Header Ads Widget

test

প্রণয়ের_অন্তিমক্ষণ পর্ব_২৮ (বিয়ে স্পেশাল)



 প্রণয়ের_অন্তিমক্ষণ

লেখিকা_অনন্যা
পর্ব_২৮ (বিয়ে স্পেশাল)
.
🍁
.
সূর্যের তাপে চারদিক ঝলসে যাওয়ার উপক্রম।কুহু আর রোদেলা ভার্সিটি এসেছে আজ।একেকজন ঘুরে ঘুরে দেখছে ওদের যেন নতুন কোনো প্রাণী ওরা।অবশ্য এতদিন পর আসাটাই যে এর কারণ সেটা ওরা ভালোই বুঝলো।দুজন ব*ক*ব*ক করতে করতে যাচ্ছিল।হঠাৎ কুহুর নজর দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আহনাফের দিকে গেল।পরণে ব্ল্যাক শার্ট আর জিন্স।ঠোঁটের ভাজে সিগারেট।সিগারেট খাচ্ছে আর কিছু ছেলেকে ধমকাচ্ছে কি একটা নিয়ে।কুহু সরু চোখে তাকিয়ে রইলো সেদিকে।রোদেলা ওকে থামতে দেখে নিজেও থামলো।কপাল কুচকে বললো
-'কি হলো? ক্লাসে চল...
কুহু বললো
-'তুই যা আমি আসছি।
-'তুই কোথায় যাবি?
-'আসছি আমি তুই যা...
রোদেলা কথা বাড়ালো না আর।বিরবির করতে করতে চলে যেতে লাগলো।কি একটা ভেবে পেছনে ঘুরলো।আহনাফ দেখতেই থমকালো।পরক্ষণেই নিজের উপর হাসলো।সে তার নয় এটাই সত্য।আর এটাই তাকে মানতে হবে।আহনাফের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো
-'আপনি আমার ভাগ্যে না থাকলেও হৃদয়ে থেকে যাবেন সর্বদা, আহনাফ ভাই।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে আবার হাঁটা শুরু করলো
-'ভবিষ্যতে যদি আর রেগিং করতে দেখি থাপড়ে জমের বাড়ি পাঠিয়ে দিব।আন্ডারস্ট্যান্ড?
সামনে দাঁড়ানো তিনটা ছেলে ভয়ে ভয়ে মাথা ঝাঁকালো।
-'দোস্ত, তোর ফুলটুসি আসছে...
নাতাশা চাপা স্বরে বললো কথাটা।আহনাফ কপাল কুচকালো।মুখ থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছেড়ে বললো
-'বুঝিনি...
আদিত ইশারায় পেছনে তাকাতে বললো।আহনাফ কপাল কুচকেই পেছনে ফিরলো।কুহু বুকে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে।আহনাফ চমকে উঠে তাকে দেখে।হাতে রাখা সিগারেটটা তাৎক্ষণাৎ ফেলে দিয়ে মেকি হেসে বললো
-'আরে তি'তিলোত্তমা তু'তুমি!
আদিতরা মুখ চেপে হাসছে।একটু আগে ধমকাধমকি করা ছেলেটা এখন তোতলাচ্ছে একটা মেয়েকে দেখে।শখের নারীর কাছে সব পুরুষ'ই বিড়াল।এই প্রমাণ আজ হাতে নাতে পেল তারা। এদিকে আহনাফকে তোতলাতে দেখে ছেলে তিনটা চমকে গেল যেন।আহনাফ ওদের দিকে কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে যেতে বলতেই ওরা দৌঁড়ে পালালো।আহনাফ কঠোর ভাবটা বর্জন করে নমনীয় স্বরে বললো
-'কিছু বলবে,তিলোত্তমা?
আদিত বলে উঠলো
-'আরিফ, নাতু চল আমরা বরং একটু হাওয়া খেয়ে আসি।
ওরা হেসে চলে গেল।আহনাফ অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে।কুহুকে কিছু বলতে না দেখে সে নিচু স্বরে বলে উঠলো
-'সরি...
-'সিগারেট ছাড়বেন না তাই না?
-'সে তো আমার প্রথম প্রেমিকা তাই ছাড়তে কষ্ট হয়।
কুহুর পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেল এটা শুনে।
-'তোর প্রথম প্রেমিকারে নিয়েই থাক তাহলে।আমার পিছে আসবি না আর।
কুহু কথাটা বলেই চলে যেতে নেয় আহনাফ ওর এক হাত ধরে ফেললো। কুহুর তুইতুকারি আজ পরোয়া করলো না সে।বলে উঠলো
-'এই না!
কুহু হাত ঝাটকা মেরে চলে গেল।
-'ছেড়ে দিব প্রথম প্রেমিকাকে, তিলোত্তমা।সরি...ওই..
আহনাফ পেছন ডেকেও কাজ হলো না। নিজেকে গালি দিল।
কুহু আর রোদেলা ভার্সিটি থেকে বেরিয়েছে সবে।আবহাওয়াটা আজকাল গিরগিটির চেয়ে খারাপ পরিচয় দিচ্ছে।রৌদ্রজ্জ্বল আকাশ এখন কালো মেঘে ঢেকে।রোদেলা বলে উঠলো
-'এই যা! গাড়ি আসেনি এখনো! বৃষ্টি আসবে বলে মনে হচ্ছে।
হঠাৎ তখন তাদের সামনে কালো রঙের একটা গাড়ি এসে থামে।রোদেলা জানে কে এসেছে।রাহুল হাসি মুখে নেমে এলো।কুহু বিরক্ত হলো ওকে দেখে।রাহুল বলে উঠলো
-'আমি নিতে এলাম আজ।প্লিজ আসুন ম্যাডাম...
গাড়ির একপাশে দরজা খুলে বললো সে।কুহু মনে মনে ভেঙালো ওকে।শ্লা নির্লজ্জ খাটাশ একটা! রোদও যে কি করছে! আহনাফের সাথে কথা বলে এই বিয়ে আটকানো লাগবে।এত বড় ভুল সে হতে দিবে না।রোদেলা বলে উঠলো
-'কুহুকে...
-'আমি আছি।তোরা যা...
আহনাফ পেছন থেকে এসে বললো।কুহু ওকেও ভেঙালো মনে মনে।রোদেলা মাথা নাড়িয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো।নিমিষেই গাড়িটা অদৃশ্য হয়ে গেল।দূর থেকে তা দেখে রাফি ফুঁসতে লাগলো।রাগের চেয়ে কষ্ট হচ্ছে।চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।আহনাফ দেখলে নির্ঘাত মারতো তাকে এর জন্য।কিন্তু রাফির'ই বা কি দোষ! চোখের পানি যে কথা শুনে না তার।রাফি চোখ মুছে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
কুহু চলে যেতে নিলে আহনাফ ওর হাত ধরে ফেললো।
-'তিলোত্তমা লিসেন...
-'হাত ছাড়ুন..
-'শুনো তো..
কুহু আবার ঝাটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে নেয়।আহনাফ দুইদিকে ঘাড় বাঁকিয়ে দ্রুত কদমে গিয়ে ওকে কাঁধে তুলে নিল।কুহু আতঙ্কিত হয়ে বললো
-'আরেহ..!
-'বড্ড ঘাড়ত্যারা তুমি! কথা শোনো না আমার।
আহনাফ ওকে কাঁধে নিয়ে নিজের বাইকের কাছে গেল।আজ গাড়ি আনেনি সে।বাইক নিয়ে এসেছিল।বাইকের সামনে এসে ওকে নামালো।রাস্তার মানুষ ওদের দিকেই তাকিয়ে।এতোদিন সবাই সন্দেহ করতো আজ যেন নিশ্চিত হলো।হৈচৈ পড়ে গেল।কুহুকে হিংসা হতে লাগলো মেয়েগুলোর।আহনাফের এদিকে খেয়াল নেই।কুহুকে বাইকে বসিয়ে নিজে বসলো।বাইক স্টার্ট দিয়ে সবার নাকের ডগা দিয়ে চলে গেল তারা।
কুহু না চাইতেও আহনাফের কাঁধে হাত রেখেছে।আহনাফ অন্য রাস্তার মোড় নিতেই সে চেঁচিয়ে উঠলো।
-'এই! এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?
