রোম্যাঞ্চ_বাই_মিস্টেক_সিজন_২
গেটের সামনে ঝুমুরের বাকি বোনেদের মাঝে আর বর পক্ষের মাঝে সালামি নিয়ে বেশ কথা কাটাকাটি হচ্ছে।এর মধ্যে তাদের মাঝে এসে জোগ দেয় আহিল। বর আহিলের হাতে সালামি দিয়ে বলে।।
বর: এই নাও আমার একমাত্র শালাবাবুকে আমি খুশি হয়ে দিলাম।
বাকিরা: দুলাভাই এটা কি হলো? আমরা এত গুলো শালি আপনার চোখে পড়ল না যেই শালাকে দেখলেন ওমনি গলে গেলেন।একবার আসুন ভেতরে আপনার খেদমত কে করে আমরাও দেখব।
বর: আরে বাবারে এত দেখছি ঢোকার আগেই হুমকি।তবে আমি পাগল নই যে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারব।এতগুলো শালি আমার এদের খেপালে কি আর সুখ পাব আমি।এই নাও তোমাদের জন্যও আছে।
সাথে সাথে সবাই খুশি হয়ে যায়। নতুন বরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই।
আহিল: দেখলি ত আমার জন্য কিন্তু বিশেষ ট্রিটমেন্ট। আমি হচ্ছি একেবারে স্পেশাল ইউ নো?
তৃধা: হুম।হয়েছে আর ভাব মারাতে হবেনা।ওই দেখ তোর হবু বউ আসছে।
আহিল সিড়ির দিকে তাকায় জোতি একটা গাঢ় খয়েরী রঙের শাড়ি পরে চুল খোপা করে সেই খোপায় লাল গোলাপ লাগিয়ে নামছে।মনে হবে যেন জোতি নয় কোন পরী নামছে।আহিল এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয় সেইদিকে কিন্তু আহিলের দৃষ্টি সিড়ির দিকে হলেও আহিলের নজর জোতির দিকে কতটা তা বুঝা মুশকিল। কারন জোতির পেছনে দাড়িয়ে ছিল ঝুমুর।কে বলতে পারে হয়তো আহিল জোতিকে নয় ঝুমুরকে দেখছিল
নিচে নেমেই জোতি বলে,,,
জোতি: এমা আমি ত গেট ধরা একদম মিস করে গেলাম।ধুরু ভালো লাগেনা এই আমার ভাগ দে।
হাফসা( জোতির মেজ বোন) : এই আপু এই, তুই দেরি করে নামবি আর ভাগ চাইবি এতক্ষন যে আমরা কষ্ট করলাম তাহলে ফল কেন তুই খাবি হ্যাঁ?
জোতি: এই শোন তোদের মতো মানুষের সাথে ঝগড়া করা আমার স্বভাব নয়,বুঝলি?
বলেই নিজের চুল ঠিক করতে করতে জোতি আহিলের দিকে তাকায়।আহিল মুখ বাকিয়ে অন্য দিকে যেতে নিলেই,জোতি সোজা এসে আহিলের হাত ধরে
আহিল: এই ছাড়!! more.......
জোতি: আহিল!! দেখনা আমাকে কেমন লাগছে? আমি নিজে সেজেছি শুধু তোমার জন্য।
আহিল: তোকে কতবার বলব আমাকে ভাই ডাকবি।এসব ন্যাকামি আমার সহ্য হয়না।
জোতি: ধুর দুইদিন পরে আমাদের বিয়ে হবে আর এখন ভাই বলে ডেকে নাটক করব হুম?
আহিল: জোতি ছাড়, বাড়ি ভর্তি মেহমান কেউ দেখলে গসিপ করবে।
জোতি আহিলে বাহু আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,,
জোতি: সমস্যা নেই সবাই জানে।
আহিল: সবাই জানে বলেই কি ঘেষাঘেষি করতে হবে?
জোতি: সবাই দেখছে বলে তোমার সমস্যা? তাহলে চলনা আড়ালে যাই।
আহিল: আড়ালে যাবি বেশ আয়।
বলেই আহিল জোতির হাত ধরে টেনে গাড়ির গ্যারেজের দিকে যায়।
উপর থেকে এই দৃশ্য স্পষ্ট দেখে ঝুমুর।নিজের শাড়ির আচল খামচে ধরে,,, মুখ বাকিয়ে মনে মনে ইচ্ছে মতো বকতে থাকে জোতিকে।
আহিল জোতিকে গ্যারেজে নিয়ে এসে,,
আহিল: কি শুরু করেছিছ তুই।?
জোতি: কেন আহিল ভাই ভালো লাগেনা আমাকে?
আহিল: জোতি নাটক কম কর,, নাইলে এক্ষুনি তোর বয়ফেন্ডকে কল দিয়ে..
জোতি: থাক তোকে আর কষ্ট করতে হবেনা তাকে আমি নিজেই ডেকেছি তাই ত তোকে কায়দা করে এখানে আনলাম।
তখনি বাইরে থেকে কারো ডাক,,,
শান্ত: জোতি এই জোতি।
জোতি: ওই তো আমার হিরো এসে গেছে সর।
জোতি একটা মুখ ভাংচি দিয়ে তার বয়ফেন্ড এর সাথে দেখা করতে যায়। একটু পর ফিরে এসে,,,
জোতি: চল চল।
আহিল: কি করলি তোরা?
জোতি: এটা আবার কেমন প্রশ্ন? তোকে পাহারা দিতে এনেছি তুই পাহারা দে।
আহিল: তুই কিন্তু ভাই আগুন নিয়ে খেলছিছ একবার যদি মেজ চাচি জানতে পারে।আর বাকিরা জানলে ত হয়েই গেল।
জোতি: এটা আমার জীবন, আমি কাকে বিয়ে করব না করব আমার ব্যাপার।আমি শান্তকে স্কুল লাইফ থেকে ডেট করি তুই ত জানিস ও কত ভালো ছেলে।
আহিল: কিন্তু বাসায় বলার সাহস আছে? বাসায় ত তোর আমার বিয়ের কথা হয়েই আছে।
আহিল: তাহলে কি করবি?
জোতি: আজ যে আগুন টা লাগালাম বেশি কিছু না তার মধ্যে আরেকটু ঘি ঢালব।আর তুই আমাকে বলছিছ তুই ত নিজেও একজনকে....
আহিল সাথে সাথে জোতির মুখ চেপে ধরে,,
আহিল: চুপ কর ভাই চুপ কর।তোকে বলাটাই আমার ভুল হয়েছে।যেদিন থেকে জেনেছিছ আমাকে ওর সামনে লেকপুল করেই যাচ্ছিছ।
জোতি: ওকে ওকে আর করন না সরি।এবার চল আমাদের এতক্ষণ কেউ না দেখলে কি না কি ভাববে।
আহিল: এত ক্ষন পর মাথায় এলো।সব সময় আমার কাধে চেপে আমার সাথে যাচ্ছিছ বলে শান্তর সাথে দেখা করতে যাস।যেদিন ধরা পরবিনা। সবে ত এইচএসসি দিলি আগে ভার্সিটিতে উঠ, আমি নিজে শান্তর কথা বাসায় বলে দিব।
জোতি: এই আহিল ভাই প্লিজ না।মা জানলে আমাকে মেরেই ফেলবে।তুমি ত আমার একটা মাত্র ভাই বলো।
আহিল: একজন বাদে সবারি ভাই আমি।আর তুই আমার বোন তোকে এসব থেকে দূরে না রেখে আমি নিজেই পাহারা দিচ্ছি উফ।।
জোতি: কারণ আপনি আমার ভালো ভাইয়া এখন চলুন প্লিজ।
আহিল জোতি যেই বের হতে যাবে অমনি দরজার সামনে এজন্য আওয়াজ পায় আহিল।সাথে সাথে দরজা খুলে কিন্তু বাহিরে কাউকে দেখতে পায় না।
জোতি: কি ছিল?
আহিল: আমি ঠিক বলতে পারছি না কিন্তু আমার সিক্স সেন্স বলছে সে এসেছিল!
জোতি: এ বাবা ভুল কিছু ভাবলো না তো আবার?
আহিল: সব তোর দোষ। এত গায়ে পড়তে কে বলেছিল আমার হ্যাঁ?
