Header Ads Widget

test

আমার_অভিমানে_শুধু_তুই


 

আমার_অভিমানে_শুধু_তুই

লামিয়া_ইসলাম_শাম্মী
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
পার্ট ৭
— "নানুমা, নানাজান কোথায়? তোমরা এই বড় মামি, মেজো মামি, ছোট মামি—সবাই কোথায়? দেখো আমি এসে গেছি!"
নাফিসের কণ্ঠে এমন প্রাণ, এমন উচ্ছ্বাস যে পুরো বাড়িটা যেন কেঁপে উঠলো তার ডাকে।
সবার যেন প্রাণ জেগে উঠলো।
রওশন আরা ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন,
— "আল্লাহ্‌ গো, আমার নাফিসটা ফিরে এসেছে!"
নাফিস হাসিমুখে নানিকে জড়িয়ে ধরে বলল,
— "ওহো, আমার ডার্লিং তো আগের চেয়ে আরও সুন্দর হয়ে গেছে! নানাভাই, এবার তুমি বাদ। আমার ডার্লিং এখন শুধু আমার কাছে থাকবে!"
চারপাশে হাসি, আনন্দের হুল্লোড়। নাফিস সবার সাথে হাসছে, ঠাট্টা করছে, কিন্তু তার চোখ বারবার কোথায় যেন খুঁজছে।
পাশ থেকে রেহানা চৌধুরী বললেন,
— "যাও নাফিস, আগে ফ্রেশ হয়ে নাও। অনেক জার্নি করে এসেছো।"
সাথে সাথেই সায়মা ও আরিয়ানাকে বললেন,
— "যাও তো, নাফিসকে ওর রুমটা দেখিয়ে দাও।"
নাফিস কিছু না বলে সায়মা আর আরিয়ানার সাথে হাঁটা ধরলো।
হাঁটতে হাঁটতে বললো,
— "এই বাসার বাকি সদস্যরা কোথায়? মামারা , জিয়ান, সায়েম, আরিয়ান?"
আরিয়ানা উত্তর দিলো,
— "বাবা আর চাচারা অফিসে। ভাইয়ারা—আরিয়ান ভার্সিটিতে, জিয়ান ভাই আর সায়েম ভাইও অফিসে। আর জায়ান ভাই তো দেশে এসেই আরজার ভার্সিটিতে প্রফেসর হিসেবে জয়েন করেছে।"
নাফিস থমকে গেলো। জায়ানের নামটা শুনে মুখে হালকা কঠিন ভাব এল। কিন্তু তখনো হাসি ধরে রেখে বললো,
— "আর কাউকে তো দেখছি না..."
সায়মা ও আরিয়ানা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে হাসতে লাগলো।
— "তোরা হাসছিস কেন?"
সায়মা হেসে বললো,
— "তুমি যাকে খুঁজছো, সে রুমে আছে। সকালে ওর হাত পুড়ে গেছে ভাইয়া। তুমি এসেছো সেটা মনে হয় জানেই না।" more...
এই কথা শুনে নাফিসের বুক কেঁপে উঠলো।
— "কি!! খুব বেশি পুড়েছে? চল তোরা, আমাকে নিয়ে চল তার কাছে!"
নাফিসের উত্তেজনা দেখে সায়মা আর আরিয়ানা আরও হেসে উঠলো।
— "আরে ভাইয়া, কিছুই হয়নি, একটু পুড়েছে। শান্ত হও আগে।"
তবুও নাফিসের অস্থিরতা থামে না। তিনজন মিলে রুমের সামনে পৌঁছালো।
সায়মা বললো,
— "এইটা তোমার রুম, আর ওইযে সামনে—ওটাই আরজার রুম।"
নাফিস মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,
— "ধন্যবাদ, আমার প্রিয় বোনেরা।"
ওরা চলে গেলে নাফিস দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ নামিয়ে আরজার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
দুবার টোকা দিল, কোনো সাড়া নেই। দরজা হালকা ঠেলতেই খোলা।
ভিতরে ঢুকে দেখে —
ঘরের ভেতর হালকা অন্ধকার। বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে আছে আরজা। ভেজা চুল কোমর ছাড়িয়ে মেঝে ছুঁয়েছে, পানির ফোঁটা ফোঁটা পড়ছে।
নাফিস মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে — কতো বছর পর দেখছে এই মুখ, এই মেয়েটা তার ছোটবেলার সবটুকু ছায়া।
ধীরে কাছে এগিয়ে গিয়ে মাথার পাশ থেকে তোয়ালে নিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো। আলতো হাতে চুল মুছে দিচ্ছে।
হঠাৎ মনে পড়ে গেলো ছোট্ট একটা স্মৃতি—
আরজার বয়স তখন ৮। একদিন স্কুলের এক ছেলে তার চুল ধরে টান দিয়েছিল।
সেদিন কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরেছিল আরজা, রওশন আরার বুকে মুখ গুঁজে।
সেই কান্না সহ্য করতে পারেনি নাফিস। পরদিন সেই ছেলেটাকে স্কুলে গিয়ে পি*টিয়ে এসেছিল।
আরজার হাত ধরে বলেছিল,
— "এই চুল কখনো কাউকে দেখাবি না! সবসময় বেঁধে রাখবি, বুঝেছিস?"
আরজাও সেটা রেখেছিল। আজও পর্যন্ত বাইরের কারও সামনে চুল খোলা রাখে না। সবসময় লম্বা ঘোমটা দিয়ে থাকে।
