Header Ads Widget

test

কেন_মেঘ_আসে


 

কেন_মেঘ_আসে

পর্ব_০৪
সুমী_শারমীন..
-------------------------------------
দরজা খুলতেই মায়ের মুখে চিন্তার বদলে উচ্ছ্বসিত হাসি দেখতে পেলো রুমি। নাতিকে বুকে জড়িয়ে চিৎকার করতে করতে ঘরের ভেতরে গেলো। সবাই ছুটে এসে রাজ্যকে আদরে ভরিয়ে দিলো।
বড় ভাই ভাবির সাথেই বাবা মা থাকেন। রিটায়ারমেন্টের পর বাবা মা"ই যেন ভাইয়া ভাবির সংসারটা আগলে রেখেছেন। নাতি নাতনিকে স্কুল থেকে আনা নেওয়া,বাজার করা,বিল দেয়া,সব দায়িত্ব বাবা মা নিজেরাই সমঝোতায় নিজেদের কাঁধে নিয়ে নিয়েছে। ভাইয়া ভাবি দুজনেই চাকরি করে। বাবা মা থাকায় তারা নিশ্চিত। আর কি যে অসাধারণ আন্ডারস্ট্যান্ডিং। দেখেও শান্তি লাগে। বড় ভাবি মানুষটাও খুব ভালো।
একদিন যেতেই মা"র মনে সন্দেহ হলো। সে রুমির কাছে জানতে চাইলো কি হয়েছে। রুমি কৌশকে এড়িয়ে গেলো। বললো,রাজ্যর শরীরটা খুব খারাপ। রুমি নিজেও ক্লান্ত, তাই কটা দিন ছুটি নিয়ে এসেছে।একটু রেস্ট নেবে কটা দিন। আর রনি ছুটি পায়নি তাই আসতে পারেনি। পরে একসময় এসে বেড়িয়ে যাবে।
শুনে রুমির মা বললো, তা তো হয় না। আমি আজই জামাইকে ফোন করে দাওয়াত দিবো। যতই হোক এ বাড়ির ছোট জামাই বলে কথা। জামাইয়ের আদরই আলাদা। আমি এখনো তোর নানি বাড়ি গেলে তোর নানি,মামি, মামারা তোর বাবার যে খেদমত,যত্ন করে যেন নতুন জামাই। বলেই মা রনিকে ফোন করলো।
ওপাশ থেকে কি কথা হলো বোঝা গেলো না। শুধু মা বেশ উৎফুল্লতা নিয়ে রুমির হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে ভেতরে চলে গেলো।
রুমি হ্যালো বলতেই, ওপাশ থেকে রনি কড়া গলায় বললো,না বলে যাওয়াটা কি ভদ্রতায় পড়ে?
না বলে তো আসিনি। চিঠি লিখে এসেছি।
বাহহহহ তাতেই দায়িত্ব শেষ?
দয়া করে তুমি আমাকে দায়িত্ব শেখাতে এসো না রনি। তোমার মুখে অন্তত এতো বছরে এই শব্দটা মানায় না। ও হ্যা তুমি অবশ্য তোমার পরিবারের মানুষগুলোর ব্যাপারে খুবই দায়িত্বশীল। শুধু এতো বছরেও আমাকে আর রাজ্যকে তোমার পরিবারের অংশ ভাবতে পারোনি। এটাই আমার দুর্ভাগ্য।
বাজে কথা বাদ দিয়ে কবে ফিরছো বলো।
ধমকিও না রনি। তুমি তো দেখি তোমার মায়ের সরূপে ফিরে যাচ্ছো। অধিকার ফলাচ্ছো। অনেক হয়েছে। এবার একটু খান্ত দাও। নিজেকে বদলাতে পারলে ভালো,, না হলে আমাকে অন্য কিছু ভাবতে হবে।
মানে??মানে খুব সহজ রনি। নিজেকে প্রশ্ন করে দেখো,উত্তর পেয়ে যাবে। রনি হতভম্ব হয়ে গেলো। কিছু বলার আগেই রুমি লাইনটা কেটে দিলো।
রুমির সত্যিই আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। জীবনে নিজের কাছে হেরে যাওয়াটা যে কতোবড় অপমানের, তা রুমি প্রতি মুহুর্তে টের পাচ্ছে। কিন্তু মা " কিংবা পরিবারের কাউকেই জানাতে চায় না সে।
জানলে প্রথমে তারা সবাই অসম্ভব কষ্ট পাবে। তারপর রনির উপর আস্থা হারাবে। রনিকেও কারও কাছে ছোট করতে চায় না সে। অদ্ভুত এক মায়া এই সংসার। আর বিচিত্র নারী চরিত্র।
রুমি মার বাসায় এসেছে ঠিকই কিন্তু ভীষণ অস্থিরতা কাজ করছে মনে। কি করবে,কি করা উচিৎ, কারো সাথে শেয়ার করবে নাকি,করলে তার কনসিকোয়েন্স কি হবে, রনির সাথে সম্পর্কটা কিভাবে কন্টিনিউ করবে,রনি কি আদৌ বদলাবে,নাকি রনিকে বাদ দিয়ে আলাদা থাকবে,এরকম হাজারো প্রশ্ন মনকে দ্বিধায় ফেলে দিচ্ছে।
খুব কাছের একজন বান্ধবী, যে বারবার রুমিকে সাবধান করেছিলো রনির সাথে না জড়াতে,সেই কনার কথা মনে পড়ে গেলো। কিন্তু কনা তো এখন কানাডায়। মার বাসায় নেট আছে। সবাই ঘুমিয়ে পড়লে কনাকে নক করলো। কনা এতোবছর পরে ফোন পেয়ে তো অবাক। আপ্লুত হয়ে অনেক কিছু জানতে চাইলো। রুমি এক বিন্দু ভনিতা না করে সব সমস্যা কনাকে খুলে বললো। কনা খুবই কষ্ট পেলো শুনে। আর বললো আমাকে ভাবার জন্য জাস্ট একটা দিন সময় দে। কাউকে বলতে পেরে রুমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। কিছুটা নিশ্চিতে ঘুমাতে গেলো অনেক দিন পর। more.....
সকাকে অনেকের হৈ চৈ এ ঘুম ভেঙে দেখে খাবার টেবিলে রনিকে ঘিরে সবাই জামাই আদরে ব্যাস্ত।
রাজ্য বাবার কোল ছাড়া কারো কোলে আর যাচ্ছে না। এ নিয়ে সবাই খুব মজা করছে।
জামাই যে আজ আসবে কই তুই তো আমাকে আগে বলিসনি? মা"র উত্তরে কি বলবে বুঝে ওঠার আগেই রনি বললো,আমিই ওকে জানাই নি,,আম্মা,,ছুটি পাবো কিনা কনফার্ম ছিলাম না তো তাই।
রুমি খুবই চেষ্টা করছে স্বাভাবিক আচরণ করার। কিন্তু কিছুতেই পারছে না। রনি রাজ্যকে নিয়ে ঘরে এসেই বললো ব্যাগ গুছিয়ে রেডি করো,,আগামীকাল সকালেই আমরা ফিরবো।
কিন্তু আমি তো ছুটি নিয়ে এসেছি,কয়েকটা দিন থাকবো বলে।
এখন চলো,পরে আবার এসো। রনির এমন উত্তরে রুমি কি বলবে বুঝে ওঠার আগেই মা ঘরে এসেই বললো,আগামীকাল সকালে তোর ফুপু,আর খালাদের ফ্যামিলি দাওয়াত করেছি। বিয়ের পরে তো ওদের রনির সাথে সেভাবে কথাই হয়নি।
রনি বললো আম্মা,আমি তো ছুটি পাইনি। অসুবিধা নেই প্রোগ্রামটা রাতের পরিবর্তে দুপুরে শিফট করেছি সেজন্যই,,,আর তুমি না হয় আগামীকাল ভোরে চলে যেও। আর রুমি তো কয়েকদিনের ছুটি নিয়েই এসেছে।
রনি রুমি দুজনেই হতভম্ব। রনি রাগে গজগজ করতে করতে বললো এখন আবার কোথাকার সব আত্মিয়তা,,,,যত্তসব।
রুমির মেজাজ চরমে পৌঁছে গেলো।
কেন আমি তোমাদের আত্মিয়ের সাথে ভালো করে কথা বলিনা? অনিচ্ছা থাকা সত্বেও কতো অনুষ্ঠানে ছুটি নিয়ে গিয়ে হাসি হাসি মুখ করে গল্প করেছি। আর আজ আমার আত্মিয়দের তোমার কাছে ঝামেলা মনে হচ্ছে। আর তোমাকে তো বলেইছি আমি কটা দিন ছুটি নিয়ে এসেছি। আমাকে তোমার সাথে যেতে একদম জোর করবে না বলছি।
রুমির রাতারাতি পরিবর্তনে রনি বেশ অবাক হলো।বললো পরে না হয় এসো। রুমি উত্তরে বললো, রনি তোমার সাথে সাংসারিক বিষয়ে আমার জরুরী কিছু কথা আছে। তোমার কি সময় হবে?
হ্যা হবে না কেন বলো?
আমি ভালোবেসে তোমাকে বিয়ে করেছিলাম। আমি বিশ্বাস করি তুমিও আমাকে ভালোবাসো। কিন্তু ভালো থাকতে গেলে যা যা করা প্রয়োজন তা তুমি ভেবেও দেখো না,এবং দায়িত্ব পালন করো না।
এটা অন্যায়। আমি ভেবেছিলাম,এতো বছরে তুমি বুঝবে। কিন্তু না তোমার পরিবারের এবং তোমার অন্যায় অত্যাচার দিনদিন বেড়েই চলেছে। যা সভ্য সমাজে আমার পক্ষে আর মেনে নেওয়া সম্ভব না।সেই সাথে তোমার আচরণ পুরাই স্বার্থপরতায় রূপ নিচ্ছে। যা মেনে নেওয়া সত্যিই খুবই কষ্টকর।
আমি তোমার সাথে অবশ্যই ফিরে যাবো,কিন্তু তোমার পরিবারের জন্য আমি আর একটা টাকাও খরচ করবো না। এবং আমার সংসার চালাবে তুমি।আমাদের একটা বাচ্চা আছে,তার ভবিষ্যত আছে। ভেবেছিলাম তুমি এতোদিনে বুঝবে। কিন্তু না, তোমার অন্যায় দিন দিন বেড়েই চলেছে। রাজ্যর অসুস্থতায় কোন বিল তুমি দাওনি। দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করোনি। উপরন্তু এক রাতও জাগোনি হাসপাতালে। আমি একা টানা আট দিন দিন রাত রাজ্যর কাছে ছিলাম। তুমি তো বাবা??
একবারও কি আমার আর রাজ্যের প্রতি ভালোবাসা,দায়িত্ব থেকেও কাজগুলো শেয়ার করতে ইচ্ছে করেনি? তুমি একাই চাকরি করো,আর আমি কি বসে বসে খাই। তোমার মা বাবা ভাই এবং তোমাকে ভালো রাখতে আমি এই ক'বছর কি প্রানান্ত চেষ্টা চালিয়ে গেছি। আর তুমি??
বলেই গলা ধরে এলো। চোখ মুছতে মুছতে বললো, ভেবেছিলাম এতোদিনে আমি আমার আগের ভালোবাসার রনিকে ফিরে পাবো। কিন্তু না,,,,,
তোমার বিন্দুমাত্র চেঞ্জ নেই,,যা আমি আর নিতে পারছি না রনি। আমি ভীষণ ক্লান্ত। আমাকে কিছুদিন একা ছেড়ে দাও। একটু ক্লান্তি জুড়াই।
ভয় পেয়ো না। তোমার আর তোমার পরিবারের মানুষগুলোর বদনাম আমি করবো না।
তুমি তো আমার অবস্থা জানো? আমার বেতন, খরচ সব তুমি জানো,তাহলে??
তোমার সব হিসাব কি শুধু আমাদের বেলাতেই? তোমার বউ বাচ্চার প্রতি কোন দায়িত্ব তোমার নেই?সব দায়িত্ব পালন করতে টাকা লাগে না রনি,স্বচ্ছ একটা মন লাগে। আর এতো বছর প্রেম করে, সংসার করে এতোটুকু তো বুঝেছো,আমি কখনওই তোমার উপর প্রেশার দেইনি। উপরন্ত তোমার কষ্ট লাঘব করতে আজীবন তোমার পাশে থেকেছি। আমার তোমার কাছে কেয়ারিং আর ভালোবাসা ছাড়া যে তেমন কোন চাহিদা নাই,তা তুমি ভালো করেই জানো। তারপরেও আমার সাথে হওয়া অধ্যায়গুলো তুমি কিভাবে মেনে নিলে রনি?? more...
আমার এবং আমার ছেলের সব দায়িত্ব পালন করার পরে যদি তোমার বাবা মা ভাইকে টাকা পাঠাতে ইচ্ছে করে,তাহলে বাড়তি ইনকাম করবে। আমার মতো টিউশনি করবে। আর আমি কথা দিচ্ছি,তুমি যেভাবে রাখবে,যা খাওয়াবে, যেমন রাখবে তেমনটাই মাথা পেতে নেবো। কিন্তু আমি আর টিউশনিও করবো না। তোমার,মানে আমাদের সংসারে আমার ইনকামের কোন টাকা ব্যয় করবো না। এতে তোমার অসুবিধা হলে আমাকে আগেই বলতে পারো,তাহলে আমি অন্য কিছু ভাববো।
কি বলছো এসব রনি চিৎকার করে উঠলো।
প্লিজ রনি চ্যাচিও না,,আমার পরিবারের কেই কিছুই জানে না। শুধু সবাই জানে তুমি,এবং তোমার মা,অত্যন্ত ভালো মানুষ। আমি যথেষ্টই সুখে আছি। তুমি, তোমরা যতই অন্যায় করো,আমি কাউকে বলিনি,বুঝতেও দেই নি। কিন্তু আর না৷ আমার সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেছে।এখন ডিসিশান তোমার হাতে।
রনি খুবই হতাশ হয়ে অনুরোধ করলো,,যে সে চেষ্টা করবে। রুমি বললো আমিও ভেবে দেখবো রনি।
দুপুরে সব আত্মিয়ের সাথে রনি জমিয়ে আড্ডা দিলো। সবাই এমন সরল, নিরহংকার জামাইয়ের ব্যবহারে আপ্লুত। রুমি দেখে আর হাসে। এক্কেবারে মায়ের গুণ পেয়েছে রনি। সন্ধ্যায় ফিরে গেলো।
তার একসপ্তাহ পরে রুমি নিজ সংসারে ফিরলো।
রেগুলার কনার সাথে যোগাযোগ রাখছিলো। ওর দেয়া বুদ্ধি কাজে লাগানোর চেষ্টা করে চলেছে রুমি। তবে তা খুব গোপনে। কাউকে বুঝতে দেয়নি। আর এর মাঝে গত কয়েকমাসে অনেক জায়গায় এপ্লাই করেছে রুমি। রনির কাছে রাজ্যকে রেখে রেখে ঢাকা যেয়ে কয়েকটা ইন্টারভিউও ফেস করে এসেছে। রনি সব মেনে নিচ্ছে অনিচ্ছা সত্বেও। কারণ রুমির চোখে যে আগুন রনি দেখেছে,তা এই জীবনেও দেখেনি।
হঠাৎই একদিন একটা চিঠি এলো। রুমির একটা অনেক বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে অনেক বড় পোস্টে চাকরি হয়েছে। পোস্টিং সিলেট। গাড়ি,বাড়ি,হেলথ ইন্সুইরেন্স সহ অনেক বেতন।
রনি অফিস থেকে ফিরে এসে দেখে রুমি ব্যাগ গোছাচ্ছে।
রনি বললো সিলেট অজানা একটা জায়গায় একা একা তুমি চাকরি করতে পারবে না। তুমি কোথাও যাচ্ছো না রুমি। তুমি এখানেই থাকবে।

রুমি কোন তর্কে গেলো না। শুধু বললো,আমাকে আটকে রাখারা অধিকার তুমি অনেক আগেই হারিয়েছো রনি। তোমার পথ সবসময়ই উন্মুক্ত। যখন ইচ্ছে এসে আমাদের দেখে যেতে পারো। রাজ্যকে তার বাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবো না আমি কখনই। তোমার যখন খুশি এসো।
আমি তোমাকে এতোটাই ভালোবাসি যে, তোমাকে মুক্তি দিতেও পারছি না। তবে তুমি মুক্ত।
তোমার রুমিকে তুমি এবং তোমার পরিবারের সবাই মিলে অনেক আগেই হত্যা করেছো।
আমি চলে গেলে,নিজে নিজে ভেবে দেখো। ঠিক বুঝতে পারবে। একাকিত্ব মানুষকে অনেক কিছু শেখায়। চাইলে তুমি তোমার বাবা মাকে তোমার কাছে এনে রাখতে পারো। আর আমি আজ থেকে তোমার কাছ থেকে কোন টাকা দাবি করবো না।
পরদিন সকালে রুমি রাজ্যকে নিয়ে চলে গেলো। রনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রুমির চলে যাওয়া দেখলো,যেমনটা রুমি একদিন অসহায়ের মতো হাসপাতালের করিডোর দাঁড়িয়ে দেখেছিলো.....
[ চলবে more....

7

No comments:

720

Powered by Blogger.