখনোই ধারনা করতে পারবে না। সে যদি বুঝেও যায় তাও তাকে এই পৃথিবীর কোনো চিকিৎসা এবং ডাক্তার বাচাতে পারবে না।আমার চোখের সামনে তীব্র য*ন্ত্রণা এবং আতংকে সে মা*রা যাবে।এটাই হবে আমার রিভেঞ্জ। "
জার্নালটা বন্ধ করে হাসান কাপ হাতে কাচের দরজা ঠেলে বারান্দায় আসলো। বারান্দায় আসতেই পাহাড়ি বাতাস তাকে ছুয়ে দিলো।তার এই বাংলো বাড়িটা পাহাড়ের উপর। নিচে সমুদ্র। সামনে তাকালে যতদূর চোখ যায় শুধু পানি। বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচের বালুময় সৈকতের দিকে তাকালো হাসান।রিদিকা প্রায়ই এই সৈকতে হাটতে যায়।তবে একা নয়!তার পরকীয়া প্রেমিককে নিয়ে যায়।হাসানের সামনে দিয়েই যায়।
রিদিকা এই বাড়িতে আসতে চায় নি।তার এমন নীরব-নিস্তব্ধ পরিবেশ পছন্দ না।সে শহুরে কোলাহলে বন্ধু বান্ধব নিয়ে মেতে থাকতে চায়।এমনকি তার আত্নীয় স্বজনও সবাই শহরে থাকে তাই সে এত দূরে এই গাছপালা ঘেরা পাহাড়টায় আসতে চায় নি।তার নাকি পাহাড়ী জংগলে ফোবিয়া আছে।।ভোগাস কথাবার্তা!! হাসান এসব পাত্তা দেয় নি।সে নিজের সুবিধার জন্য এখানে এসে উঠেছে।তার লেখালেখির জন্য এরকম পরিবেশ ই তো প্রয়োজন। রিদিকা এখানে এসে অনেকবার অসুস্থও হয়েছে৷ তাতে অবশ্য হাসানের কিছু যায় আসে না। লেখকদের এত কিছু পাত্তা দিলে চলে না।
দুপুরের খাওয়ার সময় হাসান একটা ছোট প্লেটে টেবিলের সমস্ত খাবার নিলো।তারপর সেই প্লেট ফ্লোরে রাখলো তার বিড়াল ফিজির জন্য। ফিজি দৌড়ে এসে প্লেটের খাবার গুলো খেতে লাগলো।রিদিকা বিরক্ত কন্ঠে বললো-
"ওকে এসব দিচ্ছ কেন?ওর জন্য তো ক্যাটফুড আছে।এসব খেয়ে ওর পেটে সমস্যা হয়।"
হাসান কিছু বললো না।সে ফিজির খাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।রিদিকা বললো-
"তোমার কি ধারনা আমি খাবারে বিষ দিয়েছি?গত দুই মাস যাবত কিসব শুরু করেছো তুমি? লোকসমাগম থেকে দূরে থাকতে থাকতে সাইকো হয়ে গেছো ।সাথে আমাকেও সাইকো বানিয়ে দিচ্ছ।"
ফিজি খাচ্ছে।ওর কিছু হয় নি।বিড়ালরা অনেক কিছু বুঝতে পারে। খাবারে কিছু থাকলে নিশ্চয়ই ফিজি তা খেতে চাইত না। হাসান ফিজির থেকে চোখ সরিয়ে রিদিকার দিকে তাকালো।রাগী মুখে চামচ নাড়িয়ে খাচ্ছে। হাসান নিজেও মুখে খাবার তুললো।
হ্যা,দুই মাস আগেই সে রিদিকার পরকীয়ার ব্যাপারে জানতে পেরেছে। তার কাছের বন্ধু শিহাবের সাথে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তারা দুজন খুব সময় কাটায় একসাথে।গল্প করে,হাসে।হাসানের সামনেই করে।এমনভাবে করে যেন মনে হয় তারা খুব ভাল বন্ধু।কিন্তু ভিতরে অন্য কিছু!!
একদিন হাসান বাইরে থেকে এসে দেখলো শিহাব রিদিকার পা কোলে নিয়ে মালিশ করে দিচ্ছে।রিদিকার চুল এলোমেলো,গায়ের কাপড়ও কিছুটা এলোমেলো। হাসানকে দেখে বললো সিড়ি থেকে গড়িয়ে পড়ে গিয়ে রিদিকার পা মচকে গেছে। হাসান জানে এটা মিথ্যে কথা।ওরা অন্য কিছু করছিলো হাসান হঠাৎ চলে আসায় তাড়াহুড়ো করে এই কথা বলেছে।ওরা ভেবেছে হাসান বোকা।আসলে তা না। হাসান এখন ঘরে ক্যামেরা লাগিয়েছে। কিন্তু ওরা ঘরের ভেতর তেমন কিছুই করে না। একসাথে বসে কফি খায়,গল্প গুজব করে। চোখের সামনে কিছু না করলেও হাসান তাদের গোপন সম্পর্কের কথা বুঝে।হাসান বোকা না!!