জোতি: আচ্ছা বাবা সরি আর করব না এখন চলো।
শুভ পরিনয় অনেক ভালোভাবে সম্পূর্ণ হয়।সবাই জামাই বউকে নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত।জামাইকে খেতে দিয়ে শালিদের বেশ আহ্লাদ। হাসি আনন্দ ফূর্তি হব চলছে।খাওয়া দাওয়া শেষ করে এবার বাসর ঘরে যাবার পালা।তার আগেই সবাই হুজুক তোলে গান বাজনার।বাড়ির ছোট ছোট বাচ্চারা নাচে মজা করে।
তৃধা: একি ঝুমুর কই সবাই আছে। ভাবলাম ওকে দিয়ে গান বলাব যা সুন্দর গান গায় সে, কিন্তু কই।?
সাদিয়া( ঝুমুরের ছোট বোন): এই ত আপু আমি ধরে নিয়ে এসেছি,দেখো একা একা বসে ছিল আসতেই চাইছিল না।
তৃধা: এই কেন রে বস।
ঝুমুর একবার আড় চোখে আহিলের দিকে তাকায়,,দেখে জোতি আহিলের পাশে বসে হাসতে হাসতে আহিলের গায়েই ঢলে পড়ছে।এই কাহিনি দেখে ঝুমুরের গা টা আরও জ্বলে যাচ্ছিল।কিন্তু সবার কথায় বসে পড়ল।
আহিল: গাইজ আমি আমার গিটার টা আনছি অনেকদিন বাজানো হয়না।আমি একটা গান গাইব দেখি কে আমার সাথে গলা মেলাতে পারে।
বলেই আহিল গিয়ে গিটার নিয়ে আসে, ভালো ভাবে পজিশন নিয়ে আহিল গান শুরু করে,,,
Main Baarish Ho Jaaunga
Tum Baadal Ho Jaaogi
Dekh Lena… Dekh Lena…
Itna Tumko Chahunga
Tum Pagal Ho Jaaogi
Dekh Lena… Dekh Lena…
kahta he shun, ye dhup kinara.... Tera hua me sara ka sara
Dekh lenaa....tere hotho pe hamesha meh hastahi rahuga dekh lena....
এই পাট টুকু গেয়ে আহিল থেমে যায়।
আহিল: এরপর ফিমেল ভার্শন কে গাইবে শুনি?
বর পক্ষের একটা মেয়ে বলে,,
আপনি যে সুন্দর গান গান,আপনার সাথে গাইবে এমন কে আছে? আমি ত আপনার গান শুনেই ফিদা।
মেয়েটার কথা শুনে ঝুমুর মুখ বাকায়,দিয়ে বলে,,,
ঝুমুর: আমি গাইব।ভাইয়া প্লিজ আমার জন্য গিটার ধরুন একটু।
hmmm,,,dil to he har sineme, he peyar lekin mujme sabse jeyada dekh lenaa....
Umm,,apni lakiro me meh likdungi khudhi tumko he mera oyada dekh lena....
আহিল: kehta he shun yee dhup kinara.. Tera hua me sara ka sara
Dekh lenaa tere hothope hamesha me hasta hi rahuga dekh lenaaa,,,
গান শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে,,
বর: বাহ আমার শালা শালিরা দেখছি বেজায় ভালো গান গায়।তবে আহিল একটা বাংলা গান হয়ে যাক,,আমার আবার বাংলা গান ভীষণ পছন্দ।
আহিল: ওকে,,দুলাভাইয়ের ইচ্ছে।
আহিল আবার গান শুরু করে,,,
তুমি না ডাকলে আসব না,,, কাছে না এসে ভালোবাসব না।দূরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায় নাকি ছেড়ে যাওয়ার বাহানা বাড়ায়,,,দূরের আকাশ নীল থেকে লাল গল্পটা পুরোনো,,,,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি, তুমি না বাসলেও আমি বাসি। ডুবে ডুবে ভালোবাসি,, তুমি না বাসলেও আমি বাসি।
তৃধা: কিরে গানটা কি হবু বউকে ডেডিকেট করলি নাকি?
আহিল: হুম,,যে আমার ভালোবাসার মানুষ।
ঝুমুর তখন উঠে যাচ্ছিল,,
বর: একি শালি যাও কই?
ঝুমুর: আমার ঘুম পাচ্ছে রুমে যাচ্ছি।
বর: আরেহ এখনি ঘুমাবে কি? এই রাত কি বার বার আসবে নাকি।এসো আরেকটা গান শোনাও।
সবাই জোরাজোরি করাতে ঝুমুর আর যেতে পারেনা।
ঝুমুর: কেমন গান শুনবেন?
