সন্তান
_ মানে! কি বলতে চাইছো তুমি?'
_ কেনো! বাংলা কথা বোঝো না! এটা আমার বাড়ি, আমি ঠিক করবো এই বাড়িতে কে থাকবে আর কে থাকবে না।'
_ এটা শুধু তোমার একার বাড়ি? আমার বাড়ি নয়?'
_ না নয়! তোমার এখানে ততক্ষণ অব্দি অধিকার থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমাকে অধিকার দেখানোর সুযোগ দিবো।'
_ আকাশের বাবা! কি বলছো তুমি এটা! এই দুদিনের মেয়েটার জন্য তুমি আমায় অপমান করছো?'
_ অপমান? তোমার মান অপমান বোধ আছে নাকি! আমি তো জানতাম তুমি নি'র্ল'জ্জ!'
_ আকাশ! তুই দেখছিস, তোর চোখের সামনে তোর বাবা আমায় অপমান করছে! তুই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছিস! কিছু বলবি না!'
আকাশ এবার আমতা আমতা করে বললো,
_ বাবা! তুমি মায়ের সাথে এমন করছো কেনো?'
_ চুপ!'
গর্জে উঠলেন বাবা। রাগি চোখে তার দিকে চেয়ে বললেন,
_ একটাও কথা বলবে না বেয়াদব ছেলে। তোমার মুখ থেকে বাবা ডাক শুনতেও আমার লজ্জা করছে। মেরুদণ্ডহীন ছেলে তুমি। তুমি তো মানুষ হওয়ার ও যোগ্য নও।'
কথা শেষ করে বাবা আমায় নিয়ে উপরে গেলেন। পিছন থেকে শাশুড়ি মা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন,
_ হ্যাঁ হ্যাঁ আমরা তো খারাপ! আর ঐ ছোটলোক মেয়েটাই তোমার আপন। আমরা তো তোমার কেউ না। একটা বাইরের মেয়ের জন্য ঘরের বউ ছেলে কে অপমান করতেও বাঁধলো না তোমার। দেখবো, কতদিন তাকে নিয়ে থাকতে পারো। ঐ মেয়েকে যদি বাড়ি থেকে দূর না করেছি তাহলে আমার নাম ও শিলা নয়।'
পাশ থেকে আকাশের নতুন বউ বলে উঠলো,
_ মা! ও কি তবে আমাদের সাথে থাকবে নাকি! দেখুন, আমি আগেই বলে দিচ্ছি, এই মেয়ের সাথে আমি কিন্তু এক বাড়িতে থাকতে পারবো না। আর আকাশ তোমায় বলছি, তুমি যদি ঐ মেয়ের কাছে যাও আমি কিন্তু এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।'
শিলা বেগম তাকে আস্বস্ত করলেন।
_ আরে তুমি চিন্তা কোরো না তো মা। এই সবকিছু তোমার। দাঁড়াও না, উকিলের সাথে আমি কথা বলেছি। ওদের ডিভোর্স টা হতে দাও। তারপর তো ওকে এ বাড়ি ছেড়ে যেতেই হবে।'
_ কিন্তু বাবাকে দেখে তো মনে হলো না ওকে বাড়ি থেকে যেতে দেবে বলে। বাবা যদি তখন আপনার বিরুদ্ধে যায়?'
_ গেলে যাবে! তোমার শশুর কোনদিন ই বা আমার পক্ষে ছিলো। এই মেয়েকে যখন প্রথম এ বাড়িতে এনেছিলো আমি হাজার বার বলেছিলাম, ওকে ঢুকতে দিও না বাড়িতে। মেনে নিও না। সে শুনেছিলো! না,! মা মা করে একেবারে মাথায় তুলে রেখেছে। এমন অত্যাচার করবো ওকে যে ও নিজেই ওর মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হবে। আমাকে তো চেনে না এখনোও!'