শেষ বিকেলে শিহাব আসলো। হাসানের সাথে লনে পাতা চেয়ারে বসে কফি খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছে। রিদিকাও এক কাপ কফি নিয়ে এসে বসলো ওদের সাথে। সমুদ্রের গর্জন ভেসে আসছে নিচ থেকে।আশপাশের গাছপালা থেকে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। সুন্দর পরিবেশ!!
শিহাব চারদিকে তাকিয়ে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বলল-
" ওয়াও!!বিউটিফুল ওয়েদার!চল হাসান বীচ থেকে হেঁটে আসি।"
হাসান সরু চোখে কিছুক্ষন শিহাবের দিকে তাকিয়ে রইলো। একটু সময় নিয়ে বললো-
"আমি যাব না,তুই আর রিদিকা ঘুরে আয়।"
শিহাব বললো-
"সে তো আমরা দুজন প্রায়ই যাই।তুই চল একদিন। সারাদিন ঘরে বসে থেকে তো অসুস্থ হয়ে যাবি। বাইরের দুনিয়াটা দেখ,লেখালেখির জন্য বাইরের দুনিয়াটা দেখাও ত আবশ্যক।"
" লেখালেখির জন্য বাইরে যাওয়ার আমার দরকার নেই।মনের চোখ দিয়েই আমি দুনিয়া দেখি। তুই বরং রিদিকাকে নিয়ে যা।আমার সাথে থাকতে সে বোর হচ্ছে।"
হাসান কথাটা বলে রহস্যময় হাসলো।রিদিকা বললো-
"এ কেমন কথা হাসান!বোর কেন হব তোমার সাথে। আমি চাই তুমি আমাকে নিয়ে মাঝে মাঝে একটু বের হও। আমরা দুজন একটু কোয়ালিটি টাইম কাটাই,কিছু মেমোরিজ ক্রিয়েট করি।স্ত্রী হিসেবে এসব কি আমি চাইতে পারি না?"
হাসান স্মিত হেসে রিদিকার কথাগুলো শুনলো।মনে মনে বললো- এই তো তুমি সব প্রকাশ করলে রিদিকা। আমি তোমাকে যা দিতে পারছি না তা শিহাবের কাছ থেকে পাচ্ছ তুমি। তার সাথেই কোয়ালিটি টাইম কাটাচ্ছ,মেমোরিজ ক্রিয়েট করছ। এইতো বলে ফেললে সব। অর্থাৎ স্বামীর অপূর্নতা অন্য পুরুষ দিয়ে পূরণ করছো। বাহ!!
রিদিকা হাসানের হাত ধরলো।বললো-
"চল না যাই। নিচে তাকিয়ে দেখো বীচটা কতটা সুন্দর লাগছে। এত সুন্দর জায়গায় তুমি থাকতে এসেছো।তার সৌন্দর্য উপভোগ করবে না?"
হাসান আগের মতোই স্মিত হেসে তাকিয়ে আছে।এরকম কথা প্রতিবারই রিদিকা বলে।আসলে তার মনে অন্য কিছু।সে শিহাবের সাথে ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কাটাতে চায়। কিন্তু হাসান যেন সন্দেহ না করে তাই এসব বলে। হাসানকে যদি তার এতই প্রয়োজন হত তাহলে হাসান না করা স্বত্তেও তাকে একা রেখে ঘুরতে যেত না রিদিকা।কিন্তু সে ঠিকই যায় এবং খুশিমনে ফিরে এসে। এতেই প্রমাণ হয় রিদিকার এসব কিছু কেবল অভিনয়!!
হাজার অনুরোধ করেও হাসানকে তার সিদ্ধান্ত থেকে টলানো গেলো না।তার একটাই কথা তাকে লেখালেখি করতে হবে। এখন বাইরে কোথাও গেলে তার লেখালেখিতে প্রভাব পড়বে।
শিহাব বললো-
"তুই সাইকো হয়ে যাচ্ছিস এভাবে সারাক্ষন লেখালেখি নিয়ে থাকতে থাকতে। রিদিকাকে দেখ,বেচারি দমবন্ধ হয়ে ম*রে যাবে।তুই ওকে ওর পরিবার পরিজন প্রত্যেকের কাছ থেকে এত দূরে নিয়ে এসেছিস। ওর প্রতি তোর একটা দায়িত্ব আছে।"
হাসান বললো-
"আমি ওকে জোর করে আনি নি।ও আমার স্ত্রী। আমার সাথে সব জায়গায় ও থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক।আমি এখানে এসেছি আমার লেখালেখির সুবিধার জন্য।তুই জানিস লেখালেখির বিষয়ে আমি কতটা সিরিয়াস। আমি সময় দিতে পারছি না বলে তোকেই তো সে-ই দায়িত্ব দিলাম।"
শিহাব হতাশ হয়ে মাথা নেড়ে বললো-
"লেখকরা আসলেই পা*গল গোছের হয় তা তোকে দেখে ই হাতেনাতে প্রমান পেলাম।তুই-ই বোধ হয় এক মাত্র স্বামী যে নিজের স্ত্রীকে খুশি রাখার দায়িত্ব দিচ্ছিস বন্ধুর উপর।"
হাসান হালকা শব্দ করে হাসলো শিহাবের কথায়। শিহাব উঠে দাঁড়ালো।হাসানও উঠলো।হাসানের কাঁধে চাপড় মে*রে কৌতুক করে শিহাব বললো-
"শা*লা তোর বউ এর পিছনে এত খাটাখাটুনি করছি,পরের মাস থেকে পেমেন্ট চাই আমার, বুঝলি।"
হাসান হেসে মাথা নাড়ালো।শিহাব রিদিকাকে ইশারায় আসতে বলে ড্রাইভওয়েতে দাঁড়ানো গাড়িটার দিকে হাটা দিলো।রিদিকা যেতে যেতে ব্যথাতুর চোখে হাসানের দিকে তাকালো।তার চোখে শূন্যতা এবং অপূর্ণতা।হাসান হাত উঁচিয়ে বিদায় দিলো ওদেরকে।
সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে শিহাব রিদিকাকে নিয়ে বাইরে ঘুরিয়ে আনে। রিদিকা এই বাংলোতে থাকতে পারে না।হাসান সারাদিন লেখালেখি নিয়ে থাকে। দিনের বেলা তো মন খুলে কথা হয় ই না। অনেক সময় রাতেও পর্যন্ত হাসান রিদিকাকে সময় দিতে পারেনা। রিদিকা বেডরুমে হাসানের অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে যায়। আর এদিকে হাসান তার নতুন উপন্যাসটা লিখতে লিখতে ক্লান্ত হয়ে স্টাডি রুমের ডিভানে শুয়ে ঘুমায়।এভাবে রিদিকা অসুখে পড়ে।। more.....
একা একা থেকে মানসিক আর শারীরিক অবনতি ঘটে তার।তখন পাহাড়ের নিচে শহরে বাস করা হাসানের কাছের বন্ধু শিহাব রিদিকার জন্য ডাক্তার এনে চিকিৎসা করায়।ডাক্তারের পরামর্শে রিদিকাকে নিয়ে বাইরে যায় হাওয়া বদলের জন্য।হাসানের এসবে আরো বিরক্ত লাগে।তার একটাই কথা রিদিকা কেন মানিয়ে নিতে পারছে না।
ওদের গাড়িটা আস্তে আস্তে পাহাড়ি রাস্তা ধরে নিচে নেমে গাছাপালার আড়ালে হারিয়ে গেলো।হাসানের মুখের হাসিও মিলিয়ে গেলো সেই সাথে। সে ঘরে ফিরে আসলো। বাইনোকুলার টা নিয়ে তার স্টাডি রুমের জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।পর্দাটা অল্প ফাঁক করে বাইনোকুলার দিয়ে বীচের দিকে তাকালো। এত দূর থেকে তাকে কেউ দেখবে এটা সম্ভব না।এরপরেও সে জানালায় পর্দা টেনে রেখেছে। তার ধারনা রিদিকা আর শিহাব তাকে চোখে চোখে রেখে প্রেম করে।
আধা ঘন্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার পর রিদিকা আর শিহাবকে দেখা গেলো। দুজন বালুর উপর হাটছে।কথাবার্তা বলছে। সাগরের পানি ওদের পা ছুইয়ে দিচ্ছে। হাটতে হাটতে রিদিকা আঙুল তুলে একটা ঝোপের দিকে দেখালো। শিহাব তাকিয়ে হ্যা সূচক মাথা নাড়লো।তারপর দুজনেই হারিয়ে গেলো ঝোপের আড়ালে।