এইসব ভাবতে ভাবতে নাফিস হাসলো, তারপর আলতো করে আরজার পোড়া হাতটা তুলে নিলো হাতে।
পোড়া অংশ দেখে চোখে জল এসে গেলো। আলতো করে হাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে যাবে—
ঠিক তখনই কারও রাগী গলা যেন বজ্রপাতের মতো কানে এলো—
— "ওর থেকে দূরে সর!!"
নাফিস চমকে পেছনে তাকালো—
দেখে জায়ান দাঁড়িয়ে আছে। চোখে আগুন! মুখে ধৈর্য্য নেই, চোখ বলছে — "তোর সাহস হয় কী করে!"
নাফিস মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ালো।
একটা চ্যালেঞ্জিং হাসি ছুঁড়ে দিলো, তারপর বলে উঠলো—
— "নিজের হবু বউয়ের কাছ থেকে আর কত দূরে থাকবো ?"
এই কথা শুনেস জায়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো, চোখ রীতিমতো লাল হয়ে উঠেছে।
জায়ানের চোখমুখ শক্ত হয়ে আছে। থরথর করে কাঁপছে তার চোয়াল।
নাফিস সেটা দেখে একধরনের গা-জ্বালা হাসি দিয়ে বললো,
— "আরেএ ভাই, তুই এতো হাইপার হস কেন? আমার বউ, আমি দেখবো, আমি ছুবো—তাতে তোর কি?"
জায়ান রাগ চেপে রাখতে পারলো না। গলার স্বর কাঁপছে রাগে—
— "ও তোর বউ না। তোর মুখে ওর নাম শুনলে, আমি তোর জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো।"
নাফিস এক মুহূর্ত চুপ করে রইল। তারপর মজার হাসি দিয়ে বললো,
— "তবে হোক একটা চ্যালেঞ্জ। দেখি কে জেতে!"
জায়ান ঠাণ্ডা গলায় হেসে উত্তর দিলো,
— "তাহলে তাই হোক। খেলা শুরু হোক।"
নাফিস এবার আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো।
— "জায়ান, তুই হারবি। কারণ আরজা তোকে ভালোবাসে না... তোকে সে ভয় পায়!"
জায়ান কিছু বললো না, শুধু তাকিয়ে রইলো ওর চোখে। ঠাণ্ডা, গভীর, অথচ অদ্ভুত রকম জ্বলন্ত সেই দৃষ্টি।
— "সেটা সময়ই বলবে," জায়ান ধীরে বললো।
নাফিস এবার দুহাত পকেটে রেখে শিশ বাজাতে বাজাতে ঘর ছাড়লো। মনে হলো যেন তার যাত্রার শুরু, কিন্তু যুদ্ধটা জায়গা বদল করে রয়ে গেলো আরজার ঘরে।
জায়ান এবার ধীরে ধীরে ফিরে তাকালো বিছানার দিকে।
আরজা এখনও ঘুমিয়ে আছে। চুল ভেজা, চোখ দুটো বন্ধ — শান্ত মুখ যেন পৃথিবীর সব নিস্তব্ধতা ছুঁয়ে আছে।
এই চেহারার দিকে তাকালেই জায়ানের রাগ কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
কিন্তু ভিতরে ভিতরে হাহাকার বাড়ে —
সে তো কিছুই জানে না... আরজার জন্য কীভাবে ভাঙছে জায়ান, সেটা কেউ জানে না।
একটু আগে, জায়ান যখন ভার্সিটির থেকে ফিরেছিল, তখন তার সরাসরি নিজের রুমে যাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু দোরগোড়ায় পা রেখেই হঠাৎ করে মনে পড়ে যায় — আরজার হাত পুড়েছে।
বুকটা ধক করে ওঠে।
তখনি সোজা চলে আসে আরজার ঘরের দিকে। এসে দেখে—
নাফিস বসে আছে, আরজার পোড়া হাত ধরে।
আর তখনই তার ভেতরের আগুনটা যেন গর্জে উঠে।
জায়ান ধীরে ধীরে বিছানার পাশে এসে বসলো।
চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকা আরজার হাতটা নিজের হাতে তুলে নিলো।
ড্রয়ারের ভেতর থেকে মলম বের করলো, তারপর আলতো করে সেই পোড়া জায়গায় লাগিয়ে দিলো।
মলম দেওয়ার পর হয়তো জ্বালা করছিলো —
আরজা হালকা নড়ে উঠলো।
জায়ান তখন নিঃশব্দে ফু দিলো, যেন ব্যথাটা কমে যায়।
মুহূর্তখানেক তাকিয়ে রইলো আরজার মুখের দিকে।
তারপর ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো...
আর চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
আর ভাবতে লাগলো, "তোকে আমি কারোর সাথে দেখতে পারবো না। তুই শুধু আমার আরজা আর কারোর না"
চলবে more......
( ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টি দেখবেন। প্রথমবার গল্প লিখতেছি। দয়া করে ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। কেউ গল্প পড়লে প্লিজ লাইক কমেন্ট করবেন। এতে আমি গল্প লেখার আগ্রহ পাবো)

3

No comments:

720

Powered by Blogger.