আহনাফ উত্তর দেয় না।ঠোঁটের কোণে অদ্ভুদ এক হাসি তার।জীবনের মোড় ঘুরবে আজ।এদিকে কুহু চেঁচাচ্ছে।আহনাফ মজা করে বলে উঠলো
-'তোমার বিক্রি করে দিতে যাচ্ছি।যা জ্বালাচ্ছো!
কুহুর ভেতরটা কেমন যেন করে উঠলো।অতীতের ঘটনাগুলো মাথায় হানা দিতে লাগলো।পরক্ষণেই মাথা ঝাঁকালো।আহনাফ এমন নয়।মিনিটখানেকবাদ আকাশ ভেঙে বৃষ্টিরা দলবেঁধে নামলো।আহনাফ একটা দোকানের এখানে গিয়ে বাইক থামালো।দুজন নেমে ছাউনির নিচে গেল।বৃষ্টি যেন নিজ থেকে আহনাফকে সুযোগ করে দিল আজ।কুহু ভিজে গিয়েছে অল্পসল্প।আহনাফ দেখলো তার তিলোত্তমাকে।বৃষ্টির কণাগুলোর প্রতি হিংসা হলো তার।সে এখনো তাকে ঠিকমতো স্পর্শ করতে পারেনি অথচ এরা করে ফেললো! পরক্ষণেই ভাবলো আর তো কিছুক্ষণ! সুযোগ নিজে এসে হানা দিবে তখন।তার ভাবনার মাঝেই হঠাৎ পাশের চায়ের দোকানের কিছু ছেলের বিশ্রি কথা কানে এলো। more......
-'মেয়েটার কোমরটা দেখ না মামা!ইশ! মাখন...
পাশের ছেলেটা বলে উঠলো
-'একে আজকে লাগবেই রে..করা মাল!
কুহু ওড়না দিয়ে নিজেকে ঢাকার প্রয়াস চালালো।আহনাফের হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হলো।সে এগিয়ে যেতে নিলে কুহু বাঁধা দিল কিন্তু সে শুনলো না।গিয়ে একটার নাক বরাবর ঘুষি মেরে বসলো।কুহু চমকে মুখে হাত দিয়ে ফেললো।ছেলেটা চেতে বললো
-'এই তোর এত বড় সাহস তুই আমা..
আহনাফ আরেকটা ঘুষি মারলো।পাশের ছেলেগুলো উঠে দাঁড়ালো এবার।আহনাফ বলে উঠলো
-'তোদের সাহস কি করে হয় ওর দিকে বাজে নজর দেওয়ার!
আহনাফ আরেকটা ঘুষি মারলো।পাশের ছেলেগুলো হঠাৎ ছুড়ি বের করলো।আহনাফ বাঁকা হাসে।তাকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করতে নিলে সে একটাকে লাথি মারলো।মারামারি লেগে গেল।ছেলেগুলো আহনাফকে মারছে তো আহনাফ ওদের মারছে।এক পর্যায় একটা ছেলে আহনাফের হাতে ছুঁড়ি দিয়ে আঘাত করে বসে।আহনাফ মৃদু আর্তনাদ করে উঠে।ছেলেগুলো এবার এলোপাথারি মারতে লাগলো ওকে।এতোগুলো ছেলের সাথে পারা সহজ কথা নয়। কুহু চমকে উঠলো।সে এগিয়ে এলো।
-'আহনাফ!
আহনাফ কাতরাচ্ছে।ছেলেগুলো বিশ্রিভাবে হাসলো।একটা ছেলে কুহুকে ধরতে গেলে লিডার ছেলেটা বলে উঠলো
-'ধরবি না...আমার গায়ে হাত তোলা না! চম্পল পাটোয়ারির গায়ে হাত দিয়েছে ও...কাজি ডেকে আন..
ছেলেগুলো হতভম্ব হলো।
-'ভাই আপনি বিয়া করবেন মাইয়াডারে!
-'আমি না...হোহো...ওদের বিয়ে দিব।গ্রামের লোকদের ডেকে নিয়ে আয়।নষ্টামি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে বলে বিয়ে দিব এদের।সম্মান ধুলোয় মেশাবো এদের।
আহনাফ তেজি স্বরে বলে উঠলো
-'জীবন্ত কবর দিব তোদের...
-'কি বললি? এই তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা বললাম তাই কর...
ধমকে উঠলো চম্পল।একজন বলে উঠলো
-'আচ্ছা চপ্পল ভাই।
সে ছেলেটার গালে থাপ্পর মারলো জোরে।
-'তোর বাপ চপ্পল শালা।
লুঙ্গিটা একটু উঁচুতে বেঁধে বললো
-'চম্পল...চম্পল পাটোয়ারি আমি।যা এখন..
চম্পল ধমকে উঠলো।ছেলেটা গালে হাত দিয়ে চলে গেল।কুহু ভয় পেল।সে বলে উঠলো
-'পাটারবারি সাহেব আপনি একবার আ..
-'এই কি? পাটারবারি! পাটারবারি কেডা?
চম্পল এক ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞাসা করলো।কুহু মিনমিন করে বললো
-'আপনার নাম না বললেন একটু আ..
চম্পল হঠাৎ এক হাত উঁচু করে গোল গোল করে ঘুরতে লাগলো।কুহু ভয়ে সরে দাঁড়ালো।এমন করে কেন? মির্কি রোগ আছে নাকি? আহনাফ নিচে শুয়ে শুয়ে সিনেমা দেখছে যেন।কপাল কেটেছে তার।হাত থেকেও রক্ত পড়ছে তবে সেদিকে হুশ নেই তার।চম্পল ঘোরা থামিয়ে চেঁচিয়ে বললো
-'পাটোয়ারি...চম্পল পাটোয়ারিইইইইই...
কুহু কানে হাত দিয়ে ফেললো চেঁচানোর স্বর শুনে।হঠাৎ তখন কিছু লোক হাজির হলো।ছিঃ ছিঃ করতে লাগলো।কুহু বুঝে উঠতে পারছে না যে এমন কি করেছে তারা।ভালো জায়গায় ফেঁসেছে শুধু এটাই বুঝলো।আহনাফ কেন যে এদিকে আসতে গেল! মার খাওয়াটা দরকার ছিল ওর।মেজাজ খারাপ হচ্ছে কুহুর।তখন হঠাৎ ছেলেগুলো কাজী নিয়ে হাজির হলো।এতো তাড়াতাড়ি এতোকিছু কিভাবে করলো বুঝতে পারলো না কুহু। কাকতালীয় না পরিকল্পনা? তবে কাজীকে দেখে কুহু আকাশ থেকে পড়লো।এ তো সেই লোক যে রোদকে বিস্কুট চুরির অপরাধে ধরতে এসেছিল।এই লোক কাজী হলো কবে? কুহু হতবিহ্বল স্বরে বলে উঠলো
-'এই আপনি না পুলিশ?
ভদ্রলোক তব্দা খেলেন ওদের দেখে।সেবার টাকা দিয়ে তাকে পুলিশ সাজিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।যাকে ধরতে গিয়েছিল তার সাথের মেয়েটা না এটা? একটা শুকনো ঢোক গিললেন।এরপর মেকি হেসে বললেন
-'এক চাকরি দিয়ে কি আর সংসার চলে মা! তাই কাজী হিসেবে পারটাইম জব করি আরকি।
-'অ্যাঁ!!
চম্পল বলে উঠলো
-'এএএ চাচা কথা কম...নষ্টামি করতে গিয়ে ধরা পড়ছে এরা।এক্ষুণি বিয়া দিয়ে দেন...
ভদ্রলোক রক্তাক্ত আহনাফের দিকে তাকালো।সবাই ছিঃ ছিঃ করছে কি দেখে এটাই বুঝছে না সে।ছিঃ বলার কারণটাই পেলেন না তিনি।তবে চম্পলের মুখের উপরও কিছু বলতে পারলেন না।আহনাফের দিকে তাকাতেই মায়া হলো।তখন'ই তাকে চমকে আহনাফ চোখ মারলো তাকে।চমকে উঠলেন তিনি।ঘটনা বুঝতে আর বাকি রইলো না।কুহু এদিকে লোকজনদের বোঝাচ্ছে যে তারা ভুল।তারা তখন বললো বেশি কথা বললে ভিডিও করে ভাইরাল করে দিবে।কুহু চেতে বলে উঠলো
-'ঐ চপ্পল পাটারবারি সাহেব! রাগ উঠায়েন না কিন্তু আমার..
চম্পল আবার এক হাত উঁচু করে গোল গোল ঘুরতে লাগলো।রাগ উঠলে নাকি এমন করে সে।কুহু বললো এই লোকের মির্কি রোগ আছে ভালো একটা ডাক্তার যেন দেখায়।এই কথা শুনে চম্পল টর্নেডোর মতো ঘুরতে লাগলো।কুহু ওমাগো বলে পিছিয়ে গেল।
মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে বাহিরে।তাদের বিয়ের সাক্ষী হয়ে রইলো বোধহয় এই বৃষ্টি।রাস্তার মাঝেই আহনাফ আর কুহুর বিয়ে পড়ানো হলো।কুহু স্তব্ধ হয়ে বসে রয়েছে চায়ের দোকানের ব্যাঞ্চটাতে।আহনাফ পাশেই বসে।বিয়ে দিয়েই লোকগুলো উধাও হয়ে গেছে।চম্পল যাওয়ার আগে পেছনে ঘুরে তাকায়।আহনাফের দিকে তাকিয়ে চোখ মারে বিনিময়ে আহনাফ হাসে। চাওয়ালা বলে উঠলো more....
-'ক্ষমা করবেন..চম্পলের সামনে কথা বলার ক্ষমতা আমার মতো মাইনষের নাই।তাই কিছু বলতে পারলুম না।
আহনাফের ঠোঁটের কোণে অদ্ভুদ এক তৃপ্তিময় হাসি ফুটে রয়েছে।কুহু বলে উঠলো
-'আপনাদের এইখানে যদি আর এসেছি আমি! শালা বাঙ্গির এলাকার শাওমি মার্কা মানুষ।সেট ভাঙ্গা এলাকা একটা!
আহনাফ কুহুর মুখ চেপে ধরে ওকে টেনে নিয়ে এলো ওখান থেকে।এই মেয়ের কথার মানে বুঝলে চাওয়ালা উল্টো চাপাতি দৌঁড়ানি দিবে দেখা যাবে।কুহুর হাত ছাড়িয়ে নিল।
-'মুখ ধরলেন কেন?বেশ করেছি যা বলেছি।
পরমুহূর্তেই কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো
-'মানুষকে কি বলবো এখন? এটা বলবো যে কট ম্যারেজ হয়েছে?
আহনাফ ঠোঁট চেপে হাসে।এরপর বলে
-'লাভ ম্যারেজ, অ্যারেজ ম্যারেজ তো সবাই করে আমরা নাহয় কট ম্যারেজ'ই করলাম।কত টাকা বেঁচে গেল জানো?
-'মজা করছেন আপনি? বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের।বুঝতে পারছেন কিছু?
-'কি বুঝতে বলছো?
আহনাফ ঝুঁকে বললো কথাটা।কুহু এমনিতেই রেগে ছিল এখন আহনাফের মজা তার ভাল্লাগলো না।সে নিজের মাথা দিয়ে একটা বারি মারলো।ব্যথা অবশ্য নিজেও পেল।আহনাফের কাঁটা জায়গায় লেগেছে আঘাতটা।সে চমকে আর্তনাদ করে উঠলো
-'আহ্! তিলোত্তমা!
-'বা/লের তমা।
কুহু কথাটা বলেই বৃষ্টির মাঝে হাঁটা ধরে।আহনাফ ব্যথার জায়গাটা মালিশ করে হাসে।
-'আহনাফ শাহরিয়ারের সাথে লাগতে আসার আগেই হেরে গেল।বেচারা আমার সমন্ধি আয়ান! তোমার প্ল্যান তৈরির আগেই আমি বিবাহ করে ফেলেছি বৎস।এবার নিয়ে দেখাও আমার বউকে!
উচ্চস্বরে হাসে আহনাফ।নাতাশা আয়ানের অস্বাভাবিক আচরণ সম্পর্কে বলেছিল তাকে।একই ছাদের নিচে থাকে আয়ান আর কুহু।আহনাফ রিস্ক নিতে চাইলো না।তাড়াতাড়ি বিয়ে করার আর কোনো উপায়ও সে পায়নি।এবার তিলোত্তমাকে আর কেউ নিতে পারবে না।এই প্ল্যান সম্পর্কেও কেউ জানতো না। নিজে নিজে করেছে সব।আহনাফ তৃপ্তির হাসি হাসে আজ। ছুট লাগায় তার তিলোত্তমার পিছনে ।
___________________________
-'না, না যেভাবেই হোক সুহাসিনীকে আমার করতেই হবে।
আয়ান একটা খাতা নিয়ে এসে বসলো।ফাঁকা ফাঁকা করে এক সারিতে তিনটা নাম লেখলো---"আয়ান....কুহু...আহনাফ.."
কি একটা ভেবে সে রোদেলার নামটাও লিখলো।গভীর ভাবনায় মগ্ন হলো।রোদেলা আহনাফকে পছন্দ করে এটা নাতাশা জানিয়েছে।রাতে সবটা বলেছে তাকে।আহনাফ, কুহুর ব্যাপারটাও।অনেক বুঝ দিলো মেয়েটা তাকে।সত্যিই সে বন্ধু হিসেবে অসাধারণ।আয়ান ভাবলো আহনাফকে জানিয়ে দেবে যে কুহু একজন ধ'র্ষি'তা।এমন মেয়েকে সে নিশ্চই বিয়ে করবে না! আহনাফের নামের উপর গোল দাগ দিয়ে লেখলো প্ল্যান এ।প্ল্যান বি হিসেবে রোদেলাকে ঠিক করলো।রোদেলা কুহুকে বুঝালে কুহু ঠিক বুঝবে।বন্ধুর ভালোবাসা সে কেড়ে নিবে না নিশ্চই!রোদেলার নামের উপর গোল দাগ দিয়ে লিখলো প্ল্যান বি। প্ল্যান সি ও ঠিক করে নিল সে।সাবধানের মার নেই।প্ল্যান সি হিসেবে ভয়ংকর একটা জিনিস ভাবলো।শুকনো ঢোক গিললো নিজের নোংরা পরিকল্পনার কথা ভেবে।কুহুর কোনো পার্সনাল ভি...পরক্ষণেই চোখ বুজে দুদিকে মাথা নাড়লো।না, না আশা করা যায় এটার প্রয়োজন পড়বে না।
জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে বোঝালো সে।কুহু শুধুই তার।তার সুহাসিনী।নিজের নামের সাথে কুহুর নামটা একটা দাগ দিয়ে মিল করলো।আহনাফের নামটা কলম দিয়ে ঘষে ঘষে কাটলো।মুচকি হাসলো এরপর।
হঠাৎ তখন হুড়মুড়িয়ে রাইফা প্রবেশ করলো তার কক্ষে।হকচকিয়ে গেল সে।খাতাটা বন্ধ করতে পারলো না।উল্টো করে রাখলো।
-'ক'কি হয়েছে আপু?
রাইফার চোখেমুখে আতংক।সে বলে উঠলো
-'কুহুর বিয়ে হয়ে গেছে।কল করেছিল মাত্র।
রাইফার কথাটা ব্রেইনে সেট হতে সময় লাগলো তার। মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।পরক্ষণেই হেসে বললো
-'মজা করছো তাই না? ও তো ভার্সিটি গেল স...
-'কট ম্যারেজ...ভুল বোঝাবুঝি না কি যেন,,
আয়ান স্তব্ধ হয়ে গেল।কট ম্যারেজ! ঘনঘন আঁখি পল্লব ঝাপটালো সে।সুহাসিনীর বিয়ে হয়ে গেছে! কার সাথে হলো? সে আর তার নেই? সে যে প্ল্যান করলো এতোক্ষণ! বাপ্পারাজের মতো বলতে ইচ্ছা হলো----"না আমি বিশ্বাস করি না...আমি বিশ্বাস করি না।" আয়ানকে এক'ই ভাবে বসে থাকতে দেখে রাইফা এগিয়ে গেল।ওর বাহুতে ধাক্কা মেরে বললো
-'এই আয়ান?
আয়ান ঢলে পড়লো।রাইফা হকচকিয়ে গেল।আয়ানের হাতের খাতাটা খসে পড়লো নিচে।এতক্ষণ ধরে বানানো চার্টটা দেখা গেলো।রাইফা কপাল কুচকে তুললো সেটা।এরপরে কপাল চাপড়ে বললো
-'প্ল্যান তৈরির আগেই বিয়ে শেষ।এটা দিয়ে এবার কুহুর বাচ্চার পা/ছা মুছিস তুই।গর্ধব!
-'আমার বাসায় দিয়ে আসুন আমাকে।আপনার ফ্ল্যাটে যাবো না আমি।
আহনাফ বাইকটা পার্ক করে এসে দাঁড়িয়েছিল।কুহুর কথা শুনে বললো
-'নাউ ইউ আর মাই ওয়াইফ।আমার সবকিছু এখন তোমার।তাই আপনার না বলো আমাদের ফ্ল্যাট।
কুহু কিছু বলে না।আহনাফ ওর হাতটা ধরলো।কুহুর অবস্থা বুঝতে পেরে বললো
-'ভর্সা নেই আমার উপর?
-'না থাকলে কবুল বলতাম না।
আহনাফ সন্তুষ্ট হয় উত্তর শুনে।ভেতরটা ফুরফুরে হয়ে গেল।ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বললো
-'তাহলে?
-'ভিজে আছি..বাসায় গেলে চেইঞ্জ করতে পারতাম।
আহনাফ হাসলো।কুহু বুঝে না এই হাসির অর্থ।লিফটে উঠলো তারা।কুহু অস্থিরতায় ঠোঁট কামড়াচ্ছে।রাইফা আপুকে তো বললো সবটা।কি বুঝলো আল্লাহ জানে।লিফটের দরজা খুলে গেল।আহনাফ ওকে নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটের সামনে আসে।বেল বাজালো না।রাফি অসুস্থ যদি ঘুমিয়ে থাকে! অসুস্থ বিধায় আর যেতে দেয়নি সে। দরজা খুলে প্রবেশ করতেই আহনাফ মৃদু চিৎকার করে পেছনে সরে যায় দুই কদম।কুহু চিৎকার করে ভয়ে জাপটে ধরলো আহনাফকে।সামনের দৃশ্য দেখে আহনাফের নিজের'ই পরাণ যায় যায় অবস্থা।এক হাতে কুহুকে জড়িয়ে বড় বড় চোখ করে সামনে তাকিয়ে অন্য হাত বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে সে।
পর্দা টেনে অন্ধকার করা ঘর।ফ্লোরে পাউডার দিয়ে একটা স্টার আঁকা আর চারদিকে রোদেলার নাম লেখা।স্টারের মাঝে রাখা মোমবাতি।যার চারদিকে রাফি ঘুরে ঘুরে নৃত্য করছে আর কিছু জপছে।হাতে কিসের পাতা যেন।পরণে কালো রঙের আল্লাখাল্লা টাইপ কিছু..মাথায় টুপি।আস্ত এক পীর বাবা সেজেছে যেন।রোদেলাকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করতে এছাড়া আর উপায় পেল না ছেলেটা।ইউটিউবে সার্চ দিয়ে ভরে ফেলেছে "কীভাবে শখের নারীকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করবো?" লিখে লিখে।এই পন্থাই পেল তখন।ভার্সিটি থেকে এসেই এভাবে নেচে চলেছে সে।দুই ঘণ্টার মতো হবে! তাও যদি রোদেলা তার হয়!
তবে আহনাফকে এই সময় সে আশা করেনি। সে তো বলেছিল আসতে দেরি হবে আর সারপ্রাইজ নিয়ে আসবে একটা।কুহু ছিল তার মানে সেই সারপ্রাইজ!শুধু ভাই দেখলে একটা কথা ছিল এখন যে ভাবিও দেখে নিল! হাতের পাতারগুচ্ছোটা পড়ে গেল তার।ভয়ের চেয়ে লজ্জা পেয়েছে।আল্লাহ মাটি ফাঁক হয়ে যায় না কেন! রাফি কি করবে বুঝতে না পেরে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে লাগলো।কুহু এতে আরো ভয় পেল। ভয়ে আহনাফকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।রাফি হঠাৎ ঘুরে ঘুরে নাচতে নাচতে বললো
-'ভাবি ডার গেয়ি... ভাবি ডার গেয়ি more.....

4

No comments:

720

Powered by Blogger.