হাসান বাইনোকুলার টা নামিয়ে তার টেবিলের সামনে চেয়ারে এসে বসে পড়লো।জার্নাল খুলে লিখলো-
"ঝোপের আড়ালে গিয়ে ওরা কি করবে আমি জানি।এরকম অসংখ্য বার আমি তাদের ঝোপের আড়ালে এমনকি ঘন জংগলেও হারিয়ে যেতে দেখেছি। রিদিকাকে আমি সব দিয়েছি। দামি বাংলো,টাকাপয়সা, লাক্সারিয়াস লাইফ।কিন্তু সে এতে খুশি না। সে আমার খামতিগুলো খুঁজে বের করে দোষারোপ করে।সে আমার লেখালেখি পছন্দ করে না।অথচ আমার লেখা পড়েই সে আমার প্রেমে পড়েছে। এখন আমার লেখকস্বভাব তার কাছে অসহ্য ঠেকছে।
এই পর্যন্ত তার সমস্ত কিছু আমি সহ্য করেছি কিন্তু সে আমার সাথে প্রতারণা করেছে।আমার কাছের বন্ধুর কাছে আমাকে ছোট করেছে।শিহাবের সাথে পরকীয়া করে প্রমাণ করেছে যে আমি আমার বউকে খুশি করতে ব্যর্থ। আমাকে এই অপমান করার শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে তাকে।"
হাসান জার্নালটা ড্রয়ারে রেখে ড্রয়িংরুমে আসলো।সোফায় বসে অপেক্ষা করতে থাকলো রিদিকার ফিরে আসার। ফিজি তার গা ঘেঁষে বসলো। হাসান আলতো হাতে ফিজির গায়ে হাত বুলাতে লাগলো।ফিজিকে এনেছিলো যাতে রিদিকার একা না লাগে সেজন্য। রিদিকা ফিজিকে সাদরে গ্রহণও করেছে।বেশ আদর করে ফিজিকে। তবে রিদিকার ধারনা হাসান রিদিকার চেয়ে ফিজিকে বেশি ভালোবাসে। এইজন্য ইদানিং ফিজির উপর রাগ দেখায় রিদিকা।নীচ হিংসুটে মেয়েদের স্বভাব!! একজন লেখকের স্ত্রীর স্বভাব এমন হওয়া উচিত না।
ড্রয়িংরুমের কাচের দেয়ালের ওপাশে আস্তে আস্তে সন্ধ্যা নামলো।হাসান লাইট জ্বালিয়ে এক কাপ কফি নিয়ে বসলো।কফি খেতে খেতে ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো রিদিকার ফিরে আসার। রিদিকা কিছুক্ষন পর ফিরলো।তার গা আধভেজা। পুরোই ভেজা ছিলো কিন্তু অর্ধেক শুকিয়ে গেছে। চুলে,কাপড়ে বালু চিকচিক করছে।চোখমুখে যেন আনন্দের বন্যা বইছে।
হাসানকে দেখে রিদিকা উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো-
"আজ আমরা খুব মজা করেছি। তুমি গেলে খুব ভালো লাগতো।দাঁড়াও গোসল করে আসি, সব বলব তোমায়।"
হাসান কাঠের পুতুলের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।রিদিকার হাসিখুশি চেহারা তাকে পীড়া দিচ্ছে।তার মস্তিষ্ক তাকে খুচিয়ে খুচিয়ে বলছে-
"দেখ, তোর বউ তোকে বাদ দিয়ে কত আনন্দে আছে।তার জীবনে আনন্দ এনে দিতে তোর কোনো প্রয়োজন নেই।"
মোবাইলের মেসেজের শব্দে হাসানের হুশ ফিরলো। রিদিকার ফোনে মেসেজ এসেছে। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো শিহাবের মেসেজ-
"It was too much fun Ridika..I hope u are satisfied today.See you next week."
হাসানের চোয়াল শক্ত হলো।দুজন মিলে কত নিপুণভাবে ধোঁকা দিচ্ছে তাকে।সে ফিজির দিকে তাকালো। নিরীহ বিড়ালটা সোফায় আরামে বসে আছে।হাসানের মতোই বিড়ালটা নিরীহ,তবে প্রয়োজনে নখের আচড় দিতেও পিছ পা হয় না।।হাসান সাইকোর মতো ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। সে একজন লেখক। বউএর পরকীয়ার কথা প্রকাশ্যে এনে নিজেকে ছোট করতে পারে না।তাই নীরবে নিভৃতে তার অপমানের প্রতিশোধ নিবে সে। এবং সেটা খুব তাড়াতাড়িই।
No comments: