Header Ads Widget

test

মন_দিওয়ানা



 

মন_দিওয়ানা কানিজ_ফাতেমা

পর্ব_৩
আকাশ এক পা দু পা করে নীরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।আর নীর এক পা দু পা করে পিছাচ্ছে। হঠাৎ আকাশ খপ করে নীরের হাত ধরে ফেললো।এক ঝটকায় টান দিয়ে ওর কাছে টেনে আনলো।
নীর কিছু বুঝে ওঠার আগেই আকাশ ওর চুলের মুঠি শক্ত করে চেপে ধরলো,
“ খুব শখ না তোর বাহিরের লোকদের শরীর দেখানোর
নীর ওর চুলে ব্যথা পেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো,
“ আহ্ আমার খুব ব্যথা লাগছে আকাশ ভাই, ছাড়ো প্লিজ।
আকাশ ওর কোন কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের ঠোঁট জোড়া ওর ঠোঁটে ডুবিয়ে দিল। হঠাৎ জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিল নীরের ঠোঁটে।নীর ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো।নীরের ঠোঁট জোড়া আকাশের দখলে তাই ও ব্যথায় ছটফট করতে লাগলো। প্রায় ১৫ মিনিট পর আকাশ ওকে ছেড়ে দিল।নীর সঙ্গে সঙ্গে তার ঠোঁট চেপে ধরল।ওর ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে।
আকাশ ওর নিচের ঠোঁট টা বৃদ্ধা আঙ্গুলি দিয়ে এপাশ থেকে ওপাশে মুছে নিয়ে নীরের গাল দুটো চেপে ধরল,
“ এরপর থেকে কোনদিন যদি আমার কথার অবাধ্য হয়েছিস, আমার অপছন্দের বাহিরে কোন কাজ করিস, তাহলে তার ফল এর থেকেও অনেক বেশি ভয়ানক হবে।
আকাশ ঠোঁটের কোণে ডেভিল মার্কা একটা হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো‌।নীরের চোখে থেকে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করলো। ওর অন্তরীক্ষে এক অদ্ভুত কষ্ট আর ক্ষোভের মিশ্রণ ফুটে উঠলো। ও কোনোভাবেই নিজেকে সামলাতে পারছে না, অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে ওর হেঁচকি উঠে গেলো। হঠাৎ কেউ ওর কাঁধে হাত রাখলো। নীর সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখের পানিটা মুছে নিলো। পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখলো ওর বড়ো বোন লিজা দাঁড়িয়ে আছে।নীর পুনরায় সামনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।লিজা এসে নীরের সামনে এসে বসলো।ওর দিকে গভীর নজরে কিয়ৎক্ষন তাকিয়ে রইল।
লিজা এক ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“ কিরে আজকে আবার কি নিয়ে ঝগড়া হলো তোদের মধ্যে
লিজার কথায় নীরের কপালে বেশ খানিকটা চওড়া ভাঁজ পরলো। ও ঠোঁট জোড়া একপাশে বাকিয়ে ভেংচি কাটলো,
“ ঐ বাঁদর টার সাথে ঝগড়া করতে আমার বয়েই গেছে
“ ঠিক আছে তাহলে আমি ঐ বাঁদরটা কেই গিয়ে জিজ্ঞেস করছি তোদের মধ্যে কি হয়েছে।
কথাটা নীরের শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে প্রবেশ করা মাত্রই ও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। লিজা ওখান উঠে যাচ্ছিল তৎক্ষণাৎ নীর ওর হাত টেনে ধরলো।
হড়বড় গতিতে বলে উঠলো,
“ এই না না আমার আর বাঁদরের, বাঁদর নাচ দেখার ইচ্ছে নেই আপু
লিজা খানিকটা ঠোঁট টিপে হাসলো।নীরের এক গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো,
“ এইভাবে বলিস না নীর, তুই আকাশ কে ভুল ভাবছিস।ও যা করে তোর ভালোর জন্যই করে। তুই একদিন না একদিন ঠিক বুঝতে পারবি।
লিজার কথা শুনে নীর কিছুটা রাগ নিয়ে বলল,
“ আমার এত বোঝার দরকার নেই আপু। তোমরা তো তোমাদের আদরের আকাশের কোন দোষই দেখতে পাও না। যাও আকাশকে, আকাশে উঠিয়ে বসে থাকো। আমার কথা কাউকে ভাবতে হবে না। কাউকে দরকার নেই আমার।
লিজা ঈষৎ হাসলো।বোন কে জরিয়ে ধরলো এক পাশ থেকে,
“ পাগলী একটা, হয়েছে আর অভিমান করতে হবে না। এবার খাবি চল মা খাবার নিয়ে বসে আছে।
লিজার কথায় নীরের মন ভিজলো না।মুখ গোমড়া করে কাঠ কাঠ গলায় বলল,
“ তোদের আদরের আকাশকে বেশি করে খাওয়া। খাবো না আমি, তুই যা।
নীরের কথায় এইবার লিজার ভ্রু কুঁচকে এলো।ওর কথা গুলো ঠিক মনঃপুত হলো না লিজার।ওর কন্ঠে শাসনের ভঙ্গিমা বিরাজমান,
“ মেয়েদের এতো রাগ ভালো না নীর।
নীর লিজার সাথে আর কথা বাড়ালো না। ওকে একপ্রকার জোর করেই রুম থেকে বের করে দিলো। দরজা টা ঠাস করে লাগিয়ে দিলো। এতো জোরে দরজা লাগানো শব্দ পেয়ে রাহেলা বেগম দৌড়ে এলেন,
“ কিরে কি হয়েছে, এতো জোরে দরজা লাগালো কে
“ কে তোমাদের আদরের মেয়ে
“ ওর আবার কি হলো
“ কি আর হবে প্রতিদিন যা হয়
রাহেলা বেগম লিজার কথাটা ঠিক বুঝতে পারলেন না,
“ মানে
লিজা ঠোঁট উল্টিয়ে নিরেট স্বরে বলল,
“ আবারো দুইজন ঝগড়া করেছে
রাহেলা বেগমের ভ্রু দ্বয় কুঞ্চিত হয়ে এলো,
“ নাহ এই দুটোকে নিয়ে আর পারি না
রাহেলা বেগম কিছুটা বিরক্তি নিয়ে স্থান পরিত্যাগ করলেন। লিজা ও আর দাঁড়িয়ে না থেকে চলে গেল মায়ের পিছে পিছে। কারণ এই মুহূর্তে সিডর, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেলেও নীরের রুমের দরজা খোলানো যাবে না।
_________________________________
একটা অন্ধকার ঘরে, চোখ আর হাত মুখ বাধা অবস্থায় পড়ে আছে দুইজন যুবক।অন্ধকারে ডুবে থাকা ঘরটা যেন কোনো অজানা আতঙ্কের গহ্বর। দেয়ালের কোণে শীতল স্যাঁতসেঁতে গন্ধ, বাতাসে ভিজে কাঠ আর মরচেধরা লোহার তীব্র গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে।তাদের নিঃশ্বাস ভারী, বুক ধকধক করছে অস্বাভাবিক তীব্রতায়। একসময় তারা কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বাঁধন আলগা করার চেষ্টা করে, কিন্তু মোটা দড়ি আর শক্ত গিঁটের সামনে সেই চেষ্টাগুলো অসহায় হয়ে পড়ে। ঘরের ভেতর শুধু দড়ি ঘষাঘষির শব্দ আর তাদের চাপা গোঙানি প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরতে থাকে।
হঠাৎ ঘরের দরজা খোলার শব্দে ছেলে দুই টা ভয়ে কেঁপে উঠল। আঁধারের মাঝে বুটের খটখট আওয়াজ ভেসে এলো। আকাশ ভিতরে ঢুকে ওদের সামনে এসে বসলো, চোখেমুখে রাগের ঘনঘটা। ওদের দু’জনকে দেখে আকাশ রাগে উত্তেজিত হয়ে উঠলো। দু’জনকে কয়েকটা চড় আর থাপ্পর মারলো। ওরা আতংকে আর ব্যাথায় ছটফট করছে‌।কিন্তু আকাশের রাগ যেন কমছেই না। তার দুই হাত ছুটে গেল, দু’জনের গলার দিকে
গলা দুটো সজোরে টিপে ধরল। তীব্র বেগে গর্জে উঠল সে,
“ তোদের এত বড় সাহস? তোরা আমার নীরের দিকে খারাপ নজর রেখেছিস। তোরা জানিস না ও আমার কি
মুহূর্তেই ওদের মনে পড়ল, সেই নবীন বরণ অনুষ্ঠানের কথা। নীরের দিকে খারাপ নজরে তাকিয়ে ছিল ওরা।হাসি ঠাট্টা, টিটকারি করেছিলো। সবকিছুই আকাশ দূর থেকে লক্ষ্য করেছে। তখনি সে লোক পাঠিয়ে ওদেরকে ধরে এনে এই অন্ধকার ঘরে বন্দি করে রেখেছে।
মুখ বন্ধ অবস্থায় উমউম শব্দ করে তারা কিছু বলতে চেষ্টা করছে। আকাশ নিজের রাগ টাকে সংযত করতে পারছে না। সে পাশে পড়ে থাকা লাঠিটা তুলে ওদের কে বেধড়ক মারতে শুরু করলো।ছেলে দুটো একে একে নিস্তেজ হয়ে পড়তেই আকাশ লাঠি থামাল।
আকাশ ওর সাথে থাকা তন্ময় কে কড়া গলায় নির্দেশ দিল,
“ ওদের হুঁশ ফিরতে আবার মারা শুরু করবি। দুইদিন পর্যন্ত কোনো খাবার বা পানি দিবি না। এটাই ওদের শাস্তি, আমার নীরের দিকে খারাপ নজর তাকানোর।
এরপর আকাশ গটগট পায়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
তন্ময় ওর যাবার পানে তাকিয়ে নিস্তব্ধ আওরালো,
“ কি শুরু করেছে কি ছেলেটা। এই নিয়ে ডজনখানেক ছেলেকে এভাবে বন্দী করে শাস্তি দিলো।এইভাবে আর কতজনকে ও বন্দি করে রাখবে আর শাস্তি দেবে। জানিনা ওর এই পাগলামি শেষ কোথায়।
_____________________________
প্রায় এক ঘন্টা পর, দরজায় জোরে জোরে ঠক ঠক আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসলো নীর। শুয়ে থাকতে থাকতে ওর চোখ জোড়া এসেছিলো। দরজার বাহিরে থেকে এখনো ঠকঠক আওয়াজ করেই চলেছে।নীর বিরক্তি নিয়ে উঠে হাই তুলতে তুলতে দরজা খুলে দিলো।
দরজা খুলতেই একটা পুরুষালী কণ্ঠস্বর বলে উঠলো,
“ যেই বড় হা করেছিস, গোটা একটা হাতি ঢুকে যাবে তোর মুখের মধ্যে
কণ্ঠস্বর টা শুনে নীরের ঘুম এক দৌড়ে পালিয়ে গেল। চোখ জোড়া গোল গোল করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে নীর……
চলবে... more....

4

No comments:

720

Powered by Blogger.