বর: উম!! রবীন্দ্র সংগীত হলে মন্দ হয়না।
ঝুমুর গান শুরু করে,,,
আমি তোমারও সঙ্গে বেধেছি আমারও প্রাণ,,, সুরেরো বাধনে,,,তুমি জানো,,না।আমি তোমারে পেয়েছি অজানা সাধনে।
আমি তোমারো সঙ্গে বেধেছি আমারও প্রাণ সুরেরো বাধনে........
বর: আহা!! কি সুর।
হঠাৎ ঘরে আহিলের বাবা সাইফুল সিকদার প্রবেশ করে।
সাইফুল: একি তোমরা এখনো জেগে আরে অনেক রাত হয়েছে ঘুমাও যাও যাও।কাল আমার মেয়েটা শ্বশুর বাড়ি যাবে কত ধকল হবে এখন একটু রেস্ট দরকার। এসব চলতেই থাকবে যাও সবাই ঘুমাও।
যে যার ঘরে যেতে নিলেই ওহেদা বলে উঠে,,
ওহেদা: আজ বাড়ির মানুষদের রুম সব সব বুক।নিচে ডাইনিং এ তোদের সবার জন্য বিছানা করা হয়েছে ফ্রেশ হয়ে এসে সুয়ে পর।
আহিল: আর আমি??
ওহেদা: তোর রুমে তোর দুই মামাতো ভাই আছে ওদের সাথে সুবি আজ।
আহিল: মা তুমি জানো আমি রুম শেয়ার করা পছন্দ করিনা।
ওহেদা: আরে আস্তে,, আজকের দিননা বাবা,,এত মানুষ কই থাকবে একটু বোঝ জেদ করিস না যা।
আহিল: ধুরু ভালো লাগেনা।
সবাই যে যার মতো ফ্রেশ হয়ে এসে সুয়ে পরে।আলো নিভানো সবাই সুয়েই ঘুমিয়ে কাদা।আজ বেশ ধকল গেছে সবাই ক্লান্ত।কিন্তু ঘুম আসছেনা ঝুমুরের চোখে তার বুকের ভেতর এক অজানা কষ্ট চেপে ধরেছে তাকে কিন্তু সেই কষ্ট কেন হচ্ছে সেই হদিস পাচ্ছেনা ঝুমুর।হঠাৎ ঝুমুর খেয়াল করে তার পা কেউ ঘুতাচ্ছে।সে ইদুর ভেবে চিৎকার দিতে যাবে এমন সময় কেউ তার মুখ চেপে ধরে।
আহিল: আরে এই চিৎকার দিবিনা আমি আহিল।
ঝুমুর: আহিল ভাই আপনি?? ঘুমান কি এখনো?
আহিল: ধুরু দুইটা হাতিকে রুমে দিয়েছে এমন নাক ডাকছে আমার ওখানে ঘুম হবেনা সর আমি সুবো।
ঝুমুর: সোবেন কিন্তু এখানে জায়গা কোথায়?
আহিল: হয়ে যাবে তুই সর।
ঝুমুর: আরে...
আহিল: আস্তে কথা বল সবাই ঘুমাচ্ছে।
ঝুমুর: উফ সরুন ওইদিকে আমার জায়গা হচ্ছেনা।
আহিল নিজের এক হাত বারিয়ে দিয়ে বলে এখানে মাথা দে।
ঝুমুর কিছুটা ইতোছথোতো হয়ে বলে,,
ঝুমুর: না লাগবেনা। more............
আহিল: আরে দে ত। নাইলে আমার সুতে সমস্যা হবে।
ঝুমুর আহিলের এক হাতে মাথা দিয়ে সুয়ে পরে আর আহিল বালিশে।
আহিল: কিরে সমস্যা হচ্ছে??
ঝুমুর মাথা নাড়িয়ে না বলে।
একটু পর ওইপাশ থেকে সাদিয়া ঘুমের ঘোরে ঝুমুরকে ধাক্কা দিলে ঝুমুর আহিলের বুকের সাথে ধাক্কা খায়।
ঝুমুর: উফ এভাবে আমি ঘুমাতে পারব না।আপনি ওদিকে যান।
আহিল: চুপচাপ এইখানে ঘুমা নাইলে বের করে দিব সোজা বাইরে।
ঝুমুর: না না ঘুমাচ্ছি।
ভোর ৫ টা,,,
ঝুমুরের নিয়মিত ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠা অভ্যাস তাই সবার আগে তার ঘুম ভেঙে যায়।ঘুম ভাঙতেই ঝুমুর অনুভব করে সে কিছু একটার উপর সুয়ে আছে।হাত দিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কি।মূহুর্তেই সে মাথা তুলে দেখে।সে আহিলের উপর সুয়ে আছে।ঝুমুর কি করবে বুঝতে পারেনা।এইভাবে যদি কেউ দেখে কি ভাববে।উঠতে যাবে এমন সময় ঝুমুরের চোখ পরে আহিলের চেহারায়। ঝুমুর মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে আহিলের দিকে।চোখ যেন ঝুমুরের কথা শুনছে না।ঝুমুর আহিলের কপালের চুলগুলো সরিয়ে দেওয়ার জন্য হাত বাড়াবে এমন সময় সে বুঝতে পারে উপর থেকে কেউ নামছে, ঝুমুর দ্রুত আহিলের উপর থেকে সরে ফ্রেশ হতে যায়।ওয়াশরুমে এসে বেসিনের সামনে এসে দাঁড়ায় ঝুমুর।
ঝুমুর: ইস!! আমি আহিল ভাইয়ের উপরে এইভাবে কিভাবে সুয়ে ছিলাম আল্লাহ!! যদি কেউ দেখে ফেলত তখন কি হতো।আর জোতি আপুই বা কি ভাবত?
ভাবতে ভাবতে ঝুমুরের কান গাল গরম হয়ে যায়।কান দিয়ে রীতিমতো ঝুমুরের গরম ধোয়া বের হচ্ছিল।জলদি জলদি ফ্রেশ হয়ে বের হতে যাবে তখন দেখে ঝুমুর আহিল সামনে।
আহিল: কি রে কখন উঠলি?
ঝুমুর কোন উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে যাবে এমন সময় আহিল বলে,,
আহিল: ঘুম হয়েছে??
এই কথা শুনে ঝুমুরের হাত কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়।
ঝুমুর: হুম।
বলেই ঝুমুর এক দৌড়ে পালায়।আহিল একটা বাকা হাসি দিয়ে নিজেও ফ্রেশ হতে যায়।
ঝুমুর এক দৌড়ে বাগানে আসে।
ঝুমুর: উফ আল্লাহ এমন কেন হচ্ছে আমার সাথে? এমন কেন লাগছে আমার? আগে ত এমন কখনো হয়নি? আহ আমি মনে হয় মরেই যাব বুকটা এত ঢিপঢিপ করছে আহ আহ।।
ঝুমুর জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিচ্ছিল আর মাথায় বেনুনী খুলে চিরনি করছিল।এমন সময় একজন কেউ পেছন থেকে বলে,,
মীর( বরের চাচাতো ভাই) : বাহ! মাশাল্লাহ আপনার চুলগুলোতো বেশ সুন্দর।
ঝুমুর পেছনে তাকানোর আগে দেখে নেয় তার গায়ে ওড়না ভালো ভাবে আছে কিনা। তারপর পেছনে তাকিতে বলে,,,,
ঝুমুর: আপনি এত সকালে উঠে পড়েছেন? ঘুম ভালো হয়নি?
মীর: আরে না না ঘুম ভালোই হয়েছে।আসলে এই জায়গাটা অনেক সুন্দর ভাবলাম একটু ঘুরে আসি।কিন্তু কিছুই চিনিনা তাই ভাবছি কই যাব।
ঝুমুর: একটু সামনে গিয়েই বা দিকে একটা ঝিল আছে অনেক সুন্দর। গেলেই মন ভালো হয়ে যায় ওখানে যেতে পারেন।
মীর : ইয়ে মানে নতুন জায়গা আমি ত কিছু চিনব না,, যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনি একটু যাবেন আমার সাথে?
ঝুমুর: আমি? ( কি করব যাব? যদি না যাই তাহলে যদি ভাবে যে বউয়ের বাড়ির লোকজন ভালো না,, অতিথিদের ঠিক মতো দেখাশোনা করেনা যদি আপুর উপর এর প্রভাব পরে? না না বাবা আপুর নতুন সংসার নতুন মানুষজন কেমন হবে না হবে।না যাই বরং সামনেই ত)
মীর: এই যে মিস কি এত ভাবছেন? বুঝেছি মনে হয় যেতে চাচ্ছেন না বেশ,, তাহলে আর কি ভেতরেই যাই।
ঝুমুর: না না,, যাব না কেন এদিকে আসুন চলুন আমার সাথে।
ঝুমুর আর মীর হাঁটতে হাঁটতে ঝিলের ধারে যায় সকাল সকাল ভোর বেলায় ঝিলে তার অপূর্ব সুন্দর লাগে। সবে মাত্র সূর্য উঠেছে সূর্যের প্রথম মিষ্টি কিরণ সোজা এসে লাগে ঝুমুরের গায়ে। ঝুমু সেটা চোখ বন্ধ করে অনুভব করে।
মীর: বাহ সত্যি খুব সুন্দর জায়গা, আপনি না নিয়ে এলে মনে হয় মিস করে যেতাম।।
ঝুমুর: হ্যাঁ জায়গাটা আমার ভীষণ পছন্দ। আমি মাঝে মাঝে এখানে আসি।
মীর: আরে ওটা কাঠগোলাপের গাছ না?
ঝুমুর: হ্যাঁ।
মীর গিয়ে কাঠ গোলাপের একটা থোকা পারে।
মীর: এই কাঠ গোলাপটা আপনার চুলে দিলে ভীষণ মানাবে।
ঝুমুর: ধন্যবাদ।
মীর: দিন আমি লাগিয়ে দেই।
ঝুমুর: না না তার দরকার নেই। আমি লাগিয়ে নিচ্ছি।
ঝুমুর কাঠ গোলাপের ধোঁকা থেকে একটা ফুল ছিড়ে নিজের কানে খুঁজে নেয়।
মীর: বাহ অনেক সুন্দর লাগছে তো আপনাকে দেখতে।
ঝুমুর ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,,,
ঝুমুর: আপনি কি আমার সাথে মজা নিচ্ছেন নাকি?
মীর : এমা ছি ছি মজা নিতে যাব কেন আসলেই সুন্দর লাগছে তাই তো বললাম আর আপনার এত সুন্দর চুল মানিয়েছে ভালো।
ঝুমুর : কি জানি আমি তো জানতাম আমি অসুন্দর।
মীর : সুন্দরতা কি শুধু গায়ের রং দিয়ে প্রকাশ পায়?
ঝুমুর: তা বলতে পারব না কিন্তু আমাদের সমাজ গায়ের রং টাকে সৌন্দর্য বলে মনে করে যার গায়ের রং বেশি ফর্সা সে বেশি সুন্দর।
মীর: সমাজের এই চিন্তাধারা বদলানো দরকার আর আজকের পর থেকে মনে হয় এই চিন্তা ভাবনা একদমই ভুল আমার কাছে।
ঝুমুর: কেন আজকে কি এমন হলো?
মীর: না কিছু বা চলুন বেলা বাড়ছে আমরা আবার বের হবো।
ঝুমুর: হ্যাঁ চলুন।
ঝুমুর মীরকে নিয়ে বাসায় আসে।নীচে তখন সবাই খাওয়া দাওয়া করছিল।
রেহেনা: কিরে ঝুমুর এত সকাল সকাল কই গেছিলি?
মীর: আসলে আমি একটু জায়গাটা ঘুরতে দেখতে চাচ্ছিলাম তাই ওনাকে বললাম আমাকে একটু ঘোরাতে আমি ত চিনিনা কিছু।
রেহেনা: ওহ আচ্ছা বাবা এসো। নাস্তা করো।
মীর: আচ্ছা আন্টি।
টেবিলে বসে তখন নাস্তা করছিল আহিল ও।আহিলের নজর সোজা এসে পরল ঝুমুরের কানের পাশে গুজে থাকা ফুলটার উপর।সেই থাকে আহিল দেখল মীরের হাতে সেই ফুলের থোকা।আহিল তার হাতে থাকা চামচে দিয়ে টেবিলে একটা ঘুতা মেরে উঠে গেল।
ওহেদা: কিরে না খেতে কোথায় যাস?
আহিল: আমার পেট ভরে গেছে।
ওহেদা: ঝুমুর দেখতো ওকে খাবারটা ঘরে গিয়ে দিয়ে আয়না।ওর মনে হয় এসব থেকে ভালো লাগছেনা আমি নতুন কিছু বানিয়ে দেই।
ঝুমুর খাবারের ট্রে নিয়ে আহিলের রুমে আসে।
ঝুমুর: আহিল ভাইয়া!!
আহিল: কি চাই?
ঝুমুর: খাবার।
আহিল: আমি কি বলেছি আমার ঘরে খাবার নিয়ে আসতে নিয়ে যা আমি খাব না।
ঝুমুর তাও ঘরে ঢুকে ট্রেটা টেবিলের পাশে দেখে বলে খেয়ে নাও, বড়মা অনেক কষ্ট করে বানিয়েছে।
আহিল: শোন!
ঝুমুর: কি?
আহিল: কোথায় গেছিলি?
ঝুমুর: ওই তো আমাদের বাড়ির পাশের ঝিলটায়।
আহিল: ওর সাথে যে গেলি ওকে চিনিস যদি কোন বিপদ হতো?
ঝুমুর: ওমা চিনবো না কেন উনি তো আপুর দেওর হন। আর কি বিপদ হবে পাশেই তো গেছিলাম।
আহিল: খুব ভালো পরিচয় হয়ে গেছে মনে হয় তাই না?
ঝুমুর: ওই একটু আকটু তুমি এত প্রশ্ন করছ কেন বলতো?
আহিল: মাথায় আবার ফুলও গুজে দিচ্ছে দেখছি!
ঝুমুর ওর নিজের কানে হাত দিয়ে ফুলটা দেখে।
ঝুমুর: এই ফুলের কথা বলছ? আরে মীর পেরে আনছিল।উনি জোর করাতে আমি দিলাম।
আহিল: মীর?!
আহিল বসা থেকে সোজা উঠে দাঁড়ায়,
ঝুমুর: কি হলো আহিল ভাই?
আহিল: মীর!!উনি ত তোর থেকে বড়,,, আপনিও না তুমিও না সোজা মীর,?
ঝুমুর: আরে মীরি আমাকে বলল আমি ওনাকে মীর বলে ডাকতে পারি তাই....
আহিল ঝুমুরের কাছে এসে সোজা ঝুমুরের কান থেকে ফুলটা নিয়ে ছুরে ফেলে মাটিতে।
আহিল: একদম বাজে লাগছে? নিজেকে কি ভাবিস তুই তোকে এসবে মানায় না।এসব ফুল লিপস্টিক একদম লাগাবি না।
ঝুমুর আহিলের ব্যবহারে কষ্ট পায় ছলছল চোখে ঝুমুর বলে,,
ঝুমুর: কেন? আমার গায়ের রঙ ফর্সা না বলে? আমি দেখতে সুন্দর না বলে এসব আমাকে মানায় না?
আহিল: না মানে আমি সেইভাবে বলতে চাইনি...
ঝুমুর: থাক আর কিছু বলতে হবেনা, আমি জানি আমি কালো,, কালো মানুষের সাজতে নেই এটাও আমি জানি।কিন্তু কালো মানুষের চুলে কানে ফুলও দিতে নেই আজ জানলাম।
কথাটা বলেই ঝুমুর কান্না করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আহিল দেয়ালের সাথে নিজের হাতটা এক ঘুষি দিয়ে বলল,,
আহিল: আমাকে ভুল বুঝলি ঝুমুর,, আমি কথাটা তোকে ওভাবে বোঝাতে চাইনি! তুই কি কোনদিনও বুঝবিনা আমাকে? তোর মুখে এই কালো, দেখতে অসুন্দর এসব কথাগুলো শুনতে কেন জানি আমার ভালো লাগেনা একদম ভালো লাগেনা।উফ দোষ ত আমারি এইভাবে ওকে বলা একদম উচিত হয়নি রাগ টা কন্ট্রোল করা উচিত ছিল। more.....
( এই কেমন অনুভূতি দুজনের? এই রাগ, অভিমান,অভিযোগ কি অধিকারবোধ নাকি অন্যকিছু??) )
No comments: