Header Ads Widget

test

#লাল_শাড়িতে_প্রেয়সী (পর্ব) 4


#লাল_শাড়িতে_প্রেয়সী


এক হাত দিয়ে ক্লাসরুমের দরজাটা টেনে বন্ধ করে দিলো আহাদ। দরজার শব্দটা যেনো গোটা রুমে প্রতিধ্বনিত হলো। চারপাশে হঠাৎ যেনো নির্জনতা নেমে এলো, কেবল শ্বাসের শব্দগুলোই শোনা যাচ্ছে হালকা, কাঁপা নিঃশ্বাস। মুহূর্তের মধ্যে সে এক ঝটকায় রিদিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। রিদির দু’হাত সে মাথার উপরে তুলে একহাতে শক্ত করে ধরে রেখেছে, অন্য হাতটা তার কোমরে। আর নিজের বুক আর পায়ের জোরে এমনভাবে আটকে দিয়েছে যে সামান্য নড়াচড়ারও উপায় নেই।
রিদিতা শিউরে উঠলো ভয়ে। তার বুকের ভেতর ধুকপুক ধ্বনি যেনো গোটা রুমে বাজছে। শরীর ঘামে ভিজে গেছে, তিরতির করে কাঁপছে সে। চোখ বড় বড় হয়ে আছে আতঙ্কে।
আহাদ এবার মনোযোগ দিয়ে তাকালো তার দিকে। জীবনে যে ছেলেটা কোনোদিন কোনো মেয়ের দিকে ফিরেও তাকায়নি, সে আজ অদ্ভুত তৃষ্ণায় ভরা চোখে রিদির প্রতিটা রেখা খুঁজে দেখছে। ফর্সা মায়াবি মুখ, নিখুঁত চোখ-নাক, চিকন গোলাপি ঠোঁট যা ভয়ে কাঁপছে তিরতির করে। চোয়ালের ডানপাশে ছোট্ট একটা আবছা তিল, যা এই মুহূর্তে তার সমস্ত রাগকে আরও অস্থির করে তুললো। কিন্তু রিদির শরীরের কাঁপন আর হাপরের মতো ওঠানামা করা নিঃশ্বাসের শব্দ আহাদের ধ্যান ভেঙে দিলো। রিদি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো,
“কি করছেন! ছেড়ে দিন আমাকে... দয়া করে ছেড়ে দিন...”
আহাদের চোখ হঠাৎ রাগে লাল হয়ে উঠলো। ঠোঁট কামড়ে নিচু গলায় বলল,
“ছ’এিশ ঘণ্টা… ছ’এিশ ঘণ্টা আমাকে ঘাটিয়েছিস। ভেবেছিস শাস্তি না দিয়েই তোকে ছেড়ে দিবো, জানু?”
রিদি বিভ্রান্ত, ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো তার।
“কি… কি বলছেন? আমি বুঝতে পারছি না… প্লিজ, ছেড়ে দিন আমাকে…”
আহাদ দাঁত কিড়মিড় করে আরও শক্ত করে চেপে ধরলো।
“কজনকে এভাবে শাড়ি পরে ছবি পাঠিয়েছিস হেহ? কজনকে আমার মতো করে সিডিউস করেছিস... জানু?”
রিদিতা যেনো জমে গেলো মুহূর্তেই। মাথায় বাজ পড়ার মতো শিহরন বয়ে গেলো সারা দেহে। শাড়ি পরা সেই ছবির কথা ভেবেই তার মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো। মানে আহাদ রাজা সবই দেখেছে! কাঁপা গলায় আমতা আমতা করে বললো,
“ওই মেসেজ… আপনার জন্য ছিলো না… ভুল করে… ভুল করে চলে গেছে…”
আহাদ আরও কাছে ঝুঁকে এলো। চোখে ঝিলিক, ঠোঁটে তীক্ষ্ণ বাঁক।
“তাহলে কার জন্য ছিলো হুহ, বল। আমি এখনি নিজের হাতে তার দাফনের কাজ সেরে আসি।”
রিদি চমকে উঠলো, ভয়ে কেঁপে উঠে বলে,
“না না, কারোর জন্য ছিলো না। ভুল করে পিকটা চলে গেছে আপনার কাছে।”
আহাদের চোখে তখন আগুনের ঝড়।
“ভুল করে? ভুল করে কি মেসেজটাও এসেছে, হুম?”
রিদিতা মরিয়া হয়ে মোচড় দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলো, কিন্তু আহাদের বাঁধনের ভেতর থেকে বের হওয়া অসম্ভব। তার নিঃশ্বাস ঘন ঘন পড়ছে, বুকের ভেতর চেপে আসছে কষ্ট। শেষমেশ সে উপায় না পেয়ে আহাদের বাহুতে দাঁত বসিয়ে দিলো। আহাদ ব্যথায় মুখ কুঁচকালো বটে, কিন্তু ছাড়লো না। বরং ঠান্ডা কণ্ঠে ফিসফিস করে বললো, more.....
“ভুল যখন করেছেন তখন শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে, মিস জানু।”
রিদির চোখ ভয়ে ছলছল করে উঠলো, “ম...মানে?”
আহাদ নিস্পৃহ কণ্ঠে বললো, “এই বেঞ্চের উপরে উঠে দাঁড়াও।”
“কেনো.?”
“আমি বলেছি তাই, কুইক.!”
রিদিতা কাঁপতে কাঁপতে বেঞ্চে উঠে দাঁড়ালো। আর আহাদ লেকচারের টেবিলে লাফ দিয়ে উঠে বসল। রিদির নাজুক শরীর কাঁপছে তিরতির করে। চোখে ভয়, গালে লজ্জা। আহাদ কর্কশ কণ্ঠে হুংকার দিলো,
“এবার কান ধরে ছএিশ বার উঠবস করো।”
রিদি স্তব্ধ, অসহায়,
“এহহ…”
“এহহ না, হ্যাঁ। কুইক!”
“কি হলো, দাঁড়িয়ে আছো কেনো? আমার চেহারা দেখার এখনো অনেক টাইম আছে। শুরু করো। রেডি ওয়ান, টু, থ্রি, স্টার্ট..!”
রিদিতা বাধ্য হয়ে কান ধরে উঠবস শুরু করলো। আহাদ ঠোঁট টিপে নিজের হাসি সংযত রাখলো, তবুও চোখেমুখে হালকা মুচকি ভাঁজ স্পষ্ট। অথচ রিদিতার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে ভয়ে, লজ্জায়, অপমানে। আহাদ কাউন্ট করলো।এক এক করে ছ’এিশ বার শেষ হলো। আহাদ টেবিল থেকে লাফিয়ে নেমে এলো, রিদিতার কোমর চেপে ধরে এক ঝটকায় নিচে নামিয়ে আনলো। নিচে নামালেও রিদি মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে রইলো। এটা আহাদের মোটেও পছন্দ হলো না। কর্কশ কণ্ঠে বলে উঠলো,
“এই আল্লাহর বান্দি এই! তাকাও আমার দিকে।”
কিন্তু রিদিতা তবুও মাথা নিচু করে রইলো। কারণ সে জানে, তার চোখে চোখ পড়লেই সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। আহাদ এবার আরো ক্ষিপ্ত হলো। আজব!
এতো কষ্ট করে খুঁজে বেড় করলো শুধু এই চোখের দিকে একটু তাকাবে বলে, অথচ সে চোখ নামিয়ে রেখেছে!
কোনো অগ্রিম বার্তা ছাড়াই ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো রিদির কোমল গালে। শব্দটা যেনো দেয়াল ভেদ করে প্রতিধ্বনিত হলো। রিদিতা চমকে উঠলো। ব্যথায় কুঁকড়ে গেলো সে। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে, চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হয়ে গেলো। এক নিমিষে ঢলে পড়লো আহাদের কোলে। সকালে না খেয়ে এসেছে, তার উপর পছন্দের মানুষটার কাছ থেকে এই লজ্জাজনক শাস্তি, অপমান, থাপ্পড় সব মিলিয়ে তার পক্ষে সহ্য করা আর সম্ভব হলো না। more.....
আহাদ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো নিস্তেজ মুখটার দিকে। বুকটা ধক করে উঠলো। চিনচিনে ব্যথা ছড়িয়ে পড়লো বুকের ভেতর। তার চোখে অদ্ভুত এক মুগ্ধতা, এক অচেনা আবেশ। এক মুহূর্ত পর ধীরে ধীরে তার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরলো। কাঁপতে থাকা আঙুলের ছোঁয়ায় চুলগুলো সরাল। ভাঙা নিঃশ্বাসে বললো,
“আমার সময় নষ্ট করেছিস। আমাকে লাটিমের মতো ঘুরিয়েছিস। পাগল বানিয়ে ফেলেছিস আমাকে। মুখ বুঝে সহ্য করেছি। আর তুই সামন্য একটা থাপ্পড় সইতে পারলি না জানু!”
অবশেষে ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে দরজাটা খুলে দিলো সে।
দরজা খোলার সাথে সাথেই হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল আনিকা, পিছনে শাহীন। আহাদের বাহুতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে রিদিতা, অচেতন। সাদা-ফ্যাকাশে মুখ, ঠোঁটের রঙ যেন মিলিয়ে গেছে। ছুটে গিয়ে আঁকড়ে ধরে ডাকে আনিকা, চোখে-মুখে আতঙ্ক, কণ্ঠে কাঁপন,
“রিদি!”
“কি হয়েছে রিদির? রিদি চোখ খোল! কি হয়েছে তোর?”
তার কণ্ঠ ফেটে যাচ্ছিল উদ্বেগে। চোখ ভিজে উঠেছিল মুহূর্তেই।
“কি… কি করেছেন আপনি ওর সাথে?”
কণ্ঠ কাঁপছিল ভয়ে।
আহাদের চোখে-মুখে কোনো ভাবান্তর নেই। কণ্ঠে শীতলতা, একরাশ নির্লিপ্ততা,
“যেটা পাওয়ার ও যোগ্য , সেটাই করেছি।”
কথাটা ছুরির মতো বিঁধলো আনিকার বুকে। কিন্তু তার প্রতিবাদ করার সাহস হলো না। কারণ আহাদের চারপাশে যেন এক অদৃশ্য ভয় ছড়িয়ে আছে। হঠাৎই আহাদ রিদিকে একঝটকায় নিজের কোলে তুলে নিলো। শাহীন তখন দরজার ফাঁকে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো, আহাদের প্রতিটি ইশারায় সাড়া দিতে প্রস্তুত। আনিকার চোখে তখনও আতঙ্ক। আহাদ তার দিকে তাকিয়ে কড়া স্বরে বললো,
“ক্লাসে ফোকাস করো। আর একটা কথা মনে রেখো,
আহিয়া যেন এই ব্যাপারে কিছু জানতে না পারে আন্ডারস্ট্যান্ড?”
আনিকা নিঃশ্বাস রুদ্ধ করে শুধু মাথা নাড়লো। প্রতিবাদ করার মতো শক্তি আর সাহস কিছুই অবশিষ্ট ছিলো না তার। রিদির নিস্তেজ শরীরকে বুকে চেপে আহাদ ধীরপায়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো। পিছনে ছাঁয়ার মতো হাঁটছিলো শাহীন। বাইরে অপেক্ষমাণ গার্ডরা চারদিক থেকে ঘিরে ধরলো তাদের। এমন দৃশ্য যেন পুরো ডিপার্টমেন্টকেই অদ্ভুত নিস্তব্ধতায় আবদ্ধ করে ফেললো। একসময় ভিড় কমলো, ক্লাসে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে এলো। more.....
মিরপুর এগারোতে এসে গাড়ি ধীরে থামলো রিদিতার ভবনের সামনে। গাড়ির দরজা খুলে নামতেই আহাদের মুখে কোনো ভাবান্তর নেই, অথচ তার কোলে এখনো নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে রিদিতা। যেন এক টুকরো বরফ নড়াচড়া নেই, নিঃশ্বাসও যেন ক্ষীণ। চারপাশের বাতাসে অদ্ভুত ভারি চাপা উত্তেজনা।
আহাদ কোনো দ্বিধা ছাড়াই আবার তাকে বুকে জড়িয়ে নিলো। পদক্ষেপ ভারী, চোখে তীক্ষ্ণ দৃঢ়তা। যেন পুরো পৃথিবী থেমে আছে, কেবল সে-ই চলছে নিজের নিয়মে। শাহীন আর নাদিম-শাওন একে অপরের পেছনে পেছনে এগিয়ে চলল, কিন্তু তাদের চোখেমুখে স্পষ্ট ভয়। লিফটের ভেতরে ঢুকতেই নীরবতা ভেঙে শাহীন কাঁপা কণ্ঠে বলল,
“ভাই… উনির তো এখনো জ্ঞান ফেরে নাই।”
আহাদ ধীর নিঃশ্বাস ফেলে এক মুহূর্তের জন্য তার দিকে তাকাল। চোখে শীতলতা, ঠোঁটে কঠোরতা,
“ছএিশ ঘণ্টা আমায় হয়রানি করেছে এই বেডি। ভেবেছিলাম ছএিশটা থাপ্পড় দেবো। কেবল একটা দিয়েছি। তাতেই যদি বেহুঁশ হয়ে যায়, সেটা কি আমার দোষ।”
কথাটা শুনে শাহীন, নাদিম আর শাওন বিস্মিত হয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকাল। মনে হলো যেন কারো বুকের ভেতর হিম শীতল বাতাস বয়ে গেল। শাওন একটু হেসে, আবার ভয় সামলে ঠাট্টা করার ভঙ্গিতে বলল,
“ভাই, ঘণ্টা কাউন্ট করে থাপ্পড়! উনি যে এখনো বেঁচে আছেন, সেটাই তো আল্লাহর রহমত।”
কথা শেষ হতেই আহাদের চোখ জ্বলে উঠলো। তার রাগান্বিত দৃষ্টি যেন ছুরির মতো বিঁধলো শাওনের দিকে।
“কি বলতে চাইছিস তুই? আমি যে মিনিট কাউন্ট করি নাই, ওটাই ওর চরম সৌভাগ্য!”
নাদিম নিঃশব্দে মাথা নিচু করে ফেলল। ঠোঁটের ফাঁকে অস্পষ্ট স্বরে বিড়বিড় করে বলল,
“আল্লাহ মাফ করুক… উনির আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।”
শাওন তৎক্ষণাৎ তার কানের কাছে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল, “চুপ কর… ভাই যদি শুনে ফেলে, তাহলে তোর আত্মার মাগফিরাত কামনা করতে হবে।”
নাদিম শিউরে উঠল, আর একটা শব্দও উচ্চারণ করল না।কয়েকবার কলিং বেল চাপতেই ভেতর থেকে দরজা খুলে দিল ঈশানী। দরজার ফাঁক গলেই দৃশ্যটা দেখে সে ভরকে গেলো আহাদের কোলে নিস্তেজ রিদিতা!
“রিদি..! কি হয়েছে ওর? এই রিদি…!”
কণ্ঠ কেঁপে উঠলো ঈশানীর, চোখ বড় বড় হয়ে গেল আতঙ্কে।
কিন্তু আহাদ যেন কিছুই শুনলো না। কোনো কথা না বলে সরাসরি ভেতরে ঢুকে গেল। চারপাশে কারো উপস্থিতির তোয়াক্কা না করে সোজা ড্রইং রুমে গিয়ে রিদিতাকে আস্তে করে কাউচে শুইয়ে দিলো। এক মুহূর্ত নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকল ওর দিকে। অতঃপর হাতের উল্টোপাশ দিয়ে নিজের নাকটা হালকা করে ঘষে নিলো। যেন ওই মুহূর্তের অস্বস্তি কিংবা অদৃশ্য রাগকে সামলে নিতে তার এই সামান্য ভঙ্গিমাই যথেষ্ট। ঈশানী হতভম্ব হয়ে রিদিতার নিস্তেজ শরীরের পাশে বসে পড়ল। হাত কাঁপছিল, তার কণ্ঠ ভারী হয়ে বের হলো,
“কি হয়েছে রিদির? কি করেছেন ওর সাথে?”more.....
আহাদ ভ্রু কুঁচকে তাকাল, চোখে শীতল দৃষ্টি। কর্কশ কণ্ঠে উত্তর দিলো,
“কি হয়েছে সেটা না হয় আপনার বোনের জ্ঞান ফিরলেই জিজ্ঞেস কইরেন।”
কথাগুলোতে এমন একরাশ গা শিউরে ওঠা শীতলতা ছিল, যেন প্রতিটি শব্দ হিমশীতল ছুরির মতো বুকে বিঁধছে।
রিদিতার মাথার কাছে বসে ধীরে ধীরে কপালে হাত বুলাতে লাগল। তার কণ্ঠে হালকা রাগ, কিন্তু সেটা যেন দুঃশ্চিন্তার আড়ালে লুকানো,
“কতবার বলেছি খেয়ে যা, খেয়ে যা, তা খাবে না। না খেয়ে বের হবে আর যেখানে-সেখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকবে। কোন কথা শোনে না আমার।”
ঈশানীর কথায় আহাদের ভ্রু খানিকটা কুঁচকে গেল। তার ঠোঁটে হালকা টান, চোখ থেমে গেল রিদিতার শান্ত, কোমল মুখের ওপর। নিস্তেজ দেহের মাঝেই যেন লুকিয়ে আছে এক অদ্ভুত শক্তি, এক অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ, যেটা আহাদকে টেনে রাখে আবার দূরেও ঠেলে দেয়। কিছুক্ষণ নীরবে তাকিয়ে থাকার পর সে গম্ভীর গলায় বলল,
“আমি আসছি… সামলে রাখবেন আপনার বোনকে। আমার আমানত হিসেবে।”
এতটুকু বলে দড়জার দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু হঠাৎ থেমে আবার ঘুরে তাকাল। দৃষ্টি এবার সরাসরি ঈশানীর চোখে গেঁথে দিল। ঠোঁটে একরাশ শীতল ব্যঙ্গ নিয়ে বলল,
“আর হ্যাঁ… এরপর যদি খেতে না চায়, আমাকে ইনফর্ম করবেন। আমি এসে থাপ্পড়ে খাবার খাইয়ে দিয়ে যাবো।”
মুহূর্তেই বিরক্তি জমে উঠলো ঈশানীর চোখে। আহাদের হাবভাব, তার চালচলন সবকিছুতেই সে এক ধরনের দমবন্ধ করা মাফিয়া-সুলভ উগ্রতা খুঁজে পেল। যেন সে মানুষ নয়, কোনো নির্মম শাসক। কিন্তু তবু মুখ খুলে আর কিছুই বলল না। আহাদ ঠোঁটের কোণে হালকা, অদ্ভুত এক হাসি ঝুলিয়ে আবার দরজার দিকে ফিরল। সেই হাসি যেন মমতার নয়, ব্যঙ্গেরও নয়। একটা ভয়ংকর নিশ্চিন্ততা, যে কারো অজান্তে শিরদাঁড়া কাঁপিয়ে দেয়। অতঃপর এক লম্বা পদক্ষেপে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে।
সন্ধ্যার নরম আলোটা পর্দার ফাঁক গলে ঘরে ঢুকছে।
রিদিতা চুপচাপ বসে আছে, দু’হাত গালে রেখে। চোখ দুটো শূন্যে স্থির, অথচ মনে হচ্ছে ভেতরে একটা ঝড় বইছে।
তিন ঘন্টা আগে জ্ঞান ফিরেছে তার। কিন্তু আজকের ঘটনাগুলো এখনো তার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। বুকের ভেতর ধড়ফড় করছে, হাতের তালু ঘামে ভিজে আছে।
সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না, আজ যা কিছু ঘটেছে তার সবটাই সত্যি। ঠিক তখনই পাশে এসে বসল ঈশানী। more.....
চোখেমুখে চিন্তার ছাঁপ, গলায় বিরক্তির আভা।
“রিদি, সত্যি করে বল তো, এই আহাদ রাজা মীরের সাথে তোর কি সম্পর্ক?”
রিদিতা আঁতকে উঠলো, “আজব! ওর সাথে আবার আমার কিসের সম্পর্ক হবে? তুমি কখনো কিছু শুনেছো?”
ঈশানী নিঃশ্বাস ফেলে তাকালো তার দিকে।
“শুনেছি কিনা সেটা বাদ দে। ঐদিনও তোকে খুঁজতে এসেছিলো, আমি বলতে ভুলে গেছি। এখন বল, যদি তুই কিছুই না করিস, তাহলে তোকে খুঁজবে কেনো? এসব রাজনীতির লোকজন মোটেও ভালো না রিদি!
খুব সাবধান, দূরে থাকিস এসবের থেকে। আর আমাদের আব্বু যদি এসব শোনে, তুই জানিস তো উনি রাজনীতি কতটা ঘৃণা করেন। তোর কি হবে তখন?”
রিদিতা নিচের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করলো, “বুবু, তুমি ভুল বুঝছো। আমি কিছুই করিনি।”
ঈশানী আবার কিছু বলতে যাচ্ছিলো, ঠিক তখনই ঘরে ঢুকলো সুমন, ঈশানীর স্বামী। পেশায় একজন ভ্যাট অফিসার, দিনের ক্লান্তি মুখে নিয়ে এসেছেন, কিন্তু চোখেমুখে খুনসুটির হাসি।
“কী ছোট গিন্নি!”
বলেই মজা করে তাকালো রিদির দিকে।
“শুনলাম আজকেও নাকি তুমি অজ্ঞান হয়ে গেছো। তো কার কোলে গিয়ে ঢলে পড়লে শুনি?”
সুমন আসলে কিছুই জানে না, শুধু মশকরার ছলে কথাটা বললো। কিন্তু ঈশানী ক্ষেপে উঠলো।
“ভালই হয়েছে! ওর সাথে এমনই হওয়া উচিৎ।”
কথা শেষ করেই দরজা ধাক্কা মেরে গটগট করে বেরিয়ে গেলো। সুমন একপাশে হেসে দাঁড়াল। তারপর ফিসফিস করে বললো,
“তোমার বুবুর তো মনে হচ্ছে টেম্পারেচার ১০২-এ উঠে গেছে। আসল ঘটনা কী হে?”
রিদিতা ঠোঁট উঁচু করে বললো, “আমি কী জানি!”
সুমন আর চাপ দিলো না, হালকা হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। ঘর আবার নীরব হয়ে এলো। এমন সময় হঠাৎ রিদিতার ফোনটা “টুন” করে বাজলো। রিদির বুক ধড়ফড় করে উঠলো। কাঁপা হাতে ফোনটা হাতে নিলো। স্ক্রিনে ভেসে উঠলো একটাই লাইন,
“এরপর ঠিকমতো না খেলে থাপ্পড়ায়া চেহারার নকশা পাল্টায়া দিবো।”
বার্তাটা পড়তে না পড়তেই গা শিউরে উঠলো। হাত থেকে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো। ঠোঁট শুকিয়ে এলো, বুক ধুকপুক করছে। এ যেনো সেই কণ্ঠের প্রতিধ্বনি আহাদ রাজা মীর!
রিদির হাত কাঁপছে থরথর করে। মনে হচ্ছে আবারও অজ্ঞান হয়ে যাবে। কিন্তু না, সে নিজেকে সামলে নিয়ে এক অদ্ভুত ভঙ্গিতে ডেকে উঠলো,
“বুবু… আমার ক্ষিদে পেয়েছে… কী খাবো more.....

No comments:

720

Powered by Blogger.