~~~
আমি আমার রুমে বসে আমার মেয়েকে খাওয়াচ্ছিলাম। মেয়েটার নাম রেখেছি মিষ্টি। বাবা ই নামটা রেখেছেন। ওকে প্রথম কোলে নিয়েই নাম ওর ফুটফুটে মুখটার দিকে চেয়েই বলেছিলেন,
_ বাহ্! কি সুন্দর, ঠিক যেনো আমার মায়ের মতো। তোর নাম দিলাম মিষ্টি। আমার মিষ্টি।'
বাবা খুব খুশি হয়েছিলেন। কেনো যে বাবার মতো বুঝ শক্তি আল্লাহ আকাশ আর মা কে দিলো না!!
ভাবতে ভাবতেই দরজা খোলার শব্দে সেদিকে ফিরে চাইলাম। আকাশের বউ, মিথিলা আর আকাশ ঢুকছে রুমে। আমাকে দেখেই মেয়েটা একপ্রকার তেড়ে এলো আমার দিকে।
_ এই মেয়ে! তোমার সাহস তো কম না! তুমি আমার ঘরে এসে আমার বেডের উপর বসে আছো? বের হও আমার রুম থেকে। আর যেনো কখনো তোমায় এখানে না দেখি।'
আমি আকাশের দিকে চেয়ে বললাম,
_ তোমার যে বোধ শক্তি নেই সেটা তো আমি আগেই বুঝেছিলাম। এখন কি পুরুষত্ব টাও হারিয়ে ফেলেছো? নাকি বিক্রি করে দিয়েছো?'
_ মায়া! কি বলতে চাইছো তুমি?' ( আকাশ )
_ বুঝতে পারছো না? কিন্তু কেনো বলোতো! আমি তো পরিষ্কার বাংলায় বললাম কথাটা।'
_ তোমার সাহস হলো কি করে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার স্বামীকেই আজেবাজে কথা বলার।' ( মিথিলা )'
" আমার স্বামী " কথাটা শুনে বুকের ভিতর টা ছ্যাত করে উঠলো। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বললাম,
_ তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো তোমার আগে ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছিলো! যদিও, ওকে " স্বামী " বলতেও আমার যথেষ্ট রুচিতে বাঁধছে। তবুও বলছি, যতদিন ডিভোর্স হচ্ছে ততদিন ও আমার ও স্বামী। But I hope, ডিভোর্স টা যেনো দ্রুত হয়ে যায়।' ( আকাশের দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম )'
_ সে তো আমরাও চাই তোমার সাথে যেনো ওর ডিভোর্স টা দ্রুত হয়ে যায়। কিন্তু এখন আমিই ওর বর্তমান, আমিই ওর ভবিষ্যত। আর এই রুমটা, এখন আমার। তাই ভালোয় ভালোয় আমার রুম থেকে বেরিয়ে যাও। নইলে কিন্তু আমি!'
_ কি করবে তুমি! করো, আমি ও দেখি।'
_ মায়া, কেনো জেদ করছো! এ বাড়িতে তো আরোও ঘর আছে। সেখানে যাও না।' ( আকাশ )'
_ তুমি কে এটা বলার আমি কোথায় থাকবো না থাকবো?'
_ আমি তোমার স্বামী, আর এই বাড়ির ছেলে। এ বাড়িটা আমার। আমার কথা তো তোমায় শুনতেই হবে।' ( আকাশ )'
আকাশের কথা শুনে হেসে উঠলাম আমি।
_ তুমি আমার স্বামী? তোমার সে যোগ্যতা আছে? শুধু আমার কেনো, কারোর ই স্বামী হওয়ার যোগ্যতা তোমার নেই। আরে তোমাকে তো আমি মানুষ বলেই মনে করি না স্বামী হওয়া তো অনেক দূরের কথা। তুমি হচ্ছো একটা মেরুদন্ডহীন, কাপুরুষ, স্বার্থপর একটা ছেলে।'
_ মায়া!'
আকাশ উদ্যত হলো আমায় মা'রার জন্য। আমি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললাম,
_ কি হলো? থেমে গেলে কেনো? মা'রো! এটা ছাড়া আর কিই বা করতে পারবে তুমি। তোমার দৌড় এটুকুই।'
_ তুমি কিন্তু এবার বেশি বেশি করছো।'
_ তাই বুঝি! আমার তো মনে হচ্ছে না আমি বেশি বেশি করছি। আমার তো মনে হচ্ছে কম হয়ে যাচ্ছে, তোমরা এর চেয়ে বাজে ব্যবহার ডিজার্ভ করো।'
ততক্ষণে মিথিলার ডাকে আমার শাশুড়ি মা এসে সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি এসেই হম্বিতম্বি করতে লাগলেন,
_ কি হয়েছে? এই ছোটলোক টা কি বলছে?'
_ দেখুন না, আমার রুমে এসে ঘাট হয়ে বসে আছে। উঠছেই না।' ( মিথিলা )'
_ না উঠলে ঠেলে ফেলে দাও। টানতে টানতে বের করে দাও বাড়ি থেকে। অপেক্ষা করছো কেনো!' ( শিলা বেগম )'
_ এতো সহজ বুঝি! ঠিক আছে, বের করে দিন। তারপর আমি এখান থেকে ডিরেক্ট থানায় যাবো। আপনাদের নামে কমপ্লেন লেখাবো। যে আমাকে আমার শাশুড়ি, স্বামী নির্যাতন করছে। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। তারপর, বাকিটা তারা সামলে নিবে। দিন বের করে।'
_ তুমি আমাদের পুলিশের ভয় দেখাচ্ছো? এত্ত সাহস তোমার?' ( শিলা বেগম )'
_ তুমি জানো আমার বাবা কে? তাও পাওয়ার সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা আছে? এসব ভয় আমাকে দেখিয়ো না।' ( মিথিলা )'
_ ও ভয় দেখাতে না পারলেও আমি কিন্তু দেখাতে পারি। এ বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার ভয়! ( রুমে ঢুকতে ঢুকতে বাবা বলে উঠলেন )'
_ কিইই? তুমি আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেবে? এই মেয়েটার জন্য?' ( শিলা বেগম )'
_ হ্যাঁ। দেবো! তেমন কাজ করলে তো আমাকে এমন স্টেপ নিতেই হবে। আর হ্যাঁ, একটা কথা পরিষ্কার করে বলছি শুনে নাও, ও আমার মেয়ে। আর ঐ যে, আমার বংশধর। ওদের প্রতি যদি তোমাদের অযত্ন, বাজে ব্যবহার দেখি আমি তোমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার আগে দুবার ভাববো না।'
_ এতো যে মেয়ে মেয়ে করছো, কিছুদিন পর তো ওদের ডিভোর্স হয়ে যাবে। তখন ওকে কিসের পরিচয়ে রাখবে? ওকে তো তখন এ বাড়ি থেকে চলে যেতেই হবে। আর যদি তুমি বাধা দাও তাহলে আমি আইনের আশ্রয় নেবো। মিথিলার বাবা কে তোমার ধারণা আছে। হুহ! এ মেয়ে এ বাড়িতে কীভাবে টেকে আমি ও দেখবো। সাথে তোমার বংশধর, ওকেও তাড়িয়ে ছাড়বো।'
_ শিলা, তুমি মনে হয় ভুলে যাচ্ছো, আমি ঠিক কতটা পরিশ্রম করে এখানে পৌঁছেছি। এই বাড়ি-গাড়ি, সহায়-সম্পদ বানিয়েছি। এগুলো একদিনে হয়নি। আমার পরিশ্রম আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আমি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি না। তুমি কি ভাবছো, তোমাদের আমি চিনি না! হাড়ে হাড়ে চিনি। তোমাদের মাথায় কখন কি চলে যাও খুব ভালো করেই জানি। আমি জানতাম তোমরা এটাই করবে, আমি আগে থেকেই আমার সব বিষয় - আশায় , সম্পত্তি আমার নাতনির নামে করে দিয়েছি। যতদিন না ওর ১৮ বছর হবে ততদিন এসব মায়া মা সামলাবে। তুমি কেনো, তোমার বাপের ও সাধ্য নেই এ বাড়ি থেকে ওদের তাড়ানোর।' more.....
বাবার কথা শুনে সবাই হা হয়ে গেলো। আমিও ভীষণ অবাক হলাম। এতো কিছু কখন করলেন বাবা? আমাকে তো কখনো কিছু জানতেই দেননি!!
A
ll reacti
No comments: